#গল্পঃছদ্মবেশে_কে_সে?
#পর্বঃচতুর্থ।
#লেখাঃShihab Hossain(Tarajul)
মারিয়া ইরফানের মামার বাড়িতে প্রায় ঘন্টাখানেক বসে থেকে গল্প করলো।মারিয়া জানতে পারলো যে ইরফানের মামার দুই ছেলে দুইজনই বউ বাচ্চা নিয়ে বিদেশ থাকে।উনাদের নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু এই শেষ বয়সে উনারা নিজ দেশ ছেড়ে যেতে চাইনি।মারিয়া বাসায় ফিরে আসার পর থেকে ভাবছে এখন তো সবকিছু স্বাভাবিক লাগলো,,কিন্তু যখন সে একা গিয়েছিলো তখন পুরো বাড়ি অমন লাগছিলো কেন?মারিয়ার কাছে সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগছে।এমন সময় ইরফান বলল
->তোমাকে কেমন জানি চিন্তিত দেখাচ্ছে?কোন কিছু কি হয়েছে তোমার?
মারিয়া ইরফানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
->তেমন কিছু না।মা-বাবার কথা মনে পড়ছে।বিশেষ করে আমার ছেলের কথা বেশি মনে পড়ছে।
->হুম মনে পড়ায় স্বাভাবিক।ভেবেছিলাম তোমার ছেলের কাছে থেকে বাবা ডাক শুনে বাবা হওয়ার স্বাদ পূরন করবো কিন্তু সেটা আর হলো না।
মারিয়া চুপ করে মাথা নিচু করে আছে।ইরফান বলল
->থাক মন খারাপ করো না।রাতের খাবারটা খেয়ে নিই চলো।
->হুমম চলুন।
মারিয়া আর ইরফান বসে থেকে রাতের খাবার খেলো।তারপর দুইজনে রুমে এসে বসে আছে।ইরফান জানালার সামনে গিয়ে সেখান থেকে চাঁদ দেখছে।মারিয়া গিয়ে ইরফানের পাশে দাড়ালো।তখন ইরফান হালকা হেসে বলল
->আজকের চাঁদ কিন্তু অনেক সুন্দর তাই না?
->হুমম খুব সুন্দর।
->আজ পূর্নিমার রাত।আর আজকের রাত আমার জন্য খুব উপকারি একটা রাত।
ইরফানের কথা শুনে মারিয়া অবাক হয়ে বলল
->আপনার জন্য উপকারী রাত বলতে?আপনার কথাটির মানে আমি বুঝলাম না।
->কিছু না।তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।
->আপনি শুইবেন না?
->আমি তো শুতে পারি না।
মারিয়া আর কিছু না বলে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।ইরফানের কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছে মারিয়ার।না জানি সে বেচারা কতদিন ধরে এভাবে বসে বসে রাত পার করে।একটু বাদে মারিয়ার চোখে ঘুম এসে গেলো।
হঠাৎ বজ্রপাতের আওয়াজে মারিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।মারিয়া চোখ খুলে দেখলো চারদিকে কুটকুটে অন্ধকার।নিজের হাত-পা দেখার মতো আলো রুমের মধ্যে নেই।মাঝে মাঝে বিজলি চমকানোর আলোয় ভিতরটা আলোকিত হয়ে উঠছেন।আর বেশ জোরে জোরে বাজ পড়ছে সেই সাথে প্রচন্ড ঝড় বাতাস শুরু হয়েছে।মারিয়া ঝড় আর বজ্রপাতকে বেশ ভয় পায়।মারিয়া ইরফানকে বলল
->এই যে শুনছেন,,আমার না খুব ভয় করছে?
