“চাঁদ হয়ে রবো”
পর্ব-২২/অন্তিম পর্ব
#Khadija_Bente_Hoque
,
ট্রেনের শব্দ কানে আসার পর থেকেই কেমন পৌষীর মনে হচ্ছে একটা।ঘুম দেওয়াই যায়।
যেই ভাবা সেই কাজ।চোখ বুজে ঘুমিয়ে পরলো।
এ জেনো ঘুম ওর চোখের উওর দাড়ীয়ে ছিলো।
বলা মাত্রই ওর চোখে নেমে পরেছে।
,
চোখ বুজতে দেখলো।লিজা বেগম।বিকট রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে।কিছু।কটু কথা বলল ওকে।
“পিশাচ মেয়ে একটা আমার অমন ছেলেটাকে ফুসলে ফাসলে ঠিক একা একা কক্সবাজার চলে গলো।এই যে আমি।নিজের ভাইটারে বললাম।আমি যাবো।আমার জন্য কতো কি করে যেনো বসে আছে”
রাগে ফুসছে।হাতের কাছে পৌষীকে পেলে।মনের আস মিটিয়ে কিছু বলতো।
,
“মা।মা।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।তুমি ঘুমাও কেনো।আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে কেউ আমার গলা টিপে দিচ্ছে।শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।মা।বাচাও।মরেই যাবো মনে হয়।”
,
ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে পরলো।ঘামে।শাড়ী ব্লাউজ ভিজে।চুপচুপে।বিড়বিড় করে বলল।
“হঠাৎ এমন অদভুত স্বপ্ম কেনো দেখলাম।”
পেটের উপর আলতো করে হাত রেখে।চোখ বন্ধ করে।কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে।দৌড়ে।বাথরুমের দিকে ছুটলো।বাথরুমে ঢুকে।হর হর করে বমি করে দিলো।শাড়ীর কুচির নিচের অংশ।বমিতে মেখে গেছে।পানি দিয়ে পরিষ্কার করে বেরিয়ে এলো।
ট্রেনের সিটে বসতে বসতে।দেখলো তুষার এক মনে সিগারেট টেনে যাচ্ছে।চারো দিকে কোনো হুশ নেই। এইযে আমার প্রচুর বমি আসছে।মাথাটা জিম দিয়ে আসছে এর কি বোঝা উচিৎ না।না হয়তো বোঝা উচিৎ না।বেশি বুঝলে আবার সমস্যা।
,
“মা।মানে তুষারের মা আমাদের কক্সবাজার আসার কথা জানতে পের ভেবে ছিলো।আমরা সকলে আসবো।উনিও তৈরি হলেন। আলমারি থেকে ওনার ভালো ভালো কাপড় গুলো বের করে ব্যগ প্যক করলো।সমুদ্র সৈকিতে ঘুরতে আসবে সেই সময় কি কি করবে সে সব ও। ঠিক করে রেখে ছিলো।ব্যগ প্যক করার সময়।একটা ছাতাও নিয়েছিলো।সমুদ্র দেখতে যখন যাবে তখন নাকি কাজে লাগবে।ওখানে কাঠ ফাটা রোদ।ছাতা বেশ উপকারী বস্তু।উনি কক্সবাজারে আসবে ঠিকই।কিন্তু উঠবে।চট্টগ্রামের হাটহাজারি ওনার বড় ভাইয়ের ছেলের বাসায়।তুষার কিছুটা অবাক হলো।বেশ হাসি খুশি ছিলেন।তিনি।তুষারের একটা বারনে।ওনার সব আসা শেষ হয়ে গেলো।
ঘরের ভিতরে ঢুকে পার্সোনালি তুষার লিজা বেগম কে এক বিকট অভিসন্ধি করলো।তাতে লিজা বেগম চুপ মেরে গেলো।যে কি না কয়েক মুহুত আগে চিৎকার করে ঘরের ছাদে বসা কাক গুলোকে ভাগিয়ে দিয়েছে তাকে তুষার এমন কি বলল।মেনি বিড়লের মতো চুপ মেরে গেছে।তবে ওনার চোখে মুখে করুন দৃশ্য দেখ আমি অবাক হয়েছি।আসার একদিন আগে কেনো বলছি।আমরা আসার কয়েক ঘন্টা আগে যে আমাকে দেখলে ড্রইং রুম থেকে নিজের বেড রুমে চলে যেতো সেই আসার আগে।আমাকে ধরে বলল।
