#তমসার_জল
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
।।পর্ব৩।।
(কার্টেসী ব্যতীত কপি নিষেধ)
বিয়ের প্রথম রাতে স্বামীর এমন রূপ দেখে বর্ষণের সম্পর্কে জলের মনে বিপরীত প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়।অপরিচিত একটা মানুষ হিংস্র হায়নার মতো জোরপূর্বক ফিজি!ক্যাল রিলেশন করলে তা নেহাৎই ধর্ষ-ণের থেকে কোনো অংশে কম না।জলের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।যার ফলাফলে জল বর্ষণের থেকে দূরে দূরে থাকতে লাগে।বিষয়টা আবার বর্ষা খেয়াল করে।সে জলকে আলাদা নিয়ে ডেকে ইয়ার্কির ছলে জলের এমন করার কারণ জানতে চায়।
” কি খবর ভাবিজি!কেমন কাটলো প্রথম রাত?”
জল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।বর্ষাকে এড়িয়ে যায়।বর্ষার মনে সন্দেহের দানা বাঁধে।তাহলে কি বর্ষণ আগের মতোই মানসিক রোগী আছে?আদিবার সাথে যা হয়েছিলো তা কি জলের সাথেও হয়েছে?সম্পর্কে জলের ননদ হলেও বর্ষা জলের থেকে বয়সে বড়।জল বর্ষার প্রশ্নকে এড়িয়ে চলে যাচ্ছিলো ঘর থেকে।তৎক্ষনাৎ বর্ষা পেছন থেকে জলের হাত ধরে।
” তুমি আমায় বলবে না?বোনের থেকে লুকাবে?”
জল কিচ্ছু বলে না।ওর দৃষ্টিসীমানা ঘোলাটে হয়ে আসছে।বর্ষা জলের দিকে তাকিয়ে দেখে জল কাঁদছে।
” জল কি হয়েছে?বলো আমায়।”
” ক…ক…কিছু না।”
” কিছু তো হয়েছেই।না হলে জলের চোখে জল কেন?”
কিঞ্চিৎ হেসে বলে বর্ষা।জল বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।বর্ষা জলকে জড়িয়ে ধরে।আলতো করে মাথায় হাত বুলায়। হঠাৎ খেয়াল করে জলের শ্যামবর্ণ গায়ে কালসিটে দাগ।বর্ষা পুরোপুরি ভাবে নিশ্চিত হয়ে যায় যে বর্ষার ভাই বর্ষণ বদলায় নি।সেই আগের মতোই ভেতরে পশুত্বটাকে পুষে রেখেছে বর্ষণ।না হলে জলকে বিয়ে করতে এত কাহিনি করতো?
বর্ষা পরম যত্নে জলের চোখ মুছে দেয়।রীতি অনুযায়ী নতুন বউ ঘোমটা দিয়ে থাকে।জলও তেমনই ছিলো।সাথে শরীরে থাকা দাগগুলোকে আড়াল করে রেখেছিলো পৃথিবীর থেকে।বর্ষা জলের ওড়না সরায়।জল খানিকটা চমকে যায়।কাঁপতে লাগে ও।বর্ষা আড়চোখে তাকিয়ে বলে,,,
” ভাইয়ার কাজ?”
জল কিঞ্চিৎ মাথা নাড়ায়।
” আমি ওকে বুঝাবো নি।সন্ধ্যায় রিসিপশনের অনুষ্ঠান।স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করো।নিজেদের ভেতরের কথা বাইরের পৃথিবীকে জানানোর দরকার নেই।”
” কিন্তু তুমিই তো…..”
