#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_২১
#Jannatul_Ferdos
“তুমি যতো যাই বলো নিশান আমি কাউকে না জানিয়ে তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না
” কিন্তু প্রেমা তুমি কেন বুঝছো না আমি তোমাকে হারানোর ভয় করি অনেক
“কিন্তু নিশান এখন তো আর আমাকে বিয়ে দিচ্ছে না।আর তো মাত্র ২ টা বছর তারপরই তুমি একটা ভালো জব পেয়ে যাবে তখন আমরা পারিবারিক ভাবেই বিয়ে করতে পারব।
” আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলব নাতো প্রেমা?
“না রে পাগল হারিয়ে ফেলবে কেন?
” খুব ভালোবাসি
“ভালোবাসি…
এতোক্ষণ কথা হচ্ছিল প্রেমা আর তার ভালোবাসার মানুষ নিশানের সাথে।ওদের ৪ বছরের সম্পর্ক। নিশানের মনে সর্বদা ভয় থাকে হয়তো সে প্রেমাকে হারিয়ে ফেলবে এজন্য গোপনে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়।ফোনে কথা বলতে বলতেই মুসকান কেঁদে উঠে। মেয়েটার দুইদিন ধোরে জ্বর। বাচ্চাদের প্রথম দাঁত উঠার সময় নাকি বিভিন্ন অসুস্থতা দেখা দেয়। মুসকানের একটা দাঁতের কিছুটা উঠেছে আরেকটা উঠতেছে।প্রেমা হাঁপিয়ে উঠেছে।সে মুসকানকে কিছুতেই সামলাতে পারছে না।
” নিশান আমি পড়ে কথা বলব মুসু কান্না করছে
“আচ্ছা সমস্যা নেই। ভাবি যে কই গেল।খোঁজ পাও নি এখনো?
প্রেমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ” না।
প্রেমা মুসকানকে নিয়ে সারা বাড়ি হাটতে থাকে। সেই কখন থেকে মুসকানকে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে পারছে না।উৎস কয়েকবার প্রেমার থেকে নিতে গিয়েছিল কিন্তু মুসু যায় নি।তাই উৎস দূর থেকেই পর্যবেক্ষণ করতেছিল। বার বার নিরুপমার কথা মনে পড়ছে তার।বিরহ আগুনে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে তার অন্তর।
“ভাইয়া আমি আর পারছি না রে।তোর মেয়েটাকে নিয়ে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। না জানি ভাবি কিভাবে সব সামলাইতো।
এই কয়টা দিনেই হাঁপিয়ে উঠেছে প্রেমা অথচ নিরুপমা কতোগুলো রাত ঘুমায় নাই। কতোগুলো দিন খায় নাই।মুসকানকে নিয়েই এভাবে ঘুরে বেড়াতো। আজ প্রেমা অভিযোগ করলো অথচ কই নিরুপমাতো কখনো অভিযোগ করে নি।তাকে কখনো বিরক্ত হতে দেখা যায় নি। যেখানে মুসকান তার নিজের মেয়ে না।উৎসের এই বিষাদ কবে মিটবে সে জানে না।হুট করেই মাথায় আসে তার নিরুপমা আর যায় হোক ভার্সিটির ক্লাস মিস দেবে না যদিও সে মাবিহার কাছে বহুবার খবর নিয়েছে তবু সে এবার ভার্সিটিতে যাবে।উৎস রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা হয়।ভার্সিটিতে পৌছাতেই বুকের মধ্যে ধুক ধুক করছে।নিরুপমাকে হয়তো পাবে সেই উত্তেজনা থেকে এমন হচ্ছে নাকি নিরুপমা তার খুব কাছে আছে সেই অনুভূতি থেকে এমন হচ্ছে তার সে বুঝতে পারছে না।সে নিরুপমার ডিপার্টমেন্ট হেড রিমন চৌধুরির কাছে যায়।রিমন চৌধুরির সাথে উৎসের আগে থেকে ভালো সম্পর্ক ছিল দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলা যায় তাকে।তিনি উৎসকে নিয়ে নিরুপমার ক্লাসে যায়।উৎস চোখ বুলিয়ে নেয় কিন্তু কোথাও নিরুপমাকে দেখতে পায় না।বোরকা পড়া হলে ও সে নিরুপমার চোখ দেখলেই চিনত কিন্তু এখানের কেউই নিরুপমা না।উৎস হৃদ স্পন্দন দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে।কষ্টে কথা গুলো ও কেমন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।তবু ও সে হাল ছাড়বে না। নিরুপমা হয়তো অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে।সে ভার্সিটির মেইন গেটে অপেক্ষা করে।নিরুপমার কবে কোন ক্লাস কয়টা পর্যন্ত সব উৎসের জানা আছে।গেট দিয়ে অনেক মেয়েই বের হয় কিন্তু নিরুপমার দেখা মিলে না।অনেক বোরকা পড়া মেয়ে ও আসে কারোর চোখ খোলা কারো বা ঢাকা।নিরুপমা চোখ বের করেই বোরকা পড়তো। কিন্তু না নিরুপমার খোঁজ পেলে না।হতাশা হয়ে ফিরে আসে।কই যাবে কি করবে বুঝতে পারছে না।কিন্তু নিরুপমাকে তার দরকার।
ভার্সিটি থেকে ফিরেই বোরকা না খুলে নিরুপমা অঝোরে কান্না করতে লাগল।দিলরুবা চৌধুরি ও তার মেয়ে রুবায়েত কান্নার আওয়াজ পেয়ে ছুটে আসে।
“নিরু মা কাঁদছিস কেন?
