#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-৩৩(শেষাংশ)
বাড়ি ফেরার আগে শেষদিনে খুব ঘুরে বেড়ালেন আজ সকলে৷ ইরশাদ অফিসে তাই তাকে ছাড়াই ঘুরে বেড়ানো হলো তবে আজকের বেড়ানোটা শুধু আশপাশের কিছু সুন্দর জায়গা দর্শন হয়েছে। পরেরবার সকলে প্ল্যান করে সিলেটের সুন্দর সকল এলাকা ঘুরবে এসে এমনটাই সিদ্ধান্ত হলো। রাতে যাওয়া হবে বলে ইরিন আর রোকসানা মিলে সন্ধ্যার রান্না করলেন৷ কাল থেকে এ সংসার হবে মৈত্রীর একার এ নিয়ে দুজনেরই চি-ন্তা-র শেষ নেই। রান্নাবান্না নিয়ে ইরিন নিশ্চিন্ত সে জানে ইরশাদ নিজেই এদিকটা পাকা হাতে সামলে নেবে হয়তো তার স্ত্রীকে শিখিয়ে পরিয়ে নেবে। কিন্তু বাড়ির অন্যান্য কাজগুলো যখন ইরশাদের অনুপস্থিতিতে করবে আর বাড়িটাতে সে থাকবে একা এখানেই যত দু-শ্চি-ন্তা।
ইরশাদ কেয়ারটেকার সাহেবের স্ত্রীর সাথে কথা বলে দিনের বেলা কাজের জন্য একজন লোক ঠিক করে দিতে বলেছিলেন। ইরশাদ ভোলোনি সামনেই মৈত্রীর পরীক্ষা তাই সে ঘরদোর এর কোন কাজ করতে পারবে না৷ হামিদুর জানিয়েছেন তার প্রতিবেশী একজন গরীব মহিলা আছেন যার কাজ প্রয়োজন। মহিলা মধ্যবয়স্ক তবে কাজে বেশ ভালো এবং বিশ্বস্ত বললে সে সারাদিন এখানেই থাকবে৷ এমনই কাউকে প্রয়োজন মৈত্রীর পাশে। দিনভর একা থাকবে এই বাড়িটিতে সেটাই ইরশাদের মূল চি-ন্তা ছিল৷ রোকসানা বলেছিল মৈত্রীকে আদা-রসুন বাটা, ধনে, জিরা বিভিন্ন মশলা সব কিছুর পেস্ট করে দিয়ে যাবেন আর তাই সন্ধ্যায় লিস্ট দিয়ে ময়ূখ আর কেয়াররেকার কে দিয়ে সব বাজার করালেন। রাতের রান্না বসিয়ে শেলি আর ইরিন মিলে সব কে-টে, বেছে গুছিয়ে দিলে খাওয়ার পর সব ব্লেন্ড করতে করতে মৈত্রীকেও সব শিখিয়ে দিলেন৷ বিয়ের সময় বা তার পর মৈত্রী বাবার বাড়ি কিংবা পরিবারের জন্য হয়ত এতোটাও ক-ষ্ট হয়নি যতোটা আজ হচ্ছে৷ সে চুপচাপ মামনিকে দেখতে থাকলো সারাটা সন্ধ্যা। তাদের যখন যাওয়ার সময় হলো ঠিক তখনই মৈত্রী অকস্মাৎ মামনির বুকে জাপটে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো৷ মা কি এমনই হয়! নিঃশব্দে কা-ন্না করা মেয়েটা আজকাল এত কাঁ-দতে জানে! মুজিবসহ বাকিরা সকলেই চুপচাপ সেই কান্নার দৃশ্য দেখলো৷ ময়ূখও দেখল দূর থেকে আর তখনই সে টের পেল এই মেয়েটাকে সে কখনো ভুলতেই পারবে না। এই যে এখন বুকের পাঁজরে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে তা ওই চোখের গড়িয়ে পড়া জলের জন্যই তো! ময়ূখ মনে মনে যখন এ কথা ভাবল ঠিক তখনই চোখে পড়লো মৈত্রীর একটু পেছনেই দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন