তোকে দিয়েছি মন পর্ব ৩৭+৩৮

তোকে_দিয়েছি_মন❤
৩৭.৩৮
পর্ব – ৩৭
Writer: Sidratul muntaz

🍂
কিছু সময় নিরবতা পালনের পর উনি আরেকবার আমার দিকে আড়চোখে তাকালেন। উনার দৃষ্টিতে তীব্র রাগ স্পষ্ট। আমি উনার এই রাগান্বিত দৃষ্টিকে প্রশমিত করার উদ্দেশ্যে হালকা করে একটু হাসলাম। কিন্তু এতে যেনো উনার রাগ আরো বেড়ে গেলো। হুট করেই সোজা হয়ে ঘুরে বসলেন আমার দিকে। শব্দ করে বলে উঠলেন —

আচ্ছা? কি করলে তোমার বিশ্বাসের যোগ্য হয়ে উঠবো জানতে পারি?

আ আমি তো আপনাকে খুব বিশ্বাস করি। সত্যি বলছি। ( ঢোক গিলে) আ আসলে কালরাতে আপনাকে পাশে না পেয়ে নিচে খুজতে গিয়েছিলাম। পুরো বাড়ি অন্ধকার ছিল। শুধু সবসময় লকড থাকে যে ওই রুমটায় লাইট জ্বলছিল। কৌতুহল নিয়ে দেখতে গেলাম। আর তখনই শুনতে হল আপনার আর ডায়নার কথাবার্তা।

আমার কথায় উনি কঠিন দৃষ্টিতে মাথা ঝাকালেন।

— শুনেছোই যখন পুরোটা শুনতে। অর্ধেক শুনে দৌড় দেওয়ার কি দরকার ছিল?

–( চোখ বড় করে) আপনি কি করে বুঝলেন আমি অর্ধেক শুনে দৌড় দিয়েছি?

— কারণ যদি সত্যিই পুরোটা শুনতে….. তাহলে আজকে নিজের মাথাটাও ফাটাতে হতো না… আর আমার মাথাটাও না। স্টুপিড!

বলেই মাথায় হাত রাখলেন উনি। হালকা চোখ বন্ধ করে মাথার চিনচিনে ব্যথাটা সহ্য করার চেষ্টা চালালেন। আমি একটু কাছে গিয়ে আক্ষেপী কণ্ঠে বললাম–

খুব লেগেছে তাইনা?

উনি হাত দিয়ে আমাকে কাছে আসতে বাধ সাধলেন। ইশারা করে বললেন দূরে গিয়ে বসতে। আমিও অসহায়ের মতো আবার আগের জায়গায় গিয়ে বসলাম। উনি বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলেন–

আসছে এখন সিম্প্যাথি দেখাতে।

কি বললেন?

কিছু না।

আমি অসহায়ের মতো মুখ করে বললাম– আচ্ছা ডায়নার মেসেজ আপনি কেনো পড়ছিলেন সেটা তো বলবেন?

