#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্বঃ ৪
-মেঘ দাড়িয়ে আছিস কেনো,আই এদিকে আই
মেঘ পালক কে এখানে মোটেও আশা করেনি,আকস্মিকভাবে পালকের দেখায় সে রিতীমত হতভম্ব,কোনো রূপ প্রতিক্রিয়া হীনা তাকিয়ে আছে।রূচিতার ডাকে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে এগিয়ে যায় ধীর পায়ে।
-মেঘ, ও পালক। আফারা নূর পালক।রাফাতের বেস্ট ফ্রেন্ড, এবাসায় ই থাকে ৪ তালায়। ও আর ওর বান্ধবী শিমু। তোর সাথে নিশ্চয় দেখা হয়নি।
পালক অপ্রস্তুত হাসে শুধু। ভেতরে ভেতরে ভীষণ অসস্থি হচ্ছে,কোনো ভাবে এখান থেকে যেতে পারলে বেচে যায়।
-আপু,তুই কখন এলি?
বাইকের চাবিটা হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে আসছিলো রাফাত,বোনকে দেখেই প্রশ্ন করে।
-এইতো কিছুক্ষণ আগেই
-ভাই ও তুই একসাথে এলি কিভাবে
-আমিতো বাড়িতেই এসেছিলাম,এসে শুনি মহাশয় এসে দুদিন হলো না অফিস শুরু করে দিয়েছে, তাই ওখান থেকেই ধরে আনলাম ব্যাটাকে
-আহারে দরদ! কই আমার জন্য তো এতো দরদ কখনও আসেনি রে,আমাকে তো খোজ করিস নাহ এতো।এতোদিন দেশে ছিলোনা তাও সারাদিন মেঘ মেঘ করে মাথা নষ্ট করে দিয়েছিস,এখন এসেছে আমায় তো আর চিনবিই নাহ,কে আমি? আমিতো কেও নাহ
বলেই রাফাতের মেলোড্রামা শুরু, এই ছেলে এতো বড়ো হয়েও যে কতো ইমোশনাল ড্রামা করতে পারে! ওর সাথে থাকলে মিনিটে মিনিটে গিরগিটির রঙ দেখা যায়
-হইছে? হইছে তো ঢঙ? আমিও তোর ঢঙ দেখে দেখে পচে গেছি।
-তা তো জানি,আমায় কেও ভালোবাসে না,বাবাও
নাহ আম্মুও নাহ।মামনী একটু বাসতো এখন তো তার বাবুও চলে এসেছে, আমায় এখন চেনে কে অসহায় শিশু আমি
মুখটা বাংলার পাচের মতো করে রাখলো,ওর মুখ দেখে আমার দম ফাটা হাসি পাচ্ছে,পারছি না শুধু গড়াগড়ি দিয়ে হাসতে সাথে এক ধাক্কায় ওরেও ফেলতে। এ যদি ভরা রাস্তা হতো তাও আমি করতাম,কিন্তু এই সামনের উল্লুক টার সামনে আমি কিছুতেই হাসবো নাহ,পেয়েছে টা কি আমায় থা’প্পড় দেওয়া? হাতের কাছেই তো থাকবে এবার বুঝিবে কতো ধানে কতো চাল
-আফুরে এইডারে সরা তোহ সরা,কি করে সহ্য করিস এই বাংলা সিরিয়াল কে সারাদিন? ন্যাকামিতে মেয়েদের ও ছাড়িয়ে।
-হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তো ন্যাকাই,যতো ভালো তোমরা।থাকো তোমরা পরানের ভাই বোন,আজ হতে আমি কেও নাহ। তোমাদের সাথেও থাকবো নাহ আফু চল তোহ চল। এদের আমি চিনি নাহ এরা আমার আপন হতেই পারেনা
বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো রাফাত।
এতোক্ষণ এসব কিছুর নিরব দর্শক ছিলো মেঘালয়, বরাবরের মতোই নিশ্চুপ শান্ত। অক্ষিকোটর ঘুরিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ ছাড়া তার পক্ষ থেকে সাড়া খুব কমই পাওয়া যায়।রাফাত চলে যাবার পর সেও চুপচাপ উপরে উঠে যায় রূচিতার কথা শুনতে শুনতে
______________________
মৃদু আলোয় মাখামাখি চারপাশ,পশ্চিমে হেলে পড়া তপ্ত বস্তুটার লালিমায় ছড়াছড়ি আকাশ জুড়ে। উত্তপ্ততার দাপটে ধরনী জ্বালিয়ে রাখা সূর্যটির আলোয় এখন তুলোর মতো নরম লাগছে,লালাভ আকাশ জুড়ে কৃষ্ণ রাঙা কাক,শালিক, চড়ুইয়ের উড়াউড়ির দৃশ্য টাও যেনো সৃষ্টিকর্তার নিপুণ হাতের তর্জমা। শালিক চড়ুইদের কিচিরমিচির ডাক টাও যেনো ভীষণ সুরেলা শুনাচ্ছে শ্রবণ যন্ত্রে। শরীর জুড়ে দূর্বল রোদের ছড়াছড়ি আর পাখির কিচিমিচির কলরব মেখে বিকেল টাকে আলিঙ্গনে ব্যস্ত পালক। বারান্দার দোলনা টাতে বসে কফি হাতে নিয়ে পরিবেশ অবলোকন করছে পালক।
