আমি কাউকে বলিনি সে নাম পর্ব ১৩+১৪

আমি কাউকে বলিনি সে নাম
তামান্না জেনিফার
পর্ব ১৩
__________________________
নিপার জন্য যে শ্বশুরবাড়িতে বড়সড় ধাক্কা অপেক্ষা করছিল , তা মেয়েটা তখনও জানতো না ৷ বড়মিয়া সাহেব বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে যখন ডাকলেন “বউ , বাড়িত নয়া বউ আনছি .. একটু শরবত নিয়া আসো ” , তখনও নিপা কিছু বোঝেনি ৷ বুঝতে পারলো তখন যখন তার শাশুড়ি দরজার সামনে এসে “ইয়া পরোয়ারদিগার” বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেল ! সাথে সাথে ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেল , সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো মানুষটাকে নিয়ে ৷ নিপা দরজায় একা দাঁড়িয়ে , এখন সে ভিতরে যাবে না কী এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে এই চিন্তা করছে ৷ অচেনা একটা বাড়ি , সাথে পরিচিত একটা মানুষও নেই ৷ সবার বিয়েতে সে দেখেছে বাবার বাড়ি থেকে কেউ না কেউ আসে , কিন্তু নিপার সাথে কেউ কেন এল না কে জানে ! অন্তত রূপাকে তো পাঠাতেই পারতো ! এই রকম একা একা একটা অজানা জায়গায় , অচেনা মানুষজন সব ! নিপা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে ৷ এমন সময় একটা গোলাপী রঙের সুতি শাড়ি পরা মেয়ে এসে তাকে একগ্লাস শরবত ধরিয়ে দেয় ৷ সারাদিন তেমন কিছু খাওয়া হয়নি , শরবতটা খেতেই পেটের ভেতর কেমন একটা মোচর দেয় , মনে হয় বমি হয়ে যাবে ৷ বড্ড গরম পরেছে , নিপা অসহায়ের মত চারপাশে তাঁকায় ৷ কেউ কী নেই তাকে একটু ঘরের মধ্যে নিয়ে ফ্যানের নিচে বসতে দেবে !

ভাগ্য একটু সুপ্রসন্ন হয় ৷ সেই গোলাপী শাড়ি পরা মেয়েটা এসেই তাকে ঘরে নিয়ে যায় ৷ বিছানায় বসিয়ে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে ” তোমার নাম কী ? ” ৷ নিপা খুব ধীরে বলে “আয়েশা আক্তার নিপা ” ৷ মেয়েটি নিপাকে আবার বলে “তুমি এখানে আরাম করে বসো , সমস্যা নাই আম্মার জ্ঞান ফিরছে ৷ চিন্তার কিছু নাই ৷ তুমি বসো , আমি আসি ৷” নিপা ভাবে মানুষটার সাথে তো পরিচয় হলো না ৷ সে কী তার ননদ ? সে একটু দ্বিধা নিয়েই জিজ্ঞেস করে “আপনি আমার কী হবেন সম্পর্কে ? আপনি কী তার বোন ? ”

এবার মেয়েটি হাসে ৷ খিলখিলিয়ে হাসে , যেন মজার একটি প্রশ্ন শুনেছে সে ৷ তার হাসি দেখে নিপা ভাবতে থাকে সম্পর্ক জিজ্ঞেস করাটা ভুল হলো না তো !

মেয়েটি হাসতে হাসতেই বলে “তুমি যার স্ত্রী , আমিও তারই স্ত্রী ৷ সম্পর্ক বলতে গেলে বলতে হয় তুমি আমার সতীন হা হা হা !”

এবার নিপার অবাক হবার পালা ! নিপার গলা শুকিয়ে আসে , মনে হয় জীবনে কখনও এক ফোঁটা পানি খায়নি সে ৷ এতটা তৃষ্ণা পায় তার , মনে হয় এক কলস পানি এক নিমেষেই শেষ করে ফেলতে পারবে … কাতর গলায় নিপা তাকে বলে “একটু পানি … একটু পানি খাবো …”

*********

কখন যে নিপা ঘুমিয়ে পড়েছিল সে জানে না ৷ মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গে হৈচৈ শুনে ৷ নিয়ম অনুযায়ী আজ তার বাসর হবার কথা থাকলেও এখনও সে একা ঘরে ৷ খানিকটা ভয় আর খানিকটা কৌতুহল নিয়ে দরজার দিকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় ৷ মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করে কী কথা হচ্ছে বাইরে ….

