এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ২৫

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#এক্সট্রা_ধামাকা_পর্ব
#নিশাত_জাহান_নিশি

মুহিত আর মৃন্ময় টেনশানে শেষ হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি থেকে নামতে ও পারছে না ওরা। গাড়িতে বসে বসেই টেনশান করে যাচ্ছে। মুহিত আর মৃন্ময় টেনশানে শেষ হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি থেকে নামতে ও পারছে না ওরা। গাড়িতে বসে বসেই টেনশান করে যাচ্ছে। মুহিতের অধিক টেনশান হচ্ছে রূপের জন্য।

গেইট থেকে বের হয়ে মারু রূপের হাত ধরে যেই না সামনে পা বাড়াতে যাবে অমনি কিছু দল গার্ডসকে মারু পিছনের গেইটে দেখতে পেলো। মুহিতের গাড়িটা রাস্তার বিপরীত পাশে দেখা যাচ্ছে। গাড়ির কাঁচ লাগিয়ে দুজনই ঘাপটি মেরে বসে আছে। মূলত গার্ডসদের দেখেই মুহিত আর মৃন্ময় লুকিয়ে আছে। মুহিত কিছুটা বিচলিত হয়ে মাথাটা নিচু করে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,,,

—-“ভাই এখন কি করব? চল গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। সামনে দাঁড়িয়েই মোকাবেলা করব। আই থিংক এছাড়া আর কোনো পথ নেই। রূপ আর ভাবীকে ও দেখা যাচ্ছে না। হয়তো গার্ডসদের জন্য বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। এভাবে হাত, পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। চল কিছু এক্টা করি।”

—-“মুহিত প্লিজ ধৈর্য্য রাখ। আর এক্টু ওয়েট করে দেখি। ওদের মুখোমুখি হতে হলে হীতে বিপরীত হতে পারে। মাঝ রাস্তায় এসে হাল ছাড়লে চলবে না। আর এক্টু সময় নিয়ে দেখি কি হয়।”

মুহিত আর কথা বাড়ালো না। চুপ হয়ে গেলো। তবে মুহিত অজানা এক্টা ঝড়ের আভাস পাচ্ছে। নিশ্চয়ই কিছু এক্টা খারাপ হতে চলছে।

ঐদিকে,,,,,,

মারু উপায়, বুদ্ধি না পেয়ে রূপের হাত ধরে গেইটের ভিতর ঢুকে বাড়ির একেবারে শেষ প্রান্তে চলে গেলো। বাড়ির শেষ প্রান্তের বাউন্ডারীর কাজ এখনো কমপ্লিট হয় নি। বাউন্ডারীর কিছুটা অংশ ভাঙ্গা। ভাঙ্গা জায়গাটা দিয়ে খুব সহজে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে। মারু পিছু ফিরে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“রূপ রেডি থাক। জাম্প মারতে হবে।”

রূপ মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। মারু রূপের হাতটা ছেড়ে জোরে এক লাফ দিয়ে বাড়ির বাইরে বের হয়ে গেলো। রূপ আস্তে ধীরে ভাঙ্গা জায়গাটায় পা রেখে জোরে লাফ দিয়ে রাস্তায় পা রাখল। মারু মুচকি হেসে রূপের হাত ধরে দৌঁড়ে মেইন রাস্তায় উঠে গেলো। রূপ বুক পকেট থেকে ফোনটা বের করে মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“দাঁড়া মারু। মুহিতকে কল করে বলে দেই গাড়িটা ঘুড়িয়ে পিছনের দিকে ব্যাক করতে। ওরা তো আর জানে না আমরা অন্য রাস্তা দিয়ে পালিয়েছি।”

মারু রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“হুম বলে দে।”

রূপ মুহিতের নাম্বারে কল করতে নিলেই আচমকা পিছন থেকে কেউ এসে রূপের মাথায় লাঠি জাতীয় কিছু এক্টা দিয়ে সজোরে আঘাত করল। সাথে সাথেই রূপ মাথায় হাত দিয়ে আহ্হ্হ্হ্ করে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। রূপের চিৎকারের আওয়াজে মারু পিছনে ফিরে তাকালো। লাঠি হাতে আব্বাস আহমেদকে দেখা মাএই মারু পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে মারু আব্বাস আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস করতে পারছে না সে আব্বাস আহমেদ রূপের এতো বড় ক্ষতি করে দিবে। চোখ থেকে টুপটাপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে মারুর।

আব্বাস আহমেদ রূপকে ক্রস করে মারুর হাত ধরে টেনে বাড়ির ভিতর এগুচ্ছে আর বলছে,,,,,

—-“তোকে আজ আমি মেরেই ফেলব। গলা কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিবো। তোর মতো কুলাঙ্গার মেয়ের আমার দরকার নাই। শুধু মাএ তোর জন্য আমার মান সম্মান নিলামে উঠল। গ্রামের লোক জনের কাছে ছোট হয়েছি আমি। অনিকের বাবার চোখে ও নিচে নেমে গেলাম। আজ সত্যি সত্যি তোকে মেরে ফেলব। গ্রামের মানুষদের সামনে তোর গর্দান নিবো।”

মারু ওর শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আব্বাস আহমেদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বুক ফাঁটা চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,

—-“হ্যাঁ তো নিয়ে নাও আমার গর্দান? কেনো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছ? তোমার মতো স্বার্থপর আর জঘন্য বাবা আমার লাগবে না। তুমি এক্টা পিশাচ বুঝেছ? বাবা নামের কলঙ্ক তুমি। তোমার মেয়ে হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া শতগুন ভালো। ঘৃনা করি আমি তোমায়। শত্রুর মতো ঘৃনা করি। তোমার মতো বাবা যেনো কোনো মেয়ের ভাগ্যে না জুটে।”

মারু চিল্লিয়ে কাঁদছে আর বলছে,,,,,

—-“দোষ করলে আমি করেছি। রূপ তো করে নি! কেনো তুমি রূপকে এতো বড় শাস্তি দিলে? কেনো রূপকে আঘাত করলে? আমি ওর রক্তাক্ত শরীরটা চোখের সামনে দেখতে পারছি না। কষ্ট হচ্ছে আমার। বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। প্রয়োজন পড়লে তুমি আমার মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। আমি কোনো প্রকার অভিযোগ করতাম না। তবে কেনো তুমি রূপকে আঘাত করলে? কেনো?”

