#তুমিময়_বসন্ত
১৫.
#writer_Mousumi_Akter
ঘড়িতে সকাল সাতটা কোকিলের কুহু ডাক কান ভেদ করে মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করছে।আমি কানে হাত দিয়ে শব্দ কানে না পৌছানোর জন্য চেষ্টা করছি।ভীষণ ঘুম চোখে জড় সড় ভাবে এঁটে ধরেছে।এমন সময় কারো আলতো স্পর্শে কেঁপে উঠলাম আমি।আড়ষ্ট দুটো হাত আমায় আকড়ে ধরেছে খুব শুক্তপক্তভাবে।ঘুমে চোখ খোলার চেষ্টা করলাম।হালকা চোখ খুলে দেখি আয়াস আমায় জড়িয়ে ধরে রেখেছে।আয়াসের স্পর্শ ভীষণ ভালো লাগছে।সেই সাথে ভীষণ লজ্জা ও করছে।হঠাত আয়াস এমন করছে কেনো?জানিনা আমার কি হয়েছে আমি কেনো আয়াস কে বাঁধা দিতে পারছিনা।আয়াসের হাতের বাঁধন থেকে ছোটার জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু আয়াস আরো শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলো।
আমি একরাশ লজ্জা মুখে নিয়ে বললাম,
“দেখুন ছাড়ুন আমায়, এসব কি করছেন।আমার কিন্তু ভীষণ লজ্জা লাগছে।”
আয়াস মৃদু হেসে বললো,
“লজ্জা নারীর ভূষণ, লজ্জা লাগলে কি জড়িয়ে ধরা যাবেনা ডিয়ার মিসেস। ”
এটুকু বলেই আয়াস গালে একভাবে কতগুলো চুমু দিতেই আমজ খুব জোরে ধাক্কা মেরে দিলাম।সাথে সাথে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।ঘুম ভাঙতেই দ্রুত উঠে বসলাম আমি।বিছানার পাশে তাকিয়ে দেখি আয়াস নেই।আয়াস নেই দেখে মনের মাঝে একটু বিষন্নতা কাজ করলো।বোধহয় আয়াস থাকলেই ভালো হতো।হঠাত আয়াসের জন্য ভীন্ন এক অনুভূতি কাজ করছে।এই অনুভূতি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে হচ্ছে।হঠাত করেই তার জন্য ভালো লাগা কাজ করছে।তার কথা মনে হতেই কোথা থেকে ভালো লাগার হাসি দুই ঠোঁটের কোনায় জড় হচ্ছে।এবার যেনো আরো বেশী লজ্জা পেলাম আমি।লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে আমার।কিছুক্ষণ আগের স্বপ্ন টা আমার একদম ই স্বপ্ন মনে হয়নি।মনে হচ্ছিলো যা হয়েছে তা সত্যি হয়েছে।ওটা যদি স্বপ্ন ই হবে তাহলে এখনো কেনো মনে হচ্ছে তার স্পর্শ শরীর জুড়ে রয়েছে।কেনো মনে হচ্ছে গালে তার ওষ্ট স্পর্শ এখনো লেগে আছে।কেনো আর রাগ হচ্ছেনা আমার তার প্রতি।আমি আয়াস কে নিয়ে এমন স্বপ্ন কিভাবে দেখলাম সেটাই বুঝতে পারছিনা।আমি তো তাকে নিয়ে কখনো ভাবিনি।কখনো আয়াস কে ভেবে এক মিনিট ভালো কিছু ফিল করিনি।তাহলে কেনো?এই কেনোর উত্তর কোথায় পাবো।কাল সারারাত মন খারাপে ঘুম হয় নি ঠিকভাবে।শেষরাত্রে কখন ঘুমের দেশে পাড়ি জড়িয়েছি নিজেও জানিনা।তবে মাত্র কয়েক ঘন্টার ঘুম ভীষণ গভীর ঘুম হয়েছে।