একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব -১৪

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
১৪.
#writer_Mousumi_Akter

রোশান স্যার নাক সিটকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে,কি অদ্ভুত সে চাহনি!আমার তখন বেহাল অবস্থা।ড্রাইভার সীটের পেছন থেকে দ্রুত পলিথিন বের করে দিলো।তরী আমার মুখের সামনে পলিথিন ধরে বলল
‘ভাবি পলিথিন এ মুখ দিন।’
কে শোনে কার কথা আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ শক্তি হারিয়ে রোশান স্যারের গলা জড়িয়ে ধরে যা করার তা উনার শরীরেই করেছি।ব” মি শেষ হবার পর মনে হলো যে বিষাক্ত কিছু পাকস্থলি থেকে বেরিয়েছে।খানিকটা দূরে ফাঁকা জায়গায় গিয়ে ড্রাইভার গাড়ি থামাল।তরী আমার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ভাবি মুখে চোখে মুখে পানি দিন। ভাল লাগবে।’
পানির বোতল হাতে নিয়ে আমার পাশে বসে থাকা মানুষটির দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোখ ছুটে যাচ্ছে।কি অদ্ভুত আর গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছেন!যেনো চোখ দিয়েই গি” লে ফেলবেন।আমি তো উনার দিকে তাকাতেই সাহস পাচ্ছিনা।পঞ্জাবীর বুকের কাছে কি বিশ্রী ভাবে ময়লা লেগে আছে।রোশান স্যারের দাদু বললেন,
‘কি দাদু ভাই বউকে কি বেশী প্রেম ভালবাসা দিয়ে ফেলেছো যে বদ হজম হয়ে গিয়েছে?
রোশান স্যার এবার তীব্র রাগী চোখে তাকালেন উনার দাদুর দিকে।দাদু বুঝতে পারলেন যে তার পোতা ভ* য়া* ন* ক ভাবে রেগে গিয়েছে।দাদু তার মোটা ফ্রেমের চশমা টা ঠিক করে নিয়ে সামনে তাকিয়ে হাসছেন।আমার দাদু এবার আমাকে বললেন, ‘এটা কী করলে তুমি? আমার ই তো রোশান কে দেখে বমি আসছে।এমন বিশ্রী কান্ড কেউ ঘটায়!
আমি দাদুর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘দাদু আমার ও না বিশ্রি ভাবে ঘে*ন্না করছে।’
‘কেনো?’
‘উনাকে দেখে।উনার গায়ে বমি লেগে আছে।দেখলেই কেমন ওয়াক আসছে।’
আমার এই কথা শুনে রোশান স্যার যে কি অদ্ভুত রাগী চোখে তাকালেন তা কেউ না দেখলে বুঝতে পারবেনা।আমি আস্তে করে উনার পাশ থেকে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করতেই উনি আমার হাত চেপে ধরলেন সীটের সাথে।ভেবেছিলাম সীট চেঞ্জ করে দাদুকে এখানে দিয়ে আমি সামনে গিয়ে বসব।কিন্তু এই লোকটার মতিগতি কী? আমার হাত চেপে ধরে কি কঠিন ভাবে তাকিয়ে আছে।ড্রাইভার হেসে দিয়ে বলল,
‘ভাবি ভাইয়ের শরীরে ব’মি করে এখন বলছেন ভাইয়ের পাশে বসতে ঘৃণা করছে।’
‘তা ঘৃণা করলে কী করব?
‘এই হলো মানবতা।’
‘সব দোষ আপনার!আপনি দেখলেন আমার বমি ভাব হচ্ছে তবুও গাড়ি থামালেন না কেনো?’
‘গাড়ি তো থামাতেই গিয়েছিলাম কিন্তু স্যার ইশারা করলেন যেনো গাড়ি না থামায়।’
রোশান স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম
‘এমন ড্যাবড্যাব করে বিশ্রী চোখের ভঙ্গি নিয়ে তাকিয়ে আছেন কেনো?গাড়ি থামালেই তো জানালা দিয়ে বাইরে ফেলতে পারতাম।’
রোশান স্যার এবার চোয়াল শক্ত করে বললেন,
‘তোমার কি মনে হয় তুমি কোনো অঘটন না ঘটিয়ে থাকতে পারো?
‘কেনো কী করেছি আমি?
‘ওখানে একজন টেকো মাথার লোক ছিলো জানালা দিয়ে মুখ বাড়াতেই উচ্ছিষ্ট গিয়ে ওই লোকের টাকের উপর পড়েছে।ওখানে গাড়ি থামালে কী হতো বুঝতে পারছো?
