এক শহর ভালোবাসা পর্ব ১২

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_১২
#সুরাইয়া_নাজিফা

আমার শ্বাশুড়ী মা আমাকে সকাল থেকে নিজের হাতে সাজাতে ব্যস্ত।কারণ আজকে উনি আমাকে শানের অফিসে পাঠাবে দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে। কিন্তু আমার মোটেও ভালো লাগছে না যেতে। আমি অনেকবার বলেছিলাম যে আমাদের ড্রাইবার রফিক আঙ্কেলকে দিয়ে পাঠাতে বাট ওনার সেই একই কথা,

“তুই যাওয়া আর রফিক যাওয়া কি এক কথা। আমি কিছু শুনতে চাইনা তোকেই যেতে হবে। ”

ব্যাস আরকি। সেই থেকে সাজানো শুরু। কিছুক্ষন পর মা বললো,

“মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।কারো নজর না লাগে। একবার নিজেও দেখেনে। ”

আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম এটলিষ্ট সাজানো তো শেষ। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আয়নার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। এটা কি আমি? আমাকে একটা লাল জামদানি শাড়ী পড়ানো হলো,হাত ভর্তি চুড়ি, চোখে গাড় কাজল, মুখে হালকা মেকাপ, হালকা অর্নামেন্টস তাতেই একদম নতুন বউ লাগছে। নিজের থেকে নিজেই চোখ সরাতে পারছি না। আমি একটু ইতস্তত করে বললাম,

“মা সামান্য অফিসে যাচ্ছি এতটা সাজ কেমন দেখায় না। ”

মা চোখ দেখিয়ে বললো,
“কেমন দেখাবে কেন? নিজের স্বামীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস এতটুকু সাজ তো বাঞ্ছনীয়। কে কি বলবে জেনে কি হবে? তাছাড়া নিজের স্বামীর চোখ যেন শুধু নিজের দিকে থাকে এজন্য হলেও সবসময় সেজে গুজেই থাকতে হয়।আমাকে দেখ বুঝলি দেখে কিছু শিখ। ”

শ্বাশুড়ী মায়ের কথা শুনে যদিও প্রথমে লজ্জা লাগছিলো কিন্তু পরের কথাটা শুনে আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম। আসলে আমার শ্বাশুড়ী মা অনেক সাজতে পছন্দ করে। তাই এতবয়সেও তার অল্প বয়সের কিশোরীর ছাপটা রয়েই গেছে। মাঝে মাঝে আমাকেও সাজাতে চান। কারণ উনার কোনো মেয়ে নেই তাই ছেলের বউদের দিয়ে নিজের মেয়ের শখটা পূরণ করেন। কিন্তু আমার এতো সাজ গোজ ভালো লাগে না বলবো না তবে সবসময় না। আমি মাঝে মাঝে সাজতে না চাইলে উনি বলেই ফেলেন,

“তোদের মতো বয়সে থাকতে আমাদের ঠোঁট থেকে লাল লিপস্টিক যেতোই না আর তোরা সাজতেই চাস না মোটে।তোরা তো আমাদের থেকেও আদিম যুগের মানুষ। ”

উনার কথা গুলো শুনে আমি সবসময় অনেক উপভোগ করি। অনেক মজার মানুষ।আমারও মনে হয় উনার কথাটা ঠিক। আমার মধ্যে কিশোরীর চেয়ে আদিম যুগের মানুষের ছাপটাই বেশী। আমি একটু ফাজলামি করেই বললাম,
“হুম তাই তো বলি মা এতো সাজে কেন? বাবার চোখ যেন সবসময় তোমার উপরেই থাকে এজন্যই তুমি সবসময় এভাবে সেজে থাকো বুঝি। ”

মা আমার কান টেনে বললো,
“ফাজিল মেয়ে মায়ের সাথে মশকরা করা হচ্ছে? আমার মতো শ্বাশুড়ী তুই কোথাও পাবি যে তোকে এত ভাল ভাল টিপস দেবে। ”