গভীর ঘুমে বোধহয় এমন উদ্ভট স্বপ্ন দেখেছি।সব ই শ/*য়/*তা/*নে র কাজ এসব স্বপ্ন তারাই দেখায়।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি টি-পট এ গরম পানি,চায়ের কাপ,টি প্যাক আর চিনি সব ট্রে তে করে টি টেবিলে রাখা আছে।নিশ্চয়ই আয়াস রেখে গিয়েছে।সে জানে আমি চা খেতে খুব পছন্দ করি।দুইদিন আগে আমি বলেছিলাম আমার চা খেতে খুব ভালো লাগে।সে সাথে সাথে চিনামাটির টি-পট,চায়ের কাপ কিনে এনেছে।আমি যেনো চা খেয়ে রাজকীয় একটা ব্যাপার অনুভব করতে পারি।আমাকে বলেছিলো আমি তো কোনো রাজা নয়,রাজরাণীর মতো জীবন তোমায় দিতে পারবোনা তবে বউ একটু রাজকীয় ভাবে চা খাবে তার ব্যবস্থা ঠিক ই করতে পারি।সব থেকে সুন্দর জিনিস এতক্ষণ আমার চোখের আড়ালে ছিলো।একরাশ মুগ্ধতা আমার চোখের সামনে রয়েছে।চায়ের কাপের পাশে অনেক গুলো কৃষ্ণচূড়ার ডাল।অনেক গুলো কৃষ্ণচূড়া ফুল টকটকে লাল ভীষণ সুন্দর লাগছে দেখতে।ফুলগুলো হাতে নিলাম আমি।ফুল ভালো লাগেনা এমন কেউ আছে এই পৃথিবীতে তাও যদি হয় কৃষ্ণচূড়া ফুল।পাশে একটা চিরকুট রাখা আছে।চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুলে পড়লাম,,
“ছেড়ে আসা ট্রেন আর ফেলে আসা স্মৃতির জন্য কখনো আফসোস করতে নেই।
ট্রেন যেমন আবার আসে, ঠিক তেমনই স্মৃতি বুনার সুযোগও আবার ফিরে পাওয়া যাবে,
তবুও পিছু ফিরে তাকাতে নেই । শুধু অপেক্ষা করতে হবে ধৈর্য্য ধরে ।
পিছু ফিরে তাকানোই মানে ছলনাময়ীর মায়ায় পড়া।।
.
ফাথেয়া নুর।”
–চিরকুট টা পড়ে যেনো অতীত বিলীন হয়ে গেলো অনেকখানিক।এক কাপ চা ঢেলে নিয়ে এদিক ওদিক আয়াস কে খুজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না।তাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছা করছে।চা খেতে খেতে পশ্চিম পাশের জানালা খুলে দিলাম।জানালা খুলে দিতেই ঝড় হাওয়ার মতো বাতাস ঘরে প্রবেশ করলো।এলোমেলো চুল বাতাসে আরো এলোমেলো হয়ে উড়ছে।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে লাল লাল হয়ে আছে।ঠিক যেনো লাল ভালবাসার পৃথিবী। ইচ্ছা করছে খালি পায়ে ওখানে গিয়ে হাঁটি।এ বাসার পশ্চিম পাশের দিকটা একদম ই খোলামেলা।বেলকনিতে দাঁড়ালে শুধু এক নজরে কৃষ্ণচূড়ার সমাহার দেখা যায়।
