এক শহর ভালোবাসা পর্ব ৮

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৮
#সুরাইয়া_নাজিফা

“জাস্ট স্টপ ঐশী তোমার সাথে আমার কখনো এমন সম্পর্ক ছিলোই না যে আমি তোমার হয়ে থাকব। কিছু বলছি না বলে যা মুখে আসছে বলে যাচ্ছো। ”

শান ঐশীকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিল। শানের ব্যবহারে ঐশী ভাবলেশহীন ভাবে শানের দিকে তাকিয়ে আছে।

“শান তুমি এটা কিভাবে বলছো? শান তুমিই তো বলেছিলে তুমি সবসময় আমার পাশে থাকবে। সবসময় আমার কেয়ার করতে। তাহলে এখন কেন দূরে সরে যাচ্ছো। ”

ঐশী শানের দিকে এক পা বারাতেই শান ঐশীকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিল।

“লিসেন দূরে থাকো আমার থেকে। এই পৃথিবীতে প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক ছাড়াও আরো একটা সম্পর্ক আছে ঐশী সেটা হলো বন্ধুত্ব।আর বন্ধু হয়ে বন্ধুর পাশে থাকব বলেছি তাতে দোষের কি আছে? ”

ঐশী কান্না করতে করতে বললো,
“কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি শান।খুব ভালোবাসি। ”

শান কঠোর গলায় বললো,
“সেটা তোমার সমস্যা ঐশী। তবে তোমার সাথে আমার বিজন্যাস ডিল আর বন্ধুত্ব ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক নেই। ”

ঐশী অস্ফুট স্বরে বললো শুধু বিজন্যাস ডিল? কথাটা বলতেই ঐশী ছলছল চোখে শানের দিকে তাকালো। ঐশীও ভেবেছিল শান ওকে ভালোবাসে। কারণ শানের ব্যবহারে কখনো এমন মনেই হয়নি যে আমি শুধুই ফ্রেন্ড নাহলে হয়তো আমিই ভুল ভেবেছি?এতো বড় ভুল। ঐশী আর ওখানে দাঁড়াতে পারল না দৌড়ে বেরিয়ে গেল কান্না করতে করতে।

শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে গিয়ে বসল। শান নিজেও বুঝতে পারেনি যে ঐশী ওর এই ভালো ব্যবহারকে ভালেবাসা মনে করবে। ঐশী হলো শানের বিজন্যাস পার্টনার। খুবই মিষ্টি একটা মেয়ে। যেমন রূপবতী তেমন গুণবতী। এজন্য শানের ভালো লাগতো। একটা কাজ একবারের বেশী ওকে কখনো বলা লাগতো না। চট করে বুঝে যেতো। ঐশী আর শান মিলে বেশ কয়েকটা ডিল খুব সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করেছিল। আস্তে আস্তে শানের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় ঐশীর। যদিও শানের আরেকটা মোটিভ ছিল সেটা হলো বিজন্যাস। কারণ ঐশীদের বিজন্যাসের সাথে শানের বিজন্যাস এক হলে সেখানে আরো বেশী প্রফিট হবে। এজন্য ঐশীকে শান তার বিজন্যাস পার্টনার বানিয়ে নেয়। কিন্তু ঐশীর সাথে থাকতে থাকতে শান বুঝতে পারে যে ঐশী ওর ওপর দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। দিনদিন ঐশীর ব্যবহার, পছন্দ, পরিবর্তন হচ্ছিল। তাই শান ঐশীর থেকে দূরত্ব বারাতে থাকে এমনকি কথাও বলে না ঠিক করে। শান ভেবেছিল ঐশী যেহেতু ওকে এখনো এই বিষয়ে কিছু বলেনি তাই আগেই যদি ও ঐশীকে আকারে-ইঙ্গিতে বুঝায় যে ও ঐশীকে পছন্দ করে না তাহলে হয়তো ও নিজেকে সামলে নেবে কারণ ঐশী একজন বুদ্ধিমতী মেয়ে। বাট ঐশীকে এতবার বুঝানোর পরেও ঐশী বুঝেনি। উল্টো যে কথা এতদিন জানায়নি সেটাও জানিয়ে দিল। শান আর ভাবতে পারছে না। শানের কারণে কখনো কেউ কষ্ট পাবে সেটা শান সহ্যে করতে পারেনা। সেখানে ঐশী তো ওর ভালো বন্ধু। কিভাবে সহ্যে করবে ঐশীর কষ্ট। তারপরে আরো একটা বিষয় বেশ ভাবাচ্ছে সেটা হলো ঐশীর সাথে এই ঝামেলাটা নিয়ে ওর বিজন্যাসের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না তো।ঐশী যদি বর্তমানে যে ডিলটা চলছে সেটা ক্যান্সেল করে দেয় তাহলে কত যে লোকশান হবে সেটা শান খুব ভালে বুঝতে পারছে। কিন্তু শুধু অনুমানের ভিত্তিতে কিছু বলা যাবে না দেখা যাক ঐশীর ডিসিশন কি হয়। তারপর নাহয় ভাবা যাবে।