আমি মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে বললাম,
“কে বললো তুমি আমার শ্বাশুড়ী তুমি তো আমার বান্ধবী। যার সাথে সবকিছু মন খুলে শেয়ার করা যায়। ”

উনিও আমাকে জড়িয়ে ধরলেন আমার মাথায় একটা চুমু খেলেন। তারপর বললেন,
“আচ্ছা তুই বস আমি লাঞ্চটা প্যাকিং করে দিচ্ছি। ”
“আমি করি তুমি কেন এতো কষ্ট করবে। ”
“একদম বড়দের মতো কথা বলিস না। যখন তোর করার সময় আসবে তখন করিস।”

কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন। এই পরিবারটার সাথে না চাইতেও কেমন একটা অদ্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছি আমি। আসলে মানুষ গুলোই আমাকে এতটা আপন করেছে যে আমি চাইলেও হয়তো তাদের থেকে দূরে যেতে পারবো না। মা খাবারটা লাঞ্চ বক্সে রেডি করে দেওয়ার পর আমি বেড়িয়ে গেলাম খাবার নিয়ে।গাড়ির ভিতর বসতেই আমার নিজের থেকে কেমন জানি অস্বস্তি আর ভয় লাগছিলো। বুকটা কাঁপছিলো। হঠাৎ লাঞ্চ নিয়ে গেলে শানই বা কি ভাববে। উনার যে কথা। এক কাজের অন্য মানে বের করতে সময় লাগে না। দূর কি আবার ভাববে একটা মানুষের জন্য আরেকটা মানুষতো খাবার নিয়ে যেতেই পারে তাতে তো কোনো মানে বের করার কিছু নেই। লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে শান্ত হয়ে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।



শান এই মুহূর্তে বসে আছে এই কম্পানির সবচেয়ে বেষ্ট ডিজাইনার সায়ান মাহমুদ তিমিরের সাথে ওদের নেক্সট অর্ডারের ড্রেসগুলো ডিজাইনিংয়ের উদ্দেশ্যে।তিমির শুধু বেষ্ট ডিজাইনারই নয় শানেরও খুব ভালো বন্ধু। শানদের কোম্পানির সব ডিজাইনিংয়ের কাজ তিমিরই করে। বর্তমানে ওরা দুজনেই অপেক্ষা করছে ঐশীর জন্য। কারণ তিমিরকে শান চিনলেও ঐশী চিনে না। ঐশী যখন শানদের কোম্পানির সাথে জড়িত হয় তখন তিমির দেশে ছিলো না। এজন্য শান ভাবল আজকেই ঐশীর সাথে তিমিরের পরিচয় করিয়ে দেবে।

তখনই ঐশী হন্তদন্ত হয়ে ভিতরে ডুকে,
“স্যরি স্যরি আমি লেইট হয়ে গেছি। আসলে আমি মেটেরিয়াল গুলো দেখছিলাম সব ঠিক আছে কি না।”

শান হেসে বললো,
“ইট’স ওকে।এতো ডিটেলস বলার দরকার নাই। আই নো দ্যাট তুমি কতটা সিনসিয়ার। যাইহোক ওর সাথে পরিচিত হও। ও হলো সায়ান মাহমুদ তিমির আমাদের কোম্পানির বেষ্ট ডিজাইনার আর আমার খুব ভালো বন্ধু আর তিমির এটা হলো ঐশী আমার বিজন্যাস পার্টনার। বর্তমান ডিলটা ওদের কম্পানির সাথে এক সাথেই করছি। ”

এতক্ষন ঐশী একপাশ হয়ে থাকায় তিমির ঐশীর মুখ দেখেনি আর ঐশীও তিমিরকে দেখেনি। যখনই একে অপরের সাথে হাত মিলানোর জন্য দুজন দুজনকে দেখলো তখনই দুজনের মুখ থেকে হাসিটা গায়েব হয়ে সেখানে একরাশ রাগ আর বিরক্তি ফুটে উঠল। ঐশী চিৎকার করেই বললো,

