#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৯
#writer:Mishmi_muntaha_moon
আব্বুর সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু লিয়াকত আংকেল উনার স্ত্রী আর ছেলে আই মিন রুদ্ধ সাহেব এসেছেন।আমাকে উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি কথার ফাকে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চোখ টিপ দিলো।
দেখেই আমার এক ভ্রু উঠে গেলো।উনি গাড়ো সবুজ রঙের পাঞ্জাবী পরেছে।
উনাকে দেখে আনন্দে মুচকি হাসি ফুটলো মুখে।উনার দিকে তাকিয়ে থাকার মাঝেই তিশা আমার কানের সামনে মুখ এনে ডেকে বলল
” কিগো আপু!এই ছেলেটা কে গো?”
তিশার কথায় একপলক ওর দিকে তাকিয়ে আবারও উনার দিকে তাকালাম তারপর বললাম
” বাবার বন্ধুর ছেলে।”
” কিউট তো”
ওর কথা শুনে মাথাটা হাল্কা কাত করে তাকালাম ওর দিকে।তারপর বললাম
” পছন্দ হয় নাকি?”
” হুম”
তিশার হাসিমাখা প্রশ্ন শুনে জোড়পূর্বক হাসি টেনে কনুই দিয়ে পিঠে গুতা দিয়ে বললাম
” এক থাপ্পড় দিয়ে দাত সব ফেলে দেবো।এতোটুকু কালে ভালো লাগা আবার তাও নিজের থেকে প্রায় ৮ বছর বড় ছেলেকে।”
আমার কথায় বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল
” আহা আপু কি যে বলো না আমার বয়সি মেয়ের জন্য ২৭ ২৮ বয়সের ছেলেই পার্ফেক্ট বুঝলা”
” কিন্তু উনি না। কারণ উনি অন্য কারো জন্য পার্ফেক্ট ”
আমার কথায় ও উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো
” কে পার্ফেক্ট তাহলে”
ওর প্রশ্ন কে পাত্তা দিলাম না।সামনের সোফায় বসে থাকা রুদ্ধ সাহেবকে দেখতে লাগলাম।উনিতো হাতে থাকা পায়েসের পিরিচ থেকে পায়েস খাচ্ছে আর আব্বু, চাচার সাথে টুকটাক কথা বলায় ব্যস্ত।
~~~~~~~~~~
তুষার ভাই আর জুবায়ের ভাই এসেই উনার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে লাগলো।
আমি তো শুধু সুযোগ খুজছি উনার সাথে কথা বলার।কিন্তু নাহ সুযোগ কোথায়?
মেহেদী শুকাতেই তিশা আর আমি একসাথেই মেহেদী উঠিয়ে ফেললাম।অনেক সুন্দর কালার হয়েছে।
ছাদে তুষার ভাই আর জুবায়ের ভাই রুদ্ধ সাহেবকে সাথে নিয়ে কথা বলছে।
আমি আর তিশা যেতেই তুষার ভাই আমাদের পাঠিয়ে দিলো।কি করার আর!
রাত ১০টা বাজে কিন্তু কেউ ঘুমায় নি। কালকে তরু আপুর গায়ে হলুদ তারই অনেক কাজ বাকি।বড়রা সেই সব কাজ করছে এখনো। ছোটরাও তাদের কাজে ব্যস্ত।
আমার চোখে ঘুম কিন্তু ঘুমাতে পারছি না। কারণ কোনো রুম খালি না।ফুপ্পি দের তিন রুমের ফ্ল্যাট সেইখানেই যেমন তেমন ভাবে সব মেহোমান আছে।
সোফায় বসা থেকে উঠে দাড়ালাম। ভাবলাম বাহির থেকে হেটে আসি ঘুমটা যদি তাহলে একটু যায়।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ।ফুপ্পিদের দুই তালার বিল্ডিং নিচেই ডান পাশে ছোট একটা জংগল এবং বাম পাশে বাগান।মাঝে দিয়ে হাটার রাস্তা একটু হেটে সামনেই বড় রাস্তা।
তিশা সোফায় বসে বসেই ঝিমুচ্ছে।আমি ডেকে নিচে যাওয়ার কথা বললে ও যাবে না বলল।
তাই আমি একাই ওড়না দিয়ে শরীর ডেকে নিচে নামতে লাগলাম।
_
ফুপ্পিদের বাড়ির বাগান যতোটা সুন্দর জংগল টা ততটাই ভয়ংকর লাগে রাতের আলোতে।মেইন গেটের দুই পাশে দুইটা লাইট লাগানো তাও আবার কম আলোর।আবছা আবছা দেখা যায় আশে পাশে।
বাগানে বড় একটা সাদা জবা গাছ আছে দেখলাম।কি সুন্দর ভাবে সাদা ফুল গুলো ফুটে আছে।আরও কত গাছ বেলি গাছও আছে। বেলি ফুলের কাছে গিয়ে ঝুকে ফুল থেকে গ্রান নিতে লাগলাম একে একে।
হঠাৎ চুলে কারোর ছোয়া পেতেই শরীর পুরো ভয়ে জমে গেলো।
রাত তো কম না সাড়ে ১০ টার মতো বাজে।
আস্তে আস্তে করে উঠে দাড়ালাম।পিছে তাকানোর সাহস হচ্ছে না।মনে হচ্ছে জংগল থেকে কোনো জ্বিন এসে পিছে দাঁড়িয়ে আছে।
পিছে তাকিয়েই একটি মুর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দেখে দিলাম এক চিৎকার।
সাথে সাথেই উনি চাপা স্বরে বললেন
” হুশ!আমি রুদ্ধ, মানুষ দিয়ে মার খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে নাকি?”
