তুমি কোন কাননের ফুল, পর্ব:২১

0
1053

#তুমি_কোন_কাননের_ফুল
#অন্তিম_পার্ট
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া

(প্রথম অংশ)
শহরের আনাচেকানাচে সন্ধ্যে নেমে এসেছে ততক্ষণে। প্লার্টফর্ম জুড়ে মানুষের ব্যাস্ত বিচরন। কেউ এই বগিতে তো কেউ অন্য বগিতে। কেউ একা, কেউ পরিবার নিয়ে আনন্দের যাত্রা। পরিবারের একজন আগে উঠে বাকিদের জলদি করে উঠার তাগাদা। যারা নতুন নতুন ট্রেন যাত্রায় নেমেছে তাদের মনে তাড়া বেশি। এই বুঝি ট্রেনটা ছেড়ে দিলো!
দুই নাম্বার প্লার্টফর্মে স্নিগ্ধার ট্রেন। টিকেটটা একবার দেখে নিলো। ‘চ’ বগির তেইশ নাম্বার সিট। নিজের বগিতে উঠে নিজের সিটে বসলো। জানালার পাশের সিটটাই তার।
আড়ষ্ট হয়ে বসলো। দৃষ্টি জানালার বাহিরে। গন্তব্য কুমিল্লা। কুমিল্লা ছাড়া আপাতত যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই ওর। স্নিগ্ধা ফোনটা বের করে ওর অনেক পুরোনো নাম্বার সেট করলো। আগের সিম খুলে রেখেছে যাতে কেউ কল করতে না পারে। সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছে মন প্রাণ জুড়ে। কিন্তু অতো দূর যাবে কি করে? কই-বা যাবে? ঐ একটা বান্ধবী ছাড়া কাছেরও তেমন কেউ নাই। স্নিগ্ধা ভাবলো, ওর চাইতে একা অসহায় আর কেউ আছে কী? নেই বোধহয়! কল করলো একটা নাম্বারে। দুইবার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে কল উঠালো। স্নিগ্ধা বলল,
“দোস্ত? আমি তোর বাসায় আসছি। কয়েকদিন থাকবো। তোর অসুবিধে নেই তো?”
ওপাশ থেকে ভেসে আসলো,
“কে? স্নিগ্ধা? কেমন আছিস? আর কিসের অসুবিধের কথা বলছিস? তুই আসবি এটা তো আমার জন্য খুশির ব্যাপার। কিন্তু আগে বললি না যে? আদনান ভাই আসবে সাথে?”
অনর্গল প্রশ্ন করে যেতে লাগলো অহনা। অহনাই স্নিগ্ধার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড।
স্নিগ্ধা বলল,
“আমি একা আসছি। সবকিছুতে আদনানকে টানিস কেন? ঐ একটা মানুষ ছাড়াও আমি একা জীবন চালাতে পারি, বুঝেছিস? তোর কোনো অসুবিধে থাকলে বল, আসবো না।”
অহনা ইতস্তত করে বলল,
“এই তুই রাগ করছিস কেন? আর বারবার অসুবিধের কথা বলছিস কেন বোকা! আমার কিসের অসুবিধে থাকবে? তুই আয় সাবধানে।”
স্নিগ্ধা ফোনটা কেটে ব্যাগে রাখলো। চোখ দুটো বুজে সিটের সাথে হেলান দিলো। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে কাজটা ঠিক করেছে কিনা তা নিয়ে এই মূহুর্তে ভাবতে ইচ্ছে করছে না। শুধু সাজেদা খানমের জন্য একটু মন খারাপ লাগছে। হয়তো এতক্ষণে সব জেনে গিয়েছে মানুষটা। তিনি হয়তো এখন মেয়েটাকে খারাপ ভাবছে! তা ভেবেই একটু খারাপ লাগছে। এই মানুষটার ভালোবাসার জন্যই হয়তো এতদূর আসতে পেরেছে। নয়তো কবেই জীবন থমকে যেত! এই মানুষটার জন্যই কখনো মায়ের অভাব বোধ করতে পারেনি।
এনাউসমেন্ট হলো, আর পনেরো মিনিটের মাঝে ট্রেন ছেড়ে দেয়া হবে।
স্নিগ্ধা চোখ মেলে আশেপাশে চোখ বুলালো। নিচে থাকা মানুষগুলো ট্রনে উঠতে শুরু করেছে। ওর পাশের সিটটা খালি। সামনে একজন বৃদ্ধলোক সংবাদপত্র পড়ছে। লোকটার পাশের সিটও খালি।
স্নিগ্ধা হুট করে কি মনে হতেই ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে হাতে নিলো। কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টে তার মধ্যে থেকে একটা ছবি বের করলো। দুইটা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। বয়স কত আর হবে? দশ কি বারো। ভারী মিষ্টি দুটো ছেলে মেয়ে! ছবিটা সম্ভবত মেয়েটার জন্মদিনের। মেয়েটার নাকে, গালে কেক মাখিয়ে ছেলেটা প্রাণচঞ্চল হাসি আর মেয়েটার বিরক্তিকর চাহনি। নিজের অজান্তেই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে স্নিগ্ধার ঠোঁটের কোণে। অবাক করার বিষয় ছবির মধ্যে আটকে থাকা মেয়েটার বিরক্তি মুখ ফুটে উঠলেও, ছবিটা স্নিগ্ধা যতবার দেখেছে ততোবারই মুগ্ধ হয়েছে, মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। স্নিগ্ধার বারবার মনে হয়, ইশ! জীবনটা যদি ওখানেই থমকে থাকতো!