“আরিয়ান এই স্ক্রু ডিলা লোকটা এখানে কি করছে ওর তো পাবনা থাকার কথা। ”

“শান আমারও একই প্রশ্ন এই অত্যন্ত অভদ্র আর ডাকাত মেয়েটা এখানে কি করছে? ”

ঐশী দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“একদম মুখ সামলে কথা বলবেন কে ডাকাত। চেনা নাই জানা নাই অপরিচিত কোনো মানুষকে জ্ঞান দিতে আসলে সে কি আপনার সাথে মধুর সুরে কথা বলবে। ”

“আমি বুঝিনা এটা আপনার সৌভাগ্য না আমার দূর্ভাগ্য যে বারবার আপনার সাথেই দেখা হয়ে যায়। নেহাত সেদিন সুইসা….।”

তিমির পুরো কথা বলবে তার আগে ঐশী দৌঁড়ে গিয়ে তিমিরের মুখটা চেঁপে ধরে বললো,
“আল্লাহর দোহাই লাগে এইবার অফ যান। সেই একটা কথা যখন পারছেন যেভাবে পারছেন বলে দিচ্ছেন। আমি বুঝিনা আপনার সাথে আমার শত্রুতাটা কোথায়। ”

তিমির ঐশীর হাত টান দিয়ে নিজের মুখ থেকে সরিয়ে ওকে সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো। তিমির বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো।কিছুক্ষন পর তিমির বললো,

“দেখেছিস তো শান ডাকাত কি আর এমনি এমনি বলেছি। আরেকটু হলে আমাকে শ্বাস আটকেই মেরে দিতো। ”

ঐশী ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
“বেশ করতাম। আপনার মতো পাগল দুই তিনটা মরলে সমাজের তেমন কোনো ক্ষতি হবেনা।”

তারপর শানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আরিয়ান কান খুলে শুনে রাখো যদি এই লোকটা আমাদের সাথে কাজ করে তাহলে আমি করব না।”

ঐশীর কথা শুনে তিমির বললো,
“যান যান আপনার সাথে কাজ করতে আমি বসে আছি নাকি আমিও আপনার সাথে কাজ করব না। ”

এতক্ষন শান অবাক হয়ে এই দুজনের কর্মকান্ড দেখছিলো দর্শক হয়ে। এরা যে পরিমান ঝগড়া করছে তা দিয়ে শানের কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। শান চিৎকার করেই বললো,
“সাইলেন্ট প্লিজ। এতো চিৎকার করছিস কেন তোরা? বাই এনি চান্স তোরা কি একে অপরকে আগে থেকেই চিনিস?”

ঐশী আর তিমির একে অপরকে কটমট করে তাকিয়ে দুজনেই একসাথে বললো,
“খুব ভালো করে। ”
শান আশ্চর্য হয়ে বললো,
“কিন্তু কিভাবে?”
তিমির বিরক্তির সাথে বললো,
“সে এক লম্বা কাহিনী আর আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল যেটা এখন আমি মনেও করতে চাইছি না ”

কথাটা বলতেই ঐশী এমন ভাবে তাকালো যেন এখনই তিমিরকে ভর্ষ করে দিবে।

শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুজনকেই বললো,
“আচ্ছা তোমরা দুজনেই শান্ত হয়ে বসো। ”

ঐশী বললো,
“নো আরিয়ান আমি ওর সাথে একজাগায় কখনো বসব না। ”

তিমির ব্যঙ্গ্য করেই বললো,
“হুম তাহলে দাঁড়িয়েই থাকো তোমাকে টিচার শাস্তি দিয়েছে তো হোম ওয়ার্ক না করার জন্য । শুধু দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না এক পা তুলে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকো।”

