আমার গল্পে শুধু তুমি পর্ব ২০+২১

গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:২০

সময় মানুষের জন্য অপেক্ষা না করলেও মানুষকে সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। মানুষকে অপেক্ষা করতে হয় সঠিক সময়ের জন্য।

যদি মানুষ সময়কে থামিয়ে রাখতে পারতো তাহলে হয়তো মানুষকে দুঃখের পাঠ কখনোই পড়তে হতো না। কিন্তু আফসোস সময়ের চাবিকাঠি কারো হাতেই নেই।সে নিজের গতিতে বয়েই চলেছে।কখনো ভালো তো কখনো খারাপ।

এদিকে সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে অন্তী পাড় করে ফেলেছে তার বিবাহিত জীবনের পাঁচটি বছর।আজ তাদের পঁঞ্চম বিবাহবার্ষিকী। দিনটা অন্য মেয়েদের কাছে যেমন স্পেশাল হয় অন্তীর কাছে তার চেয়ে অনেক বেশি।

অন্তীর জীবনের এক অনাকাঙ্ক্ষিত অধ্যায়ের শুরু হয়েছিলো এই দিনটার মাধ্যমে। তবে সব ভালো খারাপের মধ্যে দিয়েই সবাইকে ঘুরে দাড়াতে হয়।অন্তীও সেই চেষ্টায় করছে।

অন্তী এখন মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ছে।আপাতোতো সে তৃতীয় বছরের স্টুডেন্ট,,, অন্তী তাড়াতাড়ি ক্লাস শেষ করে এক রকম ছুটে ছুটেই বাড়ি আসছিলো।ক্লাসে আজ একটু বেশিই দেরী হয়ে গিয়েছে….

বাড়িতে একজন তার জন্য অপেক্ষা করছে।সময়ের একটু এদিক ওদিক হলেঔ অন্তীকে একে বারে নাজে হাল করে ছাড়বে। অন্তী তাড়াতাড়ি বাড়ি এসে দরজার বেল বাজাতেই অর্না(অন্তীর একেবারে ছোট বোন) দরজা খুলে অন্তীর সামনে দাড়ায়।চুল টুল একে বারে এলো মেলো হয়ে আছে।গালের বা পাঁশটায় দুই আঙ্গুলের আঁচরের দাগ।

অন্তী অর্নার গালে হাত বুলিয়ে জিঙ্গেস করে -অনা তোর গালে কি হয়েছে?? অর্না কাঁদো কাঁদো মুখে অন্তীকে উওর দেয়….

-আপু তোর আসতে দেরী হচ্ছিলো বলে আমি একটু ওর কাছে গেলাম ভাবলাম হয়তো রাগ টাগ করছে।আমি গিয়ে দেখলাম ও দুই গাল ফুলিয়ে বসে আছে।তারপর আমি ওকে একটু খেলতে ডাকলাম ওওও এলো না।আমি ওকে একটু মজা করেই বললাম না খেললে ওর সব আইসক্রিম খেয়ে নিবো তারপরই ও বাঘের মতো আমার দিকে এগিয়ে এসে এভাবে আঁচরে দিলো!!

কথাটা বলেই অর্না আবার কেঁদে দেয়,,, অন্তী মুচকি হেসে অর্নাকে কাছে টেনে নেয়,,, -তোর কি দরকার ছিলো ওকে রাগানোর,,, -আমি আবার রাগালাম কোই তোর মেয়ের তো রাগ সবসময় নাকের ডগায়ই থাকে কিছু বললেই দুম করে রাগগুলো নাক থেকে মাথায় চলে যায়… -হাহাহা

-এক দম বাপ কা ব্যেটি…..তূর্য ভাইয়াও তো এমনই ছিলো একটুতেই রেগে…. অর্না কথাটা বলেই জ্বিবে কামড় দেয়।কি বলতে কি বলে ফেললো সে….ধূর।