পুরুষটিকে৷ বি-ষা-দের জল লুকাতেই দু চোখ বুঁজে নিয়েছে ময়ূখ৷ ওই পুরুষটা তার ভাই তার একমাত্র ভাই যে কিনা তাকে সেই ছোট্ট বেলা থেকে আদরে, আবেশে বড় করেছে৷ তার পাঁজর ভা-ঙা ব্যথা যে মেয়েটির জন্য সেই মেয়েটিই তারই ভাইয়ের শরিক- ই – হায়াত, শরিয়ত মেনে বিয়ে করা বউ। জীবনের প্রতিটি স্তরে কিছু না কিছু কাঁকর বিছানো থাকে কিন্তু এমন ধা-রা-লো কেন সেই কাঁকর! তার যে পথ চলা বড় য-ন্ত্র-ণা-দা-য়-ক হয়ে উঠছে। ময়ূখ ব্যাগপত্র গাড়িতে তোলার বাহানায় আগেই বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। এখানে থাকলে মৈত্রীর অশ্রুভেজা নয়ন তাকে এলোমেলো করে দেবে। কতোটা সামলে রাখার চেষ্টা সে চালায় রোজ তার মনের ওপর এ খবর কারো জানা নেই। নোরাকে সে নিজের বলে ভাবার চেষ্টায় কত যে ডুবতে চেয়েছে, কখনো শরীরি ভাষায় কখনো কল্পনায় কিন্তু সব ছাপিয়ে মন যে তার এখনো ওই উদাসী মেয়েটাকেই খোঁজে।
মৈত্রীকে থামিয়ে অনেক বুঝিয়ে সকলে গাড়িতে গিয়ে উঠলো। গাড়িটা কাঁচা মাটির পথ ছাড়তেই ইরশাদ মৈত্রীর হাত ধরে তাকে বাড়ি নিয়ে এলো। একটু আগ পর্যন্তও হৈচৈ- এ সরগরম থাকা বাড়িটাতে ঝুপ করেই একরাশ নীরবতা নেমে এল। ইরশাদ বাড়ির গেইটটা লাগিয়ে দিয়ে দোলনার দিকে এগিয়ে গেল। যেতে যেতে মৈত্রীকে বলল, “এক মগ কফি নিয়ে এসো তো!”
মৈত্রী ঘরের দিকেই যাচ্ছিল। ইরশাদের হঠাৎ এমন আবদারে সে একটু অবাকই হলো। বিয়ের প্রায় মাস হতে চলল এই প্রথম ইরশাদ তাকে কোন কাজের কথা বলল৷ মৈত্রী ঘরে ঢুকে দ্রুত পানি চুলায় বসিয়ে বসার ঘরে গেল। ইরশাদের ফোনটা বাজছে কানে আসছে। ফোন হাতে মৈত্রী শ্বশুরের নম্বর দেখে নিজেই রিসিভ করলো। তিনি জানালেন ইরিনের কানের একটি দুল হারিয়েছে বাড়িতে যেন একটু খুঁজে দেখে৷ মৈত্রী ফোন ছাড়তেই রান্নাঘরে ঢুকে কফি তৈরি করে ফোন আর মগটা নিয়ে বাইরে গেল। শীত শেষের দিকে বলে ইরশাদ ভেবেছিল এখন অতোটা তীব্রতা থাকবে না। কিন্তু এখন এ ক্ষণে দোলনায় বসার পর থেকেই তার মনে হচ্ছে শীতটা এখন জাঁকিয়ে পড়েছে। মৈত্রী সামনে এসে কফি মগ আর ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “আম্মুর কানের দুল হারিয়েছে আব্বু ফোন করেছিলেন।”
“ওহ!” বলেই ইরশাদ ফোন নিয়ে পকেটে রাখলো তারপরই মগ হাতে মৈত্রীকে একটানে নিজের পাশে দোলনায় বসিয়ে দিল। হুট করে টেনে ধরায় দোলনাটা দুলে উঠেছে, কফি ছলকে কিছুটা পড়েছে ইরশাদেরই ডান হাতের কব্জিতে৷ সে আহ্ বলে আর্তনাদ করলেও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মৈত্রীর হাত চে-পে রাখলো।
“আপনার হাতে কফি..”