নিরুপমা দিলরুবাকে জড়িয়ে ধোরে কাঁদতে থাকল।
” ভাবি কাঁদছো কেন?
“আমি বলেছিলাম না উৎস আমাকে খুঁজে?ও আমাকে সত্যি খুঁজে রুবায়েত।জানো আজ ও ভার্সিটিতে এসেছিল আমার খোঁজে।আমি তো পুরো চোখ দেখে বোরকা পড়ি।আমাকে কখনো দেখলে যেন চিনতে না পারে সেজন্য।আমি জানি ও আমার চোখ দেখলেই চিনি ফেলবে।জানো ফুফু ও একদিন বলেছিল আমার চোখ গুলো নাকি খুব সুন্দর যদি আমি বোরকা ও পড়ে থাকি আমার চোখ দেখলেই নাকি চিনে ফেলবে।ও আজ এসেছিল ফুফু।আমাকে খুঁজে পায় নাই।ওর দিকে তাকানো যাচ্ছে না গো।মানুষটা বোধ হয় ভালো নেই।
নিরুপমার কান্নার বেগ আরো বাড়ে।দিলরুবা তাকে সান্ত্বনা দেয়।
” ভাবি তাহলে সব ভুলে ফিরে যাও
“না…..নিরুপমা দৃঢ়তা রেখে বলে
” নিজে ও কষ্ট পাচ্ছো তাকে ও কষ্ট দিচ্ছো তাহলে ফিরবা না কেন?
“আমি যে ওকে আমার বিরহের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাড়খার করে দিতে চাই রুবায়েত।ও আমার সাথে অনেক বেশি অন্যায় করেছে অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছে।অপমান করেছে।আমাকে মেরেছে পর্যন্ত আমি কিছুতেই ওকে এতো সহজে ক্ষমা করবো না।পারলে খুঁজে বের করুক।শুন্যতা ভোগ করুক আমার।
” কিন্তু মুসকান?
“ওর চিন্তা যে করতে হবে না তা তো জানো আর কেন হবে না তা ও তো জানো তাই না?
” হুম
“আচ্ছা নিরু আর কাঁদিস না।উঠে পর।বোরকা খুলে ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার দিচ্ছি।রুবায়েত তুই ওকে নিয়ে আয়
” আচ্ছা।
উৎসকে খুব নিস্তেজ লাগছে।এই ২ মাস বাসার কেউই তেমন তার সাথে কথা বলে নি।কিন্তু উৎসের এমন অবস্থা দেখে তনিমা বেগমের খুব খারাপ লাগছে। ছেলের এক বিরহ কাটতে না কাটতেই আরেক বিরহ এসে হাজির।কিন্তু এই বিরহ তো সে নিজেই এনেছে।উৎস পা ঝুলিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ছিল হয়তো কিছু ভাবছে তনিমা বেগম তখন পাশে এসে বসলেন।ছেলের মাথায় আলতো করে হাত বুলালেন।উৎস তনিমা বেগমকে দেখে একটা ফিকে হাসি দিল। তিনি ও একটু হাসলেন..
“মন খারাপ বাবাই?
” না আম্মু তেমন কিছু না
“কার কাছে লুকাচ্ছিস মায়ের কাছে?
উৎস কিছু না বলে তনিমা বেগমের কোলে মুখ গুজে জড়িয়ে ধোরে রাখলো।তিনি ও পরম আদরে ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।উৎস মাথা তুলে তনিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল…
” আমি কি নিরুপমাকে হারিয়ে ফেললাম মা???
চলবে!!