কিশোরী কন্যার প্রেমে পর্ব -১৬+১৭

#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৬
.
গভীর মনোযোগ সহকারে অংক করছে অর্ঘমা। পড়তে বসলে অর্ঘমা একদম সিরিয়াস হয়ে যায়। যে পড়াটা ধরবে সেটা শেষ করে তবেই অন্য কোনো কথা বলবে বা দুষ্টুমি করবে। গত কয়েক মাসে নীরদ অর্ঘমার এই ব্যবহারের সাথে পরিচিত হয়ে গেছে। নিধি আগেভাগে অংক শেষ করে নীরদের দিকে খাতা এগিয়ে দিল। চোখ দিয়ে ইশারা করে অর্ঘমাকে দেখিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-“আমি চা করে আনছি। আপনি খাতা দেখুন। তাছাড়া আজকের মতো তো আমার পড়া শেষ।”
-“আচ্ছা।”
নিধি রুম থেকে বের হওয়ার কয়েক মিনিট পর অংক শেষ হলো অর্ঘমার। খাতা নীরদের দিকে এগিয়ে দিয়ে চুপচাপ বই ঘাটতে লাগল। খাতা দেখার প্রয়োজন মনে করল না নীরদ। এই অংক এর আগেও বেশ কয়েকবার করেছে অর্ঘমা। তাই নীরদ নিশ্চিত এবারও অর্ঘমার অংক ঠিক আছে। উঠে দাঁড়াল নীরদ। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল কেউ নেই। অবশ্য এখন কারো আসার কথাও নয়। এই সময়টাতে মিনা বেগম শুয়ে থাকেন। আর নিধি রান্নাঘরে গিয়েছে চা বানাতে। অন্তত মিনিট বিশের আগে আর আসবে না। এছাড়া বাসায় আপাতত আর কেউ নেই।

অর্ঘমার চেয়ার নিজের দিকে ঘুরাতেই হকচকিয়ে গেল অর্ঘমা। সামনে তাকানো মাত্রই সে ভরকে গেল। কারণ নীরদ তার দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। ভয় পেয়ে পিছিয়ে গিয়ে চেয়ারের সাথে একদম মিশে গেল সে। দু’চোখে বিস্ময়, ভয়, আতঙ্কে ভরপুর। শুকনো ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করল,
-“কী করছেন?”
-“তুমি কথাও বলতে পারো?”
-“মানে?”
-“ক’দিন যাবৎ তো পড়া সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া বাড়তি আর একটা কথাও বলছ না। তাই আমি ভাবলাম হয়তো তুমি বোবা হয়ে গেছ।”
-“ধুর! সরুন তো। অস্বস্তি হচ্ছে আমার।”
-“সরবো তো অবশ্যই। তার আগে এটা বলো, আমাকে ইগনোর করছ কেন?”
অর্ঘমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে অস্বস্তি নিয়ে আশেপাশে কয়েকবার নজর বুলালো। অতঃপর মিনমিন করে বলল,
-“আমি আপনাকে ইগনোর কেন করতে যাব?”
নীরদও সময় নিয়ে কিছুক্ষণ দেখল অর্ঘমাকে। মেয়েটা এমন কেন? নিজের খারাপ লাগার কথাটা তাকে বললে কী হয়? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
-“সেদিন আমাকে যে মেয়েটার সাথে দেখেছ, সে আপুর ননদ ছিল। রাস্তায় দেখা হয়ে গিয়েছিল বলে সৌজন্যতার খাতিরে কথা বলছিলাম শুধু। এর বেশি কিছু না। আর আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।”
কথাটুকু একদমে শেষ করে নীরদ অর্ঘমার সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। টেবিলের উপর থেকে নিজের ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। দরজা লাগানোর শব্দে নিধি হন্তদন্ত হয়ে রুমে এলো। অর্ঘমাকে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল,
-“ভাইয়া চলে গেছে? আমি না বলে গেলাম চা বানিয়ে নিয়ে আসছি!”