মারু কাঁদতে কাঁদতে পিছনে ঘুড়ে দৌঁড়ে রূপের পাশে বসে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,

—–“মুহিতততততততততত তুমি কোথায়? প্লিজ রূপকে বাঁচাও। তোমার রূপ ভালো নেই মুহিত। প্লিজ সেইভ হার।”

মারুর চিৎকারের আওয়াজ মুহিতের কান অব্দি পৌঁছে গেছে। অস্পষ্ট ভাবে মুহিত আর মৃন্ময় মারুর চিৎকারের আওয়াজ শুনেছে। মুহিত আর বসে থাকতে পারল না। গাড়ির দরজা খুলে পাগলের মতো ছুটাছুটি করছে আর চিৎকার দিয়ে বলছে,,,,,,

—-“ভাবীবীবীবী…… আপনি কোথায়? প্লিজ আর একবার আওয়াজ দিন। আওয়াজ অনুসরন করে আমি আপনার কাছে পৌঁছে যাবো।”

মুহিতের সাথে মৃন্ময় ও মারু মারু বলে চেচাচ্ছে। পিছনের গেইটের চ্যালারা মৃন্ময় আর মুহিতের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় আর মুহিত ওদের দিকে পাওা না দিয়ে পুরো রাস্তা জুড়ে ছুটাছুটি করছে।

এতক্ষনে অনিকের চ্যালারা এসে মারু আর রূপকে ঘিরে ফেলেছে। আব্বাস আহমেদ চোখ লাল করে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। অনিক ফাঁটা মাথা নিয়ে চোখে, মুখে জল ছিটিয়ে মারুর কাছে তেড়ে এলো। মারু অশ্রুসিক্ত চোখে অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ যন্ত্রনায় ছটফট করছে। চোখ, মুখ খিঁচে রেখেছে সে। আর মিনমিন করে মুহিতকে ডাকছে। মারু শক্ত করে রূপের হাতটা ধরে রেখেছে।

অনিক মারুকে ধরতে আসলেই মারু চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,,,,,,

—-“মৃন্ময়য়য়য়য়য়য়য়……. আপনারা প্লিজ পেছনের দিকে চলে আসুন। লোকটা আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। রূপকে আপনারা বাঁচান প্লিজ। রূপ খুব কষ্ট পাচ্ছে।”

মুহিত আর মৃন্ময় এবার স্পষ্ট মারুর চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেলো। মৃন্ময়ের আগে মুহিত রাস্তার অপর পাশে গিয়ে বাড়ির পিছনের দিকটায় চলে এলো। রূপকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে মুহিত কিছুটা সময়ের জন্য থমকে গেলো। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে মুহিত রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। টপটপ করে মুহিতের চোখ থেকে জল পড়ছে। রূপ ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে সেন্সলেস হয়ে গেছে। মৃন্ময় দৌঁড়ে এসে মুহিতের পাশে দাঁড়ালো। মৃন্ময় ও স্পিচলেস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নড়ার শক্তি ও পাচ্ছে না।

অনিক তেড়ে এসে মারুর চুলের মুঠি ধরে রাগে গজগজ করে বলল,,,,,,

—-“জানোয়ারের বা**। তোর এতো বড় সাহস? তুই আমাকে টপকে বাড়ি থেকে বের হবি? দেখেছিস তো তোর প্রাণ ভোমড়া কিভাবে মাটিতে পড়ে আছে? তোর ও আজ এই অবস্থা করব। আগে তো বিয়েটা করে নেই। এরপর অত্যাচার করব।”

মারু ছলছল চোখে আব্বাস আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্বাস আহমেদ মারুর থেকে চোখ ঘুড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। উনার মনে মারুর জন্য এক্টু ও দয়া মায়া হচ্ছে না। বাবারা কি এমনই হয়? সন্তানের কষ্ট দেখে ও চুপচাপ সব সহ্য করে নেয়?

এর মাঝেই অনিক আর মারুর পরিবারের সবাই এসে এক সাথে জড় হলো। রূপের অবস্থা দেখে মেঘার চোখে জল ভরে এলো। মাইমুনা আহমেদ মারুর দিকে তাকিয়ে শাড়ির আঁচল চেঁপে কাঁদছে। অনিক মারুকে বসা থেকে উঠিয়ে যেই না বাড়ির ভিতর ঢুকাতে যাবে অমনি মুহিত আর মৃন্ময় এসে অনিকের মুখোমুখি দাঁড়ালো। অনিক এক ভ্রু উঁচু করে মুহিত আর মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় ঝাঁঝালো কন্ঠে অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“মারুর হাতটা ছাড় বলছি।”

অনিক হু হা করে হেসে মৃন্ময়ের কলার ধরে বলল,,,,,

—-“কে রে তুই? কোথা থেকে উড়ে এসে আমাকে হুমকি দিচ্ছিস?”

মৃন্ময় এক টানে অনিকের হাত থেকে মারুকে ছিনিয়ে এনে অনিকের পেট বরাবর জোরে একটা কিক মেরে বলল,,,,,,

—-“আমি মারুর হাজবেন্ড বলছি।”

অনিক সহ উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে মৃন্ময় আর মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত এতোক্ষনে রূপকে কোলে নিয়ে দৌঁড়ে গাড়ির কাছে চলে গেলো। রাগে, দুঃখে মুহিতের চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। এই মুহূর্তে লড়াই করার চেয়ে রূপকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়াটা খুব জরুরী। রূপকে গাড়িতে উঠিয়ে মুহিত গাড়ি স্টার্ট করতে নিলেই আব্বাস আহমেদ মুহিতের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ছেড়ে বলল,,,,,,,

—-“বাবা তুমি এখান থেকে যেও না প্লিজ। আমার মেয়েটাকে আগে ঐ অনিকের হাত থেকে বাঁচাও। আমি রূপকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি। রূপকে নিরাপদে হসপিটালে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। আমি রিস্ক নিচ্ছি।”

মুহিত গাড়ি থেকে নেমে আব্বাস আহমেদর দিকে তাকিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—-“মেয়ের প্রতি যদি আপনার এতোটাই টান থাকে তবে কেনো মেযেকে ঐ কুলাঙ্গারটার হাতে তুলে দিচ্ছিলেন কেনো?”

