তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো পর্ব ৯

#তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো
লেখা আশিকা জামান
পার্ট ০৯

ব্ল্যাক শার্ট এ প্রহরকে খুব সুন্দর লাগছে। ব্রেক আপের দিন বোধ হয় সবাইকেই সুন্দর লাগে। আচ্ছা ওর সাথেতো আমার কোন প্রেমই হয়নি তাহলে আবার ব্রেকাপ কোত্থেকে আসছে? অবশ্য আজকের পর থেকে ওর সাথে আর আমার দেখা হবেনা।
দুজনের দুটি পথ এক না হয়ে বেকে যাবে দুদিকের দুই বাঁকে। একটু পরেই গত হয়ে যাবে এই মূহূর্ত। স্মৃতির পাতায় যোগ হবে আরেকটা নতুন অধ্যায়।
প্রতিক্ষা আনমনে ভাবতে ভাবতে প্রহরের দিকে এগিয়ে যায়।
প্রহর বকুল কটেজের কদম গাছের নিচের বেঞ্চটাতে বসে আছে। ডান হাতের উপর বা হাতের কুনই রেখে থুতনির নিচে হাতের উলটো পিঠ চেপে ধরে দুই পা ঝুলিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
ওকে বড্ড এলোমেলো লাগছে তবুও দেখতে বেশ লাগছে। হয়তোবা কোন এক ভাবনার রাজত্বে ভবঘুরের মতো বিচিরণ করছে মানুষটা।
ওর কাজে বাধা দেবার মতো দুঃসাহস প্রতিক্ষার নেই তাই আনমনে ওকেই দেখতে লাগলো। অবশ্য এতে ওর সুবিধাই হয়েছে। ও যে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে পারছে মানুষটার দিকে।
হঠাৎ প্রহরের চোখ খুলে যায় একদফা চোখাচোখি হয়ে যায়।
” কখন এসেছো?”

” এইতো আরেকটু আগে।”

” তাহলে কোন কথা না বলে চুপচাপ কি করছিলে?”

” আপনাকে দেখছিলাম।”
নির্বিকার ভাবে কথাটা বললো প্রতিক্ষা।

” তা কি দেখলে?”

” আপনি না অনেক সুন্দর। জানেন ছেলেদের না এতো সুন্দর হতে হয়না।”

” ও শুধু মেয়েদেরই সুন্দর হতে হয় তাইতো।
আচ্ছা ছেলেদের কেন সুন্দর হতে নেই”

” প্রেমে পড়ে যাইতো।”

” আচ্ছা আমার থেকে আরো সুন্দর সুন্দর ছেলে দেখলেও তুমি প্রেমে পড়ে যাবা তাইতো। ”

প্রতিক্ষা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলে,
” ঠিক তা না।”

” তো কি?
মানেতো এটাই দাঁড়ায়।
তুমি কি এটা বলার জন্যই আমাকে ডেকেছো।
এই আমি চললাম।”

প্রহর উঠে দাঁড়ায়। প্রতিক্ষা দুম করে দাঁড়িয়ে প্রহরের হাত ধরে ফেলে।

” প্লিজ বসুন না। একসময় আফসোস হতে পারে এই মুহূর্তটার জন্য। এভাবে চলে যাবেন না প্লিজ। জানেন আমি না অনেক কষ্টে এখানে এসেছি। বাসা থেকে আসতেই দিচ্ছিলো না। তারপর বলেছি তিথিকে আনতে যাচ্ছি।

” এই তিথি আবার কে?”

” বান্ধবী। ”

” আচ্ছা তুমি এরকম ব্ল্যাক শাড়ী পড়েছো কেন? আজকে কি শোক দিবস?”

” কেন ভালো লাগছেনা?
আপনিওতো ব্ল্যাক পড়েছেন কি সুন্দর ম্যাচ হয়েছে।”

” এতো ম্যাচ ঠ্যাচ হওয়ার দরকার নেই। আর তোমাকে বুড়ীর মতো লাগছে। নেক্সট টাইম আমার সামনে ব্ল্যাক পড়ে আসবা না।”

“এমনিতেও আর আসা হবেনা।”

” কেন আসতে পারবা না? আমি কি নিষিদ্ধ জীনিস।
তাহলে আজকে আসছো কেন?”

