#একজীবনে_শুধু_তুমি
,
৮ম পর্ব
,
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
,
সকালে নিজেকে নেহালের বুকের উপর আবিষ্কার করলাম। মানুষটা এখনো ঘুমিয়ে আছে। কি নিষ্পাপ দেখাচ্ছে মুখটা। একবার ছুয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু নিজেকে ওর কাছে বিলিয়ে দিয়েও আজ যেন আমি দোটানায় পড়ে আছি।
,
ভালোবাসা আর ঘৃণার।
মন বলছে আবার ভালোবাসতে কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে ঘৃণা করতে। সত্যি আমি দোটানায় পড়ে আছি।
ঠিক যেন একটা গোলকধাঁধা যার কোনো শেষ বা শুরু নেয়। আছে শুধু দোদুল্যমান একটা মন। যে আমার ইচ্ছা বা নিজের ইচ্ছাইও থামতে পারছেনা।
,
,
নেহালের চোখ মেলে তাকানোর আগেই আমি নিজেকে সরিয়ে ওয়াসরুমের দিকে চলে গেলাম।
সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলাম নেহাল এখনো শুয়ে আছে। আমি বারান্দায় গেলাম। ইজি চেয়ারে বসে আছি। আল্লাহর কাছে আমি সাহায্য চাচ্ছি। দুইমনা হয়ে কিভাবে থাকবো। নিজেকে মাঝে মাঝে অসহায় মনে হচ্ছে।
আমাকে কিছু একটা স্থির করতেই হবে, ভালোবাসা বা ঘৃণা। যদিও ভালোবাসায় কারণ খুবি কম সেই তুলনায় ঘৃণা করাটা বেশি যুক্তিযুক্ত। তবুও তাকে একবার সুযোগ দিতে মন বলছে।
,
,
তিন মাস পর,
আজও সেই দোটানায় আছি। কিন্তু এভাবে আর চলা সম্ভব না। এবার মন বা মস্তিষ্ক কোনো একটাকে জয়ী হতেই হবে নাহলে আমি পাগল হয়ে যাবো হয়তো।
,
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শুয়ে আছি।
পেটটাও খানিকটা বড় হয়েছে।
পেটের বাবুটা কেমন আছে? নেহাল আর আমার বাসর রাতের কাছাকাছি আসার আল্লাহর দেওয়া উপহার হয়তো। তার পর থেকে তার সাথে না বলেছি নিজ ইচ্ছাই কথা না তাকে বলার সুযোগ দিয়েছি।
কিন্তু আমি এই ঝামেলা শেষ করে চাই।
,
মা অনেকবার খাওয়ার জন্য ডেকে গিয়েছে কিন্তু আমার দেহ চলছেনা আজকে। মা এসে আমাকে খাইয়ে দিলো।
,
এভাবে তোকে শুয়ে থাকতে দেখে আমার আর ভালোলাগছেনা মা। চল তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়।
,
কিন্তু মা তুমি নিজেও সুস্থ নেয়। নেহাল আসলে নাহয় ওকে বলবো।
,
তুই বলবি নেহালকে? এটা আমি বিশ্বাস করবো? নিজে মরে পড়ে থাকবি তবুও বলতে চাইবিনা যে তোর সমস্যা হচ্ছে।
,
কিন্তু মা…..
,
কোনো কিন্তু না। চল আমার সাথে।
,
মায়ের সাথে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
,
হাসপাতালে ওয়েটিং রুমে বসে আছি। হঠাৎ নেহালকে দেখলাম একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে আসছে।
,
এই দৃশ্যটা কোনো স্ত্রীর জন্যই সহ্যের বাইরে।
তবুও ধৈর্য ধরলাম এই ভেবে যে হয়তো অপরিচিত কাওকে সাহায্য করছে।
,
ট্রলিতে মেয়েটিকে শুইয়ে দিলো আর সাথে সাথে দৌড়াতে লাগলো ট্রলির সাথে।
এতো কিছু ঘটছে কিন্তু নেহাল আমাদের দিকে খেয়াল করেনি।
ডাক্তার ওকে জিজ্ঞাসা করলো যে মেয়েটা ওর কি হয়।
,
বউ/বোন।
,
কিছু একটা বললো মনে হলো। কিন্তু মস্তিষ্ক বউ হিসেবেই কথাটা ধরে নিলো। এটা কিভাবে সম্ভব নেহালের আরেকটা বউ আছে। একটা মানুষ এতোটা প্রতারক কিভাবে হতে পারে। ওর আরেকটা বউ আছে এটা জেনে যে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে।
,
মাথাটা ভনভন করছে।
তারপর কি হলো কিছু মনে নেয়। যখন চোখ মেললাম। নিজেকে হাসপাতালের কেবিনে আবিষ্কার করি। পাশে মা আর নেহাল কে দেখলাম।
,
আমার মন আর মস্তিষ্কের তিন মাসের যুদ্ধে অবশেষে মস্তিষ্কই জিতে গেল। তার মানে ঘৃণা জিতে গেলো ভালোবাসার কাছে। এই ঘৃণা আর কোনোদিন হয়তো ভালোবাসায় বদলাবে না।
,
এই মুহুর্তে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাইনা। তাই চুপচাপ থেকে গেলাম।
,
ডাক্তার চেকাপ করে সবাইকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করলো। কারণ এই অবস্থা একটু অসস্তি একটু অসুখ হবেই।
,
বাসায় এসে সারার সাথে দেখা করে তিতলিকে একটু আদর করে ঘরে চলে আসলাম।
,
আজকে থেকে আর নেহালের সাথে এক বিছানায় একই ঘরে শুয়ে থাকা অসম্ভব। তাই নিজের জিনিসপত্র গোছগাছ করে পাশের ঘরে চলে যাবো। সম্ভব হলে এই বাসা ছেড়ে চলে যেতান কিন্তু মায়ের জন্য পারিনা। যদি নেহাল আমার মায়ের কোনো ক্ষতি করে?
