#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২০
#Raiha_Zubair_Ripte
মুনিয়া ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি নিয়ে আসে নি আসার সময় আরহাম ড্রপ করে গেছে কিন্তু এখন ফিরবে কিভাবে?আরহাম ফোন ও তুলছে না। উপায়ন্তর না পেয়ে এবার রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা ধরলো। আরাভ গাড়ির ভেতর থেকে মুনিয়াকে দেখে ফেলে। এটা মুনিয়া নাকি সেটা দেখার জন্য মুনিয়ার দিকে এগিয়ে আসে গাড়ি নি। হ্যাঁ এটা মুনিয়া।
” একা একা হেঁটে কোথায় যাচ্ছ?
হঠাৎ এমন কথা শুনে চমকে উঠে মুনিয়া। পাশ ফিরে গাড়ির ভেতর আরাভ কে দেখে।
” আমাকে বলছেন?
” না তোমার পাশে থাকা ঐ মেয়েটাকে।
” ওহ্
কথাটা বলে আবার হাঁটতে থাকে মুনিয়া। আরাভ নিজের মাথা নিজেই চাপড়ায়। গাড়িটা ধিরে ধিরে চালিয়ে আবার মুনিয়ার সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায়।
” এই মেয়ে এভাবে হেঁটে কোথায় যাচ্ছ?
মুনিয়া আবার হাঁটা থামিয়ে দাঁড়ায়।
” আমি?
” হুমম।
” ওহ্ আসলে গাড়ি নিয়ে আসি নি তাই হেঁটে যাচ্ছি শপিংমলে।
” শান রা যেখানে গেছে ওখানে?
” হ্যাঁ।
” আমিও ওখানেই যাচ্ছি তুমি চাইলে যেতে পারো আমার সাথে।
” উঠবো গাড়িতে?
” না র’শি দিচ্ছি আমার গাড়ির চাকার সাথে নিজেকে বেঁ’ধে নাও আমি তোমাকে হেঁ/চড়ে হেঁ/চড়ে নিয়ে যাই ভালো না আইডিয়াটা!
মুনিয়া বোকা বনে চলে যায়। পারমিশনই তো চাইলে শুধু। মুনিয়া গাড়ির পেছনে গিয়ে বসতে নিলে আরাভ বলে উঠে,,
” আমাকে কি তোমার ড্রাইভার মনে হয়। পেছনে কেনো বসেছো?
” তাহলে কোথায় বসবো?
” আমার কোলে এসে বসো ষ্টুপিড।
” আপনার কোলে? এটা হয় নাকি তাই!
” হবে না কেনো চোখের সামনে যদি আর কোনো জায়গা না পাও তাহলে তো কোলেই বসাতে হয়।
” আপনার পাশের সিটে বসবো?
” না গাড়ির সামনে দেখতে পাচ্ছো কতবড় জায়গায় আছে ওখানে গিয়ে বসো। ভালোই হবে বাতাস পাবা ভলো করে।
” এহ্ আমি পড়ে যাবো তো।
” আরে পড়বে না ট্রাস্ট মি।
মুনিয়া গাড়ি থেকে বের হয়। খানিক গাড়ির পেছনে গিয়ে হেসে নেয়। আর একটু থাকলে ওখানেই হেসে ফেলতো। মুনিয়া যেমন অবুঝ সেজে কথা বলে আরাভ ও তার সাথে তাল মেলায়। বিষয় টা খুব এনজয় করে মুনিয়া। হাসি থামিয়ে নিজেকে ঠিক করে গাড়িতে এসে বসে।
বেশ নিরবতা চলে দুজনের মধ্যে। আরাভ কিছু একটা মনে করে মুনিয়াকে জিজ্ঞেস করে,,
” তুমি ভার্সিটি তে কেনো এসেছ?
মুনিয়া সামনে তাকিয়ে বলে,,
” বয়ফ্রেন্ডের ক্লাস করতে।
” মানে!
