গল্পটা_পুরনো পর্ব ৭+৮

#গল্পটা_পুরনো
পর্ব – ৭।
মুনিরা জলী।

* * *
তোয়া পিছনে তাকিয়ে দেখে শাহানা দড়জায় দাঁড়িয়ে আছে। ও তাকাতেই শাহানা বলে উঠেন,

” কিরে কোন জগতে ডুবে আছিস? এতক্ষন ধরে তোর ফোন বাজতেছে শুনতে পাসনা? আমি রান্নাঘর থেকে শুনতে পেলাম। ”

তোয়া ভিষন লজ্জা পায়। ভেবে পায়না কি বলা উচিৎ। আমতা আমতা করে বলে, ” একদম খেয়াল করিনি মামী। ”

‘ নিশ্চয়ই আম্মুর ফোন। ইস্! আমারই ফোন করা উচিৎ ছিল। ‘
ভাবতে ভাবতে ঘরে চলে আসে তোয়া । তখনই ফোনের রিং আবার বেজে ওঠে। দ্রুত পায়ে এসে খাটের উপর রাখা ফোন হাতে তুলে নেয় সে। কানে ধরে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠেন নাহিদা ,

” এই তোর আক্কেল? ফোন করার সময় তো তোর হয়ইনা, ফোন ধরারও সময় নেই? কি এমন মহাকাজে ব্যস্তরে তুই? ”

শাহানা ওর দিকে চেয়ে আছে দেখে আড়ষ্ট হাসে সে। ওর হাসি দেখে কি বোঝেন শাহানা কে জানে। উনি জবাবে হালকা হেসে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। তোয়া মাকে বললো ,

” সরি আম্মু, আমি এখনই তোমাকে ফোন করতাম। কিন্তু তার আগেই তুমিই ফোন করে ফেললে। ”

” কাল থেকেই তো এই কথাই বলছিস। কিন্তু এখনো সময় হয়ে উঠল কই? ”

” আমি সত্যি বলছি আম্মু, বিশ্বাস কর, একটু আগেই রুহী কলেজে গেল। তাই আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। এরমধ্যে তোমার ফোন আসায় একদম শুনতে পাইনি। ”

ওপাশে এত শোরগোল হচ্ছে যে ওর আম্মুর কথা স্পষ্ট শুনতে পারছেনা তোয়া। তাই কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করছিল সে। তাও ব্যর্থ হয়ে বললো ,

” আম্মু তুমি স্কুলে গিয়ে ফোন দিয়েছ কেন? কিছুই তো শুনতে পাচ্ছিনা। ”

” এখন স্কুলের সময় আমি বাসায় থাকব? ”

” তুমি তোমার অফিসেই তো? নাকি বাচ্চাদের ক্লাশে? এত শোরগোল কেন? ”

” বাচ্চারা স্কুলে আসতেছে এখন । ক্লাশ এখনো বসেনি। তাই এসময় বাচ্চাদের থামানো মুশকিল। সে যাকগে সবাই কেমন আছে বল? ”

” সবাই ভালো আছে আম্মু। তোমরা সবাই কেমন আছ? আব্বু , আপু ওরা কি করছে? ”

” ওরা এসময় যা করে তাই করছে। যার যার কাজে বেরিয়ে গেছে। ”

” তুমি কবে আসবে আম্মু? ”

” চাইলে তো কালই যেতে পারতাম। কাল থেকেই তো স্কুল বন্ধ থাকবে। কিন্তু নাশীদও যেতে চায়। তাই সম্ভবত আগামী সোমবার যাব ইনশাআল্লাহ। ”

তোয়া খুশিতে চঞ্চল হয়ে উঠে বললো , ” সত্যিই আম্মু ! সত্যি বলছ? ভাইয়াও আসবে? ”

” হ্যাঁ। নাশীদ আসছে। আমি রাজশাহীতে যাব শুনে অপেক্ষা করতে বলল। ”

” ভাইয়া দেশে আসবে কবে? আগে বলনি কেন? ”

” এই শুক্রবারে আসবে। আগে কিভাবে বলব? নাশীদ একটু আগে ফোন করেছিল। তখনই বলল। ”

তোয়া খুশি খুশি গলায় বলে , ” কতদিন পরে ভাইয়াকে দেখতে পাব ! তাই না আম্মু? উফফ আমার যে কি ভালো লাগছে! ”

