ডিভোর্স অতঃপর পর্ব ১৯

.ডির্ভোস অতঃপর
পর্ব ১৯
.
রিয়া ভিপি ম্যাডামের বাসার ড্রইং রুমে বসে আছে। সুন্দর ছিম্ ছাম করে সাজানো ড্রইংরুম। মহাখালী DOHS এ নিজের বাড়ী।
ম্যাডামের হাসবেন্ড রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার। এক ছেলে এক মেয়ে। দু’জনেই সুপ্রতিষ্ঠিত।
ছেলে আর্মি অফিসার,ক্যাপ্টেন। বর্তমানে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পোস্টিং। মেয়েটি ডাক্তার, মাত্র পাস করেছে। সামনেই মেয়ের বিয়ে। হব জামাইও ডাক্তার। কোন একটা হেলথ কমপ্লেক্সে পোস্টিং।
কত শান্তি একজন মায়ের, যখন সন্তানেরা যার যার জীবনে সঠিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। রিয়াও কি পারবে তার সন্তানকে সঠিক ভাবে মানুষ করতে ?
নিশ্চয় পারবে !
এখন তো শিমুল ও পাশে এসে দাড়াতে চাইছে।
রিয়া ঘরের চারপাশে চোখ বুলালো।
এক কোনে একটি কাঠের কর্ণার র‍্যাকে সুন্দর এবং মূল্যবান কয়েকটি শো-পিস সাজিয়ে রাখা। কোথাও একটুও ধুলো জমে নেই।
দেয়ালের সুন্দর পেইন্টিং এর উপর রিয়ার চোখ আটকে গেলো। সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ।
একটি গ্রামের বাড়ীর দৃশ্য।
সামনে বড় উঠোন। দূরে কুয়াশা ঢাকা মাঠ। মাঠের মাঝখানে একটা খেজুর গাছ বেয়ে গাছি উঠছে রসের হাড়ী নামাবার জন্য।
সকালের নরম রোদে মায়াবী এক উষ্ণতা ছড়িয়ে আছে সারা উঠোন জুড়ে !
রিয়া মুগ্ধ হয়ে ছবিটি দেখছিল।
ভিপি ম্যাডামের ডাকে চমকে তাকালো এবং উঠে দাড়িয়ে সালাম দিল।
রিয়ার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে ভিপি ম্যাডাম বিচলিত হয়ে বললেন, কি হাল করেছো নিজের ?’
রিয়া ম্লান হাসলো।
কাজের মেয়েটা দু’কাপ চা দিয়ে গেল।
রিয়া চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে খুব ভাল বোধ করলো। ভেতরে ভেতরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
ভিপি ম্যাডাম সরাসরি প্রশ্ন করলেন,’কি নিয়ে তোমার এত অশান্তি হচ্ছে রিয়া ?’
রিয়া আস্তে করে বললো, ‘ম্যাডাম আপনার সাথে কথা বললে আমি ভরসা পাই,
শান্তি পাই, তাই এসেছি।’
ভিপি ম্যাডাম হাসলেন।
চায়ের কাপটা সেন্টার টেবিলের উপর নামিয়ে রেখে রিয়ার হাতটা ধরলেন।
নরম গলায় বললেন, ‘আমি জানি তুমি খুব কষ্টো পাচ্ছো। তবে ভেঙ্গে পড়োনা রিয়া।
তুমি সেটাই করবে, যেটা তোমার বিবেক তোমাকে করতে বলবে।
মন অনেক কিছুই চায় কিন্তু বিবেক তোমাকে বিবেচনা করতে সাহায্য করবে।
তাই যা করবে, বিবেচকের মতই করবে।
জীবনের সব সিদ্ধান্ত সবসময় তোমার মনের
মত হবে না। না হোক,তাতে কি ?
