গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক :হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:১৩
তূর্য দরজা খুলে একটু সরে দাড়াতেই কেউ একজন তূর্যকে জড়িয়ে ধরে…..
অন্তী সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ভেতরে চলে যায়।এদিকে অন্তীর দাদীর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে সেদিকে তাকিয়ে আছে…..
তার এতো আদরের নাতীকে না কি তারই বউয়ের সামনে একটা অন্য মেয়ে ছেলে জড়িয়ে রেখে!তাহলে এটাই আসল ব্যাপার,,
তূর্য হটাৎ করে জিনিয়াকে দেখে এক রকম অবাকই হয়ে যায়।তার উপর এমন উৎঘট কান্ড দেখে এবার তো বেশ লজ্জা করছে তূর্যর।
তূর্য জিনিয়াকে ঠেলে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দেয়। এতে জিনিয়া রেগে গেলেও নিজেকে সামলে নেয়।
-এমন করলে কেনো?
-তোমাকে বলছি না এমন ভাবে যেখানে সেখানে আমাকে হাগ করবা না…. -তুমি তো জানোই তোমাকে বেশি দিন না দেখলে….
অন্তীর দাদী দুজনকে মাঝখানে থামিয়ে দেয়। তূর্যক জিনিয়ার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে দাড়িয়ে যায়।জিনিয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে মারে….
-তুমি কে?তোমাকে তো চিনলাম না?আগে কখনো তো দেখি নি….. প্রভা মাঝখানে কথা বলতে গেলে অন্তীর দাদী প্রভাকেও থামিয়ে দেয়,,,
-প্রশ্নটা আমি এই মেয়েকে করেছি বউমা তোমাকে না!
প্রভা চুপ হয়ে যায়।
জিনিয়া উওর দেয়….
-আই আম জিনিয়া……
জিনিয়া এইটুকু বলে তূর্যর দিকে তাকাতেই তূর্য বলতে শুরু করে,,,, -নানুমুনি ও জিনিয়া ও আমার ক্লাস মেট।আমি বিদেশে পড়াশুনা করা কালিন ওর সাথে আমার পরিচয়।আর ও বড় ভাবির কাজিন মানে চাচাতো বোন…
তূর্য এইটুকু বলেই থেমে যায়।জিনিয়া এক ভাবে তূর্যর দিকে তাকিয়ে আছে।তূর্য সবার সামনে ওর পরিচয় শুধু ক্লাস মেট দিয়েছে।জিনিয়া এমনটা আসা করেনি,,, অন্তীর দাদী গলা ভার করে জবাব দেয়…..
-বিদেশে গিয়ে এমন বিদেশী মেমসাহেব বন্ধু বানিয়েছো কোই আমাকে তো বলোনি কিছু!! -না আসলে নানুমুনি….
-হয়েছ হয়েছে নানুভাই বাহিরে থেকে এসেছো জামা কাপড় ছেড়ে ঘর থেকে বউকে ডেকে নিয়ে এসো….নতুন নতুন বিয়ে করেছো এখনই তো বউয়ের সেবা যত্ন সোহাগ নেবে।বউ পুড়ানো হয়ে গেলে কিন্তু এতো আদর যত্ন পাবে না।
কথাগুলো বেশ জোড়ে জোড়ই বলে অন্তীর দাদী,, তূর্য কথাগুলো শুনেই ঘরে দিকে যেতে নিলে জিনিয়া আবার তূর্যর হাত চেপে ধরে… -তূর্য আমি এসেছি আমার কাছে একটু বসবে না?জানতে চাইবে না আমি কেমন আছি??
জিনিয়া কথা গুলো বলে অন্তীর দিকে তাকিয়ে থাকে….কিন্তু তূর্য সেদিকে গ্রাহ্য না করে ঘরে চলে যায়। তূর্য দরজার কাছে গিয়ে বেশ অবাক হয়।দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ। তূর্য বার কয়েক নক করলেও কেউ দরজা খোলে না,,,
তূর্য আবারো ধাক্কাতে থাকে।এবার অন্তী সাড়া দেয়,, -দীদামুনি বললাম না আমার সময় নেই আমি নিচে যাবো না তোমার নাতীর কি লাগবে না লাগবে সেসব দেখার মানুষ চলে এসেছে আমাকে আর তার কোনো প্রযোজন নেই।
তূর্য অন্তীর কথায় কিছুটা অবাক হলেও পড়ে বুঝতে পারে অন্তী কেন এরকম বলছে। এবার তূর্য আরো বেশি ধাক্কাতে থাকে….
