আসক্ত পর্ব ৫+৬

আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ৫

টায়রা ড্রইং রুম পেরিয়ে যেতে গিয়ে দেখলো সোফায় কিছু লোক বসে আছে! এরা কারা চিনলো না ও! কিছু মুরুব্বি টাইপস লোক, সাথে একজন ছেলে! বেশ হ্যান্ডসাম বলা চলে! তবে ছেলে বলা ভুল হবে, সেই বয়স পেরিয়ে গেছে হয়তো কিছু আগেই! তবে তাও ভালো লাগছে!

শাহেদ মোর্শেদা সাজিদা লাজুক তারাও আছে সেখানে! আড় চোখে লাজুকের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো তার সাথে! চোখ নামিয়ে সোজা উপরে বোনেদের রুমে চলে গেলো!

সেখানে ঢুকতেই দেখলো কি নিয়ে যেনো জটলা পাকাচ্ছে তারা!
– কি হয়েছে বলতো? নিচে দেখলাম লোকজন বসে আছে! তোরা আবার এমন করছিস কাহিনী কি?

টায়রার কথা শুনে সবাই এগিয়ে এসে ওকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিলো! তারপর রিমপি বলতে শুরু করলো,
– বর্ষা দির সে ফিরে এসেছে!

অবাক চোখে তাকিয়ে টায়রা, আগা মাথা কিছুই বুঝলনা সে!
– সে টা আবার কে?

– আরে তুই জানিস না বর্ষা দি কলেজে থাকতে একজন কে ভালোবাসতো! যার জন্য এতো বছর অপেক্ষা করেছে!

– হ্যা হ্যা জানিতো! তারা নিজেদের মনের কথা প্রকাশের আগেই হঠাৎ করে ছেলেটা দেশের বাইরে চলে যায়! আর তাদের মাঝে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থাও ছিলো না!

– হুমম! সেই ফিরে এসেছে! কাল নাকি হঠাৎই শপিং মলে দেখা হয়ে যায়! প্রথমে তো দু জনেই ভেবেছিলো তাদের বিয়ে হয়ে গেছে! কিন্তু যখন সে জানলো বর্ষা দি বিয়ে করেনি, আর সেও করে নি!
তখনি সেখানেই দি কে বিয়ে করার জন্য প্রপোজ করে দিলো!

টায়রা অবাক হয়ে শুনতে লাগলো সব কিছু! কেমন যেনো ফিল্মের কাহিনীর মত! দুজন মানুষ একে অপরের মনের কথা না জেনেই অপেক্ষা করে গেছে, কবে তাদের দেখা হবে!
আর ভাগ্য দেখো ঠিক সেই আবার তাদের এক করে দিলো!

তিতলি বলে উঠলো,
– জানিস তারা দু একদিনে নাকি বিয়েরও ডেট জানিয়ে দিবে!

টায়রার মুখে হাসি ফুটে উঠলো!
– ইসস! বর্ষা দি এখন কত খুশি না! সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে অবশেষে পেয়ে যাচ্ছে!

টায়রার কথা শুনে রিমপি বললো,
– উফফফ! আমার যে কবে রুহানের সাথে বিয়েটা হবে?

রিমি রিমপির মাথায় চাটি মেরে বললো,
– গাধী এর মধ্যেই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেলি! প্রেম তো শুরু করলি ২৪ ঘন্টাও হয় নি! বাবাকে ফোন করতে হবে?

টায়রা হাসতে লাগলো ওদের কাহিনী দেখে!
________________
লাজুকের রুমের পাশ থেকে যাচ্ছিলো টায়রা, হঠাৎ কিছু শুনে থমকে গেলো সেখানেই!

– তুই ওকে ভালোবাসিস ভাই! এটা মেনে নে!

– কি বলছিস দি এই সব?হ্যাভ ইউ গন অ্যা ম্যাড! ঐ পিচ্চি মেয়েটাকে আমি কি করে ভালোবাসতে পারি?

– ভাই ভালোবাসা কখনো কোনো কিছু বিচার করে হিসেব করে হয় না! তুই মানিস আর না মানিস,ঐ পিচ্চি মেয়েটা নিজের অজান্তেই তোর মনে জায়গা করে নিয়েছে!