বাহিরে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মানুষজন ছুটে ট্রেনে উঠে পড়ছে। কেউ কেউ প্লার্টফর্মেই দাঁড়িয়ে রইলো।
ট্রেনের হুইসাল বাজলো। ট্রেনে ছেড়ে দিচ্ছে।
ছবিটা হাতে রেখেই বাহিরে তাকালো। বৃষ্টি কণা এসে ছুয়ে দিচ্ছে বিষন্ন মেয়েটার মুখ। অনেক মানুষ পেছনে ফেলে ট্রেন এগিয়ে চলছে ধীরে ধীরে।
হঠাৎ স্নিগ্ধা অনুভব করলো কেউ একজন ওর পাশে বসেছে ধপ করে। কে বসেছে তা দেখার জন্য পাশে ফিরে দেখলো না।
ট্রেন প্লার্টফর্ম ছাড়িয়ে বেড়িয়ে আসার পর জানালার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে সোজা হয়ে বসতেই যেন চমকে উঠলো। পাশে তাকাতেই দেখলো আধ ভেজা সুদর্শন ছেলেটাকে! আধ ভেজা মুখ, আধ ভেজা শার্ট। কি নিদারুন মোহনীয় দেখাচ্ছে!
ছেলেটার দৃষ্টি স্নিগ্ধার হাতের ছবিটার দিকে।
স্নিগ্ধা তড়িঘড়ি করে ছবিটা বইয়ের ভেতর ঢুকিয়ে ফেললো। ছেলেটার দৃষ্টি এবার এসে পড়লো ওর দিকে। সেই ঠান্ডা চাহনি! পুরো হাত-পা হিরহির করে উঠার মতো দৃষ্টি। ছেলেটা এমন ভাবে তাকায় কেবল তখনই, যখন সে ভয়ানক রেগে থাকে। বহুকাল পর স্নিগ্ধা এই দৃষ্টি দেখলো। ভয়, ক্ষোভ, অভিমান সবটা মিলে অদ্ভুত রকমের একটা অনুভূতি তৈরি হলো স্নিগ্ধার। মেয়েদের একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে যা অনেকেই জানে না! মেয়েরা ভয়ের মাঝেও রাগ দেখাতে পারে! স্নিগ্ধাও তার এই অদ্ভুত ক্ষমতাটা কাজে লাগালো। চাপা রাগ নিয়েই অস্ফুট স্বরে প্রশ্ন ছুড়লো,
“তুই এখানে কেন এসেছিস? কি চাই? প্লিজ আমায় একা ছেড়ে দে।”
স্নিগ্ধার এই খামখেয়ালি কথা কোনো প্রকার পাত্তা না দিয়েই আদনানের কঠর প্রশ্ন,
“কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বেড়িয়েছিস কেন?”
স্নিগ্ধার একরোখা জবাব,
“আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।”
সচরাচর উচ্চস্বরে কথা না বলা ছেলেটাও ধমকে উঠে বলল,
“তোর ইচ্ছে মানে? তোর ইচ্ছেতে সব হবে? যদি তোর এই বিয়েতে ইচ্ছে না-ই থাকে, তো সেদিন কেন বলেছিলি ওকেই তুই বিয়ে করবি? তোর ইচ্ছে হলেই তুই স্টুপিডের মতো বাসা থেকে পালিয়ে আসবি? তোকে কেউ জোর করে বিয়ে দিচ্ছিলো? থাপ্পড় মেয়ে সব বাচ্চামি বের করে ফেলবো, বেয়াদপ!”
