ছায়াবর্ণ পর্ব -২০+২১+২২

#ছায়াবর্ণ
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ২০

আমি রিনির ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে তার সাজ শেষ করলাম। হলুদের ওপর লাল রঙের কাজ করা একটা গাউন পরেছে সে। ছোট খাটো একটা পুতুল লাগছে রিনিকে দেখতে। রিনি মিষ্টি করে হেসে বলল–

— বয়ফ্রেন্ড আমার সাজ পছন্দ করবে তো ছায়াপু?

বাবা রে! আমার ‘তাকে’ ইমপ্রেস করার জন্য রিনির এতো সাজ গোজ! তবে আমি এটাও মানি, রুমে উপস্থিত দুই আপুও তাকে ইমপ্রেস করার জন্য ইচ্ছে মতো মুখে মেকআপ ঘসেছেন। আর আমার নিজেরই কোনো হেলদোল নেই। আমি রিনির গাল টেনে দিয়ে বললাম–

— একশো বার পছন্দ করবে। এতো কিউট একটা মেয়েকে পছন্দ না করে কেউ থাকতে পারে?

রিনি প্রফুল্ল কন্ঠে বলল–

— আমি তাহলে বয়ফ্রেন্ড কে দেখিয়ে আসি?

আমি হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম। রিনি চলে গেল। উপস্থিত আপুর মামাতো দুই বোনের একজন বলল–

— হুহ! ঢঙ দেখলে আর বাঁচি না।

আমি কিছু বললাম না। এক কোণে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর বড় মামি এসে তাড়া দিলেন–

— কিরে! তোদের হলো? সবাই নিচে বসে আছে। দ্রুত সামিয়া কে নিয়ে আয়। ছায়া! তাড়াতাড়ি আপুকে নিয়ে আয়।

আমি আপুর কাছে এগোনোর আগেই তারা বলল–

— তোমাকে লাগবে না। আমরাই পারবো সামিয়াকে নিয়ে যেতে।

তারা আপুকে টানতে টানতে নিয়ে গেল। আমি বসে রইলাম। হুট করেই মনে হলো এতো লোক জনের মধ্যে আমি একা। সবাই আমার ওপর বিরক্ত। আমার বন্ধু তুল্য আপুও আমার ওপর বিরক্ত। আমার এখানে আসায় উচিত হয়নি। হঠাৎ দরজার শব্দে মুখ তুলে তাকালাম। বর্ণ ভাই দরজা বন্ধ করে তাতে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার শান্ত দৃষ্টি আমার ওপরেই স্থির। চমকালাম, উনি এখানে কেন? দরজাটাই বা আটকেছেন কেন? কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে! আমি দাঁড়িয়ে অস্থির হয়ে বললাম–

— আপনি! আপনি এখানে কেন? আর দরজা বন্ধ করেছেন কেন? কেউ দেখে ফেললে কি হবে?

উনি নির্বাক। এগিয়ে এলেন আমার কাছে। আমি হকচকিয়ে গেলাম। পেছাতে নিলেই আটকে ফেললেন। অভিমান চাড়া দিয়ে উঠলো। মুখ ফুলিয়ে বললাম–

— কেন এসেছেন? পুরো একটা দিন কথা বলেননি আমার সাথে। মুখ ঘুরিয়ে থেকেছেন। এখন কি জন্য এসেছেন?

তিনি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলেন। এই হাসিই দূর্বলতা আমার। সকল অভিমান চুর চুর করে ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল। এতো সুন্দর কেন লোকটা? নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো সুন্দর! তিনি আমাকে টেনে বিছানায় বসালেন। অন্য হাতে থাকা ব্যাগ থেকে একটা বেলী ফুলের মালা বের করলেন। খুব যত্ন করে হাতে পরিয়ে দিলেন। আর আমি তাকে দেখে গেলাম। চোখ সরালাম না এক মুহূর্তের জন্যও। সবুজের ওপর হালকা হলুদ রঙা পাঞ্জাবিতে তাকে এতো সুন্দর না লাগলেও পারতো। ব্যাগ থেকে আর একটা মালা বের করে আমার খোঁপায় লাগিয়ে দিলেন। আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললেন–

— একদম পারফেক্ট। আমার ওপর কি খুব অভিমান আছে আমার শুভ্র গোলাপের?