” মানে হচ্ছে মানুষ তো আসে ভার্সিটিতে বয়ফ্রেন্ডের ক্লাস করতে। আমি ও এসেছি।
” ফাইজলামি করছো?
” এমা আমি কেনো ফাইজলামি করবো?
” তাই তে করছো। কয়েকদিন আগেও না আমাকে জমের মতো ভয় পেতে।
” এখনও তো পাই।
” কিভাবে?
” আমার দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকান।
” কেনো?
” তাহলে দেখবেন ভয় পেয়ে আছি।
” আচ্ছা আমার দিকে তাকাও এই দেখো রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে আছি।
মুনিয়া আরাভের দিকে তাকায়। আরাভের তাকানো দেখে হেঁসে ফেলে।
” হাসছো কেনো?
” এটা তো রাগান্বিত চোখ না।
” তুমি অনেক পাঁজি হয়ে গেছো জানো?
” আপনি না বললে জানবো কিভাবে?
” এই যে বললাম।
” হুমম এখন থেকে জেনে রাখলাম আমি অনেক পাঁজি।
” গুড।
কথার তালে তালে শপিংমলের সামনে এসে পড়ে আরাভ মুনিয়া। মুনিয়া চশমা টা ঠেলে গাড়ি থেকে বের হয়। আরাভ গাড়ি টা সাইডে রেখে মুনিয়ার সাথে শপিংমলে প্রবেশ করে।
শান একের পর এক লেহেঙ্গা দেখছে এনার জন্য একটাও পছন্দ হচ্ছে না। এনা তপ্ত শ্বাস ফেলে।
” আর কতোক্ষণব্যাপী টাইম ওয়েস্ট করবেন। যেকোনো একটা নিলেই তো হয়।
” কি ভাবিপু কি যে-কোনো একটা নিলেই হয়?
মুনিয়াকে দেখে এনা জড়িয়ে ধরে। পাশে আরাভ কে দেখে বলে,,
” দুজনের এন্ট্রি টাইমিং তো ভালোই।
আরাভ স্মিত হাসে।
” হুম তোমার ননদ কে নিয়ে আসলাম। দেখলাম রাস্তায় একা একা হাঁটছে তাই একটু সাহায্য করলাম।
শান ডার্ক রেড কালারের একটা লেহেঙ্গা এনে এনার সামনে ধরে।
” এটা কেমন?
এনা তাকায় লেহেঙ্গা টার দিকে লেহেঙ্গা টা অনেক সুন্দর। ডার্ক রেডের উপর গোল্ডেন কালারের কাজ করা।
” সুন্দর তো অনেক।
শান এটা নিয়ে দোকানদার কে প্যাক করতে বলে সেই সাথে গায়ে হলুদের জন্য হেয়াইট কালার তার ভেতর কাচা হলুদ রঙের কাজ করা সেই লেহেঙ্গা টাও প্যাক করতে বলে।
অন্য দিকে হেনাকে আরহাম একটার পর একটা লেহেঙ্গা শাড়ি দেখাচ্ছে। দোকানদার ও হাঁপিয়ে গেছে। হেনার বেশ রাগ হচ্ছে আরহামের উপর। তার গার্লফ্রেন্ড কে দিবে শাড়ি লেহেঙ্গা আর তাকে কিনা দেখাচ্ছে কোনটা নিবে। এবার কিছুটা রাগ নিয়েই আরহাম কে বলে,,
” হচ্ছে টা কি আর কত শাড়ি লেহেঙ্গা দেখাবেন। আপনার জন্য আমি আর সেলসম্যান দেখেন বিরক্ত হয়ে গেছি।
” আপনি পছন্দ করে দিলেই তো আর এতো বিরক্ত হতে হয় না।
” আপনার গার্লফ্রেন্ডের কেমন শাড়ি লেহেঙ্গা পছন্দ আমি কিভাবে জানবো। আর আপনার গার্লফ্রেন্ড ই বা দেখতে কেমন।
” আমার গার্লফ্রেন্ড দেখতে অনেক সুন্দর ডাগর ডাগর চোখ। নাকের ডোগায় রাগ টইটম্বুর করে। ফর্সা গায়ের রং। একদম মায়াবতী। হাইট হবে পাঁচ ফুট চার বা তিন ইঞ্চি।
সহসা হেনার মন খারাপ হয়ে গেল। গার্লফ্রেন্ডের রুপের এতে প্রশংসা বাহ! পেছন থেকে আরহাম হেনার কান্ড দেখে ফাইয়াজ হেসে উঠে। হেনা শাড়ি লেহেঙ্গার ভেতর থেকে একটা শুভ্র রঙের শাড়ি আর ছাই রঙের একটা লেহেঙ্গা নিয়ে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,,
” এই নিন। আর বিরক্ত করবেন না। আপনার জন্য আমার শপিং করা এখনো হয় নি।
আরহাম লেহেঙ্গা আর শাড়ি টা উল্টে পাল্টে দেখে।
” এটায় কি সত্যি তাকে মানাবে?