চুপ করে গেলো লাজুক! বর্ষা আবার বললো,
– তুই ভালোবাসিস ভাই ওকে! শুধু শুধু কেনো নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস বল?

– দি প্লিজ! ও একটা নাবালিকা মেয়ে, আমার সাথে কখোনো যায় না ওর! আমি ওর লাইফ নষ্ট করতে পারবো না!
[ লাজুকের কথায় একটা চাপা কষ্ট প্রকাশ পেলো ]

– তুই এমন টা কেনো ভাবছিস বলতো? একবার ওর কাছে নিজের মনের কথা গুলো প্রকাশ করলেই তো পারিস! আর শোন তুই ওকে যতটা পিচ্চি ভাবছিস ও ততোটাও পিচ্চি না! মেয়েরা ওনেক আগেই এ্যাডাল্ট হয়ে যায়! সব কিছু বুঝতে শিখে!

চুপ করে বিছানায় গিয়ে বসে পরলো! দু হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো মুঠি বেধে ধরে মাথা ঝুকিয়ে নিলো লাজুক!

– ও আমার বোন হয় দি! যেখানে বাকি সবাইকে আমি নিজের ছোট বোনের নজরে দেখি সেখানে, ওকে নিজের বোন ভাবতেও নিশ্বাস আটকে আসে! স্বপ্নেও আমি তাকে নিজের বোনের জায়গায় বসাতে পারি না!
আমি জানি না কি করবো! আমি একটা পিচ্চি মেয়েতে আসক্ত, ভাবতেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে!

লাজুকের গলাটা কেমন ধরে ধরে আসছিলো, কথা গুলো পেছিয়ে যাচ্ছে! মনে হচ্ছে পাহাড় সমান কষ্ট বুকে চেপে রেখেছে!
বর্ষা এগিয়ে গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো!

– ভাই এভাবে কষ্ট পাশ না! দুনিয়ার কথা ভাবিস না, নিজের মনের কথা ভাব! ওকে ছাড়া তুই কখনো ভালো থাকবি না! তোর ভালো থাকা তো….

টায়রা সরে এলো ওখান থেকে! বাকি কথা গুলো আর শুনলো না! হয়তো শুনতে চাইনি! মেয়ে টা কে জানে না ও আর জানতেও চায় না! কারনটা যে অজানা ভয় তা বুঝতে পারলেও ঠিক কিসে ভয় পাচ্ছে? লাজুক অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসে এটা শুনতে চায়নি! নাকি নিজের…

নাহ আর ভাবতে পারছে না ও!হাত পা কাপছে, শরীরে বিন্দু মাত্র শক্তি পাচ্ছে না! চোখ দিয়ে টপটপ পানি পরছে!
কেমন যেনো অগোছালো লাগছে চারিদিক!
আচ্ছা ওর কষ্ট কেনো হচ্ছে, যেনো কেউ গলা চেপে ধরেছে!
_______________
রিমপির দিকে আতংকিত হয়ে তাকিয়ে রিমি, নিশু ,তিতলি! ভুত দেখার মত চমকে আছে তারা!

অবাকের সীমানা পেরিয়ে তিতলি বললো,
– রিমপি হাও ইজ পসিবল? রুহান ভাইয়া এই কথা কি ভাবে বললো? ভাই টায়রাকে লাইক করে?

রিমপি চিন্তিত মুখ করে বললো,
– রুহান তো তাই বললো! আর আমিও ভেবে দেখলাম, সাম হাও..রুহানের কথাটা সত্যি হয় তো! তোরাই ভেবে দেখ ভাই আমাদের সবাইকে নিজের ছোটো বোনের মত ভালোবাসে, আর শেখানে টায়রা ভাইকে ভাইও বললে রেগে যায়!
টায়রাকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেয় না! আর কাল কি রিয়াক্ট করলো!
আমরাও তো ছিলাম কই আমাদের তো কিছু বললো না!