উনি দাতে দাত চেপে আমার দিকে তাকালেন।

শোনো তাহলে। প্রথম থেকেই বলি।।। মাঝরাতে তৃষ্ণা পেয়েছিল কিন্তু ফিল্টারে পানি ছিল না তাই নিচে গিয়েছিলাম পানি আনতে। গভীর রাত ছিল তাই কারো ঘুম ভাঙাতে চাইনি। নিচে গিয়ে লাইটও জালাইনি কারণ আমি লাইট জ্বালাতে গেলে কেউ না কেউ ঘুম ভেঙে ঠিক উঠে আসতো। সেজন্যই ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলাম। তখনই কানে আসল মিস ডায়নার কান্নার ফ্যাচ ফ্যাচ শব্দ। স্টোর রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করে মিস ডায়না কারো সাথে কথা বলছিল আর কাদছিল। এইটা বুঝেই আমি স্টোর রুমের এক্সট্রা চাবি দিয়ে লক খুলে আচমকা ঢুকে পড়লাম। আমাকে হঠাৎ দেখে মিস ডায়নার হাত থেকে ফোন পড়ে গেল। যতটুকু বুঝলাম….. ছেলেটা সামনের ফ্ল্যাটে থাকে। স্টোর রুমের জানালা দিয়ে ওই ছেলের বেডরুমের বারান্দা স্পষ্ট দেখা যায়। এইজন্যই রোজ মাঝরাতে ডায়না স্টোর রুমের লক খুলে ভিতরে বসে থাকে। গভীর রাত পর্যন্ত ওদের প্রেমালাপ চলে। অথচ শাহিদের বিয়ে হয়েছে তিনমাস। কয়েকদিন আগে তো হানিমুনেও গিয়েছিল। বাসায় নতুন বউ রেখেও মাঝরাতে বারান্দায় এসে আমার বাড়ির মেইডের সাথে লাইন মারে। কত্তবড় ফালতু একবার চিন্তা করে দেখো! আর মিস ডায়না তো আরেকটা স্টুপিড। যেই ছেলে বিয়ের পর বউ নিয়ে হানিমুন করে এসে অন্য মেয়েকে মাঝরাতে এইরকম রোমান্টিক মেসেজ পাঠিয়ে বলে আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে তোমাকে বিয়ে করবো.… তাকে হকিং স্টিক দিয়ে না পিটিয়ে তার জন্য কেদে গা ভাসায়। মানে এসব ইডিয়ট মেয়েদের কি করা উচিত? আচ্ছা তোমরা মেয়েরা এতো বোকা কেনো বলোতো ? যে ছেলে তোমাকে বিয়ে না করে অন্য কাউকে বিয়ে করে দুজনকে একসাথে ঠকাচ্ছে তার জন্য কেদে কেটে অস্থির। আর যে আসলেই ভালোবাসে তার দশা হয় এইযে এমন। ( মাথার ব্যান্ডেজে ইশারা করে)

আমি মাথা নিচু করে জিভ কাটলাম। অপরাধী কণ্ঠে উচ্চারণ করলাম– সরি!

উনি একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন– আমাকে দেখে মিস ডায়নার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গিয়েছিল। সেই সুযোগে আমি ফ্লোর থেকে ফোনটা তুলে নিলাম। তারপরই চোখে পরল ওই মেসেজ।

আচ্ছা তাহলে আপনি মেসেজটা এতো শব্দ করে পড়ছিলেন কেনো? আমি বাহিরে থেকেও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম।( কনফিউজড হয়ে)

উনি এবার হালকা হাসলেন– মেসেজ জোরে পড়ার দুটো উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমটা হল মিস ডায়নাকে অস্বস্তিতে ফেলা। আর দ্বিতীয়টা হল মজা লাগছিল আমার। আমি ইচ্ছে করেই প্রতিটা শব্দ বিকৃত করে পড়ছিলাম। যেন মিস ডায়না লজ্জা পায়। লজ্জা পেয়ে হলেও যেন আর জীবনে এমন কাজ না করে।

আমি উনার দিকে কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে রইলাম। ভাবতেই বিরক্ত লাগছে এইরকম একটা ফালতু ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতগুলো ঘটনা একসাথে ঘটে গেল। বেশি খারাপ লাগছে উনার মাথাটার দিকে তাকিয়ে। ধুর…. আমি তখন ওইভাবে না মারলেও পারতাম। তবে ডাইনিটার প্রেমকাহিনী শুনে খারাপই লাগছে। বেচারি প্রেম যখন করবিই একটা ভালো ছেলের সাথে কর! বিবাহিত লোকের সাথেই প্রেম করতে হবে তোকে? আমি ভ্রু কুচকে বললাম—

আচ্ছা? ওই লোকটার কি শাস্তি হবে না? এতোবড় একটা ক্রাইম করল। দুজন মেয়েকে একসাথে ঠকাতে যাচ্ছিল?

