#একটুখানি_আশা
#মেহরাফ_মুন(ছদ্মনাম)
#পর্ব ২
রুম বন্ধ করে বসে আছে মুন। সে বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে কী করা উচিত তাঁর। কাল বিয়ে, বাসায় সব আত্মীয়রা আসা শুরু করে দিয়েছে। মা, বাবা কাওকে সে এক মুহূর্তের জন্য একা পাচ্ছে না। সবাই ব্যস্ত বিয়ে নিয়ে। মুনের শুধু এখন একটাই ভাবনা যেমন করেই হোক এই বিয়েটা ভাঙতে হবে কিন্তু ভাঙবে কীভাবে মাথায় আসছে না। আস্তে আস্তে বাড়িটা রঙিন হয়ে বিয়ে বাড়িতে পরিণত হচ্ছে। তাঁকে যা করার এর ভেতরই করতে হবে। তখন সব কেনাকাটা শেষে রিক্সা থেকে নেমে বাড়ি এসে দেখল সম্পূর্ণ বাড়িটা ভরপুর। দূরের সব আত্মীয়রা এসে গেছে বিয়ের জন্য। এক মুহূর্তের জন্যও মাকে একা পাচ্ছে না সে, বাবাকে তো দেখেইনি এখনো, হয়তো বাইরে সব কাজের দেখাশোনা করছে। আরিফা তো ভয়ে ততস্ত হয়ে আছে। মুন উঠে দাঁড়ালো রুম থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে। অন্তত সবাইকে যেমন করেই হোক বোঝাতে হবে।
মুন রুমের দরজা খুলেই আশেপাশে উঁকি দিতেই কেউ একজন তাঁর পাশ দিয়ে হুড়মুড় করেই তাঁর রুমে ঢুকে গেল। মুন রুমে ঢুকে আশেপাশে দেখতেই আহান এসে তাঁর পাশ দিয়ে দরজা আটকে দিল। মুন ভুত চমকানোর মত করে চোখ বড়ো বড়ো করে বলে উঠলো,
-‘আআপনি?’
-‘হ্যাঁ, বেবি আমি। কেন? আসতে পারি না না-কি?’ চোখ টিপ মেরে বলল।
-‘দেখুন আপনি কিন্তু আপনার সীমা লঙ্গন করছেন। বেরিয়ে যান রুম থেকে। বাসায় ঢুকতে পেরেছেন এটাই অনেক। আর কিছুক্ষন পর আপনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবে সবাই। আপনার মুখোশ আমি খুলে ফেলবো।’কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলে উঠলো মুন।
-‘আচ্ছা তাই না-কি? তো প্রমান কী?’
-‘প্রমান আপনার পাঠানো মেসেঞ্জার ছবিগুলো।’
আহান তা শুনেই উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলল,
-‘ওই ছবিগুলোতে কোথাও আমাকে দেখা যাচ্ছে? শুধু একটা মানুষের খুন করা দেহ দেখা যাচ্ছে।তাহলে বিশ্বাস কীভাবে করবে? পারলে করাও।’
-‘আপনার আইডি থেকেই এসেছে এটাই প্রমান।’
-‘সবাই ভাববে হয়তো বা আমি মজা করে পাঠিয়েছি।’
মুন আহানের কথা শুনেই ওর দিকে রাগী দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করতেই আহান চোখ টিপে বিশ্রী একটা হাসি দিল।
-‘এখন এত নাটক না করে চুপচাপ বিয়েটা করো নাহলে কিন্তু পরে তোমারই ক্ষতি।’
-‘করব না আপনাকে বিয়ে। কী করবেন আপনি?’
-‘এই বাসায় এখন অনেক মেহমান আছে। একটা ছেলে একটা মেয়ের বিয়ের আগের রাতটা এক রুমেই কাটিয়েছে তারপর আর বিয়ে করেনি। এরপরেরটা…..! তুমিই ভাবো।’
-‘আপনি এখনই বেরিয়ে যান এই রুম থেকে নাহলে আমি কিন্তু এখন চিৎকার করব।’
-‘আহঃ বেবি এত অধৈর্য হলে চলে? তোমার আর তোমার পরিবারের সম্মান আমি চাইলে এখনই ধূলিসাৎ করে দিতে পারি আজকের রাতটা এই রুমে কাটিয়ে। এরপর তো তোমাকে আমার আর লাগবেই না কারণ তখন আমার কাজটা শেষ। কিন্তু আমি তোমাকে সম্মান দিয়ে নিতে চাইছি কারণ তুমি এই আহান চৌধুরীর চোখে এক অন্যরকম মেয়ে হিসেবে ধরা দিলে। এমন মেয়েই তো আমার বেশি পছন্দ আবার কিন্তু সারাজীবনের জন্য না। তারপর তোমার এই সব অহংকার তিলে তিলে শেষ করব। আহান চৌধুরীর মেয়ের অভাব নেই।’
মুনের শরীর গা রি রি করে উঠলো আহানের এমন কথায় । সে রাগে কাঁপছে। শেষপর্যন্ত এমন ছেলে তাঁর পিছনে পড়লো! আহানের ফোন আসতেই সে ফোনের দিকে দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করতেই মুন তাঁর পাশে থাকা ড্রেসিং টেবিল থেকে ফুলদানিটা নিয়েই আহানের মাথা বরাবর মেরে দিল।
ফুলদানিটা আহানের কপাল অনুযায়ী পড়তেই অতিরিক্ত ব্যথায় ব্যালেন্স হারিয়ে সে বসে পড়লো। তাঁর ফিনকি দিয়ে ধরধর করে রক্ত পড়া শুরু করল। আহান এক হাতে কপাল চেপে ধরেই উঠে দাঁড়ালো। মুন ফুলদানি মেরে তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলতে গেলেই আহান রেগে মুনের লম্বা বেণীটা টান দিল। মুন অতিরিক্ত ব্যথায় মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলো।
