একমুঠো বসন্ত পর্ব -২১+২২

#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১৭

সাফাতকে আমান শেখ তলব করেছেন। রিহি এসে তা জানাতেই সাফাত রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মিলি এতক্ষন নিজের মতো করে মোবাইল দেখছিল কিন্তু রিহির কথা শুনে মনে হলো অনেক জরুরি কিছু জানাবেন। তাই সেও সাফাতের পিছু নিল।
সাফাত দাঁড়িয়ে আছে। সে ভাবছে কী বলতে পারে তার বাবা। রাতে তো সবাইকে একসাথে এভাবে ডাকে না। ব্যাবসা-সংক্রান্ত কোনো কথা থাকলে এভাবে পরিবারের সবাইকে রাখে না। তাহলে কী পারিবারিক কিছুই জানাবেন!

“বাবা?”
আমান শেখ মাথা নিচু করে বসে ছিল। সাফাত একটু এগিয়ে ডাকতেই তিনি চোখ তুলে তাকালেন।

“ডেকেছো যে!”

“তোর বউ কই?” আমান শেখ এদিক ওদিক তাকাতেই সিঁড়ির কাছে মিলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মলিন হাসলো।

“এদিকে আসো মা। ওখানে কেন দাঁড়িয়ে আছো!”

মিলিকে নিয়ে বাবার এমন আদিক্ষেতা সাফাতের সহ্য হলো না। মেয়েটাকে সে এখন সহ্য করতে পারে না। পরিবারকে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতেও পারছে না। কারণ অন্তত আরো কয়েকমাস সহ্য করা লাগবে নয়তো পরিবারে তার জায়গাটা সে একেবারের জন্য হারাবে। না পারছে এদিকে যেতে আর না পারছে ঐদিকে যেতে।

“সাফাত?”

“জি বাবা।” সাফাত এগিয়ে এলো। আমান শেখকে আজ এলোমেলো লাগছে। লাগবেই না বা কেন! একটা মাত্র ছেলের সম্পর্কে এমন সিদ্ধান্ত নিতে তার গা কাঁপছে কিন্তু ছেলেরও একটা নিজস্ব পরিবার আছে তাই না চাইতেও এই সিদ্ধান্তটা নিতে হলো।

“তুমি তোমার বউকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাও। ওখানে আলাদা করে সংসার করো।”

সাফাত থমকাল। তার দৃষ্টি এলোমেলো। বাবা কী বলছে এসব!

“সাফাত?”

“বাবা এসবের মানে কী! আমি তোমাদের ছাড়া থাকার কথা কোনোদিন মাথায়ও আনিনি।” বলেই আবারো অনুনয়ের সুরে বলে উঠল,
“বাবা এমন করো না প্লিজ।”

“আমি তো করছি না। চেয়েছিলাম আমার ছেলে সহ একসাথে থাকবে কিন্তু তুই বিয়ে করেছিস। এখন আমাদের চেয়ে ঐ পরিবারটা তোর উপরে থাকবে।” বলেই তিনি মিলির দিকে তাকালো,
“তুমি এটাই চাচ্ছ তো?”
মিলি তাকালো। এই বৃদ্ধ কেমনে তার পরিকল্পনা বুঝে নিল! পরক্ষনেই মিলির ভাবনা আসলো, যা হয়েছে ঠিকই হয়েছে।এখন এতকিছু ভাবতে হবে না। তার পরিকল্পনাটাতো পূর্ণ হচ্ছে।

“বাবা ওর চাওয়াতে কী এসে যায়!”

“সাফাত! বিয়ে তুমি করেছো। সেই অনুযায়ী মেয়েটার সবকিছুতে খেয়াল রাখার দায়িত্ব তোমার। তোমার স্ত্রী তো আমাদের থেকে আলাদা হতেই চাচ্ছে।”

“বাবা, ভুল আমি করে ফেলেছি। এইটা যদি করো তবে এটা আমার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।”

“তোমার স্ত্রী তো তাই চায়।”

“আমি তো চাইনা, আমি তোমাদের সাথে পরিবারের সাথে মিলে থাকতে চাই।”