” হ্যাঁ ভাইয়া মানাবে আমি পছন্দ করে দিছি মানাবে না কেনো।
হেনার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে মুখটা চুপসে যায় আরহামের।
” ডোন্ট কল মি ভাইয়া। ইউ ক্যান কল মি ছ্যাইয়া ছ্যাইয়া।
কথাটা বলে আরহাম শাড়ি লেহেঙ্গা নিয়ে সেলসম্যানের কাছে নিয়ে প্যাক করতে বলে।
সবাই টুকটাক প্রায় অনেক কিছুই কিনেছে কিন্তু মুনিয়া কিনে নি। শান সেটা দেখে ভীষণ রেগে আছে। নিজের হাতে গিয়ে পছন্দ করে বোনের জন্য শাড়ি লেহেঙ্গা ওয়েস্টার্ন ড্রেস কিনে আনে। সাথে অ্যাঞ্জেলেকার জন্য ও। মেয়েটাকে অনেকদিন ধরে দেখে না শান। মা বাবা হেলেনের জন্য ও শপিং করে।
শপিং গুলো নিয়ে বের হয়ে পড়ে। আরাভ হেনা,এনা আর ফাইয়াজ কে নিয়ে চলে যায়। আর আরহাম মুনিয়াকে নিয়ে। শান একটা ট্যাক্সি ডেকে সেটায় উঠে পড়ে।
নিজের বাড়র সামনে ট্যাক্সিটা আসতেই ভাড়া মিটিয়ে বাড়িরতে কলিং বেল বাজায়। হেলেন দরজা খুলে দেয়। শান কে দেখে বেশ অবাক হয়।হেলেন গলা ছেড়ে তার শাশুড়ী কে ডাকে। অ্যাডেলা সবেই বিশ্রাম নেবার জন্য বিছানায় শুয়েছে। হেলেনের ডাক শুনে বিরক্তিতে বিছানা ছেড়ে উঠে আসে।
দরজার সামনে শান কে দেখে রাগান্বিত হয়ে হেলেনের দিকে তাকায়।
” তুমি এখানে এসেছ কেনো? ও বাড়িতে ঠাই মিলে নি বুঝি?
শান হাসে। ” ঠাই কেনো মিলবে না? আমার বিয়ে পরশু কাল গায়ে হলুদ তুমি আসবে না?
” না।
হেলেনের হাতে শপিংয়ের প্যাকেট গুলো দিয়ে অ্যাডেলার সামনে এসে দাঁড়ায়।
” এখনো রেগে আছো?
” রাগ নেই তোমার প্রতি।
” তাহলে আসবে না কেনো বিয়েতে?
” যার তার বিয়েতে অ্যাডেলা উইলসন যায় না।
” আমি তাহলে যার তারের মধ্যে পরি?
