“চাঁদ হয়ে রবো”
~খাদিজা বিনতে হক
পর্ব-৬
দু গালে কসিয়ে চড় মেরলো।
টাল সামলাতে না পেরে বিথীর উপর হুমরি খেয়ে পরলো।
পৌষী বেকুব হয়ে দাড়ীয়ে।
তনয় ভাত আধ মাখা রেখেই ভাইয়ের কাছে জানতে চাইলো।
“মেয়েটাকে মারলি কেনো”
“আমাদের পার্সোনাল ম্যটারে ইন্টারফেয়ার কারার সাহস কি করে হয় তোর”
“পার্সোনাল ম্যটার ঘরের চার দেয়ালের মাঝে রাখতে হয়।হাটের মাঝে হই হুল্লোর করে না।”
“তোর সাহস তো কম না”
“তুই রোজ রোজ মেয়েটাকে মারবি।তাই বলে কি বিয়ে করে এনেছিস”
“তোর কাছে কইফত দিবো না আমি”
“আজ দিতে হবে”
“হ্যা আয় দেখি কিভাবে তুই কইফত নিবি।”
কলার টেনে তনয়ের গালে দুটো চর মেরে বলল
“কেন মেরেছি জানিস তোর জন্য।যার এতো সাপোর্ট টানিস না।তুই।সেই তোর জন্য।”
“কিহহহ”
“হ্যা তুই ওর হাত টাচ করলি কেনো।”
“ভাই আমি ওকে ওভাবে টাচ করিনি।তুই ভুল ভবছিস।”
“আমি অন্ধ নই সব দেখতে পাই।কোনটা।টাচ।ফিল।দৃষ্টি।সব।সব।বুজলি।”
তুষারের না বলা কথা গুলু স্পষ্ট বুজতে পারলো পৌষী।
ওর আর তনয় কে নিয়ে বাজে একটা ইঙ্গিৎ করেছে।এতো দিনে আজ নিজের মরে যেতে ইচ্ছে করছে।বিধাতা সেচ্ছা মৃত্যুর অনুমতি কেনো দেয়নি।তাহলে তো পৌষী কবে কার মরে যেতো।
দৌড়ে ওখান থেকে চলে এলো।
,
তনয় ভাত না খেয়ে ঘরে চলে গেলো।
তুষার বাইরে।লিজা বেগমের বরা বরের একই কথা।ওই মায়া বিনি আমার সংসারটা তছনছ করে দিয়েছে।আমার দুটো ছেলেই না খেয়ে চলে গেলো দেখলি।বিথী চুপ করে রইলো।
তনয় বলল
“তুষার ভাইর সব সময় শাসন।যাকে পারে তাকে দাবে খালি।এতো হুজুর হুজুর করার কি আছে।নিজের বউকে মনে হয় সুকেশে রাখতে চায়”
লিজা বেগম ভর্ৎসনা দৃষ্টি তাকিয়ে রইলো।
বিথী ও চলে গেলে।
,
তুষার এখন কোথাও বসে হয়তো সিগারেট টানছে।
উন্মদের মতে।উদাসীনতায় মনে হয়।সিগারেটের শেষ অংশ পর্যন্ত খাবে।আগুনে তার ঠোট পুড়ে যাবে।হুস ভিরবে ঠোটে জলন্ত।আগুনের ছ্যাকায়।
তার মাথায় রক্ত চেপে আছে।
কালকের জন্য তাই আজ এটুকু ব্যপারে মাথা গরম করে ফেললো।
,
কাল পা পুরেছে লোকটা শুধু টাচ করেছে তার জন্য নয়।বিনা অনুমতিতে বাড়ীর বাহিরে বের হয়েছে।তাই।
তার থেকে বড় একটা ব্যপার হলো।
দোকানে বসা একটা লোক পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো।
যে কারো রাগ হওয়ার কথা।তুষারের ও হয়েছে।
পৌষীর ধবধবে সাদা পা থেকে শুরু করে সব যে ওর অধীকার অন্য কে দেখবে কেনো।
তুষারের ভাবতে ভাবতে ঠিক সিগারেটে মুখটা পুরে গেলো।
আচ্ছা পৌষী কি জানতে চায় না।
তুষার সিগারেট কেনো খায়।
ও তো পুরুষ।পুরুষ মানুষের একটু সংযম থাকতে হয়।তাই।
পৌষীকে শুধু দেখলে নিজের দুনিয়া হারিয়ে ফেলে।বুকে ভিতর কেমন যানো করে।
শ্বাস কষ্ট হয়।তার অবস্য প্রধান একটা কারণ যা আজও নিজেকে বুজাতে পারেনি।
পৌষীর সেম্পু করা চুলের গন্ধ নাকে আসলে।
জরিয়ে সহস্র আদর করতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু কোথাও একটা দ্বীধা।কাটিয়ে উঠতে পারছে না।
কি অদভুত একটা শব্দ দ্বীধা।তাই না।
,
নিজের কাছে নিজেকে নোংরা মনে হচ্ছে পৌষীর।
সাওয়ার ছেরে নিচে দাড়ীয়ে গেলো।
বাথ টাব থেকে পানি গরিয়ে পরছে চোখে মুখে।
হাতটা সাবান দিয়ে কয়েক বার ধুলো।
তাতে কি।অনুভুতি ধোয়ার জন্য কি কোনো সোপ বা লিকুইড জাতিয়ো কিছু আছে তহলে সেটা ও কিনতো।
কি বলল তুষার ওর আর তনয়ের সম্পর্কে।
তনয় কি চোখে দেখে পৌষী জানে না।
তবে ও তনয় কে নিজের ভাই হিসেবে দেখে।
নিজের ভাইয়ের সম্পর্কে এতো গুলো কথা বলতে পারলো।সেখানে পৌষী ভাবছে
“আমি তো ক্ষুদ্র কেউ একজন।যাকে নিজের সংসার সামলাতে।রান্না করতে।রাতের মনেরঞ্জন করতে।আর যখন মন চাইবে মারতে।এনেছে।”
আনমনে চোখবেয়ে জল পরছে।
ঝর্ণার পানিতে বিলিন হয়েও যাচ্ছে।
কান্না করতে করতে হিচ্কি উঠে গেছে ওর।
পরার কাপড় নিয়ে ঢুকেনি ওয়াস রুমে।
টাওয়াল পেচিয়ে বেরিয়ে।কালো রঙের একটা সেলোয়ার সুট পরলো।
সেলোয়ার পাজামটা।কালো।জামাটা।পুই রঙের মধ্যে এমব্রয়ডারির কালো সুতোর কাজ।ওড়না কালো।
ভেজা এলো মেলো চুল গুলো বিছানায় খোলা ছড়িয়ে গায়ে চাদর টেনে গুমিয়ে পরলো।
ভাত ঘুম না দিলেও একটা ঘুমের খুব প্রয়োজন।
,
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কীটটা কোনো প্রয়োজন পরলো না।রেজাল্ট নেগেটিভ আসছে।
দুইবার টেস্ট করে রেজাল একই এসেছিলো।
হয়তোবা অন্য কোনো রিজেন হবে।
শরির তো বিভিন্ন কারনে অসুস্থ হতে পররে তাই বলে সব কিছু ওটা না।জীবনের ব্যপারে ও যে কতোটা কাচা আরো একবার প্রমান হলো!!