তিমিরের কথার প্রতিউত্তরে ঐশী কিছু বলবে তার আগে শান বললো,
“হোয়াট ইজ দিজ তিমির এন্ড ঐশী?এভাবে বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছো কেন? তোমরা কি এখনো স্কুলে পড়ো।কখন থেকে বলছি আমার কথাটা শুনো বাট তোমরা তো কারো কথা শুনতে প্রস্তুতই নও। তাহলে তোমরা ঝগড়া করো আমিই চলে যাচ্ছি। ”

ঐশী নরম স্বরে বললো,
“স্যরি আরিয়ান বাট তোমার বন্ধুর সাথে আমি কাজ করতে পারব না। অন্য কোনো ডিজাইনার দেখো।”

“ও হ্যালো ম্যাডাম আমার মতো ডিজাইনার পুরো দেশ ঘুরে দেখো পাবে কিনা। নেহাত শান আমার বন্ধু এজন্য এখানে এখনো দাঁড়িয়ে আছি। নাহলে তোমার মতো একটা ইমোশনালফুল মেয়ের সাথে কাজ করার ইচ্ছা আমারও নেই। ”

শান বিরক্ত হয়ে বললো,
“স্টপ তিমির। এভাবে খুঁচিয়ে কথা বলা বন্ধ কর। আর ঐশী তুমি এতো বুঝদার হয়ে কেন অবুঝের মতো কথা বলছো। এই অর্ডারটা কমপ্লিট নাহলে আমাদের দুজনেরই কত লোকশান হবে হ্যাভ ইউ এ্যনি আইডিয়া। আমি জানি না তোমাদের দুজনের মধ্যে কি সমস্যা যে এমন ব্যবহার করছো বাট কাজটা কাজের জায়গায় রাখো। এখানে কেন নিজেদের পার্সোনাল প্রবলেম ঢুকাচ্ছো। তিমির খুবই ভালো একজন ডিজাইনার। আজ পর্যন্ত ওর সাথে যতকাজ করেছি ও কখনো আমায় হতাশ করেনি। একবার তুমিও ওর সাথে কাজ করে দেখো তোমারও ভালো লাগবে। ”

“কিন্তু আরিয়ান। ”

ঐশীকে পুরো কথা না বলতে দিয়ে শান বললো,
“কোনো কিন্তু নয় ঐশী। কাজটা আমরা কালকে থেকে শুরু করব আর তুমিও আমাদের সাথে থাকবে। এটলিষ্ট আমার জন্য কথাটা রাখো। ”

শান এভাবে বলাতে ঐশী আর শানের কথা ফেলতে পারেনি। তাই বললো,
“ওকে আমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাব। এখন আসছি পরে কথা হবে। ”

কথাটা বলেই ঐশী বেরিয়ে গেল। তিমির মনে মনে বললো,
“উফ এখন থেকে এই লাললঙ্কার সাথে কাজ করতে হবে ভেবেই কান্না পায়।ঝগড়ুটে রাণী। ”

কথাটা মনে মনে বললেও শানকে বললো,
“তো ভাই বল তোর খবর কি। আমার অনুপস্থিতিতে বিয়ে শাদীও করে ফেললি ব্যাপারটা কেমন হলো? ”

“কেমন হলো? বিয়ে করতে মন চেয়েছে বিয়ে করেছি তোকে বলেছি তুই আসতে পারিসনি এখন দোষ কি আমার? ”

“হুম তাই বলে ওয়েট করা যেত না। ”

“না যেত না।”

“হুম ভাই বুঝতে পারছি কয়দিনেই বউ পাগলা হয়ে গেছিস দেখছি। তা বিয়েতে তো ভাবীকে দেখা হলো না এখন একটু দেখিয়ে দে যে কোন মেয়ের জন্য এতটা পাগল হলি। ”

“দেখতে হবে না। অন্যের বউকে এতো দেখে কি করবি? ”

“বাবা শুধু দেখবো ভাই নজর দিবো না নির্ভয়ে থাকতে পারিস।তবে যদি অধিক সুন্দর হয় তাহলে ব্যাপারটা অন্য।”