–বেলকনিতে উঁকি দিয়ে দেখি আয়াস কালো ট্রাউজার,সাদা গেঞ্জি আর সাদা বুট পরে বাসার দিকে আসছে।মনে হচ্ছে জগিং এ গিয়েছিলো।আয়াসের সাথে পাশের ফ্লাটের আরাহান ভাইয়া আছে।সাথে সারিকা নামের মেয়েটাও আছে।সারিকা ও ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরে জগিং গেছিলো।সারিকাকে এমন পোশাকে আয়াসের পাশে আমার মোটেও ভালো লাগেনি দেখে।হয়তো অন্য কোনো মেয়ে হকে নেগেটিভ কোনো চিন্তা মাথায় আসতো না তার পোশাক নিয়ে।কিন্তু সারিকার পোশাক নিয়ে আমার মনে অনেক গুলো নেগেটিভ ভাবনা।মেয়ে মানুষ কেনো ওড়না ছাড়া এভাবে দৌড়াদৌড়ি করবে।
পাঁচ মিনিটের মাঝে আয়াস ঘরের ভেতরর প্রবেশ করলো।কপাল দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফোঁটায় ফোঁটায় লেগে আছে,সমস্ত শরীর ঘামে চিপচিপে হয়ে আছে।আয়াস রুমে এসে বিছানায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,
“গুড মর্ণিং।”
আয়াস কে দেখেই স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আয়াস স্বয়ং ছিলো।ওর ও হয়তো সবটা মনে আছে।কিভাবে নিজের লজ্জা আটকাবো জানিনা।জানালার পর্দা ঠিক করতে করতে বললাম,
“হুম গুড মর্ণিং।”
“আমি গোসলে যাচ্ছি,এসে একসাথে নাস্তা করবো।”
“ঠিক আছে।”
আয়াস গোসল শেষে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে খালি বেরোলো টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে।সমস্ত শরীরে পানি লেগে আছে।বিয়ের পর আজ প্রথমবার আয়াস কে সুন্দর দেখাচ্ছে আমার চোখে।আয়াস হঠাত মাথা মোছা স্টপ করে আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো আমি দুই হাতের মুঠোয় করে শাড়ির আঁচল কচলাচ্ছি।আয়াস টাওয়াল টা বিছানায় ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“আমাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছো কেনো তুমি?”
“কই নাতো।”
“কই নাতো মানে।আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছো তুমি।কাহিনী কী?”
“লজ্জা পেতে যাবো কেনো?”
“কেনো পাচ্ছো সেটাই জানতে চাইছি।কাহীনী কি মুগ্ধতা।”
“কোথায় লজ্জা পাচ্ছি।”
“কথা বলছো তাও চোখে মুখে লজ্জা। আবার বলছো কোথায় লজ্জা পাচ্ছি।”
“আপনার মনে হলে আমি কি করবো।”
“মনে মনে আমায় নিয়ে ফুলসজ্জা করোনিতো আবার।”
“দুনিয়ার বাজে কথা শুধু।”
“শাড়ি তো খুলে পড়ে গেলো।এইভাবে শাড়ি পরে যদি সারাক্ষণ কুচি খুলে পেট বের করে ঘুরর বেড়াও আমার পক্ষে নিজেকে সংযত রাখা কিভাবে সম্ভব।”
“শাড়ি শুধু খুলে যায়। আমার থ্রী পিছ কোথায়?”
আয়াস আমার সামনে কতগুলো থ্রি পিছ এনে ধরলো।আর বললো এইগুলা কিছু রেডিমেট আছে আর কিছু টেইলার্স এ দিতে হবে।তোমার মাও জানিনা তাই দিতে পারিনি।বিছানায় প্যাকেট গুলো বের করে দেখি বিভিন্ন কালারের থ্রি পিছ।
আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“এত কেনো?”
