আমার তুমি ২ পর্ব – ৩৫

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৩৫
#তানিশা সুলতানা

সুমু রুমে গিয়ে দেখে তন্ময় খাটে বসে আছে। সুমু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। যখন ওয়াশরুম থেকে বের হয় তখন দেখে তন্ময় পায়চারি করছে। সুমু বের হতেই দাঁড়িয়ে যায়। তাকায় সুমুর দিকে। সুমু ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে যায়। মাথা আঁচড়াতে থাকে।
তন্ময় পেছনে দাঁড়িয়ে উসখুস করছে। সেটা সুমু খেয়াল করেও করে না।

“সুমু

জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে তন্ময়। হাত থেমে যায় সুমুর। আয়নার ভেতর দিয়েই তাকায় তন্ময়ের দিকে। চিরুনি নামিয়ে ফেলে মাথা থেকে।

” কিছু বলবেন?

তন্ময় আয়নার দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। তখন তন্ময়ের চোখে চোখ রেখেই বলে সুমু।
চোখ নামিয়ে ফেলে তন্ময়।

“তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।

” বলুন

“এভাবে না। একটু বসবে আমার পাশে?

আবদারের সুরে বলে তন্ময়। সুমু গলে যায়। তবুও নিজেকে শক্ত রাখে।

” অনেক রাত হয়েছে। ঘুমানো প্রয়োজন আমার।

বলেই চিরুনি রেখে চুল গুলো হাত খোঁপা করে নেয়।

“শুনবে না?

করুন গলায় বলে তন্ময়।

” সময় হবে না।
পেছন ঘুরে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে সুমু।
তন্ময় বলার মতো কিছু খুঁজে যায় না। সুমু মাঝখানে কোলবালিশ রেখে শুয়ে পড়ে। তন্ময় সুমুর দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। সুমু চোখ বন্ধ করে আছে।
তন্ময় লাইট অফ করে সুমুর পাশে শুয়ে পড়ে।

খানিকক্ষণ নিরব থাকে। দৃষ্টি মাথার ওপরে থাকা সিলিং ফ্যানের দিকে। যেটা স্থির হয়ে আছে।
দুজনে দুটো কম্বল গায়ে জড়ায় ওরা।
তন্ময় নিজের কম্বল গায়ে নেয় না। সুমু সেটা খেয়াল করেও কিছু বলে না।

“আমায় ইগনোর করছো কেনো সুমু?

হঠাৎ করেই বলে বসে তন্ময়। সুমু চোখ বন্ধ করে ছিলো। খুলে ফেলে।

” আমি কাউকে ইগনোর করছি না। আর ইগনোর করার আমি কে? সেই অধিকার আছে না কি আমার? আমি তো আগাছা।

তাচ্ছিল্য হেসে বলে তন্ময়।

“সুমু তুমি সব সময় একটু বেশি বুঝো। কখনো কিছু ভাবনা চিন্তা করো না। কিন্তু তোমার ভাবনা চিন্তা করা উচিৎ। এই যে আমায় ইগনোর করছো এটাও তুমি ভাবনা চিন্তা না করেই করছো।
তুুমি মানো আর না মানো। তুমি একটা ভুল করেছো। সায়ানের হাতে তুলতুলকে তুলে দেওয়া একদম উচিৎ হয় নি তোমার। আর এটা জানার পরে আমার রাগ হবে এটা স্বাভাবিক নয় কি?
আমি সত্যিই খুব বেশি অনুতপ্ত নেই সুমু। কারণ ওই থা*প্প*ড়টা তোমার প্রাপ্য ছিলো। ওই থা*প্প*ড় তোমাকে সারাজীবন মনে করাবে ভাবনা চিন্তা করে কাজ করতে হয়।

থামে তন্ময়। সুমু চোখ বন্ধ করে কথা গুলো শুনে।

” আমি মনের মধ্যে কথা চেপে রাখতে পারি না। যা মনে থাকে সবটা বলে দেই। আর চাপা স্বভাবের মানুষও আমার পছন্দ না। এবার আমি যে যেটা ঠিক মনে করেছি বলে দিয়েছি। এবার তোমার যদি আমার কথা ভুল মনে হয় তুমি সেটা আমাকে ধরিয়ে দিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে নাও। এমনিতেই অফিসের প্রেশার তারপর ফ্যামেলি পবলেম আর নিতে পারছি না।

চোখ মুখ কুঁচকে বলে তন্ময়।

“আমার মনে কোনো কথা নাই। আপনিই ঠিক। আমি ভুল ছিলাম। আর থা*প্প*ড় জন্য রেগে নেই আমি৷ এবার শান্তিতে ঘুমতে পারেন।

তন্ময়ের দিকে পেছন ফিরে শুয়ে বলে সুমু।
তন্ময় ফোঁস করে শ্বাস টানে। মাঝখানের কোলবালিশ ফেলে দেয় ফ্লোরে। সুমু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সুমুর কম্বলের ভেতরকার ঢুকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুমুকে। মুখ রাখে সুমুর গলায়। চমকে ওঠে সুমু।
চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে।
তন্ময়ের হাতের ওপর হাত রেখে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে

” ডোন্ট ডিস্টার্ব সুমু
ঘুম প্রয়োজন আমার।

গলায় ঠোঁট ছুঁয়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে তন্ময়। কেঁপে ওঠে সুমু। শরীরের লোম জড়িয়ে যায়।