দুপুরে রাফাত তাকে নিয়ে উপরে আসার পর খুব করে চেয়েছিলো এখানেই থাকতে। তার ধারণা তার মা বোন মামনী সবাই এখন তার মেঘ ভাইয়া কে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে,তাকে কেও ভালোই বাসবে নাহ,গুরুত্বই দিবে নাহ,তাই সে ও ঘরে যাবে নাহ। পালক জোর করে বের করে দিয়েছে ঘর থেকে।ছেলেটা ভীষণ জ্বালায়,এখানে থাকলেই একটু পরপর বায়না করবে আফু এটা বানা আফু ওটা বানা আফু এটা কর।পাগল ছেলে একটা। রাফাতের পাগলামি গুলোর কথা ভাবতেই পালকের গাল প্রসারিত হলো হাসির ছলকে। অদূরে থেকে ভেসে আসছে গাড়ির হর্ণ ও ঢাকা শহরের কলরবের শব্দের আংশিক আভাস।তখনি কল্পনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে বিকট শব্দে বেজে উঠলো ফোনটা। অন্যমনস্ক থাকায় একটু চমকে গেছে পালক।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতেই সব ক্লান্তি,কল্পনা যেনো মুহূর্তেই উবে গেলো, একরাশ ভালো লাগার প্রশান্তি ছুয়ে গেলো। তার জীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষটা ফোন দিয়েছে। ভীষণ তৃপ্তির সহিত হেসে ফোন তুলেই হাস্যজ্বলে সালাম দিলো পালক
-বাবা!কেমন আছো বাবা
ওপাশ থেকে তার বাবা আমিনুল ইসলাম সালামের উত্তর দিয়ে বললেন
-ভালো আছি মা,তুমি কেমন আছো।
-আমিও ভীষণ ভালো আছি বাবা,শুধু তোমাদের মনে পরে খুব।
-আমাদের ও তোমাকে ছাড়া একদম ভাল্লাগে নাহ মামনী,ছুটি পেলেই আমাকে জানাবা,আমি তোমায় গিয়ে আনবো,তোমার আম্মুও তোমায় দেখার জন্য ভীষণ উদগ্রীব
-আপাতত দু মাসের মধ্যে যাওয়া হবে নাহ বাবা,ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট, মিড টার্ম পরীক্ষা শেষ হাওয়ার আগে যাওয়া হবে নাহ
-মন খারাপ করো নাহ মামনী। আমার সময় হলেই তোমায় দেখে আসবো।
বাবার সাথে পড়ালেখা, বাড়ির ব্যপারে টুকটাক কথা বলার মাঝেই পরপর কয়েকবার কলিং বেল বাজার শব্দ কানে আসলো,শিমু দুপুরে খেয়ে ঘুম দিয়েছে,সন্ধ্যার আগে উঠানো যাবে বলে মনে হয় না। কলিং বেল থেকে প্রমোশন হয়ে শব্দটা এখন দরজার করাঘাতে পরিনত হলো,কারণ টা আমার বেশ জানা তাই চুপচাপ কথা বলছি আব্বুর সাথে,এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আব্বুকে বলে ফোনটা রাখলাম,ওড়না টা ঠিক করে দরজার কাছে গিয়ে খুলতেই হুরমুরিয়ে ঢুকলো। জানতাম আমি,আমায় এভাবে রুটিন করে জ্বালানোর ব্যক্তিটি কে
-আফু,শিগগির নুডুলস রান্না কর।ক্ষুধা পেয়েছে ভীষণ, আমার পেটে ৫.৬ ভুমিকম্প শুরু হয়েছে, শিগগিরী রাধঁ নাইলে পাগল হয়ে যাবো
চুপচাপ দাড়িয়ে হাত গুটিয়ে রাফাতের কথা গুলো শুনছি কোনো রূপ উত্তর ছাড়া, আমি জানি এসময়ে দরজার উপর অত্যাচার চালানো মানুষটা রাফাত ব্যতিত কেও নয়,এই ছেলেটা যার আশে পাশে থাকবে তাকে জ্বা লিয়ে মা রবে। একটু পরপর এক এক রকম বায়না করা তার স্বভাব, আন্টি যখন বিরক্ত হয়ে দু চারটা ঝাড়ু পিটা দিবে তখন হুরুমুরিয়ে আসবে এখানে। এসেই
“আমায় এটা বানিয়ে খাওয়া,ওটা খাওয়া।আম্মুকে কতো বললাম শুনলোই নাহ,আমার কোনো গুরুত্বই নেই,আমায় কেও ভালোবাসে নাহ” এমন হাজারো অযৌক্তিক অভিযোগ জুড়ে বসবে,আর তার কথা না শুনলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে। উফ এই ছেলেটা ভীষণ ছেলেমানুষ
-আফু?? শুনছিস তুই? আজকে সবকিছু মেঘ ভাই আর আপুর পছন্দের বানিয়েছে আমার দিকে তাকালোই নাহ,আমি যে না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম কেও ডাকলোই নাহ।তাই রাগ করেছি,ওবাড়িতে খাবো নাহ,তুই আমায় নুডুলস রান্না করে দে
বলেই থপ করে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসলো
-বাসায় নুডুলস নেই রাফাত,আজ চিংড়ি রান্না করেছি,তোর তো ভীষণ পছন্দের ভাত দেই? খা?
