তুমি অতঃপর তুমিই
পর্ব-০৬
Writer Taniya Sheikh
প্রত্যুষ, মধ্যাহ্ন শেষে যখন অপরাহ্ন এলো। তখনই এক কান দুই কান করে ঘটনাটা চলে গেল জানাজানির পর্যায়ে। এমন একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন এ’বাড়ির কেউ ইতোঃপূর্বে হয় নি। বাশারের লিখে যাওয়া চিঠি সর্ব প্রথম নজরে আসে বীণার। বাশার সচারচর বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে না। কিন্তু আজ বেশ বেলা হলো দেখে বীণা কিছুটা শঙ্কা নিয়া ওর ঘরে গিয়েছিল। তার শঙ্কা অবিলম্বে দূরীভূত হলেও বাশারকে পাওয়া গেল না। যখন রুমের কোথাও বাশারের খোঁজ পাওয়া গেল না। ফের শঙ্কিত হলো বীণার মাতৃহৃদয়। ঠিক সেসময় চক্ষুগোচর হয় বালিশের তলে রেখে যাওয়া বাশারের চিঠি।
প্রিয় মা,
অনেক ভাবলাম। ভেবে বুঝলাম নুসরাতকে ছাড়া আমার এ জীবন অচলপ্রায়। ওহ! তোমাকে তো আমার ভালোবাসার মানুষটার নামটাই বলা হয়নি। ওর নাম নুসরাত। হ্যাঁ ইমার বান্ধবী নুসরাত। জানো মা, এই যে লিখছি তার কিছুক্ষণ আগে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মরে যাব। তোমরা সবাই যখন আনন্দে মেতে আছ। আমার হৃদয় জুড়ে যখন যন্ত্রণার লাভা উদ্গিরণ হচ্ছে। বাঁচার জন্য পর্যাপ্ত শ্বাস প্রশ্বাস প্রয়োজন। আমি সেটাও হারিয়ে ফেলেছিলাম৷ দমবন্ধ হয়ে আসছিল মা। সেসময় তোমার এই ভীরু ছেলের হাতটা ধরল নুসরাত। আমাকে বললো পালাবেন? বিশ্বাস করো মা! আমার মনে হচ্ছিল আমি ঘোরে আছি। ঘোর কাটলেই হারিয়ে ফেলব ওকে। আমি নির্বাক, অপলক সিক্ত চোখে চেয়েছিলাম ওর মুখপানে। ঘোর আর কাটল না মা। আমার শ্বাস প্রশ্বাসের গতিও স্বাভাবিক হলো। ওর হাতটা ধরে রাতের আঁধারে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় যাচ্ছি? শুধু জানি বাঁচার আশায় যাচ্ছি। বাঁচার আশার আলো পেয়ে তোমায় এক বুক দুঃখ দিয়ে চলে যাচ্ছি। আমি তোমার সুসন্তান হতে পারলাম না মা। তবে তুমি চাইলে ঠিকই পারতাম। একটিবার আমাকে বুঝলে ঠিকই পারতাম। ক্ষমা করে দিও আমাকে মা।
ইতি
তোমার অধম, নালায়েক সন্তান বাশার।
বীণা চিঠি হাতে অনুভূতিহীন হয়ে বসে ছিল কিছু সময়। হঠাৎ আর্তনাদ করায় বাড়িসুদ্ধ লোক ছুটে আসে সেখানে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বীণা বার বার পুত্রের চলে যাওয়ার শোক কাটাতে না পেরে মূর্ছা যাচ্ছে। গতকালও যে বাড়ির পরিবেশ ছিল রমরমা, আলোকোজ্জ্বল। আজ সেখানে শোক আর গম্ভীরতার ছায়া। দুই মামীসহ অনেক প্রতিবেশীরাই ইমার দিকে আঙ্গুল তুলে নানা কটু কথা বলছে। তারা এতোদিন এই সুযোগের আশায় ছিল যেন। রাগে দুঃখে চোখে জল এসে গেল ইমার। নুসরাতকে সে জীবনের সকল ছোট, বড় সকল ঘটনায় বলেছে, অথচ সে ইমাকে এতোবড় ধোঁকা দিল। ইমার পরিবারের মান সম্মান নষ্ট করতেও কুন্ঠিত বোধ করল না? মনে মনে এসব ভেবে যখন ইমা ফুঁসছিল তখন প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। এলাকার মসজিদে আজানের সুললিত ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ইমা উঠে খালার রুমের সামনে দাঁড়ায়। ঘুমিয়ে আছে তার বীণা খালা। এই খালায় ওদের দুঃসময়ে ঢাল হয়ে পাশে ছিল। বছরের পর বছর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে গেছে। ইমা খালার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে শব্দ করে কেঁদে উঠল। সারাটাদিন না খাওয়ায় বিপি লো বীণার। পায়ের কাছে কারো কান্নার শব্দে চোখ মেলে তাকায় সে। অস্ফুটে শুধায়,
” কে ইমা?
ইমা মাথা নাড়িয়ে উঠে এসে খালার বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। বাচ্চা শিশু যেমনটি মায়ের বুকে লুকিয়ে কাঁদে। বীণা দূর্বল হাতে ইমার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” কাঁদছিস ক্যান?”
” বিশ্বাস করো খালা। বিশ্বাস করো আমি এসবের কিছুই জানি না।”
” আমি জানি।”
” তুমি জানো?” বিস্ময় চোখে মুখ তোলে ইমা। বীণা গম্ভীরমুখে বললো,
” হুমম!”
” কী করে?”
” তোরে আমি পেটে না ধরছি কিন্তু মানুষ তো করছি। তুই তো আমার মা লাগছ। আমার মা আমারে এমন কষ্ট কোনোদিন দিতো না।” বীণার চোখের কোনা দিয়ে জল পড়ে। ইমা সে জল মুছে বলে,
” তুমি ভরসা রাখো। আমি তোমার পোলারে খুইজ্জা আনুম। যদি চাও ওরে আবার বিয়া দিমু। আমারে তো চিনো কও? আমি যা কই তাই করি।”
বীণা মাথা নাড়ায়। ইমার কপালে চুমু দিয়ে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। কষ্টটা কিছুটা যেন প্রশমিত হলো বীণার। রাতে বীণাকে খাওয়ানো শেষ করে রুমের বাইরে আসে ইমা। সাবিহা সহ আরও দু’তিন জন মহিলা ইমাকে লক্ষ্য করে কটুবাক্য বলা শুরু করল। তাদের উস্কে দিতে সাবিহা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
” জানে ওর কপালে স্বামী সুখ নাই তাইতো আরেক মাইয়্যার কপাল খাইল। বান্ধবী দিয়া আমাগো সহজ সরল পোলাডারে বাড়ির বাহির করল। তোমরাই কও আমাগো বাশার কী এমন পোলা নি?”