লজ্জা পেলাম। একটুও অভিমান না থাকা সত্ত্বেও মুখ ঘুরিয়ে বললাম–

— আমি কে আপনার? আমি অভিমান করে আছি কি নেই তা নিয়ে কারো যায় আসে না।

তিনি আমার মালা জড়ানো হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট ছোঁয়ালেন। হৃৎপিণ্ড ধড়াস করে উঠলো। তিনি থেমে নেই, আরও বার কয়েক ঠোঁট ছুঁইয়ে বললেন–

— আমার শুভ্র গোলাপকে মুখ কালো করে বসে থাকা মানায় না। তার সবার সাথে আনন্দ করে বেড়ানো মানায়।

একটু থেমে আবার বললেন–

— তুমি কি জানো? এই হলুদ শাড়িতে তোমাকে কেমন লাগছে? আমার চোখ যে বড় বেহায়া হয়ে উঠছে। যদিও তুমি আমার হালাল বউ তবুও আমি কিছুই করতে পারছি না। পারছি না তোমায় একটু ছুঁয়ে দিতে। হাঁসফাঁস করছি আমি। কি ভয়ংকর অসুখ হয়েছে আমার বুঝতে পারছ?

তার কন্ঠে কেমন অদ্ভুত নেশা! আমি কেঁপে উঠলাম। চোখ খিচে বন্ধ করে বললাম–

— বন্ধ করুন আপনার এসব ভয়ানক কথা বার্তা।

তিনি মৃদু শব্দে হাসলেন। আমি তার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বললাম–

— এভাবে হাসবেন না তো। আমার সব কেমন গুলিয়ে যায়।

তিনি মুখ চাপা অবস্থায় আবারও হাসলেন। আমি চোখ গরম করে বললাম–

— খবরদার! বাইরে ওসব মেয়েদের সামনে হেসেছেন তো! মে’রে একদম গুম করে ফেলবো। আপনার এই হাসিতে একমাত্র আমি মুগ্ধ হবো। বুঝেছেন? শুধু আমি।

তিনি আমার হাতটা সরিয়ে বললেন–

— তোমার সামনে ছাড়া আর কারো সামনে হাসি না আমি। কিন্তু তুমি যে খিলখিল করে হেসে বেড়াও আর আশে পাশের সবাই হা করে দেখে! তার বেলা?

— আপনি এত হিংসুটে!

— হ্যাঁ আমি খুব হিংসুটে। তোমার বেলায় আমি পৃথিবীর নাম্বার ওয়ান হিংসুটে হবো।

আমি মুখ ভেংচি কাটলাম। তিনি এবার সিরিয়াস হয়ে বললেন–

— তোমার আপুর ওই মামাতো বোন দুটো খুব জ্বালাচ্ছে আমায়। সারাক্ষণ পেছনে লেগেই আছে! সমস্যা কি তাদের?

আমি একটা হাই তুলে বললাম–

— অন্য সব মেয়েদের মতো তারাও আপনার ওপর ক্রাশ খেয়েছে। দেখুন কাউকে পছন্দ হয় কিনা। পছন্দ হলে বিয়ে করে ফেলুন। আর কতদিন কুমার থাকবেন? বয়স তো হচ্ছে না কি?

তিনি বোধহয় রেগে গেলেন। এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দুহাত নিজের দু হাত দিয়ে চেপে ধরলেন। আমি হকচকিয়ে মৃদু চেঁচিয়ে বললাম–

— আরে! কি করছেন?

তিনি শক্ত কন্ঠে বললেন–

— বিয়ে করব? আমার বয়স হচ্ছে? আমি কুমার? আমি তোমার কি হই?

আমি চোখ বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে বললাম–

— জানি না।

তিনি নিজের মুখ এগিয়ে আনলেন। ওনার নিঃশ্বাস মুখে পড়তেই শ্বাস গলায় আটকে গেল। মুহূর্তেই ওনার শুষ্ক ওষ্ঠদ্বয় কপাল স্পর্শ করলো। শিউরে উঠলাম। আশ্চর্য! উনি আবারও রাগী মুড থেকে অন্য মুডে চলে গিয়েছেন! উনি ফিসফিস করে বললেন–

— বলো? কি হই আমি তোমার?

এর উত্তর দেওয়া কি কখনোই সম্ভব? এ কেমন ঘোর ওনার চোখে? উনি আরও কাছে আসতে নিলেই দরজায় নক হলো। ওনার হাত ঢিলে হলো। ঘোর থেকে বের হলেন। আমি ওনার বুকে আলতো ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে উঠে বসলাম। বাইরে থেকে মায়ের আওয়াজ এলো–

— ছায়া! সবাই বাইরে, তোর কি সাজগোজ শেষ হয়নি এখনও?