” হ্যাঁ।
” বেশ তাহলে তুমি যখন আসতে চাইছো না তাহলে জোর করবো না। আচ্ছা হেলেন অ্যাঞ্জেলেকা কোথায়?
” ওর বাবার কাছে খেলছে।
” খেলছে মানে?
” হুমম হ্যাভেন এখন প্রায় সুস্থ শুধু হাঁটতে পারে না।
বেশ অবাক হয় শান। তার ভাই সুস্থ হয়েছে কিন্তু তার মা তাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না?
” আমাকে জানাও নি তো?
” তেমাকে কেনো জানাবে আমার বাড়ির খবর বাহিরের মানুষকে কেনো দিবে।
অ্যাডেলার কথা শুনে কষ্ট পেলেও সেটাকে গুরুত্ব দিলো না শান।
” আমি কি দেখা করতে পারি হ্যাভেনের সাথে?
” না।
” অ্যাঞ্জেকার সাথেও না?
” না।
” বেশ। ভালো থেকো।
” শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে যাও।
” ফেলে দিয়ো এগুলো যদি বাসায় রাখার মতো জায়গা না পাও তবে।
কথা গুলো বলে শান চলে আসে।
#চলবে
(গল্পটা কেমন লাগছে সেটা জানাবেন আজ। হ্যাপি রিডিং)#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২১
#Raiha_Zubair_Ripte
পুরো বাড়ি রংবেরঙের আলোয় সজ্জিত। এনমুল হক এই ভীনদেশে থেকে যতোটুকু পেরেছে তার সাধ্যমতো সব টুকুই করেছে কোনো ত্রুটি রাখে নি। যেখানে মেয়ের পছন শান কে শানের ও পছন্দ এনা কে সেখানে সে কি করে বাঁধা দিবে। মেয়েদের সবসময় স্বাধীনতা দিয়েছে। কখনো শিকলে বেঁধে রেখে নিজের মতামত চাপিয়ে দেয় নি। মেয়েটা এখন পারমানেন্ট কানাডায় থেকে যাবে দেখে কিঞ্চিৎ কষ্ট পেলেও মেয়ে সুখের কাছে নিত্যন্ত তুচ্ছ।
রুমে গায়ে হলুদের লেহেঙ্গা টা পড়ে আয়নার সামনে বারবার তাকিয়ে নিজেকে দেখছে আর লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছে। একটু আগেই শান ফোন দিয়েছিল শান আসতেছে। সবার আগে শান তাকে শরীরে হলুদ ছুঁয়ে দিবে তারপর বাকিরা। লোকটার কেয়ারিং দিনকে দিন বেড়েই চলছে। একটু পর পর ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নেয়। হঠাৎ বেলকনি থেকে কিছু লাফ দিয়ে পড়ার শব্দে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠে এনা। ধির পায়ে হেঁটে বেলকনির কাছে আসতেই দেখে শান আসছে রুমে বেলকনির দরজা দিয়ে।
শান এনাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। তার বউকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। নেশা ধরে যাচ্ছে, মুখে হালকা মেকআপ সৌন্দর্য টাকে আরো কয়েকশো গুন বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। শানকে দেখে এনা মাথা নিচু করে ফেলে। স্মিত হাসে শান এগিয়ে এসে এনার থুতনি ধরে নিচু রাখা মাথাটা উচু করে। চোখ বন্ধ এনার। কেনো যেনো তাকাতে ইচ্ছে করছে না এনার।
” মাশা-আল্লাহ বউ জান।
চোখ মেলে তাকায় এনা। শানের গায়ে সাদা রঙের পাঞ্জাবি। লোকটাকে আজ প্রথম পাঞ্জাবি পরিহিত দেখছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। কেউ বলতেই পারবে না এ ছেলে খ্রিস্টান ছিলো।
” আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে মিস্টার জামাই।
” তাই নাকি।
এনা মাথা নাড়ায়।
দরজার ওপাশ থেকে হেনার ডাক আসে। এনা আড়চোখে দরজার পানে চায়। সময় হয়ে গেছে গায়ে হলুদের। শান এনার হাত ধরে। এনাকে নিয়ে দরজার কাছে এসে দরজা খুলে দেয়। হেনা শানকে দেখে ভরকে যায়।
” চলুন শালি সাহেবা।
হেনা মাথা ঝাকায়,”হ্যাঁ ভাইয়া আসুন।
হেনা চলে যায়।
” আপনি কোথায় যাবেন?
