ক্যাসিনো পর্ব -২৪

#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_২৪

শাহানার চিৎকার বন্ধ করার জন্য পুরুষ মানব টি দ্রুত উঠে শাহানার মুখ চেপে ধরে। পুরুষ টি ভয়ার্ত সাথে চাপা কঠিন স্বরে বলে উঠে এই চুপ কি করছো টা কি তোমার পরিবারের হাতে কি ধুলাই খাওয়াতে চাচ্ছো না কি???

পুরুষালী কন্ঠ টা শাহানা চট করে চিনে নিলো। লোড শেডিং এর কারনে ঘরে বিদ্যুৎ নেই। বাহিরের ল্যাম্প পোস্টের আবছা আলো জানালা ভেদ করে ঘরে এসেছে,সেই আলোয় সামনে থাকা পুরুষটিকে এবার ভালো করে নজর করে অবাক কন্ঠে বলে নিশান এখানে তুমি এসেছো??? কিভাবে আসলে?? কি জন্য?? এই কোন দিক দিয়ে আসছো তুমি!!

শাহানা দুরন্ত পায়ে বেলকনির কাছে যায়। আসে পাশে তাকায় নিশান এখানে জীবনেও একা আসেনি। এই সাহস তার কখনোই হতে পারে না।
বাপরে এতো প্রশ্ন কিভাবে করছো এক সাথে কি উত্তর দিবো?? শাহানা সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে সাথে আর কে আছে ?? তুমি এখানে কখনোই আসোনি তা আমি জানি বল সাথে আর কে কে আছে?? শাহানা টেবিলে থাকা পেপার কাটা কাঁচি হাতে নিয়ে নিশানের বুক বরাবর ধরে বলে?? কি উদ্দেশ্যে নিয়ে এতো রাতে আমার ঘরে এসেছো তুমি??

নিশান শুকনো একটা ঢোক গিলে বলে আমি ইচ্ছে করে আসিনি। আমাকে জোর করে মেহমেত নিয়ে এসেছে। আমাকে মেরো না। আমি কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি। আর আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য থাকবেই বা কেন??? শাহানা শান্ত হয়ে বলে কই সেই হারামি মেহমেত। নিশান বেলকনির পর্দার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে ওর পিছনে।

নিশান সব বলে দিয়েছে তা মেহমেত শুনে নিজের কপালে এক থাপ্পর দেয়। সালা হাঁদারাম হুনুমান । মেহমেত পর্দার আড়াল থেকে বের হয়ে আসে। তার পর বৃথা হাসার চেষ্টায় হে হে হে করে বলে। শাহানা নিজের খাটে বসে পড়ে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকায়। যার অর্থ মেহমেত বুঝতে পারলো যে তাদের এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য কি??

গত কয়েক দিন ধরে ভার্সিটিতে যাসনি। ফোন ও তুলছিলি না। আমি ভাবলাম অসুস্থ হলি কি না। তাই দেখতে আসছি। তোর মা তো আবার কাউকে বাসাতে এলাউ করে না তার জন্য এতো রাতে চুপিচুপি আসা। শাহানার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে যে মেহমেতের কথা তার কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি। সে যে এই কথা গুলোর মাঝে মিথ্যা মিশ্রিত করেছে শাহানা তা জানে কেননা। শাহানার বাবাকে মেহমেত ফোন দিয়েছিল এবং সে সুস্থ আছে তা মেহমেত জানে। গুরুগম্ভীর মুখ টাকে হাসির চাদরে মুড়িয়ে ঠোঁট প্রশস্ত করে বলল। তুই এসেছিস ভালো কথা তা এই ব্যস্ত মানুষ টাকে নিয়ে এসেছিস কেন?! তার তো এখন সময় হয়ে উঠে না আমার জন্য । আগে যখন বন্ধ মহল তার শূন্য ছিল তখন শাহানার জন্য সময় ছিল আর এখন তো বন্ধ মহল ভরাট তার যার ফিরেও তাকায় না। নিশান মুচকি হাসলো শাহানার কথায় স্পষ্ট অভিমান দেখা যাচ্ছে। কেন সেই অভিমান তা কিছু টা হলেও সে জানে। শাহানার প্রতি যেই অবাধ্য অনুভূতি নিশানের মনে তৈরি হচ্ছে তাকে দমন‌ করার জন্য শাহানার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে নিশান। আকাশের চাঁদ কোন সাধারণ মনিষীর হাতে ধরা দিবে না। শাহানা এক পদ্ম দিঘির জলে সেই আকাশের চাঁদের প্রতিবিম্ব মাত্র। সেই চাঁদ কে কল্পনায় ছুঁয়ে দেখা যায় কিন্তু বাস্তবে তা পাওয়া শুধু মুসকিল নয় মহা মুশকিল যা আল্লাহর দয়া ব্যতিত সে কোন ভাবেই তাকে ছুঁতে পারবে না।