-“জরুরি কাজ পড়ে গিয়েছিল তাই চলে গেছে। চা অন্য দিন খাবে বলেছে।”
মিথ্যে কথা বলে হনহনিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল অর্ঘমা। বুকের ভেতরটা খুব জোরে জোরে ধুকপুক করছে। অস্থিরতা বিরাজ করছে সারা শরীর জুড়ে। এ কেমন অনুভূতি? একদম ভিন্ন। একদম নতুন। অর্ঘমা বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখল। একটু আগে নীরদ তার খুব কাছে ছিল। দৃশ্যটা মানসপটে ভেসে উঠতেই লাজে রাঙা হয়ে উঠল সম্পূর্ণ মুখশ্রী। নিজের সাথে নিজেরই চোখ মেলাতে বড্ড লজ্জা লাগছিল তার।
___
স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে বসে আছে অর্ঘমা আর নিধি। তারা অপেক্ষা করছে অভ্রর জন্য। আগামী মাস থেকে তাদের এসএসসি শুরু হবে। ক্লাস হবে আর মাত্র ৮ দিন। শেষের এই ক্লাসগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর যেহেতু এবার তাদের স্কুল জীবনের সমাপ্তি তাই ক্লাসের সবার সাথেই মোটামুটি মেশার চেষ্টা করছে তারা। এরপর কে কোথায় থাকে না থাকে তার তো ঠিক ঠিকানা নেই।

নিধি শুধু শুধু বসে থেকে সময় নষ্ট না করে কিছু এমসিকিউ দেখছে। আর অর্ঘমা গালে হাত দিয়ে নীরদের কথা ভাবছে। গতকালের ঘটনার রেশ এখনো তার মাঝে বিদ্যমান। তবে কিছুটা কম। আড়চোখে নিধিকে দেখে নিল অর্ঘমা। সে নিশ্চিত নিধিই নীরদকে জানিয়েছে তার জেলাসির ব্যাপারটা। বিষয়টা তার কাছে অবশ্যই লজ্জাজনক। নীরদ না জানি কী ভেবেছে। তবে একটা জিনিস ভালো লেগেছে অর্ঘমার। নীরদ তার কাছে যেভাবে বিষয়টা ক্লিয়ার করল তাতেই বোঝা যায় নীরদের লাইফে তার গুরুত্ব ঠিক কতটা।
চুলের বেণীতে টান পড়তেই মৃদু শব্দে চিৎকার করে উঠল অর্ঘমা। চোখমুখ কুঁচকে অভ্রর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-“সকাল সকাল আমার সাথে লাগছ কেন?”
-“কী ভেবে এত মিটমিট করে হাসছিস?”
-“বলব কেন?”
-“ওমা! আমাকে বলবি না?”
-“না।”
-“বাহ্! এই ছিল তোর মনে? ঠিক আছে বলতে হবে না।”
অভ্র গম্ভীর মুখে টুলে বসে জুতা পরতে লাগল। অর্ঘমা সামনের ছোট চুলগুলো ঠিক করে বলল,
-“তোমাকে গম্ভীর মুখে একদম প্যাঁচার মতো লাগছে। মনে হচ্ছে জলজ্যান্ত একটা প্যাঁচা আমার সামনে বসে আছে।”
নিধি দুই ভাইবোনের কথা শুনে মুখ টিপে হেসে বলল,
-“আমার কাছে মনে হচ্ছে কেউ তাকে জোর করে নিমপাতার রস খাইয়ে দিয়েছে। তাই চেহারার হাল এমন।”
হো হো করে হেসে উঠল অর্ঘমা। সাথে তাল মেলালো নিধি নিজেও। অভ্র বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে নিধির দিকে। মেয়েটা বাড়তি কথাও বলতে পারে নাকি? কই আজ পর্যন্ত তো দেখেনি নিধিকে কথার পিঠে দু-একটা প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া বাড়তি কোনো কথা বলতে। অভ্রকে চোখ বড় বড় করে তাকাতে দেখে নিধির হাসি বন্ধ হয়ে গেল। শুকনো ঢোক গিলে অর্ঘমার পেছনে গিয়ে লুকালো সে। অভ্রর গাল টেনে দিয়ে অর্ঘমা বলল,
-“আরে ভাই শুধু শুধু গাল ফুলিয়ে রেখেছ তুমি। আমি মজা করছিলাম। আসলে নীরদ ভাইয়ের কথা ভাবছিলাম।”
-“তো কী ভাবলি?”
-“একটা ঘড়ি কিনব।”
-“হঠাৎ?”
-“তোমাদের নাকি গলায় গলায় ভাব জমে গিয়েছে? তো ভুলে গেলে কীভাবে যে ক’দিন বাদেই তার জন্মদিন?”
-“মনে করিয়ে ভালো করেছিস। আসলে ভুলিনি কিন্তু খেয়াল ছিল না। তারিখ শুনলে ঠিকই খেয়াল হয়ে যেত।”
-“তুমি বাসায় থাকবে সেদিন?”