আমি জোরে জোরে শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে বললাম–

— এই তো হয়ে গিয়েছে মা। তুমি যাও আমি আসছি।

— ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি আয়।

মা চলে গেলেন। আমি স্বস্তির শ্বাস ফেললাম। বর্ণ ভাই বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। আমি সতর্কতার সাথে বললাম–

— শুনুন, আমি আগে বের হচ্ছি তারপর আপনি বের হবেন। খুব সাবধানে, কেউ যেন না দেখে। দেখে ফেললেই শেষ!

তিনি জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না। আমি ধীরে ধীরে দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম।

বাড়ির বাইরে ছোট্ট একটা স্টেজ করা হয়েছে সামিয়া আপুর গায়ে হলুদের জন্য। গ্রামের অনেকেই এসেছে এই অনুষ্ঠানে শামিল হতে। রিনি সামির হাত ধরে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে হলুদ দেখার জন্য সে খুব উত্তেজিত। আপুর গায়ে হলুদ শুরু হলো। একে একে সকলে একটু একটু করে আপুকে হলুদ ছোঁয়াচ্ছে। আপুর তথা কথিত মামাতো বোন দুইজন সেলফি তুলতে তুলতে অজ্ঞান প্রায়। আমি ঠেলেঠুলে আপুর গালে একটুখানি হলুদ লাগিয়ে দিলাম। আপুর কানে ফিসফিস করে বললাম–

— হলুদে তোমাকে আরও সুন্দর লাগছে আপু। আ’ম শিওর বিয়ের দিন জিজু তোমাকে দেখলে মূর্ছা যাবে।

আপু লাজুক হেসে বলল–

— ছায়া! তুইও না! এসব কি বলছিস?

আমি কিছু বলার আগেই আপুর এক মামাতো বোন আমাকে ধাক্কা দিল। আমি পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিলাম। সে মুখ বাঁকিয়ে বলল–

— সরো তো। আমরা ছবি তুলব। তুমি ছবির মধ্যে এলে ভালো হচ্ছে না।

আমি মলিন হেসে সরে দাঁড়ালাম। আমার সাথে তাদের এতো কিসের সমস্যা? কিছুক্ষণ পর এখানে দাঁড়ানোর আর প্রয়োজন বোধ করলাম না। শাড়িতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছি। কুঁচি সামলে বাড়ির দিকে অগ্রসর হলাম।

চলবে..#ছায়াবর্ণ
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ২১

বাড়ির ভেতরের দিকটায় আপাতত তেমন কেউ নেই। সবাই হলুদের জায়গায় আছে। আমি শাড়ির কুচি সামলে নিজের জন্য নির্ধারিত রুমে প্রবেশ করলাম। দরজা বন্ধ করতে নিতেই কেউ শক্ত হাতে বাঁধা দিল। আমি ভড়কে সামনে তাকিয়ে দেখি, বর্ণ ভাই! তিনি নিজের বল প্রয়োগ করে ভেতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি চোখ কপালে তুলে বললাম–

— আপনি! আপনি এখানে আসলেন কেন?

তিনি এগিয়ে এসে বললেন–

— একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে এসেছি।

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম–

— কি কাজ?

উনি জবাব দিলেন না। হাত চেপে ধরে হেঁচকা টানলেন। আমি গোল গোল চোখে তাকিয়ে মৃদু চেঁচিয়ে উঠলাম–

— আরে! কি হচ্ছে এসব?

উনি আমার ঠোঁটে নিজের আঙুল ঠেসে বললেন–

— হুশ! আমাকে আমার কাজ করতে দাও।

নিজের অন্য হাত আমার গালে স্পর্শ করলেন। ঠান্ডা স্পর্শে কেঁপে উঠলাম। উনি অপর গালেও হাত ছোঁয়ালেন। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম–

— ক কি দিচ্ছেন গালে?

উনি নিজের হাত দেখালেন। হলুদ! উনি আমার গালে হলুদ লাগিয়েছেন। আমি অবাক হয়ে বললাম–

— আপনি হলুদ কোথায় পেলেন?