” হ্যাঁ আমিই যে চে এই ব্যাপারে জানতে চেয়েছি।এর পেছনে একটা কারণ আছে।আল্লাহ না করুক সেই কারণ যেন তোমার জানতে না হয়।”
বর্ষা চলে যাচ্ছিলো।হঠাৎই জল পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলে।
” আপু আমি কিন্তু এই শরীর নিয়ে পার্লারে যাবো না।নিজেই যা পারবো সাজবো আর তুমি হেল্প করবে।”
” আচ্ছা।”
বর্ষা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।আলমারিতে সযত্নে লুকিয়ে রাখা আদিবার ডায়েরীটা বের করে।আদিবার মারা যাওয়ার পাঁচ বছর হলো।বর্ষণের হিংস্রতার প্রথম শিকার আদিবা।অথচ ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো ওরা।আদিবাও জলের মতো শান্ত স্বভাবের ছিলো।বর্ষণের হিংস্রতা বাইরের কাক পক্ষিতেও টের পায় নি।আদিবা যখন চার মাসের অন্তসত্ত্বা তখন প্রকাশ পায় বর্ষণের হিংস্রতা। ফিজি!ক্যাল রিলেশনে বাধা দেওয়ায় সেদিন আদিবাকে বর্ষণ খুব মারে।মারার এক পর্যায়ে আদিবার পেটে লা-থি দেয় বর্ষণ।ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে আদিবা।এই বাড়িতেই সব কিছু হয়েছিলো।বর্ষণের মা চাইলেই আদিবাকে বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি।উলটো ছেলেকে প্রশ্রয় দেন।আদিবার হাত মুখ বেঁধে মা-ছেলে স্টোর রুমে আটকে রাখে।সেখানেই আদিবা মারা যায়।বর্ষণের বাবাকেও বর্ষণের মা একপ্রকার দমিয়ে রাখেন।কথায় বলে না?যে সংসারে মেয়ে মানুষ সব কিছুর হর্তাকর্তা সে সংসার কখনো সুখের হয় না! বর্ষা হাড়ে হাড়ে কথাটা টের পায়।ছোট থাকায় বর্ষা তখন বুঝতেও পারেনি।বর্ষণ আসলে নেক্রোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত।না হলে মৃত আদিবার সাথেও এমন করতে পারতো বর্ষণ?নিজ চোখে ভাইয়ের নোংরামি দেখেছে বর্ষা।
মৃত লাশের সাথে শারী-রিক সম্পর্ক স্থাপন! শুনতে যেমনটা উদ্ভট বাস্তবে ভাবাটাও তেমন কষ্টকর এবং ভয়ঙ্কর। লাশের প্রতি যৌ-নাকাঙ্ক্ষা তৈরি হয় যাদের তাদের নেক্রোফিলিক বলে হয়ে থাকে। আজকে এমনই আরেক লাশ ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম পুলিশ। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল মর্গে কাজ করতেন ৪৮ বছর বয়সী সেই লোক। তার অধীনে লাশগুলো প্রাথমিক অবস্থায় থাকতো তখন অল্প বয়সী নারী লাশ পেলে বিকৃত কাজে লিপ্ত হতো। সম্প্রতি দুটো স্বাভাবিক নারীলাশের ফরেনসিক রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেলে সেটা পরীক্ষা করতে গিয়ে একই ব্যক্তির আভাস পাওয়া যায়। তদন্তে ধরা খেয়ে বসে মর্গের এই কর্মী।
বছর দুয়েক আগে এই টপিকে আলোচনা করেছিলাম তখন অনেকের মনে হয়েছিল এটা কি আদৌ সম্ভব! হলেও আমাদের দেশে নেই বোধহয়। কিন্তু কয়েকমাস পরেই ধরা খায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল মর্গের এক নেক্রোফিলিক কর্মী, জবানবন্দিতে স্বীকার করেছিল সে তিন বছরে ১০০+ নারী লাশ ধর্ষণ করেছিল! আজকে আবার ধরা খেলো চট্টগ্রাম মেডিক্যাল মর্গের কর্মী। নেক্রোফিলিকরা শিকারের খোঁজে মর্গে ভীড় জমায় নাকি মর্গে নারীদেহ সহজলভ্যতায় ধীরে ধীরে নেক্রোফিলিক হয়ে ওঠে বিষয়টা সাইকোলজিক্যাল। কিন্তু এটা একদম পরিষ্কার, নেক্রোফিলিয়ায় আক্রান্ত ঠান্ডা মাথার ক্রিমিনালরা এখন আর কোনো বিচ্ছিন্ন থ্রিলার কাহিনির ভেতর সীমাবদ্ধ নেই। চারপাশে অসংখ্য ঘটছে। ধরা খাওয়ার আগ পর্যন্ত যা সব অজানা থেকে যায়। লাশ বলেই কি এসব নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই?