আশেপাশের সব লোকের দৃষ্টি ওদের দুজনের দিকে। ট্রেন চলছে ঝকঝকাঝক শব্দে।
স্নিগ্ধার চোখ ভিজে উঠলো। গলা ভেঙে কান্না পাচ্ছে। সে কিচ্ছুটি না বলে নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে উঠে হাঁটা ধরলো। আদনানও সাথে সাথে দাঁড়াল। স্নিগ্ধার হাত টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“কি সমস্যা তোর? আর কত জ্বালাবি?”
স্নিগ্ধা শুধু বলে,
“আর জ্বালাবো না। ছাড় আমায়।”
আদনান ছাড়ে না। আরো শক্ত করে ধরে বলে,
“আর জ্বালানোর বাকি রেখেছিসটা কি? মা কত দুশ্চিন্তা করছে জানিস? আমায় যখন বলল, ‘তুই বাসায় নেই। কই যেন চলে গিয়েছিস।’ তখন আমার কেমন লেগেছিলো জানিস? জানিস তো শুধু নিজের দিকটা। স্বার্থপর মেয়ে একটা!”
এরপর দুজনেই চুপ। কিছুক্ষণ সেভাবে দাঁড়িয়ে থেকে আকস্মিক প্রশ্ন ছুড়ে আদনান,
“ভালোবাসিস আমায়?”
স্নিগ্ধার দৃষ্টিটা এতক্ষণ নিচে থাকলেও এবার আদনানের দিকে তাকায়। এতক্ষণ যাবত আটকে রাখা অশ্রুটুকু এবার গাল বেয়ে টুপ করে গড়িয়ে পরে। আদনান আগের মতোই ধরে রেখে বলে,
“বিয়ে করবি আমায়? থেকে যাবি আমার হয়ে?”
স্নিগ্ধার চোখ বেয়ে অশ্রুধারা বয়ে যায় অনবরত। আদনান নিজের মতো করে বলে,
“মানুষ সর্বদাই মরীচিকার পেছন ছুটতে ভালোবাসে। কাছে থাকা ফুলে মুগ্ধতা না খুঁজে দূরে থাকা ফুলে অধিক বিমোহিত হয়। অদ্ভুত না?”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“আমাকে এতোটা বুঝিস অথচ এটা বুঝলি না ক্যান? আমি যে একটা গর্দভ! যে নিজের অনুভূতিটাই ঠিকঠাক বুঝতে পারে না, সে তোর অনুভূতি বুঝতে পারছে না বলে অভিমান করিস? তুই তো দেখি আমার থেকেও বড় গাধা! এই গাধা এই? এদিক তাকা!”
বলেই অসম্ভব সুন্দর হাসে। স্নিগ্ধা কেবল চেয়ে চেয়ে শুনছে! ‘দশটা কথায় একটা কথা বলা’ স্বভাবের ছেলেটার অনর্গল বলে যাওয়া অমৃতের ন্যায় কথাগুলো মুগ্ধ শ্রোতার মতো শুনছে।
আদনান স্নিগ্ধার এক গালের পরম যত্নে হাত রেখে বলে,
“আমার আমিটাকে বুঝার জন্যে হলেও আমার হয়ে থেকে যা! হাজারবার অভিমান করার জন্যে হলেও থেকে যা। আমার কষ্টে, আমার চাইতেও বেশি কষ্ট অনুভব করার মানুষটা হয়ে আজীবন থেকে যা! থেকে যা আমার মেহুরানী হয়ে, প্লিজ।”