-নাহ আফু,আমি এখন নুডুলস ই খাবো,এ বাসায় নেই তো কি আমার আছে তুই চল
বলেই আমায় কিচ্ছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।আমাদের দরজা টা খুলতেই সামনে বরাবর তাদের রুমের দরজা টা দেখা যায়,কোনো রকম অযুহাত দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে সুরসুর করে টেনে নিয়ে ঢুকলো আমায় ওবাড়িতে।
ধপ করে দরজা টা খোলার শব্দেই পিছে ঘুরে তাকালো সবাই। বেশ অনেক খানি জায়গা জুড়ে থাকা ড্রয়িং রুমটার একপাশে টিভি, বড়ো ফ্রিজ আর নানা সৌখিন জিনিসপত্রে সাজানো। আরেক পাশে রাখা ডিভানে বসে আছে রাফাতের আম্মু আঞ্জুমান আন্টি, রূচিতা আপু, আমার ভীষণ প্রিয় নিলাশা আন্টি আর ভীষণ অপ্রিয় তারই সন্তান দ্য ওয়ান এন্ড অনলি আমায় থাপ্প’ড় মারা,মেঘালয়।তিনি একা নন তার কোলেই চুপটি করে বসে আছে মিষ্টি, রূচিতা আপুর মেয়ে।আমায় দেখেই তার কোল থেকে নেমে দৌড়ে এলো
-আফুউউ!তুমি এতোক্ষন তোতায় ছলে,আমি তোমাতে অনেক মিস তরছিলাম
আধো আধো বুলিতে তোতলানো কথা শুনে হেসে দুহাত বাড়িয়ে কোলে নিলাম, মিষ্টিকে আমার ভীষণ পছন্দ, একদম চিনির দলা মেয়েটা।দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। রূচিতা আপুর স্বামি ব্যবসায়ীক বেশির ভাগ সময় ই বিদেশে থাকেন,আর তার বাবা মা আর রূচিতা আপুর ননদ সকলেই কানাডায় সেটেলড। যার ফলে রূচিতা আপুর এবাড়িতে থাকায় বেশি হয়।আর মিষ্টি মেয়েটার সাথে সখ্যতাও আমার বেশি।আমাদের দুজনের ই চকলেট পছন্দ, আপুকে লুকিয়ে মিষ্টি কে চকলেট দেওয়ার কারণেই আমি ওর সবচেয়ে প্রিয়।
মিষ্টির দুগাল ভরে হামি দিয়ে বললাম
-আমিও তোমায় ভীষণ মিস করেছি এঞ্জেল!
-আফুউউ যানো মেঘ ও আমায় এঞ্জেল বলেছে,আমি বুলেছি আমাকে শুদু আফু এঞ্জেল বলবে,তাও আমায় এঞ্জেল বলেছে মেঘ তুমি বকে দাও
মিষ্টির কথায় সকলে শব্দ করে হেসে উঠলো,আমি সামনে তাকাতেই লোকটার সাথে চোখাচোখি হলো। ফট করে চোখ নামিয়ে নিলাম,ভীষণ অপ্রস্তুত লাগছে।
-পালক,এদিক আই মা।তোকে ডাকতে তো ভুলেই গেছি তুই কি অভিমান করেছিস মা?
সুন্দর সাজিয়ে কথা বলা আগত কন্ঠস্বরের দিকে তাকিয়েই হালকা হাসলাম। এই মানুষটাকে একটু বেশিই ভাল্লাগে আমার,নিলাশা আন্টি। মনেই হয়না উনার সাথে পরিচয় মাত্র ছয় মাসের,আমাকে আদর করে যখন জড়িয়ে ধরেন মা মা গন্ধে নাক টা ভরে আসে। উনার মমতাময়ী আদর পেয়ে যেনো মায়ের অভাব ভুলে যায়।
সানন্দে উত্তর দিলাম
-আমি কি কখনো অভিমান করি আন্টি?
-কিন্ত আমি করবো,রাগ করবো আমি ভীষণ। কতোবার বলেছি আন্টি বলবি নাহ
-ভুল হয়ে গেছে মামনী,আর বলবো নাহ তো
বলেই এগিয়ে গেলাম।পাশ থেকে আঞ্জুমান আন্টি বললো
-এই বাদর টা তোকে ধরে এনেছে তাই না? ভার্সিটি থেকে ফিরেই এক চোট ঝগড়া করেছে রূচির সাথে,তারপর যেই ঘুম দিলো বাড়িশুদ্ধ লোক মিলে উনাকে তুলতে পারিনি,টানা চার ঘন্টা কুমিরের মতো ঘুমিয়ে এখন বলছে ওকে নাকি খেয়ে ডাকিনি ওকে নাকি কেও গুরুত্ব দিচ্ছি নাহ