রিমপির কথা শুনে চুপ মেরে রইলো সবাই! তাদেরও মনে হচ্ছে কথাটি সত্যি! এতদিন এসব ওরা ভাবেই নি! ভাববেই বা কেনো? ৩০ বছরের একটা ছেলে সে১৭ বছরের একটা পিচ্চিকে ভালোবাসে! এটা কি আদোও কারোর ভাবার কথা? আর তার উপরে সে তার বোন হয়, সে যেমন বোনই হোক না কেনো!

আর তাছাড়া লাজুক আর টায়রাকে নিয়ে ভাবা তো অসম্ভব, যে কিনা টায়রাকে দেখতে পর্যন্ত পারে না সে কি করে….? আর এই যাবত লাজুকের সব গার্ল ফ্রেন্ড ছিলো হইলি এডুকেটেড,স্টাইলিশ, মডেল টাইপ’স! তাদের লাজুকের সাথে এইজ ডিফরেন্স বেশি হলে 3-4 ছিলো বা তার থেকেও কম!
মাথা ঘুরাচ্ছে সবার ভাবতে ভাবতে!

রিমি আহতো গলায় বললো,
– আচ্ছা ভাই যে টায়রাকে ভালোবাসে তোদের কি মনে হয় যে টায়রা কখনো বুঝবে এটা?

রিমির কথার জবাবে নিশু বললো,
– কি ভাবে বুঝবে? টায়রা তো ভাইকে ওর জমরাজ ভাবে! আর তাকে নিয়ে এই সব চিন্তা ও ভুলেও মাথায় আনবে না!

– ভাই আর টায়রার বিষয়টা সত্যিই ভাবাচ্ছে আমাকে?

তিতলির কথায় বাকিরাও সায় দিলো! এর মধ্যেই রুমে এলো টায়রা! আর তাকে দেখতেই চুপ করে ঘুর ঘুর নজরে চোখ বোলাতে লাগলো পা থেকে মাথা পর্যন্ত!

– কি হলো এমন ভাবে কি দেখছিস সবাই?আমি কি এলিয়েন ?

তিতলি মুখ ফসকে বলে ফেললো,
– এই মুহূর্তে এলিয়েনের থেকেও বেশি কিছু মনে হচ্ছে !

তিতলির কথা শুনে চোখ গুলো ছোট ছোট হয়ে এলো টায়রার!

রিমি তিতলিকে কনুই দিয়ে খোচা মেরে চুপ করিয়ে দিলো! তারপর টায়রার কাছে গিয়ে বললো,
– ওর কথা বাদদে! তোকে তো এই স্কার্টটাতে দারুন লাগছে! এটা কবে নিলি বলতো?

টায়রা মুখ বেকিয়ে জবাব দিলো,
– কেনো মনে নেই? সেদিননা জোমরাজ আনলো!

– তুই আমাদের ভাইটাকে এমন জমরাজ জমজার কেনো বলিস বলতো? ভাই কতো হ্যান্ডসাম দেখতে দেখিস না! তার হাটার স্টাইল কথা বলার স্টাইল সব একদম বাধিয়ে রাখার মত!

রিমির কথায় মুখ বেকালো টায়রা!
পাশ থেকে তিতলি বললো,
– হ্যা ঠিকই তো! তুই জানিস কত মেয়ে ভাইয়ের জন্য পাগল! আর তুই কিনা তাকে এই সব বলিস?

টায়রা ভ্রূ কুচকে সবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
– ব্যাপারটা কি বলতো? পুরো ভাই ভক্ত বোন হয়ে গেছিস! আজ তোরা সবাই মিলে তোদের ভাইয়ের নামে ফুলঝুরি খুলে বসেছিস কেনো?

– না মা..মানে ও আর কি!

তিতলির কথা শেষ হতেই আবার নিশু বলা শুরু করলো,
– এমন ভাবে বলছিস যেনো আমরা মিথ্যা প্রশংসা করছি? আমরা যা বলছি তাতে কি কোনো ভুল আছে? হ্যা মানছি ভাই একটু রাগি, তাছাড়া তো সবই ঠিক আছে!

নিশুর কথা শুনে চোখ পাকিয়ে ওদের দিকে তাকালো টায়রা!
অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বললো,
– শুধু একটু রাগি? [ নিজের গেলের দিকে আঙুল ঘুরিয়ে দেখিয়ে ] এই দেখ সেই একটু রাগির ছাপ এখনো আছে!
তোদের ভাই আস্তো একটা খাটাশ! জমরাজ, মামদো ভুত, ব্যাটা গরু চোর!

