এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ১২

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
১২.
সাফা এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে তার হাত পা কাপঁছে। নিভ্র সাফাকে দেখে এবার চরম হতবাগ। তার মনে হচ্ছে তার সাথে অদ্ভুত কিছু একটা হচ্ছে কিন্তু এই অদ্ভুত কিছুটা কি??নিভ্র মোবাইল পকেটে ডুকিয়ে নেয়।সাফার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় সে সিঁড়ি বেয়ে নামছে।তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এটা সাফা।সাফা প্রায় দরজার কাছে চলে এসেছে।আর কিছু পা গেলেই মেইন দরজা। এখন সে ভাবছে হেঁটে হেঁটে পালাবে, না কি দৌড়ে পালাবে??নিভ্র সিঁড়ি দিয়ে নামতেই তার বাবা দাড়িয়ে বলে….
—নিভ্র তোমার আঙ্কেল উনি।
.
নিভ্র তাকালো।তাকিয়ে বুঝতে পারছে না এখন সে সাফার বাবাকেও দেখছে।আজিব।কি হচ্ছে তার সাথে??সাফার বাবা এগিয়ে এলো।নিভ্র সালাম দিল।নিভ্র সবাইকে দেখছে।সাখাওয়াতের একটু পাশ ঘেঁষে নিভ্র বলে…..
—আব্বু আমি এখানে একজন লোককে দেখতে পাচ্ছি যাকে মাত্র সালাম দিলাম তুমিও কি উনাকে দেখতে পাচ্ছ??

ছেলের এমন কথায় সাখাওয়াত হতভম্ভ হয়ে তাকায় তার দিকে।অদ্ভুত ভঙিতে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে।নিভ্র কালো ট্রাউজারের উপর সাদা টিশার্ট পরেছে।তার মনে হচ্ছে তার ছেলেতো সুস্থ আছে।এমন কি সে উল্টা জামা কাপড়ও পরে নি।তবে এমন গাঁজা খোড়ি টাইপের কথাবার্তা বলার মানে কি। সাখাওয়াত নিভ্রের আর একটু পাশ ঘেঁষে ফিসফিসিয়ে বলে….
—কি সব বলছ নিভ্র??অবশ্যই আমি দেখছি।এবং সবাই দেখছে।ও আমার বন্ধু সারিক।তুমি আগে কখনো দেখনি এর মানে এই না যে তুমি বাচ্চাদের মত” এখন আমি যা দেখি তুমি তা দেখো”। এমন একটা খেলা খেলবে।তুমি কি অসুস্থ??
–না আব্বু তেমন কিছু না।
.
নিভ্র সাফার দিকে তাকালো।সে বুঝতে পাড়ছে তার বাবার এই বন্ধুই সাফার বাবা।নিভ্র চোখ ছোট ছোট করে সাফার দিকে তাকালো।সাফার তো ভয়ে বুকের ভিতর ড্রাম পিটাচ্ছে মনে হচ্ছে। চেহারাটা কাঁদো কাঁদো হয়ে আছে।নিভ্র এবার অবাক হলো।সাফা এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো।নিভ্র তার বাবার দিকে ফিড়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাফা দৌড়ে এসে বলে…….
—আরে নিভ্রনীল না?? আপনি যানেন আমি আপনার কত বড় ফ্যান??ওও যানবেন কিভাবে আমার সাথে তো আপনার তেমন দেখাই হয় নি।তাই আমিই বলছি হ্যাই আমি সাফা।বাবার মেয়ে।
.
কথাগুলো দ্রুত গতিতে বলে ফেলে সাফা।নিভ্র হতভিম্ভ নয়নে তাকায়।মনে মনে ভাবে…
—কি বলে এই মেয়ে??কালকেও তো দেখা হয়েছে বলে কিনা আমার ফ্যান??এই মেয়ে আর যাই হোক আমার ফ্যান লিস্টে নাই।কি হয়েছে ওর অসুস্থ নাকি??বাবার মেয়ে এটা আবার কেমন কথা??(নিভ্র ভ্রুকুঁচকে তাকালো সাফার দিকে।ভয়ে সাফা কি সব বলছে সে নিজেও জানে না)
.
রাফা এগিয়ে আসে।এসে বলে….
