তুই আমার সুরঞ্জনা পর্ব ১১+১২

#তুই_আমার_সুরঞ্জনা
Part–11
#Arishan_Nur

প্রমিতি আড় চোখে নিরবের দিকে বারবার তাকাছে। যতোবারই সে নিরবের দিকে তাকাচ্ছে ততোবারই তার লজ্জায় মরে যেতে মন চাচ্ছে। আচ্ছা, ছেলেটা কালো শার্টটা পড়েই বিয়ে করে ফেলবে? কে জানে? এই মূহুর্তে তো আর পাঞ্জাবি পড়ানো সম্ভব না নিরবকে। কারন কাজী সাহেব বিয়ে পড়িয়ে ফেলেছেন।

এবার কাজী সাহেব মিস্টি চাবাতে চাবাতে নিরবের উদ্দেশ্য বললেন, বাবা এবার আপনি রাজী থাকলে একটু কষ্ট করে তিনবার কবুল বলে ফেলেন।

নিরব একবার প্রমিতির দিকে তাকালো। প্রমিতির দিকে তাকাতেই তার মনের মধ্যে তুমুল ঝড় বয়ে গেল। সে একটা বড়ো করে শ্বাস নিয়ে প্রমিতির চোখের দিকে তাকালো। মেয়েটা তাকেই দেখছে বোধহয়। প্রমিতির চোখে আকুলতা! কিসের অনুরোধ জানাচ্ছে সে নিরবকে? বিয়ে করার? হতে পারে৷

নিরব দৃষ্টি সরিয়ে বরকতের দিকে তাকালো। বরকত দাত কেলিয়ে হাসছে। বরকতের পাশেই লিনা বসে বসে প্রমিতির ছবি তুলছে। বরকতকে দেখেই নিরবের গা জ্বালা দিয়ে উঠল। এই ব্যাটার জন্য আজকে সে ফেসে গেল। একবার বরকত কে হাতের নাগালে পেলে আস্ত রাখবে না।

নিরবের মা নিরবের কাছে গিয়ে বলে, কি হয়েছে বাবুই। কবুল বলছিস না কেন? মেয়েটা তোর উত্তরের অপেক্ষা করছে। বলে ফেল কবুল। (করুন গলায়)

নিরব তার মায়ের অনুরোধ ফেলতে পারল না। সে বলে ফেলে, কবুল, কবুল, কবুল!

কবুল বলার সময় তার গলা আটকে আসছিল।সে নিজেকে সামলে নিল। তারপর আবার প্রমিতির দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনো তার দিকেই চেয়ে আছে। তবে চোখ-মুখে একটা খুশির ঝলক! কি অদ্ভুত! এতো সুন্দর লাগছে কেন মেয়েটা কে? মনে হচ্ছে চেহারা দিয়ে নূর বের হচ্ছে!

নিরব মাথা নিচু করে ফেলল। তার কিছু ই ভালো লাগছে না। এভাবে বিয়ে হওয়া লিখা ছিল তার ভাগ্য! এইটা বিয়ে নাকি দুর্ঘটনা?

যদিও বা সব বিয়ের অপর নাম ই দুর্ঘটনা। এরেঞ্জ ম্যারেজ হলো, রাস্তা দিয়ে চলার সময় গাড়ি এসে ধাক্কা দেওয়া আর লাভ ম্যারেজ হলো রেললাইনে গিয়ে শুয়ে এক ঘুম দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানো।

নিরবের বুক ফেটে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অবশেষে সেও এখন ম্যারিড। তার মানে আজকে থেকে সে ম্যসেঞ্জারে কোন মেয়েকে ইনবক্সে নক দিতে পারবে। মেয়েদের ছবিতে নো লাভ ওর কেয়ার রিয়্যাক্টশন!

নিরব বিরবিরিয়ে বলে উঠে, ও আল্লাহ! জীবনের সব সুখ শেষ হতে চলল নাকি!

প্রমিতি নিরবের দিকে তাকিয়েই আছে আর হাত দিয়ে শাড়ির আচল মোচড়াচ্ছে। সে বুঝে পাচ্ছে না নিরব এতো কি ভাবছে?