—-“আমি বাধ্য হয়ে মেয়েটাকে অনিকের হাতে তুলে দিচ্ছিলাম বাবা। এই বিয়ের পেছনে অনেক কাহিনী আছে। অনেক সময় নিয়ে বলতে হবে। এই পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে আমি ভুল করছি। প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করো বাবা। প্লিজ আমার মেয়েকে বাঁচাও। আমি ও রূপকে বাঁচাতে চাই।”

আব্বাস আহমেদের ফেইস দেখে বুঝা যাচ্ছে উনি মিথ্যে বলছে না। সত্যিই বলছে। মুহিত একবার রূপের দিকে তাকিয়ে আব্বাস আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“আংকেল প্লিজ আমার রূপকে দেখে শুনে রাখবেন। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে হসপিটালে এডমিট করে দিবেন। আর বেশি দেরি করা যাবে না আঙ্কেল। আপনি প্লিজ গাড়িতে উঠে পড়ুন। আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই হসপিটালে পৌঁছে যাবো। রূপের দিকে সর্বক্ষন খেয়াল রাখবেন আংকেল। রূপকে আপনার হাতে আমানত স্বরূপ তুলে দিলাম। এই একজন ছাড়া পৃথিবীতে আমার আর কোনো বেঁচে থাকার অবলম্বন নেই।”

আব্বাস আহমেদ আর দেরি না করে গাড়িতে উঠে পড়ল। আব্বাস আহমেদ মুহিতের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,,

—-“বাবা তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। তোমার বেঁচে থাকার অবলম্বনকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব আমার।”

আব্বাস আহমেদ আর দাঁড়ালো না। গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। মুহিত চোখের জল গুলো মুছে দৌঁড়ে বাড়ির পিছনের দিকে চলে গেলো। মৃন্ময় একা অনিকের সাথে পেরে উঠছে না। অনিকের চ্যালা গুলো মৃন্ময়কে রুখে দাঁড়াতে দিচ্ছে না। মারু পাশে দাঁড়িয়ে কেবল কেঁদেই যাচ্ছে। মিনা, মাইমুনা আহমেদ আর মেঘা এসে মারুকে ঘিরে রেখেছে।

মুহিত শার্টের হাঁতা ফোল্ড করতে করতে রাস্তার পাশ থেকে এক্টা কাঠের গুঁড়ি নিয়ে অনিকের দিকে তেড়ে আসছে আর গর্জন করে বলছে,,,,,,

—-“চল এবার তোরা আমার মুখোমুখি দাঁড়া। দেখি তোরা আমার সাথে ঠিক কতোক্ষন লড়তে পারিস।”

কথাগুলো বলেই মুহিত কাঠের গুড়িটা ঘুড়িয়ে অনিককে বেধরক পেটাতে লাগল। সাথে পিছনের চ্যালাদের ও এলোপাথারী কেলানী দিচ্ছে মুহিত। মুহিতকে পেয়ে মৃন্ময়ের সাহসটা দ্বিগুন বেড়ে গেলো। মৃন্ময় ও এক্টা কাঠের গুঁড়ি নিয়ে সবকটাকে এক সাথে পিটাচ্ছে। চ্যালা ফ্যালারা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। অনিক একা মুহিতের সাথে ফাইট করছে। মুহিত কৌশলে অনিকের শার্টের কলার চেঁপে ধরে অনিকের নাক বরাবর ঘুঁষি মেরে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—-“কাল রাতের মার খেয়ে ও তোর শাস্তি হয় নি তাই না? তুই আবারো আমার রূপ আর ভাবীর পিছনে লেগেছিস? আজ তো তোর রক্ষে নেই। হসপিটালে টানা এক মাস শুয়ে থাকার বন্দোবস্ত করছি।”

কথা গুলো বলেই মুহিত অনিকের মেইন পয়েন্টে এক্টা লাথি মেরে অনিককে রাস্তায় শুইয়ে দিলো। ব্যাথায় অনিকের মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। মুহিত আর মৃন্ময় এলোপাথারী অনিককে লাথি মেরে যাচ্ছে। ভর্তা হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে অনিকের। অনিকের আম্মু, আব্বু হাজার টেনে ও মুহিত আর মৃন্ময়কে সরাতে পারছে না।

মারু তেড়ে এসে অনিকের পেট বরাবর এক্টা লাথি মেরে বলল,,,,,,

—-“বলেছিলাম না আমাদের পিছনে লাগতে আসিস না। দেখলি তো আমার আর রূপের গাঁয়ে হাত তুলার ফলাফল কতোটা ভয়ংকর?”

কথা গুলো বলেই মারু মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“মুহিত প্লিজ এবার একে ছাড়ো। হসপিটালে চলো। এই মুহূর্তে আমাদের রূপের পাশে থাকাটা খুব জরুরী। আব্বু হয়তো একা একা রূপকে সামলাতে পারছে না। আজ আমি খুব খুশি। আব্বু মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়েছে। হয়তো রূপের জন্যই সবটা হয়েছে!”

মুহিত রাগটাকে কন্ট্রোল করে মৃন্ময় আর মারুর হাত ধরে মেইন রাস্তায় উঠে গেলো। অনিকের বাবা পিছন থেকে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,

—-” তোকে আমি দেখে নিবো। আগে আমার ছেলে সুস্থ হয়ে নিক।”

মুহিত পিছনে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,,,,,

—-“অপেক্ষায় রইলাম। আশা করছি খেলা এবার জমবে।”

মুহিত আর কথা না বাড়িয়ে এক্টা সি.এন.জি থামিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। অনিককে নিয়ে অনিকের বাবা, মা বাড়ির ভিতর ঢুকে উনাদের গাড়ি নিয়ে হসপিটালে ছুটল। অনিককে ইমেডিয়েটলি হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে। অনিকের এখন প্রায় যায় যায় অবস্থা। মাইমুনা আহমেদ, মিনা আর মেঘা বাড়ির অন্য গাড়ি দিয়ে রূপকে দেখার জন্য হসপিটালে ছুটে চলল।

গাড়িতে বসে মুহিত আব্বাস আহমেদকে কল করে হসপিটালের এড্রেস জেনে নিলো। মুহিতের চোখে, মুখে ভয় আর অস্থিরতার ছাপ। অনর্গল ঘামছে মুহিত। রূপের রক্তাক্ত মুখটা কেবল মুহিতের চোখে ভাসছে। মৃন্ময়ের বুকে মাথা রেখে মারু ও কেঁদে চলছে। কিছুতেই যেনো থামছে না।