কথাটা বলেই সৃজন হেসে দিলো সাথে শানও।



প্রায় ঘন্টাখানিক পর আমি শানের অফিসে এসে পৌঁছালাম। আমি গাড়ি থেকে নেমে আঙ্কেলকে বললাম অপেক্ষা করতে। উনি চলে গেলেন পার্কিং এরিয়ায়। আমি ভিতরে ঢুকতেই আমার দিকে প্রায় সবাই হা করে তাকিয়ে থাকল। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রিসেপশনের দিকে এগিয়ে গেলাম। ওখানে একটা মিষ্টি মেয়ে আমাকে দেখে বললো,
“কাকে চাই ম্যাম? ”

“আরিয়ান আরেফিন শানকে। আপনি বলুন আমি উনার সাথে দেখা করতে চাই। ”

“বাট ম্যাম স্যার এখন একটু বিজি আছে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। ”

আমার একটু বিরক্ত লাগল। ওনাকে কি বলবো যে আমি শানের ওয়াইফ! না থাক কি দরকার বলার। না কেন বলবো না অধিকারটা যখন আছে তাহলে সেটা কেন প্রয়োগ করবো না। শুধু শুধু এখানে সং সেজে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো ইচ্ছা আমার নাই। এছাড়াও আমার লেইট হয়ে যাচ্ছে এখান থেকে বেরিয়ে আমাকে একটু শপিংয়েও যেতে হবে। তাই আমি রিসিপশনের মেয়েটাকে বললাম,

“আপনি বলুন যে উনার ওয়াইফ ওনার সাথে দেখা করতে চায় তারপর কি বলে দেখুন। ”

আমার কথায় রিসিপশনিস্ট মেয়েটা অনেকটা ভয় পেয়ে গেল। মেয়েটি দ্রুত বললো,
“আপনি সোহা ম্যাম। মানে আরিয়ান স্যারের ওয়াইফ। ”

“জ্বী।”

“দুঃখিত ম্যাম।আমি আপনাকে চিনতে পারিনি যে আপনি স্যারের ওয়াইফ। প্লিজ স্যারকে এই ব্যাপারে কিছু বলবেন না। ”

আমি মুচকি হেসে বললাম,
“ওকে আমি বলবো না এইবার আপনি একটু বলুন যে উনার কেবিনটা কোনদিকে। ”

“এইতো ম্যাম সেভেন ফ্লোর সাতশত দশ নম্বর রুম। ”

আমি মিষ্টি করে বললাম
“ধন্যবাদ। ”

মেয়েটিও মিষ্টি হেসে বললো,
“মাই প্লেজার ম্যাম। ”

তারপর আমি চলে গেলাম। লিফট দিয়ে সেভেন ফ্লোরে রুম নম্বর খুঁজছিলাম। ঠিক তখনই আচমকা একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে গেল।আর মেয়েটার হাতে থাকা জিনিসপত্রগুলো নিচে পড়ে গেল। আমি মেয়েটার জিনিস গুলো তুলে দিতে দিতে বললাম,

“দুঃখিত আমি আপনাকে খেয়াল করিনি। আসলে একটা রুম খুজছিলাম। ”

আমি আমার মতো কথা বলে যাচ্ছিলাম হঠাৎ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা আমার দিকে ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। আমার একটু বিরক্ত লাগছিল। আসলে কেউ যদি আমার দিকে কোনো কারণ ছাড়া এক নজরে তাকিয়ে থাকে আমার অনেক অস্বস্থি হয়।

আমি ইতস্তত করে বললাম,
“Excuse me, i am extremely sorry. I didn’t notice you. ”

হঠাৎ মেয়েটি বলে উঠল,
“তুমি সোহা না। আরিয়ানের ওয়াইফ? ”

মেয়েটার কথা শুনে আমি হা হয়ে গেলাম। মেয়েটিকে তো দেখে মনে হচ্ছে না তাকে আমি চিনি তাহলে সে আমার নাম জানল কেমনে? আমি বললাম,
“হুম আমি সোহা। আপনি আমাকে চিনেন? ”