উনার কথায় বুকে থু থু দিয়ে দাড়ালাম তারপর বললাম
“এখন জ্বীন ভুত ছাড়া কোনো মানুষ থাকার কথা না”
উনাকে ওই যে লাস্ট ছাদে দেখলাম আর দেখা হয় নি।গায়ে এখন তার পাঞ্জাবীর পরিবর্তে কাঠ কালারের একটা শার্ট পড়া আর কালো ট্রাউজার।
আমি উনাকে আড়চোখে দেখছি তার মাঝেই উনি বললেন
” এতো রাতে এইখানে একলা ভয় লাগে না।”
” নাহ আমি ভয় পাই না ভুত কে বুঝলেন”
বলে আমি বাগানের কর্নার দিয়ে হাটতে লাগলাম।উনিও আমার পাশে হাটছে।দুজনে একসাথে হাটছি দূরত্ব বেশি না দু এক ইঞ্চির দূরত্ব কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা নেই।
আশেপাশের অন্ধকারে কিছু পরোখ করা মুশকিল কিন্তু মেইন গেটের আবছা আলোয় আমাদের ঠিকই দেখা যাচ্ছে।
আর কোনো খেয়াল রাখলাম না আদৌ কেউ আমাদের দেখছে কিনা! কারণ আমার জন্য বর্তমান মুহূর্ত টাই বেশি প্রয়োজনীয় আর দামি উনি যে আমার পাশে আছে।
_
নিচ থেকে আমি আগে উপরে গেলাম উনিই বলেছেন আমাকে যেতে উনি কিছুক্ষন পরে আসবেন বলল
উপরে গিয়ে দেখি তিশা আমার খোজেই এদিক সেদিক হাটছে।
আমাকে দেখে সামনে এসে বলল
“কোথায় ছিলে আপু?আমাকে একা রেখে”
ওর কথা শুনে ভ্রু কুচকে ওর মাথায় একটা চাপড় মেরে বললাম
” তোকে না বললাম আমি নিচে হাটতে যাচ্ছি তুই যাবি কিনা?এখন বলে আমি বলি নি!”
“ওহ বলেছিলে”
হাল্কা কন্ঠে বলে আমার চুলে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে চুলে হাত দিয়ে একটা বেলি ফুল নিয়ে বলল
” ওয়াও আপু তোমার চুলে বেলি ফুল কোথা থেকে এলো।ওয়াও সুন্দর লাগছে তো খুব”
বলেই হাতের একটা ফুল থেকে গ্রান শুকতে লাগলো।আমিও কিছু মনে করে বিরবির করে বললাম
“ওহ তাহলে চুলে হাত দিয়ে এই কাজ সেরেছে”
” কি বললা কে কাজ সেরেছে?”
আমি ওর হাত থেকে বেলি ফুলটা নিয়ে তরু আপুর রুমে যেতে যেতে বললাম
” কিছু না।”
রুমে গিয়ে দেখি তরু আপু ঘুমিয়ে আছে।আমি আমার হ্যান্ডব্যাগটা থেকে ডায়েরিটা বের করে হাতের বেলি ফুলটা রেখে দিলাম ডায়েরির ভাজে।তারপর আয়নার সামনে গিয়ে চুল দেখতে লাগলাম বেলি করা চুলে ডান পাশে ৩ টা বেলি এখনো গুজা।
মুচকি হেসে গুটিয়ে গুটিয়ে দেখতে লাগলাম নিজেকে।
~~~~~~~~
ঘুম ভাংতেই দেখি ১১ টা বাজে।আজকে আর ফুপ্পিরা জ্বালালো না।যাক ভালোই একটা ঘুম দিতে পারলাম।
ঘরেই ছোটখাটো ভাবে হলুদ দেওয়া হবে আর কাল বিয়ে পড়ানো হবে সেইটটাও এই ফ্ল্যাট এই সারবে আই মিন যারা যারা এসেছে তাদেরকেই রান্না বান্না করে দাওয়াত খাইয়ে দিবে।
এই সাধারণের মধ্যে ও তুষার ভাই আর জুবায়ের ভাই অনেকগুলো গাদা আর গোলাপ ফুল এনেছে হল সাজাবে সেইখানেই হলুদ লাগাবে তরু আপুকে। দুই ভাই মিলেই গোলাপ আর গাদা ফুল দিয়ে সাজাচ্ছে রুদ্ধ সাহেব ও উনাদের হেল্প করছে জুবায়ের ভাই কিছুক্ষন কাজ করে ফোনের রিং বাজায় ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। তখনই তুষার ভাই তার বাজখাঁই কন্ঠে বলে
” এই জুবায়ের শালার জ্বালায় বাচা গেলো না।ওই দুই মাইয়া তোরা দারাইয়া রইসস কে হেল্প কর আইয়া।তামাশা দেখতাসে দাড়াইয়া দাড়াইয়া।”
তুষার ভাইয়ের কথায় মুখ বাকিয়ে সুই সুতা দিয়ে গাদা ফুল গুলো সুতোয় ঢুকাতে লাগলাম আর তিশাও তুষার ভাইয়ের হাতে একেটা জিনিসপত্র এগিয়ে দিতে লাগলো।
আমি কাজের ফাকে ফাকে রুদ্ধ সাহেব কে দেকছি।উনি মনোযোগ সহকারে গোলাপ ফুল সুতোয় গুজছে।
” ভাইয়া কোনো হেল্প লাগবে?”
