গল্প :- গোধূলী লগ্নে তুমি
পর্ব ০৬ এবং শেষ
লেখিকা :- তাসনিম রাইসা
.
.
.
-: জয়া ভাবতে পারছে না এ মুখ নিয়ে কিভাবে রাজের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। যতই দিন যাচ্ছে রাজের স্মৃতিগুলো ততই মনে পড়ছে। রাজের খাইয়ে দেওয়া অফিস শেষ করে বেলী ফুলের মালা নিয়ে আসা সবকিছু!
– একদিন হঠাৎ শুনতে পেল রাজের বিয়ে। তাও জয়ারই বান্ধবী জেনিফার সাথে। জয়া বিশ্বাস করতে পারছে না। রাজের বিয়ে! কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে তার। না এ বিয়ে যেভাবেই হোক আঁকটাতে হবে। রাজকে ছাড়া সে বাঁচবে কিভাবে।
– কোন মতো রাজের ঠিকানা সংগ্রহ করে রাজের নতুন বাসায় গেল। রাজ ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিল। জয়াকে দেখে ফোন রেখে দিয়ে বললো,’ আপনি কেন এসেছেন?’
– আমি আমার স্বামীর কাছে এসেছি।
– তাই বুঝি? কিসের স্বামী আমি? একটু বুঝিয়ে বলবেন? আপনাকে আমি ডির্ভোস দিয়েছি। আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন?
– রাজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি সত্যিই সব না জেনে করছি।
– ক্ষমা সে তো তোমাকে ডির্ভোস লেটারের সাথেই করে দিয়েছি। কি চাও আর? আর কত কষ্ট দিতে চান আপনি আমাকে? সে ফুলশর্য্যার রাত থেকে আপনি আমাকে কত অপমান না করেছেন। সব আপনাকে ভালোবাসার কারণে। আমি চাইলেই আপনার কাছ থেকে স্বামীর অধিকার আদায় করে নিতে পারতাম। কিন্তি কেন নেয়নি জানেন? আপনাকে বড্ডবেশি ভালোবাসতাম। বলতে পারেন নিজের থেকেও বেশি। এ জন্যই আপনি যত্ন সহকারে কষ্ট দিয়েছেন। সারারাত আমার কাঁদতে হয়েছে। প্লিজ আপনি এখান থেকে চলে যান।
– রাজ তুমি মারো -কাটো যাই করো তবু আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না। এ কতদিনে বুঝতে পেয়েছি তুমি আমার কতটা জায়গা জুড়ে ছিল।
– আপনি যাবেন? আপনার মুখটা আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না আর। এমন সময় জেনিফা এসেই রাজকে বললো,’ হাই বেবি আমি কখন থেকে ওয়েট করছি। বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবে না?’
– হুম জানেমন যাবো। তবে দিনটা মনে হয় আজ অশুভ যাবে। সকালেই কার মুখ দেখতে হলো। আচ্ছা এসব বাদ দাও। চলো শপিং করে একটু পার্কে ঘুরতে যাবো।
– জেনিফা গিয়ে রাজের হাত ধরল। জয়ার কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে। চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না।
-এদিকে রাজ আর জেনিফা যখন বাসা থেকে বের হবে। এমন সময় জয়া বললো,’ রাজ প্লিজ যেয়ো না তোমাকে ছাড়া সত্যি আমি মরে যাবো। আর এই জেনিফা তুই আমার বন্ধু হয়ে আমার কলিজাকেই আমার কাছ থেকে আলাদা করতে চাচ্ছিস? কেমন বন্ধু তুই?