অন্তী রাগে গজগজ করতে করতে দরজা খুলতেই তূর্যকে দেখতে পায়।
তূর্যকে দেখেই যেন তার সমস্ত রাগ নিমিষেই শান্ত হয়ে যায়।
-কিছু বলবেন??
-হু…ভেতরে যাবো ফ্রেশ হবো।
-ওওও আগে বললেই হতো।আমি তো ভাবলাম বান্ধবীকে দেখে সব ভুলে গিয়েছেন!!
তূর্য একটু অন্তীর দিকে তাকায় তারপর মুখ বাকিয়ে টাওয়ালটা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যায়,, -হু ভুলেই তো গিয়েছি তোর নামটাও ভুলে গেছি…আচ্ছা তুই কে বলতো?আমার না কিছুতেই মনে পড়ছে না!!(কথাটা বলেই তূর্য দাঁত বের করে হেসে দেয়)
এদিকে জিনিয়া প্রভা আর তন্ময় প্রায় ঘন্টা দুয়েক ড্রইংরুমে বসে বসে অন্তীর দাদী আর অন্তীর মায়ের সাথেই বকবক করে যাচ্ছে।তূর্য বা তিয়াশ দুজনের কেউই একবারের জন্যও বাহিরে আসে নি!
এদিকে জিনিয়া বর কয়েক তূর্যর কাছে যেতে চাইলেও দাদী জিনিয়াকে আবার সেখানেই বসিয়ে দেয়। প্রভাও নানীশ্বাশুড়ির মুখের উপর কিছুই বলতে পারছে না!!
কারন তমসা বেগম মা অন্তঃ প্রান।ভদ্রমহিলার কানে যদি মায়ের ব্যাপারে কোনো কথা যায় ওনি নিমিষেই রুদ্র মূর্তী রূপ ধারন করবেন।। অবশেষে তিনজনই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।আর তন্ময় চলে যায় স্টুডিও তে।ছবিগুলো ইডিট করিয়েছে জিনিয়া সেটা বিল পেমেন্ট করাতে।
তিয়াশের মনে বেশ অপরাধ বোধ কাজ করছে কেন করলো এমন সে…?কেনই বা ঐ অসহায় মেয়েটার জীবনটা এভাবে….না না ঠিক হচ্ছে না এটা তবে তার কিছু করার নেই
এদিকে সারা দিন অন্তী বইয়ের পাতায় মুখ গুজে আছে আর তূর্য কখনো মোবাইল কখনো বা মামার পুরানো বইয়ে চোখ বুলাচ্ছে। অন্তীও তূর্য দিকে মুখ তুলে তাকাচ্ছে না আর তূর্যও…..
অবশেষে অন্তীর এমন ব্যবহারে তূর্য বেশ বিরক্ত হয়।হাতে একটা সিগারেট নিয়ে ঘরের মধ্যেই জ্বালায়…. বলতে গেলে অন্তীকে দেখিয়ে দেখিয়ে….অন্তী স্মোক করা একদম পছন্দ করে না।
অন্তী বার দুয়েক তূর্যর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালেও তূর্য সে দিকে গ্রাহ্য করে না। এবার অন্তী বই পত্র নিয়ে সেখান থেকে উঠে চলে যায়।
সিগারেটের ধোয়া তার একদম সহ্য হয় না। এদিকে তূর্য ডুব দেয় অতীতের পাতায়।সেদিন…
দিনটা ঠিক মনে নেই…..তবে ঘটনা গুলো এখনো স্পষ্ট সেদিন ধুম জ্বর নিয়ে তূর্য ছুটেছিলো অন্তীর কাছে অন্তীকে না দেখে সে আর থাকতে পারছিলো।
প্রিয়তমার প্রতি অনূভুতি গুলো এমনই হয় দূরত্ব যতো বারে হৃদয়ে ভালোবাসার অনুভূতি গুলো আরো তীব্র হয় টানটাও বেশ জোড়ালো হতে শুরু করে….. সেদিন অন্তী তূর্কে অপমান করেছিলো…
[বিঃদ্র__পর্ব-৬ এ অর্ধেক লিখেছিলাম এখন তার বাকিটা শেয়ার করছি]
তূর্য যখন অন্তীর কাছে যায়,,, -অন্তু…..