তিশার কথায় উনি তাকালেন ওর দিকে সাথে আমিও।উনি মুখে কিছুটা হাসি টেনে বললেন
” উম,,, নিচ থেকে কিছু বেলি ফুল লাগতো এনে দইতে পারবে?”
তিশা সায় দিয়ে আমাকে ওর সাথে আসতে বলল আমি প্রথম না করলেও ওর টানাপোড়েনে উঠে গেলাম ওর সাথে।
নিচে গিয়ে দেখলাম বেলি গাছে ভরে ফুল ফুটে আছে।তিশা হাতে থাকা ঝুড়িতে একে একে বেলি ফুল ছিড়ে রাখতে লাগলো।আমি আর হাত লাগালাম না বেলি গাছে।
তিশা যথেষ্ট ফুল নিয়ে যেতে যেতে আমাকেও আসতে বলল কিন্তু আমি আর গেলাম না।ওকে একাই যেতে বললাম।
বর্ষা মানেই বৃষ্টি। আকাশে থাকে মেঘের ভেলার আনাগোনা। পরিবেশ থাকে নিরব নিঃস্তব্ধতা।
খুবই সুন্দর বাতাস বইছে।সন্ধ্যায় হলুদের কার্যকর শুরু হবে।সেই হিসেবে বিকেল ৬টায় আমাদের রেডি হয়ে বসে থাকতে হবে আর ৪টায় শুরু করতে হবে রেডি হওয়া।
মনে মনে ছক সাজানোর মাঝেই একটা ছেলের কন্ঠে পিছন ফিরে তাকালাম
হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে আমার দিকে হাসিমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ভ্রু কুচকে তাকাতেই বলল
” হ্যালো।তুমি কি তরু আপুর কিছু হও?”
ছেলেটার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকেই বললাম
” আপনি কি হন তরু আপুর?”
” আমি উনার ফুপাতো ভাই”
যতোটুকু আমার মনে পড়ে তরু আপুর একটি মাত্র ফুপ্পি আর ফুপাতো ভাইয়ের নামটা কি যেনো হ্যা আবির যিনি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে এইবার নিউ।
মানে আমার থেকে ছোট।আমার ভাবনার মাঝেই ছেলেটা আবারও বলল
” নাম জানতে পারি তোমার,,,ওহ সরি কিন্তু তুমি তো আমার ছোট তাই না তো তুমি বলেই তো বলতে পারি আর বললা না কি হও তুমি তরু আপুর?”
ছেলেটার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। দুঃখী মিয়া মনে হচ্ছে নিজেকে নিজে।কি দিন এসে পড়লো আমার থেকে ছোট ছেলেরা আমার সাথে ফ্লার্ট করছে।দুঃখীভাব নিয়েই বললাম
” তরু আপু আমার ফুপাতো বোন হয়”
ছেলেটা হেসে আরও কিছু বলতে নিবে তখনই রুদ্ধ সাহেব আমার পাশে এসে দাড়ালেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে থাকতেই আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে বলল
” ছোট ভাইয়ের সাথে কি কথা হচ্ছে মিস ফিয়ানা?”
