#ক্রাশ
#পর্ব_০৮
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
আপনি কি করছেন এসব?
ছাড়েন আমাকে?
এভাবে জড়িয়ে ধরছেন কেনো?
তাছাড়া আপনি তো আমাকে ভালোই বাসেন না।
আপনাকে নাকি সবাই জোর করে বিয়ে দিয়েছে।
তাহলে এখন এমন করতেছেন কেনো?
হঠাৎ করে আপনার চেহারা পালটে গেলো কিভাবে?
সাগর মোহনার কথা শুনে তাকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরলো।আর বললো,
আমি ভালোবাসি না তো কি হইছে?
তুমি তো বাসো?
একজন বাসলেই হবে।
মোহনা তখন বললো,
আ আ মি,,,আপনাকে ভালোবাসি?
কে বললো সে কথা?
আমি তো আপনাকে বলি নি কখনো?
আমি আপনাকে ভালোটালো বাসি না।
সাগর তখন মোহনার হাত দুটি শক্ত করে ধরে বললো তাই?
যখন ভালোই বাসো না তখন আমাকে বিয়ে করলে কেনো?
মোহনা তখন বললো আপনি আমার জীবনের ফাস্ট ক্রাশ ছিলেন।
আপনাকে দেখার পর থেকে অন্য কোন ছেলেকে আজ পর্যন্ত ভালো লাগে নি।
আপনাকে আমি অনেক পছন্দ করি।
আপনাকে ছাড়া অন্য কোন ছেলেকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
তাই বিয়ে করেছি।
কিন্তু আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।
তাহলে কেনো আমার শরীর স্পর্শ করছেন?
সাগর তখন বললো মোহনা প্লিজ ঝামেলা করো না।
আর যেভাবে চিৎকার করছো সবাই তো ভাববে আমি তোমার সাথে ঝগড়া করছি।
প্লিজ কাছে এসো।
আজকের রাত টা আমাদের জীবনের অনেক মূল্যবান একটা রাত।
মোহনা তখন বললো এটাই তাহলে আপনার আসল রুপ?
আপনার আসল রুপ দেখার পর আর ভালো লাগছে না আপনাকে।
আমার থেকে দূরে সরে যান বলছি।
সবার সামনে কত ভদ্র সেজে থাকেন?
মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকান না।
এই কিছুক্ষণ আগেই আপনার মায়ের সামনে যা নয় তাই বলে আমাকে অপমান করলেন।
এখন ভালোবাসার অভিনয় করছেন?
যেদিন মন থেকে ভালোবাসতে পারবেন সেই দিন আমার কাছে আসবেন।
এখন ছাড়ুন আমাকে।
সাগর তখন বললো মন থেকে আবার কি করে ভালোবাসে?
আমি ওসব ভালোবাসা টালোবাসা কিছু বুঝি না।
আমার সাথে যেহেতু তোমার বিয়ে হয়েছে সেহেতু আজ থেকে তুমি আমার বউ।
আমি তোমার বর।
তুমি যেহেতু ছোট মানুষ নও।
যথেষ্ট বুদ্ধি হয়েছে।
সুতরাং এখন কি করতে হবে বুঝতেই তো পারছো?
মোহনা সাগরের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলো।
এই ছেলে এসব বলে কি?
তাহলে কি সে তার বাবা মার সামনে মিথ্যে অভিনয় করছিলো?
এমন ভাব দেখাচ্ছিলো মনে হলো সে জীবনেও আমার সাথে কথা বলবে না।
এখন তো দেখছি শুধু কথা বলা না,
সে তো শরীর পর্যন্ত ছুঁতে চাচ্ছে।
মোহনা তখন শান্তভাবে বললো আপনি প্লিজ তাড়াহুড়ো করবেন না।
আমি তো আর উড়ে গেলাম না।
আমি সারাজীবন আপনার পাশে থাকার জন্যই বিয়ে করেছি।
সবাইকে ছেড়ে, আমার বাড়ি ছেড়ে আপনার বাসায় চলে এসেছি।
এখন সেজন্য সবার আগে আপনার আর আমার মনের মিল হতে হবে।
আপনি আমাকে বুঝবেন।
আমি আপনাকে বুঝবো।
তারপর ভালোলাগা শুরু হবে।
ধীরে ধীরে তা ভালোবাসাতে পরিনত হবে।
একটা সম্পর্ক কে এইভাবেই গড়ে তুলতে হয়।
শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটালেই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরি হয় না।
আমি আপনাকে মন প্রান দিয়েই ভালোবাসি।
এটাতে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু আপনি ভালোবাসা তো দূরের কথা আমাকে ঠিক করে চেনেনই না।
আগে ভালো করে চিনুন।
তারপর স্বামীর অধিকার ফলাতে আসবেন।
সাগর তখন মোহনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো এতোক্ষন ধরে অনেক বকবকানি শুনলাম।
আরো কিছু বলবে?