বিকালে শান অনেক তাড়াতাড়ি চলে এসেছে অফিস থেকে। আজকে সকালেই সোহাকে নিয়ে অনেক প্লান করেই এসেছে বাড়ি থেকে।মনটাও ভালো ছিল।কিন্তু সকাল থেকে যা যা হলো তাতে আর ভালো থাকার জো আছে তারপরও যদি সোহার সাথে কিছুটা সময় কাঁটিয়ে ভালো থাকা যায় সেটাই অনেক শানের কাছে।

বাড়ির ভিতরে আসতেই শান দেখতে পেল সোহার বাবা মা বসে আছে। শান গিয়ে সোহার বাবাকে সালাম করল।সোহার বাবা বললো,

“কি ব্যাপার ইয়াংম্যান আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে?”
“এই অফিসে আজকে প্রথমদিন ছিল তো তাই আঙ্কেল।বাট আপনি এই সময় বাসায়? ”
“তুমি যেই কারণে বাসায় আমিও সেই কারণে। ”

শান একটু আশ্চর্য হলো। শান কেন বাসায় এসেছে সেটা উনি জানল কেমনে,

“আরে কি ভাবছ আজকে সোহা এসেছে সকালে তো আর বলে আসোনি তাই দেখা হয়নি। মেয়েকে দেখার জন্য মন কেমন করছিলো তাই চলে এলাম।তাই তুমি যাই বলো না কেন তুমিও যে সেইম কারণে এসেছো সেটাও আমি বুঝতে পারছি। ”

শ্বশুরের কথা শুনে শান একটু হাসল। শান আগে থেকেই জানত যে সোহার বাবা রাগি হলেও অনেক রসিক টাইপের মানুষ।বিশেষ করে শানের সাথে উনার আগে থেকেই অনেক ভালো সম্পর্ক। তাই বলে মেয়ের জামাইকেও ছাড়বে না সেটা বুঝতে পারেনি। শানের খুবই লজ্জা লাগছে শ্বশুরের সামনে এই পরিস্থিতিতে পরতে। সোহার বাবা আবার বলে উঠল,

“আরে ইয়াংম্যান এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমরাও এই বয়সটা পার করে এসেছি তো আমরা জানি।”

সোহার আম্মু চিৎকার করে বললো,
“উফ কি বলছো এসব। সম্পর্কের মাথা খেয়েছো নাকি?মেয়ের জামাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলছো?”
“কি বললাম আমি তো শানকে টিপস দিচ্ছিলাম যে বিয়ের পর কিভাবে সুখে থাকতে হয়। আর শান তুমি যেই পথে চলছো সেটা একদমই রাইট রাস্তা। এভাবেই চলতে থাকো তোমাকে দিয়েই হবে ইয়াংম্যান। ”
সোহার মা টোন কেটেই বললো,
“আহা নিজে যেন কতো সংসারের খেয়াল রাখে সে আবার অন্যজনকে টিপস দিচ্ছে।”
“কি মিথ্যা কথা বলো তোমরা মেয়েরা।সংসারের জন্যই তো এতো কষ্ট করছি। দেখেছো তো ইয়াংম্যান এটাকেই বউ বলে। জীবনে যাই করোনা কেন কোনো নাম হবে না তাই বি কেয়ারফুল। ”

