এ কেমন ভালোবাসা পর্ব ৫ ও শেষ

#এ_কেমন_ভালোবাসা
পর্ব-০৫(শেষ)
লেখিকা -#খেয়া

সুন্দরমতে সেজেগুজে পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছি।
অন্যদিকে প্রচন্ড রাগও হচ্ছে।সামনে পাত্র সেজে বসে আছে রুদ্ধ ভাইয়া।সকালে উনাদের পাত্রপক্ষ হিসেবে রুদ্ধ ভাইয়াদের দেখে মাথাটা একদম ঘুরে গেছে।
যদি উনাদেরই আসার কথা ছিল তবে আমাকে কেউ বলেনি কেন।
সকাল থেকে কত টেনশনে ছিলাম।রুদ্ধ ভাইয়াও তো একবার আমাকে জানাতে পারতেন।বাবা- মাও কেন বলল না আমাকে।
মা তো এখানে নিয়ে আসার আগেই বলে দিয়েছে আমি যে রুদ্ধ ভাইয়াদের আগে থেকে চিনি বা তাদের বাসায় থেকেছি তা যেন কাউকে না বলি।লোকে শুনলে নাকি খারাপ বলবে।

আংকেলরাও আর পাঁচটা নরমাল পাত্রপক্ষের মতো বিভেব করছে।রুদ্ধ ভাইয়া আর দীপ্ত এমন ভাব করছে যেন আমায় চিনেই না।
আমিও ভালো মেয়ের মতো বসে আছি।বড়টা তাদের মতো কথা বলছে।তাদের কথা শুনে যা বুঝলাম তারা সবাই রাজি।আমার দুই ফুফুর তো রুদ্ধ ভাইয়াকে খুব পছন্দ হয়েছে।
রুদ্ধ ভাইয়াদের নিজস্ব হাসপাতাল আছে বলে ভাইয়ার ইন্টার্নশিপে আছে যেনেও সবাই বিয়েতে রাজি।বিয়েটা হওয়ায় যে আমার আনন্দ হচ্ছেনা সেটা কিন্তু না।তবে আমার খুব অভিমান হয়েছে রুদ্ধ ভাইয়ার ওপর। উনারা যে আসবেন সেটা তো একবার আমায় বলতে পারতো।কাল রাতেও তো এতোবার ফোন করল, তখনও বলতে পারতো।

বড় ফুফু আমায় বলল—

—- রাত,তুই বরং রুদ্ধ আর দীপ্তকে নিয়ে ছাদে চলে যা।মাহিকেও নিয়ে যা সাথে।এদিকে বড়রা একটু কথা বলে নিক।

—- আচ্ছা।

—————-

আমি আর রুদ্ধ ভাইয়া ছাদে এককোনে দাঁড়িয়ে আছি।আর অন্যদিকে দীপ্ত মাহির সাথে কথা বলছে।নিরবতা ভেঙে রুদ্ধ ভাইয়া বলল

—- রাত!

আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম

—- কথা বলব না আপনার সাথে।আপনারা যে আজ এভাবে আসবেন সেটা তো কালল আমাকে একবার বলতে পারতেন।জানেন আমি সকাল থেকে কত টেনশনে ছিলাম।বিয়েটা ভাঙারও কত চেষ্টা করেছিলাম।

—- তাহলে ভেঙে দি বিয়েটা।তবে তুমি যত চেষ্টা করোনা কেন বিয়েটা ভাঙা পসিবল হতো না।কারণ আমি এটা হতে দিতাম না।অনেক কষ্ট করেছি সবাইকে রাজি করাতে।সারাদিন দীপ্তর হাজার খানেক টিটকারি শুনেছি।
এত কিছু করেও যদি তোমায় না পায় তাহলে কী লাভ বলোতো।

রুদ্ধ ভাইয়ার কথা শুনতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম।লাস্ট কবে এমন প্রাণখুলে হেসেছি মনে নেই।
তবে এ হাসির কারনটা একান্তই আমার।আমাকে এভাবে হাসতে দেখে রুদ্ধ ভাইয়াও হেসে উঠলেন।সত্যি বলতে গত তিনমাসে আমি কখনো তাকে এভাবে হাসতে দেখিনি।উনি হাসি থামিয়ে আমায় বললেন

—- এ হাসির কারণটা কী জানতে পারি?