“তোমার কোন কালার পছন্দ আমি তো জানিনা।তাই সব কালার এনেছি।”
“এত বাজে টাকা খরচ করার কি প্রয়োজন। ”
“টাকা বাজে ভাবে আর কোথায় খরচ করলাম। বউ এর জন্য যদি এতটুকু খরচ না করি তাহলে টাকা ইনকাম করে লাভ কি।”
“তাই বলে অযাচিত খরচ করবেন।”
“অযাযিত খরচ না করে কি করবো।আমার কি আর ছেলে মেয়ে আছে যে তাদের জন্য জমাবো। ছেলেমেয়ে হওয়ার ও চান্স নেই।”
“কেনো আপনার কি শারীরিক কোনো সমস্যা আছে যে সন্তান হবে না।আমার তো কোনো সমস্যা নেই। ”
আয়াস কপাল টানটান করে আমার দিকে তাকালো।
আয়াস কে এইভাবে তাকাতে দেখে বললাম,
“যদি সমস্যা থেকে থাকে ডাক্তার দেখান।”
আয়াস জোরে কাশি দিলো।এক ভাবে কেশেই যাচ্ছে।যেনো ভীষণ ভাবে চমকে গিয়েছে।
#তুমিময়_বসন্ত
১৬.
#writer_Mousumi_Akter
আয়াস কে এইভাবে কাশতে দেখে আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে একগ্লাস পানি এনে দ্রুত আয়াসের দিকে ধরলাম।আয়াস ড্যাব ড্যাব চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে চোখে মুখে ভীষণ আশ্চর্যজনক চাহনি।আমি কি পৃথিবীর নবম আশ্চর্যজনক কিছু বলে ফেলেছি যার জন্য আয়াস এমন করছে।আয়াস পানির গ্লাস টা আমার হাত থেকে নিয়ে দুই ঢোক পানি খেয়ে গ্লাস টা আমার দিকে আবার এগিয়ে দিলো।
আমি পানির গ্লাস টা আয়াসের হাত থেকে নিয়ে বললাম,
“কি ব্যাপার আপনি এমন ভড়কে গেলেন কেনো?আমি তো ভালো কথা ই বললাম আপনার যদি শারিরীক কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে ডাক্তার দেখান।তো এতে ঘাবড়ে যাবার কি আছে।”
আয়াস আমার দিকে কপাল টান টান করে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে গভীর কিছু ভাবছে।বাট কি ভাবছে এক্ষুনি আবার উল্টা পাল্টা কিছু বলবে নাতো।কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“আমি তো ভাবতেই পারছি না আমাকে এমন মারাত্মক একটা কথা তুমি বলবে।না মানে তোমার মুখ থেকে এমন কথা বেরোবে ভাবা যাচ্ছেনা।আমার তো ভড়কে যাওয়া টায় স্বাভাবিক মুগ্ধতা।”
“মনে হচ্ছে আমি খুব অশালীন কিছু বলেছি যে আমার মুখ থেকে এমন কথা ভাবা যাচ্ছেনা।”
“যদি কথাটা ব্যাখ্যা করতে যায়,তাহলে কিন্তু অশালীন অনেক তথ্য বেরোলেও বেরোতে পারে।তো মিসেস মুগ্ধতা আয়াস চলো আমরা এবার এর ব্যখ্যা তে যায়।”
“কিসের ব্যাখা আশ্চর্য তো।”
“আমার সমস্যা আছে কিনা সেটা বুঝবো কিভাবে।এর ব্যাখা তাহলে স্টার্ট।”
“নো নিড।আপনাকে ব্যাখ্যা করতে কে বলেছে।আপনি ডাক্তার দেখান তাহলেই হবে।”