প্রায় পনেরো মিনিট পর গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো হসপিটালের সামনে। মুহিত তাড়াহুড়ো করে সি.এন.জি থেকে নেমে দৌঁড়ে হসপিটালের ভিতর ঢুকে গেলো। ২০৩ নম্বর কেবিনে রূপকে ভর্তি করা হয়েছে। মাথায় চারটে সেলাই লেগেছে রূপের। রূপ এখন সুস্থ আছে। তবে স্যালাইন চলছে। আব্বাস আহমেদ রূপের কেবিনে চেয়ার নিয়ে বসে আছে। রূপ এখনো চোখ খুলে নি। সেন্সলেস অবস্থায় পড়ে আছে। মুহিত কেবিনে ঢুকেই রূপের বেডের উপর বসে এক দৃষ্টিতে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষনে মারু, মৃন্ময় এমনকি মারুর পরিবারের সবাই এসে রূপের কেবিনে হাজির হয়ে গেলো।

মুহিত ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে রূপকে ঝাপটে ধরে বলছে,,,,,

—-“রূপ প্লিজ চোখ খুলো। তোমাকে এই অবস্থায় আমি দেখতে পারছি না। ভিতরটা ফেঁটে যাচ্ছে। নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে বুকে। প্লিজ তুমি চোখ খুলে আমার বুকের অসহ্য যন্ত্রনাটা সারিয়ে দাও। শীতলতায় আমার ভিতরটা শিথীল করে দাও।”
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_২৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“রূপ প্লিজ চোখ খুলো। তোমাকে এই অবস্থায় আমি দেখতে পারছি না। ভিতরটা ফেঁটে যাচ্ছে। নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে বুকে। প্লিজ তুমি চোখ খুলে আমার বুকের অসহ্য যন্ত্রনাটা সারিয়ে দাও। শীতলতায় আমার ভিতরটা শিথীল করে দাও।”

মুহিতের কান্নার স্রোত বেড়ে যাচ্ছে। মৃন্ময় মুহিতের পাশে দাঁড়িয়ে মুহিতের মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,,,,,

—-“কাঁদিস না মুহিত। দেখবি রূপ খুব জলদি সুস্থ হয়ে উঠবে। এক্টু সময় দে। ধৈর্য্য ধর।”

মুহিত রূপের কপালে কপাল ঠেকিয়ে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“এতো সময় আমার হাতে নেই ভাইয়া। ওর এক্টু মৌনতা আমাকে খুব যন্ত্রনা দেয়। আমার চোখ দুটো অতৃপ্তিতে ভুগছে। রূপ চোখ খুলে তাকালেই আমার অতৃপ্ত চোখ দুটো তৃপ্ত হবে।”

মৃন্ময় চুপ হয়ে গেলো। মুহিতকে নিজের মতো ছেড়ে দিলো। মুহিত এখনো রূপকে ঝাপটে ধরে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—–“আমি তোমাকে সেইফ করতে পারি নি রূপ। এতোটা কাছাকাছি থাকার পরে ও তোমাকে বাঁচাতে পারলাম না। তোমাকে আঘাত পেতেই হলো। আমার ই ভুল ছিলো রূপ তোমাকে একা ঐ বাড়িতে ছাড়াটা। আমি শাস্তি পাচ্ছি রূপ। খুব খুব খুব শাস্তি পাচ্ছি। তুমি প্লিজ একবার চোখ খুলে তাকাও। আমি আর কখনো তোমার গাঁয়ে কোনো আঁচ লাগতে দেবো না। সবসময় তোমাকে ঝাপটে ধরে রাখব। এভাবেই বুকে আগলে রাখব। যা কিছু আসবে আমার উপর দিয়ে যাবে। আর তুমি আমার বুকে সেইফে থাকবে।”

মুহিতের আকুতি ভরা কান্না দেখে উপস্থিত সবার চোখে জল চলে এলো। আব্বাস আহমেদ চোখে জল নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। অনুশোচনায় জ্বলছে উনি। উনার জন্যই রূপের আজ এই অবস্থা। কারো চোখে চোখ মিলাতে পারছে না উনি। তাই বাধ্য হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মুহিতের অবস্থা দেখে মারু কাঁদতে কাঁদতে মুহিতের পাশে দাঁড়িয়ে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“প্লিজ মুহিত থেমে যাও। রূপ এক্টু পরেই চোখ খুলবে। তুমি শুধু শুধু টেনশান করছ। এভাবে কান্না কাটি করলে রূপ আরো কষ্ট পাবে। তোমাকে খুব বকবে।”

এর মাঝেই রূপ পিটপিট করে চোখ খুলতে আরম্ভ করল। হাতের আঙ্গুল, পায়ের আঙ্গুল নাড়াতে লাগল। আস্তে আস্তে মুভ অন করছে রূপ। মারু খুশিতে ওভার এক্সাইটেড হয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,

—-“মুহিত দেখো রূপ হাত, পা নাড়ছে। চোখ ও খুলছে। হয়তো সেন্স ফিরছে।”

মুহিত চোখে এক গাঁধা জল নিয়ে রূপের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে রূপের গালে কয়েকটা চাপড় মেরে বলল,,,,,,

—-“এই রূপ চোখ খুলো। আমার চোখের দিকে তাকাও। আমি ওয়েট করছি তোমার খোলা চোখ গুলো দেখার জন্য।”

রূপ এবার পুরোপুরি চোখ খুলে সামনের দিকে তাকালো। মুহিতের চোখ থেকে টুপটাপ জল গড়িয়ে পড়ছে। মুহিতের চোখ, মুখের অবস্থা দেখে রূপের চোখে ও জল চলে এলো। রূপ অশ্রুসিক্ত চোখে মুহিতের দিতে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,,,,,

—–“মুহিত……আর কেঁদো না প্লিজ। আমি ভালো আছি। সুস্থ আছি। দেখো আমি প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিচ্ছি। চোখ মেলে ও তোমার দিকে তাকিয়েছি।”