নাহিদা হেসে বললেন , ” হ্যা মা। আচ্ছা শোন এখন আগ বাড়িয়ে কাউকে কিছু বলার দরকার নাই। আগে নাশীদ দেশে আসুক। তারপর না হয় বলা যাবে। ঠিক আছে? ”

তোয়া গলার টোন নিচু করে বললো , ” আমি কাউকে কিছুই বলবনা। তোমরাই এসে সারপ্রাইজ দিও। খুব মজা হবে। ” বলেই খিল খিল করে হেসে ওঠে সে।

” আচ্ছা শোন। ” ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন নাহিদা, ” ছোঁয়া আছে সামনে। তোর সাথে কথা বলবে। ”

তোয়া হঠাৎ খেয়াল করে কোন আওয়াজ আসছেনা এখন। সে বলল, ” তুমি কি এখন উপরে? কোনো চিল্লাচিল্লি শোনা যাচ্ছেনা যে? ”

” হ্যাঁ আমি এখন বাসায়। আচ্ছা নে ছোঁয়ার সাথে কথা বল। ” একটু পর ছোঁয়ার গলা ভেসে এলো ।

” হ্যাঁ তোয়া কি খবর তোর? ”

ছোঁয়ার কণ্ঠ শুনে তোয়া উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলল, ” খুব ভালো আপু। ভাইয়া আসছে। তার মানে এই মাসেই তোমার বিয়ে , তাই না? উফ ! ভাবতেই আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে ! ”

” এতো আনন্দ আপাতত তুলে রাখেন বুবুন। ” ছোঁয়া বললো গম্ভীর স্বরে। ” যেই কাজে গেছেন সেই খানে আগে মনোযোগ দেন। আমি নিশ্চিতরূপে বলতে পারি ওখানে যাওয়ার পর থেকে তুই এখনো বই ধরিস নাই। ঠিক কিনা বল? ”

তোয়া মোবাইলটা মুখের সামনে এনে ভেংচি দেখাল। আবার কানে ধরে বলল ,

” ধুরো! আসছে আমার আম্মাজান ! খালি শাসন করতে জানে। উফফ তোমার জালায় এখানে এসেও শান্তি নাই। আমি এখন কই যাই ! ”

ছোঁয়া ধমকে উঠে বললো , ” এই তোর নাটক থামা তো। ঢোঙি একটা। এতো ঢং শিখছিস তুই? এর থেকে পড়া শিখে পরীক্ষার প্রস্তুতিটা ভালো মত নে। ”

” শোন আপু আমি ভালো ভাবেই প্রিপারেশন নিয়েছি। সো আমাকে নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। তুমি তোমার বিয়ের প্রিপারেশন নাও। ”

” বিয়ের আবার কি প্রিপারেশন নিব? শপিং চলছে। অন্যান্য কাজ আম্মু আব্বু দেখছে। ”

” তুমি একটু ভালো করে নিজের যত্ন নাও।পারলার যাও। ফেসিয়াল , পেডিকিউর , মেনিকিউর এসব কর।”

” ওরে আমার পাকা বুড়িরে ! এখন তোর কাছে এসব শিখতে হবে? নিজে কখনও করেছিস এসব? আসছে আমাকে বুদ্ধি দিতে ! আগে নিজের চরকায় তেল দে।”

” আমার এখন বিয়ে হচ্ছে নাকি? যখন হবে তখন দেখা যাবে । আপাতত আমার স্কিন খুবই ভালো। তাই এসবের কোন দরকার নেই। বুঝলে? ”

আরও কিছু টুকটাক কথা বলে ফোন রেখে দিয়ে এবার বই নিয়ে বসে তোয়া। আসলেই যদিও কাল রাতে কিছুক্ষণ পড়তে বসেছিল , সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য । নাহ আর সময় নষ্ট করা যাবেনা। আজ সারাদিন মন দিয়ে পড়তে হবে। ওর মনে পরল , বিকেলে মার্কেটে যাওয়ার কথা। তারপর ভাবল, ‘বিকেলে তো এমনিতেই পড়িনা। শপিংএ গেলে বরং মাইন্ড ফ্রেশ হবে। ‘ তাই আপাতত ভাবাভাবি মাথা থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করে লক্ষী মেয়ের মতো বইয়ের দিকে মনোযোগ দেয় তোয়া।

* * *
রাদীবের আজ বেশি ক্লাশ ছিলনা। তাড়াতাড়ি ক্লাশ শেষ হওয়ায় বন্ধুদের সাথে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছে সে। কান্তা হঠাৎ বলে উঠলো ,