—- নাহ।এ কারণটা একান্তই আমার।

—- আমি মানুষটাও তো একান্তই তোমার,তাই নয় কী।

—- জানেন তো,আপনি যখন জানতে পারবেন যাকে আমি ভালোবেসে সারাজীবনের মতো নিজের করে চান,সে মানুষটাও যখন আমাকে ঠিক ততটাই চাইবে তখন সেই অনুভূতি আপনি প্রকাশ করতে পারবেন না।ঠিক সে ভাবেই আমিও আপনাকে আমার হাসির কারণটা ব্যাখ্যা করতে পারব না।

—- তোমাকে দেখে পিচ্চি মনে হলে কী হবে মাথায় এতকিছু নিয়ে ঘোরো তুমি।

—- আমি পিচ্চি।তাহলে এই পিচ্চিটাকে কেন বিয়ে করতে এসেছেন, যান না নিজের বয়সের কাউকে খুঁজে নেন।

—- এজন্যই মেবি লোকে বলে বলে পিচ্চিদের বিয়ে করতে নেই।নাকের ডগায় রাগ লেগেই থাকে।

—- আপনি আবার,,,,

“আপুনি তোমাদের নিচে ডাকছে।”

মাহির কথা শুনে সবাই নিচে চলে গেলাম।রুদ্ধ ভাইয়ার সাথে আজ আর ঝগড়া করা হলোনা।

——————–

রুদ্ধ ভাইয়ারা বিকেলে চলে গেছেন।সামনে শুক্রবার বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে।আপাতত ছোটো- খাটো পরিসরে কাবিন করিয়ে রাখা হবে।রুদ্ধ ভাইয়া ভালো একটা পজিসনে গেলে অনুষ্ঠান করা হবে।
এত জলদি আমার বিয়ে করার ইচ্ছা না ছিল না।তবু বিয়েটা রুদ্ধ ভাইয়ার সাথে হচ্ছে বলে না করিনি।বাবা-মাও যখন রাজি হয়েছে তারা নিশ্চয় আমার ভালোবুঝেছে।

দেখতে দেখতে তিনদিন কেটে গেছে।বিয়ের আর মাত্র তিনদিন বাকি।আজ আমরা সবাই মিলে ঢাকায় যাবো বিয়ের কেনাকাটা করতে।রুদ্ধ ভাইয়ারাও সেখানেই আমাদের জয়েন করবে।

আমি, বাবা,মা,আমার দুই ফুফু আর তিন কাজিন মিলে ঢাকা এসেছি।এখানে এসে বড়ফুফুর ননদের বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম।রুদ্ধ ভাইয়াদের বাসায় যায়নি।এসময় নাকি আমি ওখানে গেলে ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।

আমরা সবাই একটা শপিং মলে গেলাম।আংকেল মামনি, দীপ্ত আর রুদ্ধ ভাইয়াও আছে আমাদের সাথে।
আমরা একটা দোকানে বিয়ের শাড়ি দেখছিলাম।তবে আমার খুব ইচ্ছে ছিল একমাত্র বিয়েতে লেহেঙ্গা পড়ার।কিন্তু লজ্জায় কিছু বলতে পারছিনা।
অনেক দেখেও আম্মু আর মামনির কোনো শাড়ি পছন্দ হলোনা।অবশেষে তারা লেহেঙ্গা দেখা শুরু করল।বেশ কয়েকটা লেহেঙ্গা দেখার পর রুদ্ধ ভাইয়া একটা পার্পল লেহেঙ্গা চুজ করল।আমারও বেশ পছন্দ হলো ডিজাইনটা।
কিন্তু মামনি বলল–

—- বিয়েতে পার্পল।

—- আমার বউয়ের বিয়ে তাই আমি যা বলব সে তাই পড়বে।সিম্পল।

রুদ্ধ ভাইয়ার এমন ডোন্টকেয়ার মার্কা কথাশুনে সবাই হেসে ফেলল।এদিকে আমি তো লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি।যদিও এত লজ্জার কিছু নেই তবুও খুব লজ্জা পাচ্ছি।

—- এই মেয়ে,এভাবে দাড়িয়ে লাল- নীল না হয়ে গিয়ে লেহেঙ্গাটা ট্রায়াল দিয়ে আসো।

রুদ্ধ ভাইয়ার এমন লাগাম ছাড়া কথায় চোখ গরম করে উনারদিকে তাকিয়ে লেহেঙ্গাটা নিয়ে ট্রায়ালরুমে ঢুকে গেলাম।

রুদ্ধ ভাইয়ার জন্য একটা অফহোয়াইট পান্জাবী নেওয়া হলো। ভেবেছিলাম বরের সাথে ম্যাচ করে ড্রেস পরব বিয়েতে।কিন্তু রুদ্ধ ভাইয়া আর সেটা হতে দিলো কই।

এবার বাড়ির বাকি সবার জন্য যে যার মতো জামা দেখছিল। তখনই দীপ্ত এসে বলল

—- আচ্ছা ভাবী,তোমার কী কোনো কাজিন নেই।না মানে তাহলে ভাইয়ার সাথে আমিও বিয়েটা সেরে নিতাম আরকি।বাবার খরচ কম হতো।

—- সিরিয়াসলি, একটা দামড়া ছেলের বাপ হয়েও আবার বিয়ে করার শখ জেগেছে তোমার।

—- আমার আবার ছেলে কই থেকে এলো।

—- কেন তোমার ক্যান্ডি।

আমার কথা শুনে দীপ্ত হেসে উঠল,সাথে আমিও।
শপিং শেষে চলে আসার সময় রুদ্ধ ভাইয়া হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলেন।বলেছে বাসায় এসে খুলতে।