স্নিগ্ধা ভাবে, আচ্ছা? কল্পনা না তো এসব? কল্পনা ব্যাতিত এত সুখও কেউ পায়? এই মূহুর্তে ওর চাইতে সুখি আর কে আছে? স্নিগ্ধার নিজেকে পৃথীবির সবচাইতে সুখি মানুষটি মনে হলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার কাননের সবচাইতে উজ্জ্বল ফুলটি মনে হলো নিজেকে!

(শেষ অংশ)

দখিনা বারান্দায় একমনে দাঁড়িয়ে রইলো এক পাগলাটে প্রেমিক। চারপাশে বিরাজমান খুব করে বৃষ্টি নামার পূর্ব মূহর্ত! অন্ধকার নেমে এসেছে অনেক্ষণ হলো। মৃদু বাতাস এসে লাগছে গায়ে। সন্ধ্যেরর পর এই সময়টা সর্বদা আরজু ভালো লাগলেও আজ লাগছে না।

নয়নতারার নিশ্চুপতা এই পর্যায়ে এসে তাকে অস্থির করে তুলছে। কাল রাতে ফ্লাইট অথচ মেয়েটা এখনো গাল ফুলিয়ে বসে রয়েছে। একটু দেখাটুকুও দিচ্ছে না, কথা বলছে না। কি জ্বালা! মেয়েটা চাচ্ছেটা কি? এত জ্বালায় কেন সে?
আরজু রুমে এলো। সাদা টি-শার্ট এর উপর একটা সাদা শার্ট পরলো। শার্টের বোতাম খোলা। হাতে ঘড়িটা পরেই ব্যস্ত গতিতে বাসা থেকে বেড় হতে লাগলে পেছন থেকে বোন ডেকে বলল,
“কিরে ভাই? এই সন্ধ্যেতে কই যাস? আকাশে তো মেঘ করেছে।”
আরজু স্মিত হেসে বলে,
“মেঘ করেছে তা তো আমি জানিই আপু। তাই তো যাচ্ছি মেঘ কাটিয়ে বৃষ্টি নামাতে। ফিরতে দেরি হবে। চিন্তা করিস না।”
বলেই বেড়িয়ে পরে। আকাশের ভারী মন খারাপ, মন খারাপ বুঝি দুটো প্রাণেরও! বহুদিন দেখতে পাবে না সেই তৃষ্ণায় যেন আগে আগেই তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠছে! জনমানবহীন পথ। দুই একজন যারা আছে তারাও আড়ালে-আবডালে চলে যাচ্ছি। খুব স্প্রিডে বাইক চালানোর ফলে চিরিচিরি বৃষ্টির কণা এসে আছড়ে পরছে ছেলেটার চোখে, মুখে, শরীরে।
নয়নতারাদের বাসার সামনে আসতে আসতে বৃষ্টির তেজ বেড়ে বর্ষণমুখর হয়ে উঠলো চারপাশ। আরজু তড়িতগতিতে সিড়ি ভেঙে উপরে উঠলো। কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো নয়না। আরজুকে দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে একগাল হাসলো। আরজু এক হাতে নিজের চুল ঝাকড়াতে ঝাকড়াতে বলল,
“হাই ময়না পাখি! তোমার আপু কই? বাসায় আছে?”
নয়না হাসি হাসি মুখ করে বলল,
“আপু তো ছাদে গিয়েছে। কাউকে যেতে নিষেধ করেছে। গেলে খুব বকবে! তুমি যেও না যেন।”
আরজু স্বচ্ছ হেসে বলল,
“বকা দিলে বকা খাবো। অনেকদিন তোমার আপুর বকা খাই না।”
বলে নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে ছাদে চলে গেলো।
ভেতর থেকে ডাক এলো,
“কে এসেছে রে নয়না?”
নয়না হতভম্বের ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে বোকা বোকা সুরে বলে,
“আরজু ভাইয়া এসেছে। এখন আপুর বকা খেতে গিয়েছে! এই আম্মু? তোমার মেয়েও পাগল, তোমার মেয়ের জামাইও দেখি পাগল! একজন শান্ত পাগল আরেকজন অশান্ত পাগল!”
.
এখন আর টুপটুপ করে বৃষ্টি পড়ছে না। এখন হচ্ছে ঝুম বৃষ্টি। ছাদের ঠিক মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে আছে নয়নতারা। পরনে লাল রঙ এর একটা সুতার কারুকার্যময় লেহেঙ্গা! ঘন কালো চুলগুলো কোমড় ছাড়ানো। দৃষ্টি তার আকাশের দিকে। এই বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় ফোঁটায় যেন মন খারাপের কাব্য ঝড়ছে। চোখ, মুখ, শরীর সাথে মনটা ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে। নয়নতারা হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিগুলো মুঠোবন্দি করতে চায়। এবং বারংবার ব্যর্থ হয়।
সিড়ি ঘরের দেয়ালটার সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে, হাত দুটো বুকের উপর ভাঁজ করে ‘বৃষ্টি ভেজা ফুলে’র বৃষ্টি বিলাস দেখে এক মুগ্ধ যুবক। আবছা আলোয় কি স্বচ্ছ সুন্দর দেখাচ্ছে!
ইচ্ছে হয় কাছে যেতে। কিন্তু ছেলেটার অবচেতন মন নিজে নিজে তৈরি করে ‘অতি সুন্দর জিনিসগুলোর খুব কাছে যেতে নেই।’