” গায়ে হলুদের সময় পার হচ্ছে তো,গায়ে হলুদ মাখবো না?
” সেটা না আপনার বাসায়?
” না আমাদের দু’জনের এক সাথে হবে চলো তো।
এনা শানকে নিয়ে নিচে আসে। বাগানে করা স্টেজে গিয়ে দুজন বসে পড়ে। হেনা হলুদের বাটি গুলো আনতে গিয়ে উঁচু হিলের সাথে বেঁধে পড়ে যেতে নিলে আরহাম ধরে ফেলে।
” দেখে হাঁটবেন তো বেয়াইন সাহেবা। এখনি তো পড়ে গিয়ে হাত পা ছু”লে ফেলতেন।
” আপনাকে কে ধরতে বলছে ছাড়ুন আমায়। ঐ যে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছেন তাকে গিয়ে ধরুন।
আরহাম হাসে। হেনা কি কোনো ভাবে জেলাশ? একটু খাটিয়ে দেখতে হচ্ছে তো।
হেনা ভেবে পায় না। ভাইয়ের গায়ে হলুদে গার্লফ্রেন্ড কে কেনো আনতে হবে আরহামের।
” ঠিকই বলছেন বেয়াইন সাহেবা। আপনি কি একটু আমার ভেরোনিকার খেয়াল রাখবেন। আসলে আমার জান টা না কাউকে চিনে না। আপনি একটু তাকে পুরো অনুষ্ঠানে কাছে কাছে রাখবেন।
হেনার রাগে পুরো শরীর জ্বলে উঠে, তার গার্লফ্রেন্ডের এসিস্ট্যান্ট নাকি সে যে বলবে।
” আমার অতো সময় নেই আপনার গার্লফ্রেন্ড কে আমার কাছে কাছে রাখার। ঐ যে চেয়ার আছে একটা চেয়ার ধরিয়ে দেন আর বসিয়ে রাখেন চলি।
” ইশ অপমান্স ভাইয়ের শশুর বাড়ি থেকে আমার হবু বউ একটু আতিথেয়তা পেলো না। মনে রাখলাম বেয়াইন সাহেবা।
কেঁপে উঠে হেনা। হবু বউ মানে? কি বলছে আরহাম এসব। পেছন ফিরে তাকায় হেনা।
” হবু বউ মানে?
” হবু বউ মানে হবু বউ।
” আপনাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে?
” না সে রাজি হলে বিয়ে ঠিক হতে কতক্ষণ।
” ওহ তাহলে হবু বউ বলছেন কেনো?
” কারন তাকেই যে করবো বিয়ে তাই।
” ভালো।
” শুধুই ভালো? আমাদের মানাবে না?
” হ্যাঁ মানাবে।
” তাহলে তো তড়িঘড়ি করে তাকে বিয়ের প্রস্তাব টা পাঠাতেই হয় তাই না?
” আমি জানি নাকি?
” আপনিই তো জানেন।
” আমি কিভাবে জানবো?
” ওভাবেই। আচ্ছা দাঁড়ান তো একটু।
কথাটা বলে আরহাম দৌড়ে প্রথম ভেরোনিকার কাছে গিয়ে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে হেনার সামনে দাঁড়ায়।
” বেয়াইন সাহেবা দেখো তো আমাদের পারফেক্ট লাগছে না?
হেনা তাকায় মেয়েটির দিকে। মেয়েটিকে তার একদম ভালো লাগছে না।
” কি হলো বেয়াইন সাহেবা বলছেন না কেনো?