তা বলে তো জীবনকে থামিয়ে রাখা যাবেনা।
সামনে এগোতেই হবে।’
রিয়ার মনে ভরসা জাগতে শুরু করলো।
ভিপি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে আত্মবিস্বাসী কন্ঠে বললো, ‘আমি জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু নিজেকে অসম্মানিত হতে দিইনি কখনো।
আমার সন্তানকেও আমি যতটুকু পেরেছি, নিজের সামর্থ্যের মধ্যেই মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছি।
রায়না অনেক বুঝদার মেয়ে।
সে তার অবস্হানটা বোঝে এবং সেভাবেই চলার চেষ্টা করে।
তবে ওর ছোট মনের কষ্টগুলো ইদানিং আমাকে খুব ভাবায়। আমাদের ভুলের জন্য আজ ওর এমন জীবন হয়েছে। এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।
আমি ওকে ভাল থাকতে দেখতে চাই।
ওর ভাল থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে ম্যাম।
ভিপি ম্যাডাম স্নেহের স্বরে বললেন,’শুধু রায়নার ভাল থাকার কথা ভাবছো ? নিজে কিছু চাও না ? তোমার ভাল থাকাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, রিয়া।তুমি ভাল থাকলে তবেই তো রায়নাকে ভাল রাখতে পারবে।’
রিয়া ভিপি ম্যাডামের কথায় মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।
আরো কিছুক্ষণ কয়েকটা বিষয়ে কথা বলার পর চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো রিয়া।
ম্যাডামের কাছে থেকে বিদায় নেয়ার আগে দেয়ালের ল্যান্ডস্কেপের দিকে আঙুল নির্দেশ করে বললো,’ছবিটা ভারী সুন্দর !’

রাস্তায় এসে রিয়া হাঁটতে লাগলো।
রিক্সা নিতে ইচ্ছে করছে না।
ছবিতে দেখা ঐ গ্রামে যেতে পারলে ভাল হত।
আচ্ছা, তার দাদার বাড়ীর গ্রামটাও কি অনেকটা এরকম নয় ?
নাকি বাংলাদেশের সব গ্রামের শীতের সকাল গুলো একই রকম হয় ?
রিয়া আজই বাবার ওখানে যাবে সিদ্ধান্ত নিলো। দূরে একটা খালি রিক্সা দেখা যাচ্ছে, রিয়া হাত নেড়ে রিক্সাটা ডাকলো।
বাসায় ফিরে এসে কি করবে কিছুই ভেবে পেলো না। রিয়ার মনে হলো তার আর কিছু করার নেই।
রায়নার জন্য মন ছট্ ফট্ করে উঠলো। মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।
বিকেলেই বাবার বাসায় যাবে ঠিক করলো।
বারান্দায় চলে এলো।
টবের গাছগুলো নিজ হাতে পরিচর্যা করলো অনেকটা সময় নিয়ে।
কতদিন গাছগুলোর যত্ন নেয়নি নিজ হাতে !
ছোটবেলায় বাগান করতো রিয়া।
বাবা খুব উৎসাহ দিতেন এসব ব্যাপারে।
নার্সারী থেকে ফুলের চারা কিনে এনে দিতেন।বাবার এনে দেয়া গোলােপ,বেলীর চারা গুলো আনাড়ী হাতেই লাগাতো রিয়া।
তারপর, গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতো গাছের চারা গজানোর জন্য।
একটু একটু করে বেড়ে উঠা দেখার জন্য।
যেদিন প্রথম গোলাপের কুঁড়ি ফুটেছিল,সেদিন কি আনন্দই না হয়েছিল রিয়ার।
পুরো বাড়ী মাথায় করে ফেলেছিল।
বড় ভাইয়া বলেছিল,’বাহ্.. তুই তো গোলাপ ফুটিয়ে ফেলেছিস, রিয়া !’
কি সুন্দর ছিল সেইসব দিন !
বড় ভাইয়া কি ঠিক বলেছিল, সেদিন ?
রিয়া কি সত্যিই আরো একবার গোলাপ ফোটাতে পারবে ছোটবেলার মত ??

পুরো বাড়ীতে হুলস্থুল অবস্হা।
বড় আপা এসেছেন চিটাগং থেকে। দুলাভাইও এসেছেন। বাবা-মা জামাইকে পেয়ে অস্হির হয়ে পড়েছেন। দুলাভাই আজকাল আর সহজে আসতে পারেন না। প্রোমশনের সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্বও বেড়েছে অনেক। রায়না খুব আনন্দে আছে নেহাল ভাইয়া আর নেহা আপুকে পেয়ে।
আজ সন্ধ্যায় বড় ভাইয়াও দেশে এসেছেন।
রিয়া ভাইয়াকে দেখে অবাক হয়ে গেল !
ভাইয়া কোত্থেকে ? হট্যৎ ?
মা তাকে আগে থেকে বলেননি। ভাইয়া নাকি কাউকে বলতে না করেছিল, সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।
ভাইয়া, রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,কেমন আছিস রে বুড়ি ?
বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো রিয়ার।
সব কষ্ট গুলো বুক ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চাইছে। রিয়াকে খুব আগলে রাখতো ভাইয়া।
বয়সের ব্যবধান অনেক বলেই হয়তো বেশী আদর করতো রিয়াকে।
রিয়ার জীবনের এই না পাওয়া দিকগুলো প্রথম প্রথম মানতে পারতো না ভাইয়া।
কিভাবে রিয়াকে ভাল রাখবে, সে চেষ্টায় করতো কেবল।
ভাল আছি ভাইয়া, তুমি কেমন আছো ?
বলো নি তো আসবে ?
ভাইয়া হাসতে হাসতে বললেন,
‘বললে বুঝি এত আনন্দ হত তোদের ?
আমার মামুটা এত অবাক হত ?’
রায়নাকে আদর করে ‘মামু’ ডাকে রিয়ার বড় ভাই রিয়াজ।
বাড়ীতে চাঁদের হাট বসেছে।
মা-বাবা কি যে খুশী, দেখে ভাল লাগছে।
রাতে মেঝো খালা,ছোট খালা আসলেন।
বড় ভাবী মায়ের সাথে রান্না করলেন।
মা কিছুতেই রান্না করতে দেবে না ভাবীকে।
তার এক কথা, ‘এত দূর থেকে কত জার্নি করে এসেছো। এখন তোমাকে রাঁধতে হবেনা।’
ভাবী মায়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলেছিল,’কোন অসুবিধা নেই মা, আপনার সাথে রান্না করতে খুব ইচ্ছে করছে।’
খাবার টেবিলে খুব মজা হলো। এত সব মজার মজার খাবার দেখে রিয়ার ভাই, দুলাভাই, বড় আপু রিমা খুব খুশী হয়ে উঠলো। হৈ চৈ করে সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করলো। বড় জামাই এর প্লেটে রিয়ার মা রুই মাছের মাথাটা তুলে দিলেন।
দুলাভাই মুখে মুখে না না বললেও মাথাটা খেলেন তৃপ্তি করেই।
সবার মধ্য থেকেও রিয়ার নিজেকে খুব একা লাগছে।মনের ভেতরের অশান্তিকে আড়াল করে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে সে।
সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো যে, পরিবারের সবাই মনে মনে ধরেই নিয়েছে, তার আর শিমুলের আবার মিল হয়ে যাচ্ছে।
রিয়া নতুন করে আবার সব কিছু ফিরে পাচ্ছে। প্রত্যেকের কথা বার্তায় সেটা ফুটে উঠছে। সবাইকে কেমন নির্ভার আনন্দিত মনে হচ্ছে ভিতরে ভিতরে !
রিয়ার কেমন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে ঐ বিষয় গুলো ভাবলে।
রিয়া ভাবতে চায় না।
রাতে মার ঘরে সবাই মিলে গল্প করছিল।
ভাবী,বড় আপু,মেঝো খালা,ছোট খালা, মা সবাই ছিল। রিয়া রুমে ঢুকতেই খালারা ওকে আদর করে কাছে বসালো।
বললো,কিরে তুই এমন একা একা থাকিস কেন সবসময় ? আয় বোস্ আমাদের কাছে।
রিয়া বসেছিল।
যথারীতি শিমুলের কথা উঠলো।
মেঝো খালা বললেন, ‘নিয়ম-কানুন যা আছে সব মেনে আল্লাহ্ আল্লাহ্ করে আবার এক হয়ে যা তো ! আজকাল টাকা দিলে এরকম কত ছেলে পাওয়া যায়। কাগজে কলমে বিয়েটা হবে। সাতদিন পরে তালাকে সই করে দিবে। ব্যাস ঝামেলা শেষ।’
রিয়ার মাথা ঝিম্ ঝিম্ করে উঠলো।
আস্তে করে কেবল বললো, ‘খালা এরকম করাটা ঠিক না। এভাবে করার নিয়মও নেই।’
মেঝো খালা মৃদু ধমকে উঠলেন,’তোরা কি বেশী জানিস ? এরকম আকসার হচ্ছে। ”
ছোট খালাও মেঝো খালার সাথে তাল দিলেন।
মা কোন কথা বললেন না বটে।
তবে রিয়ার বুঝতে বাকী থাকলো না মা কি চায়। মা মৌনভাবে খালাদের সমর্থন করলেন।
রিয়া আর কথা বাড়ালো না।
মাথা নিচু করে বসে থাকলো।
ও শুনতে পাচ্ছে, সবাই শিমুলের কত প্রশংসা করছে। শিমুলের এটা ভাল ছিল.. ওটা খুব ভাল ছিল…
যাক বাবা.. খুব ভাল হয়েছে,ওদের মতি ফিরেছে। বাচ্চাটা এবার বাবা-মা দু’জনকেই পাবে… ইত্যাদি ইত্যাদি।

ট্রেন ছুটছে….