উনি ঠোট চেপে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বললেন— শাস্তি হতো…..আমি নিজেই শাস্তি দিতাম। যদি মিস ডায়না শাহিদের বিয়ের কথাটা আগে থেকে না জানতো। কিন্তু ডায়না তো সব জেনে বুঝেই প্রেম করেছে। তাহলে এখানে সমান দোষ তো ডায়নারও। দুজনেই দোষী। আর তাই ওদের শাস্তি হলো স্টোর রুমের জানালা পারমানেন্টলি বন্ধ করে দেওয়া হবে….. ডায়নার পারসোনাল সমস্ত কিছু থেকে সে শাহিদকে ব্লক করবে। আর কখনো যদি এমন কিছু আমার চোখে পড়ে আমি ডিরেক্ট চলে যাবো শাহিদের বাড়িতে। ওর বউকে গিয়ে সব জানিয়ে আসবো। তারপর যা করার ওর বউই করবে। আর যদি শাহিদের বউও কিছু না করে…. তাহলে তোমাকে পাঠিয়ে দিবো। তুমি ওর বউকে ট্রেনিং দিয়ে আসবে কি করে ফ্লাওয়ার বাজ মেরে হাসব্যান্ডের মাথা ফাটাতে হয়।

বলতে বলতে হেসে দিলেন উনি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কি প্রাণবন্ত হাসি! এই মানুষটাকে নিয়েই কিছুক্ষণ আগেও কতটা বাজে চিন্তা করছিলাম আমি। কথাগুলো ভাবতে গেলেই ইচ্ছে হচ্ছে নিজের চুল নিজে টেনে ছিড়ে ফেলতে। এই অপরাধবোধ নিয়ে কিভাবে থাকবো আমি? আসলে চোখের দেখা সবসময় বিশ্বাস করতে হয়না। মনের কথাও মাঝে মাঝে শুনতে হয়। চোখ আমাদের ধোকা দিতেই পারে। কিন্তু মনটা কখনো ধোকা দেয়না…..
🍂