কথাটা বলেই তূর্য অন্তীর হাত ধরে জোড়ে হ্যাচকা টান দিয়ে অন্তীকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। এবার অন্তী রেগে গিয়ে তূর্য গালে ঠাটিয়ে একটা চড় মারে…
-লম্পট কোথাকার একটা মেয়ের সর্বনাশ করে সাধ মেটেনি এখন এসেছো আমার সর্বনাশ করতে……???
তূর্য অন্তীর এমন ব্যবহারে বেশ হকচকিয়ে গেছে।ঠিক কি বলবে বা কি পতিক্রিয়া দেখাবে তা সে কোনো ভাবেই বুঝতে পারছে না।
কথায় আছে,,
অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর
তূর্য অন্তীর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে আর অন্তী অনড়গল বলেই যাচ্ছে,, -আমি তোমায় খুব ঘেন্না করি তূর্য ভাইয়া।কতোটা নোংরা হয়ে গেছো তুমি না হলে…একটা মেয়ের সাথে তোমরা এতো জন মিলে…ছি ছি পুলিশ তোমায় কেন ছাড়লো আমি চাইবো পুলিশ যেন তোমাকে আবার ধরে নিয়ে যায়।
-আমি তোকে ভালোবাসি অন্তু খুব ভালোবাসি! -অতোমার মতো নোংরা মানুষের মুখে ভালোবাসি কথাটা মানায় না।তুমি শুধু,,
-ব্যাস অনেক বলে ফেলেছিস।যাকে ভালোবাসিস তাকে একটু বিশ্বাস করতে পারিস না!
-চুপ….একদম চুপ।এখন চুপ চাপ এখান থেকে বেরিয়ে যাও আর কখনো আমার কাছে আসবে না…
অন্তী কথাগুলো বলেই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।এদিকে তূর্য আর একমুহূর্ত সেখানে দাড়ায় না।
মাঝে কেটে যায় চারদিন।এই চারদিন তূর্য উপর দিয়ে কি গেছে তা তূর্যই ভালো জানে।এলাকার লোকজন আত্মীয় স্বজন এমন কি নিজের বাবা সবাই তূর্যকে বিভিন্ন ভাবে কথা শুনিয়েছে।এই অদ্ভুৎ পরিস্থিতিতেও দুজন মানুষ তূর্যর সাথে ছিলো এক তূর্যর মা আর এক তূর্য মামা মানে অন্তীর বাবা।
ঘটনাটার পাঁচদিনের মাথায় মেয়েটাকে খুজে পাওয়া যায়।মেয়েটা তূর্যদের গ্রুপের কয়েকজনের নাম নিলেও তূর্য সম্পূর্ন নির্দোষ।তূর্য হোস্টেলে ফিরে আসার পরপরই মেয়েটার সাথে ঘটনাটা ঘটে।কিন্তু তূর্যর এর কিছুই জানে না।
সব জানাজানির পর তূর্যর আবার ঢাকায় যাওয়ার ডেট পড়ে।তূর্যর বাবা আর মামা তূর্যকে বেশ শাসিয়ে ঢাকায় পাঠায়।ঐ গ্রুপের কোনো ছেলের সাথেই যেন তূর্য আর না মিশে।
ঢাকায় যাওয়ার দিন তূর্যেকে রিক্সায় তুলে দেয় রেল স্টেশনে যাওয়ার জন্য।তূর্যর সাথে তিয়াশ ও ছিলো।
তূর্য রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ যায় রাস্তার পাশে দাড়ানো দুইজন মেয়ের দিকে। মেয়ে দুজনকে চিন্তে একটুও কষ্ট হয় না তূর্যর।
রিক্সা কাছা কাছি আসতেই তিয়াশ চিৎকার করতে থাকে…. -ভাইয়া দেখো অন্তী আর অথৈ….এই রিক্সা মামা দাড়ান ওরা আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছে….
রিক্সা ব্রেক করলে তূর্য রিক্সাওয়ালাকে ধমক দেয়।তারপর না দাড়িয়ে সোজা যেতে বলে। অন্তী অপলক তাকিয়ে আছে তূর্যর যাওয়ার দিকে।সেদিন তূর্য আর পেছন ফিরে তাকায় নি।
দুজনের ভালোবাসার বাঁধনে ভাঙ্গানের শুরুটা এভাবেই হয়েছিলো…….