“ঠিকঠক গিয়ে থাকবে।এখন তো ভাদ্র মা শীত গরমের ঠিক নেই।পাতলা একটা চাদর নিয়ে যাও।এই নাও আমার কিছু জমানো টাকা আমার ছেলে কাছে তো আর কিছু চাইতে পারো না।তোমার লজ্জা যে কতটা পরিমান ভয়ংকার আমি জানি।তাই এই টাকা গুলো রাখো।দরকার পরলে খরচ করবে”
আমি শুধু অবাক হয়ে শুনলাম।কেনো জানি আসার সময় খুব মায়া হলো।কতো করে আসতে চাইলো।আমি সঙ্গে আনতে পারলাম না।খুব কষ্ট হচ্ছে।হবারই কথা কোনো মানুষ হঠাৎ বদলে গেলে।অবাক কেনো।ভয়ংকর ব্যপার সেটা।যে পরে সে বোঝে।আমি পরেছি।বুজেছি।বেশ মায়া। মায়া নামের অদভুত বস্তুটা এখন বড় খারাপ ভাবে বিচলিত।”
,
সামনের দুটো বাচ্চা নিয়ে বসা মহিলা।রাগে।গম গম করছে।ওনার ছেলে মেয়ে দুটোর।সিগারেটের ধোয়ায় শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।আড় চোখে তুষারের দিকে তাকালাম।কড়া করে কিছু কথা বলবো।
তার আগে ওনারাই তুষারকে রিকোয়েস্ট করলো।
এতোটা স্মোক না করতে।এক পর্যায়।তুষার ওখান থেকে উঠে গেলো।আমি শুধু অবাক হলাম।
আমাকে একা ফেলে যেতে পারলো।
আমার একা ভিষন ভয় করছে।
সিগারেটের এমন কি নেশা।এর নেশায় একদিন মনে হয়।ও আমাকেই ভুলে যাবে।হয়তো।হয়তো ভুলেও যায় মাঝে মাঝে।মাঝে মাঝে পাওয়া তুষারকে আমিও তো খুজে পাই না।
,
সামনের মহিলা আমার পাশে বসাতে।কিছুটা ভয়ে আতকে উঠলাম।
একটু দূরে এগিয়ে বসলাম।মহিলা।পাশে বসতে বসতে বলল
“আপনার হাজবেন্ড।”
“হুম”
“চেইন স্মোকার”
কি উত্তর দিবে আমি।আমি কি আদো এর উত্তর জানি।হয়তো জানি।আবার জানি না।
“আপনার হাসবেন্ডকে দেখলাম।সিগারেটের ভিতর ওইসব ঢুকিয়ে খেতে”
প্রশ্নবৃদ্ধ চোখে তাকি রইলাম।গভির কন্ঠে।গলা নামিয়ে বললাম।
“কোন সব”
“আপনি দেখি।কিছু বোঝেন না।খালি সিগারেট হলে কি অমন কড়াগলায় ওনাকে আমার হাসবেন্ড এখন থেকে যেতে বলতো।”
“মানে”
“ওসব মানে।নেশা জাতিয় জিনিস।”
আমি সরল কন্ঠে হাসি মুখ করে বললাম।
“হ্যা। উনি। ওই একটু সিগারেট খান।
তাতে নেশ আছে আমি বুজলাম।তবে অতোটাও নয়।যেসব খেলে।মানুষের হুশ জ্ঞ্যান থাকে।ব্যপার তেমন নয়।শুধু সিগারেট খান।আমি,,,”
“আপনি থামেন।আমার উনি।ওসবের গন্ধ সুকে বলে দিতে পারে।আপনার স্বামি।শুধু।সিগারেট খাচ্ছিলেন না।সিগারেট ভিতর গুড়োগুড়ো।ওইসব।নেশা জাতিয়া জিনিস।মানে।গা***।ওইগুলো খায়।দোখেন না।চোখ দুটো কেমন লাল।আপনি তো ওনাকে আগে দেখেছেন।এমন লালচে চোখ কখনও দেখেছেন”
আমি এবার বিরক্ত গলায় মহিলাকে বললাম।
“ওকে আচ্ছা।বুজলাম।আমি খুব টায়ার্ড।প্রথমবার ট্রেন জার্নি তো তাই”