মুহিত ঠোঁটে মলিন হাসি ঝুলিয়ে রূপের চোখে, মুখে অজস্র চুমোতে ভরিয়ে দিচ্ছে। উপস্থিত সবাই মাথা নিঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রূপ সবার দিকে তাকিয়ে লজ্জামাখা হাসি দিয়ে মুহিতের কানে ফিসফিস করে বলল,,,,,,,

—–“ইসসসস সবাই সামনে আছে তো। দেখছে ওরা। তোমার না মিনিমাম আক্কেল জ্ঞান ও নেই।”

—-“দেখলে দেখুক আমার কি? আর শুনো… তোমার ক্ষেএে আমার কোনো কিছুরই সীমাবদ্ধতা নেই। তখন আমি নিজেকে ছোট বাচ্চা মনে করি।”

মৃন্ময় গলাটা ঝাঁকিয়ে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“চলুন আমরা সবাই বাইরে যাই। এখন ওদের এক্টু একা ছেড়ে দেই।”

সবাই এক এক করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মারু আর মৃন্ময় সবার পরে রুম থেকে বের হলো। এক জট হয়ে সবাই হসপিটালের করিডরে দাঁড়িয়ে আছে। আব্বাস আহমেদের চোখে, মুখে অনুশোচনার ছাপ দেখা যাচ্ছে। উনি অপরাধী দৃষ্টিতে মারু আর মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মাইমুনা আহমেদ, মিনা আর মেঘা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মারু আর মৃন্ময় এক পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। ওরা কিছুতেই আব্বাস আহমেদের দিকে তাকাচ্ছে না। মারু চাইছে আববাস আহমেদ শাস্তি পাক। অনুশোচনায় দ্বগ্ধ হোক। অনুশোচনার শাস্তি হলো বড় শাস্তি। এই শাস্তির চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো শাস্তি পৃথিবীতে দুটো নেই।

মুহিত এখনো রূপের চোখে, মুখে চুমো খাচ্ছে। রূপ কেবল হেসেই যাচ্ছে। কেমন যেনো কাতুকুতু লাগছে রূপের। রূপের হাসি দেখে মুহিত এবার ইচ্ছে করে চুমো খাওয়ার পরিমানটা আরো বাড়িয়ে দিলো। রূপ হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে মুখটা ফুলিয়ে বলল,,,,,,,

—-“মুহিত এবার ছাড়ো। ক্লান্ত লাগছে আমার। হাঁফিয়ে উঠছি আমি।”

মুহিত এবার চট জলদি চুমো থামিয়ে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

—-“এখন কেমন লাগছে রূপ? শরীর ঠিক আছে তো?”

রূপ মৃদ্যু হেসে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“ভালো লাগছে মুহিত। শরীর ও ঠিক আছে। হাতের স্যালাইনটা ছুটিয়ে দাও না। অসহ্য লাগছে।”

মুহিত স্যালাইনের দিকে তাকিয়ে দেখল স্যালাইন প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পরেই শেষ হয়ে যাবে। মুহিত এবার শান্ত কন্ঠে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“আর এক্টু ওয়েট করো রূপ। পাঁচ মিনিট পরেই স্যালাইনটা শেষ হয়ে আসবে।”

—-“আরো পাঁচ মিনিট ওয়েট করতে হবে?”

—-“হুম। পাঁচ মিনিট এমনি এমনিই কেটে যাবে।”

রূপ মুখটা কালো করে চোখ দুটো বুজে ফেলল। মুহিত এক্টু ঝুঁকে রূপের দু চোখে চুমো খাচ্ছে। রূপ চোখ জোড়া খুলে মুহিতের ঠোঁটে হাত বুলিয়ে মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,

—-“ইসসসস কেঁদে কেটে চোখ, মুখের কি অবস্থা করেছে। মুখের দিকে তাকানোই যাচ্ছে না। এই তুমি কি ছোট বাচ্চা? এক্টু কিছু হলেই কাঁদতে হবে?”

—-“তুমি ও কিন্তু কম যাও না রূপ। আমার কিছু হলে তুমি ও কিন্তু সেইম ভাবেই কাঁদো। আসলে, ভালোবাসার মানুষদের কিছু হলে কেউই নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারে না রূপ। কাঁদতে তাদের হয় ই। তখন হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। আমার ক্ষেএে ও এমনটাই হয়েছে।”

মুহিত কিছুটা থেমে আবারো রূপের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“রূপ….আব্বাস আঙ্কেল মৃন্ময় ভাইয়াকে মেনে নিয়েছে।”

রূপ চরম অবাক হয়ে বলল,,,,,,,

—-“হোয়াট সত্যি বলছ তুমি?”

—-“হুম রূপ পাক্কা সত্যি।”

—-“কিভাবে মানল? আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না। আচ্ছা আমরা ঐখান থেকে পালিয়ে এলাম কি করে? আমাকেই বা হসপিটালে কে নিয়ে এলো?”

—-“আব্বাস আঙ্কেল নিয়ে এসেছে। উনি উনার ভুল বুঝতে পেরেছে। অনিকের কাছে উনার কিছু দুর্বলতা আছে। তাই উনি বাধ্য হয়েছিলো অনিকের সাথে ভাবীর বিয়ে দিতে।”

—-“কিসের দুর্বলতা?”

—-“তা তো জানা হয় নি। আসলে সময় হয়ে উঠে নি। উনি বেশ অনুতপ্ত। ফেইস দেখলেই বুঝা যায়।”

—–“উনার দুর্বলতা গুলো আমাদের জানতে হবে। এরপর না হয় উনাকে বিশ্বাস করব।”

—-“প্রথমেই আমাদের ভাবী আর মৃন্ময় ভাইয়ার বিয়েটা দিতে হবে। এরপর বাকী কাজ।”

এর মাঝেই স্যালাইন শেষ হয়ে এলো। নার্স নির্দিষ্ট টাইমে এসে স্যালাইনের লাইন অফ করে রূপকে চেইক আপ করে চলে গেলো। মুহিত রূপকে নিয়ে ডক্টরের কেবিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় মেডিসিন প্রেসক্রাইভ করে হসপিটাল থেকে রিলিজ নিলো।

মুহিত রূপকে আধকোলে করে হসপিটাল থেকে বের হচ্ছে। ওদের পিছু পিছু মারু মৃন্ময়, মারুর পরিবারের সবাই আসছে। হসপিটালের পার্কিং এরিয়ায় পা রাখার সাথে সাথেই আব্বাস আহমেদ দ্রুত পায়ে হেঁটে মুহিত, রূপ, মৃন্ময় আর মারুর মুখোমুখি দাঁড়ালো। উনি মাথাটা নিচু করে মৃন্ময়ের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,,,