‘ওই লোকের ওখান দিয়ে যাওয়ার কী দরকার ছিলো? একটু পরে গেলে কী হতো?
‘এত কথা বলো কেনো তুমি?’
‘দেখুন আপনি আমাকে বাচাল মনে করতেই পারেন।এটা কোনো ব্যাপার না;যেহেতু আমি একটু কথা বলি বেশি।বাট বাচাল মানে এই না যে আমি ন্যাকা টাইপ কোনো মেয়ে।অনেকেই ভাবতে পারে আমি ন্যাকা।যারা ভাবে তারা জানেই না ন্যাকা আসলে কাকে বলে।
রিয়েলি তুমি ন্যাকা?জন্মগত কারো মাথায় প্রব্লেম না থাকলে তোমাকে ন্যাকা ভাববে না কখনো।ন্যাকা মানেই হয়ত জানেনা।যে মেয়ে এক রাতে আমাকে টাইট দিয়ে ফেলেছে সে মেয়ে ন্যাকা;যে মেয়ে কথায় কথায় প্রতিবাদ করে সে মেয়ে ন্যাকা।নাইস জোকস।’
‘এখান আপনি কী করবেন?এই পোশাকেই যাবেন?
এর চেয়ে যদি ড্রেনের নোংরা পানিতেও পড়তাম তাও বেটার হত।এই মুহুর্তে আমাকে গোসল করতে হবে,ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে।’
‘ড্রেস চেঞ্জ করে কী পরবেন এখন?
উনি আমার কানের কাছে ঠোঁট এনে চাপা কন্ঠে বললেন
‘তুমি যদি আমার আন্ডারওয়্যার পরতে পারো তাহলে আমি কেনো তোমার শাড়ি পরতে পারব না।’
‘আরে বাহ!পরবেন?দারুণ হবে!ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে যাবে, প্রথম কোনো বর শাড়ি পরে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে।প্লিজ স্যার পরুন।
দাদু বললেন, আহা!আর ঝ’গ’ড়া করোনা কেউ।দাদু তুমি গাড়িতেই চেঞ্জ করে নাও। আমরা বেরিয়ে যাচ্ছি।’
তরতর করে সবাই বেরিয়ে গেলো। আমি বের হতে গেলেই উনি আমার হাত টেনে ধরে বললেন,
‘তুমি কোথায় যাচ্ছো?এখানে বসো,আর আমাকে সাহায্য করো।’
‘কী সাহায্য?
‘পাঞ্জাবী খুলতে সাহায্য করো।’
‘কেনো আপনি পারেন না?
‘পারি, তবুও তোমাকেই খুলে দিতে হবে।এটা তোমার জন্য শাস্তি।’
‘আমি কিভাবে খুলব?
‘যেভাবে খুলতে হয় সেভাবে।নাউ কুইক।’
আমি আস্তে করে উনার বুকের কাছে এগিয়ে গেলাম।পাঞ্জাবীর বোতাম গুলো একটা একটা করে খুলতে শুরু করলাম।উনি নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন আমার চোখের দিকে।কাজটা তো নিজেও পারত।তবুও আমাকে দিয়েই করাচ্ছেন।ইচ্ছা করেই করাচ্ছেন।পাঞ্জাবীর বোতাম খুলতেই উনার পশমে আবৃত উন্মুক্ত বক্ষস্থলে দৃষ্টি গেলো।কেমন যেনো না চাইতেই আমি তাকিয়ে আছি সেদিকে।চোখ বার বার উনার বুকের দিকে গিয়ে আটকে যাচ্ছে।ইশ! কি লজ্জা। মুহুর্তের মাঝেই আমার মুখশ্রী লজ্জামিশ্রিত রূপ ধারণ করলো।উনার বুকে হাত রেখেই আমি অন্যদিকে দৃষ্টি ঘুরালাম।আড়চোখে পরখ করলাম রোশান স্যার নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।কি ভয়ানক সে চাহনি!হঠাৎ হৃদপিন্ড ধুক করে উঠল,শিউরে উঠলাম আমি।উনার বুকে আমার হাত;উনি উনার হাত আমার হাতের উপর রাখলেন আর আলতো করে উনার বক্ষস্থলে চেপে ধরলেন।মুহূর্তের মাঝেই সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল আমার।কি অদ্ভুত এক অনুভূতি!যা আমার শরীরে ভয়ংকর এক ভাললাগার শিহরণ ছড়িয়ে দিলো।আমার হৃদয়ে প্রথম এমন তুফানের মত অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে।তোলপাড় করছে হৃদয়ের মাঝে।ওষ্টদ্বয়ে ভাললাগার এক হাসি,যাতে লজ্জার মিশ্রণ ।লুকায়িত অনুভূতি কি এখনি উনি বুঝে ফেলবেন!