মহিলাকে বলে নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না শেষে এতো কিছুর পর এটাও বাকিছিলো।
নাকি আরো বাকি আছে।
কান্না আটকাতে।ওখান থেকে উঠে গেলাম।
ওসব কথা মনে পরতে আবার বমি চলে এলো।
দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে হর হর করে আবার বমি করলাম।
পেটের ভিতর যেনো।ছুচো এবার ডান বৈঠক করছে।পেটে হাত চেপে দারালাম।দরজার সামনে।খোলা হাওয়া বারবার ছুয়েদিচ্ছে আমার চুল।
এমন মনে হচ্ছে কেউ আমার চুলের ভিতর হাত বুলচ্ছে।শির শির করে উঠলো পুরো শরীর।
দরজার দিকে চোখ পরতে থমকে গেলাম।
মহিলা যেমন বলল।আরকি।কিসব সিগারেটের মধ্যে ঢুকালো।তারপর পরম আয়েসে।অল্প অল্প করে টান দিলো।শান্তিতে চোখ বুঝে।মুখ খুলে এমন আকৃতি করলো স্পষ্ট বুজতে পারলাম ও বলছে।আহহহ”
“ছিঃছিঃ মানুষটার আর কতো রুপ দেখবো আমি।পারছি না।দু দিনের এই দুনিয়া কতো কি দেখালো।শেষে।এই জঘন্য দৃশ্য।হা!!!আল্লাহ।”
জানালার পাশে বসে গোল বড় বড় চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে।অস্পষ্ট স্বরে বিড়বিড় করে বলল।
“মা।বাবা।তোমাদের সঙ্গে নিয়ে গেলেই পারতে।আমার অনেক কষ্ট।মাহহ!!! তুমি না সেদিন নিতে আসলে।আজও আশো না।আমি আর।।পারছি না মা পারছি না”
,
কখন যে কাদতে কাদতে ঘুমিয় পরলাম মনে নেই। তবে ঘুম ভেঙে তুষারকে পেলাম আমার পাশে।
মুখ হা করে ঘুমিয়ে।অদভুত উনি হা করে কেনো ঘুমাচ্ছে।কখনও তো ঘুমায় না।
তবে কি এখন মুখ থেকে লোল পরবে।মনে হয় খুব খুশ মেজাজে আছে তাই হবে।যেমন আমি খুশ মেজাজে থাকলে।নিজেকে ছরিয়ে ছিটিয়ে ঘুমাই।কষ্টে নিজেকে গুটিয়ে ঘুমাই।তাহলে।উনি কোন ভাবে আছে।বুজি না।
,
কিছুখন পর মুখটা বন্ধ করলো।আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না।হঠাৎগুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হলে।বৃষ্টির ঝাপটা এসে ভিতরে পরছে।আমাদের সামনের মহিলা তার বাচ্চাদের কোলের ভিতর ঢুকিয়ে ঘুমিয়ে।যেমন স্ত্রী পাখিরা তাদের নবজাতক সন্তানকে নিজের ডানার আগলে রাখে।ওনাদের জানালা টাও আমি বন্ধ করলাম।
চাঁদটা আর দোখতে পারছিনা।কেম শীত শীত লাগছে।ব্যগথেকে চাদরটা বোর করে গায়ে জরিয়ে নিলাম।মা হয়তো ঠিক বলেছে।শীত লাগবে।
মা রা সব বুজতে পারে।,,,সব
ঘুমের রাজ্যে আবার তলিয়ে গেলাম।
,
ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখলাম।আমার পাশে।একটা বাচ্চা ছেলে।ট্রেনের সিটের উপর বসে।কেমন বাইক চালাচ্ছে ভাব করে।দুহাত উচু কর হেলে দুলে।ভুম!!ভুম!! করছে আর নিচে হামা গুড়ি দেওয়া বাচ্চা মেয়েটাকে। বলছে আয় বোন আয়!!আমার পিছনো বোস!!এই বাইকে করে আমরা মায়ের কাছে যাবো!!
