উপন্যাসঃ
#আধখাওয়া_অষ্টভুজ
#পর্বঃ৫
#উম্মে_নাদিয়া_তাবাসসুম
“আম্মু যদি আজ থাকতো কত ভালোই না হতো।সব মুশকিলের চমৎকার সলিউশন থাকে আম্মুর ঝুলিতে।আম্মু কেন নেই তুমি আজ?তোমার এই পিচ্চি মেয়েটা কি করে আজ এত বড় পরিস্থিতি সামাল দেবে?
সারার যদি কিছু হয়ে যায় আমার পৃথিবী তো শূণ্য হয়ে যাবে।না,আমার এভাবে ভেঙে পড়লে চলবেনা,কিছুতেই না।আমি যদি এরকম করি তাহলে ভাবি,সায়ান,সাদীদ ভাইয়া ওদের কি হবে?ওদের দিকে তো তাকাতেই পারছিনা।
আমার নিজেকে শক্ত করতে হবে খুব শক্ত করতে হবে।ঠিক যেমন পুরুষ মানুষেরা হয় ঝুনো নারকেলের মতো শক্ত খোলসে আবৃত আর ভেতরটা জুড়ে শুধুই মিষ্টান্ন।কিন্তু ঐ শক্ত খোলসের ভেতর দিকটা তো সবাই দেখতে পায় না।আমায় ঠিক এরকমই শক্তিতে হতে হবে যেন ভেতরটা কেউ না পড়তে পারে।”
হোঁচট খেয়ে এই বুঝি চিৎ হয়ে পড়বে ঠিক তখনই নিজেকে কোনোমতে সামলে নিলো সায়ান।চুলের পাগল-পাগল অবস্থা,দু চোখজুড়ে কালচে ছাপ পড়ে গেছে,শার্টের আয়রন পুরো নষ্ট হয়ে গেছে..বিধ্বস্ত অবস্থা সায়ানের।পাগলের মতো প্রলাপ বকে যাচ্ছে।”সব হয়েছে আমার জন্যে,আমার জন্যে,আমার জন্যে!”বলতে বলতে চেঁচিয়ে উঠে।
-শেষ করে ফেলেছি আমার জীবনটাকে।এক ফোটা সুঁচের খোঁচার কষ্ট ও হতে দেবোনা কোনোদিন এভাবেই আগলে রেখেছি।কিন্তু আজ,আজ কি হয়ে গেলো!কতটা কষ্ট হচ্ছে ওর?তার আধটুকরো ভাগও যদি নিতে পারতাম!
আল্লাহ এ কেমন পরীক্ষায় ফেলে দিলে,না পারছি কিছু করতে না পারছি…
একটু ঠান্ডা লাগলেই যে বিছানায় নুইয়ে পড়ে সে এতটা কষ্ট কিভাবে নেবে?আল্লাহ এই সারাটা জীবনে আর কিচ্ছুটা চাইবোনা কিচ্ছু না,শুধু সারাকে আমার জীবনকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও,একটাবার!প্লিজ আল্লাহ প্লিজ!ওর যদি একটা সুক্ষ্ম চুলের মতন ও কষ্ট হয় ও পারবেনা সহ্য করতে,পারবেনা।
এসব কিছুর জন্য আমি দায়ী আমি, আমি,শুধু আমি!আমি যদি ফোনকলটা না দিতাম তাহলে আজ…
সাদীদ পাগলপ্রায় হয়ে ছুটতে ছুটতে আসলো ইন্তু, ইন্তু রে আমি বাবা হয়ে গেছি রে আমি বাবা হয়ে গেছি!
কিছুক্ষণের জন্য ইন্তিকা থ হয়ে রইল।যেনো স্বপ্নে আছে।আমতা আমতা করে বললো,”কিহ আমি ফু-ফু-পি হয়েছি?হ্যাঁ?”