” তুই কিরে বলতো? সবাই ক্লাসের পরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় , আর তুই সোজা এসে লাইব্রেরিতে ঢুকে পড়তে বসে যাস। একদম নিরামিষ লাইফ স্টাইল তোর। ”

রাদীব দাঁড়িয়ে যায়। কান্তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

বিরক্তিমাখা স্বরে বলে , ” আমি তোকে জোর করে ধরে আনছি? তোর আড্ডা দিতে মন চায় তো যানা।”

” কাদের সাথে আড্ডা দেব? মানুষ আড্ডায় মেতে উঠে বন্ধুদের সাথে। আর আমার বন্ধু তো তোরা। ”

জারীফ মাঝে বলে উঠে , ” ফালতু তর্কাতর্কি বন্ধ কর। রাদীবের পড়া থাকলে ও পড়বে না? তুই তো জানিস রাদীব স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য প্রান পণ চেষ্টা করছে। তাই সময় নষ্ট না করে সেখানেই ফোকাস করা বুদ্ধিমানের কাজ না? ”

রাদীব এবার হেসে বললো , ” এমনিতেও আমি আজ তাড়াতাড়ি বাসায় যাব। একটা ইম্পর্ট্যান্ট নোট নিতে হবে। তোদের আমার সাথে আসার দরকার নেই।নোট নেয়া হলেই আমি চলে যাব। ”

” কান্তা প্রতিবাদ করে বললো , ” আয়ান চলে গেল। এখন তুইও এত জলদি চলে যাবি? ধুর ভাল্লাগে না। ”

জারীফ বললো , ” এখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়ার ইচ্ছা পুরোন করছিস নাকি? হু? ভিতরে চল। ”

ওরা তিনজন লাইব্রেরির ভিতরে ঢুকে গেল। বুক শেল্ফ থেকে যারযার মত বই নিয়ে পড়তে বসে যায় তারা। যেহেতু এখানে বেশি কথা বলা নিষেধ। তাই নীচু স্বরে পড়ার ফাকে টুকটাক কথা চলছে। একটু পরে রাদীবের বন্ধু সায়েম আসে সেখানে। ওকে দেখে অবাক হয় রাদীব। গলা খাদে নামিয়ে বলে সে,

” কিরে তুই এখানে? ”

” হ্যারে বাসায় বসে বোর হচ্ছিলাম। তাই চলে এলাম। জানতাম ক্লাশে না থাকলে তোকে এখানেই পাব। তাই সোজা এখানেই চলে এলাম। ”

কান্তা হেসে বললো , ” খুব ভালো করেছ এসে। তা কেমন আছ? ”

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমরা সবাই কেমন আছ?

জারিফ জবাবে বলল, ” আমরা সবাই একদম ফাস্ট ক্লাশ আছি। তো কতদিন থাকছ এবার? ”

” হপ্তা খানেক থাকব। ”

” মাত্র এক সপ্তাহ? ” অবাক হয়ে বলল কান্তা, ” তুমি না সেমিস্টার ফাইনাল দিয়ে এলে? ”

হালকা হেসে বলল সায়েম, ” হ্যাঁ তা ঠিকই। কিন্তু এবার বেশি দিন ছুটি নাই। নেক্সট উইকেই ক্লাশ শুরু হয়ে যাবে। ”

রাদীব এতক্ষন চুপচাপ ছিল। এবারে মুখ খুলল সে,

“কোনো দরকার ছিল? নাকি এমনি ঘুরতে এসেছিস?”

সায়েম কিছু বলার আগেই জারিফ বলে উঠলো ,

” কেন? আসছে তো কি হইছে? আসছে ভালো হইছে। এই সুযোগে আমাদের সাথেও দেখা হয়ে গেলো। ” বলেই হাসি মুখে সায়েমের দিকে তাকাল। বললো , ” তাইনা ব্রো? ”

সায়েম জবাব কেবল মুখে হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। এবার রাদীব উঠে দাঁড়িয়ে বলে ,

” এখানে দাঁড়িয়ে এত কথা বলা ঠিক হচ্ছেনা। চল বাইরে গিয়ে কথা বলি। ” জারিফ ও কান্তার দিকে তাকিয়ে বলল, ” তোরা কি আরও কিছুক্ষণ এখানে থাকবি? ”