উনি উত্তর না দিয়ে ফিচেল কন্ঠে বললেন–

— আমাদের বিয়েতে গায়ে হলুদ হয়নি তাই না? তাই তোমাকে হলুদ লাগিয়ে দিলাম। তবে এটা আমি চুরি করে এনেছি। এবার তুমিও আমাকে হলুদ লাগিয়ে দাও।

— আমার কাছে তো হলুদ নেই।

— আচ্ছা বেশ! আমি নিজেই হলুদ মেখে নিচ্ছি।

উনি আমার গালে নিজের খোঁচা খোঁচা দাড়ি ভর্তি গাল ঘষলেন। দেহ অবশ হয়ে এলো। নিজেকে সামলাতে ওনার কোমরের কাছে পাঞ্জাবীর অংশ খামচে ধরলাম। চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। উনি এক গালে গাল ঘষে থামলেন না, অপর গালেও নিজের গাল ঘষলেন। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন–

— হয়ে গেল আমাদের গায়ে হলুদ। বিয়ের পর গায়ে হলুদ, অদ্ভুত না?

আমি কথা খুঁজে পেলাম না। মুখের ওপর ফু দিলেন। তিরতির করে কেঁপে উঠল চোখের পাতা। উনি কপালে নিজের ওষ্ঠ স্পর্শ করলেন। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন–

— সে এতো সুন্দর না হলেও পারত। বুক ব্যথা হওয়ার মতো সুন্দর! একটা মিথ্যে বলি?

আমার উত্তরের অপেক্ষা করলেন না। উষ্ণ নিঃশ্বাস ফেলে অস্ফুট স্বরে বললেন–

— ভালোবাসি না।

ছেড়ে দিলেন। সন্তর্পণে দরজা খুলে চলে গেলেন। আমি হাসলাম। মানুষটা এতো পাগল কেন?

চোখের নোনা জলে ভিজে যাচ্ছে গাল। সকলে আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। সময়টা সন্ধ্যা, বিয়েতে উপস্থিত গ্রামের লোকেরা ছিঃ ছিঃ করছে আমাকে নিয়ে। আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন বর্ণ ভাই, তিনি ভাবলেশহীন। আমার কান্নায় মা এগিয়ে আসতে চেয়েও পারছেন না, নানাভাই কড়াকড়ি হুকুম করেছেন আমার কাছে আসা যাবে না। তিনি অসহায় হয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে ধরে রেখেছেন মামিরা। বাবা ও বর্ণ ভাইয়ের বাবা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। উপস্থিত আছেন আমার দাদু বাড়ির লোকজনও। বিচার বসেছে আমাদের নিয়ে। কাল বিয়ে আর আজ এই ঝামেলা হওয়ায় থমথমে হয়ে আছেন অনেকে। এই নিরব পরিবেশে হঠাৎ কথা বলে উঠলেন সামিয়া আপুর মামি। কর্কশ কন্ঠে বললেন–

— ছিঃ ছিঃ ছিঃ! শহর থেকে ছেলে মানুষ ঘরে তুলে নোং’রা’মি! লজ্জা করে না? দ্যাখেন চাচা, এই ছবিটা ভালো করে দ্যাখেন। এই মেয়ে আপনাদের মান সম্মান রাখল না।

তিনি নানাভাই কে সেই ছবিটা দেখাচ্ছেন যেটা বর্ণ ভাই আর আমার। উনি যখন আমাকে হলুদ লাগাচ্ছিলেন তখন তোলা। আমাদের অজান্তেই কেউ জানালা দিয়ে ছবিটা তুলেছে। আর সামিয়া আপুর মামি সেটা রটিয়ে দিয়েছে খুবই বাজে ভাবে। নানাভাই এর মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে। তিনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন–

— এসব কি তাহসীনা?

আমি ফুঁপিয়ে উঠে বললাম–

— ন নানাভাই! আ আমি..

এরই মাঝে সামিয়া আপুর মামি বলে উঠলেন–

— এই মেয়ে আর কি বলবে চাচা? সবটা তো এই ফোনেই দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে এ’রা বন্ধ ঘরে, ছিঃ!