এই নিয়ে সোহার বাবা মায়ের মধ্যে খুনসুটি বেজে গেছে। শানের খুব হাসি পাচ্ছে তাদের কথা শুনে। কিন্তু শ্বশুর শ্বাশুড়ী বিধায় হাসতেও পারছে না।তবে শান আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। এক নজর সোহাকে দেখার জন্য উতলা হয়ে উঠেছে মন। এদিকে শ্বশুর শ্বাশুড়ীর এই মিষ্টি ঝগড়াটাও মিশ করতে মন চাইছে না শানের। তাদেরকে দেখলেই বুঝা যায় যে বিয়ের এতো বছরেও তাদের ভালেবাসা ঠিক আগের মতোই আছে এতটুকুও কমেনি।

শান একবার ভাবছে জিজ্ঞেস করবে সোহা কোথায়? কিন্তু পরমূহূর্তেই লজ্জা লাগছে। যতোই আগে থেকে পরিচিত থাকুক। হুট করে কিভাবে বলবে যে আপনাদের মেয়ে কোথায়?

শান একবার আশেপাশে দেখে নিল। না মহারাণী কোথাও নেই। তাহলে কি রুমে?উফ এই মেয়েটাও সারাদিন রুমে কি করে কে জানে।আয় নিচে এসে সবার সাথে কথা বল তা না। শানকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে সোহার মা বললো,

“আচ্ছা শান তুই অনেকক্ষন হলো এসেছিস এখানে না বসে উপরে গিয়ে রেস্ট নে। সোহাও উপরে আছে। ”

শান তো এতক্ষন এই কথাটারই অপেক্ষা করছিল। শানের শ্বাশুড়ী মায়ের পা ধরে এখন সালাম করতে ইচ্ছা করছে এতো সহজে ওর মনের কথাটা বুঝে যাবে ভাবতে পারেনি।কিন্তু বলা মাত্রই উঠে গেল আবার কি মনে করবে তাই শান বললো,

“না সমস্যা নাই আমি ঠিক আছি। ”

তখনি সোহার বাবা টোন কেঁটে বললো,
“আরে যাও যাও। এত ফর্মালিটির দরকার নাই। সুযোগ যখন পেয়েছো ছাড়াটা ঠিক নয়। ”

শানের হাত আপনাতেই কপালে চলে গেল।শুধু চাপড়ানো বাকি।শান বেশ বুঝতে পারল এখানে বসে থাকলে বাকি যেটুকু প্রেস্টিজ আছে সেটাও পান্ঞ্চার করে ছাড়বে শ্রদ্ধেয় শ্বশুরমশাই। তাই শান এদিক ওদিক না তাকিয়ে দ্রুত উঠে উপরে চলে গেলো।



ঐশী ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়ে একটা ব্রিজের উপর এসে গাড়ি থামালো। চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি বিসর্জন করে যাচ্ছে। কোনো ভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করতেই পারছে না। আজকে কত খুশি ছিল ও। মনে মনে ভেবেই নিয়েছিল যে আজকে দেশে ফিরেই একসাথে দুটো খুশির খবর দিবে একটা হলো ডিল কম্প্লিট হওয়ার খুশি যার জন্য ঐশী দেশের বাহিরে গিয়েছিল আর দ্বিতীয়টা শানকে ওর মনের কথা বলে দিবে। অনেকবার ফোন করেছিল ঐশী যাতে শান এয়ারপোর্ট থেকে ওকে রিসিভড করতে আসে বাট না শানের কোনো খবরই ছিল না। ঐশীর তখনই ভয় লাগতে শুরু করল যে শান ঠিক আছে তো। ও তাড়াতাড়ি করে নিজের বাসায় যায়। আর সেখানে গিয়েই ওর বাবার কাছে জানতে পারে যে শান বিয়ে করে নিয়েছে। এই খবরটা শুনার পর ঐশীর সব খুশি মাটিতে মিশে গেল। পরক্ষনে যখন শুনল যে এই মেয়েটা সে নয় যার সাথে বিয়ের কথা হয়েছিল তখন এক পলকের জন্য কোথাও মনে আশার আলো জেগেছিল যে হয়তো শানকে বললে শান ওকে মেনে নেবে। বাট ও ভুল ছিল। কেউ যদি ভাগ্যেই না থাকে তাকে কখনোই নিজের জোরে ভাগ্যের লিখন বানানো যায় না। কথা গুলো মনে করেই ঐশী হুহু করে আবার কেঁদে উঠল। ঐশী অনেক শক্ত একটা মেয়ে। যেকোনো বিষয় সহজেই মেনে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আজকের বিষয়টা যেন মন কিছুতে মানতেই পারছে না। এখন বুঝতে পারছে,