আমি অস্পষ্ট ভাবে বললাম
“মা তো এখানে।মায়ের কাছে থেকেই।আবার কোথায় জাবি”
বাচ্চা দুটো হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
চিৎকার দিতে গিয়েও।না দিয়ে।ঢুকরে।
কান্না করে উঠলাম।
খুব কষ্ট হচ্ছে।মা আমার দুটো সন্তান কেনো মেরে ফেললো।আজও জানা হলো না।তাহলে কি??
,
সকাল সকাল ট্রেন এসে থামলো।ট্রেন থেকে নেমে থমকে গেলাম।একটা।সুন্দরি।বিদেশি মেয়ে।হাত উচু করে কাউকে ডাকছে।একটা শ্যমা বর্নের ছেলে।হাতে লাগেজ নিয়ে।এগিয়ে আসছে।তুষার ট্রেন থেকে নেমে।আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো।
শ্যমা বর্নের ছেলেটা।আমার দিকে আসতে থমকে গেলাম।। বর্ন,,!!!
,
অনেক আগের কথা।যখন আমার সাথে ওই বিভতস ঘটনাটা ঘটে তারও আগে।
ও আমাকে প্রপোজ করলো।
দাড়ীয়ে দাড়ীয়ে না করে দিলাম।
আমার না পাওয়া বিরহে।হাত কাটলো।
ছোটো বেলার পাগলামি জাকে বলো।
একে ওকে দিয়ে কানভেন্স করানোর চেষ্টা করতো।
আমার মনের কোনো এক গহিনে।অন্য একজন দূর থেকে তার জায়গা রেখে গেছে তাই পারলাম না।ওকে মেনে নিতে।তার পর ফুফু বাড়ীতে ওই ঘটনা আমি বড় চাচার বাড়ীতে চলে এলাম।
এর পর ওর যে কি হয়ে ছিলো জানি না।
তবে একজন ফ্রেন্ডের মাধ্যমে জানতে পারলাম।
ও নিজের পড়ালেখা করতে।ফ্রান্সের,,প্যারিসে চলে গেছে।তারও কিছু দিন পর জানতে পারলাম।
ওখান কার স্থানিয় একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে।
এটাই কি তাহলে সেই মেয়ে।পাশ কাটিয়ে।
তুষার আমার হাত জোরে চেপে নিয়ে যাচ্ছিলো।
বর্ন পাশ থেকে আমায় ডাক দিলো।
–“আরে!!পৌষী না”
চমকে উঠাইলাম।উঠার কথা কি না।
এতো দিন পর আমাকে এক পলক দেখে কিভাবে চিনতে পারলো।
তুষার ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
বর্ন।ওই মেয়েটাকে পাশ কাটিয়ে আমার কাছে এসে বলল
“কেমন আছো।এই বুঝি সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি।তেমার হাজবেন্ড”
কোনে কথা মুখ থেকে বেরোচ্ছে না।
তুষার রাগি দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করে বলল
“উনি কে?”
বর্ন জানো মনের আনুন্দে নিজের ইন্ট্রডিউস দিতে লাগলো।
“আমি।বর্ন মাহামুদ!!আপনার ওয়াইফের কাছের একজন বন্ধু!! Khadija Bente Hoque
ওকে জিজ্ঞেস করুন।কি কথা বলছো না।কেনো।নাকি বাকরুদ্ধ হয়ে পরেছো।আমাকে এতো দিন পর দেখে”
তুষার বেস রাগ্নিত হয়ে গেছে তা যে কেউ ওকে দেখলে বুজতে পারবে।আমার হাতটা আরো শক্ত করে ধরলো।ব্যথায় কুকরে উঠলাম।
তবুও হাতটা ছারলো না।অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার কাছে জানতে চাইলো।
“তুমি চেনো ওনাকে”
কঠিন গলায় এক নিষ্ঠুরতার প্রমান দিলাম।
“না আমি চিনি না।ইনফ্যক্ট আজই প্রথম দেখলাম।
উনি কারো সঙ্গে হয়তো আমাকে গুলিয়ে ফেলছে!”