-“না, তবে বিকালে তাড়াতাড়ি আসতে পারব অফিস থেকে।”
-“আমরা তাহলে সারপ্রাইজ দিব নীরদ ভাইকে।”
-“কেক অর্ডার করব?”
-“হ্যাঁ অবশ্যই। আর ডেকোরেশনের জন্য কিছু জিনিস লাগবে। তোমার রুম সাজাবো।”
-“অনলাইন অর্ডার করে দিস। আমি পেমেন্ট করে দিব।”
-“ডান। কিন্তু কেকটা তোমাকে গিয়ে অর্ডার করতে হবে। ভালো কেক আনবে কিন্তু।”
-“ঠিক আছে মা আমার। চল এবার, দেরি হয়ে যাচ্ছে। নীরদ সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে বাসার নিচে। ভালোই হলো এক হিসেবে। আমাকে কষ্ট করে উলটো ঘুরতে হবে না।”
কথাটা অর্ঘমার কানে যায়নি। নীরদের কথা শুনেই সে দৌড়ে নিচে চলে গিয়েছে। নিধি আগে আগে নামছে। পেছন পেছন অভ্র নামছে আস্তেধীরে। সিঁড়ির শেষ ধাপে এসে অভ্র আস্তে করে বলল,
-“হাসলে কী তোমার মান খোয়া যাবে? নাকি হাসিটা একটু সুন্দর বলে ভাব দেখাও? শোনো মেয়ে, না হাসলে মানুষ ভাববে তুমি গোমড়ামুখো।”
কথাটা বলে অভ্র এক সেকেন্ডও দাঁড়াল না। হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল। পেছনে হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল নিধি। অভ্র তাকে বলে গেল এসব? চোখ পিটপিট করে অভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেও আস্তেধীরে হাঁটা ধরল।
___
নীরদের আজ মেজাজ খারাপ। গত তিনদিন যাবৎ সে অপেক্ষায় আছে অর্ঘমা তাকে সরি বলবে। সরি না বলুক অন্তত তার সাথে কথা বলবে। কিন্তু কিসের কী? ম্যাডাম নিজের ভাবেই বাঁচে না। কথা বলা তো দূরে থাক তার দিকে তাকাচ্ছেও না ঠিক মতো। সেদিনই তো সব ক্লিয়ার করে দিল। তবুও এমন করছে কেন মেয়েটা? অর্ঘমা কী বিশ্বাস করেনি তার কথা? এই যে সে এখন অর্ঘমা, নিধিকে পড়াচ্ছে আর বারবার অর্ঘমার দিকে তাকাচ্ছে। তাতেও অর্ঘমার কোনো হেলদোল নেই। নীরদের যে আজ মেজাজ খারাপ তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার চেহারায়। কপালে ভাজ পড়ে আছে। চেহারায় কঠোর একটা ভাব এনে রেখেছে। পড়ানো শেষ হতেই উঠে যাবে এমন সময় অভ্র এলো ঘরে। তাকে দেখে নীরদ স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল। নিধি রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই তার পেছন পেছন অর্ঘমাও বেরিয়ে গেল। নীরদ আড়চোখে তাকিয়ে দেখেও কিছু বলল না।
-“কিরে কই হারালি?”
-“কোথাও না ভাই। এমনি মেজাজটা একটু খারাপ। ভার্সিটিতে একটু ঝামেলা হয়েছে।”
-“ওহ আচ্ছা। আমার রুমে চল। ওখানে বসে কথা বলি।”
-“আজ হবে না ভাই। কিছুদিনের মধ্যে একটা প্রেজেন্টেশন সাবমিট করতে হবে। সেটার কাজ এখনো বাকি আছে।”
-“তোকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা কথা বলার ছিল। দশ মিনিট সময়ও কী হবে না?”
