তুমিময় পর্ব ৬

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#পার্ট ৬
ভরা দুপুর, বাইরে কাঠ ফাটা রোদ্দুর। কিছু কাক কা কা করছে দূরে। রোদে উত্তাপে বাহিরে দুই একজন লোকজনের ও দেখা মেলছেনা আজ। আহি আয়াত ভাইয়া কাল রাতে হানিমুনে গিয়েছে। দুই পরিবার তারা ফিরে আসা পর্যন্ত এখানেই থাকবে। আজ দুদিন জ্বরের দোহাই দিয়ে বাহিরে যাইনা আমি। আদনান ভাই আদৃতা আপুকে এক সাথে দেখার সহস হয়না আর কেননা আগের মতো মনে সূক্ষ্ম আশাটুকু আর নেই আদনান এসব নাটক করেন। আমাকে ভালোবাসেন। নিজেকে বড্ড ছোট লাগছে আজ। দ্যা গ্রেট আদনান ভাইকে ভালোবাসার মতো ভুল কি করে করলাম আমি? আমার কী সেই যোগ্যতা আছে? কোথায়। আদনান ভাই কোথায় আমি!

তাছাড়া এতটা বেসামাল আমি কী করে হলাম কিভাবে বললাম আদনান ভাইকে এতো গুলো কথা কী করে শুনালাম আমি আমার অনুভূতি গুলো আমি সেটা ভেবেই অবাক। প্রেমে ডুবলে সত্যি মানুষ সব পায়ে ভয়কেও জয় করতে পারে যমকেও ভাল বাসতে পারে! আমার সাথেই তাই হয়েছে সেটাই আজ আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমার এতটা বেসামালেরও কারণ আছে। নিজের ভালোবাসা অন্যকারোর হয়ে যাবে শুনলে নিশ্চয়ই কোনও রমনী সামলে থাকবে না?

আহির হলুদের দিন রাতেই আমি নানুর ঘরে সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়। নানু আর বড় মামার সাথে আদৃতা আপুর বাবাকে তাদের বিয়ের কথা বলতে শুনেছি। তবুও বুকে পাথর চেপে পুরো বিয়েতে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছিলাম। শুধু মাত্র এই ভেবে আদনান ভাই…..এখন তার ঠিক আছে কথাটা আমার কানে বাজে শুধু। আর কিছুই নয়।

দুদিনেও আদনান ভাইকে দেখিনি এখন আর দেখতে ইচ্ছে করলেও। মনে হয় এভাবেই ভালো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ মেইন গেটের দিকে চোখ পরতেই দেখলাম আদনান ভাই দাঁড়িয়ে দৃষ্টি তার আমার উপর ভ্রু কুঁচকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে উমি। উনার এহেন দৃষ্টিতে আমি মোটেও বিচলিত হলাম না শুধু দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম। কিছু সময় পর আদৃতা আপুর কণ্ঠ শুনতে পেলাম। এবার পাথড় মনটা গলতে শুরু করলো। দাঁতে দাঁত চেপে কান্না গুলো গিলে নিলাম। আমার চোখের সামনে দিয়েই আদনান ভাই আদৃতা আপুকে নিয়ে গাড়ি করে বেরিয়ে গেলেন।

মাঝে আরও দুদিন চলে গেলো। আজ জ্বর পুরোপুরি সেরেছে একদিন আমি উন্মাদ জ্বরে ভুগেছি। এত জ্বর আমার কখনওই হয়নি। তাই তো জ্বর চলে গেলেও শরীরে অসহ্য ব্যাথা এখনও আছে। তবুও হুট করেই এতদিন রুম বন্ধ থাকলে সবাই অন্যকিছু ভাবতে পারে যা আমি চাইনা। তাই আস্তে আস্তে নিচে গেলাম সিঁড়ি বেয়ে। প্রায় নেমেই গিয়েছিলাম তখন হায়াদ এসে আমার বাম হাত ধরে বলল,