এবার আশা এসে বলে, ভাবি! চল তোমাকে ভাইয়ার পাশে বসাই। আসো।

বলে প্রমিতিকে উঠে দাড়ানোর জন্য তাগদা দিল। প্রমিতি বাধ্য হয়ে উঠে দাড়ালো এবং আশার সাথে নিরব যে সোফায় বসে আছে, সেখানে গিয়ে দাড়ালো।

আশা নিরবকে বলল, ভাইয়া, একটু সরে বসো। ভাবিকে তোমার পাশে বসাব।

নিরব কিছু না বলে সরে বসল। আশা প্রমিতিকে নিরবের পাশে বসিয়ে দিল।

প্রমিতি মাথা নিচু করে বসে রইল। তার কেমন যেন লাগতে শুরু করল। হাত-পা কাপতে শুরু করল। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ আওয়াজটা বেড়ে গেল। হার্টবিট ও জোড়ে জোড়ে কম্পিত হতে লাগল।

এমন সময় লিনা এসে দাড়ালো। সেই সাথে বরকত ও৷ লিনা পাশের চেয়ারে বসে বলে, বরকত আমার আর প্রমিতির সুন্দর কয়েকটা ছবি তুলে দাও তো। বলে ফোন এগিয়ে দিল।

বরকত লিনা আর প্রমিতির কয়েকটা ছবি তুলে দিল। এরপর সবাই মিলে সেলফি তুলল।

লিনা বলে উঠে, বেগম আন্টি তো হুট করে বলল নিরবের বিয়ে। আমি প্রিপারেশন নেওয়ার একদম সুযোগ পাইনি। আগে জানলে তোমাদের জন্য পারিসে হানিমুনের ব্যবস্থা করতাম।

নিরব একথা শুনে বিষম খেয়ে বলে, আর শখ নাই প্যারিসে হানিমুনে যাওয়ার!

লিনা বলল, আই এম সর‍্যি। বাট আজকে জাস্ট প্রমিতির জন্য একটা গিফট এনেছি।

বলে ব্যাগ থেকে একটা ডায়মন্ড নেকলেস বের করে দিল। তা দেখে নিরব বলে উঠে, ইটস টু এক্সপেন্সিভ, লিনা।

লিনা হেসে বলে, কাম অন, নিরব। প্রমিতি আমার ছোট বোনের মতো। আমার ছোট বোনের বিয়েতে তো এটা সামান্য একটা উপহার।

তারপর প্রমিতিকে জোড় করে নেকলেসটা পড়িয়ে দিয়ে লিনা বলে উঠে,এটা আমার আর বরকতের তরফ থেকে প্রমিতির জন্য একটা উপহার।

বরকত আপত্তি করে বলে, না। আমি প্রমিতির জন্য আলাদা একটা গিফট এনেছি।

বলে প্রমিতির হাতে একটা প্যাকেট দিল।

প্রমিতি মিস্টি করে হেসে প্যাকেটটা খুলে দেখে একটা গোলাপী রংয়ের শাড়ি।

সে শাড়িটা নেড়ে-চেড়ে দেখে বলে, খুব সুন্দর তো শাড়িটা! আমার খুব পছন্দ হয়েছে। থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া।

বরকত হেসে বলে, যাক পছন্দ হইসে তাইলে। আমি ধন্য!

প্রমিতি একথা শুনে হেসে দেয়।

নিরব চমকে প্রমিতির দিকে তাকালো। তার হৃদয়ে রক্তক্ষরন হতে লাগল মেয়েটার হাসির আওয়াজ শুনে।

বরকত বলল, নিরব, তোর ই বউ হয়। এভাবে লুকায় দেখার কি আছে? একেবারে রুমে গিয়ে মন ভরে দেখিস, বন্ধু।

নিরব রাগান্বিত দৃষ্টিতে বরকতের দিকে তাকালো। বরকত শুকনো ঢোক গিলে একটা হাসি দিয়ে বলে, দোস, খেয়ে নে। রান্না-বান্না শেষ প্রায়। আমার তো ক্ষুদা লাগছে। রাতে ডিনার করি নি। এখন বারোটার বেশি আছে।