“বিয়ের আগে তো পরিবারের কথা ভাবোনি তবে এখন আর বলেও লাভ নেই। তখন যখন ভাবোনি এখনও ভাবার দরকার নেই।” বলেই আমান শেখ বসা থেকে উঠে সিঁড়ির কাছে এগিয়ে যেতে গিয়ে থেমে গেলেন। তিনি সামনের দিকেই তাকিয়ে সাফাতের উদ্দেশ্যে বললো,

“তোমরা চাইলে কালই রওনা দিতে পারো। ভেবো না বের করে দিচ্ছি। তুমি এই বাড়ির একমাত্র ছেলে। তোমার জন্য দরজা সবসময় খোলা।” বলেই আমান শেখ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলে । কেউ ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখতো আমান শেখের চোখেও পানি টলমল করছে। তার একমাত্র ছেলে তার কাছে আর থাকবে না এটা সে ঘুনাক্ষরেও কোনোদিন ভাবেনি কিন্তু আজ হতে চলেছে। হয়ত আজকে ছেলে যেতে চাচ্ছে না কিন্তু বছর ঘুরতেই সে ছেলে আর এখানে আসতে চাইবে না। এটা ভাবতেই আমান শেখের মতো শক্ত মানুষের মন নরম হয়ে যাচ্ছে। না চাইতেও তার একমাত্র ছেলেকে হারাতে হচ্ছে।

———-

পরেরদিন ভার্সিটিতে নিহিলা একাই গেল। অরিনের জ্বর আসায় সে যায়নি কিন্তু পরীক্ষার আগে সবসময় ক্লাসে উপস্থিত হওয়া লাগে তাই বাধ্য হয়েই নিহিলা ভার্সিটিতে এসেছে। ক্লাস শেষ করে রাস্তায় দাঁড়ালো। ভাগ্য খারাপ আজকেই হলো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে কিন্তু কোনো সুবিধা মতো গাড়ি পাচ্ছে না। নিহিলার অস্তির অস্তির লাগছে। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।

“গাড়িতে উঠো।”কণ্ঠস্বর পেতেই নিহিলা মাথা তুলে তাকালো। রাহানের গাড়ি। এই মানুষটা তার সব অস্তির সময়ে কোথ থেকে এসে হাজির হয়ে যায় সে ভেবে উঠে পায় না।

নিহিলা গাড়িতে উঠে বসতেই রাহান গাড়ি ছেড়ে দিল। সামনেই একটা কফিশপ পড়ায় রাহান গাড়ি থামালো। গাড়ি একপাশে রেখে রাহান নিহিলার দিকে তাকাতেই সেও তাকালো। নিহিলা কফিশপটির নাম পড়ে রাহানের দিকে তাকালো,

“আমি তো কফি খাবো বলিনি!”

“তোমাকে কে খেতে বলেছে?

“তো থামালেন যে?”
নিহিলার কথা শুনে রাহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“তোমার জন্য তো থামায়নি। আমার ইচ্ছে করেছে তাই থামিয়েছি।”
মানুষটার এমন সরাসরি জবাবে নিহিলার অপমানবোধ হলো। সে বোকা বোকা প্রশ্ন করেছে তাই বলে এভাবে জবাব দিবে!

রাহান গাড়ি থেকে নেমে নিহিলার দিকে তাকাতেই নিহিলা চোখ ফিরিয়ে নিল।

“চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছ যে? এখানে তো শুভদৃষ্টি করছি না। তুমি যাবে কিনা সেজন্যই তাকিয়েছি। ”

রাহানের এমন কথায় দ্বিতীয়বারের মতো নিহিলার অপমানবোধ হলো। কী আশ্চর্য! এভাবে কথা বলার কী আছে!