কান্তা বলল , ” এইতো একটু বাকি আছে। কমপ্লিট করেই যাই। তুই যা, সায়েম এসেছে , ওকে সময় দে। ”

” আচ্ছা শীঘ্রই দেখা হবে তাহলে। আসি।” ওদের দিকে তাকিয়ে বলে সায়েম। ওরাও হাসি মুখে ওদের বিদায় দিল। ওরা লাইব্রেরি ছেড়ে বেরিয়ে এসে দড়জার সামনে দাঁড়ালো।

রাদীব প্রশ্ন করে, ” বাসায় যাবিত? ”

” হ্যাঁ সেই জন্যই তো আসছি। ” একটু থেমে আবার বলে ওঠে সায়েম, ” এখানে দাঁড়িয়ে কেন আমরা? কোনো কাজ আছে? ”

রাদীব আনমনে তাকিয়ে ছিল সামনের রাস্তার দিকে। ওভবেই জবাব দিল সে, ” হ্যাঁ একজনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ঐযে আসছে। ”

বলতে বলতেই একটা ছেলে এসে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে সালাম দিল। রাদীব সালামের জবাব দেয়। ছেলেটি লাজুক হেসে বলল,

” সরি ভাইয়া ইম্পর্টেণ্ট ক্লাশ ছিল তাই একটু দেরি হলো। ” বলে হাতে ধরে রাখা কাগজ গুলো রাদীবের হাতে বারিয়ে দিল। রাদীব কাগজ গুলো হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা গুলো উল্টে পাল্টে দেখে নিয়ে বলল ,

” ঠিক আছে। তোমাকে থ্যাংকস ভাইয়া। সময় বের করে পেপার গুলো যোগাড় করে আনার জন্য। ”

ছেলেটা আবারও লাজুক হেসে বলল , ” কোনো ব্যপারই না। ভাইয়া। আপনি এসব বলে আমায় লজ্জায় ফেলছেন। ”

ছেলেটা বিদায় নিয়ে চলে যেতেই সায়েম বলল , ” এগুলো কিসের পেপার? জুনিয়র ছেলে মনে হয়? ওর কাছে হঠাৎ কি দরকার পরল? ”

” ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নোট , সাজেশন।”

” তোদের কোনো আত্মীয় পরীক্ষা দিচ্ছে নাকি? ”

” নাহ। শাহীলের কাজিন তোয়া ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছে। ওর জন্যই । ”

চোখ দুটো বড় বড় করে খুব আমুদে গলায় বলে ওঠে সায়েম , ” ও…ও…ও ঐ কিউট মেয়েটা ! আচ্ছা ওর নাম তাহলে তোয়া। আর ও ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছে। রাইট? ”

রাদীব বিরক্তি বোধ করে সায়েমের কথা শুনে। তোয়ার প্রতি সায়েমের এমন বারবার আগ্রহ দেখে মনে মনে ও বেশ রেগে যায়। কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করেনা। আবার নিজের হঠাৎ এমন রেগে যাওয়াতে নিজেই অবাক হয় সে। তোয়ার প্রতি সায়েম আগ্রহী হতেই পারে। এতে ওর রাগ হওয়ার নিশ্চয়ই কোনো কারণ নেই। তাহলে? কেন ওর এমন লাগছে? কেন? কোন জবাব খুঁজে পায়না রাদীব।

” এই রাদীব। কোন জগতে আছিস তুই? ”

সায়েমের ডাকে সম্বিৎ ফিরে তাকায় রাদীব।

” হ্যাঁ। চল বাসায় যাই। ” বলেই সোজা হনহন করে হাটতে হাটতে সামনে রাস্তায় নেমে যায় সে। এক মুহূর্ত হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে প্রায় ছুটতে ছুটতে রাদীবের পিছু নেয় সায়েম। হাপাতে হাপাতে বলে সে ,

” কি হলো ব্যপারটা? তুই কি কোনো কারণে রেগে গেছিস? আমি কি রাগার মত কিছু বলেছি? সত্যি বুঝতে পারছিনা। ”

থমকে দাঁড়ায় রাদীব। বড় করে একটা নিঃশ্বাস নেয় সে। সত্যিই তো হঠাৎই ওর মন খারাপ হয়ে গেছে। কোনো কারন ছাড়াই। না। কারণ তোয়া। দু’দিনের দেখা হওয়া মেয়েটাকে নিয়ে ও এমন পজেসিভ আচরণ করছে কেন? এটি ঠিক না। নিজের মনের উপর নিজেরই নিয়ন্ত্রণ থাকছেনা।এমন হওয়া উচিৎ না। অজান্তেই মাথা নাড়তে থাকে সে।