” না ভালো মানাচ্ছে না।
আরহাম হাসে ভেরোনিকার পাশ থেকে সরে গিয়ে হেনার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,
” ভেরেনিকা দেখো তো আমায় আর মিড হেনাকে মানাচ্ছে নাকি?
ভেরোনিকার সামান্য কষ্ট হয়। তার বয়ফ্রেন্ডের অভাব নেই। কেনো যেনো আরহাম কে সব বয়ফ্রেন্ডের থেকে একটু বেশিই ভালো লাগতো। কাল রাতে আরহাম তাকে তার বাসায় ডেকেছিল। সংশয় ছিলো আরহাম নিজের অনুভূতি নিয়ে। ভেরোনিকা কে ডেকে যখন জিজ্ঞেস করলো,,
” আচ্ছা ভেরোনিকা ভালোবাসা মানে কি?
” জানা নেই আরহাম বাট হোয়াই?
” আই থিংক আমি কারো প্রেমে পড়েছি কারো মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলছি তাকে অন্যকারোর সাথে দেখলে ভীষণ রাগ হয়,তাকে দেখলে সব সময় তার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। আচ্ছা এগুলো কি প্রেমে পড়ার লক্ষণ?
” গুগল কে জিজ্ঞেস করো? আমি জানি না,আমার কাছে ভালোবাসা মানে তো যখন যার প্রতি যা ফিল আসে তাই।
” গুগল ও সাহায্য করতে ব্যার্থ।
” মেয়েটা কে?
” শান ভাইয়ার স্ত্রীর বোন হেনা।
” ওহ্ তাহলে কি আমাদের কি ব্রেকআপ।
” হুমম।
” ওহ্ আচ্ছা তাহলে চলি।
” কাল এসো কিন্তু।
” আচ্ছা।
কল্পনা থেকে বের হয় ভেরোনিকা মুচকি হেসে বলে,,
” তোমাদের দুজন কে খুব মানাচ্ছে।
ভ্রু কুঁচকে ফেলে হেনা। আরহাম হাসে। হেনা আরহামলর পানে চেয়ে রাগান্বিত চোখে চেয়ে চলে আসে।
” তোমাদের সত্যি ই মানাবে আরহাম। কিন্তু তাকে বলবে কিভাবে তুমি তাকে ভালোবাসো?
” সেটাই তো বুঝতে পারছি না কিভাবে বলবো?
স্টেজে বসে আছে এনা, শান। সবার অগোচরে শান সামনে রাখা হলুদের বাটি থেকে সামান্য হলুদ নিয়ে এনার কোমরে ছুঁয়ে দেয়। কেপে উঠে এনা কোমরে ঠান্ডা অনুভব করতেই। আঁড়চোখে শানের দিকে তাকায়। সবাই এক এক করে এনা শান কে হলুদ ছুঁয়ে দেয়।
পাশেই মুনিয়া আরাভের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা কাউকে ভালোবাসে কথাটা ভাবতেই বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো মুনিয়ার। সে তার অনুভূতি কখনোই আরাভের সামনে প্রকাশ করবে না। লোকটা খুব ভালোবাসে হেফজিবা আপু কে। কিন্তু হেফজিবা আপুও কোনো ভুল করে নি মুনিয়ার মতে। সবার ভাগ্যে ভালোবাসা থাকে না।
সামান্য একটু নাচ গান করে অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনুষ্ঠান শেষে আরহাম হেনার হাত টেনে বাড়ির পেছন দিকটায় নিয়ে যায়। হেনা আরহামের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,,
” এটা কোন ধরনের অভদ্রতা।
সহসা আরহাম হাঁটু গেঁড়ে বসে পকেট থেকে লালা গোলাপ টা বের করে।
” উইল ইউ ম্যারি মি বেয়াইন সাহেবা। আই নিড ইউ,আই রিয়েলি নিড ইউ।
হেনা অবাক হয় ছেলে এসব কি বলছে,কিছু খেয়েছে নাকি?
