#খোলা_জানালা
#৩য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
সারা পাড়া জেনে গেলো আমার সম্পর্কে।সবার মুখে এক কথায় নাঈমের বউ ভালো না। নাঈমের বউ ভালো না।বাসর রাতে নিজের বর রেখে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যেতে গিয়ে ধরা পড়েছে নাঈমের বউ। ছিঃ ছিঃ ছিঃ!
নাঈম তার মার কাছে এসে বললো,’আম্মা, তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করতেছো। এইসব করে কিন্তু নিজের মান সম্মান নষ্ট করতেছো!’
আমার শাশুড়ি তখন রেগেমেগে আগুন হয়ে নাঈমকে বললেন,’লায়েক হয়ে গেছো তুমি?বউয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মে গেছে।যে মা তোমারে জন্ম দিছে তারে ভুইলা এখন বউয়ের সাফাই গাও! আমারে মান সম্মান শিখাও?’
নাঈম এবার ধীরে সুস্থে তার মাকে বললো,’আম্মা, তুমি প্রতিশোধের আগুনে কান্ড জ্ঞান হীন হয়ে পড়েছো! আর প্রতিশোধ তুমি কার থেকে নিচ্ছো? মীরার কী অপরাধ এখানে? ভুল করলে তার বাবা মা করেছে।সাহস এবং শক্তি থাকলে তার বাবা মাকে শাস্তি দাও
কথা শোনাও!’
নাঈমের মা ছেলের এমন প্রতিবাদী কন্ঠ শোনে খুব একটা অবাক হলেন না। বরং ঠোঁটের কোণে দুষ্টু এক চিলতে হাসি নিয়ে বললেন,’জানাবো।ওর মাকে এক্ষুনি জানাবো।জানাবো, কেমন পতিতা মেয়ে জন্ম দিয়েছে সে এই কথা! আমার কথা শোনার পর ওর মা গলায় দড়িও দিতে পারে লজ্জায়!’
নাঈমের মায়ের কথাগুলো শুনে লজ্জায়, ঘৃণায়,দুঃখে আমার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমার প্রতিবাদ করার ইচ্ছে হলেও প্রতিবাদ করছি না। প্রতিবাদ করছি না এইজন্য যে আমি এখানে মুখ খুললেই এখানে জমায়েত লোকেরা আমাকেই দোষবে। আমি যতই সত্য বলি তারা কখনো আমার সত্য তাদের কানে তুলবে না।
কিন্তু নাঈমের প্রতিবাদ আমার ভালো লাগছে। গতরাতে যে কাপুরুষ নাঈমকে আমি দেখেছিলাম সেই নাঈম আর এই নাঈমের মধ্যে অনেক পার্থক্য!
নাঈম এবার তার মাকে বললো,’তুমি মিথ্যে করে মীরাকে দোষছো। গতকাল আমিই জানলা দিয়ে মীরার সাথে কথা বলছিলাম।’
নাঈমের মা মুখ ভেঙচিয়ে বললেন,’বললেই হলো! আমি দেখেছি তুই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিস। এখন বউকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যে বলছিস।’
নাঈম তখন শব্দ করে হেসে বললো,’আম্মা, তুমি না মা!মা কী করে সন্তানকে এমন নিকৃষ্ট আদেশ নিষেধ করে? এই যে গতকাল আমার বাসর ছিল। সেই বাসরকে তুমি রক্তাক্ত করেছো। নিজের পুত্রবধূর নামে মিথ্যা কুৎসা রটাচ্ছো! পুত্রকে নিষেধ করেছো স্ত্রীর কাছে যেতে। তোমার কথা মেনেই আমি বাসর থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আসার পর মনে হলো আমি ঠিক করিনি। আমি ভুল করছি।বাবা মার সৎ আদেশ মানা যাবে কিন্তু অসৎ আদেশ মানলে উল্টো পাপ হবে।এটা ভেবেই আমি লুকিয়ে ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তুমি কিন্তু তা জানো যে আমি লুকিয়ে মীরার সাথে দেখা করতে গিয়েছি। জানার পরেও তোমার প্রতিশোধের আগুনে ওকে জ্বালানোর উদ্দেশ্যে তুমি মিথ্যে বলছো। তোমার পুত্র এবং পুত্রবধূর উপর মিথ্যে অপবাদ তুলছো!’
নাঈমের মা তখন জড়জড় করে কেঁদে ফেললেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বললেন ,’দেখেছো গো তোমরা দেখেছো? এই আমার কপাল। নিজের ছেলে ঘরে বউ এনেই মাকে কী রকম অপমান করছে?’
সবাই তখন হৈ চৈ শুরু করলো। তাদের মূলকথা একটাই।ছেলে বউভক্ত হয়ে গেছে।
আর ওই মেয়েটি এসে নাঈমের মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আহাজারি শুরু করলো।
নাঈম তখন তাকে ধমকে দিয়ে বললো,’তুই হলি বড় ডাইনি!তুই ই আম্মার কানে মন্রণা দিচ্ছিস?’
মেয়েটি মুখ ঝামটি দিয়ে বলল,’আমি কোন দোষে মন্ত্রণা দিতে যাবো?’
‘তোকে বিয়ে করিনি এই জন্য! আমি তোকে চিনি না তুই যে কত বদ? বিয়ের আগে তুই যখন আমায় প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলি আর আমি যখন না করলাম তখন তুই এর প্রতিশোধ নিতে কী করেছিলি মনে নাই? আমার বোনের মতো বান্ধবীর সাথে আমি নোংরা কী করেছি তুই মানুষের কাছে বলে বেড়াসনি?’
মেয়েটি তখন একেবারে চুপ মেরে গেলো। কিন্তু মুখ খুললো মেয়েটির খালা অর্থাৎ আমার শাশুড়ি। তিনি বললেন,’বাজে কথা বন্ধ কর।আর আমার সামনে থেকে এক্ষুনি চলে যা বলছি।’
নাঈম বললো,’চলে তো যাবোই। কিন্তু এখন না। যাওয়ার আগে আমি মীরার বাবা মাকে ফোন করে এখানে নিয়ে আসবো। তারপর তোমার শোধ তুমি ওদের কাছ থেকে নিবে।আর মীরাকে মুক্তি দিবে।’
নাঈমের মা ছেলের অতবড় সাহসীকতা হয়তো মেনে নিতে পারেননি।তাই তিনি নাঈমের গালে একটা চড় বসিয়ে বললেন,’আমার কথার বাইরে আরেকটা কথা বললে তোর জিহ্বা কেটে ফেলবো বেয়াদব। তুই ফোন করতে পারবি না। ফোন করবো আমি। ‘
বলে নাঈমের মা তার বুকের গোপন জায়গা থেকে মোবাইল ফোন বের করলেন। তারপর—
‘
#চলবে