“আমি যাবো না।” নিহিলা ফিরে গেল। সে ভেবেছিল রাহান হয়ত ডাকবে কিন্তু সে নিহিলার জবাবের কোনো পরুয়া না করে গাড়ির চাবি নিয়ে নিল।
“ঠিকাছে।”

রাহানকে এগিয়ে যেতে দেখে নিহিলা পিছু নিল। এভাবে একা গাড়িতে সে বসে থাকবে! নিহিলা রাহানের পিছু পিছু হেঁটে কফিশপে ঢুকলো। রাহান দেখেও কিছু বললো না।

রাহান গিয়ে কফির অর্ডার দিতেই কিছু সময় পরে কফি চলে আসলো। নিহিলা আড়চোখে রাহানের দিকে তাকালো। মানুষটা কফি খেতে খেতে মোবাইলে কী জানি দেখছে। তা দেখে নিহিলা মনে মনে গা’লি দিল। একটা মানুষ তার সামনে জীবন্ত বসে আছে তার সাথে একটু কথা বলবে তা না করে মানুষটা নিজের মতো আছে!

“আমাকে না দেখে কফি শেষ করো। উঠবো এখন।”

নিহিলা চোখ ফিরিয়ে নিল। এইবার তার নিজেকেই ধরে গা’লি দিতে ইচ্ছে করছে। আজকে কী হয়েছে কী জানি! একদিনে এতোসব অপমান নিহিলা নিতে পারছে না।

“হেই রাহান।”
নিহিলা তাকালো। একটি মেয়ে এসেই রাহানের পাশে দাঁড়ালো। সে ভ্রু কুঁচকে পর্যবেক্ষণ করে নিল। ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরিহিতা এক মেয়ে।
মেয়েটির কথাবার্তার ধরণে বোঝা যাচ্ছে রাহানের অনেক পরিচিত। মেয়েটির এমন উৎফুল্ল সম্বোধনে নিহিলা রাহানের দিকে তাকালো। রাহানের মুখভঙ্গি বোঝা যাচ্ছে না। ভ্রু কুঁচকে মেয়েটির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। নিহিলা মনে মনে ভাবলো হয়ত সে এখানে আছে তাই রাহান বিরক্ত হয়েছে। এমন দুজন পরিচিতের মাঝে নিহিলার থাকতে ইচ্ছে করলো না। আর হয়ত মানুষগুলোরও অস্বস্তি হবে ভেবে নিহিলা টেবিল ছেড়ে উঠে গেল। নিহিলার এমন করে উঠে সরে যাওয়াতে রাহান দেখেও কিছু বললো না। তা দেখে নিহিলার মনে মনে খারাপ লাগা কাজ করলো। আসলেই তো! সে তো আগাছার মতো ওখানে বসে ছিল।
নিহিলা একটু সরে রেলিং ধরে নদীর দিকে দৃষ্টি দিল। এই কফিশপটি নদীর পাশেই। মাঝে মাঝে হালকা বাতাস। পরিবেশটা অনেক সুন্দর। এজন্যই বোধহয় অনেক মানুষের আনাগোনা। আচ্ছা! রাহান ভাই সবসময় নদী টাইপ জায়গায় কেন যায়! মানুষটার কী নদী পছন্দ! নিহিলা ভাবনাটা সরিয়ে দিল। ঐ মানুষটার কথা সে কেন ভাবছে! যে প্রতি পদে পদে তাকে অপমান করতে এক চুল পরিমানও ছাড়ে না তার কথা কেন ভাববে! আজকের পরে থেকে মানুষটার কথা তার মাথায়ও আনার দরকার নেই।
নিহিলা তাকালো। আচ্ছা, মেয়েটা কে হতে পারে! এভাবে এতো উৎফুল্ল হয়েই বা কেন সম্বোধন করলো! হয়ত রাহান ভাইয়ের অতীব কাছের নয়তো নিহিলাকে উঠে যেতে দেখেও কেন আটকালো না! নিহিলা ভেবেছিল, মানুষটা বলবে।’তুমি উঠছো কেন? বসো।’ কিন্তু বলেনি। আচ্ছা মেয়েটা কী রাহান ভাইয়ের কাছের কেউ! আচ্ছা! তার থেকেও কী কাছের! পরক্ষনেই নিহিলা থমকালো। ছি ছি! সে এসব কেন ভাবছে! নিহিলা তো কয়েকদিনের অচেনা আত্মীয়। তার সাথে এসবের তুলনা সে করছে! নিহিলা তো অনেক নিচের।কোথায় আকাশ আর কোথায় পাতাল!#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_২১