“হাভাইত্যার ঘর থেইকা আসি নাই আমি ! তোমার অনেক অত্যাচার মাথা নিচু কইরা সহ্য কইরা গেছি খালি পোলাপানের মুখের দিকে তাঁকায়া ৷ আইজ সেই পোলারে তুমি আরেক দফা বিয়া করাইলা একবার মুখের কথাও তো কইলা না ! তলে তলে এত ঘোট ক্যামনে পাকাও আমার বুঝে আসে না ৷ তোমার সংসার আর নয়া বৌমা তোমারে মোবারক ৷ আমি ছোট বৌমারে নিয়া কাইল সূর্য উঠলেই চলে যামু ৷ ”

“মাথা ঠাণ্ডা করো ৷ বেশি বাড় বাইরো না ৷ বাঞ্জি মাইয়্যালোক নিয়া কতদিন ঘর করবো তোমার পোলা ! যা করছি বুইঝা শুইনা করছি ৷ তোমার মতামতের ধার ধারি না আমি ৷ ”

“হ , ধার ধারা লাগবো না , যামু গা আমি ৷ আপনের সংসারের মুখে সাত লাথ্থি ৷ ”

হঠাৎই মারপিটের শব্দ আর কান্নার শব্দ ভেসে আসে ৷ নিপার অস্বস্তি লাগা শুরু হয় ৷ ভিতরে ভিতরে যেন জ্বলে পুড়ে যায় সে ৷ নির্ঘাত তার শ্বশুর ধরে ঠেঙাচ্ছে তার শাশুড়িকে ৷ নিজেকে আর আটকে রাখতে পারে না ৷ বের হয়ে শব্দের উৎসের দিকে হাঁটা দিবে এমন সময় একটা পুরুষালি হাত তার পথ আঁটকে দেয় ৷ গম্ভীর গলায় বলে “ভিত্রে যাও নয়া বউ ” …. এই মানুষটি নিপার স্বামী ৷ ধর্মমতে যার সাথে বিয়ে হয়েছে নিপার ৷ সত্য গোপন করে যে বিয়ে করেছে নিপাকে … একরাশ ঘৃনা নিয়ে তার চোখের দিকে তাঁকায় নিপা ৷ একটা মানুষখেকো ভয়ঙ্কর প্রাণী মনে হয় তাকে ৷ আচ্ছা সেই গোলাপী শাড়ি পরা মেয়েটি কই ? শুধু ঐ মেয়েটিকেই যেন আপন মনে হচ্ছে নিপার , চারদিকে তাঁকিয়ে সে একসময় খুঁজে পায় মেয়েটিকে ৷ শ্বশুরের হাত থেকে শাশুড়িকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা অন্য কোন ঘরে …

************

রাহেলা বেগমের কান্না থামছে না ৷ কাঁদতে কাঁদতে গলার স্বর ভেঙে গেছে ৷ এখন তিনি তার মরা বাপকে ডেকে ডেকে কাঁদছেন সুর করে ৷ হঠাৎ শুনলে মনে হবে যেন বিয়ের গীত গাইছে কেউ ৷ বিলাপ করে করে বলছেন “ও আমার বাজান গো , কোন পাষানের ঘরে তুমি আমায় তুইলা দিলা গো , নিজের পুলার বিয়ার খবর বিয়ার পরে জানলাম গো , ও আমার বাজান গো ! ”

সুমাইয়ার হাসি পাচ্ছে ৷ একজন বয়স্ক মানুষকে এভাবে কাঁদতে দেখে হাসাটা মোটেও কোন সভ্য কাজ না ৷ তবে তার শাশুড়িকে সে খুব ভালো করে চেনে ৷ এই যে এত ঝগড়াঝাটি কান্নাকাটি এসবই সুমাইয়াকে চুপ করে রাখার জন্য ৷ রাহেলা বেগম নামের এই মানুষটা খুব ভালো অভিনয় জানে ৷ সবচেয়ে ভালো জানে জ্ঞান হারাবার অভিনয় ৷ স্বয়ং ডাক্তারও ধরতে পারবে না এমন ৷ কিন্তু সুমাইয়া টের পায় ৷ প্রমানও পেয়েছে কয়েকবার ৷ আজকেও যখন অজ্ঞান হয়ে যাওয়া শাশুড়ির কানের কাছে মুখটা নিয়ে চুপিচুপি সে বলেছিল “ওরা ডাক্তার আনতে গেছে , লোকমান ডাক্তার … উনার কিন্তু হাতের চেয়ে সুই বেশি চলে ” তার এক মিনিটের মধ্যে উঠে বসেছেন তিনি ৷ আড়চোখে এদিক ওদিক চেয়ে খুঁজেছেন লোকমান ডাক্তার এলো কী না ! তারপর থেকে কান্নাকাটি ঝগড়াঝাটি করছেন যাতে সুমাইয়া এসব দেখে চুপ করে থাকে , যেন ভাবে তিনিই প্রতিকার খুঁজছেন সুমাইয়ার নতুন করে কিছু বলার দরকার নাই ৷ স্বীকার না করলেও এটা সত্য , সুমাইয়াকে কিছুটা ভয়ই পান তিনি ৷ উপরে চোটপাট করলেও এটা বোঝেন যে সুমাইয়া সহজ মেয়ে নয় ! তাই এত অভিনয় , তাই এত গলাবাজি !