—মিষ্টির দোকান তুমিও ভাইয়ার ফ্যান??আর সব মেয়েই বাবার মেয়ে হয় বুঝলে(হেসেঁ বলে)
—হুম তো।অনেক অনেক বড় ফ্যান।একদম ডুবা ডুবা টাইপের ফ্যান।আর বাবার মেয়ে কথাটা এক্সাইটেড হয়ে বলে দিয়েছি(মাথায় হাত দিয়ে বলে সাফা)
—মেয়েরা তো ভাইয়ার ফ্যান হবে এটা স্বাভাবিক। তুমিও সবার মত ভালো কথা।চাইলে সেল্ফি নিতে পারো যদি ভাইয়া তুলতে দেয় আর কি??
—আরে না লাগবে না।
.
সাফা আনমনেই কথাটা বলে।সবাই তার দিকে একবার চকিতেই তাকায়।সাফা জিব কামড়ে বলে….
—আসলে পরে তুলবো।উনি তো ভয়ঙ্কর রাগি যদি থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় তাই আর কি বলছিনাম।
.
সবাই সাফার এমন কথা শুনে হেঁসে দেয়।অভ্র তাকিয়ে আছে নিভ্রের দিকে। নিভ্র চোখের পাতা ফেলছেনা।এক দৃষ্টিতে তাকয়ি আছে সাফার দিকে। অভ্র অবাক চোখে দেখছে।সে আগে কখনো নিভ্রকে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেনি।অভ্রর সন্দেহ হচ্ছে। কিন্তু সেই সন্দেহকে তেমন পাত্তা না দিয়ে।সোফায় বসে।সাথে নিভ্রকেও টেনে বসিয়ে দেয়।সাফা দাতঁ কটমট কটমট করছে।সাফার বাবা সাফাকে পাশে বসতে বলে।কিন্তু সাফা বসলো না।কথায় কথায় যদি এই দুই ভাই সব বলে দেয় তখন তার কি হবে।সাফা রাফাকে বলে………..
—আপু আমাকে রুম দেখিয়ে দিবেন না??
—কেনো নয়।চলো…

সাফা রাফার সাথে হেঁটে হেঁটে সামনে এগিয়ে যায়।নিভ্র ঘুড়ে তাকায়।সাফাও তাকায়।চোখে চোখ পরে।সাফা চোখ সরিয়ে সামনে রাখে।রাফা প্রশ্ন করে……
—তা তুমি এবার কিসে পড়??যদিও আমি জানি কোন ভার্সিটিতে পড় কিন্তু কিসে পড় তা জানি না।
—তা হলে বুঝলেন কি ভাবে আমি আপনার ছোট??
—আরে তোমাকে দেখে বুঝা যায় পিচ্চি একটা মিষ্টির দোকান।(গাল টেনে বলে রাফা)

সাফা মনে মনে একটু অবাক হয়।তবে গাল টানলে তার ভালো লাগে।তাই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে….
—ফার্স্ট ইয়ারে। আর আপনি??
—তুমি তো আমার ভাবনার চাইতেও ছোট।আমি এবার মাস্টার্স করছি।এই তো রুমে চলে এসেছ।এটা তোমার রুম।রহমত চাচা ব্যাগটা রেখে দেন।ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো।
—আচ্ছা।
.
সাফা বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পরে।বুকে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়।তারপর বিড়বিড় করে বলে…….
—এই বাড়িতে থাকাই ঝুঁকিপূর্ণ বুঝলি সাফা??পালাতে হবে।কিন্তু পালিয়ে যাবো কই??হল ঠিক না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে।তবে যদি দুই ভাই মুখ খুলে তখন আমার কি হবে।
—তখন কি হবে তা না হয় পরে দেখা যাবে। আগে নিচে চলো।তখন না হয় আমি পালাতে সাহায্য করবো।
.
নিভ্রর কন্ঠ শুনে সাফা হুমড়ি খেয়ে উঠে বসে।উড়নাটা গলা থেকে সামনে টেনে দেয়।দুই তিনটা ঢোগ গিলে চোখ বড় বড় করে তাকায়।ভয়ে গলা থেকে কথাই বেড় হচ্ছে না।নিঃশ্বাস দ্রুত চলছে।নিভ্র দু পা এগিয়ে সাফার সামনে দাড়িয়ে বলে……..