উনার কথা শুনে সামনের ছেলেটার দিকে তাকালাম।মুখটা ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমিও জোরপূর্বক হেসে বললাম
” এই আরকি পরিচয় হচ্ছিলাম।হাহা”
” ওহ আচ্ছা”
আমাদের দুজনের কথা বার্তা শুনে ছেলেটা মাথা নিচু করে নিচু স্বরে বলল
” ওহ সরি আপু।আমি ভাবলাম আপনি আমার থেকে ছোট হবেন।আচ্ছা আমি আসি তাহলে”
ছেলেটা চলে যেতেই উনার হাসির আওয়াজে ঠোঁট কামড়ে উনার দিকে তাকালাম।হাসি যেনো থামছে না উনার। কিছুক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থেকে আমিও হাসতে লাগলাম।
কিছুক্ষন পর উনি হাসি থামিয়ে আমার হাত টেনে সামনে ধরলো তারপর পিছন থেকে একটা গোলাপ আর বেলির মালা সামনে ধরে হাতে পেচিয়ে বেধে দিলো সুন্দর করে।
বেধে দিয়ে হাত ছাড়তেই আমি ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে লাগলাম।এইটা সেই মালায় যেইটা এতোক্ষন বসে বসে উনি নিজ হাতে বুনলো তিশা কে দিয়ে বেলি ফুল আনালো।
আমি মুচকি হেসে কিছুক্ষন দেখে হাত নামিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম
” ফুল মনে হয় আপনার অনেক প্রিয় ”
আমার কথার পরিবর্তে উনি চুল গুলো হাত দিয়ে ব্যাকব্রাশ করে সাদা জবা ফুলের গাছ থেকে একটা ফুল পেরে আমার চুলের ভাজে গুজে দিয়ে বললেন
” ফুল মানেই তো ভালোবাসা”
চলবে,,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১০
#writer: Mishmi Muntaha Moon
রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দিতেই তারাতারি রুমে গিয়ে দেখলাম মেয়েদের জন্য আলাদা শাড়ি কেনা হয়েছে।লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি।
তিশা শাড়ি পড়তে পারে না।তাই আমি নিজে শাড়ি পরে ওকেও পরিয়ে দিলাম।তারপর তিশা নিজে সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আমিও সাজলাম। হাতে চুরি কানে দুল পড়ে চুল গুলো খোপা করে হাতে উনার বেধে দেওয়া মালা টা চুলে পেচিয়ে নিলাম।
” কিগো আপু এই মালাটা কোথায় পেলে কত সুন্দর। ”
ওর কথায় মুচকি হেসে বললাম
” পেয়েছি কেউ একজন দিয়েছে”
আমার কথায় তিশা ভ্রু কুচকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে।সেই চাহনি কে পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।বেরানোর আগে ঘার পিছে কাত করে তিশার উদ্দেশ্যে বললাম
” তুই আসবি আমার সাথে নাকি আমি একাই যাবো?”
” নাহ দাড়াও আসছি”
তিশা কানে দুল পরতে পরতে আমার সাথে হাটতে লাগলো।
রুম থেকে বের হতেই মেয়েদের সজ্জিত রূপ দেখতে পেলাম।সবাইকেই খুব সুন্দর লাগছে।
ছেলেরা সব হলুদ রঙের পাঞ্জাবী পরেছে।
কিছুক্ষণ যেতেই তরু আপুকে পার্লারের থেকে আনা হলো।তুষার ভাই জুবায়ের ভাই আরও ছেলেরা মিলে চিল্লাফাল্লা করতে লাগলো।কিন্তু এতো ভীড়ভাট্টার মধ্যেও উনাকে কোথাও দেখতে পেলাম না।
তিশা তরু আপুকে দেখে দৌড়ে আপুর কাছে গিয়ে ভাইয়াদের সাথে নাচানাচি করতে লাগলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই হলুদ দেওয়া শুরু করবে।
হঠাৎ পিঠে সুরসুরি লাগতেই পিছে ঘুরে তাকাতে নিবো তখনই উনার কন্ঠ ভেসে আসে।
” তুমিতো দেখছি আগে থেকেই খোপা সজ্জিত করে নিয়েছো।”
উনাকে উপর থেকে নিচ দেখতে লাগলাম।হলুদ পাঞ্জাবী পরিহিত চুল গুলো জেল দিয়ে সেটিং করেছে আজ।হাতে কালো রঙের ঘড়ি সাথে একগুচ্ছ গোলাপ।
” আপনার দেওয়া মালাটাই তো বাধলাম”
উনি বিপরীতে আমার চুল থেকে মালাটা খুলে আবার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলল
” হাতেরটা হাতেই থাক চুল নাহয় আমি সাজিয়ে দেই”
