তবুও তোমায় ভালোবাসি পর্ব ১৭

#তবুও ভালোবাসি তোমায়
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৭

রিকশা থেকে নামার সাথে সাথেই একটা বাচ্চা মেয়ে এসে পায়ে জড়িয়ে ধরল। আমি বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে আচমকা একটু বিস্মিত হলাম। প্রথমে বুঝতে পারেনি পায়ে জড়িয়ে ধরার কারণ তবে পরবর্তীতে তার হাতে ফুলের মালা দেখে বুঝতে পারলাম সে কে। আর কেনই বা আমার পা ধরেছে। আমি মেয়েটাকে আলতো করে ধরে পা থেকে ছুটালাম। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ে। আমি মেয়েটার দিকে তাকাতেই মেয়েটা মৃদু গলায় আমাকে বলে উঠল

– আপাই ফুলের মালা নিবেন। মাত্র পাঁচ টাকা। একদম তাজা ফুল দিয়া সকাল ভোরে মালাটা বানায়ছি। এ মালাটা আপনার খোঁপায় দিলে সুন্দর লাগবে। বাসায় গিয়া হিজাব খু্ইলা মাথায় খুপা করে খোপায় দিয়েন।

আমি ছলছল চোখে বললাম

– আমার তো মাথায় খোঁপা হয় না সোনা। আমার মাথায় আর এত চুল নেই।

– তাইলে হাতে পইড়েন।হাতে পড়লেও ভালো লাগব।নেন না আপাই একটা ফুল।আপনে মালাটা নিলে আমি সেই টাকা দিয়া সকালের নাস্তা করুম। আপাই নেন না একটা মালা।

আমি মেয়েটার কথা শোনে ভাবতে লাগলাম। আমার এ জীবনে কখনো নাস্তা খাওয়ার জন্য এমন কষ্ট করতে হয়নি। সবসময় ঘুম থেকে উঠে দেখতাম নাস্তা প্রস্তুত করা। আর এ মেয়েটা সকালের নাস্তার জন্য কত কষ্টই না করছে। আপেক্ষিক দিক দিয়ে সত্যিই আমি অনেক সুখে আছি। আমার যে কষ্টটা সেটা সত্যিই কোনো কষ্ট না। আজকে খাবার না পেতাম থাকার মতো জায়গা না পেতাম তাহলে হয়তো বুঝতাম রঙ্গিন দুনিয়াটা কতটা বিবর্ণ। এসব ভাবতে ভাবতেই আনমনা হয়ে গেছিলাম। এমন সময় মেয়েটার আপাই ডাকটায় আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম

– তোমার নাম কী?

– পরী।

– বাহ! খুব সুন্দর নাম তো। তোমার এ নামটা কে রেখেছে?

– আমার বাপজান রাখছে। বাপজান কয় আমি তার রাজ্যের রাজকন্যা। তাই আমার বাপজান শখ কইরা আমার নাম পরী রাখছে।

মেয়েটা কথাগুলো বেশ হাসিমুখে বলছিল। আমি মেয়েটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কত মায়া আর খুশি মেয়েটার মনে। এ হাসিটার মূল্য হয়তো সহস্র টাকা দিয়েও কেনা যাবে না। সুখ কোথায় থাকে বলা যায় না। সুখ কখনো দালান কোঠায় ধরা না দিয়ে কুড়ে ঘরেও ধরা দেয়। পরীর কথা শোনে বুঝতে পারলাম প্রতিটা বাবার কাছে তার মেয়ে রাজকন্যা। হোক সে কুড়ে ঘরে অথবা বড় অট্টলিকায়। আমি মেয়েটার কথা শোনে হালকা হেসে কিছু বলতে নিব এমন সময় জাহিন বলে উঠল

– তোমার কাছে মোট কয়টা মালা আছে?

মেয়েটা জাহিন সাহেবের কথা শোনে শক্ত গলায় জবাব দিল

– আমি পুরুষ মানুষের কাছে মালা বিক্রি করি না।

আমি মেয়েটার কথা শোনে অবাক চোখে তাকালাম। দেখতে পারলাম মেয়েটার চোখে একটা ঘৃনা প্রকাশ পাচ্ছে। জাহিন সাহেবও মেয়েটার কথায় বেশ আশ্চর্য হলো। জাহিন সাহেব কিছু বলার আগেই আমি হালকা গলায় মেয়েটার কাঁধে ধরে বললাম

– কেন আপাই তুমি পুরুষ মানুষের কাছে মালা বিক্রি করো না কেন?