কাধের উপর হাতের চাপে সায়েমের দিকে তাকায় রাদীব। সায়েম প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে দেখছে ওকে। এবার বললো সে ,

” আবার কোথায় হারিয়ে গেলি? কি হয়েছে বলত তোর? এনি প্রবলেম? ”

” কিছু হয়নাই। ” বলে হাসল রাদীব। ” দেরি হচ্ছে। বাসায় যাই আগে তারপর কথা বলি , ঠিক আছে? ”

সায়েম আর কথা বাড়ায় না। সম্মত হয়ে রাদীবের পাশাপাশি হাটতে শুরু করে সে। দুজন ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসে। একটা রিক্সা নিয়ে উঠে বসে দুজনে। তারপর রিক্সা বাসার উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ।
#গল্পটা_পুরনো
পর্ব – ৮
মুনিরা জলী।

* * *
” আ… পু… ”

বহু দুর হতে ভেসে ভেসে আসছে শব্দটি। ভেসে আসা শব্দটি তোয়ার কানের ভিতরে সুরসুরি দিয়ে যাচ্ছে যেন। তোয়া নড়াচড়া করে আবার আরেক পাশে ফিরে শোয়। কিন্তু আরামের ঘুম তার স্থায়ী হতে পারেনা। এবার তার কানে শব্দের সুরসুরি নয়, যেন কিছু সুরসুর করে ঢুকছে তার কানে। আরামের ঘুম ছুটে যায় তোয়ার। লাফিয়ে উঠে বসে সে। রুহী খিলখিল করে হেসে ওঠে। ঘুমের ঘোর কেটে ধাতস্থ হতে সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড। তারপর রুহীর দিকে তাকায় তোয়া। ওর দৃষ্টিতে রাগের সাথে বিরক্তিও খেলা করছে।

রুহী হাসিমাখা মুখে বলে ওঠে , ” বাব্বাহ আপু তুমি দেখছি একেবারে কুম্ভ কর্ণের মতো ঘুমাও। এতক্ষন ধরে ডাকছি তোমার ঘুমই ভাঙেনা। ” বলেই আবার হাসতে শুরু করে সে।

এতক্ষনে তোয়া নিজেকে সামলে নিয়েছে। লাজুক হেসে বলে ,

” আসলে পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কাঁচা ঘুম তো তাই বুঝতে পারিনাই কেউ ডাকছে নাকি স্বপ্ন দেখছিলাম। ” কথা শেষ করে বালিশের পাশে পরে থাকা খোলা বইটা হাতে নিয়ে বন্ধ করে আবার রেখে দেয় তোয়া। তারপর বলে সে ,

” তুই কখন ফিরেছিস? ”

” এইতো একটু আগেই ফিরেছি। ” তোয়াকে তাড়া দিয়ে আবার বলে রুহী , ” এবার ওঠতো ,আমার সঙ্গে উর্বিদের বাসায় যাবে চল। ”

তোয়া অবাক হয়ে বলে , ” এই ভর দুপুরে উর্বিদের বাসায় যেতে হবে কেন? ”

” দরকার আছে । এখন চলতো। ওখানে গেলেই তো দেখতে পাবে। ”

অগত্যা খাট থেকে নেমে দাঁড়ায় তোয়া। জামা টেনে ঠিক করে ওড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বললো ,

” ঠিক আছে চল তবে। ”

তোয়া আজ সারাদিন মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছে। যোহরের আজান দিতেই ঝটপট উঠে নামাজ আদায় করে নানির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আবার বই নিয়ে বসেছিল । কিন্তু পড়তে পড়তে একসময় কখন যে ঘুমিয়ে যায় সে টেরই পায়নি। অবশেষে রুহীর ডাকে এখন তার ঘুম ভাঙলো।

* * *
দড়জা খুলতেই হুড়মুড় করে দুজনে ভিতরে ঢুকে পরে। ওদেরকে এসময় দেখে চোখ দুটি বড় বড় হয়ে যায় উর্বির। তোয়া ও রুহী দুজনের হাতে বড় সড় দুটো ঢাকা দেয়া ট্রে দেখে অবাক হয়ে বলল সে,

” এসব কি? এতোসব কি এনেছ তোমরা? ”