—তা আমি কি এখনই সবাইকে বলে দিবো যে তুমিই আমার মাথা ফাটিয়েছ নাকি পরে বলবো বলে উঠিয়ে রাখবো??বলো।
—দেখেন আপনিও কিন্তু আমাকে মেরেছেন।আমি কি এমনে এমনে মেরেছি নাকি??আর মারলেও স্যরি বাবা এগুলো কিছু জানে না।যানলে অনেক বকবে।(গাল ফুলিয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে মাথা নিচুকরে বলে সাফা)
—ওকে মাফ করে দিলাম।বাসার কাউকেই বলবো না।এত টেনশন করতে হবে না।তুমি নিজের বাসা মনে করেই থাকতে পারো।এ বাসার সবাই ভালো।তোমার ভালো লাগবে।এখন রিলেক্স হয়ে নিচে চলো সবাই অপেক্ষা করছে।(নিভ্র সহজ গালায় বলে)

সাফা খুশিতে লাফিয়ে উঠে।খুশি মাখা চকচকে চোখে তাকায় নিভ্রর দিকে।সাফার কি যেনো হলো হঠাৎই একটা অদ্ভুত কান্ড করে বসে সে।হুট করেই সাফা দাড়িয়ে পরে।সাফা দু পা উঁচু করে নিভ্রকে জড়িয়ে ধরে।তার দু হাত নিভ্রর গলায়।নিভ্রর মনে হচ্ছে তার সারা শরীরে বিদ্যুৎ দৌড়ে বেড়াচ্ছে।রঞ্জে রঞ্জে শিহরণ খেলছে।দম যেনো খিঁচে গেছে।শ্বাস রুদ্ধ হয়ে গেছে।বুকের ভেতর সেই পিনপিনে ধাকধাক শব্দটা হচ্ছে না।চোখগুলো কটর থেকে বেড়িয়ে আসছে মনে হচ্ছে। নিভ্রর সারা শরীর জুড়ে কাঁপুনি দিচ্ছে। সাফা হঠাৎ করেই আবার ছেড়ে লজ্জিত ভঙিতে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে শীতল কন্ঠে বলে…….
—স্যরি এক্সাইটেড হয়ে এমনটা করে ফেলেছি…
.
বলেই সাফা একবার নিভ্রর দিকে লজ্জা জড়িত চোখে তাকায়।নিভ্র সেখানেই থমকায়।সাফা এক পাশ হয়ে বেড়িয়ে আসে।নিচের ঠোঁটে দাঁত চেপে উপরের ঠোঁটের সাথে দুই ঠোঁট লাগিয়ে হাসে।এই হাসিতে অন্য রকম স্নিগ্ধতা আছে।সাফা নিজের হাত কচলাতে শুরু করে।তার বুক ধাকধাক করে অদ্ভুত শব্দ করছে।সেই শব্দে তার সম্পূর্ণ শরীর কাপঁছে। তার মনে এক কিশোরী খেলা করছে।মনে হচ্ছে মনের মাঝে নতুন আবেগ বাসা বাঁধছে।এই আবেগ তাকে জ্বালি পুড়িয়ে ছাই করে দিবে।তবুও এই আগুলের শীখায় সে জ্বলবে।নিভ্রর প্রতি তার এই আবেগ হঠাৎ করে জন্মে গেছে।কত দিন এই নিভ্রর সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু এই অদ্ভুত ভয়ঙ্কর অনুভুতি আগে কখনো হয় নি।সে কি নাম দিবে এই অনুভুতির ভেবে পাচ্ছেনা।সাফা মনে মনে ভাবে গত মাসেই তো আঠারোর কোটা শেষ করে সে ঊনিশে পা দিয়েছে তবে তার মনে কেনো নতুন করে আঠারোর জন্ম হচ্ছে। কেনো সে আঠারোর জোয়াড়ে ভাসছে।সে মনে মনে আওড়াতে লাগে..তার মোটেও এক্সাইটমেন্টে নিভ্রকে জড়িয়ে ধরা উচিত হয়নি।কিন্তু সে যখনই খুব খুশি হয়, চিন্তা মুক্ত হয় তখনই খুশির ঠেলায় সামনের ব্যক্তিকে এভাবে জড়িয়ে ধরে।তার এই জীবনে সে প্রথম কোনো পুুরুষকে এভাবে জড়িয়ে নিয়েছে।তার আঠারোর প্রথম পুুরুষ নিভ্র।যে কি না আজ হুট করেই তার দুষ্টমিষ্ট জীবনে নতুন করে এক ভয়ঙ্কর আবেগ জাগিয়ে দিয়েছে।হাঠৎ কারো সাথে ধাক্ক লাগায় সাফা সামনে তাকায়।রাফা দাড়িয়ে আছে তার পাশেই অভ্র।অভ্র অবাক হয়ে সাফার লজ্জায় লাল হওয়া গাল দেখছে।এই প্রথম সে এমন লজ্জায় রাঙা হতে দেখেছে এই মেয়েকে তাই তার মনে এক ফুলকি আবেগ দোলা খাচ্ছে।অনুভুতিরা যেনো জাপ্টে নিচ্ছে তাকে।রাফা সাফাকে বলে……
—তোমাকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম।চলো সবাই নিচে অপেক্ষা করছে।
—চলেন(মুচকি হাসি দিয়ে সাফা বলে)
.