” কাউকে এতটাও ভালোবাসা ঠিক নয় যে তাকে না পেলে নিজের জীবনটা মূল্যহীন মনে হয়।”

অনেকক্ষণ হয়ে গেছে ঐশী এখানে এসেছে। যখন এসেছিল তখন সূর্যের প্রখর রোদ ছিল। আর এখন তেজটা কমে কিছুটা হেলে গিয়েছে। ফুরফুর করে বাতাস আসছে চারদিক থেকে। মাঝে মাঝে পাশ থেকে দুই একটা গাড়ি চলে যাচ্ছে। সবাই সবার মতো ব্যস্ত। ঐশী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দূর আকাশে সূর্যের দিকে তাকিয়ে। শান এখন ঐশীর কাছে ঠিক ঐ আকাশটার মতো যাকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় অনেক কাছে। আরেকটু গেলেই ছুতে পারবে আকাশটা। কিন্তু যতোই কাছে যাবে ততোই দূরত্বটা বাড়তে থাকবে আর ছোঁয়ার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যাবে।

আজকের এই কষ্টের জন্য ঐশী কখনো শানকে দোষ দিবে না। কারণ ভুলটা ওর ছিল। শান কখনোই এমন কিছু বলেনি বা করেনি যাতে মনে হয় শান ওকে ভালোবাসে। নেহাত শান অনেক ভালো মানুষ তাই সবসময় ওর খেয়াল রেখেছে, ওর একাকিত্বের সঙ্গী হয়েছে,ওকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে, ওর পাশে থেকেছে আর ও এইসবকেই ভালোবাসা ভেবে ভুল করেছে। ঐশী ভাবত ও একটা বুদ্ধিমতী মেয়ে কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ওর মতো স্টুপিড পৃথিবীতে একটাও নেই যে কারো ভালো ব্যাবহারকে, ভালো মানুষিকে ও ভালোবাসা ভেবেছে। যেহেতু ভুলটা ওর তাই ভুলের মাশুলটা তো ওকেই গুনতে হবে। ভেবেই ঐশী ব্রিজের দিকে আরেকটু ঝুকে গেল। নিচে বয়ে চলেছে নদীর ধারা। যেখান থেকে পড়লেই সাথে সাথে নদীর স্রোতটা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে চিরতরে। ঐশী একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সেখানে।

“এই মেয়ে ব্রিজের এতটা কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছো কেন?আরেকটু ঝুঁকলেই তো পড়ে যাবে। জীবনের মায়া নেই নাকি? ”

কথাটা শুনেই ঐশী অবাক হয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো। ওর সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। বয়স হয়তো সাতাশ বা আটাশ হবে। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং। গালে খোঁচাখোঁচা দাড়ি। একটা অফ-হোয়াট শার্ট, একটা ব্লু জিন্স প্যান্ট, পায়ে কেটস। হাতে ঘড়ি। চোখে সানগ্লাস। গলায় একটা লকেটে একটা অক্ষর টাইপের কিছু রয়েছে যেটা বুঝা যাচ্ছে না ভালো করে। দেখে উচ্চবংশীয়ই মনে হয়। বাট ঐশী চিনে বলে মনে হচ্ছে না।ইনফেক্ট কখনো দেখেছে বলেও মনে হয় না। তাহলে ছেলেটা কি কথা গুলো ওকেই বলেছে নাকি অন্যকাউকে। ঐশী একবার নিজের আশেপাশে দেখে নিলো। ছেলেটা তখনই বলে উঠল,

“এই যে ম্যাডাম এদিক ওদিক কি দেখছেন কথাটা আমি আপনাকেই বলেছি। ”

ঐশী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। তারপর হাত দিয়ে নিজের দিকে ইঙ্গিত করে বললো,

“আমাকে বলছিলেন?”
“আপনি ছাড়া তো এখানে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না যে সুইসাইড করতে এসেছে তাহলে কথাটা আপনাকেই বলেছি। ”
ঐশী আশ্চর্যান্বিত কন্ঠে বললো,
“সুইসাইড করতে এসেছি মানে?”