আহান উঠেই অন্য হাত দিয়ে মুনের হাত মুচড়ে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-‘ভালো করিসনি কিন্তু তুই। এর ফল তোকে আজকেই দিয়ে দিব।’
-‘আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ, আমি আপনার পায়ে পড়ি। আমি কাওকে কিছু বলবো না। আমার মান সম্মানটা এভাবে শেষ করিয়েন না দয়া করে।’
-‘এই আহান চৌধুরীর হাত থেকে আর বাঁচতে পারবি না তুই। অনেক্ষন ভালোভাবে কথা বলেছি তোর সাথে।’
ঠিক তখনি কট করে রুমের দরজা খুলে গেল। দরজা খুলেই আরিফা মুনের রুমে আহানকে দেখে মাথায় রাগ চড়ে গেল। তাঁর উপর মুনকে এভাবে হাত মুচড়ে, চুল ধরা অবস্থায় দেখে সে রেগে এগিয়ে গেল।
-‘আপনি আবার এসেছেন এখানে? সাহস তো কম না আপনার। আমাদের বাসায় এসে আমার আপুর রুমে দাঁড়িয়ে আবার ওকেই অত্যাচার করছেন?’ আরিফা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো।
-‘বাহ্! দুইঘন্টার ভেতরেই কথার বুলি ফুটছে দেখি তোমার?’আহান মুনকে ঐভাবে ধরা অবস্থায় আরিফার দিকে দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করে বলল।
-‘আপনি আমার আপুকে ছাড়ুন আর বেরিয়ে যান।’ আরিফা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল।
-‘সকালের ডোজটা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে না-কি? আবার মনে করিয়ে দিতে হবে?’
-‘আপনি বের হন আগে। নাহলে কিন্তু আমি এখন পরিবারের সবাইকে ডাকবো।’
-‘দুইটাকেই আমি দেখে নিব।’ আহান মুনকে ছেড়ে দিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আহান রুম থেকে বের হতেই আরিফা মুনের দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মুন আরিফাকে জড়িয়ে ধরেই ডুকরে কেঁদে উঠলো।
-‘তুই না আসলে আজ আমি শেষ হয়ে যেতাম বোন। ‘
-‘তুমি এখনো পরিবারের কাওকে কিছু বলার জন্য বের হচ্ছ না দেখে তোমার রুমে আসার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে নিলেই দেখি ওই অসভ্যটা খুব দ্রুত তোমার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। তখনই আমার সন্দেহ হয় তাই তাড়াতাড়ি বড়মাকে খুঁজে অসভ্যটার কথা জিজ্ঞেস করতেই বড়মা হেসে বলে তোমার সাথে না-কি দেখতে আসছে কুলাঙ্গারটা। তাই আমি বড়মা থেকে তোমার রুমের এক্সট্রা চাবিটা নিয়ে দরজা খুললাম।’
মুন আরিফার কথা শুনে ওর দিকে নিস্প্রান চোখে তাকিয়ে রইল।
-‘আপু আমার তোমার জন্য ভীষণ আফসোস হচ্ছে। আপু তুমি পালিয়ে যাও।’
-‘না বোন, পালালে আমার পরিবার সমাজের চোখে আরও খারাপ হয়ে যাবে।’
-‘কেন ভাবছো এই পরিবারের কথা আপু? যে পরিবার তোমার মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
-‘আহঃ আরিফা উনারা আমাদের ভালোর জন্যই এমন করছেন। কিন্তু উনারা তো আহানের এই ভালো মুখোশ পড়ার আড়ালে এমন খারাপ মুখোশটা জানে না। যদি জানতো তাহলে কোনোদিনও দিতো না।’
আরিফা অপলক তাকিয়ে রইল মুনের দিকে।
-‘এখন কী করবে আপু?’
-‘কী আর করার। নিয়তি মেনে নিতে হবে আরিফা। নাহলে আমার পরিবার যে এক নিমিষেই শেষ করে দিতে পারবে আহান।’
-‘আমি চায় না আমার জন্য এই পরিবারটা চুরমার হয়ে যাক। মেনে নিলাম নিয়তিটা।’ মুন মলিন হেসে বলল।
-‘আপু তুমি এই কুলাঙ্গারটাকে বিয়ে করবে? যে বিয়ের আগের দিন তাঁর মুখোশ দেখিয়ে দিল?’
-‘হয়তো এটাই কপাল বোন।’
-‘আপু তোমার বাইরের দেশে পড়ার ইচ্ছেটা এভাবেই ধামাচাপা দিয়ে দিলে? এত সহজে?’
মুন আরিফার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
———————-
বউ সাজে বসে আছে মুন । মুন এখনো ঘোরের মাঝে আছে। আজকের পর থেকে মুনের এই স্বাধীন জীবনটাও শেষ। এমন এক মানুষের সাথে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে যে মানুষটার কোনো মায়া-দয়ায় নেই। কীভাবে বাঁচবে মুন? ভাবতেই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো মুনের। সে আজ থেকে কারো কেনা পুতুল হয়ে যাবে।
হঠাৎ করেই রুমের দরজা দিয়ে আরিফা হুড়মুড়িয়ে ঢুকে হাঁপাতে লাগলো। কিছু একটা বলতে চাইছে সে। মুন এগিয়ে আরিফার দিকে দৃষ্টি দিতেই আরিফার কথায় চমকে উঠলো।
#চলবে ইনশাআল্লাহ।
(ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার নজরে দেখবেন দয়া করে )