‘ চলো হেল্প করছি! ‘

আমি মাথা দুলালাম সত্যি একটু সাপোর্টের দরকার ছিল এই মুহূর্তে। কেমন যেন পা কাঁপছিলো! হায়াদের সাপোর্টে নেমে দাঁড়াতেই আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। সেটা দেখে হায়াদ বলল,

‘ অয়ত্রী আর একটু রেস্ট নিতে। তোমাকে অনেক দুর্বল লাগছে। ‘

আমি মলিন মুখে স্মিথ হেসে বললাম,

‘ একটু হাটলেই ঠিক হয়ে যাবো। আপনি কোথাও যাচ্ছেন? ‘

‘ না ড্রইং রুমে সবাই মুভি দেখছে চলো তুমিও বসবে!’

‘ চলুন!’

হায়াদ ভাই আমাকে আবারও ধরে নিয়ে গেলো ড্রইং রুমে। ডুপ্লেক্স বাড়ি হওয়া দু তিন দিক দিয়ে সিঁড়ি আছে নিচে নামার আমি সামনের সিঁড়ি দিয়ে নামিনি। পিছনের দিক দিয়ে নেমেছি। হায়াদ আমাকে সেখান থেকে সামনে ড্রইং রুমে নিয়ে গেলো। সেখানে আদনান ভাই সহ সবাই বসে কাজিন গুলো। বড়া নেই হয়তো এই বিকেল টাইমে যে যার রুমে। আমি গিয়ে মাইশার পাশে বসলাম। আমার বাম পাশেই হায়াদ বসলেন। আমাকে দেখেই আদৃতা আপু আমাকে দেখেই আদনান ভাইয়ের গা ঘেষে বসলেন। আমি সেদিকে না তাকিয়ে দৃষ্টি বিশাল স্ক্রিনের টিভিতে রাখলাম। দেবদাস দেখছে সবাই এই পুরোনো মুভি দেখার মানে বুঝতে না পেরে এক বার হায়াদের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দিলাম। সে দুষ্টু হেসে বলল,

‘ পুরোনো স্মৃতি চারণ করা স্বাস্থের জন্য ভালো! ‘

আমি বিরক্তিকর চাহুনি ওকে ছুঁড়ে মেরে সেই দেবদাস মুভি দেবদাসি হয়ে দেখতে লাগলাম। মনে মনে নিজের ভাগ্যকে হাজার গালি দিলাম। যখন কষ্টে থাকি তখন পুরো কায়নাত ঘুরেফিরে কষ্ট মার্কা জিনিস গুলোই চোখের সামনে ঘুরায়। তাতে যেন কষ্ট দ্বিগুন বেরে যায়। কায়নাত বড্ড নিষ্ঠুর!

রাতে একেবারে খেয়ে দেয়ে রুমে এলাম এর মধ্যে একবারও আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাইনি ভুলেও। তাতে মনে হলো কষ্ট বারবে আর কিছুই নয়। দেখতে দেখতে এক সাপ্তাহ চলে গেলো। সব স্বাভাবিক তবে আমার জীবনটা পাংসে হয়ে গেছে। আজকাল একা থাকতে ভালো লাগে কাজিনদের আড্ডায় আমাকে পাওয়া যায়না। সবাই জিজ্ঞেস করলেও কি হয়েছে তোর। আমার উত্তর শরীর ভালো না বলেই কেঁটে পরা সবার চক্ষু আড়ালে।

এভাবেই ১ সাপ্তাহ কেটে গেলো। ছাঁদে দাঁড়িয়ে আমি সেই রাত থেকে ঘুম আসছিলো না আজ কেমন অস্থির লাগছিলো সব। তাই রাত দু’টোর দিকে ছাঁদে এসে দাঁড়িয়েছি এখন ভোর। আমার চোখের সামনে দিয়েই নিকষ কালো আঁধার কেঁটে ধীরে ধীরে আলোকিত হয়ে গেলো আকাশ পাতাল। মনে হলো ইশ যদি আমার জীবনটাও এভাবেই আলোকিত হয়ে যেতো? কিন্তু বাস্তবতা এটাই পৃথিবীতে রাত দিন যেমন আছে তেমনি জীবনে ভালো সময় খারাপ সময় বলেও একটা কথা আছে। আজ হয়তো আমার খারাপ সময় যাচ্ছে কিন্তু ভালো সময়টাও ঠিক আসবে ঠিক এই আলোকিত ভোরের মতো। আসতে বাধ্য তারা। কারণ এটাইযে নিয়ম দুঃখের পর সুখ আসবেই! ভাবনার মাঝেই মনে হলো কেউ পিছনে দাঁড়িয়ে। আমি ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকাম অমনি কেই ” ভাউউউ ” শব্দ করে উঠলো। বিকট এক চিৎকার মেরে তব্দা মেরে গেলাম সামনে হায়াদ দাঁড়িয়ে।

