#তুমি_ফিরে_এসো🍂
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat
তারপর আরশি সবাইকে ফাকি দিয়ে নিচে নেমে আয়ুশীর বারান্দার সাথে একটা মই লাগিয়ে ওকে মিসডকল দিলো।মিসডকল পেয়ে সাথে সাথেই আয়ুশী বারান্দা দিয়ে নেমে পড়লো তারপর দুজনেই পিছনের গেট দিয়ে যখনই বের হতে যাবে তখনই পিছন থেকে আয়ুশীর মা বলে উঠলো
“আয়ু কোথায় যাচ্ছিস?”
মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে আয়ুশী বরফের মতো জমে গেলো।আয়ুশীর মা আরশিকেও একই প্রশ্ন জিগ্যেস করলো।আরশী আমতা আমতা করতে করতে বলল
“ইয়ে মানে আন্টি আসলে ওই আর কি… ”
আরশি আপ্রাণ চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে কোনোকথা বের করতে পারছে না।আয়ুশীর মা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল
“দুজনেই আমার রুমে আসো কথা আছে।”
তারপর দুজনেই আয়ুশীর মায়ের পিছনে ওনার রুমে গেলো।আয়ুশীর মা গম্ভীর মুখে বলল
“আমি জানি তোরা কোথায় যাচ্ছিস।”
আরশি তাড়াতাড়ি বলল
“না আন্টি আপনি যেমন ভাবছেন তেমনটা না।”
আরশির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে আয়ুশীর মা বলল
“আমি যেটা ভাবছি সেটাই।আয়ুশী পালাচ্ছিলো।আর তুমি ওকে পালাতে সাহায্য করছিলে।”
তারপর আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে বললেন
“আয়ুশী একটা কথা বলি শোনো তোমাকে তন্ময়কেই বিয়ে করতে হবে আর যদি তন্ময়কে বিয়ে না করো তাহলে তোমাকে আমরা আর মেয়ে হিসেবে মানবো না।যে মেয়ে মা বাবার কথা রাখতে পারে না সে মেয়ে না থাকাই ভালো।যদি পালিয়ে যাও তাহলে আমাদের সাথে আর যোগাযোগ করতে পারবে না।এবার সিদ্ধান্ত তোমার বাবা-মা নাকি ভালোবাসা?”
মায়ের কথা শুনে আয়ুশী মুহুর্তেই কান্না করে দিল।
তারপর মায়ের পায়ের কাছে বসে বলল
“জন্ম দিয়ে মানুষ করেছো আমাকে তাই আমি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ।সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশটাই করলাম আজ। হ্যাঁ আমি এই বিয়েটা করছি।দায়িত্বটা পালন করেছো ঠিকই কিন্তুু ভালোবাসো নি। ভালোবাসলে কখনোই এমন করতে পারতে না।”
এগুলো বলেই মায়ের পায়ের কাছ থেকে উঠে দাড়ালো আয়ুশী তারপর নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো।আয়ুশীর পিছনে আরশিও গেলো।রুমে গিয়ে আয়ুশী পাথরের মতো বসে আছে।আরশিরও শান্তনা দেওয়ার কোনো ভাষা নেই।যথারীতি আয়ুশীকে স্টেজে নেওয়া হলো।আর এদিকে আহিনও আয়ুশীর ভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে আছে।কিন্তুু আয়ুশীর আসার কোনো নামই নেই।আহিন অধৈর্য হয়ে আয়ুশীকে কল দিলো কিন্তুু আয়ুশীর ফোন বন্ধ।অনেকবার ফোন করার পরও ওকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।রাগে আহিনের মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে।আহিন রুপাকে ফোন দিলো।রুপা আয়ুশীর ক্লাসমেট।আর আহিনের প্রতিবেশী।
“হ্যাঁলো রুপা।”
“জ্বী আহিন ভাই বলেন।”
“আচ্ছা আয়ুশীর কি হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে?”