“কিচ্ছু হয়নি।”
“ফোসকা পড়ে যাবে আসুন পানি..”
“বললাম তো কিছু হয়নি। কথা আছে তোমার সাথে। আশা করি আগে সবটা শুনবে তারপর রিয়াক্ট করবে।”
বাগান এবং বাড়ির চারপাশ জুড়েই নিয়ন বাতি অনেকটা ঢাকার রাজপথের মতোই। তবে এখানে অসংখ্য গাছের পাতায়, ডালে কুয়াশার জমাটবাঁধা আস্তরণ ভেদ করে সে আলো বড্ড ফিকে। মৈত্রী পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালো ইরশাদের মুখের দিকে। এই মানুষটার চোখে কাঠিন্যতা, চোয়ালের পেশী শক্ত হয়ে কেমন তার চেনা ইরশাদকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। একটু বুঝি ভয়ও হলো মৈত্রীর৷ অবচেতন মন বলল, তার করা অবহেলার জন্যই কি মানুষটা এখন এই ফাঁকা বাড়িতে তাকে শা-স্তি দেবে! কিন্তু না তাকে অবাক করে দিয়ে তাকে চমকে দিয়ে ইরশাদ কথা বলা শুরু করল, “তুমি আজ পাঁচটা দিন হয় আমাকে ইগনোর করছো। যে তুমি আমাকে এক পলক দেখার জন্য মধ্যরাতেও বেলকোনিতে দৃষ্টি মেলতে সেই তুমি এক ঘরে থেকেও আমার দিকে ফিরে তাকাচ্ছো না। কারণটা কি আমি প্রশ্ন করব না আমি নিজেই এ ক’দিন অনেক ভেবে বুঝে গিয়েছি কারণটা সায়রা।
‘সায়রা’ ইরশাদের মুখে নামটা শুনতেই বুকের ভেতর ছু-রি-র আঘাত পরলো যেন। মৈত্রী বসে রইলো শ-ক্ত হয়ে। সে শুনতে চায় ইরশাদ ঠিক কি ভেবে নিয়েছে আর কি বলতে চায়! আবার মন স-ত-র্কও করছে, মানুষটা যদি বলে সত্যিই তার সায়রা ভাবীর সাথে কোন অবৈধ সম্পর্ক ছিল? ইরশাদ তো তাকে ভালোবাসে না বিয়েটা তো করেছিলো তারই স্টুপিড আচরণ আর কা-ন্না করা দেখে। মাঘের পাহাড়ি শীত আর রাতের আধার ইরশাদের ভেতরের জমিয়ে রাখা অতীতকে কাঠ কয়লার উষ্ণতা দিতেই আজ বেরিয়ে আসতে চাইছে ভেতর থেকে। হয়তো এটাই হবে উত্তম তার, তাদের এই নতুন জীবনে। এমনটা ভেবেই ইরশাদ বলতে থাকলো,
” তোমাকে আমি বলেছিলাম বলবো সায়রাকে নিয়ে কিন্তু সময় চাই আমার। আজ বুঝতে পারছি সময় আপনা থেকে আসে না নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়।” এতটুকু বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইরশাদ। মৈত্রীর বুক ধড়ফড় করছে এমন কিছু যেন না শুনতে হয় যা শোনার পর সে ইরশাদকে ঘৃণা করবে কিংবা সেই রূপসী নারীটিকে।
“সায়রা আর আমার পরিচয় কলেজ জীবন থেকে৷ কলেজের প্রথম সারির সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে বোধহয় সেই ছিল প্রথম। আর পড়াশোনায় ক্লাসের প্রথম ছেলেটি ছিলাম আমি৷ পড়াশোনার বাইরে কৈশোরের প্রথম প্রথম প্রেমানুভূতি আমার তাকে দেখেই হয়েছিল। কমবয়সী আমি তখন কলেজের সেরা সুন্দরী মেয়েটির প্রেমে পড়ে উ-ন্মা-দ হয়ে কত কি করে ঘুরতাম শুধু মাত্র মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই। একসময় আমার লেখালেখি কাজে এলো। তখনো আমার