লোকজন কানাকানি করছে। আমি বাবার মুখের দিকে তাকালাম, অপমানে তিনি মাথা নিচু করে আছেন। আমার কান্না বাড়লো বই কমলো না। আমার জন্য আজ তার মাথা নিচু! খুব খারাপ আমি, বাবা মায়ের যোগ্য মেয়ে হতে পারিনি। মহিলা আমার মা বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন–

— আপনাদের মুখ দেখানোর কোনো রাস্তা রাখেনি এই মেয়ে। কি শিক্ষা দিয়েছেন মেয়েকে? আমার মেয়েকে দেখেছেন? সে এসবের কিছুই বোঝে না। আর আপনার মেয়ে! আমার মেয়ে হলে এতোক্ষণে গলা টিপে মে’রে ফেলতাম।

বর্ণ ভাইয়ের বোধহয় ধৈর্য্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল। তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন–

— ব্যস! অনেক হয়েছে আর না। এতোক্ষণ আপনি বলেছেন, গুরুজন বলে আমি চুপ করে ছিলাম। কিন্তু এবার আমি বলব আপনি শুনবেন।

নানাভাই এর গম্ভীর কন্ঠ–

— আওসাফ!

বর্ণ ভাই হাত উঁচিয়ে তাকে থামিয়ে বললেন–

— আমাকে বলতে দিন নানাভাই।

তিনি আমার দিকে এক পলক তাকালেন। নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে সামিয়া আপুর মামির দিকে তাকিয়ে বললেন–

— আমার ছায়া এতো খারাপ! আর আপনার মেয়ে ধোঁয়া তুলসী পাতা? ছেলেদের গায়ে গা লাগিয়ে বেড়ায়, নোং’রা ভাবে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। আপনার মেয়ে তো খুব ভালো। আমার পেছনে ঘুরে ঘুরে আমাকে আমাকে প্রেমের জালে জড়াতে চেয়েছে, আমি মানা করলে খুব বাজে অফার করেছে। কি অফার সেটা নাহয় নিজেরাই বুঝে নিবেন। ওহ! আপনার মেয়ে তো নিষ্পাপ শিশু! এমনকি আমার পিছু করেই সে এই ছবিটা লুকিয়ে তুলেছে। সব জানি আমি। ওপস্! আপনার মেয়ে তো কিছু বোঝেই না।

মহিলার মুখ থমথমে হলো। হয়তো ভেবেছিলেন আমার বদনাম করে, আমার যাতায়েত এই বাড়ি থেকে সর্বদার জন্য বন্ধ করে দেবেন। আমার সাথে কেন এত শত্রুতা? বর্ণ ভাইয়ের মুখে ‘আমার ছায়া’ কথাটা শুনে চোখ ভর্তি জল নিয়ে তার দিকে তাকালাম। তিনি আমার হাত ধরলেন গলা উঁচিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন–

— এখানে সবাই আছে ভালোই হয়েছে। আর লুকোচুরি নয়। সবাই কান খুলে শুনে রাখুন আমরা বিবাহিত।

সকলের মাঝে ছোট খাটো বোমা বিস্ফোরণ ঘটল। আমি চমকে তাকালাম। আন্টি হতবাক কন্ঠে বললেন–

— বর্ণ! এসব কবে হলো?

বর্ণ ভাই নিঃসংকোচে বললেন–

— এক মাস আগে মা। তার প্রমাণ আমি দেখাতে পারি।

তিনি ফোন ঘেঁটে আমাদের রেজিস্ট্রি কাগজের ছবি নানাভাই এর হাতে দিলেন। নানাভাই গম্ভীর মুখে দেখলেন। হাত থেকে হাত ঘুরে ফোনে ছবিটা সবাই দেখল। পাশ থেকে কেউ বলল–

— তুমি তো বেকার। বউকে খাওয়াবে কি?

গ্রামের মানুষ মাত্রই সবার চিন্তাধারা এমন। বর্ণ ভাই ঘোষণা দিলেন–

— আজ সকালে মেসেজ এসেছে, ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে আমার চাকরি হয়েছে। আগামী এক তারিখ জয়েন ডেট।

সকলে যেন দ্বীগুন অবাক হলো। অবাক হলাম আমিও, ওনার চাকরি হয়েছে! তিনি আমার হাত ধরে টেনে বাবার সামনে দাঁড় করালেন। শান্ত কন্ঠে বললেন–

— আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছি, আপনাদের অনুমতি ছাড়াই। তার জন্য আমি মাফ চাইছি। আর বাবা ছায়াকে তোমার পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে কি খুব অসুবিধা হবে?