আমাকে চুপ দেখে রোশান স্যার বললেন,

“হঠাৎ এমন নিশ্চুপ হয়ে গেলে কেনো?তাকাও এদিকে।’

‘হাত টা ছাড়ুন।’

‘কেনো ছাড়ব;যা করলে আমার সাথে ছাড়া কি উচিত?’

‘আমি ইচ্ছা করে করিনি।’

‘তাহলে পাঞ্জাবী চেঞ্জ করিয়ে দাও।’

‘মানুষ দেখলে কী ভাববে বলুন তো?’

‘কী ভাববে?’

‘ভাববে যে রাস্তাঘাটে..’

‘রাস্তাঘাটে কী?’

‘কিছুনা।আপনি আমাকে ছোট পেয়ে লজ্জা দেন শুধু।’

‘লজ্জা পাবে কেনো তুমি?লজ্জা পাওয়ার কারণ কিন্তু বুঝলাম না।’

‘কিছুই বুঝতে হবেনা।চেঞ্জ করুণ আপনি।’

উনি পাঞ্জাবী খুলতেই আমি একবার উনার দিকে তাকালাম।খালি গায়ে এই শ্যামসুন্দর পুরুষের দেহে চোখ লেগে গেলো আমার।মুহুর্তের মাঝেই চোখ সরিয়ে নিলাম। উফ!আমার এত লজ্জা করছে কেনো?
উনি পাঞ্জাবী চেঞ্জ করে অন্য আরেকটা পাঞ্জাবী সুটকেস থেকে বের করে পরে নিলেন।আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কিছুই না বলে উনার দুই হাত দিয়ে আমার হাত দুটো ধরে উনার বুকের কাছে নিয়ে বললেন, ‘বোতাম লাগিয়ে দাও।এটা শাস্তি তোমার।’
লজ্জায় উনার মুখের দিকে না তাকিয়ে বোতাম গুলো লাগিয়ে দিলাম।আর উনি তাকিয়েই আছেন আমার দিকে।আমি আর কথা বলতে পারলাম না।সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছে,হৃদপিন্ড দ্রুত বেগে কাঁপছে।তরীরা আবার গাড়িতে উঠল।গাড়ি চলছে আবার নিরিবিরি গতিতে।দুই দাদু, ড্রাইভার আর রোশ্যান স্যার গল্প করছেন।আর আমি হারিয়ে গিয়েছি যেনো অন্য কোনো এক জগতে।

চলবে?..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here