—–“বাবা…. আমি না জেনে বুঝেই তোমাদের আলাদা করার চেষ্টা করেছি। আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিয়েছি। নিজের অজান্তে তোমাকে ও কষ্ট দিয়েছি। তোমরা দুজন দুজনকে এতো গভীরভাবে ভালোবাসো আমার সত্যিই জানা ছিলো না। আর জানলে ও আমার হাত, পা বাঁধা ছিলো। বাধ্য ছিলাম আমি। এক মেয়ের জীবন সাজাতে গিয়ে আরেক মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছিলাম। নিজেদের বাঁচাতে গিয়ে নিজের সন্তানকেই আগুনে ঠেলে দিচ্ছিলাম। ভাগ্যিস তোমরা সঠিক সময়ে আমার চোখ খুলে দিলে। নয়তো এই অপরাধের বোঝা মাথায় নিয়ে আমায় ধুকে ধুকে মরতে হতো।”

মৃন্ময় কিছু বলার আগেই মারু রাগে গজগজ করে আব্বাস আহমদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“তুমি নাটক করছ তাই না আব্বু? নাটক করে আমাদের হাতে আনার চেষ্টা করছ? শুনো….. তোমার নাটকে আমরা ভুলব না। আমি মৃন্ময়ের সাথে এই মুহূর্তে ঢাকা ব্যাক করব। তোমার বাড়িতে আর কখনো ফিরব না। ভুলে যাবো আমার এক্টা ফ্যামিলি আছে। তোমরা প্লিজ আমাদের সামনে থেকে সরে যাও। তোমাদের কাউকে আমি সহ্য করতে পারছি না। ঘৃনা হচ্ছে তোমাদের উপর। তোমরা আমার ফ্যামিলি নামে ও কলঙ্ক।”

মারু কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,

—-“রূপের শরীরটা ও ভালো না। ওর এখন রেস্ট দরকার। যা ক্ষতি করার তা তো করেই দিয়েছ। এখন আর সাফাই দিতে হবে না। এখন না, তোমার আজাইরা প্যাচাল শোনার টাইম নাই আমাদের।”

রূপ মুহিতের কোল থেকেই মারুকে উদ্দেশ্য করে রাগী স্বরে বলল,,,,,,,,

—–“মারু প্লিজ স্টপ। এটা কোন ধরনের অসভ্যতা? বাবার সাথে কেউ এমন ধমকিয়ে কথা বলে? বাবারা যতোই অন্যায় করুক না কেনো, বাবারা বাবাই হয়। ওদের সাথে সম্মান দেখিয়ে কথা বলতে হয়। তোর তো বাবা আছে। তাই গুরুত্বটা বুঝছিস না। আমার বাবা নেই বলেই বাবার গুরুত্বটা বুঝি।”

রূপ কিছুটা থেমে আব্বাস আহমেদকে উদ্দেশ্য করে নরম স্বরে বলল,,,,,,

—-“আঙ্কেল আপনি বলুন কি বলতে চাইছেন। আমরা সবাই শুনব। এখানে উপস্থিত সবাই আপনাকে বিশ্বাস করি। আপনি আমাদের বাবার মতোই।”

আব্বাস আহমেদ চোখের জল ছেড়ে রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,,

—-“স্যরি মা। আমার জন্য আজ তোমার এই অবস্থা। আমার পৈশাচিক রূপের জন্যই তুমি এতোটা কষ্ট পাচ্ছ। আমাকে মাফ করে দাও মা। আমি খুব অনুতপ্ত, লজ্জিত। প্রথম থেকেই তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি আমি। আমার স্বভাবটাই এরকম। কারো সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারি না। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে চেষ্টা করতে হবে। নিজেকে এক্টু হলে ও সংশোধন করতে হবে।”

রূপ মলিন হেসে আব্বাস আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আঙ্কেল আমি আপনাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। প্লিজ আপনি নিজেকে আর ছোট মনে করবেন না। নরমালি আমার সাথে কথা বলুন। জড়তা রাখবেন না। আমি চাই আপনি নিজেকে সংশোধন করুন। নিজের ভুল গুলো ধরার চেষ্টা করুন। ভুল গুলো খুঁজেই নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করুন।”

আব্বাস আহমেদ রূপের দিকে মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় মলিন হেসে আব্বাস আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

—-“আঙ্কেল আমরা সবাই আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এমনকি মারু ও। মারু আর আমার বিয়েটা হয়ে গেলেই আমরা ঢাকায় ব্যাক করব। আর হয়তো আপনাদের সাথে দেখা হবে না। আমি কথা দিচ্ছি মারুকে আমি সবসময় হাসি খুশি রাখব। কোনো অযত্নে রাখব না। সবসময় বেস্ট দেওয়ার চেষ্টা করব। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।”

মাইমুনা আহমেদ মারুকে বুকের সাথে মিশিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। মেঘা ও মারুকে ধরে ফ্যাস ফ্যাস করে কেঁদে যাচ্ছে। মাঝখান থেকে মিনা চোখে জল নিয়ে মারুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,,

—-“মারু…..আমার জন্যই আব্বু বাধ্য হয়েছে তোকে অনিকের সাথে বিয়ে দিতে।”

মারু ভ্রু যুগল কুঁচকে মিনার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“তোর জন্য মানে?”