বাসায় এসেছি অনেক্ষন।আসতে আসতে রা হয়ে গিয়েছিল।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।সকালে ঘুম থেকে উঠেই রুদ্ধ ভাইয়ার দেওয়া ব্যাগটা খুললাম।খুব সুন্দর কাজ করা নীল রঙের শাড়ি।সকাল সকাল শাড়িটা দেখেই মন ভালো হয়ে গেলো।
কাল শুক্রবার।আজ থেকেই বাড়িতে মেহমান দের আসা শুরু হয়ে গেছে।খুব কাছের কিছু মেহমানদেরই বলা হয়েছে।

——————-

অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিনটি এসেই গেলো। আজ শুক্রবার।আজ রুদ্ধ ভাইয়া একান্তই আমার হবে।

সকাল থেকেই বাসায় তোরজোড় শুরু হয়ে গেছে।তবে গাঁয়ে হলুদ বা অন্যকোন আয়োজন হয়নি।

বিকেল হয়ে গেছে।রুদ্ধ ভাইয়ারা চলে এসেছেন।উনাদের সাথে প্রায় দশজন লোক এসেছে।অনেক চেষ্টা করেছিলাম রুদ্ধ ভাইয়াকে দেখার কিন্তু তাকে একনজরও দেখতে পেলাম না।
আমাকে রেডি করিয়ে সবাই নিচে চলে গেছে।আমি একাই রুমে আছি।

কিছুক্ষন পর আমার আর রুদ্ধ ভাইয়ার কাজিনরা এসে আমাকে নিয়ে গেলো।এখন বিয়ে পড়ানো হবে।

কাজী কবুল বলতে বললেই রুদ্ধ ভাইয়া একসেকেন্ড টাইমও ওয়েস্ট না করে কবুল বলে দিলো।আমিও কবুল বলে দিলাম।সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠল।অবশেষে রুদ্ধ একান্তই আমার হলো।

যেহেতু এতরাতে ঢাকা ব্যাক করা সম্ভবনা তাই আজ সবাই এখানেই থাকবে। কাল সকালে সবাই ঢাকা যাবে।আমাদের বাসায় বাসরের আয়োজন করা হয়েছে।

রুদ্ধ ভাইয়ার কাজিনরা আমাকে বাসর ঘরে রেখে গেছে।রাত যখন প্রায় বারোটা বাজে তখন রুদ্ধ রুমে এলো।আমি গিয়ে উনাকে সালাম দিলাম।উনিও যথারীতি সালামের উত্তর দিলেন।তারপর আমায় ফ্রেশ হয়ে আসতে বললেন।
আমিও গিয়ে একটা নরমাল ড্রেস পরে আসলাম।উনিও ফ্রেশ হয়ে এলেন।আমাকে বললেন

—- রাত,চলো বেলকনিতে যায়।

—- এত রাতে?

—- হুম চলেন।

আচ্ছা, আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?

—- বলো।

—– আপনার কাছে আমি কতটা দামী?

—- তোমার দাম আমার কাছে পুরো পঞ্চাশ হাজার।মানে পঞ্চাশ হাজার দিয়ে ঘরে ঢুকেছি।

—- হুম জানি,সেখান থেকে ১০% আমার।

—- কীহ।তুমি নিজের বাসরে নিজের বরেরর থেকে টাকা নিবা

—- হুম।অবশ্যই।জানেন তো আপনাদের বাসায় থেকে এতদিন আপনার পিছনে ঘুরেছি অথচ বুঝতেই পারিনি আপনি আমায় এত ভালোবাসেন।
তবে দীপ্ত যে বলেছিল আপনি অন্য কারো মায়ায় আবদ্ধ। কে সে?

—- দীপ্ত ঠিকই বলছিল।তবে সে কে সেটা তোমার না জানলেও চলবে।তবে এটা জেনো আমি তার মায়ায় পড়েছিলাম।মায়া কাটানোর জন্য সময় যথেষ্ট কিন্তু তোমায় আমি ভালোবাসি।ভালোবাসা সহজে হারানোর মতো না।তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি সেটা তোমায় আমি সত্যি বোঝাতে পারব না, আরাত্রি।

রুদ্ধর মুখে আরাত্রি ডাকটা শুনে আমার সাড়া শরীরে এক অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেলো।তাকে বললাম

—এ কেমন ভালোবাসা বলুন তো যার অনুভূতি গুলো কখনো পুরোপুরি প্রকাশ করা যায়না।

উনি কার মায়ায় পড়েছিল জানিনা।তবে যে উনি সত্যি আমায় ভালোবাসেন সেটা আমি জানি।

—- ভালোবাসা এমনই হয়।ভেতরে চলো রাত,তুমি চলে আসার পর একদিনও রাতে ঘুমায়নি।আজ তোমাকে জড়িয়ে খুব শান্তিতে ঘুমাবো।

আমি মুচকি হেসে বললাম ” আপনি যান আমি আসছি।”
উনি চলে গেলে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম

” এ কেমন ভালোবাসা যেখানে আবেগ – অনুভূতি আছে কিন্তু তার প্রকাশ নেই”।

( সমাপ্ত)

( ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here