তুই যে শুধুই আমার পর্ব ১৭

#তুই_যে_শুধুই_আমার [❤You are only mine❤]
#Part_17
#Writer_Tanzin_Islam_Ishika [Asfiya Islam Jannat]

পুরো রুম অন্ধকারে আচ্ছন্ন,, বাইরে থেকে আশা সোডিয়াম লাইটের আলোয় আলোকৃত হচ্ছে রুমটি,, সেই রুমের মধ্যেই সায়রাকে একটা বেডে শুয়ে রাখা হয়েছে,,, কিছুক্ষন আগেই তার জ্ঞান ফিরেছে,, কিন্তু চোখ খুলতে পারছিল না,, অনেক কষ্টে সে আদো আদো করে চোখ মেলে,, চোখ খুলে সে বসার চেষ্টা করে,, কোনমতে সে উঠে বসে,,, তারপর মাথায় হাত দিয়ে বসে,,, মাথাটা একদম ভার হয়ে আছে,,, তারপর সে চোখ ঘুরিয়ে চারদিক পর্যবেক্ষন করতে থাকে,, অন্ধাকার হওয়ায় তেমন বুঝা যাচ্ছে না,, বাইরে আবছা আলোতে এতটুকু বুঝতে পারছে সে কোন রুমের মধ্যে আছে,, সায়রা মনে করার চেষ্টা করতে থাকে সে এইখানে কিভাবে এলো,, তখন তার মনে পরে সে তহ ওর বাবা মার সাথে বাসায় যাচ্ছিল পরে রাস্তায় কিছু লোক এসে তাদের ঘিরে ধরে আর পরে কি হয় তা তার মনে নেই,,
যখন সে এইসব চিন্তা করছিল তখনই সে দরজা খুলার আওয়াজ পায়,, সায়রা ও সেই দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকায়,, দরজা খুলে কেউ যেন লাইটটা অন করলো,, সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে সায়রা ভরকে যায়,, সে অবাক হয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে আছে,, আর বলে,,

সায়রাঃ আরুশ,,

হা সামনে থাকা ব্যক্তিটি আরুশ,, সেই কিডন্যাপ করেছে সায়রাকে,,, আরুশ ধীর পায়ে সায়রার সামনে যায়,, তার তার পাশে বসে,, এতে সায়রা কিছুটা স্বরে বসে,, এতে আরুশ এক তাচ্ছিল্য হাসি দেয়,, তা দেখে সায়রার গা জ্বলে যায়,, সে তখন বলে উঠে,,

সায়রাঃ তোমার সমস্যা কি,,আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছ,, আমি কোথায়?? আমাকে কেন এনেছ এইখানে,,

আরুশঃ আরেহ আরেহ আস্তে আস্তে,, এক সাথে এত প্রশ্ন করলে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিব শুনি,,

সায়রাঃ ফাজলামো করতাসো,,, কোথায় আমি আর কেন আনসো আমায় এইখানে,,

আরুশঃ কোথায় আনসি তা তহ জানি না,, বাট কেন আনসি এইটা বলতে পারি,, আরুশ সায়রার দিকে একটু ঝুঁকে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,,
আমি তোমায় এইখানে হানিমুন করতে আনসি,, যেহেতু আমাদের হানিমুনে করা হয় নি তাই ভাবলাম হানিমুনটা আগে সেরেই ফেলি,, কি বলো,, চোখ টিপ দিয়ে,,

সায়রাঃ মজা করতাসো আমার সাথে,, আর এইসব করে কি প্রমান করতে চাইতাসো যে তুমি আমায় অনেক ভালবাস,,

আরুশঃ প্রমান করতে চাইব কেন,, আমি তহ তোমায় ভালবাসি,,,

সায়রাঃ হাহ,,, ভালবাস!! ভালবাসলে আমার কথা গুলা শুনতা,,, আমায় ভুল বুঝতা না,, আমায় এমন চরিত্রহীনা বলতে পারতা না,, এইসব এই জন্যই তহ করতাসো যাতে তোমার কাছে ফিরে আসি,,, তাহলে শুনে রাখো আমি আর ফিরছি না তোমার কাছে,, কেন না তোমার সাথে আমার মত চরিত্রহীনা মেয়েকে মানায় না,, সে যাই হোক আমি এখন বাসায় যাব,, যেতে দিন আমায়,,