শাহানা কে জোর করে খাবার খাওয়াচ্ছে নিশান। আর সুন্দর মুহূর্ত মেহমেত উপভোগ করছে। শাহানার বাবা ফোন দিয়েছিল মেহমেত কে যে তার মেয়ে গত কয়েক দিন থেকে খাবারের প্রতি অনিহা দেখাচ্ছে । আজ আবার সারা দিন নাকি কিছুই খায়নি। আর তাকে খাবার খাওয়ানোর মতো মানুষ এই বাসাতে নেই। মা তো সারা দিন রুপ চর্চা নিয়ে
ব্যস্ত আর রাতে ক্লাবে ক্লাবে ঘুরে বেড়ায়। বাসার মেইড যারা আছে তারা কেউ জোর করে খাওয়াতে পারবে না। তাই মেহমেত কে বলে ছিল যেন শাহানার সাথে দেখা করে।

সব ঠিকঠাক চলছিল, জীবন ধারা তার নিজের গতিতে বহমান নদীর মত ছুটে চলেছে। দেখতে দেখতে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলে এসেছে এই চার বছরে ঘটে গেছে অনেক কিছুই। প্রতিবারের মতো সব সেমিস্টারে হায়ার মার্ক উঠিয়েছে নিশান। সবাই নিশানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শাহানা নিজেও বেশ খুশি নিশানের এমন রেজাল্টে। কিন্তু তার বিরক্ত লাগে এখন সব। বিরক্তের মূল কারণ নিশানের আশেপাশে অতিরিক্ত ঘেঁষা মেয়েদের উপর। সারা ক্ষন কোন না কোন মেয়ে এসে নিশানের পাশে বসে পড়া বুঝিয়ে নিতে চাইবে। মাঝে মাঝে মনে হয় যেন এই ভার্সিটির নাম করা প্রফেসর নিশান। একদিন রেগেমেগে শাহানা বলেই ফেলে এই তুমি একটা কোচিং সেন্টার খোলো তো। সেখানে শুধু মেয়েদের পড়াবে কোন ছেলে এলাউ করবে না। ওদের সাথে ঘেষাঘেষি ও হবে আবার তোমার পার্ট টাইম জব ও হয়ে যাবে। অন্য কোথাও আর রাত ১০টা অব্দি পার্ট টাইম জব করতে হবে না। নিশান শব্দ করে হেসে উঠে তার পর বলে তাহলে সেই কোচিং সেন্টারে ফাস্ট ভর্তি তুমিই হও।
আমি!!! আমি যদি পড়তে যায় তুমি আমায় পাত্তা দিবে তো??? ওমা সেকি কথা পাত্তা দিবো না কেন। এখন কি তোমায় আমি ইগনোর করি নাকি??? শাহানা কিছু না বলে উঠে চলে যায় অসহ্যকর। কে বলেছে এই হাঁদারাম কে বিদ্যা সাগর হতে। সাধারণ এক জন ছেলে হয়ে সাধারণ ভাবেই পড়া শুনা করতো।

এতো কিছুর মাঝেও ঘটে গেছে ভয়ংকর এক ঘটনা। গত এক বছর আগে শাহানার মায়ের প্রেমিক কে যেনো হত্যা করেছে। সেই থেকে শাহানার মা নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছে। কারো সাথেই কথা বলে না। সাজে না ক্লাবে যায় না। রাত করে বাসায় ফিরে না ড্রিংক করে।