অন্তী আর কথা না বাড়িয়ে অর্নাকে নিয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরে….. (অন্তীর মেয়ে তিতির।চার বছর বয়স।সেদিন অনেক কমপ্লিকেশনের মাঝেই তিতিরের জন্ম হয়।আল্লাহ না চাইলে হয়তো সেটা সম্ভব ছিলো না।তবে আল্লাহ মাঝে মাঝে মানুষকে নিজের হাতেই অনেক কিছু দেন।অন্তীকেও দিয়েছে।বেঁচে থাকার একটা নতুন মানে।

সব খারাপের সাথেই কিছু কিছু ভালো থাকে যা খারাপ গুলো থেকে পাওয়া খারাপ লাগাগুলোকে আড়াল করে দেয়।অন্তীর জীবনে তিতিরও অন্তীর জীবনে তেমনই একজন।

এদিকে অর্না সবে সপ্তম শ্রেনীতে উঠেছে।সেই সুবাধে অর্না আর তিতিরকে বাড়িতে সমানই ধরে হয়।আবার এই বাড়িতে সবচেয়ে লড়াকু ও দুজনই।সবসময় দুজন কিছু না কিছু নিয়ে লেগেই থাকে।আবার দিন শেষে দুজনের কেউই কাউকে ছাড়া একমূর্হতও থাকতে পারে না)

অন্তী অর্নাকে সাথে নিয়ে ঘরের ভেতরে যেতেই দেখে তিতির বারান্দার রকিং চেয়ারটাই বসে দোল খাচ্ছে। অন্তীকে ঘরের আসতে দেখেই তিতির মুখ ঘুড়িয়ে নেয়। -ছোত খালামুনি তুমি মাম্মামকে বলে দাও মাম্মাম কি ভুলে গেছে যে আজকে তার তিতির পাখির ইস্কুল ইউনিফম নিতে যাওয়ার কথা ছিলো….হুহ….

অর্না একটু নাক টেনে তিতিরকে বলে…. -আমি তিতি-র সাথে কথা বলবো না।আমি খুব রাগ করেছি।হুহ,,, অন্তীর সাথে সাথে মনে পড়ে…

তিতিররে জিদে অন্তী তিতিরকে একটা কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে নার্সারি ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছে।আপাতোতো অথৈ তিতিরের স্কুলেই টিচার হিসেবে কাজ করছে।সেই সুবাধে পুচকে তিতিরের ভর্তিতে কোনো সমস্যা হয় নি।

অন্তী তিতিরের কাছে গিয়ে তিতিরকে জড়িয়ে ধরে…. -মাম্মামের সব মনে দেখো আমি এটা কি এনেছি… কথাটা বলেই তিতিরের দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দেয়,,, তিতির খুশি হয়ে ব্যাগটার দিকে হাত বাড়াতেই অন্তী হাত সড়িয়ে নেয়।

-ছোট খালামুনিকে সরি বলো!!বলো বলো…. খালামুনি ব্যাথ্যা পেয়েছে দেখো দেখো…. তিতিরকে আঙ্গুল দিয়ে অর্নার গাল দেখিয়ে….

তিতির সাথে সাথে অর্নার কোলে লাফিয়ে উঠে অর্নার গালে গুনে গুনে পাঁচটা চুমু একে দেয়,,, -নেও খালামুনি তোমাকে তুতু দিয়ে দিয়েছি।সব তিক হয়ে যাবে.. হুহ,,,

সাথে সাথে অর্নাও হেসে তিতিরকে জড়িয়ে ধরে! ।।এদিকে, এয়ারপোর্টের ইমেগ্রেশন ক্রস করে বাহিরে বেরিয়ে আসে তূর্য।গুনে গুনে পাঁচবছরের কাছাকাছি সময় সে এদেশ থেকে দূরে সরে আছে।বলতে গেলে নিজের পরিবার পরিজন সব কিছুর থেকে দূরে সরে আছে সে।দূরে বললে ভুল হবে সব কিছুকে ত্যাগ করে ঐ অচেনা শহরে পা রেখেছিলো সে আজ আবার এই চেনা শহরে ফিরতে হচ্ছে তাকে।