মিনা মাথাটা নিচু করে চোখের জল ছেড়ে বলল,,,,,

—-“তোর জিজু রাসেল গত দুই বছর ধরে নেশা, জুয়ায় আসক্ত হয়ে গেছে। কাজ কর্ম বাদ দিয়ে সারা দিন রাত নেশা আর জুয়ার আখড়ায় পড়ে থাকত। আমাদের থাকার বাড়িটা পর্যন্ত বেঁচে দিয়েছে। এরপর হাত দিয়েছে আমার আব্বুর সম্পদে। একদিন গোপনে এসে রাসেল আব্বুর সিন্দুক থেকে বাড়ির দলিল চুরি করে নিয়ে অনিকের আব্বুর কাছে আমাদের বাড়ি বিক্রি করে দেয়। আব্বু যখন ব্যাপার টা জানতে পারে তখন পাগল হয়ে অনিকের আব্বুর কাছে ছুটে যায়। তখন অনিকের আব্বু শর্ত জুড়ে দেয় যে, অনিকের সাথে তোর বিয়ে দিতে হবে না হয় বাড়ির দলিল ফিরিয়ে দিবে না। প্রথমে আব্বু রাজি হয় নি। কিন্তু পরে রাজি না হয়ে পারল না। আমার কথা, টায়রার কথা, পরিবারের সবার কথা চিন্তা করে এক প্রকার বাধ্য হয়ে আব্বু তোর সাথে অনিকের বিয়েটা দিচ্ছিলো। এসবের মাঝে আব্বুর কোনো দোষ নেই। সস্পূর্ণ দোষ আমার আর আমার ভাগ্যের। আমার অহংকার আমাকে আজ পুরোপুরি ধ্বংস করে দিলো। মেঘার জীবনটা ও আমার জন্য নষ্ট হয়ে গেলো। আমার কাছে কখনো ভালোবাসার দাম ছিলা না। ছিলো শুধু প্রতিপত্তি আর টাকার। তাই আজ সব হারিয়ে নিঃস্ব আমি। ভাগ্যিস তোর ভালোবাসার মানুষটা এসে তোকে বাঁচিয়ে নিলো। নয়তো তোর জীবনটা ও মেঘার মতো নষ্ট হয়ে যেতো।”

মিনা এবার হেচকি তুলে কেঁদে মারুর সামনে হাত জোড় করে বলল,,,,,,,

—-“আমাকে মাফ করে দিস বোন। আমি খুব অন্যায় করেছি তোদের সাথে। দোয়া করি তোরা নতুন জীবনে সুখি হ। আমরা তোদের জীবনে আর বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না।”

কথা গুলো বলেই মিনা রূপের দিকে একবার তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে পার্ক করে রাখা গাড়িতে উঠে পড়ল। মারু আর রূপ ছলছল চোখে মিনার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। মাইমুনা আহমেদ মারুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,

—-“আমাকে ও মাফ করে দিস মা। অনিক ছেলেটা যে এতোটা খারাপ হবে আমাদের জানা ছিলো না। ভেবেছিলাম, ছেলেটা পুরো দুনিয়ার সাথে খারাপি করলে ও অন্তত ঘরের বউয়ের সাথে খারাপি করবে না। কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ ভুল ছিলাম। ভাগ্যিস বিয়ের আগে ওর আসল মুখোশটা খুলে গেলো। নয়তো আমাদের একচেটিয়া সুখের জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতো। আমাদের নিয়ে ভাবিস না মারু। আমরা ঠিক কোনো উপায়ে নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিবো। ভালো থাকিস তোরা, সুখে থাকিস।”

মাইমুনা আহমেদ মারুকে বুক থেকে উঠিয়ে মারুর কপালে চুমো খেয়ে সবার দিকে একবার তাকিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে গাড়িতে বসে পড়ল। মেঘা মারুর হাত ধরে বলল,,,,,,

—-“তুই চিন্তা করিস না মারু। আমার শ্বশুড় বাড়ি তো আছেই। আম্মু, আব্বুকে আমি ঐ বাড়িতে নিয়েই রাখব। তুই নিশ্চিন্তে সংসার কর।”

মেঘা আর দাঁড়াল না। মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে গাড়িতে উঠে পড়ল। আব্বাস আহমেদ একবার সবার দিকে তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে দ্রুত পায়ে হেঁটে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। উনি এখনো অনুতপ্ত। উনার সাথে সাথে বাড়ির বাকিরা ও অনুতপ্ত।

মারু ওর পরিবারের যাওয়ার পথে তাকিয়ে মৃন্ময়ের বুকে মাথা রেখে হেচকি তুলে কেঁদে দিলো। মৃন্ময় মারুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,

—-“প্লিজ মারু স্টপ ক্রায়িং। যা হওয়ার হয়ে গেছে। কেঁদে কেটে আর কোনো লাভ নেই। কান্না থামাও প্লিজ।”

রূপ মুহিতের কোল থেকে নেমে মারুকে ঝাপটে ধরে মলিন হেসে বলল,,,,,,

—-“কাঁদিস না মারু। যা হয়েছে সব ভুলে যা। আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে। এবার চল আমরা রেজিস্ট্রি অফিসে যাই। এই মুহূর্তে বিয়েটা খুব জরুরি।”

মুহিত রূপের সাথে তাল মিলিয়ে বলল,,,,,,

—-“হুম ভাবী। যা হয়েছে ভুলে যান। আগে বিয়েটা হোক। এরপর আমরা ঢাকা পৌঁছে নতুন ফ্ল্যাটে শিফট হয়ে যাবো। আপনি কয়েকটা দিন ফ্ল্যাটেই থাকবেন আমাদের সাথে। দোলা আপুর বিয়ের পর আপনাদের বিয়ের ব্যাপারটা সবাইকে জানানো হবে। পরিস্থিতি ঠিক হলে একদিন আমরা সবাই মিলে আপনাদের নোয়াখালী আসব। টানা এক সপ্তাহ থেকে যাবো। পিকনিক করব এসে।”

মৃন্ময় বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—-“এ্যা, আমার শ্বশুড় মশাই যা কিপটে। এতো বড় ফ্যামিলিকে একদিনের বেশি খাওয়াবে না।”

মারু রূপের বুক থেকে মাথা তুলে রাগে ফুসফুস করে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“এই কি বললে তুমি? আমার আব্বু কিপটে?”