ওদিকে সুমাইয়া মনে মনে ভাবছে “বাঁচলাম ৷ এবার অন্তত শান্তির ঘুম ঘুমাবো , কোন পশুর পাশবিকতা আর আমাকে ছুঁতে পারবে না ৷ কারো মদ্যপ নোংরা হাত আর আমার শরীরে কিলবিল করবে না ৷ এবার আমি মুক্ত ৷ ”

কিন্তু মুক্তি কী এতই সহজ ?
চৌধুরি বাড়ির ছোটবউয়ের মুক্তি কী এত সহজে মিলবে ?

রাতের গোলযোগ সকালের আয়োজনে কোন ছাপই রাখে না ৷ রাহেলা বেগম পান খেতে খেতে চেয়ারে বসে মাছগুলো আরো কড়া করে ভাজার নির্দেশ দেন ৷ তাকে দেখে কেউ বলবে না এই মানুষটি গত রাতে কী কী কাণ্ড করেছে ৷ বড়মিয়া রান্নাঘরে খোঁজ নিতে এলে এই রাহেলা বেগমই মাথায় কাপড় ঠিক করতে করতে বলে “এইদিক নিয়া আপনে চিন্তা কইরেন না ৷ মাছ ভাজন আর এক খোলা , এরপর ভুনার লাইগা ডিম বসাইবো ৷ আপ্নে বাইরে গোসত পোলাওয়ের কাছে কাউরে বসান ৷ এদিক আমি আছি ৷ নিচ্চিন্ত থাকেন ৷”

বড়মিয়া নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না ৷ সুমাইয়া নতুন বউ নিয়ে কোন কিছুই বললো না , বরং কেমন যেন হাসিখুশি দেখাচ্ছে তাকে ৷ এটা কী তবে ঝড়ের পূর্বাভাস !
আমি কাউকে বলিনি সে নাম
তামান্না জেনিফার
পর্ব ১৪
__________________________
সকাল সকাল আলেয়া চাচীর সাথে বেশ একটা তর্কযুদ্ধ হয়ে গেছে রূপার ৷ নিপার বৌভাতে আলেয়া বেগম যাচ্ছেন না কারণ সবাই চলে গেলে তার বড় জা সুফিয়া বেগমকে দেখে রাখার জন্য আপন কেউ থাকবে না ৷ তা তিনি যাবেন না বেশ ভালো কথা , না যাক ৷ সমস্যাটা হলো তিনি যাবেন না জন্য রূপাকেও তিনি পাঠাবেন না ৷ ভাবীরা তো যাচ্ছে , রূপা তো তাদের সাথেই যেতে পারতো ! কিন্তু চাচীর এক কথা “একলা ছাড়ুম না সেয়ান মাইয়্যা ” … এতগুলো লোক যাচ্ছে , তাহলে সে একলা হয় কিভাবে ! রূপা কত কিছু ভেবে রেখেছে , নিপা আপার শ্বশুরবাড়িটা কেমন এটা জানার জন্য ভেতরটা অস্থির হয়ে আছে ! শুনেছে আশেপাশের দশগ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাড়ি তাদের ৷ বাড়ির সামনে না কী একটা ফোয়ারা আছে! ফোয়ারা জিনিসটা কী কে জানে .. সে যে কত সাধ করে আছে ফোয়ারা দেখবে সে কথা কী আলেয়া চাচী বোঝে না ! আসলে সবই বোঝে , ইচ্ছে করে তাকে যন্ত্রনা দেয় !