এই বলেই বেডে থেকে রেগে তারাতারি করে নামতে লাগলো সায়রা,, এতক্ষন আরুশ চুপ করে নিরব দর্শকের মত সায়রার সব অভিযোগ শুনছিল কিন্তু এখন সায়রাকে উঠতে দেখে তারাতারি করে হাত টান দিয়ে তাকে বেডে বসিয়ে তার হাত গুলো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে করুন ভাবে বলে,,
আরুশঃ সরি জান আই এম সো সরি,,,
আমি জানি আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি আর আমার অপরাধের এতো সহজে ক্ষমা নেই তাও জানি,,
কিন্তু আমাকে একটা সুযোগ দেও আমি এবার তোমাকে কোন অভিযোগের সুযোগ দিবোনা,, প্রমিস,, কোন কষ্ট দিব না,, অবিশ্বাস করব না,, সব সময় আগলে রাখব,,
প্লিজ আমাকে আর একটি বার সুযোগ দেও,, প্লিজ,,,

সায়রা আরুশের এমন করুন চাহনিতে নিজে আরো দূর্বল হয়ে যাচ্ছে,, দূর্বল না হয়েও উপায় কই,, সে যে আরুশের প্রতি আগে থেকেই দূর্বল,, আরুশের সামনে সে যে নিজেকে শক্ত রাখতে পারে না,, পারে নিজেকে ঠিক রাখতে,, আরুশের চোখের দিকে তাকালেই যে সব ভুলে যায়,, কিন্তু সব কি চাইলেও ভুলা যায়,, তার যে বার,বার আরুশের করা সেই ব্যবহারের কথা মনে পরে যায়,,
সায়রা আরুশের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,,

সায়রাঃ সব কিছু মেনে নেওয়াটা কি এতই সহজ,,আমি তোমাকে কি করে আবার আগের মত মেনে নিবো,, কি করে তোমার করা প্রত্যেকটা ব্যবহার ভুলে যাবো,,
আমি ভেঙ্গে গেছি আরুশ পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছি তোমাকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না,,, তাই এর চেয়ে ভালো তুমি তোমার থাক আর আমায় আমার মত থাকতে দাও,, যেতে দাও আমায়,,

আরুশের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে উঠতে নিলেই পিছন থেকে আরুশ সায়রার হাত আটকিয়ে বলতে লাগে,,
আরুশঃ তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেনা আমি তোমাকে যেতে দিবোনা,,

সায়রা পিছন ফিরে আরুশের দিকে তাকিয়ে বলে,,

সায়রাঃ কি বাচ্চাদের মত কথা বলছ,, কি সত্যি পাগল হয়ে গেছ নাকি,,
আমি তোমার সাথে থাকতে চাইনা তাই বলে কি তুমি আমার সাথে জোর করবে,,
তুমি নিজেকে কি ভাবছো শুনি,, যখন খুশি নিজে থেকে টানবে যখন খুশি দূরে ছুঁড়ে মারবে,, যা খুশি তাই করবেন আর আমি চুপচাপ সব কিছু মেনে নিবো,,না তা কখনই হবে না,,
আমি এখনই চলে যাবো,,

এই বলে সায়রা চলে যেতে নিলে আরুশ সায়রাকে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে নিজের কোলে বসায়,, পিছন থেকে সায়রার কোমড় জরিয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,, তারপর সায়রার কানের কাছে মুখ এনে স্লো ভয়েসে বলতে থাকে,,

আরুশঃ Yes, I have gone mad❤❤
তোমার প্রেমে পাগল হয়ে গেছি আর এই পাগল কে সুস্থ করতে যে শুধু তার সায়রাকে বড্ড প্রয়োজন,,
তাইতো তোমাকে কিডন্যাপ করে এনেছি নিজের কাছে রাখার জন্যে,,নিজের বুকের মাঝে সারাজীবনের জন্য বন্ধি করতে,, প্লাস হানিমুনটাও সেরে ফেলতে,, দুষ্টু হাসি দিয়ে,,

সায়রা এইবার হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে আরুশের দিকে ফিরে রেগে বলতে লাগে,,,
আরুশঃ তোমার না কিডন্যপার হওয়া দরকার ছিলো,, না না শুধু কিডন্যপার না,, দ্যা মাস্টার মাইন্ড কিডন্যাপার হওয়ার দরকার ছিল,,
কারন তোমার স্বভাব একদম গুন্ডাদের মত,, প্লাস দেখতেও গুন্ডাদের মত,, বলেই একটা ভেংচি কায়াতে,,

আরুশ ভ্রু কুচকিয়ে বলে,,
আরুশঃ হোয়াট ডু ইউ মিন বাই গুন্ডাদের মত দেখতে??