“আআমাকে ছেড়ে ঘুমান।

কাঁপা কাঁপা গলায় বলে সুমু।

” বিয়ে করেছি কি ছেড়ে ঘুমানোর জন্য? আর একটুও নরাচরা বা কথা বললে একদম শে*ষ করে ফেলবো তোমায়।

সুমু আর কথা বলে না। চুপচাপ থাকে। তন্ময় চোখ বন্ধ করে ফেলে।

🥀🥀
“এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না প্লিজ। আমার ফাপড় লাগে।

শুকনো ঢোক গিলে খাটের অন্য পাশে চলে গিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান কোমরে হাত দিয়ে ছোটছোট চোখ করে তাকায় তুলতুলের দিকে।

” আমি জাস্ট তাকিয়ে আছি তাতেই ফাপড়?

কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে সায়ান।
তুলতুল মুখ বাঁ কায়।

“যেভাবে হনুমানের মতো তাকিয়ে থাকেন তাতে শুধু ফাপড় কেনো হার্ট অ্যাটাক ও করতে পারি। জীবনে মেয়ে দেখেন নি? লুচ্চার মতো শুধু তাকিয়ে থাকা। তাও আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন তাতে আমার সমস্যা নাই। কিন্তু আপনি ঘরে সুন্দরী বউ রেখে বাইরে বউয়ের বান্ধবীর দিকে নজর দেন? আপনার চোখ তো গেলে দেওয়া দরকার। শয়তান বেডা।

রাগে গজগজ করতে করত বলে তুলতুল। সায়ান বুকে হাত গুঁজে তুলতুলের কথা শুনতে থাকে।

” আচ্ছা
বান্ধবীর দিকে নজর দিয়েছি বলেই কি আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য এই বেশ?

ঠোঁট বাঁকিয়ে তুলতুলের মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার নজর ঘুরিয়ে বলে সায়ান। থমথমে খেয়ে যায় তুলতুল।

“মমোটেও না। আমি তো জাস্ট দেখছিলাম কেমন লাগে আমায় এটাই। আপনার জন্য আমি সাজবো? জীবনেও না। নিজেকে কি মনে করেন? হুহহহহ ওনার জন্য সাজবো। এতোই দিনকাল খারাপ যাচ্ছে না আমার।

থামে তুলতুল। সায়ান তাকিয়েই আছে।

” খারাপ লোক। মেয়েদের সাথে নিকনিক করবেন তো আমায় কেনো বিয়ে করলেন? একটা দিয়ে হয় না? কয়টা লাগে? এতোই যদি বাইরে মন থাকে তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দিন আমায়। বেঁচে যাই আমি। এভাবে ঘরে বাইরে দুনৌকায় পা দিয়ে চলা যাবে না। আমি মানবো না।

গাল ফুলিয়ে বলে তুলতুল। তুলতুলকে কথার মধ্যে ব্যস্ত থাকতে দেখে সায়ান আস্তে আস্তে তুলতুলের কাছে চলে যায়। পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে। তুলতুল চমকে ওঠে।

“ছছছাড়ুন আমায়। আমার বান্ধবীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে এখন আমার সাথে ঘেসাঘেসি করতল এসেছে। বলি লজ্জা করে না? লজ্জা শরম কি পানিতে ধুয়ে ফেলেছেন? বিবেক বোধ নেই? আ

সায়ান নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় তুলতুলকে। তুলতুলের মুখ বন্ধ করে যায়। কাচুমাচু হয়ে সায়ানের শার্ট খাঁমচে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

“আমার যা খুশি তাই করবো। তাতে তোর কি? ইচ্ছে হলে তিথির সাথে প্রেমও করবো।

সায়ান তুলতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলে। চট করে চোখ খুলে তুলতুল। শক্ত করে ধাক্কা দেয় সায়ানকে। প্রস্তুত ছিলো না সায়ান। তাই দু পা পিছিয়ে যায়।
তুলতুলের চোখে পানি টলমল করছে।

” যা খুশি কর তুই। আমার কি? আমিও প্রেম করবো। দেখতে শুনতে কি কম না কি আমি? তোর মতো খাচ্চর দুটো দেখি নি আগে। সব তুই এখান থেকে। বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। লাগবে না তোকে আমার। একটুও ভালোবাসি না তোকে আমি। একদম তোর জন্য বিরিয়ানি রান্না করি নি। সাড়িটাও তোর জন্য পড়ি নি। একদম শুনবো না তনুর কথা। তোকে ইমপ্রেস করবো না আমি। আমি তোকে

তুলতুল চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে থাকে। সায়ান তুলতুলের দুই হাত এক হাতে ধরে ঠোঁটের ওপর হাত রাখে। চোখ বড়বড় করে সায়ানের দিকে তাকায় তুলতুল।

“চুপপপ
এতো কথা কেনো? তোর খবর জানার জন্য তিথির রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছি।

তুলতুল চোখ নামিয়ে ফেলে। চুপ হয়ে যায়। সায়ান ঠোঁটের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়।
দুই হাত তুলতুলের দুই গালে রাখে।

” তুই আর আম্মু ছাড়া আমার জীবনে দ্বিতীয় কোনো নারীর অস্তিত্ব নেই”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here