যদি বলা হয়ে থাকে আমাকে এবার কিছু বলতে দাও।
মোহনা তখন বললো কি বলবেন?
বলুন?
সাগর তখন মোহনার হাত ধরে বললো আমি তোমাকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছি।
কেউ আমাকে জোর করে বিয়ে দেয় নি।
আর আমি তোমাকে ভালোওবাসি।
একদম মনের গভীর থেকে বলছি।
এতে কোন সন্দেহ নেই।
হয়েছে এবার?
মোহনা তখন সাগরের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো না হয় নি?
এই কিছুক্ষন আগেই সবার সামনে বললেন আপনাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আর এখন আমার সামনে বলছেন আপনি আপনার নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছেন।
এই কয়েক ঘন্টায় আপনার মন চেঞ্জ হলো কি করে?
আমি বুঝতে পারছি না কিছু।
প্লিজ আমাকে ক্লিয়ার করে বলেন।
সাগর তখন বললো আমি ক্লিয়ার করে কিছু বলতে পারবো না।
কারন এসব কথা যদি এখন আমি বলা শুরু করি তাহলে রাত শেষ হবে,দিন শেষ হবে।
তবুও আমার কথা শেষ হবে না।
তারচেয়ে বরং কাছে এসো।
মন ভরে একটু আদর করতে দাও।
অনেক বছরের বাসনা পূরন হবে আজ।
প্লিজ বাধা দিও না।
মোহনা সাগরের কথা শুনে দূর্বল হয়ে গেলো।
কিন্তু তার কৌতুহল মন মানতেই চাচ্ছে না।
সাগর এভাবে বলছে কেনো?
নিশ্চয় কোন কারন আছে।
তাই মোহনা এবার নিজেই সাগরের হাত দুটি ধরে বললো,
আজকে আমাদের বিয়ের প্রথম রাত।
আমিও চাই না রাত টা অবহেলায় পার করে দিতে।
কারন আমি আজ আমার ভালোবাসার মানুষ কে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেয়েছি।
যাকে আমি দীর্ঘ বছর ধরে এক তরফা ভাবে ভালোবেসে আসছি।
যখন আমি ভালোবাসা কি জিনিস বুঝতাম না তখন থেকেই আপনাকে ভালো লাগতো।
এই ভালো লাগা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রুপ নিলো।
আপনি বুঝতে পারতিছেন আমার মনের অবস্থা???
একটা মানুষ কাউকে কত টা ভালোবাসলে এভাবে নয় টি বছর শুধুমাত্র একটি মানুষ কেই মনের ভিতর রাখতে পারে?
এই বলে মোহনা তার ডায়রি টা বের করে সাগর কে দিলো।
সাগর ডায়রির প্রতিটা পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখলো।
মোহনা তখন বললো আপনি কি বুঝতে পারছেন আমি আপনাকে কত টা ভালোবাসি?
কিন্তু শুধু আমি একাই ভালোবাসলে তো হবে না।
আপনাকেও আমাকে প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসতে হবে।
সাগর সেই কথা শুনে মোহনাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
তুমি শুধু একাই ভালোবাসো না আমাকে।
আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
শুধু তুমি একাই কষ্ট পাও নি।
সমপরিমাণ কষ্ট আমিও পেয়েছি।
তুমি তবুও তোমার ভালোবাসা প্রকাশ করেছো।
মনের কষ্ট দূর করার জন্য ডায়রিতে সব লিপিবদ্ধ করে রেখেছো।
কিন্তু আমি আমার মনের কথা মনের ভিতরই রেখেছি।
তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে না পেরে যন্ত্রনা টা আরো দ্বিগুন হয়েছে আমার।
মোহনা সাগরের কথা শুনে কাঁদতে লাগলো।
তারপর সাগর কে বললো তুমি সত্যি আমাকে ভালোবাসো?
কবে থেকে?