নিরব অনুভব করল, তার খুদা লাগে নি। কারন সে রাতেই হোটেলের ফুল প্লেট বিরিয়ানি খাইছে। এখন আর গলা দিয়ে খাবার নামবে না।

প্রমিতি বলে উঠে, ভাইয়া, আপনি খেয়ে নেন।

–হ্যা।চল, লিনা। খেয়ে নিই। তোরাও আয় না।

নিরব দাতে দাত চেপে বলে, না রে। আমার খিদা নাই। পেট ভরা।

একথা শুনে লিনা আর বরকত দুইজন ই মিটমিটিয়ে হেসে উঠে।

তাদের হাসতে দেখে নিরব বিরক্ত হয়ে গেল।

আমরা ডিনার করছি।তোরা খা।

বরকত বলল, অল্প একটু খা আমাদের সাথে৷

–না রে, পেট ভরা।

লিনা বলল, থাক, থাক জোড় করো না।

বরকত যে কি বুঝল কে জানে? সেও মিটমিট করে হেসে বলে, ঠিক আছে। চলো আমরা খেয়ে নিই।

এমন সময় আশার বাবা সালাম সাহেব (সুমি খালার হ্যাসবেন্ড) এসে বলে, তোমরা খেতে যাও।

বরকত বলল, হ্যা, আংকেল যাচ্ছি।

সালাম খালু বলল, প্রমিতি তো এখন আমার আরেকটা মেয়ে। আফটার ওল আমি ওর উকিল বাবা হয়ে গেলাম। হাহা।

প্রমিতি হালকা হাসি হাসল। নিরব জোড়পূর্বক হেসে বলে, খালু, আমরা বাসায় যাই। রাত তো অনেক হলো।

সালাম খালু চোখ থেকে চশমা খুলে বলে, হেই ইয়ং ম্যান, হাভ সাম পেশেন্ট। এতো তাড়াহুড়ো কিসের? আজকে তোমরা এখানে থাকবা। নিরব আর প্রমিতির সেকেন্ড বাসর রাত আমার বাসায় হবে। আর বরকত তোমরাও থেকে যাও রাত হয়ে গেছে।

বরকত বলল, আচ্ছা। আংকেল।

বরকত আর লিনা খেতে চলে গেল। ড্রয়িং রুম কিছু টা ফাকা হয়ে গেল। সবাই খেতে গেছে।

প্রমিতি নরম কন্ঠে বলে উঠে, আপনি কি আমাকে সত্যি ই লুকিয়ে বিয়ে করে রেখেছিলেন?

নিরব একথা শুনে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সে বলে উঠে, না,,,,আসলে,,,,

–আপনার ফ্যামিলির কেউই তো আমাকে চেনে না। জানেই না আমি আপনার স্ত্রী। এতো বড় সত্য লুকিয়েছেন কেন?

–আব,,,,,(কি বলবে ভেবে না পেয়ে নিরব উঠে দাড়ালো)

নিরব গমগমে গলায় বলে, এইসব কথা বাদ দাও। যা হওয়ার হয়ে গেছে।

বলে নিরব চলে গেল। আর প্রমিতি একাই বসে রইল ড্রয়িং রুমে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই আশা আর লিনা এসে প্রমিতিকে বাসর ঘরে বসিয়ে দিল।

আশা মজা করে বলে, ভাবি, ভাইয়া আজকে যা যা করবে সব আমাদের কে বলবা কিন্তু!

প্রমিতি আশার এমন কথায় বেশ লজ্জা পেল। সে মাথা নিচু করে ফেলে। তা দেখে লিনা শব্দ করে হেসে বলে।,লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। শোন প্রমিতি। স্বামীকে আজকে রাত থেকেই টাইট দিয়ে রাখবা। শাড়ির আচলে বেধে রাখতে হবে। বুঝেছো?

প্রমিতি মাথা ঝাকালো।

লিনা আর আশা একটা দুধের গ্লাস টেবিলে রেখে চলে গেল। প্রমিতি বিছানায় বসে নিরবের অপেক্ষা করতে লাগলো।

এদিকে নিরবকে ঘিরে ছোটোখাটো একটা ঝটলা পেকে গেছে। নিরবের আরো কয়েকজন কাজিন, আশা, বরকত আর লিনা মিলে তাকে রুমে ঢুকতে দিবে না।

নিরব বিরক্ত হয়ে গেল আর বলল, আশ্চর্য। রুমে ঢুকতে কেন টাকা দিব? পাগল নাকি আমি!