বর্ন বেকুবের মতে দাড়ীয়ে রইলো।তুষার আমাকে এক প্রকার টানতে টানতে নিয়ে এলো ওখান থেকে।নিজের বর্তমানটা কে বাচাতে কতো কিছু বিসর্জন।দিলাম।অতিত।বর্তমান।ভবিষ্যৎ।সব।সব বিসর্জন দিলাম।।কতো কিছু যে না চাই তেও মেনে নিলাম তার ঠিক নেই।তবুও আমি পারছি না একে ছারতে।এই মেয়ে মানুষের এক সমস্যা ছেলেরা তাকে যতো কষ্ট দিক।দিন শেষে সেই ছেলের সঙ্গো খুজি।দু ফোটা জল গরিয়ে পরলো।মানে আমি মনে হয় কান্না র চেষ্টা করলাম।না অভিনয় চেষ্টা করলাম।নিজের সাথে নিজে।
,
হোটেলে এসে উঠতেই ঝড়বৃষ্টি শুরু হলো।
গুড়িগুড়ি বৃষ্টি।এখন।বড় আকার ধারন করেছে।
সমুদ্রে সতর্ক সংকেত দিয়েছে।তুষার বলল।
,
তুষারের সিগারেট শেষ ছেলেটা সিগারেট ছারা এখন আর এক মুহুর্তেও থাকতে পারে না।
তাই এই ঝর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গেলো।
আচ্ছা ওই মহিলা যেটা বলল।তুষার কি সত্যি ওই সব বাজে জিনিস খায়।আমি মানতে পারছি না কেনো।অন্ধ বিশ্বাস করি বলে তাই।
দরজায় নক করার শব্দ পেলাম।তুষার ছারা অন্য কে হবে।আবার ওনার তে এখন ফেরার কথানা।মাত্র তো গেলো।
দরজা খুলে দেখলাম।সেই কোকরা চুলের ফর্শা গরনের বিদেশি মেয়েটাকে।সরলাতার সঙ্গে বললাম।
“আপনি”
মহিলা হাসতে হাসতে ভিতরে ঢুকলো।মুক্তদানার মতো দাতগুলো বিছিয়ে হাসছে।কি অপরুপ।তার হাসি।যেকেউ পাগল হওয়ার মতে।মেয়েটার হাসি আমার কাছেও ভালো লাগলো।
খুবই মিশুক টাইপের মেয়ে হবে হয়তো।
“হামি।এলেক্স।অপনাদের পাশের রুমে উটেছি।”
“আপনি বাংলা বলতে পারেন”
কথাটা নিজে বলে বড় বেকুব হলাম।কারন স্টেশনে ওনাকে বাংলাই কথা বলতে শুনেছি।
“উম।পারি।টবে অল্প কল্প”
“ওহ হ্যা।আমি শুনেছি”
“হামি প্রতম দেকাতে বুঝতে পেহরেছি।আপনি পুষী।!”
এবার পৌষীর খুব হাসি পেলো।এলেক্সের কথা শুনে।ওর কথা সংসোধন করে বলল
“উমহু।নট পুষী।ইটস পৌষী”
“ওহহ আম সরি পাউষী”
“হুম হয়েছে।খুবই বৃক্রিত নাম আমার”
” সরি।হোয়াট হট বিকিত”
“নাথিং”
“ওকে কাম টু দ্যা মেন পয়েন্ট”
“মানে”
“বর্ন! হামকে বিয়ে করে এজআ এক্সিডেন্টালী।
হি ট্রুলি লাভ ইউ।প্লিজ।ডোন্ট রিফিউজি হিম”
“সরি।আমি বুজলাম না”
“বর্ন,,ইজ হার্ডলি এসপেক্ট ইউ।হি কান্ট এসপেক্ট মি ইন হার লাইফ”
মেয়েটার চোখের কোনায় জল দেখতে পাচ্ছে।
ছেলে গুলো এমন কেনো সারাখন মেয়েদের কষ্ট দিয়ে কিশুখ পায়।আমি এলেক্স কে ভিতরে এনে বসিয়ে কাধে হাত রেখে বললাম
“ডু ইউ লাভ বর্ন”
এলেক্স হাসার চেষ্টা করলো।তার মানে সেও।আমার মতো করে আমার সঙ্গে অভিনয় করছে।
ও হয়তো জানে না।একজন অভিনেতা অন্য একজন অভিনেতার চোখ ফাকি দিতে পারে না।
এলেক্স পৌষীকে জরিয়ে কান্না করেদিলো।
“ইয়েস!! আই লাভ হিম!! টুহ মাচ”
“তাহলে আমাকে তার কাছে ফিরিয়ে নিতে এসেছো কেনো।অধিকার আদায় করে নাও।ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে নাও”
“ইউ।নো।এতোহ ডিনে হি কান্ট টাচ মি।
হি অল ওয়েজ টেল।পাউষী ইজ হার লাভ।হার লাইফ।হি কান্ট এ্যকসেপ্ট মি।আজ হি সি ইউ দেন হি টোটালি ইগনোর মি”