নিহিলা চাঁদর গায়ে ভালোমতো জড়িয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়ালো। শীত শীত লাগছে কিন্তু তার এই আবহাওয়াটা ভীষণ করে ভালো লাগছে। রিহি নিহিলার রুমে ঢুকলো। রুম অন্ধকার। রাতের খাবার খাওয়ার জন্যই ডাকতে এসেছে সে। সে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গেল। নিহিলাকে অন্ধকারে অন্যমনস্ক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিহি পাশে দাঁড়ালো।

নিহিলা অনুভব করলো রিহি এসে দাঁড়িয়েছে কিন্তু কিছু বললো না।
রিহি এক ফলক নিহিলার দিকে তাকিয়ে বাইরে দৃষ্টি দিল।

“কী হয়েছে তোর?”

“কী হবে!”নিহিলা বাইরের দিক থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে শান্তস্বরেই কথাটা বলল।

“তোকে এমন কেন লাগছে?”

নিহিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ভেবেছিল ঐ দেশ ছাড়ার সাথে সাথে দ্বিতীয় অনুভূতি বিসর্জন দিয়েছিল কিন্তু না। এদেশে এসে তার আরো খারাপ লাগছে। বুকে গভীর ভাবে চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে। নিহিলা নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
“ইমন ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে?”

ইমনের কথা বলতেই রিহি মাথা নিচু করে ফেলল। নিহিলা অন্ধকারেও বুঝতে পারলো রিহির মুখশ্রী লজ্জায় রাঙা হয়ে গেছে। রিহি ‘হ্যাঁ-সূচক’ মাথা নাড়লো।

নিহিলা রিহির দিকে তাকালো। কেমন অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। প্রেমে পড়লে বুঝি এমনই লাগে! রিহির জন্য খারাপ লাগবে। নিহিলা মলিন শ্বাস ফেলে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিল।
রিহি নিহিলার দিকে তাকালো। ঘরে আলো জ্বলছে না কিন্তু বাহির থেকে টুকটাক আলো এসে ব্যালকনিতে পড়ছে। পূর্ণিমার তির্যক আলো এসে সোজা নিহিলার মুখের উপর পড়ছে।
রিহি তাকালো। নিহিলার চেহারা অগোছালো, শান্ত, নির্জীব।

“এমন নির্জীব দেখাচ্ছে কেন তোকে?”

নিহিলা হাসার চেষ্টা করলো,
“অনেকদিন পরে দেখেছিস তাই এমন লাগছে।”

রিহি জবাব দিল না। নিহিলার দিকে তাকিয়ে রইল। ওকে অরিন কিছু হলেও বলেছে। ও জানে নিহিলা এইসব ভেতর থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে তাই কাউকে না বলে নিজেই কষ্ট পাচ্ছে।

“আচ্ছা, সাফাত ভাইরা এখানে থাকে না? আসার পরে একবারও দেখলাম না।”

নিহিলার কথায় রিহি তাকালো। সে জানে নিহিলা কথা ঘুরাচ্ছে কিন্তু এটাও তো তার জন্য কষ্টকর। রিহির জবাব দিতে দেরি হতে দেখে নিহিলা হাসলো,
“ভাবিস না, কষ্ট থেকে জিজ্ঞেস করছি। আমি ভুলে গেছি এসব। মাঝখানে চারবছর কেটে গেছে। তোর কী মনে হয় আমি এখনো এসবে পড়ে আছি!”

নিহিলার কথায় রিহি মলিন শ্বাস ফেলল,
“সাফাত ভাই আর আগের সাফাত ভাই নেই রে নিহি। বড়ো বাবা আলাদা করে দেওয়ার তিনমাসের মাথায় ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। এখন সাফাত ভাই একা থাকে। বাড়িতেও আসে না। ভাইয়ের সাথে কথা দূরের কথা চোখের দেখা দেখেছি আজ থেকে দুবছর আগে। পরিবারের সাথেও তেমন একটা কথা হয় না। ও এখানে আসে না। জানি না, আমার ভাইটা কেমন আছে। আমার মাঝে মাঝে কী মনে হয় জানিস?”