আমাকে এত ভয় পেতে দেখে বেচারা নিজেই ভয় পেয়ে গেলো। আমি বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলাম। হায়াদ আলতো করে পিঠে হাত রাখতে যাবে তখন আমার চিৎকার থেকে বিকট জোরে শব্দ হলো। তাতে এবার আমি চিৎকার দিয়ে হায়াদকে ঝাপটে ধরলাম। বেশকিছু ক্ষণ পিনপতন নীরবতা। অতঃপর আমি পিটপিট করে চোখ খুলতেই দরজায় চোখ পরলো। আদনান ভাই দাঁড়িয়ে রক্তিম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। আমি আদনান ভাইকে দেখে দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়ালাম হায়াদ উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,

‘ আই এ্যাম সরি অয়ত্রী! বুঝিনি এতটা ভয় পাবে তুমি! ‘

আমি মাথা দুলালাম এই মুহূর্তে আদনান ভাইকে ভয় করছে আর কিছু না। কেন এত ভয় করে তাকে সেটা ভেবেই কান্না পেলো। তবে সব চুকিয়ে ফেলেছি আমি তাই কিছুটা স্বস্তি আছে মনের কোণে। আমি আদনান ভাইয়ের দিকে আর তাকালামা না। হায়াদকে বলাম,

‘ ইটস ওকে। আসকে অন্যমনস্ক ছিলাম তাই ভয় পেয়ে গেছি বেশি। আপনি এত সকালে ছাঁদে কেন? ‘

হায়াদ আদনান ভাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে মেকি হেসে বলল,

‘ তোমাকে পাহাড়া দিচ্ছিলাম যদি ছাঁদ থেকে কোন ছেলে পরি এসে তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় তাই…..!’

এই কথা শুনে দেখলাম আদনান ভাই আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়ে হনহনিয়ে নিচে চলে গেলেন। আমি অবাক চোখে হায়াদের সিকে তাকালাম ওর মুখে রহস্যময় হাসি! আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো তখন।

পিহু আপু ছুঁটে এসে আমার হাত ধরে নিচে নিয়ে যেতে লাগলেন। আমি হায়াদ ভাই দুজনেই হতবিহ্বল পিহু আপুর কাজে। আপু আমাকে আমার রুমে ঢুকিয়ে রুম বাইরে থেকে লক করে দিলেন। আমি রুমে ঢুকেও শুনতে পাচ্ছিলাম আদনান ভাইয়ের রুম থেকে ভেসে আসছে ভাংচুরের শব্দ! তীব্র শব্দে কান ঝালাপা হয়ে যাচ্ছে। এদিকে আমি কিছুই বুঝতে পারছিমা হচ্ছেটাকি? আদনান ভাই কেন রেগে?

সে রেগে মেগে থাকলেই ভাংচুরের অভ্যাস আছে। তবে এখন উনি কেন রেগে মাথায় ঢুকছেনা। শুধু মনে হচ্ছে দুনিয়ায় সব বাজে অত্যাস এই ছেলের মধ্যে আছে ভালোই হয়েছে সে আমার ভালোবাসেনা।

তখনও আমি বুঝিনি আদনান ভাইয়ের ঘরে এই ঝড় আমাকে ঘিরে। আমার উপর শনি ঘুরছে! কপালে খারাপি আছে।

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here