#কাঁটায়_লেখা_ভাগ্য
পর্ব—০২
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
আম্মার কথা শোনার পরে যেনো আকাশ থেকে পড়লাম আমি।পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে যেতে লাগলো,এটা কি শুনছি আমি নিজের মায়ের মুখ থেকে!
—কি হলো এতো চিন্তা করছিস কেনো?আসিফ শেখরে আমি তালাক দিছি।ও আর তোর আব্বা নেই না আমার স্বামী।এইবার তোগো বিয়া আর কেউ আটকাইতে পারবে না!
—আম্মা…ও আম্মা এইডা কি কইতেছো তুমি,তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?আমি ঐ লোকটারে বিয়ে করতে পারমু না!
—আমার ম রা মুখটা দেখতে পারবি তো,আর শুধু যে আমি মরমু এমন তো না,তোরেও ম*রতে হবে এইবার আসিফ শেখের হাতে।
—আম্মা চলো না আমরা দুজন পালিয়ে যাই!তাইলে আর কেউ খুঁজে পাবে না আমাগো,
আমার কথা শোনামাত্রই আম্মা আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দিলো।তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো।
—মারে কোথায় পালামু আমরা…আমাগো পালানোর কোনো জায়গা আছে।ও ঠিক খুঁইজে বের করবে আমাদের।তুই বরং বিয়েটা করে নে,ও একটু আগে তালাক দিছে আমারে।
—না জায়েজ কথা কেন কইতেছো আম্মা?মা আর বেটি একজনের সাথে সংসার করে কেমনে?আমাদের যে জাহান্নামেও ঠাই হবে না।
আম্মা আমার কথা শুনে চুপ হয়ে রইলো,তার চোখের পানি এখনও শুকোয়নি।একটু পরে আসিফ শেখের লোকজন আমাদের দু’জনকে ঘিরে ফেলে,আমারে আর আমার আম্মারে জোর করে ধরে বেঁধে বাড়িতে নিয়ে যায়।বাড়ির ভেতরে ঢুকে চোখ ছানাবড়া আমার।
এ তো পুরোপুরি বিয়ের আয়োজন করে ফেলেছে,এটা দেখে আমার ভয়ের মাত্রা আরোও বেশী বাড়তে লাগলো।আজ বোধহয় আর কেউ রক্ষা করতে পারলো না আমায়।এই জঘন্য মানুষটাকে বিয়ে করার থেকে ম*রে যাওয়া অনেক ভালো আমার জন্য,কিকরে নিজেকে এই বাজে পরিস্থিতি থেকে বের করবো এই চিন্তা করতে লাগলাম।
আম্মা দৌড়ে গিয়ে আসিফ শেখের পায়ে পড়লো,তারপর মিনতি করে বলতে লাগলো।
—পায়ে পড়ি তোমার আমি,আমার মাইয়াডার এতো বড়ো সর্বনাশ কইরো না।
—ঐ একদম চুপ থাক কইয়া দিলাম,আর একটা কথা কইলে মা বেটি দুইটারেই শেষ করে ফেলমু!