সাফা আর রাফা হেঁটে যাচ্ছে। অভ্র তাকিয়ে দেখছে।মনে মনে এক বার পিছনে ফিড়ে দেখার অনুরোধ করছে।কিন্তু সাফা তার মনের কথা শুনলো না।সে তো তার নতুন করে জন্ম নেওয়া সুপ্ত অনুভুতি নিয়েই ব্যস্ত।সাফা সিঁড়ির কাছে গিয়েই একবার তার নিজের রুমের দিকে তাকালো।অভ্র সে দিকে খেয়াল না করেই ভেবে নিয়েছে তার দিকে তাকিয়েছে।ঠোঁটজোড়া প্রশারিত হয়ে তার মুখে হাঁসি ফুটে উঠে।সাফা নিজের রুমের দিকে তাকিয়ে নিরাশ হয়।সে ভেবেছে নিভ্র হয়তো বের হবে কিন্তু তা হলো না।চোখ সরাতেই অভ্রর দিকে তাকিয়ে একটা শুঁকনো হাসি হাসে।অভ্রের ভাব খানা এমন যে এতেই হবে তার।অভ্র প্রশান্তি নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো।সাফা মোড় ঘুড়িয়ে হাঁটা দেয়।
.
.
নিভ্র এখনো দাড়িয়ে আছে আগের জায়গায়।নিভ্রের ব্যস্ত জীবনটা যেনো এখানেই আটকা পরে গেছে।বুকটাও যেনো ধুকপুক করতে ভুলে গেছে।এ কেমন অনুভুতিতে নিভ্র সিক্ত হচ্ছে এটা তার নিজেরই অজানা।নিভ্রর গাঁ থেকে যেনো সেই রুমালটার ঘ্রান আসছে।নিভ্রর মনে হচ্ছে না চাইতেও তার জীবন বদলে যাচ্ছে। স্বপ্নের মতোই কিছু জোনাকি ঝাঁক বেধে তার মনকে আলোকিত করতে চাচ্ছে। কিন্তু তার অবুঝ মন তা কিছুতেই মানতে চায় না।কিছুতেই না।
.
.
সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।টেবিলের উপড় বাহারি সব খাবার।সাফা বরাবরি কম খায়।খাওয়া দাওয়াতে তার তেমন একটা আগ্রহ নেই।কিন্তু আজকের খাবার গুলো অন্যরকম লাগছে।সব সময় বুয়ার হাতের রান্না খেতে খেতে বিরক্ত সে। কিন্তু আজ ভালো লাগছে।সাফা খাবার খাবে।কিন্তু তার বিশাল বায়নার কথা শুনে ডাইনিং টেবিলের সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।তাদের চোখে মুখে বিস্ময় ঘুরে বেড়াচ্ছে।সাফা বাচ্চাদের মত মুখ করে গাল ফুলিয়ে তার বাবাকে বলে……..
—বাবা তুমি তো আজ চলে যাবে তাই না??

সারিক মাঝা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়……
—হুম যাবো তো।
—তাহলে আমাকে তোমার হাতে খাইয়ে দিতে হবে তা না হলে আমি যেতে দিবো না।হু…..
—আচ্ছা দিবো।এমনেও তো রাতে তুমি আমার হাতে খাও।আজ না হয় দিনেই খাইয়ে দি।
.
সবাই নিজেদের খাবার খাওয়া ছেড়ে দিয়ে সাফার খাওয়া দেখছে।সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে এখানে হিট সিনেমা চলছে।তবে সে দিকে সাফার বা তার বাবার বিন্দু মাত্রও মনযোগ নেই।তারা তাদের কাজ করছে।সাফা আড়চোখে এবার নিভ্রকে দেখে।সাথে সাথে দুজনের চোখ এক হয়।সাফা চোখ নামিয়ে নেয়।সে মনে মনে অনুতপ্ত। তার লজ্জা লাগছে।মনে মনে ঠিক করে নিভ্রের সামনেই পরবে না আর।নিভ্র থেকে দুরে দুরে থাকবে।সাফা অনেক্ষন থেকে ইফতেখারকে খুঁজছে এবার মুখ খুলে বলে…..
—আন্টিকে দেখছি না যে??
মোহনা এগিয়ে এসে বলে……
—তুমি কি আমাকে খুজঁছ মা??