আশা উচু গলায় বলে, না না দিতে হবে। টাকা না দিয়ে বউয়ের কাছে যেতে পারবে না।

নিরব এক প্রকার বাধ্য হয়েই পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে দেখে সাড়ে তিনশ টাকা আছে। কালকে থেকে তো বাসায় যায় নি। তার উপর হাসপাতালের বিল, হোটেলের বিল দিতে গিয়ে সব ক্যাশ শেষ হয়ে গেছে।

নিরব সাড়ে তিন শ টাকা বের করে আশার হাতে দিয়ে বলে, তুই আমার কাজিন গ্রুপে সবার ছোট। নে ছোট বোন। কিছু কিনে খাস এই টাকায়।

আশা টাকার পরিমান দেখে মুখ কালো করে বলে, মাত্র তিনশ টাকা।

–সাড়ে তিনশ!

–ওই একই। এতো কম কেন ভাইয়া? তোমার না গুলশানে ছয়তলা বিল্ডিং আছে।

নিরব ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, এর বেশি দিতে পারব না। বলে সে রুমের ভেতর ঢুকে পড়ল।

প্রমিতিকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে নিরবের খুব অদ্ভুত অনুভূতি জাগ্রত হলো। আচ্ছা সে কি এখন সিরিয়ালের নায়কের মতো প্রমিতিকে গিয়ে বলবে, এই বিয়ে মানি না। যাও ফ্লোরে গিয়ে ঘুমাও। তাহলে তার আর বাসর করার স্বপ্ন স্বপ্ন ই থেকে যাবে। নিরব মনে মনে ভাবতে লাগলো, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।
#তুই_আমার_সুরঞ্জনা
Part–12
#Arishan_Nur

নিরব রুমে ঢুকেই গেট লাগিয়ে দিল। তার এখন নার্ভাস লাগছে। মনের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। নিরব নিজেকে নিজেই গালি দিয়ে বলে, এইসব মেয়েদের মতো বাসর রাতে ভয় পাচ্ছিস কেন হাদারাম!

নিরব গলা খাকিয়ে একটা শুকনো কাশি দেয়। প্রমিতি বিছানায় বসা ছিল। সে নিরবের কন্ঠ শুনে উঠে দাড়ালো এবং নিরবের কাছে গিয়ে পা ছুয়ে সালাম করতে গেলে নিরব তাকে বাধা দিয়ে বলে, আরে, আরে এসব কি করছো? ইসলামে মাথা ঝুকে সালাম করার বিধান নাই। আল্লাহ ছাড়া কারো নত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে। আর কোন দিন পা ছুয়ে সালাম করবে না। ক্লিয়ার?

প্রমিতি মাথা নেড়ে বলে, আচ্ছা।

নিরব তার শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আলমারির কাছে গেল। পরমূহুর্তে ই মনে পড়ল,এটা তার বাসা না। সে চোখ চারপাশে বুলালো। সোফার উপর দুইটা প্যাকেট৷

সে সোফার সামনে গিয়ে দেখল, একটা প্যাকেটে বরকতের দেওয়া শাড়ি আর অপর প্যাকেটে একটা গেঞ্জি। সে গেঞ্জির প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বাথরুমে গেল।

কিছুক্ষন পর নিরব চেঞ্জ করে এসে দেখে প্রমিতি এখনো ঠায় দাঁড়িয়েই আছে।

তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিরব ভ্রু কুচকে বলে উঠে, এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? নাকি তুমি ঘোড়ার মতো দাঁড়িয়েই ঘুমাও?

প্রমিতি কিছুটা চমকে উঠে বলে, আমি কি শাড়িটা বদলে আসব?

নিরব কঠিন গলায় বলে, না। এটা পড়েই আজকে রাত পার করবা।

নিরবের কন্ঠে কঠিনতা দেখে প্রমিতি ঘাবড়ে গিয়ে বলে, আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?

