ডেভিল লাভার পর্ব ১২

#ডেবিল_লাভার (পর্ব ১২)
#Labiba_Islam_Roja
·
·
·
আম্মু বলেই ঢুকরে কেঁদে উঠলাম আমি।আমাকে জরিয়ে আম্মুও কাঁদছেন।অনেক্ক্ষণ দুজনে এভাবে থাকার পর কেউ আমাকে আম্মুর থেকে ছাড়িয়ে নিলো।এই বাজে খারাপ লোকটা কে সেটা দেখার জন্য চোখ তুলে তাকালাম আমি…নাদিম ভাইয়া…আমাকে বুকে জরিয়ে বললেন….
.
কাঁদিস না নাদিয়া সব ঠিক হয়ে যাবে।উনাকে ছাড়িয়ে স্থির হয়ে দাঁড়ালাম আমি।
.
রেহানা তুই বেঁচে আছিস…? আম্মুকে দেখে এখানে উপস্থিত সকলেই অবাক।আমিও তো কম অবাক নই।আম্মু আর আব্বুর তো এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তাহলে আম্মু এখানে কি করে…?আম্মু এখানে তাহলে আব্বু কোথায়…?
.
হ্যাঁ ভাইয়া আমি বেঁচে আছি…!!
.
রেহানারে আজ আমার থেকে খুশি কেউ নয়।তোমরা সবাই দেখ আমার রেহানা বেঁচে আছে।কিন্তু তুই কি করে বাঁচলি।যখন লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না তখন মনের মধ্যে একটা আশা ছিলো তোর কিছু হয়নি একদিন ঠিক ফিরে আসবি।দেখ সত্যি তুই ফিরে এসেছিস…!!
.
ওই এক্সিডেন্টে কপাল জোরে আমি বেঁচে গিয়েছিলাম।নাদিমের কাছ থেকে শুনেছি রোহান নাকি বলেই কেঁদে উঠলেন আম্মু।
.
আম্মু কেঁদো না প্লিজ!!এতদিন জানতাম তোমারা সবাই আমাকে একা ফেলে এতিম করে চলে গেছো।এখন সবাই দেখ আমি এতিম নই আমার মা আছে।দেখেছো মামি আমার আম্মু বেঁচে আছে।
.
মামুঃতুই শান্ত হ মা…!!রেহানা এতদিন তুই কোথায় ছিলিস আর নাদিম ওকেই বা কোথায় পেলি…?
.
তাহলে শোন তোমরা অনেককিছুই জানো না এখনও।আমাদের এক্সিডেন্ট টাও এক্সিডেন্ট ছিলো না….প্রি প্লান্ট ছিলো….!!
.
প্রি-প্লান্ট মানে….?
.
কেউ একজন ইচ্ছে করে আমাদের গাড়ির ব্রেক কেটে রেখে দেয়।যা টের পায় নি আমরা।তাই মাঝপথে আমাদের গাড়ি ব্রেকফেল করে।তখনই নাদিয়ার বাবাকে হারিয়ে ফেলি আর আমি বেঁচে যাই।এর পেছনে সেই লোকটা ছিলো যে নাদিয়াকে অপমান করতে চাইছিলো…..যখন আমরা জানতে পারি সেই লোকটা আমাদেরই খুব কাছের একজন তখনই আমাদের মারার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে সে।সবার সামনে নাদিমকে দোষী প্রমাণ করে নিজে বেঁচে যায় আর আমরা ভুল বুঝি নাদিমকে কিন্তু আসল কার্লপিট অবধি পোঁছাতে পারিনি।আমিও বাঁচতাম না যদিনা নাদিমের বন্ধু আমায় না বাঁচাতো।এতদিন কোমায় ছিলাম আমি যার ব্যয়ভার বহন করেছে নাদিম।ওই দিন এক্সিডেন্টের পর আমাকে সাকিব ওখান থেকে হসপিটাল নিয়ে যায় কিন্তু তখন আমায় চিনতো না ও।কিছুদিন আগে সাকিবের সাথে হসপিটালে যায় নাদিম সেখানে গিয়ে আমাকে চিনে ফেলে। এরপর নাদিম উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে আমাকে সুস্থ করে তুলে।
.
আম্মু কি বলছো তুমি…?তোমাদের মারার চেষ্টা করা হয়েছিলো…?কে করেছিলো এটা…?কে যার জন্য আমার বাবাকে হারিয়েছি আমি তোমাকেও কাছে পাইনি।কে সে আম্মু নাম বলো তার…?
.
হুম আজ সবটা বলবো আমি..!!কিন্তু ভাইয়া আজ নাদিয়া এভাবে সেজেছে কেন…?দেখে মনে হচ্ছে বিয়ের কনে…
.
হ্যাঁ রে আজ বড় খুশির দিন।আজ যে তোর নাদিয়ার বিয়ে।কত আশা করেছিলি মেয়ের বিয়ে দিবি নিজ চোখে দেখবি দেখ শেষপর্যন্ত তাই হচ্ছে।বড় করে বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারিনি এটা ঠিক ছোট খাটোভাবেই বিয়ে দিচ্ছি।
.
এটা তো ভালো কথা ভাইয়া কিন্তু কার সাথে বিয়ে…?বর কে…?
.
ওই তো আমার বড় ছেলে আর তোর ভাইপু নাহিদ…!!
.
না ভাইয়া এটা কিছুতেই হতে পারে না।এই ছেলের সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে কিছুতেই দেবো না।
.
কেন রেহানা…?
.
কারণ ও সেই ছেলে যে নাদিয়া কে অসম্মান করতে চেয়েছিলো সেটা আমরা জানতে পারায় আমাদের মেরে ফেলার প্ল্যান করেছে এবং ফাইনালি আমাকে মারতে পারেনি কিন্তু নাদিয়ার বাবাকে ঠিকই মেরে দিয়েছে।
.