তোয়া আর রুহী ভিতরে ঢুকেই হাতে ধরা ট্রে গুলো সোজা ডাইনিং টেবিলের উপর নামিয়ে রাখে। তারপরে উর্বির দিকে ফিরে রুহী বললো ,

“তোয়া আপুর অনারে আজ বাসায় একটু স্পেশাল রান্না করা হয়েছেতো , তাই আম্মু তোমাদের জন্য এগুলো পাঠিয়েছেন। ”

” এসব ঝামেলার কি দরকার ছিল বলত? ”

তোরা হেসে বলে , ” ঝামেলা কোথায় হলো? খাওয়ার জন্যইতো মামী রান্না করেছেন। আর সেগুলো প্রতিবেশীর সাথে শেয়ার করে খাওয়ার আনন্দই আলাদা। যেটা ঢাকা শহর থেকে এখন প্রায়ই উঠেই গেছে বলতে পার। এখানে এখনো এসবের প্রচলন আছে দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।”

” হ্যাঁ আপু ঠিকই বলেছ। ” বলল উর্বি , ” কিন্তু কি জান কাকি প্রায়ই এটা সেটা রান্না করে পাঠায়। আর কাকির হাতের রান্নাও খুব মজার হয় । ” বলে হাসল সে।

তোয়ার হাসিমাখা চোখ দুটি ঘরের চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল । রুহী আর উর্বি কথা বলছিল। তোয়ার হঠাৎ মনে পরলো রাদীব সেদিন বকুল গাছের কথা বলছিল। তোয়া জিজ্ঞেস করল ,

” তোমাদের উঠানটা কোনদিকে? ”

” উঠানে যাবে? ”

” হুম। আসলে ঢাকায় আজকাল এমন উঠান ওয়ালা বাড়ির দেখা পাওয়া অলীক ব্যাপার। তাই দেখতে চাইছিলাম। ”

উর্বী এগিয়ে এসে তোয়ার কাধের উপরে একটা হাত রাখলো। মিষ্টি হেসে বললো সে ,

” বেশ তো , এসো আমার সাথে। ”

উর্বীর সাথে ওরা ভিতরের দিকের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। উঁচু বারান্দা থেকে তিন ধাপের সিড়ি বেয়ে নিচে উঠানে নেমে এলো তারা তিনজন। তোয়া উচ্ছলিত হয়ে প্রায় দৌড়ে বকুল গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়ালো। গাছটা বেশি বড় না। হাতের নাগালের মধ্যে ঝুলে থাকা ডালপালার মধ্যে ফুল ফুটে আছে। ফুলের ঘ্রাণে পুরো উঠোনটা ম-ম করছে। তোয়া হাতবাড়িয়ে ঝুলে থাকা একটা ডাল টেনে নিয়ে কয়েকটি ফুল ছিড়ে নিল। কিছুক্ষণ পর ওরা ঘরের ভিতরে চলে এলো। এতক্ষণ হলো ওরা এসেছে উর্বী ছাড়া আর কাউকে এখন পর্যন্ত দেখেনি। কারও সারাশব্দ না পেয়ে শেষে কৌতুহল বসত তোয়া হঠাৎই জিঙ্গেস করে বসল ,

” বাসায় কি তুমি একা? আর কাউকে দেখছিনা যে? ”

” হ্যাঁ আপাতত একাই। তবে সবাই অন দা ওয়ে। এক্ষুণি এসে পরবে হয়ত। ” তখনই কলিং বেল বেজে উঠতেই উর্বি বলল, ” ঐ দেখ বলতে না বলতেই মা বা ভাইয়া কেউ একজন চলে এসেছে । ”

উর্বি দ্রুত পায়ে হেঁটে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। প্রায় সাথে সাথেই হাসি মুখে রাদিব ভিতরে ঢোকে , তার পিছু পিছু সায়েম ঢোকে। উর্বীকে দেখে সায়েম বলে ওঠে ,