রূপার দুচোখ জলে ভরে যায় ৷ ওবাড়ি যাবার আগে মানিক চাচা একবার আলেয়া বেগমকে বলেছিলেন “বউ , যাইতে দেও না রূপারে ৷ আমি দেইখ্যা রাখুম ৷ ওর হাত ধইরা রাখুম ৷ ” জবাবে আলেয়া বেগম এমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাঁকিয়েছে যে মানিক মিয়া আর কথা বলার সাহস পায়নি ৷ বিবাদহীন জীবন তার পছন্দ , বউয়ের সাথে বিবাদে যান না তিনি কখনই ৷

দুপুর বেলা আলেয়া চাচী রূপাকে খেতে ডাকলেন , যেন কিছুই হয়নি এমন ভাবে ! অথচ সকালেই বলেছেন “বেসাইস্তা লবলবি , একলা একলা যাইতে চায় সাহস কত বড় ! এমুন বেহায়া মাইয়্যা জীবনে দেখি নাই ৷ আমার গলায় আল্লাহ এই বিষের মালা ঝুলায়ে দিছে , জীবনডা শ্যাষ করে দিলো আমার …আর একবার যাইতে চাইলে এই ঘরের বাঁশ খুইলা তর পিঠে ভাঙমু লবলবি কুনহানকার ! ” মনে হচ্ছে সকালে বলা গালিগুলো এখন সব ভুলে গেছেন আলেয়া বেগম ৷ কিন্তু রূপা কিছুই ভোলেনি ৷ রাগ করে সে বসেই থাকলো বারান্দায় ৷ আজ তার বাসী বিয়ের খাবার কথা , সেটাই যখন হলো না দরকার নেই আর খাওয়ার ৷

আলেয়া বেগম ভাত নিয়ে রূপার কাছে এসে বসলেন ৷ রূপার উস্কখুস্ক চুলে হাত দিয়ে বললেন

— খালি বকাবকি করি সেইটাই দেখলি ! তরে নিয়া আমি সারাক্ষন চিন্তা মধ্যে থাকি এইটা দেখলি না ! মা রে তুই বড় হইতাছোস ! এখনও বাচ্চাদের মত ব্যবহার করলে হইবো ? নিজের কোনো যত্ন নেস না , সুযোগ পাইলেই বাড়ির বাইরে যাস … আমার ভয় করে !

—আমারে নিয়া কারো চিন্তা করনের দরকার নাই

—তুই আমার দায়িত্ব , ছুটোকাল থেইকা তরে আমি পালতাছি , আমি চিন্তা না করলে কে করবো ? রাগ করিস না , খাইয়া ল ! সকালেও খাস নাই ৷ তরে খাবার দিয়া তর বড়চাচীরে খাওয়ামু ৷ বইসা থাকনের কপাল কী আমার আছে ?

—আমি কী ছুটো বাচ্চা যে হারায়া যামু ? ক্যান আমারে বাইন্ধা রাখো চাচী ?

—মাইয়্যা মানুষ যেইদিন জন্মায় থেইকা যেইদিন মরে , এর মধ্যের একটা দিনও নিরাপদ নয় ৷ বাইরে শকুন ,ঘরে শকুন … সবার নজর খালি মাইয়্যা মানুষের শইল্যে ৷ সেই শইল্যে যহন যোয়ার আসে তহন আলোর দিকে ছুইট্টা আসা পোকার মত কিলবিলায়ে পুরুষ মানুষ আসে তার দিকে ৷ ছোক ছোক করে কখন …. শোন রূপা , সব কথা তরে কইতে পারুম না আমি ৷ খালি এইটা জাইনা রাখ আমি তর শত্তুর না ! ভাত রাইখা গেলাম , খাইস ৷ বড়ভাবীরে খাওয়ামু ৷ খাইয়া লইস , অন্নের উপর রাগ করন ভালা না …

রূপা আলেয়া চাচীর সব কথা বোঝে না ৷ তারপরও যতটুকু বোঝে ওর মনে হয় হয়তো চাচী ঠিক কথায় বলেছে ৷ এইতো দুদিন আগেও দুপুরে চাচীর চোখে ফাঁকি দিয়ে দোকানে হজমি কিনতে গিয়েছিল যখন , দোকানদার চাচা তার হাত টেনে ধরেছিল ! এত ঘিনঘিন করে উঠেছিল সে সময় তার শরীরটা ! লজ্জায় ঘৃনায় হজমির দাম দোকানদারের মুখে ছুড়ে দিয়ে দৌড়ে এসেছিল সে ৷ সব না বুঝলেও কিছু তো সে বোঝে ! হঠাৎ করেই একদম পরিচিত মানষগুলো তার দিকে অপরিচিতের মত করে তাকায় ৷ সেই লোভী চোখগুলোর কথা সে কাউকেই বলতে পারে না ৷ এমন কী বড় চাচার বাড়ির কাজের ছেলে রতন তাকে দেখলেই নোংরা একটা হাসি দেয় ! একা পেলেই পথ আটকে দাঁড়ায় ৷ ধমক দিলেও সেই নোংরা হাসি … রূপার গা ঘিনঘিন করে উঠে !