“হ্যাঁ,হয়েছে।সবাই ওকে হলুদ লাগাচ্ছে।”
“ও আচ্ছা।”
এটা বলেই আহিন ফোন রেখে দিলো আর মনে মনে বলল এতটা স্বার্থপর হতে কি বিবেকে বাধে নি?ভালোবাসার মর্যাদা তুমি রাখতে পারলে না।আমার ভালোবাসা কি এতই ঠুকনো ছিলো যে তুমি সবকিছু ছেড়ে আসতে পারলে না।
এগুলো ভাবতে ভাবতেই আহিন বাসায় চলে গেলো আর গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে রইলো।একটু পর চারটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।
এদিকে খুব ভালোভাবেই আয়ুশীর গায়ে হলুদ শেষ হলো।আয়ুশী শুয়ে আছে।চোখের পাতায় একফোটাও ঘুম নেই।পাশেই আরশিও শুয়ে আছে।তাঁর চোখেও ঘুম নেই প্রিয় বান্ধবীর কষ্টে যেনো নিজেরও কষ্ট হচ্ছে।কাল বিয়ে আয়ুশীর।বিয়ের কার্ডে আয়ুশীর পাশে তন্ময়ের নাম লেখা থাকবে যেখানে আহিনের নাম লেখা থাকার কথা ছিলো।ভাগ্যের পরিহাসে আহিনের নামটা মুছে তন্ময়ের নামটা বসে গেলো।এটাই হয়তো হওয়ার ছিলো।
আজ বিয়ে।আয়ুশীকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।এখনো বরযাত্রী আসে নি।বরযাত্রী আসার অপেক্ষায় আছে কনে পক্ষ।তন্ময়রা আসলেই বিয়ে পড়ানো হবে।আর এদিকে আহিনের ঘুম ভাঙ্গলো একটু আগে।নিজেকে কেমন যেনো পাগল পাগল লাগছে।আহিন ফোনটা হাতে নিলো শেষ বারের মতো আয়ুশীকে ফিরে আসার জন্য বলতে কিন্তুু আয়ুশী কল ধরছে না।আহিন বাইরে গিয়ে পাশের ফ্ল্যাট থেকে রুপার ফোনটা নিলো তারপর আয়ুশীকে ফোন দিলো।দুই রিং হতেই ফোনটা রিসিভ হলো।আহিন ফোনটা কানে লাগিয়ে বলল
“#তুমি_ফিরে_এসো।পারবো না থাকতে তোমাকে ছাড়া।”
আয়ুশী ফোন কাটতে নিলেই আহিন তৎক্ষনাৎ বলল
“ফোনটা কেটো না প্লিজ।চলে এসো এখনো সময় আছে।চলো না আমরা দূরে কোথায় চলে যাই।”
“আহিন নিজেকে সামলাও।কেউ কাউকে ছাড়া মরে না।তুমিও মরবে না।ভালো থেকো।আল্লাহ হাফেজ।”
এটা বলে আয়ুশী ফোনটা রেখে দিলো।আহিন রুপার ফোনটা ওকে দিয়ে নিজের রুমে এসে আবার ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
এদিকে আয়ুশীর বিয়েটা তন্ময়ের সাথে হয়ে গেলো।চলে যাচ্ছে আয়ুশী তন্ময়ের সাথে।কপল বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে।
তারপর একসপ্তাহ চলে গেলো।আয়ুশী আর তন্ময় বিয়ের দুদিন পরই অস্ট্রেলিয়া চলে গেলো।আর আহিনও ওর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেলো।
কিছু কিছু গল্প এখানেই শেষ!! কিন্তু এই গল্পটা এখানেই শুরু হলো।
দেড় বছর পর….
“স্যার আপনি কি আজকে পড়াতে আসবেন?”