তবে এই শহরে আবার ফিরে এলেও পরিবারের কাছে ফিরবে কি না সে নিয়ে যথেষ্ট দিধা দন্দে আছে সে যদিও নাইট সিফটের ফ্লাইট ছিলো তাই তূর্য সরাসরি বাড়ি না গেয়ে একটা হোটেলে উঠে।মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা কনফারেন্সে তাকে অ্যাটেন্ড হতেই হবে একেবারে বাধ্য বলেই তূর্য এই চেনা শহরে আবার পা রাখলো।।

আজ তিতিরের প্রথম দিন স্কুলে.. অদ্ভুত ভাবে আজই স্কুলে এক বিশেষ প্রোগ্রাম আছে..অন্তী তিতিরকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে অথৈয়ের সাথে কথা বলে নিজে রওনা হয়ে যায় ক্লাস অ্যাটেন্ড করতে….

ক্লাস শেষ করেই আবার ফিরে আসবে….অন্তী অবশ্য এরকম অনুষ্ঠানে থাকতে চায় নি কিন্তু তিতিরের জিদের সামনে অন্তীও দাড়াতে পারে না।

এদিকে এসে থেকেও এক বারের জন্যও দুচোখের পাতা এক করতে পারে নি তূর্য।অতীত যে বড় সর্বনাশা চাইলেও কি তাকে মুছে ফেলা যায়।তূর্যর এক মন বলছে অন্তীকে একবার দূর থেকে হলেও দেখে আসতে।হয়তো তার কাছে যাওয়া যাবে না হয়তো তাকে ছুয়ে দেখা যাবে না তবুও একবার চোখে দেখা তো দেখা যাবে…….

অন্তত দৃষ্টির পিপাসা তো মিটবে….!! কিন্তু তূর্য চাইলেও এই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।অন্তীকে অন্য কারো সাথে দেখার মতো ক্ষমতা তার নেই।

যদি সাগড় অন্তীর সাথে দেখা না করতে দেয়? কিংবা অন্তী নিজে থেকেই আড়ালে থেকে যায়??তখন??

এই মূহূর্তগুলোর সম্মুখীন হওয়ার সাধ্য তূর্যর নেই।তাই এমন দোটানা…..। সকালে তূর্য কফি হাতে দাড়াতেই তূর্যর ক্লাস ফ্রেন্ড হাজির। কনফারেন্সে তাকেও ইনভাইট করা হয়েছে…

তূর্য বেস্ট ফ্রেন্ডকে দেখে বেশ খুশি হয়। -অনেক দিনপর তোর সাথে দেখা -হুহ প্রায় তিন বছরের মতো।

-হম্ম।লন্ডনে একটা সেমিনারে দেখা হয়েছিলো।অবশ্য ফোনে তো যোগাযোগ আছেই -তা ঠিক

-তো আজ কি করছিস সারা দিন??সেমিনার কনফারেন্স তো বিকেলে,,
-কিছুই না নাথিং আপাতোতো বসেই আছি!
-তাহলে চল
-কোথায়?
-আমার বউয়ের ছোট্ট স্কুলটাতে,,,
-কিসের স্কুল??

-ভুলে গেলি ওর শখ মেটানোর জন্য একটা কিডস স্কুল খুলে দিয়েছিলাম আজকে অবশ্য ছোট্ট স্কুলটা অনেক বড় হয়ে গেছে তবুও…..বাই দ্যা ওয়ে আজকে স্কুলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী স্বাভাবিকভাবেই আমাকে যেতে হবে…ভাবলাম তুইও চো একবার,গেস্ট হিসেবে ফ্যংশানটা অ্যাটেন্ড করলে তোর ও ভালো লাগবে….