-“চলো তাহলে আগে তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথাটা শুনে নিই।”
অর্ঘমার রুম থেকে বেরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে অর্ঘমাকে খুঁজল নীরদ। কিন্তু পেল না। অভ্র এসে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজা খুলতেই ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখল।
-“লাইটটা ছাড় নীরদ।”
নীরদ দ্বীরুক্তি করল না। সরল মনে লাইট জ্বালাতেই ভেতর থেকে নিধি, অর্ঘমা আর পেছন থেকে অভ্র ‘হ্যাপি বার্থডে’ বলে চিল্লিয়ে উঠল। প্রথমে ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠলেও পরক্ষণেই অবাক হয়ে তাকাল সবার দিকে। অর্ঘমার হাতে চকলেট আর ভ্যানিলা মিক্স কেক। রুমের একপাশে লেটার শেপ বেলুন দিয়ে ‘HAPPY BIRTHDAY NIROD’ লেখা। নীরদের মেজাজ এক মুহূর্তেই ফুরফুরে হয়ে গেল। তার যে একটু আগে মেজাজ খারাপ ছিল সেটাও ভুলে গেল। হেসে বলল,
-“জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে তো আমাকে হার্ট অ্যাটাকই দিয়ে ফেলেছিলে প্রায়। সবাই যেভাবে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলে আমি সত্যিই ভয় পেয়েছি। বাই দ্যা ওয়ে, থ্যাংক ইউ গাইজ।”
-“এবার কেকটা কেটে উদ্ধার করুন আমাদের।”
অর্ঘমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল নীরদ। এতদিন তাকে যন্ত্রণা দিয়ে আজ এসেছে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে? হুহ! লাগবে না তার অর্ঘমার শুভেচ্ছা। ভীষণ অভিমান হয়েছে তার। অভ্র তার কাঁধে ধাক্কা দিলে মৃদু হেসে সামনে এগিয়ে গেল। টেবিলের উপর কেক নামিয়ে রেখে সরে গেল অর্ঘমা। একটা ক্যাপ নিয়ে নীরদের মাথায় পরিয়ে দিয়ে অভ্র হেসে বলল,
-“নে বার্থডে বয়, এবার কেক কাট।”
নিধি পুরোটা সময় ভিডিও করছিল অর্ঘমার ফোন দিয়ে। কেক কেটে প্রথমে অভ্রকে খাওয়াল নীরদ। এরপর অর্ঘমা আর নিধিকে খাওয়াল। অভ্র আর নিধি নীরদকে কেক খাওয়ালেও অর্ঘমা খাওয়ায়নি। সে কেকের ক্রিম নিয়ে নীরদের দুই গালে মাখিয়েছে। তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না নীরদ। অর্ঘমা বুঝতে পারল নীরদ তার উপর রেগে আছে। বলা ভালো অভিমান করে আছে।

চলবে…#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৭
.
জনমানবহীন শূন্য ছাদ দেখে গা ছমছম করে উঠল। ফোনে সময় দেখে নিল। রাত বাজে প্রায় এগারোটার কাছাকাছি। আশেপাশের বিল্ডিংগুলোতে আলো জ্বলছে। তার থেকেই হালকা আলো আসছে ছাদে। তবুও ভীষণ অন্ধকার। নিকোটিনের গন্ধ এসে নাকে লাগতেই বুঝতে পারল কারও উপস্থিতি। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ছাদের পেছন দিকে। উপস্থিত মানুষটাকে দেখা না গেলেও জ্বলন্ত সিগারেটটা ঠিকই দেখা যাচ্ছে। তবে মানুষটাকে চিনে নিতে ভুল হলো না অর্ঘমার। নিঃশব্দে এগিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়াল।

অভ্র এসেছে ভেবে পাশে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে গেল নীরদের। অন্ধকারে অবয়ব দেখে ছোট কেউ মনে হচ্ছে। ফোনের স্ক্রিন অন করে পাশে ধরতেই আবছা আলোয় অর্ঘমাকে দেখতে পেল। সাথে সাথেই হাত থেকে সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলল বাইরে। বিস্ময় নিয়ে মুখে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“তুমি এত রাতে এখানে কী করছ?”
-“আপনি কী করছেন?”
-“দেখেই তো ফেলেছ কী করছিলাম।”
-“আমার না সিগারেট খাওয়ার খুব শখ। আমাকে একটা দিবেন? ট্রাই করতাম আরকি!”
নাকমুখ কুঁচকে নীরদ বলল,
-“মাথা ঠিক আছে তোমার? কী বলছ এসব?”
-“ঠিকই বলেছি।”
-“বাসায় গিয়ে মাথায় পানি ঢালো। মনে তো হচ্ছে না সজ্ঞানে আছ।”
-“আমি সজ্ঞানেই আছি।”
বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ জাতীয় শব্দ করল নীরদ। বলল,
-“অভ্র ভাইয়ের আসার কথা ছিল। সে কই?”