আর কিভাবে?
আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমিও আমাকে ভালোবাসো।
সাগর তখন বলা শুরু করলো,
আমি তখন মাত্র ক্লাস সেভেনে ছিলাম।
ফাস্ট তোমাকে আমি তোমার বাবার রিসোর্টে দেখি।
তখন অবশ্য জানতাম না ওটা তোমার বাবার রিসোর্ট ছিলো।
তোমাকে প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খেয়ে যাই।
মানে ভালো লাগে আর কি।
তখন তো ভালোবাসা কি জিনিস সেটা বুঝি নি।
তারপর থেকে আর একদিনও দেখি নি তোমাকে।
কিন্তু অনেক খুঁজেছি।
তোমাকে দেখার আশায় প্রায় দিনই রিসোর্ট এর আশেপাশে যেতাম।
কিন্তু কেউ দেখবে ভেবে বেশিক্ষন থাকতেও পারি নি।
কিন্তু একবছর পর তোমাকে আমাদের স্কুলে দেখলাম।
মন টা খুশিতে নেচে উঠলো।
আমাকে সবাই ভদ্র ছেলে ভাবে।
আমি কখনো কোন মেয়ের দিকে তাকাই না।
তুমি তো জানো আমি বই পড়তেই বেশি ভালোবাসি।
আমার নজর সবসময় বই এর দিকে থাকে।
ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তোমার দিকে তাকানোর সাহস পেতাম না।
তবে লক্ষ্য করেছি তুমি প্রায়ই আমাদের ক্লাসরুমের সামনে আসতে।
আবার পানি খেতে খেতে আমাদের রুমের দিকেই তাকিয়ে থাকতে।
মোহনা সাগরের কথা শুনে অনেক বেশি অবাক হলো।
সে তো একদিন ও দেখে নি সাগর কে তার দিকে তাকিয়ে থাকতো।
মোহনার আর তর সইছে না সে বললো তারপর?
সাগর বললো তারপর আবার কি?
ওই যে ভদ্র ছেলের খেতাব পেয়েছি সেজন্য তোমার দিকে তাকানোর সাহস টুকুও ছিলো না।
শুধু মনে মনেই রেখেছি।
কাউকে বলিও নি।
তাছাড়া আমার ফ্যামিলি যদি জানে কোন মেয়ের সাথে আমার চক্রর চলছে তাহলে তো বাড়ি থেকেই বের করে দেবে।
কারন বিয়ের আগে ছেলেমেয়েদের এসব প্রেম ভালোবাসা আমার ফ্যামিলির কেউ পছন্দ করে না।
সেজন্য আমাদের ফ্যামিলিতে সবাই কে তাড়াতাড়ি করে বিয়ে দিয়ে দেয়।
মোহনা তখন বললো তারপর কি হলো?
তাড়াতাড়ি বলো?
আর বিয়ে টা কি করে হলো?
সাগর তখন মোহনাকে বললো বাকি কথা কাল বলবো।
এখন আর বলতে ইচ্ছে করছে না।
মোহনা সেই কথা শুনে সাগরের হাত ধরে জোড়াজুড়ি করতে লাগলো।
প্লিজ বলো প্লিজ বলো।
আমি আজকেই শুনতে চাই।
সাগর তখন বললো আগে কিস করো তারপর বলবো?
—কি বলছো এসব?
আমি কিস করতে পারবো না।
–তাহলে বাকি কথাও আর বলবো না।
এই বলে সাগর শুয়ে পড়লো।
মোহনা তখন সাগর কে জোর করেই টেনে তুললো আর বললো প্লিজ বলো।
এরকম করতেছো কেনো?
পরের টুকু না শুনলে আমার কিছুতেই ঘুম ধরবে না।
–বললাম তো আগে কিস করো।
তারপর বলবো।
মোহনা সেই কথা শুনে সাগরের গালে আলতো করে একটা কিস করলো।
আর বললো এখন বলো।
সাগর সেই কথা শুনে হা করে মোহনার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আর বললো এটা কি দিলে?
এর চাইতে তো মশার কামড় খাওয়া অনেক ভালো।
অন্ততপক্ষে বোঝা যায় কিছু একটা শরীর স্পর্শ করলো।
কিন্তু তোমার কিস তো অনুভবই করতে পারলাম না।
মোহনা সে কথা শুনে বললো তুমি কিন্তু আমার সাথে চিটিং করতিছো।
কিস করতে বললে করলাম।
আর এখন বলছো অনুভব করতে পারো নি?