বলেই হাতের গোলাপ গুলো একে একে চুলের খোপার চারপাশে গুজে দিতে লাগলো।সবাই তরু আপুর কাজে ব্যস্ত।গোলাপ গুলো চুলে বেধে দেওয়া হলে আমার পাশে এসে দাঁড়ায় আমিও উনার দিকে হাসিমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনে নজর ফিরাতেই দেখি ফুপ্পি আমাদের দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সাথে সাথেই ভয় পেয়ে যাই আমি।উনার দিকে তেকাতেই দেখি উনি ঠোট নাড়িয়ে আশ্বস্ত দিয়ে বলল
” ডোন্ট ওয়ারি আম হেয়ার”
বলেই উনি অন্যপাশে চলে গেলেন।হলুদ দেওয়া শেষ হলো তরু আপুর তারপর শুরু হলো নাচের পালা।তরু আপুতো খুশি খুব।সবাই নাচছে তরু আপু কিছুক্ষন বসেই হাত নাড়িয়ে নাচছিলো কিন্তু কেউ উনাকে নিয়ে যাচ্ছে না নাচতে দেখে উনি নিজেই উঠে গিয়ে সবার সাথে নাচতে লাগলো।
এই বিষয়টা দেখে আমার খুব হাসি পেলো।আমাকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে তিশা আমাকে টেনে নিয়ে গেলো।আমি একদমই নাচতে পারি না তাই বলে কোনো বিয়েতেও নাচিনা।
তিশা জোড় করায় হাত নাড়িয়ে একটু নাচলাম।
হঠাৎ চোখ দরজার পাশে যেতেই দেখি রুদ্ধ সাহেব দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে তার কোকাকোলার ক্যান।
আমাকে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।যা দেখে খুবই লজ্জা পেলাম। নিশ্চয় আমার এই আবাল মার্কা নাচ দেখে হাসছে। খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার।
এভাবেই নাচতে পারিনা। যাও তিশার টানাটানি তে একটু নাচতে গেলাম এই প্রথম তাও উনি দেখে হাসছেন।
আর নাচলাম না ওদের ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে একেকজনের নাচ দেখতে লাগলাম।
তিশা তো রীতিমতো লাফাচ্ছে।তরু আপুও খুব নাচছে।আর ভাইয়ারা তো পারে না বিল্ডিং ভেঙে ফেলে লাফিয়ে।গান বাজছে একেবারে হাই বোলিউমে।
আমিও আড়চোখে উনাকে দেখছি। উনি দাড়িয়ে ক্যান এ চুমুক দিচ্ছিলেন আর একেকজনের লাফালাফি দেখছিলেন মাঝে মাঝে আমার দিকেও একনজর তাকচ্ছিলেন।
তার মাঝেই কেউ কল করলে ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন মোবাইলে তাকিয়ে থেকে দরজা দিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে যায়।
হলুদের ঝামেলা শেষ হতেই একে সবাই ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে লাগলো।আম্মু তরু আপুর রুমে দাঁড়িয়ে সকলের ঘুমের ব্যবস্থা করে দিচ্ছিলো তার মাঝেই ছোট ফুপ্পি এসে আম্মুকে জরুরি কথার তাগিদে নিয়ে গেলো।
আম্মু আমাকে ঘুমানোর জায়গা দেখিয়ে দিয়ে ফুপ্পির সাথে চলে গেলো।
হঠাৎ ফুপ্পির সেই চাহনির কথা মনে আসতেই ভয় লাগতে শুরু করলো।কি বলবে আবার রুদ্ধ সাহেবকে নিয়ে কিছু বলবে নাতো!
~~~~~~~~~
সকাল থেকেই জাকজমকপূর্ন পরিবেশ সৃষ্টি। সবাই যে যার মত রেডি হওয়ায় ব্যস্ত।
তিন রুমের ফ্ল্যাটে সাধারণত দুইটা বাথরুম থাকে।সেই ভোরবেলা থেকে বুকিং বাথরুম দুইটা।তিশাও ফাক ফোকরে বাথরুমে ঢুকে গোসল সেরে ফেলেছে।আমিই বলদ ঢুকতে পারলাম না।
আম্মুর ও মুড টা ভালো ঠেকছে না সকাল থেকেই।কেমন গম্ভীর মুখ করে কাজ করছে।
তিশা এসে খবর দিলো বাথরুম খালি হয়েছে সাথে সাথেই জামা কাপড় নিয়ে দিলাম এক দৌড়।
_
হাল্কা গোলাপি রঙের গাউন পরেছি আজ।খুবই সুন্দর গাউনটা।
সাথে হাল্কা সাজ চুল গুলো ছাড়াই রেখেছি।
তরু আপু সেই সকালে পার্লারে গেছে। এখন হয়তো এসে পড়বে।
তিশা আর আমি সেজে এদিক সেদিক হাটছি।ফোনে মেসেজ রিং বাজলো কিন্তু চেক করলাম। সারাদিনে কতশত মেসেজ আসে অফিস থেকে সব তো তাৎক্ষনাক চেক করা প্রয়োজন না।
” আপু তুমি চুরি পড়লে না?”
তিশার কথায় চুরির কথা মনে পড়লো।
” ওহ হ্যা আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম!তুই থাক এখানেই আমি পড়ে আসছি”
তিশাকে রেখেই রুমে পা দিলাম।ড্রেসিং টেবিল থেকে চুরি গুলো তুলে হাতে পড়ে নিলাম।চুরি পরে হাতটা ভালো করে দেখলাম খুব সুন্দর লাগছে তার ওপর মেহেদি দেওয়া হাত তো!