” কি খবর উর্বী? সব কিছু ঠিক ঠাক চলছে তো? ” বলতে বলতেই থমকে যায় সে যখন তার চোখ পরে তোয়ার উপর। তোয়ার দৃষ্টি তখন রাদীবের উপর। ওরা দুজনে ভিতরে চলে এলে পরে উর্বি দড়জা লাগিয়ে দিল। ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে রাদীবও তোয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিল। কাছে চলে আসছে দেখে তোয়া এবার লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেয়। রাদীব একেবারে তোয়ার পাশেই গিয়ে দাঁড়িয়ে হাতের ফাইলটা টেবিলের উপর রেখে একটা গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে পান করে। তোয়ার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে ততক্ষণে । পা দুটি যেন মেঝেতেই জমে গেছে। মনে প্রানে চাইলেও সে সরে যেতে পারছেনা। রাদীব এত কাছে দাঁড়িয়ে আছে যে একটু নড়াচড়া করলেই ছুয়ে যাবে একে অপরকে। রাদীবের শরীরের ঘ্রাণ তোয়াকে রিতিমত বিচলিত করে ফেলছিল। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে আবার শ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করে তোয়া। যেইনা সরে যেতে নেয় , তখনি রাদীব তোয়ার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে ,

” ভালোই হলো এখানেই তোমার দেখা পেয়ে গেলাম।” কথাটা বলেই টেবিলের উপর থেকে ফাইলটা তুলে নেয় সে। ফাইল থেকে পেপার গুলো বের করে তোয়ার দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল সে ,

” এইযে তোমার শিটগুলো নিয়ে যাও। ”

তোয়া একটু ইতস্তত করে তারপর হাত বারিয়ে শিট গুলো নেয়। এক পা পিছিয়ে গিয়ে তারপর চোখ তুলে রাদীবের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললো ,

” থ্যাংকস। ” বলেই আবার চোখ নামিয়ে নেয় সে। কারণ রাদীবের হাসি মাখা চোখ দুটি তখন ওর মুখের উপরেই নিবন্ধ হয়ে ছিল। তোয়া চোখ তুলে তাকাতেই ওদের চোখাচোখি হয়ে যায়। রাদীব হাসি মুখেই বলে ,

” ইটস ওকে। এটা এমন কিছুই না। ”

রাদীবের মুখে তখনও মিটিমিটি হাসি লেপ্টে আছে। মেয়েটির লজ্জায় রাঙা মুখটা দেখতে কি অপুর্ব লাগছে। আচ্ছা সব মেয়েদেরকে লাজুক মুখ কি একই রকম সুন্দর লাগে? নাকি এই মেয়েটাকেই এমন সুন্দর লাগছে? ভেবে কোনো জবাব খুজে পায়না সে। তোয়া এবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রাদীবের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে। মানুষটা এখনো ওর দিকেই কেমন যেন খুব মজা পাচ্ছে এমন একটা হাসি মুখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে । আড়ষ্ট হয়ে চারিদিকে নজর বুলিয়ে দেখে যে উর্বি আর রুহী কথা বলতে ব্যস্ত । যদিও উর্বির নজর থেকে থেকে ওদের উপর ঘুরছে । আর অবশিষ্ট ব্যক্তি যাকে তোয়া চিনেনা সে এই মুহূর্তে ড্যাবড্যাবে চোখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।

তোয়া এবার একনজর রাদীবের দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে রুহীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে ,

” বাসায় যাবিনা?একসাথে খাবে বলে আমাদের জন্য সবাই অপেক্ষা করছেত। ”

” হ্যাঁ আপু যাই।” বলেই রুহী উর্বির উদ্দেশ্যে বললো , ” তোরা তাহলে খেয়ে নিস। কেমন? ” আমরা এখন যাই। ”

রাদীব তৎক্ষণাৎ বলে ওঠে, ” সেকি যাবে কেন? আমাদের সাথে তোমরাও খাবে এসো। ”

রুহী এবার হেসে ওঠে , ” কি চমৎকার প্রস্তাব ভাইয়া ! আপনাদের জন্য আনা খাবার আমরাই খেয়ে যাব? তাহলে বাসায় যে এত রান্না হয়েছে সেগুলো কে খাবে? বলেন? আজকের যাই ভাইয়া। অন্য একদিন হবে। ঠিক আছে? ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। অন্য একদিনের কথা মনে থাকে যেন তোমার বোন থাকতে থাকতেই। ” রাদীব বলে হাসি মুখে।

” মনে থাকবে। ” হেসে বললো রুহী ” এখন আসি তবে। ”

বলেই বাইরের দড়জার দিকে পা বাড়ায় সে। তোয়াও হাসি মুখে ” দেখা হবে ” বলে রুহীর পিছু পিছু বেরিয়ে যায়।