“মানে আপনার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই প্রেমে ছেঁকা খেয়েছেন তাই চলে এসেছেন সুইসাইড করতে। আপনাদের এই জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের আমি মাঝে মাঝে বুঝতেই পারি না। একটু কিছু হলেই সুইসাইডের রাস্তা বেঁচে নেন কেন?নিজের ভিতরে লড়ে বেঁচে থাকার সামর্থ্য নেই নাকি? সবসময় কেন অন্যের জন্য বাঁচতে হবে? নিজের জন্য কি বাঁচা যায় না। একবার নিজের বাবা মায়ের কথাটা তো চিন্তা করতেন। আপনি না থাকলে তাদের উপর কি প্রভাব পড়বে বুঝেন সেসব। বয়ফ্রেন্ড কি বলেছে কি বলে নাই চলে এলো মরার জন্য।আপনি মরলে না যা ক্ষতি হওয়ার আপনারই হবে অন্যের কিছুই হবে না। অদ্ভুত মানুষ সব। ”

এতক্ষনে ঐশী লোকটার কথা শুনে রেগে আগুন হয়েছে। একে তো নিজের মনে নিজেই কাহিনী বানিয়ে নিয়েছে। তার উপর এক্সট্রা জ্ঞান দিচ্ছে। আর ঐশীর পছন্দ নয় যে কেউ ওকে জ্ঞান দিক। ঐশী লোকটার দিকে তেড়ে গিয়ে বললো,

“আপনার কাছে কেউ জ্ঞান নিতে চেয়েছে যে দিচ্ছেন। অদ্ভুত মানুষ তো আপনি কোথায় চিনি না জানি না চলে এসেছেন গায়ে পড়ে কথা বলতে। আমি সুইসাইড করি না জাহান্নামে যাই সেটা আমার ব্যাপার আপনার কি?আপনাকে কে ডেকেছে।পাগল একটা। ”

“পাগল মানে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? আপনি সুইসাইড করতেন আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম সেটা ভালে হতো বলছেন?

ঐশীর মাথাটা এমনিতেও গরম হয়ে আছে আর এই ছেলেটার কথা শুনে আরো বিরক্ত লাগছে। ঐশী বুঝে গেল এই পাগলের সাথে কথা বলা মানে নিজের মাথায় নিজে বারি মারা।তাই ঐশী হনহন করে গাড়িতে গিয়ে বসল আর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলেও গেল। ঐশীর ব্যবহারে ছেলেটা হা করে তাকিয়ে থাকল।কারো ভালো করতে গেলেও যে এতো কথা শুনতে হয় জানা ছিল না তার।কোথায় ও মোটিভেশনাল ভাষণ দিয়ে ওকে সুইসাইডের হাত থেকে বাঁচালো ওকে একটা ধন্যবাদ দিবে তা না করে খারাপ ব্যবহার করলো। ছেলেটা রেগে বললো,

“ধ্যাত আর কারো হেল্পই করবো না জীবনে।দিন দিন মানুষ গুলা সব অকৃতজ্ঞ হয়ে যাচ্ছে।”



শান রুমে এসে দেখল সোহা মুখের উপর একটা বই দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। সম্ভবত বইটা পড়তে পড়তেই ঘুমিয়েছে। ভাবতেই শানের মুখে একটা হাসি ফুটে উঠল। মেয়েটা এমনিতে শুধু হাতে পায়েই বড় হয়েছে কিন্তু মনটা একদম সেরকমই রয়ে গেছে যেদিন শান সোহাকে প্রথম দেখেছিল। ছোট্ট একটা পুতুলের মতো বাচ্চা মেয়েকে।এতোটা ভয় পেয়েছিল মেয়েটা সেদিন যে ভাবলেই এখনো হাসি পায়।

শান সোহার কাছে গিয়ে সোহার মুখের উপর থেকে বইটা সরালো। নিমাই ভট্টাচার্যের “মেমসাহেব” উপন্যাসটা পড়ছে।