চোখ তুলে আয়নায় তাকাতেই অবাক হলাম।
কালো পাঞ্জাবী তে উনি দাঁড়িয়ে আছে কোমল নজরে অপলকভাবে তাকিয়ে আছে।হাল্কা হাসি তার ঠোঁটে।
আমি আয়না থেকে নজর সড়িয়ে উনার দিকে ফিরে দাড়ালাম।
কি বলবো কিছু খুজে পেলাম না।উনিই হাত থেকে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের গোলাপ বের করলো তারপর ড্রেসিং টেবিল থেকে ক্লিপ নিয়ে বললেন।
” লাগিয়ে দেবো?”
” আমি মুচকি হেসে ডান দিকে একটু ঘুরে দাড়াতেই উনি আলতো হাতে কানের পাশে ক্লিপ দিয়ে ফুল টা লাগিয়ে দিলো।তারপর দুই কাধে দুই হাত রেখে আয়নার দিকে ফিরিয়ে বলল
” পুরো আস্ত গোলাপ লাগছে”
উনার কথায় কিছু বললাম না নিজেকে দেখতে লাগলাম।হঠাৎ কিছুটা আনমনা হয়ে হেসে বিরবির করলাম
” আপনাকে আমি ফুলের মতো ভালোবাসবো মিস্টার ”
আমার কথা উনি শুনলেন কি জানি না কিন্তু বিপরীতে চমৎকার একটা হাসি দিলেন।
আমি আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।কিছুক্ষন যেতেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ তুলে তাকাতেই দেখি উনি উধাও। এদিক সেদিক খুজেও কোথাও পেলাম না।
মন খারাপ করে চলে যেতে নিতেই ড্রেসিং টেবিলে চোখ যায় একটা চিরকুট রাখা।চিরকুট টা খুলতে নিবো তখনই তিশার আগমন।
” আমিতো ভেবেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো চুরি পরতে এসে এতোক্ষন লাগে নাকি?”
” আরেহ না একটা কাজ করছিলাম।
বলতেই তিশা হাত ধরে বাহিরে টেনে নয়ে গেলো।আর পড়া হলো না তার চিরকুট।রেখে দিলাম ব্যাগের ভিতরে।
~~~~~~~~~
বিয়ের ঝামেলা সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হলো।সব মেহোমান ও আজকেই একে একে করে চলে গেলো।থাকলো শুধু চাচারা আর আমরা।তরু আপুকেও বিদায় দেওয়া শেষ।
উমাকে যে দেখলাম রুমে তারপর আর দেখলাম না
কিন্তু বিয়ে শেষ হতে না হতেই শুরু হলো আরেক ঘটনা। মনে হলো বিয়েটা শেষ হওয়ার অপেক্ষাই ছিলো।
আমি তখন মুখ ধুয়ে ড্রেস পালটে মাত্র তরু আপুর রুম থেকে বের হচ্ছিলাম তিশা তখন ওর এক ফ্রেন্ড এর সাথে কলে কথা বলছিলো।
বের হতে নিবো ফুপ্পির কথায় পা থামালাম।
” আমার কথা আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না ভাবি।আমি নিজ চোখে দেখেছি ভাইয়ের বন্ধুর ছেলে নাম কি যেনো হ্যা রুদ্ধ ওকে আপনার মেয়েকে একান্তে দেখা করতে তাও আবার রাতের আধারে।এখনই দেখুন বিষয় টা নাহলে তিল থেকে তাল হতে সময় লাগে না।”
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১১
#writer : Mishmi_muntaha_moon
ফুপ্পির কথা শুনে হার্ট টা যেনো ধুপধাপ করে বেড়িয়েই যাবে এরকম ফিলিং হচ্ছে।উফফ আমার এই ফুপ্পিকেই যে কেনো দেখার হলো।উনাকে তো বোঝানো ও সম্ভব না।
কে জানে আম্মুর রিয়েক্ট কেমন হবে।
” দেখুন আপা আপনি কি দেখেছেন জানি না।কিন্তু রুদ্ধ কে আমরা চিনি। ও কেমন ছেলে আমি কি জানি না?আর আমার মেয়েকে আমি যথেষ্ট শাষন করি ও এই সব পথে যাবে না।শুধু শুধু আমার কানে আমার মেয়ের কথা লাগিয়েন না দয়া করে।”
আম্মুর কথায় অবাক হলাম। কতটা ভরসা করে আমি তো ভেবেছিলাম এখনি আমার কাছে আসবে আর আমার গালে পড়বে উনার হাতের থাপ্পড়।
” আরেহ ভাবি কি যে বলছেন এখনকার দিনে এইগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার সবাই করে।আর আমি তো একবার দেখি নি দুই তিনবার দেখলাম তার পরেও নিজেকে ভুল কি করে বলি।আমি যা বলছি আর দেখেছি সব এক নাম্বার সত্যি।আচ্ছা এইটা না মানলেন কিন্তু ওইযে আপনাদের বাড়িওয়ালা আপা উনার বড় ছেলের জন্য যে বিয়ের সমন্ধ পাঠালো সেইটাতে রাজি হয়ে যান।বাড়ি গাড়ি সবই তো আছে আবার আপনার মেয়েকে পড়ালেখাও করতে দিবে।”
ফুপ্পির কথায় আম্মু কিছুক্ষনের জন্য চুপ হয়ে গেলো তারপর মৃদু কন্ঠে বলল
” আমি ভাববো এই ব্যাপারটা আর আপনি আমাকে যা বললেন আপনার ভাইকে বলবেন না দয়া করে”
বলেই আম্মু তরু আপুর রুমের দিকেই বাড়তে লাগলো।আমিও দাঁড়িয়ে না থেকে তারাতারি রুমের ভিতরে ঢুকে বিছানায় বসে পড়লাম।
সাথে সাথেই আম্মু এসে রুমে ঢুকে সোজা আমার কাছে এসে দাড়ালো।
রেডি হও আমরা রাতেই বেড়িয়ে পড়বো।তাছাড়া সবাই চলে গেছে আমরা থেকে কি করবো।
আম্মুর কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম।আম্মু সব কিছু ব্যাগে ভরে নিতে বলে বেরিতে গেলো।আমিও উঠে বারান্দায় শুকাতে দেওয়া কাপড় নিয়ে ব্যাগে ভরলাম।আরও টুকটাক যা আছে সব প্যাকিং করলাম।তারপর নিজেও রেডি হয়ে নিলাম।
তিশা এতোক্ষণ ছাদে ছিলো এখন এসে নিজেও ব্যাগ গুছাতে লাগলো।ওরাও চলে যাবে রাতেই।
” কিগো আপু বাহিরে কি হলো শুনেছো?”