তোকে_দিয়েছি_মন❤
পর্ব – ৩৮
Writer: Sidratul muntaz

🍂
বিছানার একদম শেষ প্রান্তে উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে আছি আমি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ঘুম যেন চোখ থেকে পালিয়েছে। একফোটা ঘুমও ধরা দিচ্ছে না চোখে। শুয়ে থাকতেও এখন অসহ্য লাগছে। আমার বিপরীত দিকে মুখ করে ঈশান হয়তো গভীর ঘুমে তলিয়ে আছেন। মাথাটায় খুব বেশিই আঘাত পেয়েছেন উনি। এর জন্য না আবার জ্বর এসে যায়। নিজের উপর তীব্র রাগ হচ্ছে। কেনো যে উনাকে তখন মারতে গেলাম! সেই অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে এখন হাত দুটো পর্যন্ত কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কান্না আসছে প্রচুর। উনি আমায় ক্ষমা করবেন তো এইজন্য? আচ্ছা উনি কি সত্যিই ঘুমিয়ে আছেন নাকি আমার মতো উনিও জেগে আছেন? পেছন ফিরে দেখতে হয় একবার। যদি জেগে থাকেন তাহলে আরেকবার ক্ষমা চাইবো। প্রয়োজনে পায়ে ধরে লুটিয়ে পড়বো। নাহলে যে নিজের মনেও শান্তি আসবে না আমার। অশ্রুসিক্ত চোখ দুটো মুছে নিয়ে পেছন ফিরে তাকালাম আমি। কিন্তু ঈশান পাশে নেই। অচিরেই খানিকটা শব্দ বেরিয়ে এলো গলা দিয়ে। উনাকে পাশে না পেয়ে ভয় লাগছে। বিশাল এই রুমটায় নিজেকে একা আবিষ্কার করলে ভীষণ ভয় হয় আমার। আগে নিজের ছোট্ট ঘরে এই ভয়টা ছিল না। ভিন্ন পরিবেশের সাথে ভিন্ন আতঙ্কও যোগ হয়েছে মনে। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। লাইট জ্বালাতে যাবো তখনই খেয়াল করলাম ঈশান বারান্দার কার্নিশে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছেন। উনাকে দেখে আমার চোখের পলক থমকে গেল মুহুর্তেই। কিছুসময়ের জন্য চোখ দুটো স্থির হল এক অন্যরকম মুগ্ধতা অনুভব করার উদ্দেশ্য নিয়ে। বিস্ময়ে মুখটা হা করে বেশ কিছু সময়ের জন্য আমি বোধশক্তি হারিয়ে ডুব দিলাম এক অতুলনীয় সৌন্দর্যের গভীর সমুদ্রে। একদম অতলে হারিয়ে যেতে লাগলাম। বারান্দার অবাধ্য বাতাসে সাদা পর্দা গুলো উড়ে চলেছে তাদের আপনগতিতে। পর্যায়ক্রমিকভাবে কিছু সময় অন্তর অন্তর ঢেকে যাচ্ছে ঈশানের মুখ সেই পর্দার আড়ালে। আবার উন্মুক্ত হচ্ছে পাল্লা দিয়ে তার দিগুন গতিতে। ঈশানের চোখের ভারী পল্লব আর কুচকে থাকা মোটা ভ্রু জোড়ার আকৃতিটাও আমি পরিমাপ করতে পারছি অত্যন্ত সূক্ষ্ণভাবে। উনার মুখের এক পাশটা আমার দৃষ্টির অগোচরে থাকলেও অন্যপাশটা খুব নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে আমার মুগ্ধ চোখের পাতায়। প্রবল বাতাসের ধাক্কায় কালো চুলগুলো যেন সমান তালে ছন্দিত হচ্ছে সেই সাথে কম্পিত হচ্ছে উনার চোখের পলক…ঘন পল্লব গুলোও পাল্লা দিয়ে দুলছে। এতো এতো সৌন্দর্যের মাঝে কপালে আটসাট করে বাধা সাদা কাপড়ের টুকরো টা পর্যন্ত কি আশ্চর্যরকম ভাবে মানিয়ে গেছে। যেন সাদা পট্টিটার কারণেই চমৎকার এই দৃশ্য পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। বলতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি যে উনার মাথা ফাটানোর জন্য এখন আর আফসোস হচ্ছেনা আমার বরং মনে হচ্ছে এতেই আমি স্বার্থক। নাহলে মাঝরাতে এই অপরুপ এক চিত্র দেখার সৌভাগ্য হতো না আমার। মুহুর্তেই এই অবুঝ মনে এক পাগলামি ইচ্ছে দোলা দিয়ে গেল। যেটা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শান্ত হবে না মন। আমি নিজের মনেই হালকা হাসলাম। আলমারির কোণ ঘেষে থাকা মিডিয়াম সাইজের টুলটা তুলে নিলাম তখনি। অত্যন্ত সাবধানতার সাথে তুলে নিলাম যেন টু শব্দটিও না হয়। আমার পায়চারীর শব্দ উনার কানে পৌছাতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে পা টিপিয়ে এগুতে লাগলাম টুল টাকে কোনোমতে আগলে নিয়ে। পুরোটা সময় উনি কিছু টের না পেলেও যখনই টুল টা নিয়ে উনার সামনে দাড়ালাম অমনি চমকে গিয়ে ঘুরে তাকালেন উনি। আর আমি কি করলাম?? সেই মুহুর্তে টুলের উপর উঠে দাড়িয়ে উনার গাল দুটো চেপে ধরে মনের সমস্ত আবেগ একত্র করে চুমু একে দিলাম কপালের ঠিক মাঝ বরাবর…. পরম যত্নে ভালোবাসার পরশে ভরিয়ে দিলাম উনার সারামুখ। ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকটা বাকশক্তিহীন নিস্তব্ধ ঈশান দাড়িয়ে আছে আমার সামনে। চমকের সর্বোচ্চ পর্যায় যে উনি এই মুহুর্তে অতিক্রম করে ফেলেছেন সেটা বুঝতে আমার বাকি নেই। এটাও যেন আমার আরেকটা সফলতা। তাই প্রাপ্তির হাসি জমে উঠল আমার ঠোটে। উনি গোল গোল চোখ করে আমাকে দেখছেেন। চোখের সাথে মুখটাও গোলাকৃতি ধারণ করেছে। আমি আরেকবার হেসে উঠলাম তবে এবার শব্দ করে হাসলাম। উনি মোটা ভ্রুজোড়া কুচকে তাকালেন। হালকা ঠোট বাকা করে টুলটার দিকে ইশারা করে বলে উঠলেন—