টায়রার কথা শুনে আহতো চোখে তাকালো তার দিকে! লাজুকের সম্পর্কে যার এই সব চিন্তা ভাবনা সে কি করে বুঝবে তার ভালোবাসা?
____________________
বেলকিনিতে দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখতে ব্যাস্ত টায়রা!
গা হীম করা ঠান্ডা বাতাস গুলো যেনো মোটা জ্যাকেটের আস্তরন ভেত করে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে!

ছোট ছোট তারার ভিতরে এক ফালি চাদ! যেনো আধ খাওয়া রুটির মতন!
কোথাও একটা শুনে ছিলো, “সবার কাছে পূর্নিমার পূর্ন গোল চাদটা অতি রোমান্টিক হলেও, না খাওয়া অনাহারে ভোগা মানুষের কাছে একটা আস্ত রুটি”
আপন মনে হেসে উঠলো টায়রা! কথাটা সত্যি, কিন্তু কেনো জানি হাসি পায় ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলে!

তবে আজ পূর্নিমা নয়! তবুও এক অদ্ভুত ভালো লাগা ঘোরে আটকে আছে সে! কিন্তু তার এই ঘোর ভেঙ্গে গেলো রিমপির ডাকে!

– কি হয়েছে?

– তোকে তোর গরুচোর ডাকছে!

টায়রা অবাক হয়ে তাকালো রিমপির দিকে!
– মানে ?

– আরে ভাই ডাকছে! তুই তো বিকেলে বললি না সে নাকি গরু চোর!
কথাটা বলেই হাসতে লাগলো!

এই মুহূর্তে এক অসহ্য বিষস্বাদে মেজাজ টা ভরে গেলো টায়রার!ডাকার আর সময় পেলো না?
রিমপিকেও কিছু বলতে মন চাইছে, কিন্তু না বলে সোজা চলে গেলো লাজুকের রুমে!

দরজা চাপানো দেখে ঢেলে ভিতরে ঢুকলো! বিছানায় তাকাতেই দেখলো, লাজুক খাটের সাথে হেলান দিয়ে উপরে মুখ করে চোখ বন্ধ করে রেখেছে!
তা দেখে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে দাড়ালো তার সামনে!
– ডে..ডেকে ছিলেন?

টায়রার কথা শুনে চোখ খুলে তার দিকে তাকালো লাজুক!
আতকে উঠলো টায়রা লাজুক কে দেখে! চোখ গুলো ভয়ংকর দেখাচ্ছে! লাল হয়ে ফুলে আছে, চোখে ভিতরের নালি গুলো দিয়ে যেনো রক্ত বের হচ্ছে!
উষ্কখুষ্ক চুল! মুখ শুকিয়ে আছে! সব সময় পরিপাটি থাকা মানুষটাকে আজ যেনো খুব অচেনা লাগছে তার কাছে!

লাজুকের শান্ত দৃষ্টি টায়রার মুখের দিকে!
মাথা নিচু করে নিলো টায়রা!

– আমাকে কেনো ডেকেছেন?

টায়রার কথার প্রতি উত্তরে লাজুক বললো,
– মাথা ধরেছে, টিপে দেও!

কথাটা বলে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলো!
টায়রা অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো লাজুকের দিকে, তারপর লাজুকের মাথার পাশে বসে কাপা কাপা হাতে ওর কপাল ছুয়ে দিলো!
থরথর করে কেপে উঠলো টায়রা, কেনো সে যানে না! বড় সড় একটা ঢোক গিলে আলতো হাতের স্পর্শে টিপে দিতে লাগলো লাজুকের মাথা!

ধীরে ধীরে চুলে হাত বলাতে লাগলো টায়রা, লাজুকের চুল গুলো বেশ সফট, দেখতেই ছুতে মন চায়!