আন্টির কথা শুনে রাফাত দ্রুত আমার কাছে এনে মিষ্টি কে কোল থেকে নিয়ে আন্টির কোলে বসিয়ে দিলো,আমার হাত ধরে আবারও টেনে নিয়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে,পেছন থেকে আন্টি ডাকলে পা থামিয়ে বললো
-কারো কথা শুনবো নাহ আমি,নেহাত ওর বাড়ি নুডুলস ফুরিয়ে গেছে তাই ওকে ধরে এনেছি নাহ তো আমিতো আসতাম ই নাহ ওকে ও আসতে দিতাম নাহ,খবরদার আমার বান্ধবীর সাথে কথা বলবা নাহ।তোমাদের সাথে মিশলে ওউ তোমাদের মতো স্বার্থপর হয়ে যাবে।
বলেই আমায় রান্নাঘরে এনে সেলফ থেকে নুডুলস এর প্যাকেট বের করে ধরিয়ে দিলো।এ নতুন কোনো ব্যাপার নাহ।কয়েক দিন পরপর ই সে এমন বাড়ির লোকের সাথে মুখ ফুলিয়ে হয় নিজে আমার বাড়ি গিয়ে খাবে,নয় আমাকে এনে রান্না করাবে,বকি সে এক ই তো হলো।
-আফু তুই রান্না কর, আদ্রি আর নিবি গেইমে আছে আমিও যাচ্ছি।
বলেই চলে গেলো,গেইম খেলতে বসলে এই ছেলের দিন দুনিয়ায় হুস থাকে নাহ,তার সাথে ওই দুই বান্দর তো আছেই।কি আর করার অগত্যা আমাকে রান্না শুরু করতে হবে, যেহেতু এবাড়িতে রান্না নতুন নাহ তাই সবটাই আমায় জানা।
আমার বানানো কফি এবাড়ির সকলের ভীষণ পছন্দের, প্রায় ই যখন ছুটির দিনগুলোতে আড্ডা দিতে বসি সকলে একসাথে,স্ন্যাকস বানানোর দায়ভার আমার উপরেই আসে। চুলাতে এক পাশে কফির জন্য পানি দিয়ে আরেক পাশে নুডুলস দিয়ে সবজি কাটতে লাগলাম। খোলা চুলগুলো ভীষণ বিরক্ত করায় সেগুলো হাত খোপা করে নিলাম। তবুও সামনের চুলগুলোর কপালে ছড়াছড়ি খেলায় খুব বিরক্ত বোধ করছি।
হাতের উল্টো পাশ দিয়ে সেগুলো কানের পেছনে গুজে,আবারো ছু’ড়ি চালাচ্ছি সবজি গুলোতে
-এহেম এহেম
শক্ত পুরুষালি গলার কাশির শব্দে চোখ তুলে তাকাতেই মেরুদণ্ড জুড়ে শীতল বাতাস বয়ে গেলো
ডিপ ব্লু কালার টি-শার্ট এর সাথে সাদা রঙের ট্রাইজার পরিহিত,কালো বাদামি মিশ্রনের চুলগুলো কপালে এলোমেলো ছড়িয়ে, দু হাত পকেটে গুজে আমার দিকেই তাকিয়ে লোকটা।আচ্ছা? উনার চোখটা কি সত্যিই নীল, নাকি লেন্স পরেন উনি? মারাত্মক সুন্দর উনার আখিযুগল!উনিকি কোনো ভাবে জানেন যে নীল রঙের চোখের মনি আমার ভীষণ পছন্দ, এই জন্য লেন্স পরে এসেছেন যাতে আমি সব ভুলে যাই? মোটেও নাহ,আমি কিছুতেই ভুলবো নাহ উনি আমাকে ভরা রাস্তায় থা’প্পড় দিয়েছেন,এটা ভেবেই মুখ ভেংচি কেটে আবারও নিজের কাজে লাগলাম
মেঘ যেনো অবাক হলো,দুবার পলক ঝাপটালো।মেয়েটা তাকে মুখ ভেংচালো? নাকি চোখের ভুল? যাই হোক,নার্ভাস হওয়া যাবে নাহ।ভীষণ গম্ভীর আর রাগী স্বভাবের হওয়ায় মানুষকে বকা,ঝাড়ি দেওয়ার হাজারো রেকর্ড থাকলেও কারো নিকট ক্ষমা চাওয়ার দৃষ্টান্ত তার ডায়েরি তে একটাও নেই,তাও আবার একটা মেয়েকে সরি বলা। তাই মেঘ ভীষণ অপ্রস্তুত বোধ করছে, আপাতত এদিকে কেও নেই,মা আর ফুপি গেছে টিভি দেখতে,মিষ্টির বাবা ভিডিও কল দেওয়ায় রূচি আপু কথা বলতে ব্যস্ত আর রাফাত ভিডিও গেইম নিয়ে। এ সুযোগে মেয়েটাকে সরি বলা যাবে,কালকের ঘটনার পর থেকে মেঘ ভীষণ অনুতপ্ত বোধ করছে।
-আম..পালক?
