গল্পঃ ক্যারিয়ার। ( পঞ্চম পর্ব )
তুলি ভেতর থেকে দরজা খুলে দিল, তুলিকে দেখামাত্র ফার্স্ট মোশনে চোখের পলকে তুলিকে একটা চুমু খেলো শুভ।
তুলি অবাক হয়ে ধাক্কা দিয়ে শুভকে সরিয়ে দিয়ে বললো,– এগুলো কি?!
শুভ বললো,– এমন ভাব ধরছো যেন এখনও ফিডার খাও, বিয়ের পর থেকেই তো রোজ এসব ক্লাস করালাম, এখন বলছো এগুলো কি!
তুলি ভেঙচি দিয়ে বললো,– ওসব স্মৃতি ভুলে গেছি আমি।
শুভ তুলির চারপাশে চক্কর দিয়ে বললো,– না মাথা তো ঠিকই আছে! তাহলে সমস্যাটা ঠিক কোথায়!
তুলি অবাক হয়ে বললো,– মাথা তো ঠিকই আছে মানে!
: না মানে ভেবেছিলাম বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো মাথায় আঘাত লেগে হয়তো পুরনো স্মৃতি ভুলে গেছ, কিন্তু মাথা তো অক্ষত!
: ওসব বলে আর লাভ নেই!
: কোন লাভের কথা বলছো তুলি?
: আমার মন ওসবে গলবে না!
: আমিও কোনো কামার নই যে তোমার মন গলিয়ে চেন তৈরি করে গলায় ঝুলাবো।
: তো কেন এসেছেন?
: শ্বাশুড়ি ডেকেছেন তাই এসেছি।
: ও আচ্ছা, তাহলে যান গিয়ে তার সাথে কথা বলুন।
শুভ শ্বাশুড়ির রুমে গিয়ে সালাম দিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। শ্বাশুড়ি বললো,– বাবা, তুলি এতটা কঠিন হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি আমি, তুমি ওকে বাসায় নিয়ে যাও বাবা। তোমার তো বোঝার কথা এরকম রাগারাগি করে দূরে সরে থাকলে দূরত্ব বাড়ে।
শুভ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,– মা আমি সবই বুঝি, আমি আমার নিজের চেয়েও তুলিকে বেশি ভালোবাসি। কিন্তু তাই বলে তুলির অহংকার অন্যায় মেনে নিয়ে ব্যক্তিত্বহীনের পরিচয় দিতে পারবো না। ভুলটা আমি করিনি তুলি করেছে। নিজের ভুল বুঝতে পারাটা উচিৎ ওর, এত লেখাপড়া, এত বিবেক বুদ্ধি কিন্তু লাভ কি হলো, সবই আজ ক্যারিয়ার আর অহংকারের নিচে চাপা পড়ে আছে। তুলি চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা মাথায় একটু চিন্তা করলেই নিজের ভুল বুঝতে পারবে, কিন্তু ওর অহংকার ওকে সেই ভাবার সময়টুকু দিচ্ছেনা। আমি ওর অপেক্ষায় থাকবো, ও নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে যদি ফিরতে পারে তবেই ফিরবে, আমি অপেক্ষায় থাকবো।
কথা শেষে উঠে দাড়িয়ে চলে যাবার উদ্দেশ্যে ড্রইং রুম পর্যন্ত আসতেই বাইরে থেকে দরজা খুলে এক যুবক ভেতরে ঢুকলো, হাতে একটা গোলাপ। শুভকে দেখে যুবক হাসিমুখে বললো,– হাই, আমি সলমন, আপনি কেডা খুলে কন।
শুভ বললো,– খুলে বলতে হবে কেন, এভাবেই বলি, আমি শুভ।
: হা হা হা, ফানি ম্যান, ভালো লাগলো মিস্টার শুভ।
: আমার তো ভালো লাগলো না মিস্টার সলমন।
: কেন কেন?
: ফুল নিয়ে সম্ভবত ভুল বাসায় ঢুকে পড়েছেন আপনি, এ বাসায় ফুল গ্রহণ করার মতো অবশিষ্ট কেউ নেই।
: আছে আছে, তুলি বিউটিফুল এর জন্যই এই তরতাজা গোলাপ ফুল, তুলি হামারা প্যার।
সলমনের কথা শুনে শুভর মেজাজ গরম হয়ে গেল, শুভ বললো,– ঐ মিয়া তুলি বিবাহিত, আপনি কে আসল পরিচয় দেন তো।
সলমন বললো,– আমি তুলির খালার পেটের সুদর্শন সাকিব খান বলতে পারেন, মানে তুলির খালাতো ভাই।
শুভ বললো,– তা এলাকায় আর কোনো অপু বিশ্বাস চোখে পড়েনি! বিবাহিত সাবনুরকেই কেন ফুল দিতে হবে।
সলমন একটু অতিরিক্ত ভাব নিয়ে বললো,– তুলি আমাকে আপন করে পেতে চায়, নিজেকে উজার করে দিতে চায়, আমারে তো চায়’ই সাথে ভালোবাসা ফ্রি-তে চায়।
তুলি এসে দাড়ালো, শুভ তুলিকে বললো,– এই আইটেম কোথা থেকে আমদানি করলা? অদ্ভুত তো!
তুলি বললো,– ও আমার বড়ো খালার ছেলে।
শুভ বললো,– তো ভাই ভাইয়ের মতো থাকবে, প্রেমিক সাজতে যায় কেন?!
তুলি বললো,– শুভ তোমার তো বেবি চাই, আমি তো দিতে পারছি না, তাই ভাবলাম তুমি তোমার যা ইচ্ছে হয় করতে পারো, আর সলমন যেহেতু আমাকে চায়, আমিও ওকে নিয়ে ভাবতে শুরু করছি। কারণ বেবি না হলেও ওর সমস্যা নেই ও আমাকেই চায়।
সলমন বললো,– ইয়েস বেবি আমি শুধু তোমাকে চাই, আমার এক্সট্রা বেবির দরকার নেই।
সলমনের কথা শুনে শুভ বললো,– চেহারা সুন্দর হইলে কাম হবে কি! তুই যে জন্মগত ছ্যাচড়া তা তোর কথাবার্তার স্পষ্ট।
তুলি বললো,– শুভ মুখ সামলে কথা বলো, ও যেমনই হোক তোমার মতো নয় বুঝলে।
শুভ কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বেরিয়ে চলে এলো।
যেটা আশা করা হয় সেটা পাওয়া হয়না। প্রথম প্রপোজ তুলি করেছিল, ভালোবাসি তুলি বলেছিল। ভালোবাসার সাগরে ভাসিয়ে আবার তুলিই দূরে সরে যাচ্ছে। বিষয়টি খুবই অদ্ভুত। শুভ ভেবেছিল তুলি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে আবার ফিরে আসবে, কিন্তু সেরকম হলো না। আজ তুলি বুঝিয়ে দিলো ভালোবাসার চেয়ে অহংকার আর জেদটাই বেশী বড়ো।
এবার একটু অন্য রকম করে ভাবতে হবে…
চলবে…
লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।