নিরব এবার প্রমিতির কাছে গিয়ে দাড়ালো এবং কটমট করে বলে, তোমার কি সত্যিই কিছু মনে নেই?

প্রমিতি ভয় জড়ানো কন্ঠে বলে, না।

নিরব প্রমিতির দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে, সত্যিই কিছু মনে নেই? নাকি নাটক করছো?

এতো শক্ত করে প্রমিতির হাত ধরে আছে নিরব যে ব্যথায় প্রমিতি কেদে দিল।

নিরব প্রমিতিকে কাদতে দেখে অবাক হয়ে গেল। কান্না করলে একটা মেয়েকে এতো অপরুপ কিভাবে লাগতে পারে?

নিরব মুগ্ধ নয়নে প্রমিতির দিকে তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বলে, তোমাকে কান্না করলে খুবই সুন্দর লাগে। খুব খুব রূপবতী লাগে। মনে হয় তোমার চেহারায় কেউ এক বালতি মায়া উপচে ফেলে দিয়েছে ! এই মায়াবী চেহারা দেখার জন্য হলেও তোমাকে দিনে একবার হলেও কাদাতে হবে।

প্রমিতি কান্না করতে করতে নাক টেনে বলে, আমার সত্যিই কিছু মনে নেই।

নিরব তখনও প্রমিতিকে শক্ত করে ধরে ছিল। এবার আরো শক্ত করে তার হাত ধরে বলে শান্ত স্বরে বলে, তাহলে আর কি করার? পাস্ট ইস পাস্ট। অতীতে যা হয়েছে তা তো তোমার মনে নেই। তাহলে বর্তমান নিয়েই থাকো।আজকে থেকে আমার সাথে তোমার নতুন করে পথচলা শুরু! তোমার কোন সমস্যা আছে এতে?

প্রমিতি লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে গেল। আর আস্তে করে বলে, না।

–গুড।

নিরব যেই না প্রমিতির অতি নিকটে আসতে ধরবে ওমনি হুট করে ভীষণ শব্দ করে এলার্ম বেজে উঠল।

নিরব ধড়ফড়িয়ে উঠে। সেই সাথে প্রমিতিও।

নিরব বলল, এলার্ম কে অন করে রাখছে তাও এই টাইমে?

–জানি না তো।

এলার্ম বেজেই যাচ্ছে। নিরব আর প্রমিতি মিলে এলার্ম ক্লক খুজতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষন পর প্রমিতি বেডের নিচ থেকে এলার্ম ক্লক বের করে এনে নিরবের হাতে দেয়৷

নিরব এলার্ম অফ করতেই বাইরে থেকে হাসাহাসির শব্দ শুনল নিরব-প্রমিতি।

নিরব বিরক্র হলো।

প্রমিতি বলে উঠে, ওরা বোধহয় এলার্ম অন করে বিছানার নিচে রেখে দিয়েছে।

–সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে। বেয়াদবের দল গুলো।

এমন সময় নিরবের ফোনে কল আসল। সে ফোন বের করে দেখে আশা ম্যাসেঞ্জারে কল দিচ্ছে। তাও ভিডিও কল।

নিরব অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন ধরল। ভিডিও অন করে দিল।

নিরব দেখল খালু সাহেবরা বাদে সবাই আশার ফোনের ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে আছে।

নিরবকে দেখে তার দাদি বলে উঠে, কি রে নিরব! বিরক্ত করলাম নাকি তোকে?

নিরব হোহো করে হেসে বলে, একদম ই না দাদিজান। এক কাজ করেন, আপনারা এই রুমে চলে আসেন। সবাই মিলে একসাথে রাতে থাকি। মুভি দেখি। কি বলেন? (দাতে দাত চেপে)

আশা বলল, হেই ব্রো। রেগে যাচ্ছো কেন?

