#তুই_আমার_সুরঞ্জনা
part–17
#Arishan_Nur
ফযরের নামাজ পড়ে শোয়ার পর নিরবের আর ঘুম আসছে না। হাজার চেষ্টা করেও তার চোখে ঘুম নেই। সে বারবার এদিক-ওদিক পাশ ফিরছে। একবার ডান দিকে তো আরেকবার বাম দিকে। তাকে নড়াচড়া করতে দেখে প্রমিতি ঘুম ঘুম স্বরে বলে উঠে, কি হলো, আপনি ঘুমাচ্ছেন না কেন? সকালে তো অফিস যেতে হবে। ক্লান্ত অনেক। (প্রমিতি নাক ফুলিয়ে কালকের রাতে নিরবের বলা কথাগুলোই রিপিট করল।)
এই ব্যাপার টা নিরবের ধরতে খানিকটা সমস্যা হলো। যখন সে বুঝতে পারল যে প্রমিতি তার কথাই তাকে বলেছে, তখন নিরব মিটমিট করে হেসে বলে, হ্যা, হ্যা, শুক্রবার ও আমি অফিস করি!
প্রমিতি আবারো অভিমানী সুরে বলে, আপনিই তো বলেছেন আজকে সকালে অফিস যাবেন। আচ্ছা এক কাজ করুন, আজকে রাতে আর আসার ই দরকার নাই। অফিসে রাতটা কাটিয়ে দিয়েন।
নিরব কিছুটা অবুঝের মতো বলে উঠে, বাই এনি চান্স, তুমি কি কষ্ট পেয়েছে বা রাগ না, না অভিমান করেছো?
প্রমিতি ভারী গলায় বলে, না তো অভিমান কেন করব? আজব!
এবার নিরব প্রমিতির দিকে ঘুরে শুইলো। এতে প্রমিতি কিছুটা ঘাবড়ে গেল সেই সাথে হচকচিয়ে উঠে।
তা দেখে নিরব মুচকি হেসে বলে, তো? কি চাও? সারা দিন বাসায় বসে বসে তোমাকে দেখব?
–না। মোটেও না। আমাকে কেন দেখবেন? আমি তো দেখতে সুন্দর না।
–তাই? তুমি দেখতে সুন্দর না?
–নাহ। শ্যামলা আমি। (করুন গলায়)
–আসলে ঠিক ই বলেছো। তুমি দেখতে ওতোটা সুন্দর না। (মজা করে)
একথা শুনেই প্রমিতি কান্না জুড়ে দিল।
প্রমিতির হুট করে কেদে দেওয়ার ফলে এবার নিরব নিজেই কিছুটা হচকচিয়ে যায়। এবং বিচলিত হয়ে বলে, আম সর্যি! মজা করছিলাম আমি তোমার সাথে।
প্রমিতি কাদতে কাদতেই বলে, যদি সুন্দর না হই তাহলে বিয়ে করার কি প্রয়োজন ছিল? খোটা মারার জন্য বিয়ে করেছেন? (নাক টানতে টানতে)
একথা শুনে নিরবের মধ্যে কি যেন একটা পরিবর্তন আসল। সে হুট করে প্রমিতিকে জড়িয়ে ধরে।
আচমকা এমন কিছু হওয়ায় প্রমিতি চমকে উঠে নিজেকে নিরবের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
নিরব নিজের হাত দিয়ে প্রমিতিকে ধরে ফেলে এবং ফিসফিস করে বলে, যাও আজকে সারা দিন তোমাকে নিয়ে ঘুরব।
প্রমিতি মুখ ঘুরিয়ে নিল এবং গোমড়া মুখে বলে,
উইকেন্ড জন্য বাসায় থাকবেন! এটা আমি মানি না।
— তুমি কি মন খারাপ করেছো? আর করলেও কারনটা কি?
–আচ্ছা আপনি কাউকে দেখেছেন বিয়ের পরের দিন বউকে রেখে সকাল সকাল অফিস চলে যায় আবার এতো রাত করে ফিরে?বলেন দেখেছেন এমন কোন ব্যক্তিকে? (ঠোঁট উল্টিয়ে)
নিরব একদন্ড ভেবে বলে, ইয়েস! আমার ক্যামিস্ট্রি প্রাইভেট টিচার বিয়ের পরের দিন সকাল সাতটায় স্কুলে গিয়েছিল। স্যারের বিয়ের পরের দিন স্কুলে খাতা বিতরণ দিবস ছিল।
প্রমিতি মুখ কালো করে বলে, এখন এসব সাফাই দেওয়ার জন্য বলবেন ই।
নিরব প্রমিতিকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে, তুমি যে আমাকে খাবার আনতে পাঠিয়ে ঘুমিয়ে গেছো তার বেলায় কি? আমার অভিমান জাগতে পারেনা?
–না। পারেনা। (শক্তপোক্ত ভাবে)
–কেন? কেন? (ভ্রু কুচকে)
প্রমিতি মৃদ্যু গলায় বলে, অভিমান শব্দটা কেবল মেয়েদের জন্য প্রযোজ্য।
নিরব হালকা হেসে বলে, নাহ। অভিমান সবার ই হয়। তবে ছেলেরা প্রকাশ করেনা।
–কেন করে না?