” না! না! হাজারে একটা হয় বাশারের লাহান।” প্রথম প্রতিবেশীনি বললো।
” তয়! সব এই ছেরির দোষ। নিজে তো হারাদিন মর্দা সাইজ্জা এলাকায় গুন্ডাগিরি করে। মাইয়্যার কোনো গুন আছে নি ওর মধ্যে। থাকলে তো বান্ধবীর বদলে নিজেই ভাগত।”
” মামি!”
” ও মাগ্গো! আমি তো ডরাইছি। ঐ ছেরি চোখ দেহাস কারে? চোখ গাল্যা দিমু এক্কারে। বান্ধবী লাগাইয়া আমাগো মান সম্মান শেষ কইরা আবার চোপা মারাস? দেখছনি তোমরা কতো নির্লজ্জ এইডা?”
ইমার ছোট মামি নিহার সহ বাকি প্রতিবেশীনিরা সাবিহার কথায় সায় দিয়ে যা নয় তাই বলে অপমান করল। ইমা আজ অন্যদিনের মতো জ্বলে উঠতে পারল না। মন খারাপের দেহটা তার বড়োই অসাড় অসাড় ঠেকছে। একনদী জল চোখে নিয়ে চলে এলো বাড়ির পেছনের শূন্য স্থানটাই। মুখে হাত রেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে ইমা। সে খেয়াল করে নি কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তার মা। মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা বিভার কোনোদিনই ছিল না, তেমনি আজও নেই। চুপচাপ মেয়েকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে বসে রইল। নিরবতা অনেক বড় সান্ত্বনা হয়ে দাঁড়ায় মাঝে মাঝে, মাঝে মাঝে দুঃখ প্রশমনের উপায় হয়। রাত ঠিক পৌনে আটটার দিকে ইমার মোবাইলে অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ আসল। সেখানে লেখা ছিল বাশার, নুসরাতকে পেতে হলে চুপচাপ উল্লেখিত ঠিকানায় পৌঁছে যাও। ইমা ক্ষণকাল দেরী না করে বাসার কাপড়েই বেরিয়ে গেল।
নুসরাত, বাশার কিছুক্ষণ আগেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। বিয়েটা তাদের সহজ ছিল না। তবে শেষমেশ যে তারা এক হতে পেরেছে এতেই সব কষ্ট দূর হয়েছে। লাজুক বধূ রূপে ঠোঁট টিপে দাঁড়িয়ে আছে নুসরাত। তার পাশে হাস্যোজ্জ্বল বাশার। নুসরাতের হাতটা এক দন্ড ছাড়তে নারাজ সে। নব্য দম্পতীর এই দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা দূর থেকে অবলোকন করছে শান এবং মোবারক। মোবারকের মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিভিন্ন মুভিতে সে দেখেছে নায়িকা স্ত্রীকে তার প্রেমিকের সাথে মেলাতে চায় নায়ক। কিন্তু সেটা তো মুভি। বাস্তবতায় এসব হয় নাকি? মোবারক এবার মুখ খুলল। বললো,
” ছবিতে দেখেছি আর আজ বাস্তবে। চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে বড়োই কষ্ট লাগছে স্যার!” সত্যিই কষ্ট পাচ্ছে মোবারক। তার মুখখানা সেই প্রকাশই করছে। শান কঠিন দৃষ্টিতে মোবারকের দিকে চাইতে মোবারক চোখ মুছল বললো,
” আমি বুঝি স্যার আপনার কেমন লাগছে। নিজের স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দিলেন কেমনে স্যার? বেডারে আমার হাতে তুলে দিতেন। খুন করে ফেলতাম। তবুও এমন করাটা আপনার উচিত হয়নি স্যার।”
শান এবার সোজা হয়ে মোবারকের সামনে দাঁড়াল। পকেট থেকে হাতটা বের করে প্রচন্ড জোরে চড় বসিয়ে দিল মোবারকের গালে। চড়ের শব্দে দূরে দাঁড়ানো বাশার,নুসরাত হতবাক। শান মোবারকের কলার ধরে টেনে আড়াল নিয়ে বলল,
” আমার স্ত্রী হুমম! আমার স্ত্রীর নাম কী ছিল মোবারক?”
” নুসরাত!” শানের এই রাগী রূপকে ভয় পায় মোবারক। স্বাভাবিক অবস্থায় যতোটা শান্ত সে, রাগলে তারচেয়ে অনেক বেশিই অশান্ত হয়ে ওঠে। গালে হাত রেখে ভীরু চোখে চেয়ে রইল মোবারক। শান উঁচু গলায় বললো,
” কী? জবাব দে।”
” না মানে। ইসরাত জাহান। কিন্তু লজিক নিয়ে ভাবেন স্যার। প্রাপ্ত ঠিকানায় ইসরাত জাহান নামে কেউ ছিল না। কিন্তু পেলাম নুসরাত জাহানকে। ভাবলাম যে মেয়ে বিয়ে করেই পালাতে পারে সে নামটাও নিশ্চয়ই সঠিক দেবে না। ওই সময় হয়তো ইসরাত জাহানের কাছাকাছি নুসরাত জাহান নামটা মনে পড়েছিল তাই ওটা দিয়েছে। লজিক স্যার।”
শান মোবারকের ঘার ধরে বললো,
” লজিক! তোর এই ফালতু মার্কা লজিক নেক্সট টাইম আমার সামনে বলবি না। গাধা কোথাকার।”
শান মোবারককে ছেড়ে মোবাইল অন করে দুটো লেখা কাগজের পিকচার দেখায়। বলে,
” ভালো করে দেখ। মিল পাস কোথাও?”
সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে দেখল মোবারক। একটাতে নুসরাতের হাতের লেখা অন্যটাতে তার স্যারের স্ত্রী ইসরাত জাহানের। বিস্তর ফারাক লেখার স্টাইলে। ভুল উপলব্ধি করতে পেরে পাংশু বর্ণ ধারণ করল মোবারকের মুখ। মিনমিনে স্বরে বললো,
” সরি স্যার। মিসটেক হয়ে গেছে।”
” সরি বললেই হলো? তোর সামান্য ভুলের জন্য কী থেকে কী হয়ে যেত ভাবতে পারিস? গাধা! আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ। আউট।”
মোবারক তক্ষুনি সটকে পড়ল শানের সামনে থেকে। মিনিট দশেকের আগে আর সে এদিক আসছে না। শান মোবাইলে তোলা প্রথম ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইল। এটা কাবিননামার ফটো। ইসরাত জাহান নামে সাইন করা স্ক্রিনে আঙ্গুলে ছুঁয়ে বললো,
” কতোদিন পালিয়ে থাকবে তুমি? এই চোর পুলিশ খেলা শুরু করেছ তুমি আর সেটা শেষ করব আমি। ধরা দিতেই হবে। ইসরাত জাহান! এই একটা নামে আজকাল দিনরাত পার করছি আমি। যতো দেরী করাবে ততই ভুগবে তুমি। কজ আ’ম স্লোলি ফল ইন লাভ উইথ ইউ।”
শানের ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। কী থেকে কী হচ্ছে সবই বোধের বাইরে। তবে যাই হচ্ছে তাতে আলাদা অনুভূতি অনুভব করছে সে। দারুন সে অনুভূতি। বৃষ্টি শেষে হিমেল হাওয়ার ন্যায়, শীতের সকালের মিষ্টি রোদের মতো।
ইমা ঠিকানা মতো স্থানে এসে বাশার এবং নুসরাতকে পাশাপাশি হাতধরাধরি করে দাঁড়ান দেখল। এদের কারনে খালার অসুস্থ, দুঃখী মুখখানি আর নিজের জন্য শোনা অশালীন কথা মনে করে ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসতে লাগল সে। হাত মুঠ করে রাগত ভঙ্গিতে এগিয়ে গেল ওদের সামনে। বাশার, নুসরাত এই মুহূর্তে ইমাকেই প্রত্যাশা করছিল। প্রত্যাশা পূরণ হলেও খুশিটুকু তারা জাহির করতে পারল না। ওরা খেয়াল করল ইমার গোলাপী ফর্সা মুখটায় ছেয়ে আছে একরাশ ক্ষিপ্ততা। সেটা প্রকাশ্যে আসতে অবশ্য সময় লাগল না। নববধূ নুসরাতের গালে কষে চড় দিল ইমা। নুসরাত গালে হাত দিয়ে মুখ নুইয়ে রইল। বাশার ওদের মাঝখানে আসতেই ইমা তাকেও ছাড়ল না। বাশারকে কিল,লাথি, চড় মেরে সে চিৎকার করে বললো,
” এমন কেন করলি তোরা? কেন আমাদের অপমান করলি? নুসরাত তুই এভাবে ধোঁকা দিলি আমাকে। এভাবে?”
” ইমা কথা শোন একবার। প্লীজ!”
বাশার অনুনয় বিনয় করেও ইমাকে শান্ত করতে পারছে না। আশেপাশের মানুষদের মধ্যে কৌতুহল তৈরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে ভীড় জমছে ওদের লক্ষ্য করে। ইমা বাশারের হাত টেনে ধরে পেছন ফিরতেই ধূসর রঙের টিশার্ট পরিহিত মানুষটার বুকে কপাল ঠেকে। দু’কদম সরে দাঁড়ায় ইমা। মুখ তুলতেই নিমেষেই রাগ উড়ে যায়। শানের স্থির, কঠিন দৃষ্টিতে বন্দী হয়ে ইমা নির্বাক রয় কিছুক্ষণ। ইমাকে ওমন চুপ হতে দেখে নুসরাত, বাশার একে অপরকে দেখছে। বিরক্ত গলায় ঢেলে শান প্রশ্ন করে ইমাকে,
” সমস্যা কী তোমার?”
” ভাই ওই আমার বোন ইমা।” বাশারের কথা শুনে শান এই প্রথম ইমাকে আপাদমস্তক দেখল। ইমার অপলক চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে ফের বললো,
” হ্যালো!”
তন্ময়তা ভাঙতেই দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করল ইমা। অনবরত ঢোক গিলছে। অস্থিরতা প্রকাশ পাচ্ছে তার দেহে। সেটা লুকানোর অভিপ্রায়ে আবার গলা উঁচু করে বললো,
” বাশার ভাই বাড়ি চল। আজই তোর বিয়ে দেব। চল।” ইমা অগ্রসর হতেই সামনে এসে দাঁড়াল শান। ভ্রুকুটি করে বললো,
” এই মেয়ে সমস্যা কী তোমার? বেসিক আদব শিক্ষা কী পাও নাই তুমি? দেখছ এতো মানুষ জড়ো হয়েছে তবুও অসভ্যতা দেখিয়ে যাচ্ছ? হাত ছাড়ো ওর।”
” কাইষ্টার ঘরে কাইষ্টা। জীবনে ক্রাশ খাইলাম সেটাও তোর মতো কাইষ্টার উপরে। আমাকে অসভ্য বলিস?” ইমা মনে মনে বলে ঠোঁট ফুলাতে লাগল। শান মৃদু ধমক দিয়ে বললো,
” বয়স কতো তোমার? দুই বছর নাকি আড়াই বছর হু? বিহেভ এমন কেন?”
” দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু? সরে দাঁড়ান সামনে থেকে। ” অন্যদিকে চেয়েই জবাব দিল ইমা। শান বলল,
” এতোক্ষণ যেটা করছিলে সেটা ভালো হচ্ছিল? জাহিল কোথাকার।”
দাঁতে দাঁত পিষে হাত মুঠ করে ইমা বাশারের দিকে তাকিয়ে বললো,
” বাশার ভাই এই লোককে চুপ থাকতে বল।”
” এতোবড় মেয়ে হয়ে আচরণ দেখো। এই বাশার! তোমার বোন কী অপুষ্টিতে আক্রান্ত?” বাশার একবার ইমার দিকে তো আরেকবার শানের দিকে অসহায় চোখে তাকায়।
ইমাকে রাগে লাল হতে দেখে শান চোয়াল ফুলিয়ে পুনরায় বললো,
” আমার তো মনে হয় ফুল এবনরমাল। বেসিক ভদ্রতাবোধটুকুও জানে না সে।”
ইমা রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে মনে মনে ভাবল,
” ধুরু তোর ক্রাশের নিকুচি করি। ক্রাশের মাইরে বাপ। হালারে আজ খাইছি।” ইমা চড় দেওয়া জন্য হাত উঠাতেই শান শক্ত মুঠে পুড়ে নেয় হাতটা। এক ঝটকায় পিঠের সাথে মুচড়ে ধরে বলে,
” সবাইকে বাশার পেয়েছ? হাত ভেঙে ফেলব যদি ফের কারো উপর হাত উঠিয়েছ তো?”