তারা মুখে কিছু বললেন না। তবে মুখের তৃপ্তির হাসি বলে দিল তারা সম্মত। আবারও আমাকে টেনে নিয়ে মায়েদের সামনে দাঁড়ালেন। তিনি কিছু বলার আগেই মা ভেজা কন্ঠে বললেন–

— তোমার মত একটা ছেলে আমার ছায়া জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবে সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার কোনো আপত্তি নেই, আমি জানি তোমার সাথে সুখী হবে আমার মেয়ে।

বর্ণ ভাই আন্টির দিকে তাকালেন। আন্টি বললেন–

— আমি অনেক আগেই মনে মনে কথাটা ভেবে রেখেছিলাম। তবে আমার ছেলে যে আমার মনের ইচ্ছে এত তাড়াতাড়ি পূরণ করবে সেটা ভাবিনি।

বর্ণ ভাই মৃদু হাসলেন। নানাভাই উঠে দাঁড়ালেন। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন–

— আমি একটা সীদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু আওসাফ ও তাহসীনার বিয়েটা সবাইকে লুকিয়ে হয়েছে, সেহেতু..

গলা শুকিয়ে এলো আমার। কি বলবেন নানাভাই? তিনি কি আমাদের আলাদা হয়ে যেতে বলবেন? আমি যে ম’রেই যাব ওনাকে ছাড়া!#ছায়াবর্ণ
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ২২

নিরাবতার মাঝে সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন নানাভাই এর দিকে। আমার হৃদস্পন্দন একপ্রকার থমকে আছে। বর্ণ ভাইয়ের হাত সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলেন। তবুও শান্ত হতে পারলাম না। ছোট মামা ধৈর্য্য হীন কন্ঠে বললেন–

— আপনি কি সীমান্ত নিয়েছেন বাবা? আমার খুব চিন্তা হচ্ছে, আপনি আবারও একবার ভেবে দেখুন বাবা। বর্ণ খুব ভালো ছেলে, আমাদের ছায়া সুখী হবে।

নানাভাই হাত উঁচিয়ে মামাকে থামিয়ে দিলেন। বললেন–

— আমার যা সীদ্ধান্ত নেওয়ার তা নেওয়া হয়ে গিয়েছে। আমি সকলের উদ্দেশ্যে বলছি, আগামীকাল আমার বড় ছেলের মেয়ের বিয়ে। আর সেই বিয়ের সাথেই আওসাফ ও তাহসীনার আবার বিয়ে হবে। আমরা সবাই উপস্থিত থেকে তাদের বিয়ে দেব। যারা মন থেকে তাদের জন্য দোয়া করতে পারবেন তারা আসবেন। আর বাকিরা না এলেই আমি খুশি হবো।

আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। নানাভাই মেনে নিলেন! এতো সহজে! সবাই নানাভাই এর সীদ্ধান্তে খুশি হলেন। শুধু মাত্র মুখ কুঁচকে রইলেন সামিয়া আপুর মামি ও তার মামাতো বোন। নানাভাই আবার বললেন–

— এখন যে যার বাড়িতে যেতে পারেন। আগামীকাল বিয়েতে সবার আমন্ত্রণ রইল।

সকলে ধীরে ধীরে স্থান ত্যাগ করলেন। আমি কৃতজ্ঞতার সাথে নানাভাই এর দিকে তাকালাম। নানাভাই এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রেখে মুচকি হাসলেন মাত্র। অতঃপর চলে গেলেন। মা এবং আন্টি আমাদের টেনে রুমে নিয়ে গেলেন। আন্টি উৎসাহিত হয়ে বললেন–

— বর্ণ! এবার বল তো কবে কীভাবে বিয়েটা হলো?

বর্ণ ভাই সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললেন। ক্লান্ত কন্ঠে বললেন–

— মা! তোমাকে এখনই সব শুনতে হবে?

আন্টির দৃঢ় কন্ঠ–

— হ্যাঁ, এখনই সবটা শুনতে চাই আমি।

বর্ণ ভাই বাধ্য হয়ে সবটা বললেন। আন্টি শুনে চোখ বড় বড় করে বললেন–

— তার মানে তুই ছায়াকে জোর করে বিয়ে করেছিস! হায় আল্লাহ্!

বর্ণ ভাই ভাবলেশহীন। তিনি গমগমে কন্ঠে বললেন–

— তোমরা দুই বেয়াইন মিলে গল্প করো। ছায়ার সাথে আমার কিছু দরকার আছে।

— কিন্তু!

