#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(32)
ঘৃণায় রি রি করে উঠছে অরুনিকার সারা শরীর। ভাবলেই ঘৃণা হচ্ছে যে তার শরীরের মাঝে একটা খুনির স্পর্শ। নিজেকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।
রাতে আদাভান বেশ ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বাসায় ফিরেছে। বেশ কিছু তথ্য ইতিমধ্যে সংগ্রহ করে ফেলেছে সে। আদাভান নিজেকে বর্ষার থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর কেউ একজন কাছাকাছি এসেছিলো। যাকে বর্ষা আদাভান ভাবতো। তবে এটা কিভাবে সম্ভব কিছুতেই তার হিসেব মেলাতে পারছেনা। বর্ষার মতো এতো বিচক্ষণ মেয়ে কিভাবে অন্য কাউকে আদাভান ভাবতে পারে, সেই চিন্তায় সারাদিন কোনো কাজে মন বসাতে পারেনি। তবে শেষটুকু বেশ বেদনার ছিলো আদাভানের জন্য। চিঠিতে লেখা ছিলো আদাভানের প্রতি কঠোর অভিযোগ।
“কি ভুল করেছিলাম আমি! শুধু জানতে চেয়েছিলাম আমার চোখের অশ্রুর কোনো সত্যিকারের সার্থকতা ছিল কি না। তুই আমার সত্যিকারের প্রেমিক ছিলি কি না। খেলেছিলিস কিনা? একদিন, দুদিন নয়, বছরের পর বছর কেঁদেছি।
আমি কি প্রথম তোর কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম? মনে তো হয় না। কিন্তু যখন ভালোবেসে ফেলেছি, সেটা আমি প্রথম বলি বা তুই, ফারাক কোথায়? ভালো তো বেসেছিলি। খুব বোকা ছিলাম কিনা, তোর চালাকি আর জীবনের কাঠিন্য বুঝতে পারিনি।
আমার জীবনটা নষ্ট করায় তোর কখনো খারাপ লাগেনি? দায়িত্ববোধ ছিল? আমি অবশ্য উড়নচণ্ডী রাগটাই দেখেছিলাম। সঙ্গে আমাকে ছোট করার প্রবণতা। মরমে মরে যেতাম প্রতিটি ক্ষণ তোকে ভালোবাসার কষ্টে। সেটা যে কী কষ্ট। আমি হয়তো কখনোই তোর জীবনে সে রকম গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলাম না।আমার ভালোবাসা আমাকে কী ভীষণ উপেক্ষা করেছে। অপমান করেছে। এই অনুভূতি যে কেমন হয়, তা বোঝার জন্যই বুঝি তোকে দরকার ছিল। প্রতিটি মুহূর্ত যেন চামড়ার নিচে নুন আর লংকাবাটার। রক্তক্ষরণ দেখেছিলি? খুব আনন্দ হতো তোর তাইনা? পৈশাচিক আনন্দ।
আনন্দ? আমার কষ্ট লোকদেখানো বলে মনে হতো তোর? নাকি এ চেহারায় কষ্টটা ঠিকমতো ফুটে ওঠেনি কখনোই?কী প্রবলভাবেই না চেয়েছিলাম, চেয়েছিলাম আমার জানা মিথ্যে হোক, চেয়েছিলাম আমি ভবিতব্য পাল্টে নেব। শুধু তুই যদি পাশে থাকিস। হাজার কূটকাচালিতে তোকে আঁকড়ে ধরে কী ভীষণভাবে বাঁচতে চেয়েছিলাম। তুই আমাকে মরতে ফেলে গেলি। কী ধীরগতির সে মৃত্যু, প্রতিটি ক্ষণ চেয়েছিলাম একবারে মরে যেতে। ভেবেছিলাম একটিবার নিজের দোষ স্বীকার করবি। স্বীকার করবি নিজের ভুল, মেনে নিবি আমাদেরকে। কিন্তু নাহ! আমি ভুল ছিলাম। তুই পাল্টে গেছিস আদাভান, ভীষণ রকম পাল্টে গেছিস। তোর প্রতি অভিযোগ আমার আমরণ থাকবে।
বড্ড অভিমান হচ্ছে তোর উপর আমার, কেনো বলতো! তুই তো স্বার্থপর। তারপরও কি অভিমান মানায়? কিন্তু এই অভিমান যে আমার একার নয় আরও একজনের তোর উপর।”
চিঠির প্রতিটা শব্দে যে ঠিক কি পরিমান অভিমানে রাঙ্গা তা স্পষ্ট। প্রতিটা অক্ষর যেনো স্বর্ণাক্ষরে মুদ্রিত হয়ে জানান দিচ্ছে,#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে। চিন্তাগুলো জট পাকিয়ে মাথার মধ্যে ভীষণ পীড়া দান করছে। যন্ত্রণায় মাথা ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থায় সামনে অরুনিকাকে দেখে হালকা করে চোখ খুলে তাকালো।
“অরু একটু কড়া করে চা এনে দাওনা, ভীষণ মাথা ধরেছে।”