” হাত ছাড় হারামজাদা। তোর গুষ্টির ষষ্টি করব। হাতটা একবার ছেড়ে দিয়ে দ্যাখ।”
” ওহ রিয়েলি! এতো তেজ তোমার? এই বাশার তোমার বোনকে শিক্ষা দাও নাই? মেয়েদের লিমিটেড তেজ থাকা ভালো তবে আনলিমিটেড নয়।”
” আবে হালা ছাড় আমার হাত। ছাড়! ইমাকে চিনিস না তুই? তোকে তো,,! শান হাতটা আরও জোরে মুচড়ে ধরতেই ইমা ব্যথায় চাপা আর্তনাদ করে থেমে যায়।
” সিরিয়াসলি! হেই ইজ শি একচুয়েলি এবনরমাল? মোবারক গাড়ি বের কর। আজ এক্ষুনি এটাকে হেমায়েতপুর ভর্তি করব।”
” বাশার! আমাকে ছাড়তে বল! ছাড় বলছি।”
ইমা এক হাত, পা নাড়িয়েও শানকে আঘাত করতে না পেরে রাগে,জেদে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। শান ইমার হাত আগের চেয়ে জোরে মুচড়ে ধরতেই ইমা ব্যথায় কুঁকড়ে নুড়ে পড়ে। ইমার কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দিল শান। ইমা হাঁটু মুড়ে মাথা নুইয়ে বসে রইল। মোবারক আশেপাশের ভীর ভেঙে এসে দাঁড়াল শানের পাশে। ইমার অভদ্রতায় কাল শান, মোবারক দুজনই রুষ্ট হয়েছিল। স্বভাবতই ইমাকে নাস্তানাবুদ হতে দেখে বেশ খুশি হল মোবারক। শানকে চাপা স্বরে বললো,
” ঠিক হয়েছে। বেয়াদব মেয়ে। মেয়ে মানুষ এমন হয় আগে জানতাম না। কী ডেঞ্জারাস! আপনি সময়মতো না আসলে তো বেচারী নুসরাত ভাবি!” নুসরাতকে ভাবি বলে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে মোবারক। শানের দিকে তাকাতেই দেখল শান রেগে তাকিয়ে আছে। মোবারক বোকার মতো হাসল। বললো,
” বাশার ভাইয়ের বউ সেই হিসেবে ভাবি স্যার।”
শান সামনে ফিরতেই প্রচন্ড গতিতে ছুটে আসা একটা চটি তার পাশে দাঁড়ান মোবারকের গায়ে পড়ল। ইমা দেখল তার লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে। সে অন্য পায়ের চটি খুলতেই তার হাতে কেউ পারা দিয়ে ধরল। ব্যথার চেয়ে জেদ বেশি সে’সময় ইমার ভেতর। হাত ছাড়াতে চেয়ে হাতের চামড়া ছিলে যাচ্ছে তবুও হাত টানছে সে। মুখ তুলে দেখল শান নির্বিকার পকেটে হাত পুড়ে দাঁড়িয়ে। ইমা এক হাত দিয়ে শানের পায়ে আঘাত করতে করতে বললো,
” কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছিস তুই জানিস না কাইষ্টা খান। তোর জীবন যদি ভাঁজা ভাঁজা না করছি?,,,
শান ইমার চোখে চোখ রেখে মুচকি হাসল। শানের এই হাসি স্বাভাবিক নয়। ইমার কথা শেষ করতে দিল না। একপ্রকার উপেক্ষা, অগ্রাহ্য করে মোবারককে ডাকল। বেচারা মোবারক অপ্রত্যাশিত চটির বারি খেয়ে ইমার উপর বেশ রেগে আছে। ইমার চোখের জলে একটু কষ্টও পেল না সে। শান গাড়ি এদিকে আনতে বললে মোবারক গাড়ি আনতে যায়। নুসরাত এগিয়ে এসে শানকে অনুনয় করে বলে,
” মাফ করে দিন ভাইয়্যা। ও আসলে একটু অন্যরকম।”
” হুমম এবনরমাল।” গম্ভীর জবাব শানের
” না মানে! প্লিজ ভাইয়্যা ছেড়ে দিন ও ব্যথা পাচ্ছে। ”
” সরি বলতে বলো?”
” সরি আমার চটি। তোকে সরি ইমা বলবে? হাতটা ছেড়ে কথা বল।” ইমা ঝাঁঝিয়ে উঠতেই আরও জোরে হাতের উপর পা রাখল শান। ইমা দাঁত কামড়ে চুপ রইল ব্যথায়। শান ঝুঁকে বললো,
” আমার সাধ্যে থাকলে এক্ষুনী তোমার হাত দু’টো কেটে ফেলতাম। ভালোই ভালোই আমাদের সবাইকে সরি বলো ছেড়ে দিচ্ছি।”
ইমা মুখ শক্ত করে ঘুরিয়ে নেয়। সে সরি কোনোদিন বলবে না। তাতে হাতের ব্যথায় মরতে হলেও মরবে। ব্যথার চোটে মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে ইমার। নুসরাত ইমাকে বুঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বাশারের বুকে মাথা রেখে অগত্যা তাকে কাঁদতে হয় বান্ধবীর কষ্ট দেখে। গাড়ি আসতেই শান সহ সবাই গাড়িতে চড়ে বসে। ইমার মুখ, হাত গাড়িতে রাখা কাপড়ে বেঁধে শানের পাশে বসিয়ে রাখা হয়েছে। হাতের ব্যথায়,জেদে ইমা শক্ত হয়ে বসা। অতিরিক্ত রাগ তাকে নির্বাক হতে বাধ্য করেছে। শান গাড়ির জানালা খুলে সিগারেট ধরায়। সিগারেটের উৎকট গন্ধ ইমা আগাগোড়াই সহ্য করতে পারে না। শানের সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধে পেট মুচড়ে বমি আসার উপক্রম। নুসরাত দেখেও নিরুপায়। শান কে ইমা না জানলেও সে এবং বাশার জেনেছে। সুতরাং কিছু বলতে চেয়েও সাহসে কুলাচ্ছে না ওদের। তারউপর ইমার পাগলামীতে বাধ্য হয়েই নত হতে হচ্ছে শানের সামনে। গাড়ি চলছে আশেপাশের বাড়ি,ঘর পেছনে ফেলে। গন্তব্য বাশারদের বাড়ি। ইমার ভেতরটা ভয়ে নত হলেও বাহিরে সে এখনও জেদ ধরে রেখেছে। মনে মনে একবার এই লোককে বাগে পাওয়ার বাসনা। মূর্তির মতো শক্ত হয়ে বসে আছে ইমা। পাশে বসা শানের প্রতি অজস্র, সহস্র ঘৃণা পুষে। ভালোলাগাটা এখন কেবলই ঘৃণায় ভরে উঠেছে। মস্তিষ্ক প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত।
তুমি অতঃপর তুমিই
পর্ব-০৬
Writer Taniya Sheikh