নয়নতারা আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকেই হালকা ঘার ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকায়। বৃষ্টির তোপে পরে খুব ভালো করে চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। তবুও তাকিয়ে থাকে ছেলেটার দিকে।
এইবার আর নিজের তৈরি মনগড়া কথাটা বেশিক্ষণ স্থায়ী করতে পারলো না আরজু। এই ভেজা ফুলের ন্যায় অসম্ভব রূপবতী মেয়েটারকে খুব কাছে গিয়ে না দেখাটা ভয়াবহ অন্যায় বলে বোধ হতে লাগলো এবার। ঝড়ঝড় করা বৃষ্টিতে নেমে এলো সে-ও ভেজা ফুলে মুগ্ধ হতে।
আরজু কাছে আসে, খুব কাছে। নয়নতারা হাত দিয়ে নিজের মুখের উপর থেকে পানি মুছতে চায়। কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে ছেলেটার দিকে। ছেলেটার চুলগুলো তার নিজের সীমা লঙ্ঘন করে কপাল ছড়িয়ে পরে। আর সেই চুলের ডগা হতে মুক্তোর ন্যায় ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝড়ে। নয়নতারা ভাবে, এই শ্যামবর্ণের পুরুষটার চাইতে অধিক মায়াকাড়া আর কে আছে? কেউ নেই! কেউ না!
আরজু নয়নতারার গালে হাত রাখে পরম আদরে। মুগ্ধ হয়ে দেখে তার বৃষ্টি ভেজা ফুলটুসিকে। কপালে লেপটে থাকা চুলগুলো সরায় যত্ন করে।
নয়নতারা শুধু এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। মেয়েটার চোখে পানি কিনা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। শ্রাবণ ধারায় মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে বুঝি তার চোখে অভিমানী পানি!
আরজু নয়নতার কাছে আসে, খুব কাছে। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,

আজ বরং বৃষ্টি নামুক
অঝোর ধারায়।
তৃষ্ণাতুর প্রাণ দুটো ভিজিয়ে দিক
শ্রাবণ ধারায়!

তুমি বরং রাতের কাননে
ফুল হয়েই থেকে যেও,
আমি নাহও পাগল প্রেমিক
ভালোবেসে আগলে নেব!

রাতের কানন, দিনের কানন
বৃষ্টি ভেজা মুগ্ধ কানন
শুনছো মেয়ে?
তুমি আমার ফুলে ভরা
শুভ্র কানন!

ভালোবাসি ফুল, ভালোবাসি ফুলটুসি। তুমি আমার, কেবল আমার সুন্দর অরন্যের ফুল!

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here