“এই বাচ্চা মেয়েটা নাকি প্রেমের উপন্যাস পড়ছে ভাবা যায়।যে প্রেমের প ও বুঝে না সে এসব উপন্যাস পড়ছে। ”

শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল বইটা পাশে রেখে দিলো। সোহার পাশে বসে বিছানায় হেলান দিয়ে এক গালে হাত রেখে সোহাকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে সারা বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিছু চুল মুখে এসে পড়েছে। শান আলতো হাতে চুল গুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিলো। অদ্ভুত সৌন্দর্য্য ফুটে উঠেছে সারা মুখ জুড়ে। শান আস্তে করে ওর এক আঙ্গুল দিয়ে সোহার ঠোঁটে স্লাইড করতেই সোহা একটু নড়ে চড়ে উঠল। শান তাড়াতাড়ি করে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। উফ কারো ঘুমন্ত চেহারায়ও এতো মায়া থাকে,এতো মিষ্টি লাগে সোহা তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। মনে হয় সারাজীবন দেখেই যায় দেখার ঘোর না কাঁটে।

হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখল বড্ড দেরী হয়ে গেছে। ওদের এখনি বেরোতে হবে নাহলে এমনিতে দেরী হয়েছে সেখানে গিয়ে ফিরতে ফিরতে আরো লেইট হয়ে যাবে। তাই শান সোহাকে ডাকতে থাকলো,

“এই সোহা উঠো। সোহা উঠো না প্লিজ।এই মেয়ে। ”
শান সোহার গালে হাত রেখে ডাকতে লাগল। তখনই সোহা ঘুমের মধ্যেই বলে উঠল,

“উফ মা যাও তো ভালো লাগছে না ঘুমাবো।”

“আরে আমি তোমার মা না তোমার বর উঠো তাড়াতাড়ি আমাদের বেরোতে হবে।”

“দূর নিজেরটা নিজে যাও না মা আমাকে কেন বিরক্ত করছ।এমনিতেও ঐ বাড়িতে রাক্ষস একটার জন্য ঘুমাতে পারিনা শান্তিতে। এখন তুমিও বিরক্ত করছ। ”

কথাটা শুনেই শানের প্রচন্ড রাগ হলো হোয়াট আমি রাক্ষস?আমিন এমন কি করেছি তোমার সাথে? বাট রাক্ষস কেমন হয় এখন তুমি বুঝবে। কথাটা বলেই সোহাকে কোলে তুলে ওয়াসরুমে নিয়ে শাওয়ারটা অন করে দিলো।

হঠাৎ ঠান্ডা পানির ছোঁয়া লাগায় আমি এক চিৎকার মেরে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। চারদিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম এটা আমার ওয়াসরুম।কিন্তু আমি তো আমার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম তাহলে ওয়াশরুমে এলাম কি করে। ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি পুরা বাক রুদ্ধ হয়ে গেলাম।কিছুক্ষন পর আমার ঘোর কাঁটতেই দেখতে পেলাম শান আমার সামনে দাঁড়িয়ে । আমি উনার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে চিৎকার করে বললাম,

“আমি ওয়াসরুমে এলাম কি করে? আর আপনিই বা এখানে কেন? আপনি করেছেন না এটা? ”

শান নিজের দুই পকেটে হাত দিয়ে বললো,
“হ্যাঁ করেছি। কি যেন বলছিলে আমি রাক্ষস তাই না। আমার জন্য তুমি ঘুমাতে পারো না। আমি তোমাকে ডিসটার্ভ করি তাই তো। ”

আমি নিজের মনেই বললাম,
“হায় হায় এই সত্যি কথা গুলা আমি আবার কখন বললাম। নাকি উনি নিজেই মন গড়া কাহিনী বানাচ্ছে। ”

আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“কই আমি?কখন বলেছি এসব। মিথ্যা বলছেন কেন আমি?”

“আমি মিথ্যা বলছি। এই মাত্র তুমি বলেছো সব ঘুমের ঘোরে। ভালোই হয়েছে ঘুমের মধ্যে ছিলে নাহলে তো আমার সম্পর্কে তোমার এই মহান ধারণা গুলো জানতেও পারতাম না আমি। আজকে হচ্ছে তোমার। ”
শান আমার দিকে এগিয়ে আসল আর আমি আমার চোখ বন্ধ করে নিলাম।
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here