,
তনয় নিজেকে শান্ত করতে পারছে না।
কি বাজে একটা কথা।
লজ্জায় হয়তো বা পৌষী ওর সাথে আর কোনো দিনও কথা বলবে না।ও যে আত্মসম্মান বোদ মেয়ে এর পর থেকে ওর সঙ্গে কথা বলার এস্পেক্ট জরা উচিৎ না।
,
ডান হাত রোমশ বীহীন বুকের উপর।
বাম হাত দু চোখের পাতা ঢেকে।শুয়ে রইলো।
ঘুম নামের বস্তুটা আজ রাতে আর আসবে না তনয় এর।বিথী পা টিপে টিপে রুমে এসে দেখলো তনয় ঘুমিয়ে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
কবে কখন যে ওকে ভালো লাগলো বিথী বুজতেই পারেনি।এখন তো শুধু ওকে দেখলে বুকের ভিতর ড্রাম বাজে।ওর চাপ দাড়ী না।হালকা দু একটা দাড়ী।বেসি হলে মনে হয় অনেক সুন্দর লাগতো।
না তার থেকে এটাই বেস।ও যখন ক্লিন সেভ করে তকন তর তর করে ওর বয়সটা কমে যায়।
ঠোটে স্মিত হাসি।ইশ!!এই হাসি যদি তনয় দেখতো তাহলে নির্ঘাত বলতো
“ভুতি তোরে কি ওই বট গাছটার মেছো পেত্নীটায় পেলো নাকি একা একা দাত কেলাচ্ছিস”
,
বিথী তখন লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিসে গুড়িগুড়ি হয়ে যেতো।বিথী নিজেকে সামলে বলল।
”যাহহ!!বাউণ্ডুলেটা নিজের ঘরটা পর্যন্ত ঠিক ঠাক রাখে না।”
চারো দিকে তাকিয়ে ময়লা টি-শার্ট,আর প্যন্ট গুলল।আলাদা রেখে।ইস্ত্রি করা কাপড় গুলো আলমারিতে।তুলার জন্য গুছিয়ে নিলো।
আলমারি ঘুচাতে গিয়ে অবাক হলো।
মোটা কাগজের বড় একটা সপিং ব্যগ।
তার মধ্যে একটা শাড়ী।কিঞ্চিৎ ভুরু।বাকিয়ে।
সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকালো ঘুমন্ত তনয়ের মুখের দিকে।
মুহুর্তে বুকের ভিতর ধুরফুর করা শুরু করলো।
না নান চিন্তা যে মাথায় যেকে বসেছে
শাড়ীটা কার জন্য হতে পারে।পৌষী।
নিশ্চই।সারাদিন যে ছোটো আপু ছোটে আপু করে।কিন্তু।এখন দিবে না নিশ্চই।তুষার ভাইর যে মেজাজ তনয় হার মানবে।
,
তবে কি খালা মনির জন্য আনলো।
তাহলে নিশ্চই সার্প্রাইজ।এখনও দেয়নি যে।
,
নাকি অন্য কারো জন্য।ভাবতে ওর মুখটা লজ্জা য় লাল নিল হয়ে গেলো।
,
পিছন থেকে তনয়ে হুংকার শুনে।
হাতের প্যকেটটা পরে গেলো।
“তোর সাহস তো কম না।তুই আমার পার্সোনাল জিনিসে হাত দিস।আমি দেই তোর পার্সোনাল জিনিসে হাত।আজাইরা মেয়ে একটা”
দু চোখে ছলছল জল কনা।প্যকেটটা নিয়ে তনয় আলমারি বন্ধ করে দিলো।
খুব আপমানিত হলে সেই আজ।
জোর করে কাউকে চাইতে গেলে যে ঠকতে হয় তা জানা ছিলো না আজ জানলো।
বিথী দৌড়ে রুম থেকে চলে গেলো।
বিথী যাবার পরই তনয়।শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল
“কিছু দেখে ফেলেনি তো।”
জলাদি কর আলমারি খুলে প্যকেটটা সেফ জায়গায় রেখে সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
,
,
চলবে,,,