আফটার অল ইউ লাভ্স কিডস্,,
তূর্য হেসে বলে,,,
-কিডস্??
-হুম্ম

-চল যাওয়াই যায়…..গেলে অবশ্য মন্দ হয় না!!
-হুম্ম তাহলে রেডি হও ম্যান!!
-ওনলি 5 মিনিস!!!
-ওকে ডান!
গল্প:আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:২১

বাহ তুমি তো বেশ ভালোই আছো দেখছি।স্বামী সন্তান……হ্যাপি ফ্যামিলি!!

-মানে???

-অন্তু তুমি এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ভুলে গেলে কি করে??কিসের কম ছিলো আমার বলো? (তূর্য অন্তীর দুই হাত চেপে ধরে)

অন্তী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তূর্যর দিকে।তূর্যর চোখের দিকে তাকিয়ে সে যেন নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

স্কুল অডিটোরিয়াম সবাই বসে আছে।অথৈ তিতিরের হাতে ইয়া বড় একটা চকোলেট ধরিয়ে দিয়ে তিতিরকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে একটু ওদিকে তার ক্লাসের বাচ্চাদের কাছে যায়।বাচ্চারা বেশ হৈ চৈ করছিলো তাদের শান্ত করাতে হবে।

এদিকে অন্তী আবার দেরী করে ফেলেছে তিতিরের কাছে।তিতিরতো নাক মুখ কালো করে বসে আছে।

অনেকক্ষন মেজো খলাামুনিকে না দেখতে পেয়ে ছোট্ট তিতির এদিক ওদিক তাকায়।এবার একটু ঘাড় ঘুরাতেই চোখে পড়ে দরজার দিকে।সেখানে আরো কিছু বাচ্চাদের সাথে ফুল হাতে অপেক্ষা করছিলো অথৈ।

তিতির খালামুনিকে দেখে গুটি গুটি পায়ে চেয়ার থেকে নেমে গ্যাল্যারি পাড় করে দরজা বরাবর খালামুনিকে উদ্দেশ্য করে দৌড় দেয়।

তখন এন্ট্রি হয় তূর্য।ছোট তিতির ঝুটি দুলিয়ে দুলিয়ে দৌড়োনোর সময় কোনো দিকে তাকায় না।

তাই অসাবধানতায় ধাক্কা খায় তূর্যর সাথে।সাথে সাথে উপুর হয়ে ধপ করে নিচে পড়ে যায়।তিতির নিচে পড়তেই হাতের চকোলেটটাও নিচে পড়ে যায়।

তিতির পায়ে ব্যাথ্যা পেয়েছে।হাটু ছিলে গেছে….. এদিকে তূর্যও নিচু হয়ে তিতিরের সামনে বসে পড়ে,,, -সরি বেবি ব্যাথ্যা পেয়েছো??আমি আসলে দেখতে পাই নি আর তুমিও তো!! এভাবে কেউ দৌড় দেয় নাকি?

ক্ষানিক্ষন চুপ থেকে তিতির একবার মাটিতে পড়ে থাকা চকোলেটের দিকে তাকায়,একবার তাকায় ছিলে গিয়ে লাল হয়ে যাওয়া হাটুর দিকে এবার সে তূর্যর দিকে তাকিয়ে ফুল স্প্রিডে কান্না জুড়ে দেয়।

এতোক্ষন কাজে ব্যস্ত থাকা অথৈয়ের কানে তিতিরের গলা যায়।অথৈ একরকম ছুটে ছুটেই আসে তিতিরে কাছে। ততোক্ষনে তিতিরকে তূর্য কোলে তুলে নিয়েছে।নানা রকম কথা বলে তাকে চুপ করানোর চেষ্টা করছে।আর তিতির চকোলেট মাখানো হাতে তূর্যর কলার জড়িয়ে কেঁদেই চলেছে।

