#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_১৯
#Jannatul_Ferdos
উৎস সকালে উঠে নিরুপমাকে খুঁজে কিন্তু পায় না।কার রাতে ও নিরুপমাকে দেখে নি সে।খুঁজে ও নাই।সত্যি বলতে তার খোঁজার ইচ্ছা ছিল না।কিন্তু সকালে ও তাকে দেখছে না ব্যাপারটা কেমন জানি লাগছে।সে উঠার পর বালিশের নিচে একটা চিঠি দেখতে পায়।নিরুপমা লিখেছে।সে চিঠিটা উল্টে পাল্টে দেখতে লাগল।বেশ অবাক হলো চিঠিটা দেখে তারপর খুলে পড়া শুরু করলো।
প্রিয় উৎস,
আপনার মতো কাপুরষকে প্রিয় বলে ডাকা যায় না।কিন্তু কি করবো আপনি আমার প্রিয়ই তাই না?আমি আপনার জীবন থেকে সরে এসেছি উৎস।হুম হয়তো এইটা ভাবছেন ঝামেলা হলো কাল আর আমি আজ এসেছি?কালই চলে আসতাম কিন্তু আম্মু বা প্রেমা কেউই তখন আমার সঙ্গ ছাড়ে নি।যে বাড়িতে আমার আত্মসম্মান নেই সেই বাড়িতে থাকার কোনো মানেই হয় না।তবে হ্যা মুসকানকে ছাড়া আমার থাকতে খুব কষ্ট হবে।আজ যদি আমি ওর গর্ভধারিণী হতাম ওকে আপনার মতো অমানুষ, কাপুরুষের কাছে রেখে আসতাম না।আপনার ওর বাবা হওয়ার ও যোগ্যতা নেই।মেয়েকে সঠিক শিক্ষা দিবেন।আর একটা কথা বলি অরিত্রা আপু বেঁচে নেই তার স্মৃতি কিন্তু মুসকানই?তাকে আগলে রাখার দায়িত্ব আপনার।মিসেস ডালিয়ার কাছে তাকে দিবেন না।আমি ভালো না জানি কিন্তু কাউকে এতোটাও বিশ্বাস করবেন না যাতে হিতে বিপরীত হয়।ভালো রাখবেন মুসকানের যত্ন নিবেন।ওর প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো কই থাকে সব প্রেমা জানে ওর থেকে জেনে নিবেন। আমি আপনাকে ক্ষমা ও করতে পারব না ঘৃনা ও করতে পারব না।আর হ্যা আমাকেই খোঁজার চেষ্টা করবেন না।যদিও বা আমি জানি আপনি খুঁজবেন না।আল্লাহ হাফেজ।
চিঠিটা পড়ে উৎস কিছুক্ষণ ঝিম মেরর বসে থাকল।তার কি করা উচিত ভেবে পেল না।আবার মন বলল হয়তো ভালোই হয়েছে সে চলে গেছে অরিত্রার জায়গা কেউ নিতে পারবে না।সে চিঠির বিষয়ে কোনো হেলদুল করলো না।কেমন জানি কিছুই হই নি।কিন্তু তাও কেমন জানি লাগছে তার।সব চিন্তা বাদ দিয়ে সে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়।সবাইকে দেখে স্বাভাবিক লাগছে হয়তো কেউ কিছু জানেই না।তবে কেউ উৎসের সাথে কথা বলল না।নিজের মতো খেতে লাগল।জুস টুকু শেষ করে মিসেস ডালিয়া বললেন-“তা মেয়েটাকে কবে ডিভোর্স দিচ্ছো বাবাজি?
উৎস পানি পান করছিল।এমন কথায় বিষম খায় সে।কাশতে শুরু করে।প্রবীর খান,তনিমা বেগম,প্রেমা অবাক দৃষ্টিতে মিসেস ডালিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।উৎসের দিকে তাদের কোনো ফোকাস নাই।
“আপনি এটা কি বলছেন মিসেস ডালিয়া?…প্রবীর খান বেশ রাগি কণ্ঠে বলল
” আমার আর উৎসের কথা হয়েছে।ওইযে মেয়েটা কি যেন নিরুকমা না নিরুপমা কি জানি ও মেয়েটাকে ডিভোর্স দেবে।
“উৎস তিনি এসব কি বলছেন?
” বাবা আমি তো
“চুপ একদম কথা বলবে না বেয়াদব ছেলে।উছন্নে চলে গিয়েছো তুমি।আর আপনাকে বলি আপনার কিভাবে সাহস হয় আমার বাড়িতে বসে আমার সামনে আমার বউমাকে ডিভোর্স এর কথা বলেন।
” বাবা বিশ্বাস করো আমি দিতে চাই নি।
“তুমি চুপ থাকো।কালকে তোমার করা প্রতিটা কাজের কথা আমি শুনেছি। তা ও নিজেকে শান্ত রেখে তোমার সামনে বসে খাচ্ছি।তুমি ভেবে না তোমার সব অন্যায় আমি মুখ বুজে সহ্য করবো৷ আর মিসেস ডালিয়া আপনাকে বলি মুসকানের প্রতি এতো ভালোবাসা কই ছিল এতোদিন এই ১০ মাস কোথায় ছিলেন?আমার ছেলেকে দুটো বিয়ে কেন হাজারটা বিয়ে করাবো আপনার সমস্যা কোথায়?আপনার মেয়ে তো আর বেঁচে নেই।তাহলে আমার ছেলের জীবনে কেন নাক গলাতে আসেন হুম???আজকের পর থেকে আপনার মুখটা ও আমি দেখতে চাই না।নাস্তা শেষ করে আসতে পারেন।বাই দ্যা ওয়ে নিরু কোথায়?