এবার বরকত বলল, আরে আশা বুঝবা ন। তোমার ভাইয়া কেন রেগে যাচ্ছে? তুমি ছোট আছো না এখনো। তাই বুঝো না। আজকে তোমার ভাইয়ার হ্যাপি বাসর রাত। আর আমরা ডিস্টার্ব করছি, তাই রেগে যাচ্ছে।

নিরব দাতে দাত চেপে ফোনের স্ক্রিনের সামনে বলে উঠে, হো। তুই তো এই ব্যাপারে এক্সপার্ট।

বরকতের মুখটা কালো হয়ে গেল। সে আড় চোখে লিনার দিকে তাকালো। লিনা তার ফোন চালাতে ব্যস্ত আছে।

বরকত দৃষ্টি সরিয়ে নিল এবং হেসে বলে, বলছে তোকে।

এমন সময় সুমি খালা বলে উঠে, নিরব ও কম না। আজকে কি প্রথম নাকি! বেহায়াটা বিয়ে করে তো চুপ চুপ করে সবই করছে। বাসর করাও শেষ ওর। নিরব যদি আমার ছেলে হতো ওরে আমি বাসার সামনে কান ধরে রেখে দিতাম। আপা নরম মনের মানুষ দেখে, মাফ করে দিসে। এই নিরব তুই গেট খুল। আজকে তোর বাসর হবে না। এটা তোর শাস্তি, লুকায় বিয়ে করার শাস্তি। আজকে আমরা সবাই একসাথে মুভি দেখব। গেট খুল বেয়াদব।(ঝাড়ি মেরে)

নিরব ধমক খেয়ে প্রমিতির দিকে তাকালো। প্রমিতি মিটমিট করে হাসছে। প্রমিতিকে হাসতে দেখে নিরবের গা জ্বলে উঠে। তখনি গেটে নক করা শুরু হয়।

প্রমিতি রিনরিনে আওয়াজে বলে, গেট খুলে দিব?

–হ্যা। যাও। খুলে দাও। নাহলে এরা গেট ভাংচুর করবে। পরে আমার থেকেই ক্ষতিপূরণ নিবে। যাও দ্রুত গেট খুলো।

প্রমিতি গেট খুলতেই নিরবের কাজিনরা খালা, দাদি, মা, এবং বরকত-লিনা ভেতরে ঢুকল। সবাইকে সুমি খালা লিড দিচ্ছে।

খালার বাসায় যে মহিলা সাহায্যকারী উনি এসে ফ্লোরে একটা তোষক বিছিয়ে দিল।

তা দেখে নিরব তার বাম চোখ চুলকিয়ে মনে মনে বলে উঠে, R.I.P my basor night! রেস্ট ইন পিস৷

আশা টিভি অন করে ফোনের সাথে কানেক্ট করে দিল এবং ইউটিউবে কনজুরিং হরর মুভি অন করল।

তারপর আর কি? মুভি শুরু হলো। প্রমিতিকে বিছানায় বসানো হলো। আর নিরবকে ফ্লোরে। তাদের মাঝে বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রাখা হলো। সব কিছু ই সুমি খালার তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। বিছানায় নিরবের মা আর তার দুই খালা আর দাদি বসল।

নিরবের দাদি বেগমকে মুভি চলাকালীন এক সময়ে ফিসফিস করে বলে,এভাবে হুট করে ছেলের বিয়ে দিয়ে দিলা, বউমা? মেয়েটা যদি ভালো না হয়?

বেগম মুচকি হেসে বলে, আর কিছু কি করার ছিল? নিরব তো আগেই বিয়ে করে ফেলেছে।এখন যদি আমরা মেয়েটাকে না মেনে নিতাম, মেয়েটা তো সমাজে মুখ দেখাতে পারত না। তাই না, মা?

–তা ঠিক। সুমি নাকি ওদেরকে একসাথে ধরেছে একটা হোটেল রুমে?

বেগম হতাশ হয়ে গেল এবং বলল, হুম।

–মেয়েটা কি ভালো ঘরের মেয়ে হবে? এভাবে একা একটা ছেলের সাথে,,,,,

বেগম তার শ্বাশুড়িকে থামিয়ে দিয়ে বলে, যদি এমনটাই হয়, তাহলে আমার ছেলের ও চরিত্র খারাপ আর প্রমিতি তো বলেছে সে নিরবের স্ত্রী। এখন এখানে আমাদের কিছু করার নেই মা। মেয়েটা যদি খারাপ ও হয় তবে নিরব কে পস্তাতে হবে। আমার মনে হয়, মেয়েটা ভালোই হবে। ভদ্রই মনে হচ্ছে।