ঝুলিতে বাচ্চা বাচ্চা হাস্যরসাত্মক গল্প লেখা ছিল কিন্তু সায়রার দৃষ্টি কাড়তে প্রেমময় গল্পও লিখতে শুরু করি। বন্ধুরা সেসব মেয়েটির কাছেও পৌঁছে দেয়। এসবেই একটি বছর পেরিয়ে গেল। সায়রা প্রথম বর্ষে হায়ারম্যাথ খারাপ করলো। আমার সুযোগ বাড়লো যেচে তাকে নিজের মত ম্যাথ বোঝানোর নামে সময় কা-ট-তো আমাদের। কখন, কিভাবে জানি না সায়রাও আমাকে পছন্দ করতে শুরু করল। কলেজের ফাইনাল পরীক্ষার আগেই দুজনের প্রেম হয়ে গেল। তারপর ভার্সিটি এডমিশনের পড়া, এক্সাম সব হলো একসাথে ৷ সৌভাগ্যক্রমে একই ভার্সিটিতে দুজনেরই হয়ে গেল শুধু ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন। প্রেম থামলো না আমাদের ততদিনে আমার বাড়িতে সকলেই জেনে আমার প্রেমের খবর৷ কেউ কেউ প্রেমিকাকেও চিনলো কিন্তু বড় চাচু খুব সাবধান করতেন যেন এ সম্পর্ক গভীর না হয়। প্রেম কি কারো কথা শোনে! হয়ে গেল গভীর প্রেম, কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারবো না টাইপ প্রেম হয়ে গেল দুজনের।” এক নাগাড়ে বলে গেল ইরশাদ৷ মৈত্রী চুপচাপ শুনলেও তার শরীর কাঁপছিল ভ-য়ে, প্রেশার ফল-আপ করছিলো অতিরিক্ত টেনশনে ইরশাদ পাশে বসেও যেন তা টের পেল না৷ অথচ শীত বলে মৈত্রীর গায়ে শাল পেঁচানো ইরশাদ বসে আছে শুধুই শার্ট গায়ে।
“ইমরান ভাই আমার মেজো চাচার ছেলে। বয়সে বড় হলেও আমাদের সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুর মত ছিল৷ একই ভার্সিটিতে দুই বছরের সিনিয়র সে সকলেরই খুব পছন্দের। ইমরান আর আমি দুজনেই একই ক্যাটাগরির স্টুডেন্ট। কিন্তু চাল -চলন আর চঞ্চল স্বভাবের ইমরান ইউনিভার্সিটিতে ফেমাস একজন ছিল। ভার্সিটির অসংখ্য নারীর মনপুরুষও ছিল সে কিন্তু তার মনের রাজ্য তো চাইছিল সায়রাকে। বাঁধাহীন প্রেমের সময় আমাদের টানা সাড়ে চারবছর কে-টে যাওয়ার পর এক সন্ধ্যায় ইমরান ক্যাম্পাসে সব বন্ধুদের নিয়ে নিজের বার্থডে পালনের নামে আয়োজন করে ছোট্ট এক অনুষ্ঠানের। আমি তার ভাই সে হিসেবেই প্রত্যেকের আগে আমিই থাকি সে আয়োজনের মেহমান। ইমরান সিনিয়র তার বার্থডে তে তার বন্ধুরা আসা স্বাভাবিক, ভাই হিসেবে আমার উপস্থিতিও স্বাভাবিক কিন্তু অন্যদেরটা! তাই ইমরান আমাকে দিয়েই আমার বন্ধুদের দাওয়াত করায় এবং তাতে সায়রা, নিয়া, রাহী আরও কিছু মেয়ে বান্ধবীও থাকে। ভাইয়ের জন্মদিন চমৎকার আয়োজন তাতে গার্লফ্রেন্ড থাকবে এতে সব ছেলেরই আনন্দিত হবার কথা আমিও হয়ে ছিলাম। কিন্তু সেটাই ছিল আমার বিগত জীবনের শেষবারের আনন্দ। রাত নয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান হবে এমনটাই ঠিক করা ছিল কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ হলো না। সায়রা তাড়া দিলো তাকে ফিরতে হবে কিন্তু ইমরান