তারপর কি হলো বলো না?
আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিলো কে?
সাগর তখন বললো ভালো করে আগে কিস করো।
যাতে আমি অনুভব করতে পারি।
তারপর সব বলবো।
মোহনা সেই কথা শুনে আবার কিস করলো সাগরের গালে।
এবারও সাগরের পছন্দ হলো না।
তখন মোহনা রাগ করে বললো কোথায় কিস করলে তুমি খুশি হবে?
আমি সেখানেই করবো।
সাগর সেই কথা শুনে হেসে উঠে বললো সত্যি বলছো?
–হ্যাঁ সত্যি।
–তাহলে আমার ঠোঁটেই কিস করো।
মোহনা তখন বললো আরেকবার ভেবে বলো।
কারন এবার এমন কিস করবো যাতে তুমি অনুভব করতে পারো।
সাগর মোহনাকে তখন ধমক দিয়ে বললো এতো দেরী করছো কেনো?
তাড়াতাড়ি করো।
মোহনা সেই কথা শুনে সাগরের ঠোঁটে এমন ভাবে একটা কামড় দিলো যে সাগর জোরে চিৎকার করে উঠলো।
ও বাবা রে!!!!
বাঁচাও।
মরে গেলাম।
মোহনা সাথে সাথে সাগরের মুখ টিপে ধরলো।
এতো জোরে চিৎকার করছো কেনো?
সবাই কি ভাববে?
সাগর তখন বললো এইভাবে কেউ কামড় দেয়?
কত ব্যাথা পেলাম জানো তুমি?
মোহনা তখন বললো তুমিই তো বললে তুমি নাকি কিছু অনুভবই করতে পারছো না।
তাই ভাবলাম কিস টিস দিয়ে হবে না।
কামড় টায় পারফেক্ট হবে।
তোমার নাকি মশার কামড় খুব পছন্দ।
তা হলে আজ থেকে না হয় মশার বদলে আমিই কামড় দিবো।
তখন সাগর বললো খবরদার বলছি এই ভুল আর কখনোই করবে না।
এই প্রথম কেউ এভাবে এতো জোরে কামড় দিলো।
মোহনা তখন বললো, তার মানে এর আগেও কেউ কামড় দিয়েছে?
কে দিয়েছে?
সাগর বললো মহা ঝামেলায় তো পড়লাম।
কে আবার কিস দেবে?
সাগর তার ঠোট দুটি হাত দিয়ে বোলাতে লাগলো।
আর উহঃ উহঃ করতে লাগলো।
মোহনা তখন বললো ইসঃ অনেক ব্যাথা পাইছো?
দেখি একটু আমি বুলিয়ে দেই?
এদিকে সাগরের চিৎকার সবাই শুনতে পেলো।
কিন্তু কেউ উঠে এলো না।
সবাই সাগরের চিৎকার শুনে যে যার ঘর থেকেই হাসতে লাগলো।
সাগরের মা মনে মনে ভাবছে ছেলেটা তার আর বড় হলো না।
এখনো ছোটই রয়ে গেলো।
তবে বউমা তার যথেষ্ট চালাক।
দাদী ভাবছে একদম উচিত কাজ করছে মোহনা?
এতো বড় ছেলে হইছে তবুও বউ বোঝে না।
এদিকে দাদু আর সাগরের বাবা সাগরের এমন চিৎকার শুনে ভাবছে এই ছেলেটা মানসম্মান একেবারে শেষ করে দিলো।
কবে যে বুদ্ধি হবে এর?
সামিরা ভাবছে,নিশ্চয় ভাবী ভাই এর বিছানায় শুইছে দেখেই ভাই এভাবে চিৎকার করছে।
তা না হলে ভাবী নিশ্চয় ভাই এর মেজাজ খারাপ হওয়ার মতো কাজ করেছে।
সেজন্য ভাই রেগে গেছে।
সামিরা মোহনার জন্য আফসোস করতে লাগলো।
মোহনা নিশ্চয় ভাই এর এমন আচরনে কাঁদছে।
একটু গিয়ে দেখেই আসি।
যদি আবার রাগ করে মোহনা ঘর থেকে বের হয়ে আসে?
চলবে,,,,,,
পরবর্তী পর্ব পড়তে চাইলে অবশ্যয় লাইক কমেন্ট করতে হবে।