সায়রাঃ গুন্ডাদের মত দেখতে মানে গুন্ডাদের মত দেখতে,, হুহ,,

আরুশঃ আমি মোটেও গুন্ডাদের মত দেখতে না,, আই এম আ চার্ম বয়,, জানো আমার উপর কত মেয়ে ক্রাশিত,, এবরোড থাকতে সব মেয়েরা আমি বলতে পাগল ছিল,,

সায়রাঃ হা পাবনার পাগলনিরাই পাবনার পাগলদের উপরই ক্রাশিত মাশিত হয়,,

আর আরুশ দাতঁ বের করে হেসে বলতে লাগে,,,
আরুশঃ আমার প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ,,

সায়রা তখন নাক ফুলিয়ে সামনে ঘাড় ঘুরিয়ে ফেলে কাদোঁ কাদোঁ ফেস করে বির বির করে বলতে লাগে,,,
সায়রাঃ না জানি আব্বু আম্মুকে কি করেছে এই গুন্ডা,, কই আছে কে জানে,, ফোন তহ দিতে পারতাসি না,, ফোন কই কে জানে,,

আরুশ সায়রার ঘাড়ে নিজের থুতনি রেখে মুচকি হেসে সায়রার গালের সাথে গাল লাগিয়ে বলে,,

আরুশঃ তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা জান আমি শ্বশুর আব্বা আর শ্বাশুড়ি আম্মাকে একদম ঠিক ঠাক মত বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসেছি,, আর তাদের জানিয়ে এসেছি যে আমি তোমাকে নিয়ে হানিমুনে যাচ্ছি,, প্রথমে আপত্তি করলেও আমি ঠিক মানিয়ে নিয়েছি,,

সায়রা ভ্রু কুচঁকিয়ে আরোশের দিকে তাকায় তারপর বলতে লাগে,,

সায়রাঃ আমরা কোথায় আছি??

আরুশঃ উহুম তা তহ বলা যাবে না,, টপ সিক্রেট,,

সায়রাঃ আমার মোবাইল কই,,

আরুশঃ আমার কাছে,,

সায়রাঃ দাও তাহলে বাসায় কথা বলবো,,

আরুশঃ উহুম,, আমি আমাদের হানিমুনে কোন ডিস্টার্বন্যাস চাই না,, আর এমনেও ফোন আমার কাছে আর আমার কাছেই থাকবে,,
কারন আপনার কাছে থাকলেই আমার থেকে পালানোর চেষ্টা করবেন,,যা আমি চাইনা,,,

সায়রা বিরবির করে বলতে থাকে,,
সায়রাঃ গুন্ডা জানি কোথা কার,,

আরুশঃ তোমার জামাই এই,,

সায়রাঃ হুহ,, আমাকে যে এইখানে আনলা ভালো কথা,, কিন্তু এখন আমি পড়বোটা কি,, জামা কাপড় তহ কিছুই আনি নাই,, এখন ফ্রেশ হয়ে কি পড়বো শুনি,,,

আরুশঃ কেন জান বাথ টাওয়াল আছে না,, ওইটা পরে থাকবা,, আমি এই তহ,, আমার সামনে আর কিসের লাজ শরম,,
দুষ্টু হাসি দিয়ে

সায়রাঃ কিহহহহহহহহহহহহহ,, চিল্লিয়ে,,

আরুশঃ এত জোরে চিৎকার দেওয়ার কি আসে,, কানের পর্দা ফাটাইয়া দিবা নি,, আমি তহ জাস্ট মজা করতাসিলাম,, আমি আশার আগে সব কিছু বাসা থেকে নিয়ে আসছি,,
কাবার্ডে তোমার আর আমার ড্রেস আসে,, যাও গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসো ততক্ষন আমি খাবার অর্ডার দিয়ে আসি,,

সায়রাঃ হুহ,, ফাজিল পোলা,,
এই বলে সায়রা ধাম ধুম করে গিয়ে কাবার্ড থেকে ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়,, আর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়,,, তা দেখে আরুশ নিজের বুকে হাত দিয়ে বলে,,

আরুশঃ ভাই রে ভাই,, এই মাইয়া তহ এখন একদম বোম হইয়া আসে,, কখন যে ফাইটা যায় কে জানে,, কিন্তু যত যাই হোক হাড় মানলে চলবো না,, সায়রা যদি বোম হয় তাহলে আমিও সেই বোমের জামাই,,, সায়রাকে কিভাবে নিজের কাছে রাখতে হয় তা আমি ভালো করেই জানি,,, আফটার ওল সি ইজ মাই ওয়ান এন্ড অনলি ওয়াইফ,, এই বলে একটা ডেবিল স্মাইল দেয়,,
আর রুমে থেকে বেরিয়ে যায়,,,



#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here