নিহিলা থমকালো। এতকিছু হয়ে যাবে সে সেটা কোনোদিন কল্পনাতেও আনেনি। সে নিজেকে শান্ত করে রিহির জবাব দিল,
“কী মনে হয়?”

“আমার মনে হয় সাফাত ভাই বিয়ের নতুন বছরেই অনুশোচনায় দ’গ্ধ হয়েছিল। কারণ মিলি মেয়েটা ভাইকে হাত করেছিল শুধুমাত্র সম্পদের জন্য। ভাই একমাত্র ছেলে ছিল, এতদিকে ব্যাবসা ছিল -এসবকিছু জেনে বুঝেই ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক করেছিল কিন্তু আমার বো’কা ভাইটা বুঝতেও পারেনি যে কোনটা হীরা আর কোনটা নকল!”

দরজা ধাক্কানোর শব্দে রিহি থামলো। দরজার ওইপাশ থেকে রেহেনা বেগমের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। রিহির খেয়াল হলো,

“এই দেখ, আমাকে রাতে খাওয়ার জন্য তোকে ডাকতে পাঠিয়েছে। আর আমিও গল্পে লেগে গেছি। একদম মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। আয় চল।”

নিহিলা রিহির সাথে পা বাড়ালো।

খাওয়া শেষ করে আমান শেখ উঠতে যাবে তখনই নিহিলা বড়ো বাবার দিকে তাকালো,
“বড়ো বাবা একটা কথা বলি?”

আমান শেখ টিস্যুতে হাত মুছতে মুছতে নিহিলার দিকে তাকিয়ে হাসলো,
“একটা কেন! যতটা ইচ্ছে বল। অনুমতি নেওয়ায় কী আছে!”

নিহিলা নিজেকে শান্ত করে প্রস্তুত করলো,
“তুমি সাফাত ভাইকে মেনে নিয়েছিলে। যদিওবা চাপে পড়ে কিন্তু ফুপিকে কেন মেনে নাওনি! এটা কৈফিয়ত না শুধু জিজ্ঞেস করছি। যদি শাস্তির কথা বলো তবে পরিবার ছাড়া এতগুলো বছর উনি বাইরে আছেন – এটা উনার জন্য অনেক বড়ো শাস্তি । উনাকে দেখতাম প্রায় সময় মন খারাপ করে থাকেন। আদরের বোনের সাথে যোগাযোগ না রেখে শুধু তুমি কষ্ট পাচ্ছ যে তা না, ফুপিও পাচ্ছে অনেক। আমার একটা অনুরোধ রেখো। মেনে নেও প্লিজ।”

আমান শেখের এতক্ষন থাকা হাসোজ্জল মুখটা মুহূর্তের মধ্যে নির্জীব হয়ে গেল। তিনি চুপ হয়ে গেলেন। নিহিলা তাকিয়ে রইল। ঘরে থাকা প্রতিটি সদস্যর দৃষ্টি আমান শেখের দিকে। বেশ কিছু সময় পরে আমান শেখ মাথা তুলে নিহিলার দিকে তাকালেন,
“রিনা আমাকে চিনে উঠতে পারেনি। আমার কাছে সরাসরি এসেছে? ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে! সে যদি কাছে আসতো আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারতাম! হয়ত প্রথম প্রথম অভিমানে দূরে সরিয়ে দিয়েছি আর আমার বোন কী করলো! আমার সেই অভিমানটাকে একেবারের জন্য মনের মধ্যে আবদ্ধ করে নিয়ে দেশ ছেড়ে দিল!”

“এখন এতো সব ভুলে যাও বড়োবাবা। রিহির বিয়েতে ফুপিকে বলো।”

“তোরা বল। আমি তো আপত্তি করছি না।” বলেই তিনি রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন।