হ্যাঁ রে জারার ব্যথা উঠে গেছিল।আমি তোদের আর টেনশন দেইনি।পড়ে বলবো সব রে চল দেখবি চল তোর ভাইপো কে।
ডাগর ডাগর চোখ,একদম লালচে শরীর,চুলগুলো মনে হচ্ছে কোঁকড়ানো খুব সুন্দর হবে।তাকালে যেন আর ফেরাতেই মন চাইনা।যেন আল্লাহ স্বয়ং একটা ফেরেশতা পাঠিয়েছেন। একমুহূর্তের জন্য সবাই সব ভুলে যেনো খুশিতে মেতে উঠেছে।
কিন্তু সায়ান আইসিইউ রুমের দরজা ধরেই দাঁড়িয়ে আছে।ও এসব কিছু যেনো দেখেও দেখছেনা।
বুয়াদাদি ছড়া কাটে,
“আমার ময়না ফাকি,
আমার কইলজার দলা,আমার সোনার ময়না
চোখ খাটিয়া আর ঘুমাইসনা!”
“ওমা কেমন চোখ মারে ঘুমায় ঘুমায় দেখেন আফা,দ্যাখ জমিলা।তোর মতো বজ্জাত হইবোনা দেখিস,হইবো আমার ফরানের আদ্দান।ফত্যেকদিন ফজরে নাক টা একটু টাইন্না দিবেন আফা,চীনা গো মতন চেপ্টা যেন না হয়।” বলেই পানখাওয়া দাঁতের একগাল হাসি দেয় বুয়াদাদি।
সাদীদের মা ও হাসে।
“এই চুম দিবি না জমিলা, ঘুমাইতেছে দেখোস না?রাগী হওনের লাইগা?বাচ্চাগো ঘুমের ভিত্রে চুম দিলে রাগী হয়,আর মাথায় বাইড়াবিনা রাত্রে খেতা ভরে মুইত্তা বিছান শেষ করব।”
বুয়াদাদীর কথা শুনে হো হো করে হাসির রোল পড়ে যায় সারা হাসপাতালে।
সবার হাসি দেখে হপ করে মাথা নিচু করে রাখে বুয়াদাদী।কিছুক্ষণ পর আবার বলে,”এই ছেমরি এদিক আয় তো,মধু আছে একটু?”
নার্স অবাক হয়ে বলে, “মধু?মধু কোথাও পাবো?”
-ইশশিরে মধু নাই?মধু দিতে হইবো তো এক ফোডা মুখে,নাইলে মিষ্টি কথা বাইর হইবো কেমনে?আফা হুনেন মধু…..
সবার ডাক পড়ল।ডাক্তার সাহেব বের হয়েছে।
সায়ান পাগলের মতো ঝাঁকাতে লাগলো ডাক্তারকে।আমার সারা কই?কেমন আছে ও?
ডাক্তার কোনো উত্তর দিলো না।বাকিরা সবাই বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো।
ডাক্তার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো,”উনি আর হাঁটতে পারবেন না নিজের পায়ে।ওনার পা দুটো বাদ দিতে হয়েছে।অনেক চেষ্টা করেছি।কিন্তু যেভাবে এ্যাক্সিডেন্টটা হলো….”
মুহূর্তের মধ্যেই যেন সবার এত খুশি আনন্দ কোথায় উড়ে চলে গেল।সাদীদের কোলে তার পুচ্চুটা আর অন্যদিকে তার আদুরে ছোট্ট বোনুটা।কেমন যেন একটা অস্বস্তি বোধ করছে।পিচ্চিটার মুখের দিকে তাকালেই খুশি না হয়ে থাকা যায় না।কিন্তু হাসতে গেলেই তো বুকের মধ্যে কেমন একটা ব্যথা অনুভূত হয়।এ কেমন অসহ্যকর অবস্থা!