তিনি শুনলেন না। আমার হাত ধরে টেনে বের হয়ে এলেন। সোজা টেনে নিয়ে চললেন ছাদে। এতোক্ষণ আমি নির্বাক ছিলাম, মুখ খুললাম–

— মায়েদের সামনে এভাবে টেনে নিয়ে আসলেন কেন? কি ভাবলেন তারা?

— আমার বউকেই তো এনেছি। অন্য মেয়েকে টেনে নিয়ে এলে তখন নাহয় কিছু বলতো।

কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে বললেন–

— এতো ছিঁচকাদুনে কেন তুমি? কে না কে তোমার নামে আজে বাজে কথা বলছে আর তুমি কেঁদে ভাসাচ্ছ! দুই একটা কথা বলতে পারলে না?

আমি মুখ কালো করে বললাম–

— উনি গুরুজন। আমি কীভাবে বলতাম?

— কি পরিমান রাগ উঠেছিল জানো? উনি বড় না হয়ে অন্য কেউ হলে আমি কিছু একটা করে ফেলতাম। এখনও আমার মাথা দপদপ করছে। এতোটা খারাপ কেউ কীভাবে হতে পারে?

আমি ওনার বুকে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। ধীর কন্ঠে বললাম–

— যা হয় ভালোর জন্যই হয়। আজ ওনার জন্যই তো আমাদের বিয়ের কথাটা সবার সামনে এলো। তাই না?

বর্ণ ভাই আর কোনো বাক্য ব্যয় করলেন না। দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করে নিলেন। চেপে ধরলেন বুকের মধ্যিখানে। তার হৃদস্পন্দনের ছন্দের তালে হারিয়ে গেলাম। এভাবেই কাটল কিছু মুহূর্ত কিছু সময়।

বউ সেজে বসে আছি। খুবই সাদামাটা সাজ আমার। ছোট মামা কোথা থেকে যেন কিনে এনেছেন আমার পরনের লাল রঙা বেনারসী শাড়ি টা। শাড়ির সাথে হালকা সেজেছি, ভারি সাজ আমার কোনোকালেই পছন্দ ছিল না। অপরদিকে সামিয়া আপুকে টুকটুকে বউ লাগছে। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। গ্রামে ক্যামেরা ম্যান পাওয়া যায় না। যে যা পারছে নিজের ফোন দিয়ে ছবি তুলছে। কখনও সেলফি কখনও বা আমাদের দুজনের ছবি। বুকের মধ্যে দুরুদুরু করছে। এতো দিন যে শুধু আমার চোখে আমার স্বামী ছিল সে এখন সবাইকে সাক্ষী রেখে সবার সামনে আমার স্বামী হবে! আমার অর্ধাঙ্গ! এমনকি তার ঘরে উঠতেও হবে আমায়। ঘরে আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। এরই মধ্যে বড় মামা এবং ছোট মামা কাজী নিয়ে প্রবেশ করলেন। বয়স্ক কাজী, চোখে পাওয়ার ওয়ালা চশমা। তিনি প্রথমে আপুর সামনে বসলেন। তিন বার কবুল বলা এবং সই করার মাধ্যমে আপুর বিয়ে সম্পন্ন হলো। এবার কাজী বসলেন আমার সামনে। একই ভাবে সব বলে বললেন–

— বলো কবুল।

কন্ঠ জড়িয়ে এলো। ঢোক গিলে কাঁপা কন্ঠে বললাম–

— ক কবুল।

পরপর আরও দুবার বলে আবারও বর্ণ ভাইয়ের সাথে আমার নাম জুড়ে গেল সারাজীবনের জন্য। সকলকে সাক্ষী রেখে হলাম তার অর্ধাঙ্গিনী।
বিয়ের শেষে সামিয়া আপুর বিদায় হয়ে গেল। কেঁদে কেটে বাপের বাড়ি ত্যাগ করলেন তিনি। সাথে কাঁদলাম আমিও, চোখের কাজল লেপ্টে দফারফা অবস্থা।

নিয়ম অনুযায়ী আজ আমাদের বাসর! ভাবতেই লজ্জায় কুঁকড়ে উঠছি। একটা রুমে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হলো। সাধারণ একটা ঘর, বাসরের জন্য ঘটা করে সাজানো নয়। অনেক আগেই আমাকে রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বিয়ের পর তার সাথে আর দেখা হয়নি আমার। অজানা আতঙ্কে মৃদু মৃদু কেঁপে উঠছি। অস্থিরতায় হাঁসফাঁস করছি। বুকের মধ্যে দুরুদুরু করেই যাচ্ছে! তার থামার নাম নেই। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে গুটিয়ে গেলাম। হৃদস্পন্দন দ্রুত বেগে ছুটতে লাগল। বর্ণ ভাই দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এলেন। বসলেন সামনে। গভীর দৃষ্টিতে আমাকেই দেখে চলেছেন তিনি। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো। শুকনো ঢোক গিলে সালাম দিলাম–

— আসসালামু আলাইকুম!