নিহিলাকে উৎফুল্ল দেখালো। রেহেনা বেগম, আমেনা বেগম ভারী খুশি হয়ে নিহিলাকে এসে জড়িয়ে নিল। অবশেষে এই বাড়ির মেয়ে ফিরে আসবে বলে কথা!
রিহি দূর থেকে নিহিলার দিকে তাকালো। নিহিলাকে মন থেকেই উৎফুল্ল লাগছে। এতক্ষন যে নির্জীব ভাবটা ছিল মুহূর্তের মধ্যে যেন সেটা কেটে গেছে। নিহিলা মোবাইল হাতে নিয়ে কল দিতে গিয়েও দিল না। হুট্ করে আগের মতো মুখভঙ্গি করে ফেলল। রিহি বুঝতে পারে না এই মেয়েটার হুটহাট কী হয়!
নিহিলা রিনা আহমেদকে মেসেজ লিখলেন। মিনিট দুয়েকের মাঝে রিনা আহমেদের কাছ থেকে কল আসলো। বেশ কিছুসময় কথা বলে শেষপর্যায়ে নিহিলা নিজেকে শান্ত করে রিনা আহমেদের উদ্দেশ্যে বলল,
“পরের সপ্তাহে রিহির বিয়ে।”

“ওহ।” রিনা আহমেদের এই কথাটা শুনেই নিহিলা বুঝতে পারলো উনি কষ্ট পেয়েছেন। নিহিলা চুপ রইল। উনাকে সময় দিল। বেশ কিছুসময় পরে রিনা আহমেদ মন খারাপ আড়ালে ঠেলে দিয়ে আবারো বললেন,
“সবাই কত বড়ো হয়ে গেল! অথচ পাশ থেকে ছুঁয়েও দেখতে পারলাম না। আর রিহি তো একবারও বললো না।”

নিহিলা রিহির দিকে তাকালো। রিহি প্রথমেই রিনা আহমেদের সাথে কোনোমতে কুশলাদি শেষ করে ব্যালকনিতে চলে গিয়েছে। হবু বরের সাথে কথা হচ্ছে বোধহয়।

“লজ্জা পেয়ে বলেনি। রিহি কাল বলবে তোমাকে। আমি বলছি তো। তুমি এসো। মা-বড়ো চাচীও কল দিবে তোমাকে কাল।”

“আর ভাইজান? সে তো মেনে নিবে না।”

“তুমি সরাসরি এসে রাগ ভাঙিয়েছো? কল করলে এড়িয়ে যাওয়া যায় কিন্তু সরাসরি নিজের র’ক্ত’কে এতবছরেও এড়িয়ে যাবে না।”

“ঠিকাছে। আমরা আসবো। ভাইজান ফিরিয়ে দিবে না তো?

“আমি চিনি বড়ো বাবাকে। আর তুমি আমার চেয়ে বেশি চিনবে। এখন উনার মন অনেক নরম হয়ে গিয়েছে। আর বড়ো বাবাই তোমাকে দাওয়াত করেছে।”

“সত্যি?ভাইজান বলেছে?” রিনা আহমেদের কণ্ঠ উৎফুল্ল শোনালো। তা বুঝতে পেরে নিহিলা হেসে ‘হ্যাঁ’ জানালো।

রিনা আহমেদ কী বুঝে নিহিলার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
“নিহিলা মা? তোর মন ভালো তো?”
রাহান মাত্রই মায়ের সাথে কথা বলতে রুমে ঢুকতে নিচ্ছিলো কিন্তু মায়ের কথাটা শুনে দরজার এখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো।

নিহিলা থমকালো। সে তো উপরে যথেষ্ট ভালো আছে তবে কণ্ঠস্বরে কী কিছু বোঝা যাচ্ছে! নিহিলা নিজেকে শান্ত করলো,
“কেন মনে হচ্ছে ফুপি?”

“না, কেমন শান্ত শান্ত কণ্ঠস্বর।”
নিহিলা হাসার চেষ্টা করলো।
“এমনি মনে হচ্ছে ফুপি। রিহির বিয়ে হয়ে যাবে না? একটু মন খারাপ। তুমি এসো কিন্তু। রাখছি আমি। পরে আবার কথা হবে ফুপি। আসসালামু আলাইকুম।” বলেই নিহিলা রিনা আহমেদ কিছু বলার পূর্বেই তাড়াহুড়ো করে কল কেটে দিল।

রাহান রিনা আহমেদ না দেখে মতো আগের ন্যায় দরজা আস্তে করে লক করে পিছু ফিরে আসলো। মন থেকে সে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারছে না।

#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here