মাঝে মাঝে দু এক কিল ঘুষিও মারছে।সবাই তো অবাক।এতো তূর্য তিতিরের কান্ড দেখে। তবে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে অথৈ।সে যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।তার কাছে যেন সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছিলো।

এদিকে তো তূর্য আর তিতিরকে ঘিরে ছোট খাটো ভিড় জমে গেছে।অথৈ ভিড় ঠেলে তিতিরের কাছে এগিয়ে যায়।অথৈ গুটি গুটি পায়ে তূর্য পাশে এসে দাড়ায়। এদিকে তূর্য ব্যস্ত ছোট্ট তিতিরকে সামলাতে।অথৈকে দেখে তিতির আরো জোড়ে চিৎকার করে উঠে,,,

-ওওও খালামুনি ওওও খালামুনি দেখো না এই লোকতা আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।আমার চকোলেত তাও ফেলে দিয়েছে।আমাকে ব্যাথ্যা দিয়েছে…..

কথাগুলো বলেই আবার কাঁদতে শুরু করে দেয় তিতির। এদিকে তূর্য অথৈকে দেখে কি বলবে বুঝতে পারছিলো না। -অথৈ তুই?ভালো আছিস??আর এই পিচ্চিটা…ওকে চিনিস তুই??

-মেজো খালামুনি এই পঁচা আঙ্কেলতা খুব পঁচা। (এইটুকু বলেই তিতির অথৈয়ের দিকে ঝাপিয়ে পড়তেই তূর্য আবার তিতিরকে কোলে জড়িয়ে নেয়)

-কি হলো অথৈ কথা বলছিস না কেন??এই পিচ্চিটা কে?? -তূর্য ভাইয়া তুমি??তুমি কেমন আছো….আর ও তিতির আমাদের তিতিরপাখি….আর ও তো……

অথৈ এইটুকু বলতেই তিতির চিৎকার দিয়ে ওঠে,,, -মাম্মাম দেখো এই পঁচা আঙ্কেলটা আমাকে ব্যাথ্যা দিয়েছে….আবার আমাকে হাত দিয়ে বেধে রেখেছে মেজো খালামুনির কাছে যেতেও দিচ্ছে না…..

এইটুকু বলেই তিতির তূর্যর কোলে লাফালাফি শুরু করে দেয়……এবার তূর্যর হাতের বাধন আলগা হয়ে আসে। তার সামনে যে দাড়িয়ে আছে তার প্রিয়সি।যাকে একবার দেখার জন্য কতো অপেক্ষা প্রতিক্ষা।

তূর্য ঠ্যায় দাড়িয়ে আছে।এদিকে অন্তীও বরফের মতো জমে গেছে। তিতির তূর্যর কোল থেকে নেমে সোজা অন্তীর কোলে লাফিয়ে উঠে।

আপাতোতো তাদের ঘিরে উৎসুক জনগন হা করে তাকিয়ে আছে।তাদের কান্ড কারখানা কারোরই মাথায় ঢুকছে না।এদিকে তূর্যর বন্ধুও অন্তীকে এভাবে বাচ্চা হাতে দেখে আরো বেশি অবাক হয়ে যায়।যেহেতু সে তূর্য অন্তীর ব্যপ্যারে শুরু থেকেই সবটা অবগত।

ঘটনাটা সেখানে থামিয়ে দিয়েই দুজনই নিজ নিজ জায়গায় গিয়ে বসে পড়ে।এদিকে দুজনের বুকেই এক অজানা প্রবল ঝড় সময়ের সাথে নিজের গতি বাড়িয়েই চলেছে।অবশেষ অনুষ্ঠান শেষ করে অন্তী অথৈ তিতিরকে নিয়ে চলে যেতে নিলে তূর্য এসে তাদের পথ আটকায়।