–লজ্জা পায় সম্ভবত! অভিমান সবার উপর হয়না। যারা খুব আপন কেবল তাদের উপর অভিমান জাগ্রত হয়।
প্রমিতি নিরবের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে ধরলে,
নিরব খপ করে প্রমিতির হাত ধরে ফেলে আর অতি নমনীয় কন্ঠে বলে উঠে,
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি
বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে
ফিরে এসো সুরঞ্জনা
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার
দূর থেকে দূরে —আরো দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেওনাকো আর
কি কথা তাহার সাথে? তার সাথে?
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ
তার প্রেমে ঘাস হয়ে আসো
সুরঞ্জনা
তোমার হৃদয় আজ ঘাস
বাতাসের ওপারে বাতাস
আকাশের ওপারে আকাশ
–জীবনানন্দ দাশ।
প্রমিতি নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, এই সুরঞ্জনা টা আমার কে? আপনার গার্লফ্রেন্ড?
একথা শুনে নিরব হোহো করে হেসে বলে, তুমি সুরঞ্জনাকে চেনো না?
প্রমিতি ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, উহু চিনিনা। এখন এটার ও মজা নেন।
–না। না। মজা কেন নিব? আচ্ছা বলছি সুরঞ্জনা কে। আকাশলীনা কবিতার নায়িকা হলো সুরঞ্জনা। মাত্র যে কবিতাটা বললাম না? এটাই হলো জীবনানন্দ দাশের এক বিখ্যাত কবিতা আর এই কবিতার এক কালজয়ী চরিত্র এই সুরঞ্জনা।
–ও। আপনার সুরঞ্জনা কে? (অবুঝ প্রশ্ন প্রমিতির)
নিরব প্রমিতির কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে, কে আবার? তুমি। তুমি হলে আমার সুরঞ্জনা। জানো সুরঞ্জনা চরিত্রটা একেক জনের কাছে একেক অর্থ বহন করে। কারো কাছে সুরঞ্জনা ছলনাময়ী নারী তো কারো কাছে সুরঞ্জনা রহস্যময়ী। কিন্তু আমার কাছে সুরঞ্জনা হলো প্রসিদ্ধ ভালোবাসার এক অন্যতম উদাহরণ। কবিতার এইটাই বৈশিষ্ট্য যে একেক জনের কাছে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করবে।
প্রমিতি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনল কথাটা। তারপর বলে উঠে, আপনি তো আমাকেই সুরঞ্জনা বললেন। তার মানে,,,,,,,,, এইটুকু বলে প্রমিতি বুঝতে পারল নিরব কি বলতে চাইছে৷
সে সরাসরি নিরবের চোখের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো।
নিরব প্রমিতির দিকে তাকিয়েই ছিল। চোখাচোখি হতেই নিরব প্রমিতির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
★★★
লিনাকে নিচে নামানোর পরপর ই ফায়ার সার্ভিসের লোক বরকত কে বাচাতে তাদের ফ্ল্যাটে চলে যায়। এদিকে লিনা টেনশনে মরে যাচ্ছে। তাকে প্রতিবেশী রা হাত ধরে আটকে রেখেছে। কারন এরই মাঝে লিনা একবার সুযোগ বুঝে উপরে উঠে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তাকে তাদের পাশের বাসার আংকেল ধরে ফেলে।ফলে আর যেতে পারেনি বরকতের কাছে।
লিন সমান তালে কেদেই চলেছে। তার চোখের সামনে দু দুটো বিল্ডিং দাউদাউ করে জ্বলছে। এই অবস্থায় ভেতরে কারো পক্ষে থাকা সম্ভব না। না জানি বরকত কিভাবে আছে। লিনা এতোটাই জ্ঞানহীন হয়ে পড়েছে যে বাসার কাউকে কল দিবে সেই ভাবনাও মাথায় নেই।
পাশ থেকে এক ফায়ার সার্ভিসের লোকের কথা লিনার কানে বেজে উঠল।
উনি বলছিলেন, আরো কেউ কি আছে যাকে উদ্ধার করা হয়নি?
আরেকজন বলে উঠে, হ্যা। একটা লোক বাথরুমে আটকে পড়েছে। ওনাকে উদ্ধার করতে গেছে।
–যে অবস্থা মনে হয় না বাচবে।
–তাই তো দেখছি। এইজন্য ই রাফসারকে পাঠিয়েছি। ইউ নো হি ইস বেস্ট।
–আল্লাহ যেন লোকটাকে রক্ষা করে।
লিনা আর কিছু শুনতে পেল না। তার কানে একটা কথাই ভাসছে তা হলো যে অবস্থা মনে হয় না বাচবে।
তবে কি সে বরকত কে হারাতে চলেছে? লিনা ডুকরে কেদে উঠে।
চলবে।
[ আজকে দিব নাকি একটা বোনাস? আই এগেইন রিপিট যদি আপনারা পড়তে চান। ]