কিছু অমানবিক নিয়ম নিয়ে কাউকে কোনো প্রশ্ন করতে দেখি না, কোনো মানবাধিকার কর্মী, নারী অধিকার কর্মীদের মাথাব্যথা দেখি না। নারী লাশের ডোম কেন ছেলে হতে হবে?? লাশ বলেই কি তার আর কোনো পর্দা নেই? হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ড থাকে, মহিলা ডাক্তার থাকে, মহিলা নার্স দিয়ে করিডর ভরপুর থাকে, মহিলা ডোম কেন রাখা হয় না?? উপযুক্ত বেতন দিলে অবশ্যই পাওয়া সম্ভব। ডোম না পেলেও নারী লাশ কেন মহিলা কর্মীদের হেফাজতে রাখা হয় না? মরে গেল বলেই পরিচয় শুধু লাশ?? কর্তৃপক্ষের কাছে লাশ হতে পারে, অনেকের কাছে তখনো রক্তে মাংসের উপভোগ্য নারী! প্রশ্নহীন, ঝামেলায়হীন, বিনামূল্যে পাওয়া বিকৃত খায়েশ মেটানোর বস্তু! মৃত্যুর পর এভাবে নিরাপত্তাহীন নারী দেহ রাখা বর্বর, জঘন্যতম অন্যায়।
নিজের ভাইয়ের সম্পর্কে এসব জানার পর চরম ঘৃণা আর বিদ্বেষ বর্ষার মনে জন্ম নেয়। মাকে বর্ষা কত বোঝায় বর্ষণকে সাইক্রেটিস দেখাতে!কিন্তু কে শোনে কার কথা।তার একটাই কথা ছেলেমানুষ।অথচ আজ ছেলেমানুষ বলে ভুল শুধরে না দিলে কাল ছেলে মানুষ হবে না। এ কথা কয় জন ভাবে?ভাবে না দেখেই সমাজে আজ এত অধঃপতন!জলকে নিয়ে বর্ষার ভীষণ ভয়।বর্ষার মনে হয় জলকে বর্ষণের অতীর সম্পর্কে জানানো দরকার।কিন্তু জল কি মেনে নেবে?
কিন্তু জানারও যে খুব প্রয়োজন।একটা মানুষের অতীতের ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ।
কড়া নাড়ার আওয়াজে বর্ষস্র ধ্যান ভাঙে।মা ডাকছে।বর্ষা গিয়ে দরজা খোলে।
” কি রে?দরজা আটকিয়ে বসে আছিস কেন?”
” মাথা ধরেছিলো।বাসা ভর্তি মেহমান তো!তাই দরজা লাগিয়ে শুয়ে ছিলাম।”
” পার্লারে যাবি না জলকে নিয়ে?”
” উহু,ও যাবে না বললো পার্লারে।আমিই ওকে সাজিয়ে দেবো নি।”
” ভালো করে সাজিয়ে দিস।আমি গেলাম।”
বর্ষণের মা বেরিয়ে যায়।বর্ষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।মায়েরা নাকি মমতাময়ী হয়।অথচ বর্ষার চোখে বর্ষার মা পিচাশিনী।মা নামের কলঙ্ক।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ
পূর্বের পার্ট-