“আমার মতো ইয়াং,হ্যান্ডসাম একটা ছেলের কোনো প্রব্লেম থাকতে পারে তোমার কি তাই মনে হয়।আমাকে দেখে কি আসলেই মনে হয় কোনো সমস্যা আছে।”
“তো বললেন কেনো যে সন্তান হবে না।”
“সন্তান কি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করবো,নাকি গুগল থেকে।নাকি আকাশ থেকে টুপ করে পড়বে।সন্তান হওয়ার জন্য তো অন্য কিছু লাগবে।”
এবার আমি আয়াসের মতো কাশতে শুরু করলাম।কাশি হয়েই যাচ্ছে।বেশম খেলাম মারাত্মক আকারের।হাতে থাকা গ্লাসের পানি মুখে দিতে গেলেই আয়াস বললো এঁটো পানি আমি খেয়েছিলাম।আমি অন্য গ্লাসে পানি এনে দিচ্ছি।ওয়েট এক মিনিট।আমি আয়াস কে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
লাগবে না এখান থেকেই খেয়ে নিচ্ছি বলেই পানি খেলাম।জীবনে কারো গ্লাসে খাওয়া গ্লাসেও খাই নি।আর আজ আজ আয়াসের খাওয়া পানি খেতেও যেনো ভালো লাগছে।
এবার আয়াস বললো,
“তাহলে মুগ্ধতা আমার সন্তান হবে কিভাবে?সন্তান হওয়ার জন্য ফুলসজ্জা করা লাগে আই থিংক বাকিটা বুঝতে পারছো।নাকি বুঝতে পারছো না।না বুঝলে আরো ভালো আমি প্রাক্টিক্যাল এ বুঝাতে সক্ষম হবো যদি তোমার বুঝতে আপত্তি না থাকে।”
“চোখ রাঙিয়ে বললাম,বাজে কথা যত্তসব বলেই আমি গ্লাস নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।”
কিছুক্ষণ পরে নাস্তার টেবিলে বসে আয়াস আর আমি নাস্তা করছি।
নাস্তা করতে করতে আয়াস কে বললাম,
“বাইরের খাবার আর খাবো না।আজ থেকে রান্না, নাস্তা বানানো,চা বানানো সব আমি একাই করবো।বাইরে থেকে খাবার কিনলে অনেক টাকা নষ্ট হচ্ছে।তাছাড়া বাইরের খাবার রেগুলার খাওয়া কি ভালো।মানুষ কি না কি রান্না করে তার ঠিক নেই।”
“তুমি রান্না করতে পারো।?”
“সব তো পারিনা তবে মাছ,মাংস,ডাল আম্মুকে রান্না করতে দেখেছি টুকটাক পারি।খুব ভালো হবেনা হয়তো তবে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।ইউটিউব এর হেল্প নিবো প্রয়োজনে।”
“তুমি নিজেই ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারোতো।”
“আমি কি এসব পারি নাকি।”
“পারোনা পারতে হবে।নিজেকে আর মন ভালো রাখতে অনেক কিছু পারতে হবে মুগ্ধতা।জীবন মানে কি বলো।বিয়ে হয়েছে চারদেওয়ালের মাঝে জাস্ট রান্না করবা আর দুই চারটা বাচ্চা মানুষ করবা এভাবেই চুলে পাক ধরাবা।”
“তাহলে কি করবো?”
“রেজাল্ট দিক সব ভার্সিটি তে পরীক্ষা দিবা।আজ থেকে প্রিপারেশন নাও।”
“আমাকে পড়াবেন আপনি?”