প্রত্যুষ, মধ্যাহ্ন শেষে যখন অপরাহ্ন এলো। তখনই এক কান দুই কান করে ঘটনাটা চলে গেল জানাজানির পর্যায়ে। এমন একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন এ’বাড়ির কেউ ইতোঃপূর্বে হয় নি। বাশারের লিখে যাওয়া চিঠি সর্ব প্রথম নজরে আসে বীণার। বাশার সচারচর বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে না। কিন্তু আজ বেশ বেলা হলো দেখে বীণা কিছুটা শঙ্কা নিয়া ওর ঘরে গিয়েছিল। তার শঙ্কা অবিলম্বে দূরীভূত হলেও বাশারকে পাওয়া গেল না। যখন রুমের কোথাও বাশারের খোঁজ পাওয়া গেল না। ফের শঙ্কিত হলো বীণার মাতৃহৃদয়। ঠিক সেসময় চক্ষুগোচর হয় বালিশের তলে রেখে যাওয়া বাশারের চিঠি।
প্রিয় মা,
অনেক ভাবলাম। ভেবে বুঝলাম নুসরাতকে ছাড়া আমার এ জীবন অচলপ্রায়। ওহ! তোমাকে তো আমার ভালোবাসার মানুষটার নামটাই বলা হয়নি। ওর নাম নুসরাত। হ্যাঁ ইমার বান্ধবী নুসরাত। জানো মা, এই যে লিখছি তার কিছুক্ষণ আগে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মরে যাব। তোমরা সবাই যখন আনন্দে মেতে আছ। আমার হৃদয় জুড়ে যখন যন্ত্রণার লাভা উদ্গিরণ হচ্ছে। বাঁচার জন্য পর্যাপ্ত শ্বাস প্রশ্বাস প্রয়োজন। আমি সেটাও হারিয়ে ফেলেছিলাম৷ দমবন্ধ হয়ে আসছিল মা। সেসময় তোমার এই ভীরু ছেলের হাতটা ধরল নুসরাত। আমাকে বললো পালাবেন? বিশ্বাস করো মা! আমার মনে হচ্ছিল আমি ঘোরে আছি। ঘোর কাটলেই হারিয়ে ফেলব ওকে। আমি নির্বাক, অপলক সিক্ত চোখে চেয়েছিলাম ওর মুখপানে। ঘোর আর কাটল না মা। আমার শ্বাস প্রশ্বাসের গতিও স্বাভাবিক হলো। ওর হাতটা ধরে রাতের আঁধারে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় যাচ্ছি? শুধু জানি বাঁচার আশায় যাচ্ছি। বাঁচার আশার আলো পেয়ে তোমায় এক বুক দুঃখ দিয়ে চলে যাচ্ছি। আমি তোমার সুসন্তান হতে পারলাম না মা। তবে তুমি চাইলে ঠিকই পারতাম। একটিবার আমাকে বুঝলে ঠিকই পারতাম। ক্ষমা করে দিও আমাকে মা।
ইতি
তোমার অধম, নালায়েক সন্তান বাশার।
বীণা চিঠি হাতে অনুভূতিহীন হয়ে বসে ছিল কিছু সময়। হঠাৎ আর্তনাদ করায় বাড়িসুদ্ধ লোক ছুটে আসে সেখানে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বীণা বার বার পুত্রের চলে যাওয়ার শোক কাটাতে না পেরে মূর্ছা যাচ্ছে। গতকালও যে বাড়ির পরিবেশ ছিল রমরমা, আলোকোজ্জ্বল। আজ সেখানে শোক আর গম্ভীরতার ছায়া। দুই মামীসহ অনেক প্রতিবেশীরাই ইমার দিকে আঙ্গুল তুলে নানা কটু কথা বলছে। তারা এতোদিন এই সুযোগের আশায় ছিল যেন। রাগে দুঃখে চোখে জল এসে গেল ইমার। নুসরাতকে সে জীবনের সকল ছোট, বড় সকল ঘটনায় বলেছে, অথচ সে ইমাকে এতোবড় ধোঁকা দিল। ইমার পরিবারের মান সম্মান নষ্ট করতেও কুন্ঠিত বোধ করল না? মনে মনে এসব ভেবে যখন ইমা ফুঁসছিল তখন প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। এলাকার মসজিদে আজানের সুললিত ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ইমা উঠে খালার রুমের সামনে দাঁড়ায়। ঘুমিয়ে আছে তার বীণা খালা। এই খালায় ওদের দুঃসময়ে ঢাল হয়ে পাশে ছিল। বছরের পর বছর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে গেছে। ইমা খালার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে শব্দ করে কেঁদে উঠল। সারাটাদিন না খাওয়ায় বিপি লো বীণার। পায়ের কাছে কারো কান্নার শব্দে চোখ মেলে তাকায় সে। অস্ফুটে শুধায়,
” কে ইমা?
ইমা মাথা নাড়িয়ে উঠে এসে খালার বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। বাচ্চা শিশু যেমনটি মায়ের বুকে লুকিয়ে কাঁদে। বীণা দূর্বল হাতে ইমার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” কাঁদছিস ক্যান?”
” বিশ্বাস করো খালা। বিশ্বাস করো আমি এসবের কিছুই জানি না।”
” আমি জানি।”
” তুমি জানো?” বিস্ময় চোখে মুখ তোলে ইমা। বীণা গম্ভীরমুখে বললো,
” হুমম!”
” কী করে?”
” তোরে আমি পেটে না ধরছি কিন্তু মানুষ তো করছি। তুই তো আমার মা লাগছ। আমার মা আমারে এমন কষ্ট কোনোদিন দিতো না।” বীণার চোখের কোনা দিয়ে জল পড়ে। ইমা সে জল মুছে বলে,
” তুমি ভরসা রাখো। আমি তোমার পোলারে খুইজ্জা আনুম। যদি চাও ওরে আবার বিয়া দিমু। আমারে তো চিনো কও? আমি যা কই তাই করি।”
বীণা মাথা নাড়ায়। ইমার কপালে চুমু দিয়ে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। কষ্টটা কিছুটা যেন প্রশমিত হলো বীণার। রাতে বীণাকে খাওয়ানো শেষ করে রুমের বাইরে আসে ইমা। সাবিহা সহ আরও দু’তিন জন মহিলা ইমাকে লক্ষ্য করে কটুবাক্য বলা শুরু করল। তাদের উস্কে দিতে সাবিহা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
” জানে ওর কপালে স্বামী সুখ নাই তাইতো আরেক মাইয়্যার কপাল খাইল। বান্ধবী দিয়া আমাগো সহজ সরল পোলাডারে বাড়ির বাহির করল। তোমরাই কও আমাগো বাশার কী এমন পোলা নি?”