কিন্তু মারিয়ার কথার কোন জবাব এলো না।মারিয়া ওর বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে ফ্লাশ জালিয়ে দেখলো ইরফান নেই।মারিয়া মনে মনে বলল,,এতো রাতে উনি কই গেলেন?মারিয়া বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্লাশ নিয়ে বাড়ি বাথরুমের দিকে যেতে লাগলো,,ভাবলো বাথরুমে গেছে কি না?কিন্তু বাথরুমে গিয়ে দেখলো ইরফান সেখানে নেই।এতো রাতে লোকটা গেলো কোথায়?হঠাৎ জোরে বাজ পড়লো মারিয়া চিৎকার দিয়ে দুই হাত দিয়ে কান ধরলো।মারিয়া জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।এদিকে ইরফান নেই সেই জন্য ওর চিন্তা হচ্ছে।মারিয়া রুম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক দেখছে কিন্তু কোথাও ইরফান নেই।হঠাৎ মারিয়া কিছু একটার আওয়াজ শুনে থেমে গেলো।আওয়াজ শুনতে অনেকটা হাড় কড়মড় করে চিবিয়ে খাওয়ার আওয়াজের মতো।মারিয়া হার্টবিট দ্রুত চলতে শুরু করেছে।তাই মারিয়া ভয় পেয়ে দৌড়ে রুমে চলে আসলো।কি যেন ভেবে সে একবার বেলকনিতে আসলো।বেলকনিতে এসে নিচের দিকে তাকাতেই দেখলো
সেখানে একটা ঘোড়া দাড় করানো।মারিয়া ঘোড়া দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো,,এই ঘোড়াটি কার আর এটা এখানে কি করছে?এমন সময় আবার বাজ পড়লো।মারিয়া আবার দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরলো।তারপর আকাশের দিকে তাকাতেই যা দেখলো এতে ওর কলিজা শুকিয়ে গেলো।বাড়ির ছাদ হতে একটু উচুতে অসংখ্য কালো অশরীরী ছায়া চক্রাকারে ঘুরাঘুরি করছে।মারিয়া এই দৃশ্য দেখে চোখ বড় বড় করে ফেললো আর এমন সময় সেই ঘোড়ার ওপর কালো কুচকুচে একটা দানব আকৃতির মানুষ এসে ঘোড়ার ওপর বসলো।মাথায় তার শিং এর মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।মারিয়া এটা দেখে আরো ভয় পেয়ে গেলো।হঠাৎ ঘোড়া যেতে শুরু করলো।তারপর ঘোড়ায় থাকা লোকটি মারিয়ার দিকে তাকালো।মারিয়া লোকটির লাল চোখ বিশিষ্ট ভয়ংকর চেহারা দিকে জোরে চিৎকার করে উঠলো।এমন সময় ইরফান পিছন থেকে বলে উঠলো
->কি হয়েছে?এভাবে চিৎকার করছো কেন?
->এখানে একজন এক ভয়ংকর চেহারার লোক দাড়িয়ে আছে ঘোড়া নিয়ে।
আর এমন সময় কারেন্ট চলে এলো।ইরফান হুইল চেয়ার নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বলল
->এখানে তো কেউ নেই।আর এতো রাতে এখানে ঘোড়া আসবে কোথায় থেকে।
->আমি দেখেছি এখানে কেউ ছিলো।
->কেউ নেই বিশ্বাস না হলে এসে দেখো।
মারিয়া ভয়ে ভয়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখলো সত্যি সেখানে কেউ নেই।আর একটা জিনিস দেখে অবাক হচ্ছে হঠাৎ করে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলো কি করে?মারিয়া বলল
->তার ঘোড়া এখানে দাড়িয়ে ছিলো।আর সে চলে গেছে।
ইরফান হেসে উঠে বলল
->আরে পাগল কিছু হয়নি সম্ভবত তুমি ভয়ানক কোন স্বপ্ন দেখেছো।