” পা’গল নাকি আপনি? গার্লফ্রেন্ড ভেবে অন্য মেয়েকে এসব বলছেন।
” আমি সুস্থ মস্তিষ্কেই বলছি বেয়াইন সাহেবা। অ্যান্সার মি উইল ইউ ম্যারি মি?
” নো নেভার।
আরহাম উঠে দাঁড়ায়।
” কেনো?
” কারন আপনার মতো প্লেবয় কে কেনো আমি বিয়ে করবো? আর আপনার গার্লফ্রেন্ড জানে এই খবর?
” আমি প্লেবয় হলাম কিভাবে। আর গার্লফ্রেন্ড জানলে কি হবে?
” বেহায়া লোক গার্লফ্রেন্ড থাকতে অন্য মেয়েকে বিয়ে প্রস্তাব দিচ্ছেন লজ্জা লাগছে না। আবার বলছেন গার্লফ্রেন্ড জানলে কি হবে?
” ভালোবাসা প্রকাশ করলে যদি বেহায়ার তকমা লেগে যায় লাগুক আমি তাতেও রাজি।
” কিসের ভালোবাসা। আপনার না গার্লফ্রেন্ড আছে।
” ওরা আমার গার্লফ্রেন্ড অব্দি সীমাবদ্ধ ছিলো আর তাছাড়া এই কানাডায় এসব কমন ব্যাপার গার্লফ্রেন্ড থাকবেই এটা স্বাভাবিক। আপনি বললে আমি তাদের ও ছেড়ে দিতে রাজি।
” ফ্লাটিং করছেন আমার সাথে?
” নো আ’ম সিরিয়াস।
” এই সরুন সামনে থেকে যেতে দিন।
” অ্যান্সার টা দিয়ে যান।
” কিসের অ্যান্সার?
” বিয়ে করবে আমায়?
” না বলছি না আমি একবার কথা কানে যায় না?
” না বলতে বলছি আমি? না বলছেন কেনো হ্যাঁ বলেন কুইক তাহলে ব্রো এর বিয়ে শেষ হলে আপনার বাবার কাছে আমি আমার বিয়ের প্রস্তাব রাখবো।
” আগে প্রস্তাব রেখে তো দেখান হুম আসছে আমার সাথে মজা নিতে।
” প্রস্তাব রাখলে আপনি রাজি?
” বাবা রাজি হলে আমিও রাজি।
” সত্যি।
” না মিথ্যা।
” সিরিয়াস হয়ে বলুন আমি কিন্তু সত্যি সত্যি নিয়ে যাবো প্রস্তাব তখন রাজি না হলে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করবো।
” থ্রেট দিচ্ছেন?
” যা ভাববেন।
” সরুন যেতে দিন। বাবা কে রাজি করান।
” আপনার বাবা রাজি হয়ে যাবে সমস্যা নেই।
” বুঝলেন কি করে?