এইটা আনার কি দরকার ছিল? আমাকে বললে আমিই নিচু হতাম! এখন যদি পড়ে যাও….

বলতে বলতেই নড়ে উঠল টুল। সাথে আমিও। উনি সঙ্গে সঙ্গে আমার দুই হাতের উরু শক্ত করে চেপে ধরলেন। আমি উনার কাধে ভর চাপিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম। উনি মুচকি করে হেসে গলা খাকারি দিয়ে বললেন—

বাই দ্যা ওয়ে…… টুলে উঠেও কিন্তু আমাকে ছাড়াতে পারোনি তুমি। লুক….. ইউ এন্ড মি… সেইম সেইম। এতো পিচ্চি কেনো তুমি? এল ই ডি লাইট!( ফিক করে হেসে দিয়ে)

আমি কোমরে হাত রেখে মুখ ফুলিয়ে বললাম—

কি বললেন? আমি এল ইডি লাইট? আর আপনি হচ্ছেন একটা খাম্বা! আস্তো একটা খাম্বা।

আমার উত্তরে হো হো করে হেসে উঠলেন উনি। সেই হাসিতে আরেকবার ঘায়েল হয়ে এবার উনার ঠোটের গোলাপীতে চুম্বন শুরু করলাম। আর উনি? এবার আর বাকশক্তি হারিয়ে স্ট্যাচু হলেন না। বরং আমাকেও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলেন নিজের সাথে…….

.

.

তীক্ষ্ণ শোরগোলের শব্দে আমার ঘুমের ব্যঘাত ঘটছে অনেকক্ষণ ধরেই। একবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে নিয়েছিলাম ভোর পাচটা বাজে। তাই আরেক দফা ঘুমিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে চোখ বুজলাম। কিন্তু এতো শোরগোলের মাঝে শান্তিতে ঘুমানোও অসম্ভব। কিসের এতো শব্দ হচ্ছে জানা দরকার। শব্দের উৎসটা নিচে থেকে আসছে সেটা নিশ্চিত। অনেকটা ঠাস ঠুস টাইপ শব্দ। যেন জিনিসপত্র টানা হিচড়া করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানো হচ্ছে। মারাত্মক উচ্চশব্দে ঘর কেপে উঠছে পাচ মিনিট অন্তর অন্তর। সেইসাথে কেপে উঠছে আমার হার্টবিটও। বিরক্তি নিয়ে উঠে বসতে চাইলাম আমি। তখনি ঈশানের শক্ত হাতের বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া দায়সারা হয়ে উঠল আমার জন্য। এই ছেলে এতো শব্দের মধ্যেও শান্তিতে ঘুমাচ্ছে কি করে কে জানে? আমি তো পারছি না। মনে হচ্ছে এক্ষুনি দেয়াল ফেটে কিছু একটা ভেঙে পড়বে আমার মাথা বরাবর। আতঙ্ক নিয়ে এভাবে শুয়ে থাকার চেয়ে নিচে গিয়ে দেখে আসা ভালো আসলে হচ্ছেটা কি। অতি সাবধানতা অবলম্বন করে ঈশানের বাহু থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিলাম। যেন কোনোভাবেই ঘুম না ভেঙে যায় বেচারার। অবশ্য এমন মরার মতো ঘুমালে ভুমিকম্পে পুরো বাড়ি ভেঙে পরলেও টের পাওয়ার কথা না। আর এটা তো খুবই সামান্য ব্যপার। এলোমেলো চুল গুলো খোপায় গুজে মাথায় ঘোমটা টেনে নিচে এসে গেলাম আমি। আর এসেই আমার চোখ চড়ক গাছ। আসলেই জিনিসপত্র টানাটানি করে একস্থান হতে অন্যস্থানে নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়….. পুরো বাড়ি এলাহি কান্ড করে ডেকোরেটিং হচ্ছে। বাগানে প্যান্ডেল টানানোর প্রস্তুতি চলছে। বিশাল বাড়িটাকে বিশাল আয়োজনে নতুন করে সাজানোর এক অনন্য প্রয়াস চলছে। কিন্তু হঠাৎ এতো আয়োজন কিসের?? উদ্দেশ্য কি? বড় কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে নাকি বাড়িতে। কৌতুহলে অস্থির হয়ে উঠলাম আমি। তখনি আমাকে পাশ কাটিয়ে ডাইনিটা যাচ্ছিল….. আই মিন ডায়না সুন্দরী। হাতে বিরাট একটা জাল মানে ডেকোরেশনের নেট টাইপ কিছু। আমি ডায়নার কাধে হাত রেখে টেনে ধরলাম। ডায়না আমায় খেয়াল করে সোজা হয়ে দাড়ালো—