সারার এ অবস্থা শুনে ওর বাবার বুকের ব্যথাটাও বেড়ে গেছে।এতক্ষণ কিছুই জানতো না ওরা।কিন্তু নাতনিটা যে হয়েছে।এই খুশির খবরটা না জানালে কি হবে?কিন্তু এই খুশি, সুখ যে ক্ষণিকেরই তা কারোর মাথায় ছিল না।
সায়ান তার ট্রাউজারের পকেট থেকে নুপুরজোড়া বের করে হাত বোলাতে লাগল।সারার কাছে আসার সময় ওর জন্যে কিনেছিল বেলিফুলের মালা আর এক জোড়া পায়েল,ওর কাছে এসেই ওর খোঁপায় গুঁজে দেবে বলে।আর ওর ঐ দুখানা মখমলের মতো পা তার হাটুতে রেখে নুপুরজোড়া পড়িয়ে দেবে।
-নীল শাড়িটায় আজ কত মানিয়েছিল।ইশ,একটাবার দুচোখ ভরে দেখতেই পারলাম না!
মখমলের মতো তুলতুলে পা জোড়া আর নেই!
ওর যে খুব শখ ছিল নুপুর পড়ার।প্রত্যেক জামার সাথে ম্যাচিং করে নুপুর কিনে দিতে হবে আবদার ওর।কি হবে এসবের?ওর এটুকু শখ পুরণ করার সময় ও আল্লাহ আমায় দিলো না!
কোলে উঠে বসে থাকার খুব শখ ছিল।আজ থেকে তা পূর্ণ হতে চলল।এখন থেকে সারাক্ষণই আমার কোলে বসে থাকবি রে পাখি,সারাক্ষণ!!
সায়ানের হাহাকারে উড়ে যায় খুঁটিতে বসা এক ঝাঁক কাকের দল।তার আর্তনাদ শোনার আজ কেউ নেই, কেউ না।
সায়ানের খোঁজে সাড়া পড়ে যায় পুরো হসপিটালে।কোথায় গেল,কেমন আছে ছেলেটা!
সাদীদের অবস্থা আর দেখা যায় না বোনের শোকে আর সায়ানকে খুঁজতে খুঁজতে পাগলপ্রায় অবস্থা।
সারার মা,বাবা আর ফুপিরা মিলে কথা বলছে।সারার মা এক পর্যায়ে বলে ওঠে, “সায়ান বাবাটা বড্ড ভালো,কিন্তু আমার পা হারানো মেয়েটাকে বিয়ে করতে হলে ওর জীবনটাও যে শেষ হয়ে যাবে!ওর ও তো একটা জীবন আছে,ও কখনোই সারাকে ছাড়তে রাজি হবেনা।পাগলের মতো ভালোবাসে আমার মেয়েটাকে।কি হবে ছেলেটার!
ওর জীবনটা তো আমরা এভাবে নষ্ট করে দিতে পারিনা।আর আমার পঙ্গু মেয়েটাকে কে ই বা বিয়ে করবে?
সৃষ্টিকর্তার এ কেমন লীলাখেলা কোথায় এনে দাঁড় করিয়ে দিলো আমাদের!”
সায়ান হাসপাতালে পা রাখতেই সব শুনে ফেললো।সাথে সাথেই চেঁচাতে লাগলো।সায়ানের মতো এমন নরম স্বভাবের ছেলেকে কেউ কখনো এভাবে চেঁচাতে দেখেনি।অবাক হয়ে যায় সবাই।একটানে চশমাটা খুলে ছুড়ে মারে টাইলসে,ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায় চশমাটা।।চোখজোড়া লাল বর্ণ ধারণ করেছে।অনর্গল পানি বেয়ে পড়ছে চোখ দিয়ে।
-সারার পা নেই তো কি হয়েছে?ওর পা ঠিক করতে আমায় যা করতে হয় আমি করবো,যেখানে যেতে হয় আমি যাবো।আর যদি তাতেও কিছু না হয় তাতেই বা কি?ওর পা ছিল বলে তো ভালোবাসিনি ও কে,ওর রূপকেও বাসিনি।শুধু ওকে বেসেছি,ও মানুষটাকে!ওর যদি পুরো শরীর পুড়ে ছাঁই ও হয়ে যেত আমি সেই ছাঁই কে ভালোবেসে আগলে বাঁচতাম।আজ ওর সামান্য পা নেই বলে আমি ওকে ছেড়ে চলে যাবো?কি করে ভাবলেন এটা আপনারা?কি করে!