,
কি করছো রাত্রি? সব কিছু পাশের ঘরে নিয়ে যাচ্ছো নাকি? আমরা কি আজকে থেকে পাশের ঘরে শুবো?
,
আপনি না মিস্টার নেহাল আমি একা থাকবো।
,
কিন্তু আমার অপরাধটা কি জানতে পারি?
,
একবউ বাসায় রেখে আরেক বউ বাইরে রাখা হয়? তাহলে কেন আপনার সাথে থাকবো আপনি তো কুকুরের থেকেও জঘন্য মানুষ?
,
আমি করলাম টা কি?
,
হাসপাতালে আপনার আরেক বউকে না দেখলে বুঝতাম ই না যে আপনার চরিত্র আসোলেই খারাপ।
,
তুমি ভুল বুঝছো রাত্রি। মেয়েটা আমার বউ হবে কেন।
ওতো আমার বোন সারা যেমন আমার বোন সেউ তেমন। নিজের রক্ত দিয়ে আমার জীবন বাচিয়েছিলো একদিন। সেই থেকেই বোন।
,
নেহালের এসব কথা যেন আমার বিশ্বাসই হলো না। মনে হলো যেন আবারও কোনো মিথ্যা বলছে। তাই ওর কোনো কথায় কান না দিয়ে নিজের কাজে মন দিলাম না।
দেখলো কাজ হচ্ছে না তাই আমার হাত ধরলো।
আমি একঝটকা মেরে নিজের হাত ছুড়িয়ে নিলাম।
,
আপনি আমার গায়ে হাত দিলে মনে হয় যেন আগুন লাগিয়ে দিই নাহয় সেই অংশটা কেটে ফেলি।
,
রাত্রি এতো বড় কথা বলো না প্লিজ। আমি কখনো আর তোমাকে জোর করবো না প্লিজ তুমি আমার বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেও না। আমি মারা গেলে চলে যেও। কেও আটকাবে না।
,
সেই দিন নেহালের কথাটা বিশ্বাস না করাটাই ছিলো আমার জীবনের চরম ভুল।
,
চার বছর পর,
,
আজও আলাদা ঘরেই আমাদের রাত কাটে।
মেয়েটা বারবার বাবার কাছে যেতে চাই কিন্তু আমি যেতে দিই না। তবুও বাবা থেকে মেয়ে আলাদা রাখতে পারা কি আমার সাধ্য?
চুপিচুপি বাবা মেয়ের খুনশুটি চলেই থাকে। তবে আমার চোখ ফাকি দিতে পারে না। মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে চলে আসি। আর নেহাল করুন চোখে তাকিয়ে থাকে যার অর্থ, আমার মেয়েকে কিছুটা ভালোবাসতে দাও। ওতো আমার অংশ। আমার থেকে আলাদা রেখে না আমার মেয়ে খুশি আছে না আমি আর না তুমি তবে কেন এই রাগ কেন এই অভিমান।
,
নেহালের এই করুন চোখের ভাষা আর দেখতে মন বলে না।
,
একদিন বিকালে মেয়েকে নিয়ে শুয়ে আছি। নেহাল ঘরের প্রবেশ করে খাটের পাশে হাটু গেড়ে বসে আমাকে ধীর গলায় ডাকলো।
,
রাত্রি! এই রাত্রি!
,
শুনছি।
,
জরুরি মিটিং এর জন্য চট্টগ্রাম যেতে হচ্ছে।
,
সেতো প্রতিমাসে যেয়ে থাকেন তাহলে এখন বলার মানে নেয় কোনো।
,
তোমার কাছে না থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে আছে।
,
জ্বি বলুন।
,
প্রতিবার যাই কিছু মনে হয়না। কিন্তু এবার কেন জানি মনে হচ্ছে এটাই তোমার আমার শেষ দেখা।
,
নেহালের কথা শুনে হৃদয়টা ধক করে উঠলো। ঘৃণার আড়ালের ভালোবাসাটা দেখাতে চাইনা। তবে সে আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাক এটা কখনো চাইনি৷ দুরে থাকি তবুও সে থাকুক আমার জীবনে, কোনো মায়ায়, কোনো পবিত্র বন্ধনে।
,
চলবে
,
,
শেষটা কালকে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্নঃ নেহালকে বাচিয়ে রাখবো নাকি মেরে দিবো?