“আশ্চর্য কথা বললে তুমি।তোমাকে পড়াবো না মানে।তুমি আয়াস এর ওয়াইফ বুঝলে।তোমাকে হাইয়ার এডুকেটেড হতে হবে।আমি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেই জবে ঢুকেছি বুঝলে। সো তোমাকে পড়তে হবে।আমার সাথে আজ লাইব্রেরি যাবে,এডমিশন এর যাবতীয় বই আমি কিনে দিবো।”
“এখন কি আর প্রিপারেশণ নেওয়ার টাইম আছে আমার।হয়তো আর পনেরো দিনের মাঝে রেজাল্ট দিয়ে দিবে।আমার দ্বারা কোনো ভালো কোনো ইউনিভার্সিটি চান্স এখন হবেনা।ন্যাশনালেই পড়তে হবে।”
“জীবনে বড় হতে গেলে কি শুধু পাব্লিক ইউনিভার্সিটি তেই পড়া লাগে।সবাই কি সেখানে চান্স পায়।দেশে হাজার হাজার মেধাবী স্টুডেন্ট আছে কিন্তু পাব্লিক ইউনিভার্সিটি তে কি তত গুলো সিট থাকে।তাই বলে কি বাকিরা থেমে থাকে।ন্যাশনালে পড়েও মানুষ বিসিএস ক্যাডার হচ্ছে বুঝলে।তোমার যদি মেধা থাকে কোথায় পড়ছো সেটা ফ্যাক্ট নয়। তোমার মেধা আর চেষ্টা থাকলে ঠিক ই একদিন না একদিন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবেই।তবে তার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম।আজ থেকেই প্রিপারেশন নাও ওকে।জাস্ট ফোকাস করো তোমার ক্যারিয়ার এ।তোমাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।একটা কথা মাথায় রাখবে যে রাঁধে সে চুল ও বাঁধে।এই ঘর সংসার এর পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে।আর তোমার পাশে থেকে যাবতীয় সাপোর্ট আমি দিবো বুঝলে।”
“আপনি সত্যি মানুষের মন ভালো করার ম্যাজিক জানেন।হতাসা থেকে একটা মানুষ কে বেরিয়ে আনার ম্যাজিক আছে আপনার আছে।লাইফে কেউ আমাকে এতটা উৎসাহ দেয় নি।আপনি খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথা ও বলতে পারেন আবার বুঝাতেও পারেন।”
“যাক এটাও আমার কাছে ম্যাজিকের মতো লাগছে।অন্তত আমার একটু হলেও প্রশংসা করলে তুমি।”
“প্রশংসার যোগ্য যে তার প্রশংসা তো করতে হবে।”
আয়াসের আনা থ্রি-পিছ গুলো পাশেই এক মহিলার কাছে বানাতে দিয়ে আসলাম।
আয়াসের আনা রেডিমেট থ্রি পিছ থেকে একটা কমলা কালারের থ্রি পিছ পরলাম।আজ বেশ ফ্রেশ লাগছে।এতদিন শাড়িতে কেমন হাঁপিয়ে উঠছিলাম।পড়ন্ত বিকাল সূর্য পশ্চিম আকাশে গোল বৃত্তের মতো দাঁড়িয়ে আছে।ঠিক যেনো আকাশের কপালে টিপ।আয়াস কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।কথা শেষ করে আমাকে বললো,
” অয়ন আসছে আজ।”
“ওএমজি কখন আসছে।”
“সকালে রওনা দিয়েছে চলে আসবে।”
“তো আপনি এমন খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?”
“তো কি করবো আমি?”
“বাজারে যান,অয়নের জন্য রান্না করতে হবেনা।”
“আমি ভেবেছিলাম খাবার কিনে আনবো।”
“কিনে আনবেন,সকালে কি বলেছিলাম।”
“বউটা কালো হয়ে যাবে আগুনের তাপে।সেটা ভেবে খারাপ লাগছে।”
“সিনেমা দেখেন ভালোই তাইনা?”
“কেনো?”