লাজুকের মুখের দিকে তাকিয়ে সে! মানুষটা আসলেই অদ্ভুত! যেমন সুন্দর দেখতে, তেমনি ভয়ংকর অদ্ভুতও সে!
ছোট খাটো রহস্যর বই যেনো সে! যার প্রতিটা পাতা পাতা রহস্যে ভর পুর! কিন্তু এই রহস্যের বই টি কবে খুলার সুযোগ পাবে সে? আদও কি পাবে কখনো?

To be continue…..
Shuchona Zannat….
আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ৬

খাটে হেলান দিয়ে আধ শোয়া হয়ে ঘুমন্ত টায়রা, আর পাশেই তার কোমড় জরিয়ে ঘুমচ্ছে লাজুক!
কাল রাতে লাজুকের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে তা মনে নেই টায়রার!
মাঝরাতের দিকে শীতের কারেনে হয়তো লাজিকের কম্বলের নিচে চলে এসেছিলো!

চোখে আলোর রশ্মাই পরতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো টায়রার! আলসেমি কেটে সোজা হতেই হার্টফেল করার জোগার! লাজুকে এভাবে তার কোমড় জরিয়ে শুয়ে থাকতে দেখতেই বুক ধুকপুক করতে লাগলো!
নিশ্বাস আটকে আসছে! মাথা ঝিম ঝিম করছে!

চারপাশে নজর বুলিয়ে দেখলো সে লাজুকের রুমে! না জানি লাজুক ঘুম থেকে উঠে ওকে এখানে দেখলে কি করবে? হয়তো বোকবে ধমকাবে! আবার চড়ও তো মারতে পারে! কে বলতে পারে তা?

তারাতারি এখান থেকে পালানোর জন্য সে লাজুকের হাতটা কোমড় থেকে ছাড়ানোর প্রোচেষ্টায় লেগে গেলো!
কিন্তু যতই সে লাজুকের হাত সরিয়ে দিতে চাইছে ততোই লাজুক চেপে ধরছে আষ্টেপৃষ্টে!
কাপছে টায়রা লাজুকের এমন কাজে! গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তার!

এর মধ্যেই হঠাৎ লাজুক চোখ মেলে তাকালো! নিশ্বাস আটকে গেলো টায়রার!এই বুঝি প্রানটা বেরিয়ে যাবে! ভয়ে ততক্ষণাক চোখ চেপে বন্ধ করে ফেললো! লাজুকের দিকে তাকানোর সাহস নেই ওর এই মুহূর্তে !

অনুভব করলো, লাজুক ধীরে ধীরে তার হাতটা টায়রার কোমড় থেকে সরিয়ে নিচ্ছে! তারপর সোজা হয়ে বসে টায়রার মুখের দিকে তাকালো!
– এভাবে বসে না থেকে নিজের রুমে যাও!

টায়রা চোখ খুলে লাজুকের মুখের দিকে তাকালো! যে আপাদত টায়রার দিকে তাকিয়ে! দু হাতে নিজের চুল গুলো আউলাচ্ছে!
নজর সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো!

টায়রা বেরিয়ে যেতেই বেশ বড় বড় কয়টা নিশ্বাস ফেললো লাজুক! টায়রাকে এভাবে দেখে তার যে কি অবস্থা হয়েছিলো তা কাউকে বোঝাতে পারবে না!
এলো মেলো চুল, ঘুম ঘুম মুখ, আসক্তির শেষ চুড়ায় নিয়ে গেছিলো তাকে! ভয়ংকর মুহূর্ত পার করলো সে আজ!

সেই কখন থেকে তিতলি,রিমপি,রিমি,নিশু টায়রাকে ঘুরে ঘুরে দেখে যাচ্ছে ,আর মিটমিট হাসছে!
তাদের এরকম ব্যাবহার অসহ্য লাগছে টায়রার! রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে সে তাদের দিক!

রিমপি দুষ্টু হেসে বললো,
– টায়রা তুই কাল ভাইয়ের রুমে ছিলি?

রিমপির কথা শুনে কোনো রকম রিয়াকশন আর ভনিতা ছাড়াই টায়রা জবাব দিলো!
– হুমম!

– বাব বাহ্ ! এত দূর?

তিতলির এমন পিন্চ মারা কথা শুনে চোখ পাকিয়ে তাকালো তার মুখের দিকে!
– মানে?