“হুম চিনি তো। তোমাকে না চিনলে কি করে হবে। ”

“মানে? ”

মেয়েটি মুচকি হেসে বললো,
“আরিয়ানকে যে বিয়ে করেছো আরিয়ানের সম্পর্কে সব জেনেশুনে বিয়ে করেছো তো? ”

আমি তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বললাম,
“কি জানার কথা বলছেন? ”

“মানে আরিয়ানের অতিত।তুমি জানো আরিয়ানের গার্লফ্রেন্ড ছিল। ”

আমি স্বাভাবিকভাবেই বললাম,
“হুম তো? ”

মেয়েটি অবাক হয়ে বললো,
“তো মানে? তুমি যখন জানতেই যে তোমার বরের ভালোবাসা তোমার আগে অন্য কেউ পেয়ে গেছে তারপরেও কেন বিয়ে করলে আরিয়ানকে? ”

আমি মুচকি হেসে বললাম,
“আমি তো কোনো সাধু সন্নাসিকে বিয়ে করিনি যে তার অতিত থাকবে না। একজন মানুষের অতিত থাকতেই পারে। সেটা তো খারাপ কিছু না।তার ভালোবাসা সে যাকে যোগ্য মনে করে তাকে দিতেই পারে। ইট’স নট আ বিগ ডিল। সত্যিকারের জীবন সঙ্গী সে হয় যে আপনার সাথে সাথে আপনার অতিতকেও আপন করে নেবে। আর সেটা আমি নিয়েছি। আপনি যদি তার অতিতকেই ভালো বাসতে না পারেন তাহলে তাকে ভালো বাসবেন কি করে। তার অতিতে যা কিছু থাকুক না কেন তার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎটা শুধু আমি হলেই হবে। আর আমি খুব ভালো করে সেটা জানি যে আরিয়ানের এখন কারো সাথে কোনো সম্পর্ক নেই এবং আমি তাকে অনেক বিশ্বাস করি। আপনি আপনার উত্তর পেয়েছেন? ”

ঐশী ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হাত তালি দিলো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে বললো,
“এখন বুঝতে পারছি শান তোমার জন্য এতো পাগল কেন? এই একই কথা আমি যদি অন্য কোনো মেয়েকে বলতাম তাহলে সে হয়তো সোজা তার হাজবেন্ডের কাছে গিয়ে জবাবদিহি চাইত।অন্য কারো কথা কেন বলছি আমি হয়তো নিজেও এমন করে ফেলতাম ভুলবসত। ফলস্বরূপ সংসারে অশান্তি। এই জিনিসটা কেন হয় জানো একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস থেকে। কিন্তু তুমি এই বিষয়টাকে এতো ইজিলি হ্যান্ডেল করতে পারবে কখনো ভাবিনি। আরিয়ানের প্রতি তোমার বিশ্বাস দেখে আমি মুগ্ধ।আরিয়ান একদম ঠিক একজন মানুষকে বেঁচে নিয়েছে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে।আরিয়ান তোমার সাথে অনেক ভালো থাকবে।তোমার মতো এতো ভালো মেয়ে হয়তো আরিয়ান পুরো পৃথিবী ঘুরলেও পেতো না। আসলেই তেমার কথা ঠিক ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষের উপর পুরা বিশ্বাস রাখা উচিত। আর আমার পরীক্ষায় তুমি পুরা একশতে একশই পেয়েছো। দোয়া করি তোমরা সবসময় এভাবেই একসাথে থাকো। ”

“আচ্ছা এতো কথা বললাম কিন্তু আপনার পরিচয়টাই জানা হলো না আপনার পরিচয়?”