– বন্ধু কিসের বন্ধু? তাছাড়া রাজকে আমি ভালোবাসি। এতে তোর তো কোন প্রবলেম হওয়ার কথা না। তুই তো রাজকে ডির্ভোস দিয়েছিস। এখন কেন আছছিস আমাদের মাঝে? তোকে যেন নেক্সট টাইম রাজের সামনে না দেখি।
– জয়া এবার জেনিফার সামনের রাজের দু’পা ঝাপটে ধরে বললো,’ রাজ আমাকে ছেড়ে যেয়ো না।তুমি যা বলবে তাই করব। তোমার বাসার কাজের মেয়ে করেই রেখে দিয়ো। তবু আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না।
– জয়া এসব কি করছো? পা ছাড়ো প্লিজ।
– না পা ছাড়বো না। তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ক্ষমা না করবে। আমি ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার পা ছাড়বো না।
– জয়া এসব কি হচ্ছে? আমি জেনিফারে কথা দিয়েছি তাকেই বিয়ে করবো। আমার এখন আর কিছু করার নেই। এছাড়া তুমি ডির্ভোস চেয়েছিলে।তখন যা হয়েছিল তোমার ইচ্ছাতেই হয়েছিল। এখন যা হবে আমার ইচ্ছাতেই হোক।
– রাজ প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। সত্যি মরে যাবো।
– জয়া প্লিজ পা ছাড়ো। আর একটা কথা তুমি আর আমাদের মাঝে এসো না। যদি কখনো আমার সামনে এসো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে। কথাটা বলে রাজ চলে গেল।
– জয়া শুধু রাজের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল পলকহীন ভাবে।
– এদিকে জয়া বাসায় গিয়ে আর ঘুমাতে পারলো না। বারবার রাজের মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।রাজের সাথে কাটানো বিরক্তিকর সেই স্মৃতিগুলো আজ বড্ডবেসি মিস করছে। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। জয়া রাজকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছে না। দেখতে দেখতে রাজ আর জেনিফার বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায়। জেনিফায় জয়াকে ফোনে এ খবর দেয়।
– রাজ আর জেনিফার বিয়ের আগের দিন, ‘ জয়া সারারাত কান্না করে। শেষ রাতে আর সহ্য করতে না পেয়ে অনেকগুলো স্লিপিই পিল খেয়ে নেয়। আর রাজের ছবিটা বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে যায়।
– সকাল বেলা জয়ার মা দরজা খুলা দেখেই জয়ার রুমে এসে দেখে জয়া ফ্লরে পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে জয়াকে ইমার্জেন্সি বিভাগে এডমিট করে জয়ার বাবা রাজকে ফোন করে সবকিছু বলে।
– রাজকে যখন জয়ার বাবা ফোন করে রাজ তখন ফ্লাইটের অপেক্ষা করছে। সে স্থির করেছে আমেরিকা চলে যাবে। কিন্তু ফোন পেয়ে সরাসরি হসপিটালে এসে পড়ে। সাথে জেনিফারেই ফোন দেয়।
– রাজ হসপিটালে আসতেই জয়ার বাবা রাজকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়ে বলে,’ বাবা রাজ আমি জানি আমার মেয়েটা ভুল করেছে। তুমি ওকে ক্ষমা করে দাও। আমার একটা মাত্রই মেয়ে ওকে ছাড়া আমরা বাঁচবো কিভাবে?
– বাবা চিন্তা করবেন না আপনি আমি দেখছি কি করা যায়।
– এমন সময় নার্স এসে বললো পেশেন্টকে জ্ঞান ফিরেছে। বেডে দেওয়া হয়েছে। আপনারা দেখা করতে পারেন।
– সবাইকে রেখে রাজ একলায় জয়ার কেবিনে গেল। জয়া রাজের আসার শব্দ পেয়ে ওপাশ ঘুরে শুয়ে পড়লো। রাজ জয়ার পাশে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,’ কেন মরতে গিয়েছিলে? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে বাঁচবো?
– তোমার না জেনিফা আছে। আজ না ওকে বিয়ে করারর কথা? আমি পারবো না এসব সহ্য করতে তাই মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছি!
– আরেকবার বাজে কথা বললে সত্যি সত্যি জেনিফারে বিয়ে করে নিবো।
– মানে?
– মানে কিছুই না আমি আর জেনিফা প্লান করছিলাম। যেন তুমি বুঝতে পারো ভুলটা। আমি আজ আমেরিকা চলে যেতাম। কিন্তু তোমার পাগলামীতে আর যেতে পারলাম কোথায়?
– আমাকে ছেড়ে তুমি যদি আবার কোথায় যাও আমি সত্যি মরে যাবো।
– ছি! ছি! কি বলো? তুমি মরে গেলে ফুলশর্য্যা করবো কার সাথে? এখনো তো অনেক কিছুই বাকি?
– যাহ্ দুষ্ট সরম করে না বুঝি আমার?
– তাই বুঝি? তাহলে জেনিফার কাছে যায়।
– কথাটা শেষ করার আগেই জয়া রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,’ তোমাকে এ বুক থেকে মৃত্যু ছাড়া আর কেউ আলাদা করতে পারবে না। তুমি যে গোধূলী বেলায় রাজকুমার আমার। বড্ডবেশি ভালোবাসি।
.
.
সমাপ্ত…………………♥
.
এলবাম লিংক :-