->স্বপ্ন না সত্যি দেখেছিলো আমি।আর আপনি কই ছিলেন এতক্ষণ।কত খুজলাম।আপনাকে দেখতে না পেয়ে আমি উঠে পড়ছি।
->আমি তো এখানে বসে ছিলাম।অনেকক্ষণ যাবৎ দেখছিলাম তোমার মুখ থেকে গোঙ্গানি বের হচ্ছে।তারপর হঠাৎ তুমি বিছানা ছেড়ে উঠে বেলকনির সামনে গিয়ে চিৎকার করলে।
ইরফানের কথা শুনে মারিয়া থ মেরে দাড়িয়ে আছে,,সে বেশ অবাক হয়ে ভাবছে,,ইরফান এসব কি বলছে,,সবকিছু কেমন জানি মারিয়ার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।মারিয়া বলল
->এসব কি বলছেন আপনি?আমি যা দেখেছি সেটা সজাগ অবস্থায় দেখেছি।আর যখন কারেন্ট ছিলো না তখন আমি ভয়ে আপনাকে ডেকে ছিলাম কিন্তু আপনি ছিলেন না।তাই ফোনের লাইট নিয়ে আপনাকে খুজতে গিয়েছিলাম কিন্তু আপনাকে কোথাও পাইনি।এই যে দেখুন আমার হাতে ফোন আছে।
ইরফান তখন মারিয়ার কাছে এসে বলল
->যখন কারেন্ট যায়নি তখন তুমি আমায় খুজবে কি করে?আর আমি তো এখানে বসে ছিলাম।কোথাও যাইনি আমি সত্যি বলছি।
->কিন্তু এটা কি করতে হতে পারে।যখন আপনাকে খুজছিলাম তখন বাইরে ঝড় হচ্ছিলো।
->বাইরে কোন ঝড় হয়নি বিশ্বাস না হলে গিয়ে দেখো।মাঝে মধ্যে আমরা যে স্বপ্নগুলো দেখি সেগুলো দেখে মনে হয় স্বপ্নের ভিতরের কাজ গুলো বাস্তবে করছি।আর আজ এটা তোমার সাথে হয়েছে।
মারিয়া আর কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে আছে।সে কি এসব আসলে স্বপ্নে দেখেছে নাকি বাস্তবে ঘটেছে।এটা ভাবতে ভাবতে মারিয়া মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেলো।মারিয়ার কাছে পুরো ঘটনা স্পষ্ট যে যা ঘটেছে সব সত্যি ঘটেছে কোন স্বপ্ন ছিলো না।কিন্তু ইরফান এটাকে স্বপ্ন বলে চালিয়ে দিচ্ছে?কিন্তু কেন?
সকালবেলা মারিয়া ঘুম থেকে উঠে নিচে এসে সেই ফুলের গাছে পানি দিচ্ছে।ইরফান একটু দুরে বসে আছে।মারিয়া ওদের বেলকনি বরাবর যে গাছগুলো রয়েছে সেখানে পানি দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসলো আর তখন দেখলো সেখানে ঘোড়ার পায়ের ছাপ।এটা দেখে মারিয়া ইরফানকে ডাকলো।
->এই যে শুনছেন?এদিকে একটু আসুন।
ইরফান হুইল চেয়ার নিয়ে এগিয়ে এসে বলল
->হ্যা কি হয়েছে বলো।
মারিয়া ইরফানের দিকে তাকিয়ে ওই গাছের দিকে ইশারা করে বলল
->কাল বলেছিলাম না এখানে ঘোড়া ছিলো আপনি তো বললেন স্বপ্নে দেখেছি।দেখুন ঘোড়ার পায়ের ছাপ।
ইরফান সেদিকে তাকিয়ে বলল
->কোথায় ঘোড়ার পায়ের ছাপ?
->এই যে এখানে দেখতে পাচ্ছেন না?
->পায়ের ছাপ থাকলে তো দেখবো।
মারিয়া তখন সেদিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে কোন পায়ের ছাপ নেই।মারিয়া অবাক হয়ে বলল
->একি!কোথায় গেলো পায়ের ছাপ?
->এখানে কোন পায়ের ছাপ ছিলো না।কাল রাতের স্বপ্নের কথা হয়তো ভুলতে পারছো না তাই এখনো জিনিসটা তোমার মাথায় ঘুরাফেরা করছে।
->না আমি সত্যি বলছি।আপনি বিশ্বাস করছেন না কেন?