তিনি জবাব দিলেন–

— ওয়ালাইকুম আসসালাম!

দৃষ্টি সরালেন না। আমি জড়সড় হয়ে বললাম–

— কি দেখছেন এভাবে?

তিনি কন্ঠে মুগ্ধতা ঢেলে বললেন–

— আমার ছোট্ট বউকে দেখছি।

লজ্জায় গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। ঠোঁট কামড়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। ওনার দিকে তাকানোর সাহস নেই। উনি হেঁচকা টানে কাছে টানলেন। হুমড়ি খেয়ে পড়লাম বুকে। মুখ উঁচিয়ে ওনার চোখে তাকালাম। অদ্ভুত ঘোর ওনার চোখে।‌ হঠাৎ মাথায় একটা চিন্তা আসতেই জিজ্ঞেস করলাম–

— নানাভাই এতো সহজে আমাদের বিয়েটা মেনে নিলেন! ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে, তাই না?

উনি আমার মাথা থেকে ওড়না ফেলে দিলেন। আমার পেছনে বসে নিজের বুকের সাথে আমার পিঠ মিশিয়ে নিলেন। চুলে লাগানো অজস্র ক্লিপ একটা একটা করে খুলতে খুলতে বললেন–

— এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই।

— কেন?

— তোমার নানাভাই অনেক আগেই আমাদের সন্দেহ করেছিলেন। তবে বিয়ে করে ফেলেছি এটা ভাবেননি। তুমি নিশ্চয়ই দেখেছ উনি প্রথম প্রথম আমাকে এক প্রকার সহ্য করতে পারতেন না, তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন।‌

আমি সায় দিয়ে বললাম–

— হ্যাঁ তাই তো!

ইতোমধ্যে ওনার ক্লিপ ছাড়ানো শেষ। উঠে ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে চিরুনি নিয়ে আলতো হাতে চুল আঁচড়াতে লাগলেন। আমি মানা করলেও শুনলেন না। বলতে লাগলেন–

— রনির সাথে ঝামেলা হওয়ার পর থেকে তিনি নরম হয়েছেন। এবং সুযোগ বুঝে আমিই তাকে আমাদের কথা বলেছিলাম। তিনি গম্ভীর ছিলেন তখন, কিছু বলেননি। তবে গতকাল জানিয়ে দিলেন তার মতামত।

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম–

— তাহলে নানাভাই সবটা আগে থেকেই জানতেন!

— হ্যাঁ।

লম্বা শ্বাস টেনে বললাম–

— আমিই বোকা! আমাকে আপনি বলেনও নি যে আপনি নানাভাই কে সব বলে দিয়েছেন।

ওনার কাজ শেষ। চিরুনি জায়গায় রেখে দিয়ে বললেন–

— তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করিনি।

মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম। হুট করেই লাইট নিভিয়ে দিলেন। ঘর পুরোপুরি অন্ধকার হলো না, জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলোয় আবছা দেখা যাচ্ছে ওনাকে। খুব কাছে এলেন আমার। দম বন্ধ হয়ে এলো। ঠান্ডা হাত গালে ঠেকালেন। এগিয়ে কপালে শুষ্ক ওষ্ঠদ্বয় স্পর্শ করলেন। চোখ বন্ধ করে নিলাম। অধরে আলতো অধর স্পর্শ করলেন। আমাকে বুকে নিয়েই শুয়ে পড়লেন। বললেন–

— ক্লান্ত তুমি, ঘুমাও। আজ থেকে এখানেই ঘুমাবে তুমি।

মনের মধ্যে প্রশান্তির ঢেউ খেলে গেল। এ কেমন শান্তি ওনার বুকে! এমন শান্তি কখনও কোথাও পাইনি। ছোট্ট বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়লাম আমার জন্য আজীবন বরাদ্দকৃত জায়গায়।

চলবে..
{

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here