“ওহ স্যরি আমি ঐশী। মেহেরিমা খান ঐশী ।আর আরিয়ানের বিজন্যস পার্টনার। ”

ঐশী নামটা শুনেই আমার খটকা লাগলো নামটা আমি কোথায় জানো দেখেছি। হুম মনে পড়েছে শানের ফোনে? তবে কি এই ঐশীই সেই ঐশী।

আমাকে অন্যমনষ্ক দেখে ঐশী আমার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,
“কি ভাবছো? ”

“হু না কিছুনা। আমাকে তো আপনি চিনেনই তারপরও বলছি, আমি সুরাইয়া নাজিফা সোহা। শানের স্ত্রী আপনার সাথে পরিচিত হয়ে খুব ভালো লাগলো। ”

“আমারও খুব ভালে লেগেছে তোমার সাথে কথা বলে। তুমি এমনিতে বাচ্চা একটা মেয়ে হলে কি হবে তোমার কথা শুনে কোনো ম্যাচিউর মানুষের থেকে কম মনে হয় না। আশা করি আমাদের আবার দেখা হবে। ”

“অবশ্যই ভাগ্য কাকে কখন কোথায় দাঁড় করায় সেটা কে বলতে পারে। আচ্ছা আসি। ”

“হুম।”

ঐশীর সাথে কথা বলে আমি চলে এলাম শানের কেবিনের সামনে।নক করতেই ভিতর থেকে আওয়াজ এলো,
“কাম ইন। ”

আমি ভিতরে ঢুকতেই দেখলাম শানের সাথে আরেকটা ছেলে বসে আছে। আমাকে দেখেই শান উঠে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।
তখনই পাশের ছেলেটা আমার সামনে এসে ফ্যালফ্যাল ভাবে তাকিয়ে বললো,
“ওয়াও সো বিউটিফুল ইয়ার।দেখলে মনে হয় দেখেই যাই। হাই আই আম তিমির ইউ? ”

আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ছেলেটার কথা শুনে। কি বলবো বুঝতেছি না।এটা আবার কে? ছেলেটা হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই শান চিৎকার করে বললো,
“হেই তিমির। ডোন্ট ডেয়ার টু ফ্লার্ট উইথ হার। সি ইজ মাই ওয়াইফ। ”

তিমির অবাক হয়ে বললো,
“সিরিয়াসলি। কি ভাগ্য আমার। দেখেছিস তুই দেখাবিনা বলেছিলি এজন্যই সে একদম আমার সামনে চলে আসছে।আর আমার চোখ ধন্য হয়ে গেছে। ”

শান আমার পাশে এসে তিমিরকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“একবার বারণ করেছি তিমির। ভাবী মায়ের সমান মনে রাখবি। ”

তিমির নাখ মুখ কুচকে বললো,
“দিলি তো আমার এতো সুন্দর মুডটার বারোটা বাজিয়ে।কি হিংসুটে। ”

তিমিরের কথা শুনেই আমি মুখ চেঁপে হেসে দিলাম। শান বললো,
“বেশ হয়েছে। আমার বউ শুধু আমারই। এরজন্য হিংসুটে হতেও ক্ষতি নেই। ”

তিমির মাথায় হাত দিয়ে বললো,
“আল্লাহ কি আমার আমার করছিস বাচ্চাদের মতো। শান ভাই এটা তুই তো আমার কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না।এমন হলে নিজের বউকে লুকিয়ে রাখ। ”

শান মুচকি হেসে বললো,
“হুম রাখব একদম আমার বুকের ভিতর লুকিয়ে রাখব। যেখানে আমি ছাড়া আর কেউ খোঁজ পাবে না। ”

শানের কথা শুনে আমার কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠল। পরক্ষনেই ঐশীর বলা কথাটা মনে পড়ল এখন আবার শানও একই কথা বলছে? যেই ভয়ে শানকে সবসময় এড়িয়ে চলতাম সেটা সত্যি হবে না তো। তাহলে কি শান আমাকে ভালেবাসে?আতকে উঠলাম আমি। না না এটা হতে পারে না।তাহলে খুব খারাপ হবে। ভাবতেই আমার চোখ ছলছল করে উঠল।
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ রিচেক দেওয়া হয়নি। বানান ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here