“হ্যাঁ রাতে আসবো।অফিসে প্রচুর কাজতো তাই।”
“আচ্ছা স্যার।”
আহিন আবার নিজের কাজে ডুবে গেলো।আহিনের এই ফারিয়া মেয়েটাকে একদম দেখতে ইচ্ছে করে না।খালি একটু পর পর ফোন দিবে আর বলবে খেয়েছে কি না!!মনে হয় যেনো বউ!!বউয়ের কথা মনে আসতেই আয়ুশীর মুখটা ভেসে উঠলো।একসময় ওদের মাঝে কথা হয়েছিল কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না কিন্তুু আজ ঠিকই অন্যের বউ।আহিন আজও বুঝে উঠতে পারে না কেনো আয়ুশী সেদিন এমন করলো।সব কিছু তো ঠিকই ছিলো।তবে ও আসলো না কেনো??নাকি শেষ পর্যন্ত টাকাওয়ালা জামাই ছাড়তে চায় নি।কথাগুলো ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আহিন।আর একঘন্টা পরই ডিউটি শেষ তারপর বেরিয়ে গিয়ে ফারিয়াকে পড়াবে এরপর বারে গিয়ে মদ খাবে।এটাই প্রতিদিনের রুটিন।
ফারিয়াদের বাসায় কড়া নাড়তেই দরজা খুলে দিলো ফারিয়া যেনো দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিলো।মেয়েটা কেমন যেনো গায়ে পড়া স্বভাবের।এটা আহিনের একদমই পছন্দ না।তবুও পড়াতে হয় বসের মেয়ে বলে কথা।নাহলে এই মেয়েকে পড়াতে বয়েই গেলো।আহিন গিয়ে টেবিলে বসলো ফারিয়া আহিনের সামনাসামনি বসলো তারপর মিটমিট করে হেসে বলল
“স্যার আমাকে কেমন লাগছে?”
আহিন ফারিয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল
“ভালো।”
ফারিয়া মলিন মুখে বলল
“শুধুই ভালো?”
“তো তুমি কি শুনতে চাও?”
“এই প্রথম শাড়ি পরলাম তাও আপনার জন্য আর আপনি শুধু ভালো বললেন?মানতে পারলাম না।”
আহিনের মন চাচ্ছে কষে একটা থাপ্পড় দিতে কিন্তুু রাগ সংযত রেখে বলল
“ফারিয়া সামনে তোমার ইন্টারের পরীক্ষা তোমার সেদিকে মন দেওয়া উচিত।আর শোনো আজকের পর থেকে পড়ার বিষয় ছাড়া আর কোনো বাড়তি কথা বলবে না।”
ফারিয়া কোনো কথা না বলে চুপচাপ বই খুললো তারপর ওকে কোনোমতে পড়িয়ে আহিন বেরিয়ে গেলো বারে যাওয়ার জন্য।বারে মোটামুটি অনেক্ক্ষণ থাকলো।রাত ১১ টার সময় একবতল হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।টলতে টলতে হাটছিলো। এমন সময় একটা কুকুরের লেজে পা পড়তেই কুকুর ঘেউ ঘেউ শুরু করলো আর আহিন টলমল পায়েই দৌড়ানো শুরু করলো।হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লাগলো।একটা মেয়ে কন্ঠ বলে উঠলো
“আপনি ঠিকাছেন?”
আহিন চোখ তুলে তাকালো তারপর মৃদু কন্ঠে বলল
“আমাকে একটু বাড়িতে দিয়ে আসতে পারবেন?আসলে আমার পিছনে কুকুর পড়েছে।”
আহিনের কথা শুনে মেয়েটা হাসতে হাসতে বলল
“আপনার বাড়ি কই?”
“সামনে গিয়ে হাতের বাম পাশে।”
“ওহ!!!আপনি কি নীল বিল্ডিংয়ে থাকেন?”
“হুম।”
“আমি ওটার পাশেরটায় থাকি।চলুন যাওয়া যাক।”
মেয়েটা আহিনের হাত ধরে ওকে নিয়ে চলল।তারপর আহিনকে ওর বাসায় দিয়ে নিজেও চলে এলো নিজের বাসায়।এসেই কেউ একজনকে কল করলো।…..
চলবে……🍁
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)