” আচ্ছা এইরকম ঘনঘন রেগে গেলেতো সমস্যা।”

” না আমি মোটেও রেগে নেই।”

” তাহলে আমার হাত ধরে একটু হাটবেন?”

” কেন তুমি কি খুকি? হাটতে গেলে পড়ে যাবা যে হাত ধরে হাটতে হবে?”
প্রতিক্ষা প্রহরের হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে সরে দাঁড়ালো।
প্রহর অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। ধীরে ধীরে পা ফেলে প্রতিক্ষার হাতে মুঠোয় ভরে নিলো।
প্রতিক্ষা মৃদু হেসে প্রহরের চোখের দিকে তাকায়।
” হাততো ধরেই ছিলে এখন আবার ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যাচ্ছিলে কেন?”

” না মানে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিলাম।”

” কন্ট্রোল”
বেশ শক্ত করে শব্দটা আওড়ে গেল প্রহর।
তারপর দাত কেলিয়ে হাসতে হাসতে আবার বললো,
” বাহ ভালোতো।
কিন্তু দুঃখিত তুমি বোধ হয় সুযোগটা পাচ্ছো না।”
দুজন দুজনের সাথেই তাল মিলিয়ে হাটতে লাগলো। হাটতে হাটতে প্রহরের হাত প্রতিক্ষার কোমড় ছুয়ে যায়। প্রতিক্ষা চরম পুলকিত হয়ে প্রহরের স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো। দুজনের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসতে লাগলো। এতো কাছে যে নিজেদের কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়েছে।
প্রতিক্ষা সহসাই প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে। প্রহর কিছুটা বিব্রতবোধ করতে লাগলো।

” আমি কি আপনার কোলে উঠতে পারি?”

প্রহর চমকে উঠে ওর ছেলেমানুষি কথাবার্তায়।
” অসম্ভব।
এ হয়না। ”

” কেন হয়না?
এই শেষবারের মতো আবদারটুকু রাখুন না। একটু কোলে নিলে কি হয়? আর আসবোনা জ্বালাতে। এইতো শ্যাষ। প্রমিজ।”

প্রতিক্ষার এইই অসংলগ্ন আচরণ প্রহরের কাছে ভালো ঠেকছে না। মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে যাচ্ছে।

প্রহর আর কথা না বাড়িয়ে প্রতিক্ষাকে কোলে তুলে নেয়। ওর নরম তুলতুলে শরীর প্রহরকে এক অদ্ভুত ভালোলাগার সমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। এই ভালোলাগার কি নাম দেয়া যায় তা ওর অজানা। হাটাতে হাটতে প্রহর ওর চোখে হারিয়ে যেতে লাগলো।

কিছুদূর যাওয়ার প্রহর প্রতিক্ষাকে হিজল গাছের সামনে নামিয়ে দেয়। প্রতিক্ষার দুই চিবুক ধরে ওকে গাছের সাথে লাগিয়ে দেয় বেশ জোড়েসোড়েই। পিছনে গাছের শক্ত অংশ থাকায় ও ব্যাথা পেতে লাগলো। কিন্তু এই মূহূর্তে এই ব্যাথাটাই ওর কাছে চরম সুখকর মনে হতে লাগলো।
প্রহরের একেকটা উষ্ম নিঃশ্বাস ওকে এক অন্যরকম ভালোলাগার জগতে বিচরণ করতে বাধ্য করতে লাগলো।

” পিউ এইরকম একটা নির্জন যায়গায় তুমি আমার সাথে কেন আসলে তোমার ভয় করছে না।”
ফিসফিসিয়ে কথাটা বললো প্রহর।

” যদি বলি ভয়কে আমি জয় করতে চাই।”
ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে প্রতিক্ষা কথাটা বলললো।

” পিউ আমি কি তোমাকে একটু আদর করতে পারি।
আজকে দ্বীতীয় বারের মতো ভুল করতে ইচ্ছে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ভুলটা বারবার করি।”
প্রতিক্ষার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো প্রহর।