—-“হুম কিপটেই তো। আমি কি মিথ্যে বলছি? জামাইকে কাছে পেয়ে ও জামাই আদর করল না।”

—-“জামাই আদর করবে কি করে ওরা তো নিজেরাই পেইনের মধ্যে আছে। বাড়িটা হয়তো এবার বেঁচেই দিতে হবে। সবই আব্বুর পাপের ফল।”

—-“আমি থাকতে কখনো না। পরিস্থিতি ঠিক হোক। অনিকের বাবার সাথে আমি আর মুহিত কথা বলব। মিনা আপুর বাড়িটা ও মুক্ত করব এমনকি তোমাদের বাড়িটা ও। এসব চিন্তা বাদ দিয়ে এখন আশে পাশের রেজিস্ট্রি অফিসে চলো। বিয়েটা আগে করে নেই।”

মুহিত মৃন্ময়ের কাঁধে হাত রেখে বেশ সিরায়াস হয়ে বলল,,,,,,

—-“মৃম্ময় ভাইয়া ঠিকই বলেছে। পরিস্থিতি ঠিক হলে আমরা অনিকের ফ্যামিলির সাথে কথা বলব। আই থিংক অনিক এখন কোমায় আছে। এতোটা খারাপ অবস্থা না হলে ও কমপক্ষে একমাস হলে ও হসপিটাল ভর্তি থাকবে। তখনই আমরা উনাদের সাথে কথা বলব। এখন চলো সবাই রেজিস্ট্রি অফিসে যাই।”

মারু আর রূপ হাত ধরাধরি করে হেঁটে মেইন রাস্তায় দাঁড়ালো। মৃন্ময় আর মুহিত আশেপাশের লোকজনদের জিগ্যেস করে রেজিস্ট্রি অফিসের ঠিকানা নিয়ে ওদের গাড়িতে উঠে পড়ল। মারু আর রূপ ও গাড়িতে বসে পড়ল। গাড়ি ছুটে চলল রেজিস্ট্রি অফিসের উদ্দেশ্যে।

অন্যদিকে,,,,,,,

অনিকের অবস্থা খুবই সিরিয়াস। হাত, পা ভেঙ্গে চুড়ে যায় যায় অবস্থা। শরীরের বেশিরভাগ জায়গায়ই থেতলে গেছে। ডক্টররা জান প্রান দিয়ে অনিকের চিকিৎসা করছে। এক মাসের আগে উনারা অনিককে কিছুতেই রিলিজ করাতে চাইছে না। অনিকের আম্মু কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে। অনিকের বোন ও খুব কাঁদছে। তবে অনিকের বাবা যথেষ্ট স্ট্রং আছে। উনি রাগে গজগজ করছে আর মনে মনে বলছে,,,,,,

—–“আমি তো ঐ ছেলে দুটোকে দেখেই ছাড়ব। সাথে মারুর পরিবারকে ও। বাড়ি ছাড়া করব ওদের। রাস্তায় নিয়ে নামাবো। দেখি ঐ ছেলে দুটো কি করে। আমার ছেলেটা সুস্থ হয়ে ফিরে নিক। তারপর খেলা দেখাব।”

উনি কথা গুলো বলছে আর অনিকের কেবিনের সামনে পাইচারী করছে।

প্রায় আধ ঘন্টা পর,,,,,,

মৃন্ময়, মারু, মুহিত, রূপ রেজিস্ট্রি অফিসে বসে আছে। এক্টা মোটা মলাটের খাতায় মারু আর মৃন্ময় সাইন করে দিলো। মুহিত কাজী এনে একেবারে তিন কবুল পড়িয়ে বিয়েটা সম্পূর্ণ করল। মারু আর মৃন্ময় খুব খুশি। সাথে মুহিত আর রূপ ও। আজ থেকে মারু আর মৃন্ময় হাজবেন্ড এন্ড ওয়াইফ। মারু বাঁকা হেসে মৃন্ময়ের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,

—-“বিয়ে তো হয়ে গেলো জনাব। এবার কি ফুলসজ্জাটা ও হবে?”

মৃন্ময় শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,,,,,,

—-“তুমি চাইলে এখনই হবে।”

—-“ধ্যাত এখন না।”

মারু কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,,,,,

—-“আজ রাতে!”

—-“এত্তো ফার্স্ট?”

—-“হুম এত্তো ফার্স্ট ই। রূপকে টপকাতে হবে না।”

মৃন্ময় হু হা করে হেসে দিলো। সাথে মারু ও অট্ট হাসল। ওদের দুজনের হাসি দেখে রূপ মাথাটা নিচু করে মুহিতের হাতে চিমটি কেটে বলল,,,,,,,

—-“মুহিত….. আমাদের ফুলসজ্জাটা কবে হবে?

মুহিত বাঁকা হেসে রূপের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,

—-“তোমার হিংসে হচ্ছে বুঝি? হিংসে হলে বলো, আজই একই দিনে আমরা ফুলসজ্জা করব।”

রূপ খানিক লজ্জা পেয়ে বলল,,,,,,

—-“ধ্যাত।”

মুহিত মৃদ্যু হেসে রূপের দিকে তাকালো। ব্যাস, বিয়ে পর্ব চুকিয়ে ওরা সবাই আশেপাশে ভালো এক্টা রেস্টুরেন্টে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সবার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়ে আছে। খেয়ে দেয়ে একেবারে ঢাকায় ব্যাক করবে। গাড়িতে উঠে কিছু দূর যাওয়ার পরই মুহিতের চোখে এক্টা রেস্টুরেন্ট পড়ল। সবাই এবার গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করল।

মুহিত সবার পছন্দের মাটন বিরিয়ানী অর্ডার করেছে। সবাই পেট ভরে খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। মুহিত ড্রাইভ করছে। মুহিতের পাশের সিটে রূপ বসেছে। ব্যাক সিটে মারু আর মৃন্ময় বসেছে। মারু উপর উপর হাসি খুশি থাকলে ও ভিতর ভিতর খুব কষ্ট পাচ্ছে। ফ্যামিলির কথা চিন্তা করে ওর মনটা বিষন্ন হয়ে উঠছে। মৃন্ময় মারুকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে মারুর চুলের স্মেল নিচ্ছে।

মুহিত রূপকে এক হাতে ধরে আরেক হাতে ড্রাইভিং করছে। রূপের মাথাটা ঝিম মেরে আসছে। এক্টু এক্টু ব্যাথা করছে। সেলাইয়ের জায়গা গুলো টনটন করছে। মুহিত ব্যাপারটা বুঝে রূপকে বুকের সাথে চেঁপে ধরে রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

প্রায় তিন ঘন্টা পর মুহিতের গাড়ি এসে ঢাকায় পৌঁছে গেলো। মুহিত গাড়ি নিয়ে ওর ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে ছুটল। মারুকে ফ্ল্যাটে রেখে ওরা ঐ বাড়িতে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপএ নিয়ে নতুন ফ্ল্যাটে শিফট হয়ে যাবে।

#চলবে,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,,,,

(জানি খুব পঁচা হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে লিখতে গিয়ে অতোটা গুছিয়ে লিখতে পারি না। এর জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here