” না! না! হাজারে একটা হয় বাশারের লাহান।” প্রথম প্রতিবেশীনি বললো।
” তয়! সব এই ছেরির দোষ। নিজে তো হারাদিন মর্দা সাইজ্জা এলাকায় গুন্ডাগিরি করে। মাইয়্যার কোনো গুন আছে নি ওর মধ্যে। থাকলে তো বান্ধবীর বদলে নিজেই ভাগত।”
” মামি!”
” ও মাগ্গো! আমি তো ডরাইছি। ঐ ছেরি চোখ দেহাস কারে? চোখ গাল্যা দিমু এক্কারে। বান্ধবী লাগাইয়া আমাগো মান সম্মান শেষ কইরা আবার চোপা মারাস? দেখছনি তোমরা কতো নির্লজ্জ এইডা?”
ইমার ছোট মামি নিহার সহ বাকি প্রতিবেশীনিরা সাবিহার কথায় সায় দিয়ে যা নয় তাই বলে অপমান করল। ইমা আজ অন্যদিনের মতো জ্বলে উঠতে পারল না। মন খারাপের দেহটা তার বড়োই অসাড় অসাড় ঠেকছে। একনদী জল চোখে নিয়ে চলে এলো বাড়ির পেছনের শূন্য স্থানটাই। মুখে হাত রেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে ইমা। সে খেয়াল করে নি কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তার মা। মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা বিভার কোনোদিনই ছিল না, তেমনি আজও নেই। চুপচাপ মেয়েকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে বসে রইল। নিরবতা অনেক বড় সান্ত্বনা হয়ে দাঁড়ায় মাঝে মাঝে, মাঝে মাঝে দুঃখ প্রশমনের উপায় হয়। রাত ঠিক পৌনে আটটার দিকে ইমার মোবাইলে অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ আসল। সেখানে লেখা ছিল বাশার, নুসরাতকে পেতে হলে চুপচাপ উল্লেখিত ঠিকানায় পৌঁছে যাও। ইমা ক্ষণকাল দেরী না করে বাসার কাপড়েই বেরিয়ে গেল।
নুসরাত, বাশার কিছুক্ষণ আগেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। বিয়েটা তাদের সহজ ছিল না। তবে শেষমেশ যে তারা এক হতে পেরেছে এতেই সব কষ্ট দূর হয়েছে। লাজুক বধূ রূপে ঠোঁট টিপে দাঁড়িয়ে আছে নুসরাত। তার পাশে হাস্যোজ্জ্বল বাশার। নুসরাতের হাতটা এক দন্ড ছাড়তে নারাজ সে। নব্য দম্পতীর এই দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা দূর থেকে অবলোকন করছে শান এবং মোবারক। মোবারকের মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিভিন্ন মুভিতে সে দেখেছে নায়িকা স্ত্রীকে তার প্রেমিকের সাথে মেলাতে চায় নায়ক। কিন্তু সেটা তো মুভি। বাস্তবতায় এসব হয় নাকি? মোবারক এবার মুখ খুলল। বললো,
” ছবিতে দেখেছি আর আজ বাস্তবে। চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে বড়োই কষ্ট লাগছে স্যার!” সত্যিই কষ্ট পাচ্ছে মোবারক। তার মুখখানা সেই প্রকাশই করছে। শান কঠিন দৃষ্টিতে মোবারকের দিকে চাইতে মোবারক চোখ মুছল বললো,
” আমি বুঝি স্যার আপনার কেমন লাগছে। নিজের স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দিলেন কেমনে স্যার? বেডারে আমার হাতে তুলে দিতেন। খুন করে ফেলতাম। তবুও এমন করাটা আপনার উচিত হয়নি স্যার।”
শান এবার সোজা হয়ে মোবারকের সামনে দাঁড়াল। পকেট থেকে হাতটা বের করে প্রচন্ড জোরে চড় বসিয়ে দিল মোবারকের গালে। চড়ের শব্দে দূরে দাঁড়ানো বাশার,নুসরাত হতবাক। শান মোবারকের কলার ধরে টেনে আড়াল নিয়ে বলল,
” আমার স্ত্রী হুমম! আমার স্ত্রীর নাম কী ছিল মোবারক?”
” নুসরাত!” শানের এই রাগী রূপকে ভয় পায় মোবারক। স্বাভাবিক অবস্থায় যতোটা শান্ত সে, রাগলে তারচেয়ে অনেক বেশিই অশান্ত হয়ে ওঠে। গালে হাত রেখে ভীরু চোখে চেয়ে রইল মোবারক। শান উঁচু গলায় বললো,
” কী? জবাব দে।”
” না মানে। ইসরাত জাহান। কিন্তু লজিক নিয়ে ভাবেন স্যার। প্রাপ্ত ঠিকানায় ইসরাত জাহান নামে কেউ ছিল না। কিন্তু পেলাম নুসরাত জাহানকে। ভাবলাম যে মেয়ে বিয়ে করেই পালাতে পারে সে নামটাও নিশ্চয়ই সঠিক দেবে না। ওই সময় হয়তো ইসরাত জাহানের কাছাকাছি নুসরাত জাহান নামটা মনে পড়েছিল তাই ওটা দিয়েছে। লজিক স্যার।”
শান মোবারকের ঘার ধরে বললো,
” লজিক! তোর এই ফালতু মার্কা লজিক নেক্সট টাইম আমার সামনে বলবি না। গাধা কোথাকার।”
শান মোবারককে ছেড়ে মোবাইল অন করে দুটো লেখা কাগজের পিকচার দেখায়। বলে,
” ভালো করে দেখ। মিল পাস কোথাও?”
সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে দেখল মোবারক। একটাতে নুসরাতের হাতের লেখা অন্যটাতে তার স্যারের স্ত্রী ইসরাত জাহানের। বিস্তর ফারাক লেখার স্টাইলে। ভুল উপলব্ধি করতে পেরে পাংশু বর্ণ ধারণ করল মোবারকের মুখ। মিনমিনে স্বরে বললো,
” সরি স্যার। মিসটেক হয়ে গেছে।”
” সরি বললেই হলো? তোর সামান্য ভুলের জন্য কী থেকে কী হয়ে যেত ভাবতে পারিস? গাধা! আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ। আউট।”
মোবারক তক্ষুনি সটকে পড়ল শানের সামনে থেকে। মিনিট দশেকের আগে আর সে এদিক আসছে না। শান মোবাইলে তোলা প্রথম ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইল। এটা কাবিননামার ফটো। ইসরাত জাহান নামে সাইন করা স্ক্রিনে আঙ্গুলে ছুঁয়ে বললো,
” কতোদিন পালিয়ে থাকবে তুমি? এই চোর পুলিশ খেলা শুরু করেছ তুমি আর সেটা শেষ করব আমি। ধরা দিতেই হবে। ইসরাত জাহান! এই একটা নামে আজকাল দিনরাত পার করছি আমি। যতো দেরী করাবে ততই ভুগবে তুমি। কজ আ’ম স্লোলি ফল ইন লাভ উইথ ইউ।”
শানের ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। কী থেকে কী হচ্ছে সবই বোধের বাইরে। তবে যাই হচ্ছে তাতে আলাদা অনুভূতি অনুভব করছে সে। দারুন সে অনুভূতি। বৃষ্টি শেষে হিমেল হাওয়ার ন্যায়, শীতের সকালের মিষ্টি রোদের মতো।
ইমা ঠিকানা মতো স্থানে এসে বাশার এবং নুসরাতকে পাশাপাশি হাতধরাধরি করে দাঁড়ান দেখল। এদের কারনে খালার অসুস্থ, দুঃখী মুখখানি আর নিজের জন্য শোনা অশালীন কথা মনে করে ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসতে লাগল সে। হাত মুঠ করে রাগত ভঙ্গিতে এগিয়ে গেল ওদের সামনে। বাশার, নুসরাত এই মুহূর্তে ইমাকেই প্রত্যাশা করছিল। প্রত্যাশা পূরণ হলেও খুশিটুকু তারা জাহির করতে পারল না। ওরা খেয়াল করল ইমার গোলাপী ফর্সা মুখটায় ছেয়ে আছে একরাশ ক্ষিপ্ততা। সেটা প্রকাশ্যে আসতে অবশ্য সময় লাগল না। নববধূ নুসরাতের গালে কষে চড় দিল ইমা। নুসরাত গালে হাত দিয়ে মুখ নুইয়ে রইল। বাশার ওদের মাঝখানে আসতেই ইমা তাকেও ছাড়ল না। বাশারকে কিল,লাথি, চড় মেরে সে চিৎকার করে বললো,
” এমন কেন করলি তোরা? কেন আমাদের অপমান করলি? নুসরাত তুই এভাবে ধোঁকা দিলি আমাকে। এভাবে?”
” ইমা কথা শোন একবার। প্লীজ!”
বাশার অনুনয় বিনয় করেও ইমাকে শান্ত করতে পারছে না। আশেপাশের মানুষদের মধ্যে কৌতুহল তৈরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে ভীড় জমছে ওদের লক্ষ্য করে। ইমা বাশারের হাত টেনে ধরে পেছন ফিরতেই ধূসর রঙের টিশার্ট পরিহিত মানুষটার বুকে কপাল ঠেকে। দু’কদম সরে দাঁড়ায় ইমা। মুখ তুলতেই নিমেষেই রাগ উড়ে যায়। শানের স্থির, কঠিন দৃষ্টিতে বন্দী হয়ে ইমা নির্বাক রয় কিছুক্ষণ। ইমাকে ওমন চুপ হতে দেখে নুসরাত, বাশার একে অপরকে দেখছে। বিরক্ত গলায় ঢেলে শান প্রশ্ন করে ইমাকে,
” সমস্যা কী তোমার?”
” ভাই ওই আমার বোন ইমা।” বাশারের কথা শুনে শান এই প্রথম ইমাকে আপাদমস্তক দেখল। ইমার অপলক চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে ফের বললো,
” হ্যালো!”
তন্ময়তা ভাঙতেই দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করল ইমা। অনবরত ঢোক গিলছে। অস্থিরতা প্রকাশ পাচ্ছে তার দেহে। সেটা লুকানোর অভিপ্রায়ে আবার গলা উঁচু করে বললো,
” বাশার ভাই বাড়ি চল। আজই তোর বিয়ে দেব। চল।” ইমা অগ্রসর হতেই সামনে এসে দাঁড়াল শান। ভ্রুকুটি করে বললো,
” এই মেয়ে সমস্যা কী তোমার? বেসিক আদব শিক্ষা কী পাও নাই তুমি? দেখছ এতো মানুষ জড়ো হয়েছে তবুও অসভ্যতা দেখিয়ে যাচ্ছ? হাত ছাড়ো ওর।”
” কাইষ্টার ঘরে কাইষ্টা। জীবনে ক্রাশ খাইলাম সেটাও তোর মতো কাইষ্টার উপরে। আমাকে অসভ্য বলিস?” ইমা মনে মনে বলে ঠোঁট ফুলাতে লাগল। শান মৃদু ধমক দিয়ে বললো,
” বয়স কতো তোমার? দুই বছর নাকি আড়াই বছর হু? বিহেভ এমন কেন?”
” দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু? সরে দাঁড়ান সামনে থেকে। ” অন্যদিকে চেয়েই জবাব দিল ইমা। শান বলল,
” এতোক্ষণ যেটা করছিলে সেটা ভালো হচ্ছিল? জাহিল কোথাকার।”
দাঁতে দাঁত পিষে হাত মুঠ করে ইমা বাশারের দিকে তাকিয়ে বললো,
” বাশার ভাই এই লোককে চুপ থাকতে বল।”
” এতোবড় মেয়ে হয়ে আচরণ দেখো। এই বাশার! তোমার বোন কী অপুষ্টিতে আক্রান্ত?” বাশার একবার ইমার দিকে তো আরেকবার শানের দিকে অসহায় চোখে তাকায়।
ইমাকে রাগে লাল হতে দেখে শান চোয়াল ফুলিয়ে পুনরায় বললো,
” আমার তো মনে হয় ফুল এবনরমাল। বেসিক ভদ্রতাবোধটুকুও জানে না সে।”
ইমা রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে মনে মনে ভাবল,
” ধুরু তোর ক্রাশের নিকুচি করি। ক্রাশের মাইরে বাপ। হালারে আজ খাইছি।” ইমা চড় দেওয়া জন্য হাত উঠাতেই শান শক্ত মুঠে পুড়ে নেয় হাতটা। এক ঝটকায় পিঠের সাথে মুচড়ে ধরে বলে,
” সবাইকে বাশার পেয়েছ? হাত ভেঙে ফেলব যদি ফের কারো উপর হাত উঠিয়েছ তো?”