-“সে ঘুমায়। তাই তো আমি এসেছি আপনার একাকিত্ব সময়ের সঙ্গী হতে।”
-“ভাইয়া এই সময় ঘুমায়? আমাকে কি বলদ পেয়েছ? রাত দেড়টা বা দুটোর আগে ভাইয়া ঘুমায় না। আর আমি ভাইয়াকে ম্যাসেজ দিয়েছিলাম। ভাইয়া রিপ্লাই করে বলেছে আসছে। তাহলে হঠাৎ ঘুমিয়ে গেল কীভাবে?”
-“কারণ আমি ভাইয়াকে ঘুমাতে বলেছি। আর বলেছি আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। যদিও ভাইয়া এত রাতে রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু আমি রাজি করিয়েছি।”
-“হয়েছে দেখা করা? এবার যাও।”
-“যাও মানে কী? মাত্রই তো এলাম।”
-“অর্ঘ একটু বুঝার চেষ্টা করো। এত রাতে আমার সাথে তোমাকে কেউ ছাদে দেখে ফেললে বিষয়টা খারাপ ভাবে নিবে।”
-“এতক্ষণে তাহলে লাইনে এসেছেন। আজ ওমন মুখ ফুলিয়ে রেখেছিলেন কেন?”
-“কিছু না। তুমি যাও এখন।”
-“যাব তবে আগে বলুন।”
নীরদ বারবার আশেপাশে তাকিয়ে আবার ছাদের দরজার দিকে তাকাচ্ছে। যদি কেউ এসে পড়ে আর তাদের দেখে খারাপ ভাবে, এই ভয় পাচ্ছে সে। কিন্তু অর্ঘমার সেদিকে ধ্যানই নেই। সে তো নিজের মতো জেরা করতে ব্যস্ত।
-“এতদিন কথা বলিনি বলে রাগ করেছেন?”
অর্ঘমার এহেন প্রশ্নে নীরদের সকল দুশ্চিন্তা গায়েব হয়ে গেল। মুহূর্তেই সে অভিমানে জর্জরিত নীরদ হয়ে গেল। গাল ফুলিয়ে আস্তে করে বলল,
-“একটু একটু।”
হাসি দীর্ঘ হলো অর্ঘমার।
-“আজকে আপনার জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিব বলে এই ক’দিন একদম চুপ ছিলাম। আসলে আমি কথা বেশিক্ষণ চেপে রাখতে পারি না। মানে যাকে সারপ্রাইজ দিব তার সাথে কথা বলতে বলতে দেখা যায় একটা সময় আমি তাকে সারপ্রাইজের ব্যাপারটাও জানিয়ে দিয়েছি। তাই চুপ ছিলাম যাতে আপনাকে কিছু বলে না ফেলি।”
নীরদ অবাক হলো। সে ভেবেছিল অর্ঘমা হয়তো তার কথা বিশ্বাস করেনি। সেদিনের মেয়েটা যে তার বোনের ননদ ছিল এই কথা হয়তো অর্ঘমা মিথ্যে ভেবে নিয়েছে। আর সেজন্যই এতদিন তার সাথে কথা বলেনি। তাই তো তার অভিমান হয়েছিল। কিন্তু এখন অর্ঘমার কথা শুনে তার অভিমান কর্পূরের মতো উবে গেছে। অর্ঘমা একগাল হেসে নীরদের বাম হাত ধরে একটা ঘড়ি পরিয়ে দিল। অন্ধকারে কিছু না দেখলেও নীরদ বুঝল তাকে ঘড়ি পরানো হচ্ছে। সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“এটা কেন?”
-“আপনার বার্থডে গিফট।”
ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে ঘড়িটা দেখে জিজ্ঞেস করল,
-“তুমি নিজে পছন্দ করে কিনেছ?”
-“হ্যাঁ। পছন্দ হয়নি?”
যদিও সে এই ধরনের ঘড়ি পরে না। কিন্তু অর্ঘমা নিজে পছন্দ করে কিনেছে শুনে খুশি হয়ে বলল,
-“খুব সুন্দর হয়েছে। থ্যাংক ইউ।”
-“ইয়োর মোস্ট ওয়েলকাম।”
-“আচ্ছা এবার যাও।”
-“আপনি আমাকে তাড়ানোর জন্য পাগল হচ্ছেন কেন?”
-“তুমি বুঝতে পারছ না। সবার মনমানসিকতা তো এক না। কেউ যদি এত রাতে তোমাকে আমার সাথে একা দেখে ফেলে তাহলে বাজে মন্তব্য করতে দু’বার ভাববে না। না জেনেশুনেই মন্তব্য করা শুরু করে দিবে। যা আমি চাইছি না। তাছাড়া কালকে সকালে তো দেখা হচ্ছেই।”
-“ঠিক আছে, যাচ্ছি। গুড নাইট।”
-“গুড নাইট।”
অর্ঘমা হেসে চলে যাচ্ছে। ছাদের দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় নীরদ তাকে পেছন থেকে ডাকল।
-“অর্ঘ!”