-জ্বী
মেয়েটির কণ্ঠস্বর হতে আসা ছোট্ট উত্তরটি শুনে চোখ তুলে তাকালো মেঘ পালকের দিকে।
হালকা পাতলা গড়নের ছোট খাটো একটা মেয়ে,ফর্সা গায়ে কালো রঙের জামাটা যেনো একটু বেশিই মানিয়েছে,খোপার ভাজ থেকে ছড়িয়ে পরা অবাধ্য চুলগুলোর মুখ জুড়ে ছড়াছড়ি। মেঘে ভীষণ ইচ্ছে হলো নিজ হাতে সরিয়ে দিতে। পরক্ষনেই নিজের ইচ্ছাকে নিজেই মনে মনে ঠাটিয়ে দু চড় লাগালো,ছি ছি এসব কি ভাবছে সে।
-আসকে পালক তুমি হয়তো বুঝতেই পারছো আমি কি বলতে চাচ্ছি,সেদিনের ঘটনার জন্য সরি বলাটাও হয়তো যথেষ্ট নয়,তবুও আমার না বুঝে করা ভুলটার জন্য আমি অনুতপ্ত
বলেই থামলো মেঘ,পালক,ছুড়িটা থামালো। অতি ধীরে আখিপল্লব তুলে স্থির দৃষ্টিতে তাকালো সামনে দাড়ালো সুদর্শন চেহারার দিকে,যার দৃষ্টি বর্তমানে তার দিকেই স্থির। তাকিয়ে থাকতেই হঠাৎ মেঘে মুখের অভিব্যক্তি বদলে গেলো,ভীষণ উৎকন্ঠা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হুট করেই আমার এক হাত ধরে হ্যাচকা টানে সরিয়ে আনলো। ঘটনার আকস্মিকতায় অপ্রস্তুত থাকার ফলে তাল সামলাতে না পেরে গিয়ে পরলাম তার প্রসস্থ বুকের মধ্যিখানে। মাথাটা গিয়ে ঠেকলো তার বুক বরাবর,তার হৃদযন্ত্রের ধুকপুকানির শব্দ স্পষ্ট চড়াঘাত করছে শ্রবণ যন্ত্রে, যেনো পুরো শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে গেলো, মেরুদণ্ড জুড়ে শীতল বাতাসে আচ্ছন্ন হলো। তার এহেনো কাজের মর্মার্থ বুঝতে আমি অপারগ, কিন্তু আমার সারা শরীর কাপঁছে, কড়া একটা পুরুষালি সুবাশ নাকে এসে ঠেকছে,মাথাটা ভনভন করছে। ধীরে ধীরে চোখ তুলে তার
আনন পানে তাকাতেই
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
হীডিংঃ আজকের পর্ব অনেক বড়ো দিয়েছি,সকলের অভিব্যক্তি প্রত্যাশিত।
হ্যাপি রিডিং#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্বঃ ৫
এক ঝটকায় আমায় সরিয়ে আচল টে’নে ধরলেন মেঘ,ঘটনার আকস্মিকতায় আমি বাকরুদ্ধ, কি করছেন উনি? আমার আচল ধরে সামনে এনেই গ্লাসের পানি ঢেলে দিলো। কালো রঙের ওড়না টার বেশ অনেক খানি অংশ পুরে গেছে, কাপড় পোড়াটে বিদঘুটে গন্ধটা নাকে এসে ঠেকছে।
আমি বিস্মিত হয়ে আছি। কোমড় থেকে আচল খসে কখন কাজের ফাকে স্টোভের আগু’নে লেগেছে খেয়াল করিনি,মেঘ না থাকলে আজ অনেক বড়ো কিছু হতে পারতো।
উনি আমার ওড়না টাতে পানি ঢেলে আগুল নিভিয়ে আবারো আমার কাধে রেখে দিলো,আমি কোন প্রতিক্রিয়া বা শব্দ ব্যায় হীনা তাকিয়ে আছি।
-আপনার পারমিশন ছাড়া আচল ধরার জন্য দুঃখিত, কিন্তু মেঘ জেনে বুঝে কাওকে কষ্ট পেতে দেয়না
বলেই এক লহমা দেরি না করে বেরিয়ে গেলো। আমি এখনো স্থীর দাড়িয়ে। যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ওতোটাও নাহ। আর ওড়না টাতে আগুন লাগার ঘটনায় খানিকটা ভয় পেলেও অবাক হয়নি,কারণ এমন অসাবধানতা আমার দ্বারা নতুন কিছু নয়। সাত পাচ ভাবা বন্ধ করে ওড়নাটাকে ভালো ভাবে পেচিয়ে আবারও নিজের কাজে মনোযোগী হলাম।
-আফু? কি হয়েছে? ঠিক আছিস তুই?
রূচিতা আপু হুট করে এসেই প্রশ্ন করলেন। স্মিত হেসে বললাম
-কি হবে আপু,এইতো
আমার কথার তোয়াক্কা না করে ওড়নার আচলটা হাতে নিয়ে নিয়ে এপাশ ওপাশ করে দেখে বললেন
-আফু! কি করেছিস,একটু সাবধান হবি নাহ? যদি বড়ো কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো?
আপুর উদ্বিগ্নতা দেখে গাল দু’টো টিপে বললাম
-আরে চিল আপু,এইতো কিছুই হয়নি।মাঝে মধ্যে এমন হওয়া টা কোনো ব্যাপার নাহ।
-চিল? তাইনাহ? এই তোরা সবগুলো এক একটা বদের হাড় হয়েছিস,ভাগ্যিস মেঘ বলেছিলো। নাহ তো তুই আমাকেও বলতিস নাহ। আজ থেকে রান্নাঘরে আসা টোটালি বন্ধ তোদের,আর ওই বাদরটা রান্না করতে বললে ওকে আগে খুন্তি পে’টা করবো নিজে তো গিয়ে বসেছে কম্পিউটারের সামনে, মা আর মামনী জানতে পারলে করটা চিন্তা করবে জানিস
আসলেই, এবাড়ির লোকেরা আমায় এতোটা ভালোবাসে,যত্ন করে যে মনেই হয়না যে এরা আমার রক্তের সম্পর্কের বাইরের লোক। মানুষ ধর্ম,বর্ণ,বংশপরিচয় সব নির্বিশেষে এক, তাদের এক পরিচয় তারা মানুষ। আর মানুষের পরিচয় মানুষত্য তাদের ব্যবহার, আচার আচরণে। যেমন এই বাড়ির মানুষ গুলো। টাকা, পয়সা,বাড়ি গাড়ি, ফেইম সবশেষে তাদের একটাই পরিচয় আমার কাছে,তারা ভালো মানুষ,ভীষণ ভালো। আর এই মানুষ গুলোকে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসি।
গাল ছড়িয়ে হেসে বললাম
-সরি আপু ভুল হয়ে গেছে, আর কখনও অসাবধানে কাজ করবো নাহ,তুমি মামনী দের বলিও নাহ,ভীষণ বকবে
-বলছিস? প্রমিস কর আর কখনো এমন হবে না?