অন্তীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় মঞ্চের পেছনে।লোক চক্ষুর আড়ালে..।। তখন অবশ্য তিতির অন্তীর কোলেই ছিলো।তূর্য যখন অন্তীর হাতের ডানা শক্ত করে ধরে তখন তিতির তূর্যর হাত খামচে দেয়,,,

-পঁচা আঙ্কের তুমি আমাকে ব্যাথ্যা দিয়েছো এখন আমার মাম্মামকেও ব্যাথ্যা দিবে??? তূর্য তিতিরের দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয়।এখন সে অন্তীকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।দেখতে পেলেও তাদের কথা গ্রাহ্য করার মতো মন মানসিকতা তার নেই।

এদিকে অন্তী আরো নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। এবার তূর্যর প্রথম প্রশ্ন ছিলো….. -তুমি খুব ভালো আছো তাই না????

অন্তী এমন প্রশ্নের জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না।অন্তী ভেবেছিলো তূর্য হয়তো তাকে জিঙ্গেস করবে বাচ্চাটা নায়তো অন্যকিছু।বাচ্চা সম্পর্কেই….. তবে এমন প্রশ্ন মোটেও আশা করে নি সে।

অন্তী থতমতো খেয়ে যায়।অন্তীকে এমন আমতা আমতা করতে দেখে তূর্য মুচকি হাসে…… এই হাসিটা ছিলো এরকম যাকে বলে ঠোটে হাসি অন্তরে বিষ

অন্তীকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে তূর্য বলে উঠে,,, –বাহ তোমাকে তো দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুমি বেশ ভালোই আছো।স্বামী সন্তান……হ্যাপি ফ্যামিলি!!যাকে বলে ভরা সংসার…. -মানে???

-অন্তু তুমি এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ভুলে গেলে কি করে??কিসের কম ছিলো আমার বলো?আমি তো পারিনি স্বার্থপর হতে,আমি তো পারিনি একটা মূর্তের জন্যেও তোমাকে ভুলতে তাহলে??তুমি কেন হলে??? কেন ভুলে গেলে আমাকে???এরকম একটা সংসার বাচ্চা তুমি আমি আর আমাদের……!!এরকম একটা মেয়ে তো আমাদেরও থাকতে পারতো!!কিন্তু তুমি?

-তুমি কি সব ভুলে গেছো???
-কি ভুলেছি আমি?কিছু ভুলিনি।না তেমার কথা না তোমার সাগর ভাই… ওহ্ সরি এখম তো আর সে তোমার ভাই নাই…..অন্য কিছু….

-তূর্য তুমি সেদিন মানে সেই রাতের কথা ভুলে গেছো??ও তো তিতির ও তো… তূর্য রাগে ফোস ফোস করতে করতে অন্তীকে বলে…..

-কিসের রাত দিনের কথা বলছো তুমি?? এবার অন্তী একটা ঢোক গিলে চোখের পানি মুছে তূর্যকে জবাব দেয়…

-আপনি হয়তো আমাকে ভুলেন নি তবে আপনার জীবনে আমার গোটা অস্তিত্বটাকেই ভুলে গিয়েছেন!! -কিহ্(অন্তীকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে,)

-দয়া করে আমার সাথে এমন অসভ্যতামো করবেন না।নাহলে আমি লোক ডাকবো।ভুলে যাবেন না আমি আপনার এক্স ওয়াইফ আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।সেই সুবাধে আমাদের উপর আপনার কোনো অধীকার নেই……..

কথাটা বলেই অন্তী তিতিরের হাত ধরে সামনের দিকে হাটা শুরু করে।তিতির এতোক্ষনে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে এক কোনে দাড়িয়ে ছিলো। অন্তী তিতির গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় সামনে। সামনের দিকে যে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে নতুন এক ভোর!

এদিকে তূর্য দেয়ালে সজোড়ে বাড়ি দিয়ে চিৎকার করে বলে,, -ডিভোর্স মাই ফুট ইউ ডামেন……!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here