” তাকে দেখে যতোদূর মনে হলো সে কখনো তার মেয়েদের উপর নিজের মতামত চাপিয়ে দেয় না। বরং মেয়েদের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দেয়।
কথাটা শুনে স্মিত হেসে চলে আসে হেনা।
********
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে এনা। আজ তার বিয়ে ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে। কথাটা ভেবে আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে উঠতেই ফোনে র মেসেজ টোন বেজে উঠে। এনার মন খুশিতে ভরে যায়। নিশ্চয়ই শানের মেসেজ। খুশি মন নিয়ে ফোনটা তুলে দেখে হেফজিবার মেসেজ। অনেক দিন পর মেসেজ দিলো।
” আজ তোর বিয়ে তোর আগামী জীবন সুন্দরময় হোক সেই দোয়া করি। আমিও বিয়ে করতে যাচ্ছি আজ আমার জন্য দোয়া করিস ছেলে খুব ভালো এই কয়েকদিনে খুব ভালোবেসে ফেলছে ছেলেটা আমায়। আমার অফিসেরই এক কলিগ। দোয়া করিস আমাদের জন্য।
মেসেজ টা পড়ে এনা স্তব্ধ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। সত্যি হেফজিবা বিয়ে করছে।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে হেফজিবা। হাতে তার ফোন এনা যে মেসেজ সিন করেছে সেটা বুঝতে পেরেছে হেফজিবা। মেসেজ দিয়ে এখন শান্তি পাচ্ছে হেফজিবা। নিশ্চয়ই আরাভ ও জানতে পারবে এই খবর আচ্ছা আরাভ কি কষ্ট পাবে। আমাকে ভুলে কি কাউকে মন দিয়ে বসবে? হয়তো মন দিয়ে ফেলবে। আমি তো এটাই চাই আরাভ আমায় ভুলে কাউকে আঁকড়ে ধরুক। যেভাবে আমি কাউকে আঁকড়ে ধরছি। মানুষটার প্রতি এখনো অনুভূতি জন্ম নেয় নি হয়তো বিয়ের পর নিবে। ছেলেটা আমারই দূর সম্পর্কের কাজিন যাদের বাসায় এখন থাকছি। হয়তো সময়ের ব্যাবধনের আরাভের প্রতি জন্ম নেওয়া অনুভূতি মূর্ছা যাবে।
——————
আরাভ বিছানার প্রান্তে বসে আছে। এনা কেবলই জানালো হেফজিবার বিয়ের খবর। আরাভ স্মিত হাসলো। মেয়েটার মনে তাহলে সে কোনোকালেই ছিলো না। জীবন কারো জন্য থেমে কোনো কালেই থাকবে না। হেফজিবা সুখে থাকুক সেটাই চায় আরাভ। তার জন্য হয়তো অন্য কেউ অপেক্ষা করছে।
” চিন্তা করো না এনা আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি। তুমি যাও তোমার রুমে কিছুক্ষন বাদেই বিয়ে যাও রেডি হও।
এনা সম্মতি জানিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। দুজন মহিলাকে পাঠিয়েছে শান এনাকে সাজানের জন্য। তারা সাজাচ্ছে এনা কে।
এদিকে শান সকাল থেকে মাথা ব্যাথার জন্য একদণ্ড স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছে না। ডক্টর কে ফোন ও করেছিল শান। ডক্টর ইমিডিয়েটলি তাকে দেখা করতে বলেছে। খানিক বাদেই শানের বিয়ে ও বাড়িতে যেতে হবে শান কে এনা কে নিয়ে আসার জন্য। এখন সে কিভাবে ডক্টরের কাছে যাবে। তাই ডক্টরের কাছে না গিয়ে মাথা ব্যাথার একটা মেডিসিন খেয়ে নেয়। এখন বিছানায় শুয়ে আছে। দরজার ওপাশ থেকে আরহাম দরজা ধাক্কা দেয় শানের। শান নড়েচড়ে উঠে। কিন্তু বিছানা থেকে উঠতে পারে না। কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে চেষ্টা করে উঠার। কিন্তু উঠে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না মাথাটা ঝিলিক দিয়ে উঠে, মাথা চেপে ধরে,অসহ্য রকমের যন্ত্রণা, সহ্য হচ্ছে না শানের। নাক দিয়ে গড়িয়ে র’ক্ত পড়ে। সহসা ফ্লোরে নেতিয়ে পড়ে যায় শান। এমনটা তো হবার ছিলো না। এনার হাস্যজ্বল মুখটা ভেসে উঠে। এনার সাথে কাটানো প্রত্যেক টা মূহুর্ত মনে পড়ে যায়। তবে কি সব চেষ্টাই বৃথা শানের? জীবন প্রদীপ কি তাহলে এখানেই নিস্তেজ তার?
#চলবে?
( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। আর দুই তিন পর্বেই গল্পটা শেষ হবে। হ্যাপি রিডিং)