-প্রমিসসস,,একদম পিংকি পারপেল প্রমিস
আমার কথায় হেসে দিয়ে আপু বললো,
-পাগলি মেয়ে,এখন দে তো কি করতে হবে, আমিও সাথে সাথে করে দেই
-ওমাহ,আবার তুমি কেনো,তুমি মিষ্টি কে সামলাও আমি এদিকটায় করে নেবো
-ওমনেই নাহ? আমি এদিকটায় করে নেবো। একদম তোকে একা ছেড়ে আমি যাচ্ছিনা। একদম পাকা পাকা কথা বলবি নাহ আমার সাথে
বলেই আমার হাত থেকে ছুড়িটা নিয়ে সব্জী কাটতে লাগলো।আমিও জানি আপুকে নিষেধ করলেও শুনবে নাহ,তাই দুজন মিলেই ঝটপট সব কাজ সেরে নিলাম।
সব রান্না শেষ করে, রাফাতের সাথে কথা বলে,ওবাড়ি থেকে আমার ঘরে আসতে প্রায় রাত ৮ টা বেজে গেলো। আপু আর মামনী তো আজ আসতেই দিতে চাইনি, দুদিন বাদেই মিষ্টির জন্মদিন, ছোট্ট পাখিটার দু বছর পূর্ণ হবে। তাই মিষ্টির জন্মদিন আর মেঘালয় চৌধুরীর দেশে ফেরার উপলক্ষে তারা বিশাল পার্টির আয়জন করবে,সে নিয়েই প্ল্যানিং করছিলো। আমাকেও সাথে থাকার জন্য অনেক করে বললো কিন্তু ওই মেঘালয় নামক মানুষ টার সামনে থাকতেই আমার ভীষণ অসস্থি হয়,অদ্ভুত লাগে।তাকানো যায়না উনার দিকে, কথা বলতেও দ্বিধা বোধ হয়, আর তখনকার ঘটনার পর তো উনার সামনে দাড়ানোও দায় হয়ে গেছে। তাই কোনো ভাবে নানান বাহানা দিয়ে কাটিয়ে এসেছি।
রুমে এসে দরজা খুলে ঢুকতেই চোখ চড়কগাছ
-এসব কি করেছিস শিমু??
সারা ফ্লোরে নানান ফলের অংশ পানি, চিনির ছড়াছড়ি, আর তার চেয়েও বেশি ছড়াছড়ি শিমুর সারা শরীর আর মুখে,আবারও প্রশ্ন করলাম
-এসব কি করে হলো?
বাংলার পাচের মতো করে রাখা মুখ থেকে চুল আর ফলের অবশিষ্টাংশ সরিয়ে মুখ বিকৃত করে উত্তর দিলো
-আসলে আমি একটু ফ্রুট জুস বানাচ্ছিলাম।কিন্তু সুইচ দিতেই সারা ঘরে ছিটিয়ে গেলো,আমার সারা শরীরেও মেখে গেছে, ইউউ কি জঘন্য লাগছে
-শুধু শুধু তো এমন হয়নি নিশ্চিয় তুই কিছু ভুলভাল করেছিস? ঢাকনা লাগিয়েছিলি ভালো করে?
-আসলে ঢাকনা টা সরিয়ে সুইচ অন করলে কেমন হয় সেটাই এক্সপেরিমেন্ট করছিলাম, কিন্তু এমন হবে জানলে কখনো করতাম নাহ
বলেই বিশ্রী রকম বলদ টাইপ মুখ আকৃতি করলো,আমি জানতাম,জানতাম আমি এমন কিছুই করেছে৷ শিমু মানেই অকাজ,শিমু মানেই ঘাপলা,সব কাজেই একটা বিশ্রী কান্ড না ঘটলে ওর উপস্থিতি হালাল হবে নাহ৷ মনে চাচ্ছে ওই ব্লেন্ডারে এখন ওরে ঢুকিয়ে ব্লেন্ড করে ফেলি।
-গাধা, ছাগলের বাচ্চা, এই ভম্বল এক্সপেরিমেন্ট করার আর জিনিস পাসনি? এটা কি তোর কেমিস্ট্রি ল্যাব পেয়েছিস হ্যাঁ যে যা তা বিক্রিয়া ঘটিয়ে দিলি গণ্ডমূর্খ
আমার কথায় শিমু মুখটা করলার মতো জঘন্য করে উত্তর দিলো
-আসলে আমি বুঝতে পারিনি এমনটা হবে, আমি এক্ষুনি সব ক্লিন করে দিচ্ছি।
-হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝবি ক্যান! তোর মাথার মধ্যে তো গবর ছাড়া কিছুই নেই,তাহলে মানুষের মতো ভাববি কি করে, সবসময় তো গরুর মতো হামলানোই তোর স্বভাব, এই তুই পড়াশোনায় টপ কি করে করিস বলবি? কেমিস্ট্রি ল্যাবে কয়বার বিস্ফো’রণ ঘটিয়েছিস বলতো।
আমার কথায় শিমু বকদের মতো কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো
-একবার ও ঘটাইনি শুধু একবার পিপেটে মুখ দিয়ে মুখের মধ্যে কেমিকেল ঢুকে গেছিলো,ভাগ্যিস ওটা হার্মফুল ছিলো নাহ,নাহলে তো আমার মুখ টাই ঝ’লসে যেতো।
-কেনো যায়নি বলতো? গেলে বাচতাম এমনিতেও ওই মুখ দিয়ে কাজের কথা কম বলদের পেচাল বেশি হয়।
উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবারও বললাম
-দুই মিনিটের মধ্যে সব পরিষ্কার নাহ করলে আমি নিজে এবার তোকে পচা পানিতে চু’বাবো
বলেই গটগট করে রুমে এসে টানটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম।।
____________________
-ভাই চলো নাহ যাই।অনেক দিন ঘুরতে যায়না
গত এক ঘন্টা যাবৎ রাফাত নতুন বাহানা জুড়ে বসেছে সে ঘুরতে যাবে,গত ছয়মাস পরীক্ষা আর ভার্সিটি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কোথাও যাওয়া হয়নি। এখন সে ঘুরতে যাবে, আর তার সাথে সবাইকে যেতেও হবে
-মামনী কিছু বলছো নাহ কেনো? ভাই কে বলোনা যেতে,এসেছে তো মাত্র দুদিন,এখনি এতো কিসের কাজ। অফিস দুদিন মামু সামলে নেবে
রাফাতের কথা তার মা আঞ্জুমান বললো
-হ্যাঁ রে রাফাত,তুই এমন আজাইরা কি করে হলি বলতো।সারাদিন শুধু খাইখাই, উদ্ভট ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া,কম্পিউটারে গেইম আর ঘুরাঘুরি। এসব ছাড়া আদও কিছু পারিস তুই বলতো। মেঘ কে দেখ কি সুন্দর দেশে এসেই লক্ষী ছেলের মতো বাবার ব্যাবসা সামলাচ্ছে
-হ্যাঁ তো মা তুমি কি এখন বলতে চাচ্ছো আমিও পড়াশোনা ছেড়ে ব্যাবসা করি?
-তা কখন বললাম,তুই যে এতো বড়ো হয়েছিস তোর কোন দ্বায়িত্ববোধ আছে বলতো।
-আমার কি পাচ ছয়টা সংসার আছে যে আমি দ্বায়িত্ব পালন করবো। দেখো আম্মু তুমি কিন্তু এখন উল্টা পালটা কথা বললেও আমি শুনবো নাহ বলে দিলাম,টুরে আমি যাবোই,আর ভাই ও যাবে। ও মামনী বলোনা তুমি
রাফাতের কথায় নিলাশা চৌধুরী বললেন
-ওকে এভাবে কেনো বলছিস আঞ্জু,বাচ্চা ছেলে ও, কি দ্বায়িত্ব করবে। সময় হলে ওউ মেঘের মতো লক্ষী ছেলে হয়ে যাবে দেখিস।
মামির কথায় গদগদ হয়ে উঠলো রাফাত, গিয়ে মামির পাশে বসে বললো
-ও মামনী বলো না ভাইকে, দুদিন ঘুরতে গেলে কি হবে
-মেঘ ও তো ভুল বলেনি, মাত্র এসেছিস,দুদিন ঘুরে আসলে কোনো ক্ষতি হবে নাহ।
মেঘ বসা থেকে উঠে দাড়ালো, বরাবরের মতোই নিশ্চুপ শ্রোতার মতো এতোক্ষণ সবটা শুনছিলো। দুদন্ড চুপ থেকে বললো
-সামনের সপ্তাহে দেখা যাবে
মেঘের কথায় লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালো রাফাত
-ভাই! ভাই সত্যি যাবে তো?
মেঘ দু’হাত পকেটে গুজে চোখ দু’টো ছোট করে কিছুক্ষণ অবলোকন করলো রাফাতকে,কিঞ্চিৎ চোখ নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।।
-ইয়েএএ!! আই লাভ ইউ ভাইই,ভাই তোমাকে ভীষণ আদর করতে ইচ্ছে করছে,একটা চুমু দেই?
-হোয়াট!
রাফাতের চুমু দেওয়া কথায় মেঘ ছিটকে দূরে সরে দাড়ালো,চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে, মেঘের এমন অভিব্যক্তি দেখে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো,রাফাত আরেকটু মেঘ কে বিরক্ত করতে বললো
-ভাই তুমি ভীষণ অ্যাট্রাক্টিভ! একটা চুমুই তো,দেই?