শুধু পা জোড়া নেই…বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললো সায়ান।আল্লাহ অশেষ রহমত যে সারা আছে।আমার সারা আছে আমার কাছে।আল্লাহর কাছে তো এটাই চেয়েছিলাম, শুধু এটাই।কি রহমতের খেলা দেখলেন আজ আমার জীবনটা আমার কাছে, আমার কাছেই আছে!
ডক্টর ওকে রিলিজ করে দেয়ার ব্যবস্থা করুন।আমি আজি ওকে বাড়ি নিয়ে যাবো আজই।আর আম্মু-আব্বু, সাদীদ ভাইয়া কোথায়?ওনাকে সব ব্যবস্থা করতে বলেন,আমি আজ সন্ধ্যায় ওকে বিয়ে করবো।সবসময় ওর কাছে থাকতে চাই,যেনো কিছু ওকে ছুঁতে না পারে।আর কিছু হয়ে যাওয়ার আগেই ওকে আমার হাতে তুলে দিন।হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো সায়ান।
এখন সায়ানকে ঠিক সদ্য জন্ম নেয়া বাচ্চাটার মতো লাগছে।পিচ্চিটা ও হা করে তাকিয়ে আছে তার ফুপা মশাইয়ের দিকে,খানিক পড়েই পিচ্চিটা মুচকি একটা হাসি দিলো।
চলবে…
উপন্যাসঃ
#আধখাওয়া_অষ্টভুজ
#পর্বঃ৬
#উম্মে_নাদিয়া_তাবাসসুম
আরাদ কিছুদূর যেতেই মেঘের গর্জন শুরু হলো।এই বুঝি বৃষ্টি নামবে ভেবেই,ব্যাগ থেকে ছাতাটা বের করল।আরাদ সবসময় ছাতা ক্যারি করে।রোদ,বৃষ্টি যাই থাকুক না কেন ছাতা নিতে ভুল হয় না আরাদের।হাঁটতে হাঁটতেই দেখতে পেল হুডখোলা রিকশায় একটা কাপল দুলতে দুলতে যাচ্ছে।ছেলেটা মেয়েটার হাত শক্ত করে ধরে আছে।হুট করে বৃষ্টি নামতেই মেয়েটা বলে উঠল ,”মামা থামেন নামবো।
-নামবেন?এহন?কেমন বিষ্টি নামছে দেহেন না?
-না মামা এখনই নামব।
ছেলেটা যখন ভাড়াটা দিতে চাইলো,মেয়েটা কিছুক্ষণ জোরাজোরি করলো ভাড়াটা ও কে দিতে দিলো না। মেয়েটা নিজের ব্যাগ থেকে টাকা বের ভাড়াটা মিটিয়ে দিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,”মামা আসেন।”
রিকশা থেকে দুজন নেমেই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল।দুজন দুজনের হাতখানা শক্ত করে ধরে হাঁটতে লাগল।আর মাঝে মাঝে টুকটাক কিছু কথোপকথন।”চলো এবার বাড়ি চলো,ঠান্ডা লেগে যাবে তো তোমার!”ছেলেটা বলতে লাগলো।
আরাদ ওদের দেখতে দেখতে ছাতা খুলতেই ভুলে গেছে।ভিজে একদম চুপচুপে হয়ে গেছে।
একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে ত্যাড়াবাকা দাঁতের মুচকি হাসি দিয়ে বললো,”এদের দেখতেও ভালো লাগে।এক মুহূর্তের জন্য যেন অন্য ধরায় চলে গেছিলাম।আহা কি সুন্দর!”