শাহানার তাতে তেমন মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু তিন বেলা শাহানা তার মাকে তুলে খাওয়াবে। আর তার মা নিজেও বিনাবাক্যে খেয়ে নেই। আর শাহানার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। এক দিন এমন ভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য শাহানা প্রশ্ন করে বসে। কি হয়েছে সব সময় এমন ভাবে তাকিয়ে থাকো কি জন্য?? কিছু বলবে?? শাহানার মা শুকনো এক হাসি দিয়ে মেয়ের গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, কেন তোমার এই নর্দমায় জন্ম হলো, কোন গরিব ঘরের মেয়ে হলেও ভালো থাকতি। কি এসব বলো তুমি? আমি খারাপ কোথায় আছি। আর নর্দমা বলছো কেন?? আমি আমার বাবার এক মাত্র রাজকন্যা। আর এতো বড় রাজপ্রাসাদে একাই রাজ করি । সেটাকে নর্দমা কি ভাবে বলছো তুমি। ফিসফিস করে বলে,এই রাজ্যের রাজা মহান রাজা শুধু তার রাজকন্যার কাছেই। আর বাকি মানুষদের কাছে এক ভয়ঙ্কর দানব। যার থাবা হাজারো পরিবার কে দুঃখের সাগরে ভাসিয়েছে। শাহানা তার মায়ের কথায় প্রথমে কিছু টা ভরকে গেল পরবর্তীতে শান্ত হয়ে ভাবলো এমন আবল তাবল কথা তার মা আজ প্রথম বার বলেননি এর আগেও বহুবার বলেছে। মাঝে মাঝে শাহানার মনে হয় তার মায়ের মাথায় কোন প্রব্লেম আছে। নাহলে এই ধরনের কথা কিসের ভিত্তিতে বলে!!

ফাইনাল পরীক্ষার জন্য আগামী কাল বিদায় অনুষ্ঠান শাহানাদের। আজ সব ডেকরেশন করার জন্য সব স্টুডেন্ট উপস্থিত হয়েছেন
ছেলেরা সবাই স্টেজ সাজানোর কাজে হেল্প করছে। শাহানা ইয়ারফোন কানে গুঁজে দিয়ে মনের সুখে গান শুনছেন। নিরিবিলি এক জায়গায় বসে। নিশান আশেপাশে তাকিয়ে দেখে শাহানা নেই। শাহানাকে খোঁজতে খোঁজতে ক্যাম্পাসের শেষ মাথায় দেখতে পায় তাকে। গাছের নিচে শান বাধা জায়গায় বসে আছে। নিশান শাহানার পাশে বসলো। শাহানা নিজের কানের ইয়ারফোন টা খুলে মাথা হেলিয়ে বলে এখানে কি??

সামনে পরিক্ষা, পড়াশোনা কেমন করছো?? শাহানা আয়েশি ভঙ্গিতে বলে আমার ওতো বিদ্যা সাগর হওয়ার ইচ্ছে নেই। নিশান মেকি হেসে বলে, পরিক্ষা শেষে তোমার সাথে আর দেখা হবে কি না কে জানে!! শাহানা কিছু ক্ষন থম মেরে বসে থেকে বলে, হুমম বিদ্যা সাগর তো আবার স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে পড়তে যাবে। তার পর আমরা কাউকে চিনবো কি না কে জানে। শাহানার মন টা ভিষন খারাপ হয়ে গেল। নিশান আকাশের দিকে চেয়ে বলে অনেক বেশি মনে পড়বে তোমাদের।

তার পর কি যেন ভেবে হেসে হেসে বলল,তোমাকে একটা কাজ করতে দিবো পারবে??? উৎসুক জনতার মত প্রশ্ন করে
কি কাজ?? আসলে কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। কি বলবে বল এতো ভাবতে হবে না। ঐ আসলে আমি না এক জন কে লাইফ পার্টনার হিসেবে চাই। কিন্তু কিছুই তেই বুঝতে পারছি না কিভাবে বলবো‌ তাকে?? নিশানের বুক টা দুরু দুরু করে। শাহানা কার কথা বলছে?? ওহহ আচ্ছা তো আমি কি করতে পারি?? আসলে he is my best friend বন্ধুত্ব টা নষ্ট হয়ে যাবে কিনা এই ভয়ে বলতে পারছি না!! তুমি কি হেল্প করবে আমায় তাকে গিয়ে আমার ব্যাপারে বলবে?! নিশানের ভিতরে এবার হাতুড়ি পেটা শুরু করে দিয়েছে। অসহনীয় এক ব্যাথায় টনটন করছে বুকের পাঁজর। যেন তার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। কেন হচ্ছে তার এমন?? সে তো সব সময় চায় শাহানা অন্য কারো সাথেই ভালো থাকুক।। তার মনে যে অনুভূতি কাজ করে তা যেন শাহানা তার প্রতি না করে। তাহলে এখন এমন লাগছে কেন?? কিন্তু শাহানা কার কথা বলছে বেস্ট ফ্রেন্ড বলতে কাকে বুঝাচ্ছে সে। তার বেস্ট ফ্রেন্ডের তালিকায় তো মিনাল,মেহমেত,আর নিশান নিজেই।

নিশান যত পারে নিজেকে সংযত রেখে বলে,তো তার নাম কি???
শাহানা ফট করে বলে উঠে মেহমেত!!!

চলবে _____?????

কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হলো…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here