– আমার মা নিষেধ করছে। ঐদিন এক পুরুষলোক মালা কেনার লাইগা আমারে ডাইকা নিয়া আমার বুকে ধইরা ব্যথা দিছে। তারপর মায়ের কাছে গিয়া কওনের পর মা কইছে পুরুষ লোকের ধারে কাছে না যাইতে। মাইয়া মনুষের কাছে মালা বিক্রি করতে।

পরীর কথা শোনে আমার বুকটা ধুকধুক করতে লাগল। কত নোংরা সমাজে আমরা বাস করি। ৮-৯ বছরের একটা মেয়ের বুকে কী এমন মাংস পিন্ড আছে যেটা দেখে একটা পুরুষ সামলাতে পারে না। এত নিকৃষ্ট মানুষ কী করে হয়? এখন চারদিকে শুধু এসব শোনতে শোনতে কাউকে বিশ্বাস করতে যেন ভয় হয়। বাবা,ভাই,চাচা,কারও কাছেই যেন মেয়েরা নিরাপদ না। এ বিকৃত সমাজ থেকে কী রেহাই পাব না? এসব ভেবে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। এর মধ্যেই জাহিন সাহেব বলে উঠল

– কিছু পুরুষের জন্যই আজকে পুরুষ সমাজটা কলঙ্কিত। কিছু পুরুষদের জন্যই আমরা সবসময় লজ্জিত আর কলঙ্কিত হই। এটা সত্যিই আমার কাছে সবচেয়ে কষ্টদায়ক। তবে সব পুরুষেই ভক্ষক হয় না কিছু পুরুষ রক্ষক ও হয়। নাহয় আপনি ও রেহাই পেতেন না।রক্ষক ভক্ষক মিলিয়েই পুরুষ। তবে রক্ষকের দল থেকে ভক্ষকের দল বেড়ে গেছে তাই নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। চাইলেও আমরা এ সমাজ বদলে দিতে পারছি না।

জাহিন সাহেবের কথা শোনে হালকা দম নিলাম। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম

– হুম সত্যিই ভালো খারাপ মিলিয়েই দুনিয়া।যদি ভালো না থাকত তাহলে কেয়ামত হয়ে যেত। কিছু ভালো মানুষের জন্যই সৃষ্টিকর্তা আজও দুনিয়াটাকে ধ্বংস করেনি। তবে এ যুগে ভালোর চেয়ে খারাপের সংখ্যাটা বেড়ে গেছে।

আমি কথাটা বলেই পরীর দিকে তাকিয়ে বললাম

– থাক আপাই তোমার মা যেহেতু বলেছে পুরুষ মানুষের কাছে না যেতে তুমি একদম যাবে না। তুমি মালাটা আমাকেই দাও তোমার ভাইয়ার কাছে বিক্রি করতে হবে না। মোট কয়টা মালা আছে এখানে?

– আপাই একুশটা মালা আছে।

– সবগুলোই আমি নেব। আমাকে সবগুলো দাও। আর কত হয়েছে বলো।

পরী আমার কাছে সবগুলো মালা এগিয়ে দিয়ে আঙ্গুল গুণে হিসাব করে বলল

– সবগুলোর দাম আসে ১০৫ টাকা। আপনে আমারে ১০০ টাকা দিলেই হইব।

আমি মালা গুলো হাতে নিয়ে পরীর দিকে ১২০ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম

– এই নাও।

পরী মুখ ভার করে বলল

– আমার কাছে তো ভাংতি নাই।

আমি হালকা হেসে বললাম

– বাকিটা তোমাকে এমনি দিয়েছি। তুমি নিয়ে নাও। আর দিতে হবে না।

পরী কথাটা শোনে একরাশ হাসি দিল। পৃথিবীর সমস্ত সুখটা যেন পরীর মুখে বিরাজ করছে। পরী হাসতে হাসতে চলে গেল। এ মানুষগুলো কত অল্পতেই খুশি। কত অল্পতেই এ মানুষগুলোকে খুশি করা যায়। এর মধ্যেই জাহিন সাহেব বলে উঠল

– ফুলগুলো হাতে পড়ে ফেলুন সুন্দর লাগবে।

আমি হালকা হেসে মালাগুলো হাতে পড়ে নিলাম। তারপর জাহিন সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম

– আপনি এখানে কোথায় যাবেন?

– একটু সামনে।

– সামনে কোথায়?

– গেলেই বুঝতে পারবেন।আমার সাথে চলুন।

বলেই সামনে এগুতে লাগল। আমিও জাহিন সাহেবের পিছু পিছু যেতে লাগলাম। সামনের দিকে যতই এগুচ্ছিলাম জায়গাটা ততই নীরব আর নিস্তব মনে হচ্ছিল। মনে কেন জানি না অজানা একটা ভয় ঝেঁকে বসেছিল। সামনের দিকে আাগাব কিনা বেশ দ্বিধায় পড়ে যেতে লাগলাম। তবুও বেশ সাহস করে সামনে আগাতেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমি একদম পাথরের মতো হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। মুখের ভাষা যেন হারিয়ে ফেললাম।আমি এমন কিছু আশাও করিনি। জাহিন সাহেবের দিকে তাকাতেই উনি-

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here