মামুঃরেহানা….
.
আম্মু এসব কি বলছো তুমি…?তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে ভাইয়া কেন এসব করতে যাবে।ভাইয়া তো এমন নয়।ভাইয়া কতো ভালো সবসময় আমাকে সাপোর্ট করে আমাকে বুঝে।
.
এটা ওর মুখোশ!!লোক সমাজে সকলের কাছে ভালো হলেও পিছনে একজন নোংরা কুৎসিত মনের মানুষ ও।তাই তো তোর ক্ষতি করতে চেয়েছিলো।ও তোর বাবার খুনী নাদিয়া তোর বাবার খুনী।হুম ভাইয়া আমি যা বলছি সব সত্যি।
.
মামি+তিয়া+তিতলিঃনা না এ হতে পারে না।আমার নাহিদ এমন ছেলেই নয়।
.
মাহিঃনা আন্টি উনি যা বলছে সব সত্যি।একটা কথাও মিথ্যা নয়।ও আমাকেও মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে।সেদিন নিজের প্রাণের ভয়ে নাদিমকে কিছু বলতে পারিনি।কিন্তু আজকে আর চুপ থাকবো না।ওই সেই যে এতকিছু ঘটিয়েছে।ভদ্র সমাজের আড়ালে মুখোশধারী একটা শয়তান।
.
নাহিদঃওহহ!! এখন সবাই সবটা জেনে গেছো তাহলে আর লুকানোর কিছু নেই।হ্যাঁ সবকিছু আমিই করেছি।
.
মামুঃনাহিদ তুই…?কিন্তু কেন…?
.
হ্যাঁ বাবা আমি!!কারণ আমি নাদিয়াকে ভালোবাসতাম কিন্তু ওই মেয়েতো আমাকে ভাইয়া ছাড়া কিছুই ভাবতো না। সেটা সহ্য করতে পারতাম না আমি।আর ঠিক সেই কারণে ওই দিন ওকে অসম্মান করার প্ল্যান করি যাতে ফুপি ফুপা পরবর্তী তে ওকে আমার সাথে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়।তখন তো সমাজ ওকে মানতো না কেউ ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়েও করতে চাইবে না।কিন্তু নাদিম আমার সব প্ল্যানে জল ঢেলে দিলো।তাই নিজেকে বাঁচাতে মাহিকে ব্যবহার করি আমি।সবকিছু আমার নিজের মতো সাজাই কিন্তু ফুপা আবার সব গড়মিল করে দেয়।কোথা থেকে যেন সবকিছু জেনে যায়।তাই ওদের শেষ করা দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না আমার হাতে।কিন্তু এতকিছুর পর আবারও ফুপি তুমি বেঁচে গিয়ে সবকিছুতে পানি ঢেলে দিলে।এই তোমাকে কে বাঁচতে বলেছিলো…ফুপার সাথে মরতে পারলে না।যদি মরে যেতে তাহলে আমাকে এমন দিন দেখতে হতো না।সকলের কাছে এত ছোট হতে হতো না।
.
ঠাসস‌!!তুই ছিঃ।
.
আচমকা এমন আওয়াজে চমকে উঠলাম আনি।মামু ভাইয়াকে মারছেন।ছিঃ উনি কি মানুষ উনাকে কিনা সবসময় ভালো মানুষ একজন ভালো ভাই ভেবে এসেছি এখন উনিই কিনা আমার বাবার খুনী আমার সাথে অসভ্যতামো করতে চেয়েছিলেন ছিঃ ছিঃ।
.
আজ ভাবতেও খারাপ লাগছে তুই আমার বড় ছেলে।তোকে সবসময় নাদিমের থেকে ভালো সেনসেটিভ মনে করে এসেছি আর আজ কিনা তোর আসল রূপ বের করে নিলি।সত্যি তোকে আমরা চিনতে পারিনি।তুই মানুষ নস আস্ত একটা ডেবিল।
.
ছিঃ ভাইয়া ছিঃ আপনি এতটা নীচ…!!আপনাকে এতটা শ্রদ্ধা সম্মান করতাম আমি আর তার বিনিময়ে এটা পাওনা ছিলো আমার।আপনি কিনা আমার মা বাবাকে মারতে চেয়েছেন।মেরেও ফেলেছেন।আমার সাথে যা ইচ্ছা করলেন তাই বলে আমার বা বা মাকেও ছাড় দিলেন না ছিঃ।
.
এত ছিঃ ছিঃ করো না।বাবা এখানে শয়তানির কি দেখলে তুমি।এই নাদিয়াকে সবসময় ভালো বেসে এসেছি আমি কিন্তু পাওা পাইনি তাই বাধ্য হয়েছি ওইদিন ওই ব্যবহার করতে।আমি এমনই নাদিয়া।আমি তোমার যে সে লাভার নয়।মিস নাদিয়া আই এম ইউর ডেবিল লাভার।
.
নাদিমঃথামো ভাইয়া এটা কখনও তোমার ভালোবাসা হতে পারে না।তুমি নাদিয়ার সাথে যা করেছো সেগুলো কোনো মানুষ মানুষের সাথে করে না।নিজের ফুপি ফুপাকে শেষ করতে চেয়েছিলে ভাবতেই পারছি না।অফিসার উনাকে এরেস্ট করো…!!
.
আমাকে এরেস্ট করবে হা হা করে হেসে উঠলো ভাইয়া।ওর এমন সময় এমন ভয়ংকর হাসি দেখে ভয়ে চুপসে গেছি আমি।
·
·
·
চলবে………………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here