নিরবের দাদি বলল, হ্যা, খুব মিস্টি দেখতে মেয়েটা।

নিরবের মায়েরা তিন বোন। নিরবের মা হলো সবার বড়। তারপর বরকতের মা সীমা খালা। সীমার খালার তিন সন্তান। বরকত সবার বড় আর দুইজন মেয়ে। একজন কলেজে পড়ে আর একজন মেডিকেলে। সুমি খালা তার দুই বোনের চেয়ে বয়সে একটু ছোট। ওনার মেয়ে আশা এবার ক্লাস এইটে পড়ে। নিরব আর বরকত সেইম এইজ।

টিভিতে মুভি চলছে। নিরব মুখ গোমড়া করে ফ্লোরে বসে আছে। বরকত লিনা এক সাইডে বসে বসে মুভি দেখছে। আধ ঘন্টা যেতেই সুমি খালা অনেক গুলো পপকর্ণ, চিপসের প্যাকেট এনে সবার হাতে হাতে দিল।

সুমি খালা প্রথমে প্রমিতির হাতে চিপসের প্যাকেট ধরিয়ে দিল। প্রমিতি প্রথমে নিতে চাচ্ছিল না কিন্তু খালা শ্বাশুড়ির জোড়াজুড়ি তে নিল। আজকে তার খুব ভালো লাগছে। নিরবের ফ্যামিলির সবাই খুব ভালো। আচরণ ও অমায়িক। সবাইকে খুব সাপোর্টিভ আর আধুনিক চিন্তাভাবনার মনে হচ্ছে। নিরবের মাকে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তার। প্রমিতি আড় চোখে নিরবের দিকে তাকালো। ছেলেটা টিভি দেখছে। প্রমিতির কেন যেন লজ্জা লেগে উঠল। সে মুচকি হেসে টিভির দিকে চোখ দিল।

নিরবের হাতেও দিলেন। নিরব দেখল, একটা পপকর্ণ আর সান চিপস। সে সান চিপস টা খুলে খেতে লাগলো।

সুমি খালা নিরবের পাশে বসে বলে, কি রে নিরব? মন খারাপ করলি নাকি?

নিরব খেতে খেতে উত্তর দেয়, নাহ।

–করছিস তুই মন খারাপ। আমার বাসর রাত ও তুই এভাবে নস্ট করছিলি, মনে আছে?

নিরব ভ্রু কুচকে বলে, আমি আবার কি করেছি?

খালা ব্যঙ্গ করে বলে, কি করিস নি তুই? ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে করতে বলিস নাই আমি খালার সাথে ঘুমাব? এখন তো মনে থাকবে না৷

নিরব মুখ কালো করেই বলে, তোমার মতো একটা মায়ের বোন থাকলেই হলো, তার আর শক্রুর দরকার নাই।

খালা বিজয়ের হাসি হেসে উঠে গেলেন আর আশাকে বলতে লাগলো, এই আরো একটু জোড়ে দে না। কিছু ই তো শুনি না। সাদা ফ্রক পড়া মেয়েটি কি বলল রে? সাউন্ড বাড়া।

নিরব ঘাড় ঘুরালো এবং প্রমিতিকে দেখে নিল। প্রমিতি তার মায়ের সাথে কথা বলছে আর মিস্টি করে হাসছে। নিরব দেখলো, সবাই খুব ইনজয় করছে। সে কিছুটা খুশি হয়ে মনে মনে বলে, যতোই পাগল হোক না কেন আর যতোই অতিষ্ঠ করুক আমার জীবন, তবুও আই লাভ মাই ফ্যামিলি। ওলসো লাভ সুমি খালা!

নিরব এবার টিভির পর্দার দিকে তাকালো, হুট করে একটা ভুতের সিন চোখের সামনে আসল। সে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল এবং বিরবির করে বলে, বাসর রাতে ফ্যামিলির সাথে কনজরিং মুভি দেখছি। ভালোই তো।

আচ্ছা, আমার ম্যারিড লাইফ কি তবে কনজরিং মুভিটার সাদা জামা পড়া ভুতটার মতো ভয়ংকর হবে? হু নোস?

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here