“এইযে সিনেমার ডায়লগ দিচ্ছেন।”
“এটা আমার ওয়ান ক্রিয়েশন ফর ইউ বুঝলে।কোন মুভিতে এই ডায়লগ শুনেছো।”
“না শুনে থাকলেও পরিচালক রা এমন রোমান্টিক আলাপ শুনলে ডায়লগ টা নিয়ে নিশ্চয়ই কোনো সিনেমায় লাগিয়ে দিবে।”
“মুগ্ধতা এই ডায়লগ টা কোন হিরোর মুখে বেশী মানাবে বলোতো।”
“হিরো আলমের হয়েছে।এক্ষুনি বাজারে যান আপনি।”
আয়াস রেডি হয়ে বাজারে চলে গেলো।আয়াস বাজারে যাওয়ার পরে মনে হলো পুরুষ মানুষ সব কি ঠিকঠাক আনতে পারবে।টক দই এর কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।অয়ন নাকি রোস্ট ভালো পছন্দ করে।কিন্তু ফোন পাবো কোথায় আয়াস কে বলার জন্য।পাশের ফ্ল্যাটে এক জোড়া দম্পতি থাকে।আমার সাথে দুই একবার কথা হয়েছে এর আগে।এই দম্পতির স্ত্রীর নাম কুসুম।একদম ই কালো দেখতে বাট ভীষণ সুন্দর মায়াবী দেখতে।কুসুম ভাবির স্বামি একদম ফর্সা, লম্বা দেখতে অবিকল নায়কের মতো।উনি কলেজের প্রফেসর।ওই ভাই নাকি ফর্সা মেয়ে রিজেক্ট করে কুসুম ভাবিকে পছন্দ করেছিলেন।উনার ধারণ সে ফর্সা তার সাথে একটা কালো মেয়েকেই ভালো মানাবে।তাই কুসুম ভাবিকে বিয়ে করেছেন।প্রতিদিন নাকি ভাবিকে বলেন তুমি এত সুন্দর কেনো কুসুম।আমার চোখে তোমাকে ভুবনভোলানো সুন্দরী লাগে জানো তুমি।তাদের ভালবাসা সত্যি দেখার মতো।কুসুম ভাবির মতো যদি সব কালো মেয়ের ভাগ্য হতো তাহলে ভীষণ ভালো হতো।কুসুম ভাবি কাপড় তুলে নিয়ে রুমে যাচ্ছেন।ঠিক তখন ই ডাক দিলাম আমি।আমার ডাক শুনে ভাবি ভীষণ মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
“আরে মুগ্ধতা ভাবি আপনি?আজ ঘর থেকে বের হয়েছেন তাহলে?”
“হুম,একটু ফোনটা দিবেন।উনাকে ফোন দিতাম।”
“কুসুম ভাবি ফোনটা আমার দিয়েছে ঠিক ই কিন্তু আমি আয়াসের নাম্বার জানিনা।কিভাবে ফোন দিবো।ভাবির দিকে তাকিয়ে বললাম উনার নাম্বার সেভ আছে।থাকলে একটু কল দিয়ে দিন।আমি উনার নাম্বার মুখস্থ করিনি।”
“ভাবি উনার নাম্বার বের করে কল দিয়ে বললেন, আজ ই মুখস্থ করে ফেলুন ভাবি।প্রিয়জনের নাম্বার অন্তরে রাখতে হয়।”
আয়াসের সাথে কথা শেষ করে ভাবিকে ফোনটা দিয়ে দিলাম।ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
এ কদিন আপনাকে ভারী মনমরা লাগতো ভাবি।আজ ভারী সুন্দর লাগছে কিন্তু।
আমি স্বভাবসুলভ হাসলাম আর ভাবিকে বললাম আজ ডিনারে আপনার আর ভাইয়ার দাওয়াত রইলো রাতে কিন্তু রান্না করবেন না ঠিক আছে।
কিছুক্ষণ পরেই কেউ আবার কলিং বেল চাপলো।আমি উঁকি মেরে দেখি ঘারে ব্যাগ ঝুলানো লম্বা ফর্সা ঠোঁটের কোনায় কালো মিছমিছ একটা তিল সামনের চুল বড় বেশ স্ট্যালিশ একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে পাশে বোরকা পরা একজন মহিলা ও আছে।দরজা খুলতেই ছেলেটি হেসে দিলো আর বললো,
“ভাবি রাইট।”
দরজা খুলে নিশ্চিত হলাম এটা অয়ন।আমি হেসে দিয়ে বললাম অয়ন রাইট।
“অয়ন বললো,জ্বী ভাবি আপনার ছোট ভাই অয়ন।”
কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বোরকা পরা মহিলাটি কে।
চলবে,,
(