—হ তাই করো,মেরেই ফেলো আমাগো।আমরা এমনিতেও বাঁচতে চাই না,এই জীবনের থেকে ম*রে যাওয়া অনেক বেশী ভালো,
—তোর মেয়েরে তো মা*রমু না আমি,মা*রমু শুধু তোরে…দেখ ম*রণ যন্ত্রণা কাকে বলে।
এই বলে আসিফ শেখ আমার মায়েরে একটা গাঁছের সাথে বেঁধে ফেললো,আমি চিৎকার দিয়ে ছুটে যাই তার দিকে।অমনি সে ধরে ফেললো আমায়,তারপর বলতে লাগলো।
—যদি নিজের মায়রে বাঁচাইতে চাস,বিয়ে কর আমার সাথে।নয়তো তোর মা কিন্তু বাঁচবো না।
—না,তুমি আমার মায়েরে কিছু করবা না।মায়ের কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারমু না,
—ঠিক আছে।তোর মায়েরে কিছু করমু না আমার।একবার এই বিয়েতে রাজি হইয়া যা, আর কিছু লাগবো না।
অবশেষে আমায় একপ্রকার বাধ্য করা হলো,আমি কখনোই চাইনি আসিফ শেখরে বিয়ে করতে।কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য কিছুতেই পিছু ছাড়ছিলো না আমার।শেষ পর্যন্ত আসিফ শেখের সাথে বিয়ে হয় আমার।
দিনটা ছিলো শুক্রবার।দেশের পরিস্থিতি তখন ভালো নয় একেবারেই,যখন তখন পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধের দামামা বেঁধে যেতে পারে।এমন এক সন্ধ্যাবেলা আসিফ শেখকে কবুল করে নিজের স্বামী হিসেবে স্বীকার করে নিলাম আমি।আমার বাসর ঘরের সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়।
–
–
–
রাতের বেলা আমি বৌ সেজে বাসর ঘরে বসে আছি।আমার সামনে পালানোর অগণিত পথ খোলা ।কিন্তু মনস্থির করে নিয়েছি আমি পালাবো না।আমিও দেখতে চাই এই আসিফ শেখ আর কি কি করতে পারে আমার সাথে।তাছাড়া আমি পালিয়ে গেলে সেই দায় শেষপর্রন্ত আম্মার ওপরে বর্তাবে।তখন ওরা আম্মার সাথে নিশ্চয়ই ভালো ব্যবহার করবে না।
অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে যায়,কিন্তু আসিফ শেখের কোনো দেখা নেই।বিয়েতে যতো লোকজন এসেছিলো সবাই যে যার বাড়িতে চলে গিয়েছে।এদিকে আম্মারও কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না।বুকটা এক অজানা ভয়ের আশঙ্কায় কেঁপে উঠলো।ওরা কোনো ক্ষতি করে ফেললো না তো আমার মায়ের।এই ভেবে আমি বাসর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।তারপর চারপাশটা ভালো করে খুঁজতে থাকি।আম্মাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না,আমার মনের ভয়ের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে লাগলো।পাগলের মতো তাকে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলাম।হঠাৎ আমার কানে একটা অদ্ভুত শব্দ এসে ঠেকলো।শব্দের উৎসের অনুসন্ধান করতে থাকি,শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম শব্দটা আমাদের বাড়ির পেছন থেকে আসছে,কারো গোঙানির শব্দ মনে হচ্ছে।পা টিপে টিপে পেছনের দিকে এগিয়ে গেলাম।বাড়ির পেছনে আসতেই যে দৃশ্য দেখতে পেলাম গা হাত পা রীতিমত ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো আমার।নিজের চোখে যা দেখছি সত্যি তো,নাকি কোনো স্বপ্ন?
আম্মা আসিফ শেখের গলাটা চেপে ধরে আছে,আর তাকে শাসিয়ে শাসিয়ে বলছে।
—কেনো যেতে পারবি না আমার মেয়ের সাথে ফুলসজ্জা করতে।তোকে কি বলেছিলাম আমি ভুলে গেছিস…
—হ মনে আছে,সব মনে আছে আমার!
—শুনে রাখ আজকের এই দিনটা দেখার জন্য শুধু আমি মিথ্যা বিয়া করছিলাম তোরে,তোর সাথে আমার বিয়ে হইছিলো ঠিকই কিন্তু এই দশটা বছর তোরে নিজের কাছে আসতে দেই নি।কেনো দেইনি,শুধুমাত্র আজকের এই দিনটার জন্যে…
মান্নাতের বাপরে যেভাবে নিজের হাতে শেষ করছি,মনে রাখিস আমার কথা না শুনলে তোর সাথেও একই ঘটনা ঘটবে….
চলবে…..