রিয়া ট্রেনের জানালার পাশে বসে অপলক তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে।
কুয়াশার পর্দা সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে সূর্য্য।
নরম সোনা রোদে ঘাসের ডগায় শিশির গুলো চিক্ চিক্ করছে। নাম না জানা গাছগুলোকে পিছনে ফেলে ছুটে যাচ্ছে দূরন্ত ট্রেন।
রিয়া বসে আছে ইন্টারসিটি ট্রেনের ১ম শ্রেনীর একটি বেশ বড় কামরায়।
সামনা সামনি দুটো বড় বড় সোফার মত সিট।
সিট গুলো নরম রেক্সিনে ঢাকা। উপরেও দুটো সিট আছে। যেখানে ওদের সবার ল্যাগেজ গুলো রাখা হয়েছে। রাতের বেলা এই সিটটাই আবার একজনের বেড হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
দিনের বেলা আট সিটের কামরা।
আর রাতের বেলা চার জনের বেড।
তবে রিয়াদের কামরা টি বারো সিটের। আরো চার সিটের একটি বড় সোফা রয়েছে এই কামরায়। ইউ শেফে রয়েছে তিনটি সোফা।
প্রতিটি ট্রেনে আট সিটের কামরায় থাকে। তবে একটি বারো সিটের বড় কামরাও থাকে সব ট্রেনে। ওরা বারোজন সদস্য। তাই বড় কামরাটি নিয়েছে ওরা।
রায়না ট্রেনে রাতে ঘুমোন যায় শুনে খুব এক্সাইটেড। রাতের বেলা ট্রেনে করে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে জার্নি করা যায়, ভেবেই তো সে খুব অবাক !
মামুকে কানে কানে বলে ফেললো,’মামু শোন,আমার তো খুব ট্রেনে করে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে।’
রিয়াজ হাহাহা করে হেসে উঠলো।
বললো, ঠিক আছে, মামু। রাতের বেলা একটা জার্নি করবো আমরা।
রায়না খুব আনন্দে আছে। নেহা আপু,নেহাল ভাইয়া এবং মামাত বোন রোশনী আপুর সাথে দারুণ সময় কাটছে তার। সবার ছোট হওয়ায় আদর একটু বেশীই তার।
রিয়ার দাদাবাড়ী যশোর সদর উপজেলার ভিতরে খোলাডাঙ্গা গ্রামে। যশোর পর্যন্ত ট্রেনে আসতে হয়। তারপর ট্রেন থেকে নেমে ভ্যান বা থেকে অটোরিক্সাতে যেতে হয়।
স্টেশনে নেমে ওরা মালপত্র নিয়ে দাড়িয়ে আছে। বাবা আর ভাইয়া ভ্যান ঠিক করার চেষ্টা করছে।
রায়না মহা আনন্দিত এবং খানিকটা উত্তেজিত ভ্যানে করে যাত্রা শুরু হবে বলে।
সে কোনদিন ভ্যানে চড়েনি তবে ঢাকা শহরে ভ্যান দেখেছে সে।
দু’টি ভ্যান ও একটি অটোরিকশা ঠিক করা হলো। রায়নার নানু,বড় খালামনি এবং রিয়া অটোরিকশায় উঠলো।
মালামাল এবং বাকীরা হৈ হৈ করে ভ্যান দু’টিতে চড়ে বসলো।
রায়না ভীষণ খুশী। এত আনন্দ করে আগে কোনদিন সে কোথাও বেড়াতে যায়নি।
তার কেবল মাঝে মাঝেই তার বাবাকে মনে পড়ছে, ইস্.. বাবা যদি সঙ্গে থাকতো, কত্তো মজা হতো ! সবার বাবাই তো তাদের সঙ্গে আছে !