– মানে বুঝছিস না? কাল যাকে গরু চোর, জমরাজ এই সব বলছিলি তার সাথেই রাত কাটিয়ে এলি?

নিশুর কথা শুনের ওর মাথায় একটা চড় মেরে টায়রা বললো,
– ছিঃ ছিঃ কথার কি ধরন! যা যা গিয়ে গোবর মেশানো গঙ্গা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে আয়! ওটা অপবিত্র হয়ে গেছে! আর হ্যা সাথে মাথাটা খুলে সেটাও ধুয়ে নিবি ভালো করে! ওগুলো সব নোংরা হয়ে গেছে!

টায়রার কথা শুনে নিশু বাদে বাকি সবাই হিহি করে হেসে উঠলো!

– কাল রাতে তুই ভাইয়ের ঘরে কি করলিরে?

ঠোট উলটে জবাব দিলো!
– কি আর করবো, তার নাকি মাথা ধরে ছিলো তাই চুল টেনে দিতে বলেছে! আর চুল টেনে দিতে দিতেই কখন যানি ঘুমিয়ে গেছিলাম! আর তারপর সকাল হতেই দেখি….
এতটুকু বলেই টায়রা থেমে গেলো! সকালের ঘটনা মনে পরতেই লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো!

– সকালে উঠে কি দেখলি?

তিতলির প্রশ্নে একটু ঘাবড়ে গেলো টায়রা কি জবাব,দেবে তাদের!
– কি..কি আবার..উ..উঠে দেখি আ..আমি ওখানে তাই চ..চলে এলাম!

– ওওহ !

ড্রইং রুমে বসে টায়রা,তিতলি,রিমপি,রিমি,নিশু,বর্ষা! তারা নানান কথায় বিজি! এর মধ্যেই সেখানে মোর্শেদা এলো একটা প্লেটের মধ্যেই কিছু মিষ্টি নিয়ে!

– একটা খুশির খবর আছে সবার জন্য!

টায়রা মোর্শেদার কথা শুনে জিগ্গেস করলো,
– কি খবর দিদুন?

টায়রার মুখে মিষ্টি পুরে দিয়ে জবাব দিলো!
– বর্ষার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে!

কথাটা শুনতেই সবাই চেচিয়ে উঠলো খুশিতে! টায়রা গিয়ে বর্ষাকে জরিয়ে ধরলো!
– কংরেচুলেশন দি!

বর্ষা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে জবাব দিলো,
– থ্যাংক ইউ!

রিমপি মোর্শেদাকে প্রশ্ন করলো,
– দিদুন বিয়ে কয় তারিখ ?

– আগামী সপ্তাহের মঙ্গল বার!

সবাই অবাক মোর্শেদার কথা শুনে!
টায়রা বললো,
– দিদুন তা হলে তো আর ছয় দিন বাকি! এর মধ্যে কিভাবে সব হবে?

– হয়ে যাবে চিন্তা করো না, লাজুক এর মধ্যে বিয়ের সব প্লান রেডি করে ফেলেছে! বাদ বাকিটাও হয়ে যাবে!

– ইয়াহ! ভাই যেহেতু আছে আর টেনশন কি? লাজুক মোজুমদার ইজ রিয়েল হিরো!হি ইজ অ্যা সুপার মেন! দেখবে সব কিছু কত ফার্স্ট আর পরিপাটি করে ঠিক করে ফেলবে!

রিমির কথায় সায় দিলো বাকিরাও!

লাজুক বসে বসে ফাইল ঘাটছে, তখনই দেখলো টায়রা গুটি গুটি পায়ে ওর সামনে এসে দাড়িয়েছে!
টায়রাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রূ কুচকে জিগ্গেস করলো,
– কিছু বলবে?

– আসলে ভা….[ এতটুকু বলে থেমে গেলো ]
তারপর আবার বললো,
– আ..আমার শপিং মলে যাওয়ার ছিলো! কিছু জিনিস লাগবে!

টায়রার কথা শুনে হাতের ফাইল গুলো গোছাতে গোজাতে জবাব দিলো!
– দশ মিনিটে রেডি হয়ে নিচে আসো, আমি গাড়িতে ওয়েট করছি!