—না আন্টি ওই সুন্দরী আন্টি আছে না উনাকে।
.
সাফার কথায় সবাই চুপ করে যায়।সবার মুখে কালো মেঘের আনাগোনা চলছে।নিভ্র চোয়াল শক্ত করে।সাফার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।সবাই একবার নিভ্রর দিকে তাকায়।আবার খাবারের দিকে।মোহনা নিরবতা ভেঙে বলে……
—উনি পরে আসবে মা তুমি খাও।
.
সাফা সবার গম্ভীর মুখ দেখে সন্দেহ নিয়ে নিভ্রর দিকে তাকায়।সে নিভ্রকে আর ইফতেখারকে এক সাথে এক বারো দেখে নি।তবে কেনো।এটাই তার মাথায় ডুকছে না।নিভ্রর মা কে এটাও সে এখনো যানে না।
.
.
সাফা তার বাবাকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মাহবুব আর তার পরিবারের মনে হচ্ছে সাফাকে তার বাবা বিদায় দিচ্ছে তাও শ্বশুর বাড়ি পাঠাচ্ছে।সাফা কান্নাকাটি করে একাকার অবস্থা। নিভ্র হতভম্ভ হয়ে দেখছে সব।সে এই প্রথম সাফাকে কাদঁতে দেখছে।সাফার চোখ ভর্তি পানি দেখে তার কেনো যেনো বুকে ব্যথা হচ্ছে অদ্ভুত সে ব্যাথার কষ্ট।কিন্তু তার কাছে সাফার কান্নার দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে কত সুন্দর এই দৃশ্য যেনো পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর দৃশ্য এটা।নীলাভ চোখ ভর্তি পানি।দুপাশের ফুলা গালগুলো লাল লাল হয়ে আছে আর সেই চৌখা নাকটা লাল হয়ে আছে।কি সুন্দর লাগছে সাফাকে।তার বুকে যদি এই ব্যথা না হতো তবে সে সারা দিন সাফাকে নিজের সামনে বসিয়ে কান্না করতে বলতো।এত সুন্দর কান্না হয় নাকি??তার জানা নেই।তবে এই মেয়েকে যে কাঁদলে কান্না পরী লাগে এটা তার জানা ছিলো না।কত মানুষ কেই না সে কাঁদতে দেখেছে কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর অনুভুতির শিকার হতে হয়নি তাকে।তবে কেনো যে তার সাথে এসব হচ্ছে নিভ্রের জানা নেই।সাফাকে এভাবে দেখে কারোরই ভালো লাগছে না।এই কয়েক ঘন্টায় সাফাকে সবাই হাঁসতে দেখেছে তখন সবারই ভালো লেগেছে কিন্তু এখন আর ভালো লাগছে না।সারিক মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু আঁকে।তারপর ব্যাগ হাতে বেড়িয়ে যায়।দরজার বাইরে গিয়ে কয়েক ফোটা চোখের পানি ফেলে।এই প্রথম মেয়েকে ছাড়া তাকে থাকতে হবে ভাবতেই কষ্টে তার বুক ছিড়ে যাচ্ছে। মেয়েরা তো বাবার কলিজা হয়।এদেরকে কখনো একজন বাবা বোঁজা মনে করতে পারে না।কারন মেয়ে বিদায়ের সময়টাই বাবার আসল ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে।তারা যেনো মেয়েকে না নিজের কলিজা ছিড়ে দিয়ে দেয়।সারিকের কষ্টের মাধ্যম ভিন্ন হলেও কষ্ট একুই লাগছে।স্ত্রী মরার পরে মেয়েকে দু হাতে আগলে রেখেছে সে।এভাবে একা রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না।
.
.
ইফতেখার সাফাকে জড়িয়ে সোফায় বসে আছে।নিভ্র সিঁড়ির পাশে দাড়িয়ে সে দৃশ্য দেখছে।ভ্রু গুলো সে কুঁচকে রেখেছে।ইফতেখারকে সে মোটেও পছন্দ করে না।মা হিসেবেই বেশি অপছন্দ তার।সাফাকে এমন আদর দিয়ে জড়িয়ে ধরতে দেখে তার কেনো যেনো বিরক্তি কাজ করছে।ইচ্ছে করছে সাফাকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসতে।কিন্তু সে এমনটা করতে পারছে না বলেই তার বেশি বিরক্তি লাগছে।অভ্র টিভির রুম থেকে সব দেখছে।মনে তার এক হারানোর ভয় জাগছে।অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কেনো??
.
.
#চলবে…………🍁
.
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন…………………. 🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here