চাচী একেবারেও ভুল বলেনি ৷ এই প্রথমবার রূপার মনে হয় চাচী মানুষটা খুব খারাপ না … ভাতের প্লেট কাছে টেনে নেয় রূপা ৷ দূর থেকে বড় জা’কে খাওয়াতে খাওয়াতে সে দৃশ্য দেখেন আলেয়া বেগম ৷ একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে ভাবেন , এবার তারও খেতে হবে … সকাল থেকে তিনিও খাননি ..

*********

জহুরা আর লাকী খুবই অবাক হয়ে দেখলো একটা মেয়ে নিপাকে সাজিয়ে দিচ্ছে ৷ একটু আগেই তারা জেনেছে এই মেয়েটা নিপার সতীন ৷ সতীন কেন সতীনের সাথে এমন হেসে কথা বলবে ! সতীনের উপর বিয়ে হয়েছে শোনার পর থেকেই তারা দুজনই মন খারাপ করে ছিল ৷ এখন এই পরিস্থিতি দেখে মন খারাপ করবে না অবাক হবে এটাই বড় প্রশ্ন !

নিপাকে দেখে মনে হচ্ছে ভাবলেশহীন একটা প্রাণী ৷ যার দেহে হৃদপিণ্ড হয়তো ধ্বক ধ্বক করছে কিন্তু তারপরও দেহ নিঃসার …. চোখে অশ্রু নেই কিন্তু দিপ্তীও নেই ৷

সুমাইয়া মেয়েটাকে ভালো লাগছে তার , আর কাউকেই ভালো লাগছে না ৷ স্বামী মানুষটাকে সবচেয়ে অসহ্য লাগছে ৷ সুমাইয়া তার সাথে এমন ভাবে মিশছে মনে হচ্ছে যেন রূপা ! এতটুকু সময়েই বেশ বোঝা যাচ্ছে মেয়েটার মনটা সরল ৷

সুমাইয়া বকবক করলেও নিপা ছিল নিশ্চুপ শ্রোতা ৷ খাবারের ব্যাচ বসা শুরু হয়েছে শুনে সবাই যখন ঘর খালি করে চলে গেল , তখন নিপা প্রথম কথাটা বললো ! সুমাইয়ার হাত ধরে বললো

—বুবু , আল্লাহর কসম আমি জানতাম না তার আগের বউ আছে ! জানলে আমি জান দিতাম তবু কবুল কইতাম !

—আরে পাগল করে কী ! আমি জানি রে বইন … কাউরে চেনা বাকী নাই আমার ৷

—আজ তো আমার বাপের বাড়ির লোকেরা আমারে নিয়া যাইবো ৷ আমি আর ফেরত আসুম না বুবু … কারো সংসার ভাইঙা নিজের সংসার আমি সাজাইতে পারুম না …

—হা হা হা!সংসার …. তা তুমি না আইতে চাইলেই যে সেইখানে তারা তোমারে রাখবে তার নিশ্চয়তা কী বইন ! যাও , ঘুইরা আসো ! তারা রাখতে রাজী হইলে অবশ্যই থাকবা …

—অবশ্যই তারা সব জানলে পরে রাজী হইবো ৷ আমার আব্বা আমারে খুব ভালোবাসে ৷ সে ও আমার মতই কিছুই জানতো , জানলে আমারে এই ঘরে সে কুনোদিনও পাঠাইতো না !

—আচ্ছা ঠিক আছে ৷ এইবার মুখ বন্ধ লিপিস্টিক লাগামু ৷ এরপর কাজল দিমু , চোখ পিটপিট করবা না একদম কয়া দিলাম ..,

নিপা মুচকি হাসে সুমাইয়ার কথা শুনে ৷

সুমাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে “পাগল মেয়েটা এখনও বোঝেনি , বিয়ের পর বাপ মা সবার আগে পর হয়ে যায় ৷ মেয়ে মানুষ বাপের কাঁধের বোঝা ৷ একবার ঝেড়ে ফেলার পর সেই বোঝা আর কেউ কাঁধে নিতে চায় না ! ”

চলবে—
চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here