ইন্তিকা আজ ফিরবেনা বাসায়। বুয়াদাদি ও থাকতে পারবেনা তার মেয়ের জামাই এসেছে প্রায় বছর খানেেক পড়ে।কত রীতি আছে,সেসব না করলে কি করে চলবে?আর বুয়াদাদির জামাইটা যা…
রামিসা তার ফিহা আপুকে নিয়ে থাকবে।ফিহা ওর চাচাতো বোন।বয়সে বড় কিন্তু দুজন দুজনের যেন অর্ধেক।একজনকে ছাড়া অন্য জন একদম থাকতেই পারেনা।ফিহা এসেছে আজ সন্ধ্যায়।
এদিকে ওরা কিছুই জানেনা।বুয়াদাদি আড়ালেই চোখের পানি মুছেছে,ওদের কিছু বুঝতে দেয়নি।
রামিসা আর ফিহা হুলস্থুল প্ল্যান করছে কি কি করবে,আজ বুবু নেই যা খুশি করে নিতে হবে।
আইসক্রিম আনিয়ে রেখেছে।ইন্তিকা তো খেতেই দেয় না রামিসার সাইনাসের প্রবলেম আছে তাই।আজ রাত জেগে ওরা নেটফ্লিক্স দেখবে আর আইসক্রিম খাবে।মাঝরাতে আইসক্রিম খাওয়ার মজাই আলাদা।বইখাতা সব গুছিয়ে এক কোণে ফেলে রেখেছে,আজ আর বইপত্র ছোঁবে না রামিসা।শুধু মজা আর মজা।
-এই ফিহানি,ঘুমোবি না তোর তো আবার রাত না হতেই ঘুমে ঢলে পড়ার স্বভাব।আজ যদি ঘুমিয়েছিস তো দেখিস!
-আরে না না।আমি কই ঘুমোয়।ওগুলো তো বাচ্চাকালে, ঐ একটু আরকি।
হাহা করে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো রামিসা।
-তোর ঐ একটু আমার জানা আছে হেহে।ঘুমোবি তো একটুই কিন্তু উঠবি দু’দিন পড়ে।ঐ একটু ঘুম!
চল আজ রান্না করি,নিউ কিছু ট্রাই করি চল..ইউটিউব দেখে,রামিসা ফিহাকে বলে।
-হ্যাঁ চল,কি করা যায় বল তো?
বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঘাটাঘাটি করে ঠিক করলো
tamagoyaki রান্না করবে।এটা এক টাইপের জাপানিজ অমলেট।
খুব এক্সাইটেড ফিহা,তারচেয়ে বেশি রামিসা।অানন্দে একদম লাফাতে শুরু করেছে।
সব উপকরণ দুজন মিলে একসাথে ঠিকঠাক করে নিলো।রামিসা ওয়েল ব্রাশ করে ডিমের সাদা অংশের উপর একেক করে সব দিয়ে প্যানেই রোল করে নিলো,তারপর ফেটানো কুসুমটা ঢেলে দিলো বাকি অংশ জুড়ে।ওটা সহ পুরোটা রোল করতেই ছিড়ে গেল অর্ধেক টা।মন খারাপ হয়ে গেল রামিসার।আবারো কোনো মতে ধরে বাকিটা উল্টোতেই পুরোটা ছিঁড়ে একদম বিচ্ছিরি অবস্থা।
চিৎকার করে উঠলো ফিহা,”ও আল্লাহ কি করলি?আচ্ছা দাড়া,আমি কিছু করতে পারি নাকি দেখি।”
ফিহা ঠিক করতে গিয়ে আরও বিচ্ছিরি অবস্থা করলো।কোনোমতে কুচি কুচি মতন করে একটা প্লেটে ঢেলে নিলো।
রামিসা কান্না কান্না সুরে বললো,”কি সুন্দর ভেতরটা পুড়ে ভরা সাদা আর বাইরে কমলাটে টাইপ tamogoyaki হতো।প্রথমবার আমার রান্নায় এমনটা হলো,সব ঠিক ছিলো সব,শুধু উল্টোতে গিয়েই…
আমি আর রাঁধবোনা,নেটফ্লিক্স ও দেখবোনা,আইসক্রিম খাওয়াও লাগবেনা,যা ফিহা যা ঘুমো যা ভাল্লাগছেনা সর!”