পেছন ফিরে তাকাল অর্ঘমা। যদিও অন্ধকারে আবছা অবয়ব ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। তার ওপর আকাশ আজ কালো মেঘে ঢাকা। কিছু একটা বলতে চাইছিল নীরদ। কিছুক্ষণ চুপ থেকেও যখন কথাটা বলতে পারল না তখন কথা ঘুরিয়ে বলল,
-“গুড নাইট।”
অর্ঘমা মৃদু হেসে বলল,
-“আমার মনে হলো আপনি অন্য কিছু বলতে চাইছিলেন। থাক, ব্যাপার না। যখন বলতে মন চাইবে বলবেন। অপেক্ষায় থাকব। গুড নাইট।”
হাসল নীরদ। অর্ঘমার ঈঙ্গিত সে বুঝতে পেরেছে। হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে সেটাকে ছুঁয়ে দেখল। পর পর চুমু খেল।
___
সময় কীভাবে যেন চোখের পলকে চলে যায়। দিন পেরিয়ে মাস চলে যায়। দেখতে দেখতে অর্ঘমা আর নিধির এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। পরীক্ষার প্রতিটা দিন নীরদ গিয়েছিল তাদের সাথে। অভ্র প্রতিদিন যেতে পারেনি। তবে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কয়েকদিন গিয়েছিল।

মায়ের সাথে অর্ঘমার সম্পর্কটা নেই বললেই চলে। নিধিকে নিয়ে তর্ক করার ঘটনার পর থেকেই মিনা বেগম মুহূর্তের মধ্যেই কীভাবে যেন বদলে গেলেন। অভ্রর প্রতি যত্নশীল হলেও অর্ঘমার চিন্তা করা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। অর্ঘমার প্রচুর খারাপ লাগে। মাঝে মাঝে কান্নাও করে সে। মায়ের সাথে বহুবার কথা বলতে চেয়েছে। কিন্তু মিনা বেগম মুখ ফিরিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছেন। একই বাসায় থেকেও অর্ঘমা আর নিধিকে তিনি দেখেনই না। ভাবটা এমন যেন তারা অদৃশ্য কোনো জীব।
বর্তমানে বাসার কোনো কাজই মিনা বেগম করেন না। নিধি আসার পর টুকটাক যা করতেন তাও করা বাদ দিয়ে দিয়েছেন অর্ঘমার উপর রাগ করে। ফলে অভ্র তার বাবার সাথে পরামর্শ করে বাসায় কাজের লোক রেখে দিয়েছে। সব কাজ কাজের লোকই করে দেয়। সব কাজ বলতে শুধু রান্নাবান্না করা আর ঘর মোছা। জামাকাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিন আছে। আর ঘর ঝাড়ু এক বেলা অর্ঘমা দেয় তো অন্য বেলা নিধি দেয়। এভাবেই চলছে বাসার কাজ।

অর্ঘমার এসএসসির পরের সময়টা নীরদের সাথে ঘুরাঘুরি করে, বই পড়ে, নিধির কাছ থেকে রান্না শিখে, ইউটিউব দেখে কিছু নতুন নতুন মেকাপ টিউটোরিয়াল ট্রাই করে, মুভি বা ড্রামা দেখেই কেটেছে। নিধি বেশিরভাগ সময়ই একাডেমিক বই পড়ে কাটিয়েছে। নীরদকে বলে ইন্টারের কিছু বই সংগ্রহ করেছে। আগেভাগেই সেগুলো দেখে মোটামুটি যা বুঝতে পারছে তাই পড়ে এগিয়ে রাখছে। তার সামনের যাত্রাটা কঠিন। না জানে কতদিন আর বান্ধবীর পরিবারের ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকবে? নিধি এই বাসার সকলের অগোচরে তার বাবার বাসায় গিয়েছিল। তার বাবা আর সৎ মা ছাড়া পেয়েছে জে*ল থেকে। বাসায় যেতেই বাবা আর সৎ মা তাকে বি*শ্রী ভাষায় গা-লি-গা-লা-জ করেছেন। দুটো চ-ড়ও মে*রে*ছে*ন। বাবা তাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ত্যা/জ্য কন্যা করেছেন নিধিকে। অর্থাৎ সারাজীবনের মতো তার পরিবারের সাথে তার যোগাযোগ শেষ। বাসায় ফিরে এসে তার সে কি কান্না! অতঃপর নিজের মৃত মায়ের কথা ভেবে, তাকে নিয়ে তার মায়ের সকল স্বপ্নের কথা ভেবে কান্না বন্ধ করেছিল। ধ্যান-জ্ঞান সব লাগিয়ে পড়াশোনা করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে অনেক বড় কিছু হয়ে মায়ের শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করবে নিধি।

রেজাল্ট নিয়ে অর্ঘমার চিন্তার শেষ নেই। তার পরীক্ষা যে খারাপ হয়েছে ব্যাপারটা এমন নয়। তবুও কেন যেন চিন্তায় তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে বারবার। নিধিরও মোটামুটি চিন্তা হচ্ছে। কিন্তু অর্ঘমার মতো এত বেশি নয়। সে নিজের প্রতি মোটামুটি আত্মবিশ্বাসী। তার পরীক্ষা যথেষ্ট ভালো হয়েছে। রেজাল্ট দেওয়ার পর দেখা গেল ঘটনা ঘটল উলটো। যে বেশি চিন্তা করছিল সেই অর্ঘমা এ প্লাস পেয়েছে। কিন্তু নিধি নিজের রেজাল্ট পেয়ে খুশি হতে পারেনি। তার জিপিএ এসেছে ৪.৯৮। একটুর জন্য এ প্লাস মিস গেছে। চোখ দুটো টলমলে হয়ে উঠল মুহূর্তেই। গাল বেয়ে কিছু তরল গড়িয়েও পড়ল। তবে নিমিষেই নিজেকে সামলে নিল। অভ্র আর অর্ঘমা তাকে এখানে না নিয়ে এলে তো সে পরীক্ষাটাই দিতে পারত না। আর নীরদ, অর্ঘমা তাকে পড়ায় সাহায্য না করলে এই রেজাল্টও তার নসিবে থাকত না। অতএব যতটুকু পেয়েছে ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। বেশি লোভ করা ভালো নয়। কথায়ই আছে অতি লো*ভে তাঁতি নষ্ট। আর নিধি কোনো লো*ভে পড়তে চায় না। কিন্তু তবুও কেন যেন অর্ঘমাকে দেখে ভেতরে ভেতরে তার কষ্ট হচ্ছে।

নিজাম সাহেব আর অভ্র তাদের পাড়া-প্রতিবেশী, সকল আত্মীয়স্বজন ও নিজেদের কর্মস্থলে মিষ্টি বিতরণ করে গর্বের সহিত অর্ঘমার রেজাল্টের কথা বলে বেড়াচ্ছেন। বাসায় অর্ঘমার জন্য উপহারসামগ্রী দিয়ে ভরে গেছে। কাছের আত্মীয়স্বজনরা অর্ঘমার রেজাল্ট শুনে খুশি হয়ে এসব পাঠিয়েছে। নিজাম সাহেব মেয়েকে উপহার হিসেবে দিলেন স্বর্ণের চেইন। অভ্র তার বোনকে দিল নতুন ফোন। আগেরটা বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। নীরদের বোন নুসরাত অর্ঘমাকে খুব সুন্দর দেখে একটা ডায়েরি আর কলম উপহার দিয়েছে। এসব দেখে আর ঘর ছেড়ে বের হলো না নিধি। বর্তমানে অর্ঘমা সবার চোখের মণি। তাকে সবাই কত আদরযত্ন করছে, কত ভালোবাসা দিচ্ছে। এসব দেখে নিধির ভেতরে ভেতরে খারাপ লাগলেও চেহারায় খারাপ লাগাটা প্রকাশ পেতে দিচ্ছে না। এক মুহূর্তের জন্য নিধির হি-ং-সে হলো এই ভেবে, অর্ঘমার জায়গায় তো সেও থাকতে পারত। তারও এমন হাসিখুশি, সাপোর্টিভ একটা পরিবার হতে পারত। সে-ও সবার আদরযত্ন, ভালোবাসা পেতে পারত। পারত না? অবশ্যই পারত। কিন্তু তার কপালে এসবের কিছুই নেই। এত খারাপ কেন তার ভাগ্যটা?