রায়না নানাভাই এর পাশে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।আরেক পাশে বড় মামু বসেছেন।ওরা বাদাম খেতে খেতে যাচ্ছে।
স্টেশন থেকে নেহাল ভাইয়া বাদাম কিনেছে।
নানাভাই বাদাম ছিঁলে ছিঁলে রায়নার মুখে দিচ্ছেন। ভ্যান এগিয়ে যাচ্ছে ইটের রাস্তা দিয়ে। জায়গায় জায়গায় রাস্তা ভাঙা।
বেশ ঝাঁকুনি লাগছে। রায়না শক্ত করে নানাভাইকে ধরে আছে।

সন্ধ্যার আগে আগে ওরা বাড়ী পৌঁছালো।
রিয়া এসেই গরম জলে গোসল করেছে, রায়নাকেও করিয়েছে।
ঝরঝরে লাগছে শরীরটা।
রাতের খাবার খেয়ে সবাই গল্প করছে বসার ঘরে। রিয়াদের বাড়ীটা অনেক পুরনো।
মূল বাড়ীটা ওর দাদা বানিয়েছিলেন।
পরে কিছু এক্সটেনশন করেছেন রিয়ার বাবা।
অনেক গুলো ঘর, বড় বারান্দা,বান্নাঘর সহ মোটামুটি বেশ বড়ই ওদের বাড়ী।
দো’তলার দুটো ঘর পরে বানানো হয়েছে।
রিয়ার ছোট চাচা এবাড়ীতেই থাকেন।
তিনিই সব দেখে শুনে রাখেন।
চাচী অনেক আয়োজন করে খাওয়ালেন রাতে। রান্না খুবই স্বাদের তবে ঝাল আর লবন বেশী। রিয়া ঠিকমত খেতে পারলো না।
তবে খুব খারাপও লাগেনি।
মাঝে মাঝে একঘেয়ে জীবনের একটু পরিবর্তন দরকার হয়।
রিয়া একটা বই নিয়ে বারান্দায় চলে এলো।
পাশাপাশি দু’টো বেতের চেয়ার পাতা আছে
বারান্দায়।
রিয়া একটা চেয়ারে বসলো।
‎রাত খুব গভীর হয়নি। কিন্তু মনে হচ্ছে কত রাত হয়ে গেছে। এমনিতেই শীতের রাত, তারউপর গ্রাম। তাই রাত ন’টাতেই নিশুতি রাত মনে হচ্ছে।
‎দূরের জঙ্গলে শেয়াল ডাকছে।
‎ছোটবেলায় বাবা বলতেন,শীতের রাতে শেয়াল কেন ডাকে জানিস ?
‎রিয়া খুব অবাক হয়ে বলতো, না তো ! কেন শেয়াল ডাকে বাবা ?
‎বাবা হাসতে হাসতে বলতেন,শীতে কাঁপছে শেয়ালগুলো, তাই হুক্কা হুয়া বলে কম্বল চাইছে।
একটু বড় হয়ে রিয়া বুঝতে পেরেছিল,বাবা মজা করে বলতেন শেয়ালের কম্বল চাওয়ার গল্পটা। এটা নাকি তার বাবা তার ছোটবেলায় তাকে বলতেন।
রিয়ার মনে হলো, সত্যিই কি শীত লাগছে শেয়ালগুলোর ? তাই এত ডাকাডাকি করছে ?
বই পড়ার জন্য যথেষ্ট আলো নেই বারান্দায়।
অল্প পাওয়ারের একটা লাইট জ্বলছে বারান্দায়। হলুদ আলোর চারপাশে কিছু পোকা উড়াউড়ি করছে।
শীতের সময় এই এক সমস্যা।
আলোর টানে সব পোকা ছুটে আসে।
আশিক খুব বিরক্ত হতো ঘরে পোকা ঢুকলেই।
বিশেষ করে, খাবার সময় যদি লাইটের চারপাশে পোকা উড়তো, তাহলে খুব বিরক্ত হতো। বলতো,পোকাদের সাথে নিয়ে খাওয়া যাবেনা। আগে ওদের বিদেয় করো, তারপর খাবো।
শিমুলের মা বলতেন,শীতের সময় এরকম পোকা হয়। তাই সন্ধ্যার আগেই দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতে বলতেন।
আজ কিন্তু এই একাকী বারান্দায় বসে পোকা গুলোকে রিয়ার খারাপ লাগলো না।
ওদেরকে আপন আপন লাগলো।

টুং করে একটা শব্দ হলো। মোবাইলের স্ক্রিন লাইটটা জ্বলে উঠলো।
রিয়া মোবাইল হাতে নিয়ে অবাক হলো।
শিমুল টেক্স করেছে।
মৃদু হাসি ফুটে উঠলো রিয়ার ঠোঁটে…

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here