” হাত ছাড় হারামজাদা। তোর গুষ্টির ষষ্টি করব। হাতটা একবার ছেড়ে দিয়ে দ্যাখ।”
” ওহ রিয়েলি! এতো তেজ তোমার? এই বাশার তোমার বোনকে শিক্ষা দাও নাই? মেয়েদের লিমিটেড তেজ থাকা ভালো তবে আনলিমিটেড নয়।”
” আবে হালা ছাড় আমার হাত। ছাড়! ইমাকে চিনিস না তুই? তোকে তো,,! শান হাতটা আরও জোরে মুচড়ে ধরতেই ইমা ব্যথায় চাপা আর্তনাদ করে থেমে যায়।
” সিরিয়াসলি! হেই ইজ শি একচুয়েলি এবনরমাল? মোবারক গাড়ি বের কর। আজ এক্ষুনি এটাকে হেমায়েতপুর ভর্তি করব।”
” বাশার! আমাকে ছাড়তে বল! ছাড় বলছি।”
ইমা এক হাত, পা নাড়িয়েও শানকে আঘাত করতে না পেরে রাগে,জেদে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। শান ইমার হাত আগের চেয়ে জোরে মুচড়ে ধরতেই ইমা ব্যথায় কুঁকড়ে নুড়ে পড়ে। ইমার কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দিল শান। ইমা হাঁটু মুড়ে মাথা নুইয়ে বসে রইল। মোবারক আশেপাশের ভীর ভেঙে এসে দাঁড়াল শানের পাশে। ইমার অভদ্রতায় কাল শান, মোবারক দুজনই রুষ্ট হয়েছিল। স্বভাবতই ইমাকে নাস্তানাবুদ হতে দেখে বেশ খুশি হল মোবারক। শানকে চাপা স্বরে বললো,
” ঠিক হয়েছে। বেয়াদব মেয়ে। মেয়ে মানুষ এমন হয় আগে জানতাম না। কী ডেঞ্জারাস! আপনি সময়মতো না আসলে তো বেচারী নুসরাত ভাবি!” নুসরাতকে ভাবি বলে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে মোবারক। শানের দিকে তাকাতেই দেখল শান রেগে তাকিয়ে আছে। মোবারক বোকার মতো হাসল। বললো,
” বাশার ভাইয়ের বউ সেই হিসেবে ভাবি স্যার।”
শান সামনে ফিরতেই প্রচন্ড গতিতে ছুটে আসা একটা চটি তার পাশে দাঁড়ান মোবারকের গায়ে পড়ল। ইমা দেখল তার লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে। সে অন্য পায়ের চটি খুলতেই তার হাতে কেউ পারা দিয়ে ধরল। ব্যথার চেয়ে জেদ বেশি সে’সময় ইমার ভেতর। হাত ছাড়াতে চেয়ে হাতের চামড়া ছিলে যাচ্ছে তবুও হাত টানছে সে। মুখ তুলে দেখল শান নির্বিকার পকেটে হাত পুড়ে দাঁড়িয়ে। ইমা এক হাত দিয়ে শানের পায়ে আঘাত করতে করতে বললো,
” কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছিস তুই জানিস না কাইষ্টা খান। তোর জীবন যদি ভাঁজা ভাঁজা না করছি?,,,
শান ইমার চোখে চোখ রেখে মুচকি হাসল। শানের এই হাসি স্বাভাবিক নয়। ইমার কথা শেষ করতে দিল না। একপ্রকার উপেক্ষা, অগ্রাহ্য করে মোবারককে ডাকল। বেচারা মোবারক অপ্রত্যাশিত চটির বারি খেয়ে ইমার উপর বেশ রেগে আছে। ইমার চোখের জলে একটু কষ্টও পেল না সে। শান গাড়ি এদিকে আনতে বললে মোবারক গাড়ি আনতে যায়। নুসরাত এগিয়ে এসে শানকে অনুনয় করে বলে,
” মাফ করে দিন ভাইয়্যা। ও আসলে একটু অন্যরকম।”
” হুমম এবনরমাল।” গম্ভীর জবাব শানের
” না মানে! প্লিজ ভাইয়্যা ছেড়ে দিন ও ব্যথা পাচ্ছে। ”
” সরি বলতে বলো?”
” সরি আমার চটি। তোকে সরি ইমা বলবে? হাতটা ছেড়ে কথা বল।” ইমা ঝাঁঝিয়ে উঠতেই আরও জোরে হাতের উপর পা রাখল শান। ইমা দাঁত কামড়ে চুপ রইল ব্যথায়। শান ঝুঁকে বললো,
” আমার সাধ্যে থাকলে এক্ষুনী তোমার হাত দু’টো কেটে ফেলতাম। ভালোই ভালোই আমাদের সবাইকে সরি বলো ছেড়ে দিচ্ছি।”
ইমা মুখ শক্ত করে ঘুরিয়ে নেয়। সে সরি কোনোদিন বলবে না। তাতে হাতের ব্যথায় মরতে হলেও মরবে। ব্যথার চোটে মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে ইমার। নুসরাত ইমাকে বুঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বাশারের বুকে মাথা রেখে অগত্যা তাকে কাঁদতে হয় বান্ধবীর কষ্ট দেখে। গাড়ি আসতেই শান সহ সবাই গাড়িতে চড়ে বসে। ইমার মুখ, হাত গাড়িতে রাখা কাপড়ে বেঁধে শানের পাশে বসিয়ে রাখা হয়েছে। হাতের ব্যথায়,জেদে ইমা শক্ত হয়ে বসা। অতিরিক্ত রাগ তাকে নির্বাক হতে বাধ্য করেছে। শান গাড়ির জানালা খুলে সিগারেট ধরায়। সিগারেটের উৎকট গন্ধ ইমা আগাগোড়াই সহ্য করতে পারে না। শানের সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধে পেট মুচড়ে বমি আসার উপক্রম। নুসরাত দেখেও নিরুপায়। শান কে ইমা না জানলেও সে এবং বাশার জেনেছে। সুতরাং কিছু বলতে চেয়েও সাহসে কুলাচ্ছে না ওদের। তারউপর ইমার পাগলামীতে বাধ্য হয়েই নত হতে হচ্ছে শানের সামনে। গাড়ি চলছে আশেপাশের বাড়ি,ঘর পেছনে ফেলে। গন্তব্য বাশারদের বাড়ি। ইমার ভেতরটা ভয়ে নত হলেও বাহিরে সে এখনও জেদ ধরে রেখেছে। মনে মনে একবার এই লোককে বাগে পাওয়ার বাসনা। মূর্তির মতো শক্ত হয়ে বসে আছে ইমা। পাশে বসা শানের প্রতি অজস্র, সহস্র ঘৃণা পুষে। ভালোলাগাটা এখন কেবলই ঘৃণায় ভরে উঠেছে। মস্তিষ্ক প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত।
চলবে,,
চলবে,,