কিছু বলবেন ম্যাম?

মেয়েটা হয়তো আমার সামনে আসতে লজ্জা পায় এখন। ওর গোপন প্রেমকাহিনী ফাস হয়ে গেছে তাই বোধহয়। আমি সেসবের তোয়াক্কা না দেখিয়ে বলে উঠলাম—

বাড়িতে এসব কি হচ্ছে? বড় কোনো অনুষ্ঠান আছে নাকি??

ডায়না জড়তা কাটিয়ে উত্তর দিল–

জ্বী ম্যাম! অনুষ্ঠান তো আছেই।

কিসের অনুষ্ঠান?

স্যার আপনাকে কিছু বলেনি ম্যাম?

না সেরকম কিছু তো বলেনি….. কিন্তু তাতে কি? স্যার বলেনি তো তুমি বলো শুনি!( হাত ভাজ করে)

আপনার আর স্যারের রিসিপশনের আয়োজন হচ্ছে ম্যাম! (মৃদু হেসে)

রিসিপশন? মানে আমাদের বিয়ের রিসিপশন?

জ্বী ম্যাম!

আমি মুখে বিস্ময়ের ভাজ এনে বললাম– রিসিপশন এতোদিন পরে কেনো? বিয়ের পরদিনই তো হওয়ার কথা।

আসলে ম্যাম,,,, বড় স্যার আর বড় ম্যামের ইচ্ছা উনারা ট্রিপ থেকে ফিরে আসার পরই রিসিপশন হবে। তাই এতোদিন স্যার এ বিষয়ে মাথা ঘামান নি।

আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললাম— তার মানে কি এখন উনারা ফিরে আসছে?

জ্বি ম্যাম।( মাথা ঝাকিয়ে)

আমি খুশি হবো না ভয় পাবো ঠিক বুঝতে পারলাম না। তবে অবাক হয়েছি বেশ। তাই ডায়নার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে এক দৌড়ে রুমে চলে এলাম। ঈশানকে ধাক্কাচ্ছি ঘুম থেকে উঠার জন্য। উনি এতোবড় একটা কথা আমাকে কেনো জানান নি? কেনো গোপন করেছেন আমার কাছে? এইজন্য উনাকে এখন শাস্তি পেতে হবে। ভয়ানকরকম শাস্তি! আরাম করে ঘুমাতে তো উনাকে দিচ্ছিই না বরং আরামের ঘুমটাও হারাম করে ছাড়ব এবার। আচ্ছা এক বালতি পানি ঢেলে বিছানায় ভাসিয়ে দিলে কেমন হয়?
🍂

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here