ওর কথায় ওর দিকে তাকালাম।ব্যাগে ওর ড্রেস ঢুকাচ্ছে মুখে তেমন কোনো রিয়েকশন নেই।
” হ্যা শুনেছি”
” আচ্ছা আপু সত্যি করে বলবে প্লিজ।রুদ্ধ ভাইয়ার সাথে তোমার রিলেশনশিপ চলছে তাই না?আমার কেমন যেনো সন্দেহ আগে থেকেই হচ্ছিলো।এখন তুমি বলো সত্যিটা।”
মুহূর্তে ওর মুখের রঙ পালটে যাওয়ার ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না।আমি ওড়না মাথায় দিতে দিতে বললাম
” দেখ তিশা তোর সাথে আমি সব শেয়ার করি তুইও আমার সাথে শেয়ার করিস। তুই আমার থেকে ছোট তবুও তোকে আমি ফ্রেন্ড এর মতো ট্রিট করেছি।আর রুদ্ধ সাহেবের ব্যাপারটা অন্যরকম। উনার সাথে আমার রিলেশন নেই।কিন্তু উনাকে আমার ভালো লাগে। কিন্তু এইটা এখন সিক্রেট ব্যাপার কাউকে বলবি না প্লিজ”
আমার কথাটা তিশার তেমন পছন্দ হয় নি মনে হলো আমার।কিন্তু ও কোনো রিয়েকশন দেখালো না।আবার নিজের কাজ করতে করতে বলল
“ওহ আচ্ছা।এইটা আমার মধ্যেই থাকবে ডোন্ট ওয়ারি”
ওর কথার বিপরীতে মুচকি হেসে বললাম
” তুই রেডি থাকলে আমার সাথে বেরুতে পারিস”
” নাহ আপু আমার আরও কিছু কাজ আছে আর আমি রেডিও না ড্রেস টা চেঞ্জ করবো তুমি চলে যাও”
” আচ্ছা তাহলে ভালো থাকিস।কলে কথা হবে।আল্লাহ হাফেজ”
“আল্লাহ হাফেজ”
আমি ব্যাগ হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম।বেড়িয়ে দেখলাম আম্মুও বোরখা পরে রেডি।আমি বের হতে সবাই কে বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
~~~~~~~~~~~~~
বাড়িতে ফিরতেই স্বস্তি পেলাম।রুমে এসে ড্রেস পালটে ঘড়ির দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে বিরবির করলাম
” ১১ টা বেজে গেছে”
বিছানা থেকে উঠে মোবাইল নিয়ে বারান্দায় গেলাম।উনার নাম্বার আমার কাছে ঠিকই আছে কিন্তু কখনো কল দেওয়া হয় নি যতবার দিয়েছে উনি নিজেই দিয়েছে।
ফুপ্পিদের বাড়ির ঘটনা উনাকে বলবো কিনা ভাবলাম এক মুহূর্ত পরমুহূর্তেই ভাবলাম নাহ বলতে হবে না।আমি সামলে যদি নিতে পারি!