আবার কান্না শুরু করে দিলো।ও আর কথা বলতে পারছে না।আমিওকে কানভেজ করিয়েছি।বর্নকে নিজের করেনিক
যে কাজের জন্য এলো সেটা তো হলো না
তাই অনেক গল্প করে চলে গেলো।বাহির ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।তুষার এলো।প্রায় বৃষ্টিতে ভিজে টৈটুম্বর।ওয়াশ রুম থেকে চেঞ্জ করে এসে বললো
“চা খাবে”
“খাওয়াই যায়।ঠাণ্ডা বেস”
ওয়েটারকে ডেকে দুকাপ চা বলল
আধ ঘন্টা পর চা নিয়ে এলে।চা প্রায় ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।বেলকনিতে বসে চায়ে পরম আয়েস করে চুমুক দিলো।তুষার চা মুখে দিয়েই মাথাটা গরম হয়ে গেলো।প্রায় বিরক্তি ভাব।পারলে চায়ের কাপটা ছুরে মেজেতে ফেলে দিবে
একরাশ বিরক্তি মেশানে দৃষ্টিতে তাকালো পৌষীর দিকে।ও পরম আয়েস করে ছোটো ছোটো চুমুক দিয়ে চা খাচ্ছে।এমন মনে হচ্ছে ও ঢঙ কর চা খাচ্ছে অথবা অমৃত পান করছে
বৃষ্টির বেগ কমে গেলো।দরজায় কেউ নক করতে পৌষী বেশ উৎসাহ নিয়ে তাকালো
এলেক্স এসেছে
“হেই।পাউষী।এডিক আইসো”
পৌষী চায়ের কাপটা রেখে বেলকনি থেকে উঠে এলো।তুষার একটু ঝুকে দেখলো কে ওখানে।দরজার কাছে এক সাদা পরী দাড়িয়ে।দরজাটা আধ খোলা করে ধরে দারিয়ে আছে।ঠোটের নিচের লিপস্টিক টা খেয়ে ফেলেছে।কার্লি হেয়ারগুলো।পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে বেধে রেখেছে।যেকোনো সুস্থ্য পুরুষের মনের অবস্থ্যা খারাপ করতে পারে
পৌষী তার সাথে বেরিয়ে গেলো।তুষার এতো দূর ঘুরতে আসেনি পৌষীকে নিয়ে
ওর পৌষীর সাথে কিছু কথা আছে।যা জানতে এসেছে।বাড়ী বসে বললে।বিষয়টা ঘোলাটে হয়ে যাবে।
,
পোষী এলেক্স দাড়ীয়ে বৃষ্টি দেখছে।মেয়েটাকে একদম সাদা পরী লাগছে।ওর থেকে চোখই ফেরাতে পারছে না পৌষী।ওর থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে বৃষ্টির দিকে মনোনিবেস করলো।
হঠাৎ আনমনে বিড়বিড় করে বলল।
কুমার বিশ্বজিৎ এর বৃষ্টি নিয়ে একটা গান আছে না।কি যেনো ও হ্যা–
🎶🎶🎶
,
বৃষ্টি ছুয়ে দেখো না,
ঝরছে প্রেম কত না ।
ভিজবো দুইজন চলো না,
ওহো প্রিয়তমা ।
এমন সুখের মুহূর্তে প্লীজ
না করো না,
জানো না তো এমন মুহূর্ত
সবসময় আসে না ।
দুই চোখ ভরে দেখবো
ভিজতে তোমাকে,
সেই রূপ তোমার হার
মানাবে চাঁদের জ্যোছনাকে ।
এই মুহূর্ত ওই আকাশের
বিশেষ উপহার,
চলো দুই জন ভিজে হই
একাকার ।
এমন সুখের মুহূর্তে প্লীজ
না করো না,
জানো না তো এমন মুহূর্ত
সবসময় আসে না ।
,
🎶🎶🎶
“ওয়াও।ইউ গান গাও”
পোষীর হাসি পেলো এলেক্সের বাংলিশ সুনে তবুও হাসি দমিয়ে রেখে বলল
“ওই একটু আধটু গাই আরকি ভালো লাগলে।”
“ইউর ভয়েস ভেরি নাইস”
অনেক গল্প আড্ডা দিয়ে ঘরে চলে এলো পৌষী।
ঘরে এসে দেখলো তুষার ঘুমিয়ে পরেছে।
ও ও পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো।
,
সকালে প্রখর রোদ উঠেছে।কালকের প্রকট বৃষ্টির ছিটে ফোটাও নেই।বাহিরে তাকিয়ে কেউ বলতে পারবে না কাল সমুদ্রে বিপদ সংকেত ছিলো।