-হোয়াট রাবিশ!! ডিসগাস্টিং
বলেই গটগট করে বেরিয়ে গেলো,আর মেঘের যাওয়া দেখেই হাহা করে হেসে ওঠে রাফাত,রূচিতা হাসতে হাসতে বলে
-রাফাত তুই ও নাহ! এমনেই তো ধরে আনতে হয় সবার মাঝে,এবার তো তোর সামনেই আসবে নাহ,
বলে আবারও আরেক দফা হাসিতে ফেটে পরলো সবাই।
_______________________
আশপাশ অন্ধকারে আচ্ছন্ন, সন্ধ্যায় ঘরে এসে ঘুম দেওয়ার পর আর উঠিনি,শিমুও ভয়ে ডাকতে আসেনি যদি তখনকার ঘটনা নিয়ে আবারও বকি।
ঘড়ির ছোট কাটাটা বারোটা ছুতেই ঢং ঢং শব্দে বেজে উঠলো,ঘুমটা হাল্কা হয়ে আসলো৷ পিটপিট করে তাকালাম,ঘরটাতে মৃদু হলদেটে আলো জ্বলছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোতে বারান্দা ছোট ছোট আলোয় মাখামাখি।বৈশাখের আবহাওয়ার বৈরী রূপ স্পষ্ট, থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয়,গুমগুম মেঘের শব্দ অয়াওয়া যাচ্ছে।
শোয়া থেকে উঠে বসলাম,অসময়ে ঘুমের জন্য মাথাটা টিপটিপ করছে, ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে গায়ের জামা পালটে রান্নাঘরে গেলাম,এক কাপ ব্ল্যাক কফি আপাতত ভীষণ দরকার।
রান্না ঘর থেকে এসে লাইট জেলে বসলাম, জানালার থাই গ্লাসের ফাক দিয়ে আসা গা হীম করা বাতাস সর্বাঙ্গে ছুয়ে যাচ্ছে,সারা গা জুড়ে অদ্ভুত ভালো লাগা ছুয়ে যাচ্ছে,হাতের কাপটা রেখে উঠে গেলাম টেবিলটার কাছে। সবুজ মখমলের কাপড়টা সরিয়ে ভীষণ যত্নে রাখা জিনিসটা হাতে ধরলাম,দু’হাতে আগলে পা বাড়ালাম বারান্দার দিকে, এমন নিশুতি রাতের ভীষণ প্রিয় আবহাওয়ায় নিজেকে নিয়ে একটু না মাতলেই নয়……
_____________
ঘরটা জুড়ে অন্ধকার বিরাজমান, বিছানায় অনেক্ষন এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছে নাহ। বিদেশে থাকার দরুন রাতের বেশির ভাগ সময় পড়াশোনা আর পাশাপাশি কাজ করেই কাটাতো মেঘ,এখানে এসে ব্যবসার কাজে মনোযোগ দিলেও রাতটা যেনো একটু বেশিই দীর্ঘ লাগে।
শুয়া থেকে উঠে বসলো ল্যাপটপের শাটার তুলে আঙুলের তর্জমায় দ্রত গতিতে চালানো শুরু করলো। এর মাঝে গুমগুম করে মেঘের আওয়ার টা আরও উচ্চুরূপ ধারণ করলো,বাতাসের দাপট আরও বেড়ে গেলো। পর্দা গুলো এলোমেলো উড়ছে।
হঠাৎ করেই মেঘের আঙুলের চালনা থেমে গেলো, কান দুটো সজাগ হলো, শরীরে অদ্ভুত দোলা ছেয়ে গেলো। অদূর হতেই ভেসে আসছে ভীষণ মধুময়,সুরেলা নরম শব্দ। শব্দের উৎস লক্ষ করে উঠে এগিয়ে গেলো,খোলা বারান্দায় দিয়ে তাকাতেই শব্দের উৎসের খোজ পেলো।
মেঘের বারান্দা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। চারতালার বারান্দা টা ঠিক তার ঘরের বাম পাশেই, বারান্দায় দাড়িয়ে নারী ছায়া মূর্তিটি। এক কাধের উপরে যন্ত্রটি রেখে আরেক হাতের নিপুণ
প্রগাঢ়তায় চালিয়ে যাচ্ছে। বাদ্য যন্ত্রটি হতে আসা সুর যেনো মেঘের সর্বাঙ্গে ছেয়ে যাচ্ছে। এর আগেও অনেকবার শুনেছে বেহালার সুর,কই এতোটা মোহনীয় তো লাগেনি,এতোটা আবেদনময়ী তো লাগেনি? যেনো সর্বস্ব জুড়ে আবেগ আর ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া সুর,পাচঁ পঙক্তির নিখুঁত করুন সুরে যেনো আবহাওয়া টাও মাতোয়ারা হয়ে যাচ্ছে। বেহালার এমন করুন সুরের আর্তি আর তালে মন প্রাণ হারিয়ে সেই সুরেই গেথেঁ যাচ্ছে মেঘের সমস্ত ইন্দ্রিয়। মন মস্তিষ্ক জুড়ে প্রবল ইচ্ছে জাগছে সুর দানকারী নারীটির রূপ দর্শনের আকুতি। যার সুর যেনো রবিঠাকুরের ভাষায় “তব শুভসঙ্গীতরাগ, তব সুন্দর ছন্দ”
সুরের তালে মেঘের সাথে আবহাওয়া টাও যেনো চরম উন্মাদনায় নিমগ্ন হলো, বিকট শব্দে কেপেঁ উঠলো দিকবিদিক, তড়িৎ গতিতে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো, তার চেয়েও দ্রুত গতিতে চমকে উঠলো মেঘের সমস্ত কায়া
বিদ্যুতের ঝলকানিতে কয়েক মুহূর্তের জন্য স্পষ্ট দেখলো সে, দমকা ঝড়ো হাওয়ায় উড়া দীর্ঘাকার চুলগূলো, সাদা রঙের লম্বা জামাটি মাটি পর্যন্ত ছুয়ে বিলানো, আখিযুগন বুজে নিমগ্ন হয়ে এমন সুরের ঝংকার তোলা রমণী নিভৃতে হাতের তালে সুরের ছন্দ মিলিয়ে যাচ্ছে।। ঝড় বৃষ্টি, মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের ঝলকানিতে রমণীর এমন সর্বনা*শা রূপ যেনো মেঘের মনের ভেতর দামামা শুরু করলো,প্রচন্ড চড়াঘাতে জর্জরিত হলো বক্ষপিঞ্জর
.
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