হঠাৎ উনার চিরকুট টির কথা মনে পরতেই দৌড়ে বিছানা থেকে ব্যাগ নিয়ে চিরকুট টা খুজতে লাগলাম।কিন্তু কোথাও না পেয়ে ভ্রু কুচকে আবারও এক দফা খুজতে লাগলাম কিন্তু নাহ পেলাম না।
এখন তো দুঃখে চোখ ভাসাতে ইচ্ছে করছে।ইশ উনি তো মুখে কোনোই ভালোবাসার কথা বলেন না।এই চিরকুটেই তো উনি মনের ভাব প্রকাশ করেন এইটাই যদি হাড়িয়ে যায় তাহলে তো আর জানলামই না কিছু।
কে জানে কি লিখেছিলেন! আই লাভ ইউ ও তো হতে পারে।নাহ উনি এতো সহজেই আই লাভ ইউ বলে দেবে মনে হয় না অনেক প্যাচানো মানুষ সব সময় ঘুড়িয়ে পেচিয়েই বোঝায়।
এইসব ভেবে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো।ধীর পায়ে হেটে বারান্দায় যেতে নেবো তখনই সামনে পড়ে থাকা একটা কাগজ চোখ যেতেই খুশিতে তারাতারি চিরকুট টা তুললাম।উপরে মুখ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।আর কিছু না ভেবে বারান্দায় গিয়ে চিরকুট টা খুলতে উনার হাতের লেখা দেখতে পেলাম।
উনার হাতের লেখা দেখলেই মুগ্ধ হয়ে যাই।কত সুন্দর উনার হাতের লেখা!উনার কাছে পড়ার সময় উনার হাতের লেখা দেখলে মনে মনে ভাবতাম আমারও হাতের লেখা যদি উনার মত হতো তাহলে স্যাররা হাফ নাম্বার তো এই লেখার জন্যই দিয়ে দিতো।
এদিক সেদিক না ভেবে পড়তে লাগলাম।
❝শুনেছি যার ভালোবাসা যত গোপন তার ভালোবাসা ততই গভীর হয়।তারপর ভাবলাম কিন্তু সেই মানুষ টাকে নিজের করে পেতে হলে কনফেশন টাও তো প্রয়োজন। তা যাই হোক প্রকাশ্য প্রেম থেকে অপ্রকাশ্য প্রেম টা বেশি মজার বুঝলে মিস ফিয়ানা কারন সেখানে যে যার অনুভূতি অনুভব করেই বুঝে যায়।যাই হোক একটা গানের লাইন মনে ঘুরঘুর করছে একদমই মনের কিছু কথার সাথে মিল পেলাম। বলবো কি মিস ফিয়ানা,,,
“তুমি যে শুধু আমারিই থেকো
ও প্রিয়”❞
আবারও আগের চিরকুট এর মতো গানের একটা লাইন দেখে ভ্রু কুচকে হেসে ফেললাম।
হুম উনার কনফেশন করার ধরন টাও কত ভিন্ন।সহজ কথায় বলবে না মিস্টার রুদ্ধ সাহেব।
কিন্তু চিরকুট টা যে অনেক ভালো লাগলো মন ছুয়ে যাবার মতো।
এই চিরকুট টা আগের চিরকুট এর সাথে সেই ডায়েরি ভাজে রেখে দিলাম। ডায়েরিটার একটা নাম দেয়া উচিত। কি দেই হুম আমার উনি মিস্টার রুদ্ধ সাহেব।
এই সেই করতে করতে রাত ১২ঃ৪৫ বেজে গেলো।লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
~~~~~~~~~~~~~~
গোসল করে কালো একটা থ্রি-পিস পড়লাম।বেশি একটা থ্রি-পস নেই আমার কারণ থ্রি-পিসের থেকে বেশি গাউন পড়া হয় আমার।
ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে আস্তে ধীরে চুল আচড়াচ্ছিলাম।তখনই আম্মু তাড়া দিয়ে ডাক দিতেই গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেনো ডেকেছে
” কাপড় গুলো ছাদে রোদ দিয়ে আসো যাও”
আম্মুর কথায় বিরক্ত লাগার পড়েও ছোট বালতিটা হাতে নিয়ে গেলাম ছাদে।
কাপড় গুলো শুকাতে দিয়ে কর্নারে চোখ যেতেই চোখ কুচকে তাকাই।
নেহাল ভাইয়ের বড় ভাই অর্থাৎ নিশাদ ভাই উলটো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি শুধু উনার পিঠ টাই দেখতে পাচ্ছি আর উড়ন্ত ধোয়া।
বুঝতে পাড়লাম উনি সিগারেট খাচ্ছে।আর সেটার সাক্ষী হলাম আমি, অসীম আকাশ আর এই মিষ্টি বাতাস যা উনি দূষিত করেই যাচ্ছে।
সিগারেট এর ধোয়া মৃদু নাকে আসতেই নাক ছিটকালাম।কেউ সিগারেট খেলে আমার একদম ভালো লাগে ইচ্ছে হয় সামনে গিয়ে ভাষন শুনিয়ে আসি সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়ে। অবশ্য যারা খায় তারা তো জানে তবুও খায় তাহলে আমরা আর কি বলতে পারি।
আমি হেটে ছাদের গেটের সামনে যেতেই পিছন থেকে গম্ভীর, ভারী কন্ঠ ভেসে আসে
” এই মেয়ে তুমিই ফিয়ানা তাই না!”
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)