– বব..বলছিলাম কি, আমি তিতলিদের কে নিয়ে যাই?
আ..আপনি শুধু শুধু…

কথা শেষ করার আগেই লাজুক ধমকে বললো,
– যা বলছি চুপ চাপ তাই কর, নয়তো মুখে টেপ লাগিয়ে দেবো!

অসহায় টায়রা উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো রেডি হতে! নয়তো আর কিছু বললে হয়তো দেখা যাবে বেলকুনি থেকে তাকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিবে!

গাড়ি থামতেই টায়রা বেরিয়ে গেলো, পাশে তাকাতেই দেখলো লাজুক আসছে! আবার সামনে তাকিয়ে হেটে মলের ভিতরে ঢোকা শুরু করলো!
এর মধ্যেই লাজুক এসে টায়রা হাত ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে গেলো!
টায়রা আড় চোখে একবার লাজুকের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো!

টায়রাকে নিয়ে প্রথমেই ঢুকলো একটা মোবাইলের শপে! টায়রা বোকার মত চেয়ে আছে! এখানে কেনো এলো লাজুক তা ওর জানা নেই!

কিছু মোবাইল ঘেটে একটা ধূসর রঙের আই ফোন নিলো! লেটেস্ট নাকি এটাই এখন! কত ঠিক দেখতে পেলো না, তবে সেলারের মুখে তো শুনলো এটাই!

আই ফোনটা প্যাকিং করে নিয়ে লাজুক সেটা টায়রাকে ধরিয়ে দিলো!
অবাক চোখে তাকিয়ে টায়রা লাজুকের দিকে!

– তোমার ফোন নাকি সেদিন কলেজে হাত থেকে পরে গিয়ে স্কৃন ভেঙ্গে গেছে?

মাথা নাড়ালো টায়রা!

– এখন থেকে এটা ইউস করবে তুমি!

লাজুকের কথা শুনে হা টায়রা! লাজুক ফোন কিনে দিলো ওকে,তাও আই ফোন! ভাবা যায়??

মোবাইল শপ থেকে বেরতেই টায়রাকে জিগ্গেস করলো,
– এবার কোথায় যাবে? আই মিন কি কিনবে বলো?

মাথা নিচু করে জবাব দিলো টায়রা,
– কিছু কসমেটিক’স আর ড্রেস!

– ওকে! বাট লেট করবে না তারা তারি কর!

– হুমম!

– শপিং শুরু কর, আমি দু মিনিটে আসছি!
কথাটা বলে চলে গেলো ওখান থেকে!

টায়রা শপির ভিতরে ঢুকে যা যা দরকার সব নিতে লাগলো! কেনা কাটা প্রাই শেষ তখনই পাশে ম্যানি কুইন কে পড়ানো কালো লেহেঙ্গা নজরে এলো টায়রার! হাতের ব্যাগ গুলো নিয়ে সেটার সামনে গিয়েই দারালো!

খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো ড্রেসটা! কালো রঙের সোনালি আর রুপালি সুতোর কাজ, নজর কারা ডিজাইন !

হঠাৎ পাশ থেকে কারোর আওয়াজে সে দিকেই ফিরে তাকালো! একটা ছেলে!

– হ্যালো পিচ্চি আপু! নাম কি?

ভ্রূ কুচকে তাকালো ছেলেটার দিকে, কেমন হ্যাঙ্গলা টাইপের দেখতে!
– কেনো?

– এমনি, একা নাকি সাথে কাউকে দেখছি না যে?

টায়রা কিছু বলতে জাবে এর মধ্যেই কেউ এসে ওর হাত চেপে ধরলো! লাফিয়ে উঠে পাশ মুড়তেই দেখলো লাজুক নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে!

ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আবার টায়রার দিকে তাকালো লাজুক!

– কি হচ্ছে এখানে?

টায়রা ভয়ে ভয়ে জবাব দিলো,
– ক..কই কিছু নাতো!

– তাহলে দাড়িয়ে আছো কেনো? চলো..

কথাটা বলে আর অপেক্ষা করলো না লাজুক টায়রাকে টেনে নিয়ে গেলো সেখান থেকে!

To be continue ……….
Shuchona Zannat…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here