___
বিকেলে নীরদ এসে অর্ঘমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলল,
-“তোমাকে উপহার হিসেবে কী দিব বুঝতে পারছিলাম না। আসলে আমি এসবে খুব কাঁচা। তাই ভাবলাম উপহার হিসেবে আগামীকাল সারাটা দিন তোমার নামে করে দেই। কাল তুমি যা চাইবে তাই হবে।”
অর্ঘমা খুশি হয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
-“সত্যি?”
-“তিন সত্যি।”
অর্ঘমাকে আর পায় কে! খুশিতে নাচতে নাচতে নিজের রুমে চলে গেছে। আজ যেন অর্ঘমার খুশির অন্ত নেই। অভ্র আর নীরদ হেসে দিল অর্ঘমার অবস্থা দেখে।
-“মেয়েটা এমনিতেই একটা পাগল। মাথার যে ক’টা তাড় ঠিক ছিল আজ বোধহয় সেগুলোও ছিঁড়ে গেল।”
অভ্রর কথায় শব্দ করে হেসে ফেলল নীরদ। অভ্র ভুল বলেনি। সে-ও মনে মনে এটাই ভাবছিল।

পরের দিনটা অর্ঘমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগল। এত আনন্দ সে আগে কখনো করেনি। অভ্র, নীরদ, নুসরাত এবং তার হাসবেন্ড আর অর্ঘমা একসাথে ঘুরাঘুরি করেছে। হাজার চেষ্টা করেও নিধিকে সাথে নিয়ে আসতে পারেনি অর্ঘমা। সবাই কত করে বলল তাকে সাথে আসতে। কিন্তু নিধি নাছোড়বান্দা। সে কোনোভাবেই যাবে না। বাধ্য হয়ে নিধিকে ছাড়াই বের হতে হলো। আজ অর্ঘমার সকল আবদার পূরণ করা হয়েছে। সে যা চেয়েছে তাই হয়েছে। সারাদিন আড্ডামাস্তি, ঘুরাঘুরি ও খাওয়া-দাওয়া করে রাতে বাসায় ফিরল তারা।

অর্ঘমা ফ্রেস হয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই টেবিলের ওপর একটা বিশাল বড় ঝুড়ি দেখতে পেল। ঝুড়ির সামনের দিকে বিভিন্ন রঙের ফিতা দিয়ে ডিজাইন করা। ঝুড়ি ভরতি তার পছন্দের বিভিন্ন রকমের চকলেট, চিপস, বিস্কিট, কোল্ড ড্রিংকস এছাড়াও আরো বিভিন্ন রকমের স্ন্যাকস রয়েছে। পাশে একটা মাঝারি সাইজের কার্টন রাখা। কার্টনে কি আছে সেই সম্পর্কে ধারণা নেই। সোফায় বসে আছে অভ্র আর নীরদ। অর্ঘমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“এগুলো আবার কে পাঠাল?”
-“সবাই কত কত উপহার দিল তোমাকে। আমি তো কিছু দেইনি। তাই এটা তোমার জন্য আমার তরফ থেকে।”
-“ওমা! আজকে না কত কিছু কিনলাম, ঘুরলাম, খাওয়া-দাওয়া করলাম। সবই তো আপনি দিলেন।”
-“না। আমি, অভ্র ভাইয়া আর দুলাভাই তিনজনে মিলে শেয়ার করেছি। আমার একার তরফ থেকে হলো না ওটা। তাই এটা আমার একার তরফ থেকে।”
-“থ্যাংক ইউ।”
-“ফ্রিজে আইসক্রিম রয়েছে। ওগুলো এখানে রাখলে গলে যেত। তাই আলাদা করে নিয়ে এসেছি।”
-“আর এই কার্টনে কী?”
-“তোমার উইশলিস্টের কিছু বই।”
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে অর্ঘমা চিৎকার করে বলল,
-“সত্যি?”
-“তিন সত্যি।”
খুশিতে অর্ঘমার চোখজোড়া চকচক করে উঠল। পরক্ষণেই সাজানো-গোছানো ঝুড়িটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“ঝুড়িটা আপনি সাজিয়েছেন?”
-“ধুর! আমি এসব পারি নাকি? আমি সব কিনে এনে আপুকে দিয়ে বলেছি সাজিয়ে দিতে। আপু সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়েছে। ফ্রি-তে আমাকে কতগুলো বকাও দিয়েছে অকর্মার ঢেঁকি বলে।”
অভ্র আর অর্ঘমা হেসে দিল। নীরদ মাথা চুল্কে নিজেও হাসল। তার হাসিটা কেমন যেন বোকা বোকা লাগল অর্ঘমার কাছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here