অন্য সময় হলে অরুনিকা ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে গিয়ে প্রথমে দুই কোমল হাতে আঁকড়ে ধরতো আদাভানের মাথা। বেশ আয়েশ করে কড়া করে চা এনে দিতে টিপে দিতো মাথা। তবে আজ তার কিছুই হলোনা। কিচেনে গিয়ে চা বানিয়ে প্রাপ্তিকে দিয়ে রুমে পাঠালো আর নিজে চলে গেলো ছাদের উদ্দেশ্যে।
ছাদের রেলিংএর ধার ঘেঁষে একমনে আকাশ পানে তাকিয়ে ভাবছে অতীতের মধুর স্মৃতিগুলো। ভাবনার মাঝেই হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটা কেঁপে উঠতেই সাথে সাথে রিসিভ করে অরুনিকা। বর্তমানে এই একটা মানুষের কাছে এসেই কিছুটা স্বস্তি পায়। চারিদিকের দমবন্ধকর অনুভূতি গুলো থেকে একটু রেহাই পায়। বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পর ফোন রেখে তাকায় আঁধারের মাঝে। দূর দূরান্ত পর্যন্ত থাকা আঁধারের মাঝে খুঁজে চলেছে নিজের জীবনের গতিপথ। ব্যর্থ মন, মস্তিষ্ক নিয়ে পা বাড়ালো রুমের উদ্দেশ্যে।
“কোথায় ছিলে এতক্ষন?”
নীরবতার মাঝে হঠাৎ গম্ভীর কণ্ঠে চমকে ওঠে অরুনিকা। নিজেকে স্বাভাবিক করে তাকায় আদাভানের দিকে। একহাত কপালের উপর আর এক হাত পেটের মাঝে রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উত্তর দিলো,
“ছাদে”
“এতো রাতে ছাদে কি কাজ ছিল?”
“ছিলো কিছু”
“পুরোনো প্রেমিকের সাথে কথা বলা?”
আদাভানের তাচ্ছিল্য সুরে বলা কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় অরুনিকা।
“এসবের মানে কি?”
“সেটা তো তোমার বলা উচিত?”
“অযথা তর্ক আমার স্বভাবে নেই।”
অরুনিকার কথায় চোখ খুলে তাকায় আদাভান। দুজনের দৃষ্টির মিলনপর্বে চমকে ওঠে অরুনিকা। রক্তিম চোখের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলানোর সাহস যুগিয়ে উঠতে পারলোনা। দৃষ্টি ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই উঠে বসলো আদাভান।
“আমার স্বভাব খারাপ? এটাই কি বোঝাতে চাইছো?”
“…………”
“হাহ! জানা ছিলো। এখন আমার স্বভাবে খুঁত লাগাটাই স্বাভাবিক। তা বেশ তো আছো আমার থেকে দূরে দূরে থেকে। এতো দূরত্ব বুঝি তার কথায়? তো কবে ছাড়ছো আমায়?”
আদাভানের কথায় মোচড় দিয়ে উঠলো অরুনিকার হৃদয়ের অংশে। আদাভানকে অসম্ভব রকম ভালোবাসে সে। সেখানে মুক্তি! মুক্তি জিনিসটা ভাবলেই কষ্টে বুক ফেটে আসছে। বারবার মনে হচ্ছে, কোথাও ভুল হচ্ছেনা তো? আদাভানের কথা আর কাজে এতো অমিল কেনো? খুনি, প্রতারকরা কখনও এতো শান্ত হয় বুঝি? তাদের চোখে তো এক খাদ সমান বেদনা থাকার কথা নয়। তবে আদাভানের চোখে এতো বেদনার ছাপ কেনো? কেনো এই চোখের ভাষা বলছে সব ভুল, তার জানা সবকিছুই ভুল।
আজ প্রথমবারের মতো আদাভান জোর করে নিজের শান্তি খুঁজে নেয়নি। নেয়নি জোর করে অরুনিকাকে নিজের বুকে লেপ্টে। শেষরাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে কোনক্রমে দুচোখ বুজলো অবশেষে।
“বেধে রাখবো তোমায় আমার ভালোবাসার শিকলে, পালাতে পারবেনা তুমি আমায় ছাড়া সময়ের অন্তরালে।
আমাকে ভালো রাখে তোমার হাসি, জানো কি প্রিয় আমার থেকে আমি তোমায় বেশি ভালোবাসি।“
চলবে?
#Fiza_Siddique
ছোটো বলে কেউ লজ্জা দেবেন না প্লীজ। গল্পের রিয়েক্ট, কমেন্ট প্রায় কমেই যাচ্ছে দিনদিন। তাই ঠিক করেছি আর বেশ কিছু পর্বের মধ্যে শেষ করে দেবো গল্পটা। রহস্যগুলো গুছানোর জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন। তাই কাল পর্ব পাবেন না, একেবারে পরশু বড়ো করে পর্ব দেবো।