সকলে মিলে বেরিয়ে পরলো।সমুদ্র সৈকত দেখতে।সমুদ্রের নীল আপরুপ দৃশ্য দেখ।পৌষী প্রান ভরে নিশ্বাস নিলো।ওকে দেখে যে কেউ বললে।পাখীর খাচা থেকে পালিয়ে আসা কেনো পোষা পাখি
,
পায়ের টাকনু পর্যন্ত পানিতে ভিজেয়ে পৌষী তুষারের তর্জনীতে নিজের তর্জনী স্পর্শ করাতে।
তুষার এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে উপরে বেঞ্চে গিয়ে বসে পরলো।পৌষীর কিছুটা অপমানিত বোধ করে ওখান থেকে এলেক্স আর বর্ন কাছে চলে গেলো।একা দাড়ীয়ে থাকলে এখন কান্না পাবে ।খুব কান্না পাবে নিজেকে সকলের সামনে খুশি দেখাতে হবে।
,
এলেক্স যতটুকু পারছে নিজেকে খুশি রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।পৌষী বর্নের পাশে দাড়ীয়ে চাপা গলায় বলল।
“মেয়েটাকে একটু সমুদ্র স্নান করিয়ে আনুন না।বর্ন দা!!”
বর্ন আর চোখে তাকলো।কালকের চিনতে না পারার ভানটা দেখে প্রচুর রাগ হলো ওর।পৌষীর সাথে কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
” মেয়েটা আপনাকে অনেক ভালোবাসে।
বিদেশি মেয়েদের এমন করে ভালবাসতে খুব কম দেখা যায়।”
বর্ন এবার পুরো পুরি ঘুরে দাড়ালো।
“অতিতটা ভুলে যান।বর্তমানটাকে সুন্দর ভাবে উপোভোগ করেন।কথায় আছে না।কাল না হো না হো।”
বর্নের মুখের গুলি ছুটলো।
“শার্টা কি খুলবো।হাতের বাহু থেকে শুরু করে।কনুই পর্যন্ত।ব্লেডের দাগ গুলো মেয়েটা দেখলে কি জবাব দেবো আমি।আমার মনের ভিতরও যে জায়গা সেটাও তোর।ওকে পরিপূন্য ভাবে ভালো বাসতে না পারলে।ও আমাকে প্রশ্ন করলে কি জবাব দেবো আমি।সবটা দিতে যদি না পারি ভয় হয়।ও অনেক ভালো। তবুও তোমাকে ভুলতে পারি না।পৌষী।তেমার জায়গাটা ওকে কোনো দিনও দিতে পারবো না”
“ওর যায়গাটা ওকে দিন।তাহলেই হবে।আর অতিতে একটা ভুল করেছেন তাই বলে কি বর্তমান থেমে থাকবে।এগিয়ে জান”
“আমি পারবো না”
“আপনি পারবেন।খুব ভালো পারবেন।মেয়েটার নীল নীল চোখ দুটোতে একবার তাকিয়ে দেখেন।নির্ঘাত মরে জাবেন”
“হবে না আমাকে দিয়ে”
বর্নের চোখের কেনায় জল চলে এসেছে
“হাতে হাত ছুয়িয়ে হাটুন না কিছুখন তারপর আমাকে বলবেন।আপনাকে দাড়া হবে না।মেয়েটা পানিতে নামার জন্য অনেকখন জাবদ ছটফট করছে জান।ওর নরম হাতে হাত ছুয়িয়ে দেখেন আপনি হারিয়ে যাবেন”
এলেক্সের দিকে হাত উঠিয়ে এদিকে ডাকলো।
ছুটে এসে দাড়াতে এলেক্সের হাত বর্নের হাতের উপর দিয়ে বলল।
“আজ থেকে নতুন জীবন শুরু করেন।একজন খুব ভালো শিয়ো সহধর্মীনি পেয়েছেন।আপনি।মুবারক হো”
ওরা নিজেদের মতো থাক।
পৌষী নিজ থেকে চলে গেলো তুষারের কাছে।
খুব অনুনয়বিনয় করার পর দুজনে হাতে হাত রেখে সমুদ্রের নামলো।হাটুর উপরে ছুই ছুই পানি।
শাড়ী হাটু অবধি ভিজে গেছে।পৌষীর।
তুষার উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে শান্ত দৃষ্টি ফেলে বলল
“আমি তোমার কাছে কিছু জানতে চাই”
পৌষী এক গাল হাসি দিয়ে বলল।
“হ্যা অব্যশই।বলুন।কি জানতে চান”
“মি.বর্ন মাহামুদ কে কি তুমি আগে থেকে চিনতে”
“আসলে মা মানে কি!! সত্যিটা!”