” তাই তো ভাবিকে তো সেই সকাল থেকে দেখতে পাচ্ছি না..প্রেমা বলল
“ও চলে গেছে….,মাথা নিচু করে উৎস বলল
” চলে গেছে মানে কই চলে গেছে?…তনিমা বেগন আৎকে উঠলেন কথাটি শুনে
“জানি না আমাকে একটা চিঠি লিখে জানিয়েছে সে চলে গেছে আর ফিরবে না
” বেয়াদব ছেলে তোর জন্য আমার বাড়ির বউ বাড়ি থেকে চলে গেছে।আমি যেন তোকে আমার সামনে না দেখি।যতদিন না নিরুকে তুই আমার সামনে হাজির করবি ততদিন আমাকে বাবা বলে ডাকবি না।তব শর্ত আছে আমার কোথায় নিরুকে এনে দিলে হবে না।তোর যেদিন মন চাইবে সত্যিই যে নিরুকে তোর দরকার তুই ওর শুন্যতা বুঝতে পারবি সেইদিন ভালোবেসে তাকে এই বাড়িতে আনবি।তুই ভাবিস না তাকে এনে দিয়ে বলবি যে বাবা আমি তাকে ভালোবেসেই এনেছি আর আমি বিশ্বাস করবো এমন বাপ আমি তোর না৷ তোর বাবা আমি তোর প্রতিটি শিরা-উপশিরা আমার চেনা।আর আপনাকে আমি দেখে নিব মিসেস ডালিয়া।
প্রবীর খান খাবারের প্লেট ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে আসলেন।
“খুব বড় ভুল করলি ভাইয়া একদিন পস্তাবি
” তোকে আমার ছেলে ভাবতে ও লজ্জা করে।
মা মেয়ে দুজনই উঠে চলে গেল।সবাই এর মুখে কষ্ট বিরক্ত বিষাদের ছাপ থাকলে ও মিসেস ডালিয়ার মুখে ছিল প্রফুল্ল হাসি।সে এটাই চেয়েছিল আর সফল ও হতে পেরেছে।নিরুপমা যা আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মেয়ে সে আর এই বাড়িতে আসবে না তা তিনি ভালো করেই জানেন।
উৎসর আর কিছু খাওয়া হলো না।সে উঠে অফিসে চলে যায়।
কোনো কাজে মন বসাতে পারছে না উৎস।চারিদিক থেকে সব ভাবনা উপচে পড়ছে।কি করবে না করবে সে বুঝে উঠতে পারছে না।মুখে কলমের পিছন অংশ নিয়ে সে ভাবছে।এর মধ্যে উৎসের পিএ অর্ক আসে।
“স্যার আসবো?
” হু আসো
“স্যার এইযে ফাইল গুলো।লান্সের পর আমাদের একটা বিদেশি কম্পানির সাথে মিটিং আছে।
” আজই মিটিংটা এটেন্ড করতে হবে?
“জ্বী স্যার।তাছাড়া তারা আর সময় দিতে পারবে না।
“ঠিক আছে তুমি যাও।
এভাবেই বাড়ি অফিস মুসকান সব মিলিয়ে উৎসের দিন কাটছিল।কিন্তু কোথায় না কোথায় শুন্যতা অনুভব করছিল।খুব অসহ্য লাগত ওই মূহুর্ততাকে। কি যেন মিসিং এমন মনে হয় উৎসের।এইতো ২ দিন আগের কথা অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল সে।টাই বাঁধতে বাঁধতে হঠাৎ সে নিরুপমাকে ডেকে বসে ঘড়ি এনে দেওয়ার জন্য।পরোক্ষনে মনে পড়ে নিরুপমা নেই আজ ১ মাস।মুসকানের ও খাওয়া পড়ে গেছে।কিছু খেতে চায় না সে।প্রেমার কাছে ও থাকতে চায় না।মা ছাড়া কিভাবে থাকে একটা বাচ্চা???
ভাবতে ভাবতেই চোখ পড়ে গিটারটার দিকে।কত সুন্দর গান করতো নিরুপমা। সে গিটার নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দোলনার উপরে বসে গিটার নিয়ে গান করতে থাকে…..
আকাশেও অল্প নীল
ভুল হতো অন্তমিল
একা একা রং-মিছিল, ছিলে না যখন
মুঠো ভরা মিথ্যেফোন
ফিরে আসা ডাকপিয়ন
মিছি মিছি মন কেমন, ছিলে না যখন
ভালোবাসা দিন কত টা রঙ্গিন
তা বুঝেছি তখন
আকাশেও অল্প নীল
ভুল হতো অন্তমিল
একা একা রং-মিছিল, ছিলে না যখন
মুঠো ভরা মিথ্যেফোন
ফিরে আসা ডাকপিয়ন
মিছি মিছি মন কেমন, ছিলে না যখন
ভালোবাসা দিন কত টা রঙ্গিন
তা বুঝেছি তখন
সারাদিন ঠিকানাহীন
ঘুরে ফিরি কে বেদুইন
লুকিয়ে ডানার ক্ষত
তুমি নেই তা ভাবলেই
ব্যথা এসে দাঁড়াবেই
উঁচু মিনারের মতো
শুকনো পাতা কাঁপত একা ডালে
গন্ধ খুঁজে ডুবেছি রুমালে
শুকনো পাতা কাঁপত একা ডালে
গন্ধ…
চলবে!!!!
দুঃখিত কাল গল্প দিতে না পাররা জন্য ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে সময় কাটছিল।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।
নাইস নেক্সট দিবেন না।আমি আপনিতেই নেক্সট দিব।