তোয়ারা বেরিয়ে গেলে উর্বি বলে ওঠে , ” ভাইয়া তোরা যা ফ্রেশ হয়ে আয়। ততক্ষণে আম্মুরাও চলে আসবে। একসাথে খেতে বসা যাবে। ”

রাদীব বললো , ” হ্যাঁ আমি ঝটপট গোসলটা সেরে নেই। ” সায়েমের দিকে ফিরে আবার বলল , ” তুই আমার রুমে বস। ”

ওরা দুজনে রাদীবের রুমে চলে এল। সায়েম বললো , ” মেয়েটার সাথে আমার একটু পরিচয় করিয়ে দিলিনা কেন? ”

রাদীব চোখ সরু করে তাকিয়ে বললো , ” আমি নিজে কতটুকু চিনি মেয়েটাকে যে তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেব? ”

” দেখে তো মনে হলো ভালোই জানা শোনা। ”

রাদীব অবাক হয়ে বলল , ” তোর তাই মনে হলো? তাহলে বলব তোর চোখের ডাক্তার দেখানো উচিৎ। ”

সায়েম অসন্তুষ্টির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। রাদীব পাত্তা দিলনা। কাধে গামছা ফেলে বাথরুমে ঢুকে গেল।

* * *
দুপুরে খাওয়া দাওয়া সারতে বেশ দেরি হয়ে যায় তোয়াদের। বিশ্রাম নেয়ার আর সময় হলোনা। খেয়ে উঠেই শপিং করতে বেরুল তোয়া , রুহী আর শাহানা। তোয়ার অবশ্য যেতে ইচ্ছে করছিলনা। কিন্তু মামীর সামনে সে ইচ্ছে ধোপে টিকতে পারেনি। অবশেষে যেতেই হলো তাদের সাথে।

মামির শপিং করার বহর দেখে তোয়ার তো চোখ কপালে ওঠা বাকী। মার্কেটের কোনো জায়গায় বোধহয় পা দিতে বাকি রাখেননি। এই শপ থেকে আরেক শপ, সাহেব বাজার থেকে আর. ডি. এ মার্কেট সব খানেই চষে বেড়িয়েছেন তিনি।
তোয়ার পা দুটি আর চলতে চাইছিল না। এত ঘোরাঘুরি করে কেনাকাটা ও কখনও করেনি। বেশিরভাগ কেনাকাটার কাজ ওর আম্মু আর বোন ছোঁয়াই করে। তোয়ার যা প্রয়োজন ওরাই এনে দেয়।তাই ওর আর এত ঘোরাঘুরির দরকারও পরেনা। তবে আজ বেশ ভালো লেগেছে শপিংয়ে এসে। দরকার না থাকলেও বেশ কিছু জিনিসও কিনে ফেলল সে। শাহানা ওকে সুন্দর এক সেট থ্রি পিস ও আরও টুকিটাকি জিনিস কিনে দিলেন। থ্রি পিস কেনার
পর শাহানা বললেন ,

” পরীক্ষার দিনে এই ড্রেসটা পরে যাবি। ঠিক আছে? ”

তোয়া হেসে বলে , ” তা না হয় পরে যাব। কিন্তু আপনি কিভাবে দেখবেন? আপনি তো সেদিন থাকবেন না। ”

” তাতে কি? তবুও তুই এটাই পরবি। ”

” আচ্ছা পরব। ” বলেই অনেকটা অধৈর্য হয়ে বলে সে ” কিন্তু মামি আমার পা ব্যথায় টনটন করছে। ”

শাহানা অবাক চোখে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থাকেন তোয়ার দিকে , তারপর বললেন ,

” সেকি এইটুকু হাঁটাহাঁটি করেই পা ধরে গেল? ”

রুহী বলল , ” এক কাজ করি আম্মু , কোথাও একটু বসে কিছু খেয়ে নেই। তারপর নাহয় বাকি শপিং গুলো করে ফেলবো। ”

শাহানা একটু ভেবে বললেন , ” ঠিক আছে চল। ”

তিনজন মিলে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসল। খেয়ে দেয়ে নতুন করে এনার্জি নিয়ে বাদবাকি শপিং গুলো করে ফেলে। সেদিন শপিং সেরে বাসায় ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। আর পড়তে বসার এনার্জি থাকেনা তোয়ার। ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে সোজা বিছানায় গড়িয়ে পরে সে। তারপর আর ওকে পায় কে? শুতে না শুতেই নিমিষেই ঘুমিয়ে একেবারে কাঁদা হয়ে গেল।

চলবে ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here