সায়ান পাগলের মতো করছে।সাদীদ কোনোমতে সব এ্যারেঞ্জ করার চেষ্টা করছে।সারার সাথে সবার কথা হয়েছে।ও হাসিখুশিই আছে।তবে জানেনা যে তার পা দুটো আর নেই।
সায়ান নতুন তাজা বেলি ফুলের মালা এনে পড়িয়ে দিলো সারার খোঁপায়।সারার কি যে খুশি।
-সায়ান,তুমি না কি আনবে বলেছিলে..কই সেটা দেখাও।
সায়ান পকেটে হাত দিয়ে নূপুরজোড়া একটু বের করে আবার পুড়ে নিলো পকেটে।পেছন ঘুরে আঙুলের ডগা দিয়ে অশ্রু মুছে সারার দিকে ফিরে বললো,আরে ঐ তো মালাটায়..
বলে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।
সারা জারার বাচ্চাটা নিতে চাইলে ইন্তিকা ওর কোল থেকে বাচ্চাটাকে সারার কোলে আলতো করে দিয়ে দেয়।বাচ্চাটা কোলে নিয়ে বলে,”ওলে বাবাটা ফুপির কোলে উঠেছে হুম?আদর খাবে বাবাটা?”বলেই হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যায় সারা।ওয়া ওয়া করে কাঁদতে থাকে বাচ্চাটাও।যেন বুঝছে সবকিছু।
সবাই এক দৌড়ে ছুটে আসে কাছে।ডক্টর আসা মাত্রই বলে,”রুম খালি করুন আপনারা,রোগীকে ট্রিটমেন্ট করতে হবে।”
সায়ান তুমুল চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। “না আমি এখানেই থাকবো,আপনারা কি করেন আমায় দেখতে হবে..আমি সারাকে আর একা ছাড়তে পারবোনা,কিছুতেই না।প্লিজ ডক্টর আমাকে থাকতে দিন,কিছু করবোনা শুধু ওর পাশেই দাঁড়িয়ে থাকবো একটু থাকবো।”
সাদীদ অনেক কষ্টে সায়ানকে বাইরে নিয়ে আসে।সায়ান পাগলের মতো করতে থাকে।ইন্তিকা আড়ালে গিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।সারার মা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ চেপে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো।সায়ানের এই অবস্থা চোখে দেখা যায় না।এমন বিধ্বস্ত ভয়ংকর রূপ!কঠিন অবস্থা ছেলেটার।
সবাই অপেক্ষা করছে ডক্টরের জন্যে।হাসপাতালের পুরো রূপ বদলে গেছে এই একটা কাহিনীতে।কত হাহাকার দেখেছে,কিন্তু এমনটা কোনোদিন দেখেনি কেউ।
ডক্টর বের হতেই সবাই জড়সড় হয়ে সারার অবস্থা জিজ্ঞেস করলো।সায়ানকে কোনোমতে ধরে আছে সাদীদ।ডক্টর করুণ মুখে মাথা নিচু করে বললো, “সেন্স না ফেরা অবধি কিছু বলা যাচ্ছেনা,ক্রিটিকাল অবস্থা পেশেন্টের।”
সারার মা হো হো করে কেঁদে উঠল।সায়ান জোরে হেঁচকা টান দিয়ে সাদীদের হাত ছুটিয়ে ডক্টরের দিতে ছুটে গেল।ডক্টরের কলার ধরে চিল্লাতে লাগলো।
চলবে…