হুট করে বলল সে পাশেই তার বন্ধুর বাড়িতে খাওয়ার আয়োজন করেছে। বন্ধুর বাড়িটা আমি চিনি তাই খুব একটা আপত্তি করিনি তার ওপর গ্রুপের সকল মেয়ে যাচ্ছে। সেখানে পৌছুতেই ইমরানের এক বান্ধবী জুস দিলো আমাকে, সায়রাকে বাকিরা তখনো বিভিন্ন গল্পে মশগুল। সায়রা বলল ওয়াশরুমে যাবে আমি তাকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিতেই ইমরানের বন্ধু নাহিদ আমাকে ডাকলো। কারো হাত কে-টে গেছে তাকে একটু চেক করতে। আমি আবার পড়াশোনার মাঝেই মেডিক্যাল ক্যাম্পের কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় ছুটে গেলাম সেদিকে। আমার কাজ শেষ হতে মাত্র মিনিট পনেরো লেগেছিল।”
ইরশাদ থেমে গেছে এতটুকু বলেই৷ বাইরের কুয়াশা এবার তার চোখেও এসে জমলো। ঝাপসা হয়ে গেল দৃষ্টি৷ মৈত্রী ঘাড় ফিরিয়ে পাশের মানুষটার দিকে তাকিয়ে বুঝতে চাইলো বোধহয় থেমে যাওয়ার কারণ৷ কিন্তু ইরশাদের চোখ দেখে তার আর বসতে ইচ্ছে করলো না সেখানে। এই মানুষটাকে সে ভালোবেসেছে চোখ দুটি দেখেই কিনা তাই ও চোখে অন্য কারোর জন্য জল তার সহ্য হবে না৷ সে বসা থেকে উঠে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো৷ হাতটান পড়লো, ইরশাদ হাত ধরে রেখেছে৷
“যে ঘরের ওয়াশরুমে সায়রাকে দিয়ে এসেছিলাম সে ঘরেই সায়রা বসেছিল ইমরানের বাহু জড়িয়ে। আমি এসে আধভেজানো দরজা দেখে থেমে গিয়েছিলাম৷ মনে হলো নক করে ঢোকা উচিত কিন্তু বেতর থেকে আসা কণ্ঠস্বর… আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারিনি মৈত্রী। ইমরান সায়রাকে জড়িয়ে রেখে বারবার বলছিল, আর কিছু দিন সোনা তারপরই আমরা বিয়ে করব। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হতেই তোমাকে বাড়িতে তুলব। কথা বলা শেষ হওয়ার আগেই আমার চোখের সামনে তাদের কিস….”
ইরশাদ একটা কথাও গুছিয়ে বলতে পারেনি। মৈত্রীর পা অসাড় হয়ে গেছে এই অগোছালো কথার মাঝে সায়রা আর ইমরানের কথা জানার পর ৷ ইরশাদ কি বলল সাড়ে চার বছর! এত গুলো বছর একজনের সাথে প্রেম করে তারই ভাইয়ের সাথে বিয়ে, কিস! মৈত্রীর মনে হলো এসব কথা না জানলেই ভালো হতো৷ মৈত্রী পাশে বসলো ইরশাদের। নিজের গায়ের শালে হঠাৎই সে ইরশাদকেও নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। ইরশাদ পরের কাহিনীটুকু বলার জন্য মুখ খুলতেই মৈত্রী ইরশাদের ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে খুব ধীরে বলল, “আমার খুব শীত লাগছে একটু জড়িয়ে ধরবেন?”
ইরশাদ জানে মৈত্রী আর শুনতে চাইছে না । হয়ত সইতে পারছে না আর। তবুও এ যে শেষ না করলে চলছে না৷ নতুনের জন্য পুরনোর বিসর্জন জরুরি৷ পুরনো অধ্যায় সরিয়ে নতুন ভোরের আয়োজন হোক।
চলবে
(সায়রার গল্পটা এখনো বাকি আজ এতটুকুই থাক। নোরাও আসবে কাল )