->আচ্ছা ঠিক আছে আমি বিশ্বাস করলাম।এখন চলো আমার আবার বের হতে হবে।
ইরফান আর মারিয়া ভিতরে চলে গেলো।আর সে জায়গায় ঘোড়ার পায়ের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠলো।ইরফান সকালের নাস্তা করে আবার বেরিয়ে পড়লো।এখন পুরো বাড়িতে মারিয়া শুধু একা।মারিয়া বার বার ভাবছে রাতে যেসব ঘটেছে সে সব কিছু ছিলো বাস্তব কিন্তু ইরফান সেটাকে স্বপ্ন বলে চালিয়ে দিলো কেন?
ইরফানকে এতদিন যেমন ভালো মানুষ মনে হয়েছে তেমনি ওকে কাল থেকে রহস্যময় মনে হচ্ছে।কিছু একটা তো রয়েছে যা সবার আড়ালে।আর রাতে মারিয়া যেসব কালো অশরীরী দেখেছে সেসব এখানে কি করছে?ছোট বেলায় মারিয়া বিভিন্ন কার্টুন মুভিতে দেখতো যে যারা যাদু বিদ্যা জানে তাদের বাড়িতে এমন অশরীরী দেখা যায়,,তাহলে কি ইরফানও কোন জাদু বিদ্যা জানে?তখন মারিয়া মনে মনে বলল,,এসব কি ভাবছি বাস্তবে এসব কখনো সম্ভব না?এখন মারিয়ার মনে হচ্ছে কাল রাতে সে স্বপ্ন দেখেছিলো ইরফানের কথা ঠিক মনে হচ্ছে।
ইরফান চলে যাওয়ার একটু পর সেই সাদা বিড়াল আসে।এই ব্যাপারটা বেশ অবাক লাগছে।ইরফান থাকতে একবারের জন্যও তো সেই সাদা বিড়াল আসে না।মনে মনে ভাবলো ইরফান হয়তো তাড়িয়ে দেয় তাই আসে না।সেই বিড়াল সব সময় মারিয়ার সাথে বসে থাকে।মারিয়া যেখানে যায় সেই বিড়ালও ওর সাথে যায়।ইরফান আজ সন্ধ্যায় ফিরে এলো।ইরফান আসার পর পরই সেই বিড়াল উধাও।মারিয়া আজও ইরফানকে বলল
->আপনি কি কোন অফিসে চাকরি করেন?
ইরফান হেসে জবাব দিলো
->সেরকমই কিছু ধরে নাও।তবে সময় হলে অবশ্যই জানবে।
মারিয়া আর কিছু বলে না।এভাবে কয়েকদিন কেটে গেলো।মারিয়া ইরফানের ব্যাপারে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।মারিয়া মাঝে মধ্যে থানায় ফোন করে ওর পরিবারের হত্যা কারির কথা জিজ্ঞেস করলে শুধু বলে,,খুব শীঘ্রই আমরা হত্যাকারিকে ধরে ফেলবো।
ইরফান মারিয়াকে কিছু টাকা হাতে দিয়ে বলল
->এই টাকা গুলো দিয়ে তুমি তোমার পছন্দ মতো কিছু জামা কিনে নিয়ে এসো।
->আমার তো জামা আছে।আবার নতুন করে কেনা কি দরকার এসব দিয়ে চলবে।
->অনেক পুরোনো এগুলো।তুমি নতুন কিনে নিয়ে এসো।
মারিয়া এতে একটু খুশি হলো।পরেরদিন ইরফান কাজে যাওয়ার পর মারিয়া মার্কেটে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো।মারিয়া রিকশা থেকে নেমে মার্কেটের ভিতর যাবে এমন সময় তার সামিউলের সাথে দেখা হলো।
চলবে,,,,,,।
(গল্প সম্পূর্ণ কাল্পনিক।বাস্তবের সাথে গল্পের কোন মিল নেই।এই গল্প গুলো শুধু লেখা হয় বিনোদনে জন্য।যাদের গল্প ভালো লাগবে না তারা এড়িযে যাবেন কিন্তু কোন বাজে মন্তব্য করবেন না।ধন্যবাদ)