“হ্যা কি না”
“পুরো ব্যপারটা না বললেতো বুঝবেন না”
“হ্যা কি না”
“হ্যা।আসলে তখন,,,”
“বুজতে পেরেছি।বলতে হবে না”
“শুনুন না,,”
পৌষীকে থামিয়ে দিয়ে বলল
“ঐদিন রেশ কি করেছিলো তোমার সাথে”
পৌষীর হাসি তো অনেক আগেই উদাও হয়ে গেলো।এখন শুধু অবাক হওয়া বাকি।ছিলো তাও হলো।
“মানে”
“কোনো বাজে কিছু।আই মিন,,,”
আর বলল না পৌষী ধপ করে মাটিতে বসে পরলো।
তুষার ওকে আবার দাড় করিয়ে।দু বাহু চেপে বলল
“বুজতে পারছো।কি বলছি।ছেলেটা তোমার সাথে।কোনো জবরদস্তি করেছিলো তোমার ফুফার মতো।”
পৌষী পাথর হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
“হ্যা কি না বলো”
পৌষী নিজেকে সামলে কঠিন গলায় বলল।
“হ্যা”
তুষার ওকে ছেড়ে দিলো।এবার আর পরলো না।শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো।তুষার পানি থেকে হন হন করে হেটে কোথাও চলে গেলো।চোখের আরালে।পৌষী যে ভাবে দাড়িয়ে ছিলো সেভাবেই রইলো।শুধু দৃষ্টি সিমানা ছাড়িয়ে।
পৌষী পানিতে একাই হাটা দিলো।হাত খোপা করা কোমর ছুই ছুই চুল গুলো খুলে আচরে পরলো ওর সারা পিঠে।
সামনে হাটতে হাটতে হাটু সমান পানি কোমর অবদি উঠে এলো।বর্ন যতখনে দেখলো।ততোখনে পৌষী কাধ সমান জলে নেমে গেছে।হঠাৎ এক বড় ঢেউ এসে চোখের আরাল হয়ে গেলো পৌষী।
প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেলো না কোথায় গেলো।কেউ দেখতে পেলো না।,
,
রেশ রেকড রুম থেকে বেরিয়ে আসফিকাকে বলল।
“শোন কালকে আর একটা ডিরেক্টরের সাথে মিটিং আছে ওটা সকাল দশ টায় ফিকস্ড করবি।”
আসফিকা।একটা নিউজ পপার হাতে নিয়ে রেশকে উদ্দেশ্য করে বলল।
“নিউজটা দেখেছিস।”
” কোনটা”
” কক্সবাজারে সমুদ্রে সৈকতে।স্নাস করতে গিয়ে একজন মহিলাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না”
“তো।এতো এভেল এভেল”
“মেয়েটা কে জানিস”
“কে?”
“পৌষী”
রেশ ধপ করে মেজেতে বসে পরলো।চোখ বেয়ে দু ফোটা জল গরিয়ে পরলো।
,
,
……………….( সমাপ্ত)……………….
,
(( ))