” বাধা যে আমি দিতে চাইনা। তবে একটা কন্ডিশন আছে।
পূর্বের মত আজকের দিনটা আমি জীবনেও এক্সিডেন্ট ভাবতে পারবোনা।
প্লিজ সরি বলে ভুলে যেতে বলবেন না। আমিতো ঠিক করেই এসেছি আজকের দিনটা আমার বেস্ট দিন হবে। সারাজীবন মনে রাখার মত।”

প্রতিক্ষা প্রহরকে আর কোন কথার সুযোগ না দিয়েই প্রহরের ঠোটে আলতোভাবে ঠোট ছুয়াতে লাগলো।

প্রহর ও দুম করে এসে চুমোটা ফিরিয়ে দিতে লাগলো। প্রতিক্ষা পড়ে যেতে লাগছিলো পরক্ষণেই প্রহরকে ঝাপটে ধরে ব্যালেন্স করে নিলো।
কিছুক্ষন পর হাপাতে হাপাতে প্রহর ওকে ছেড়ে দিয়ে ঠোট মুছতে লাগলো।

প্রতিক্ষা ঢোক গিলে প্রহরের দিকে চোখ তুলে তাকায়।

” আচ্ছা আপনার বউকে কি ঠিক এভাবেই আদর করবেন?”

প্রহর চমকে উঠে প্রতিক্ষার দিকে তাকায়।
প্রতিক্ষার চোখ দুটো জলে ছলছল করে উঠলো।

ওর এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবে ও। সত্যিইতো প্রতিক্ষার যায়গায় অন্যকোন মেয়েকে ও এইভাবেই আদর করবে।
না ও ভাবতে পারছেনা। ঘামতে লাগলো অন্য মেয়ের প্রসঙ্গ মাথায় আনতেই। না এই যাগগাটা কেবল প্রতিক্ষার সমস্ত ইন্দ্রিয় একযোগে বলে উঠলো। হ্যা প্রতিক্ষা!
অন্য কেউ নাহ..
প্রতিক্ষা! প্রতিক্ষা! প্রতিক্ষা।
ওর মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।

কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রাখার পর প্রহর চোখ দুটো খুললো। প্রতিক্ষা কাঁদছে!
কেন কাঁদছে ও বুঝতে পারছে না। ওর কি রিএক্ট করা উচিৎ এই মূহূর্তে। ওর মনে হচ্ছে ওর মাথা কাজ করছে না।

” পিউ কাদছো কেন?
আমি কি তোমাকে দুঃখ দিয়ে ফেলেছি?
বলোনা কেন কাঁদছো?”
প্রহর পিউ এর বাহু শক্ত করে ঝাপটে ধরে এই প্রশ্নগুলো করতে লাগলো।

” আমি এখন চলে যাবো। আমাকে ছাড়ুন।”
প্রতিক্ষা প্রহরকে ছাড়িয়ে দেয়।

” কেন হঠাৎ কি হলো? ”
প্রহর প্রতিক্ষার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে।

” আর মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?
আমার কালকে বিয়ে। আপনি আসবেন তো।”
নির্লিপ্তভাবে কথাটা বললো প্রতিক্ষা।

প্রহর ওর হাতটা দুম করে ছেড়ে দেয়। মনে হয় ও কথাটা ভুল শুনেছে তাই আবার জিজ্ঞাস করে,
” কালকে কি পিউ?”

” আমার বিয়ে।
আপনাকে আর জ্বালাতে আসবো না।
ভালো থাকবেন।

এইবার কথাটা বলেই প্রতিক্ষা কাঁদতে লাগলো।

প্রহরের কেন যেন মনে হচ্ছে ও শুন্যে ভেসে যাচ্ছে। প্রতিক্ষার এই একটা কথাই ওর মধ্যে আমূল পরিবর্তন এনে দিলো। ওর বারবার মনে হচ্ছে প্রতিক্ষা আমাকে জ্বালাও। বারবার জ্বালাও। আমিতো এটাই চাই।

” তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে চাইলো আর তুমি ডেং ডেং করে রাজী হয়ে গেলে?”

প্রহরের চোখেমুখে অগ্নি ঝড়ে পড়তে লাগলো।

” হ্যা কেন রাজী না হওয়ার কি আদৌ কোন কারণ ছিলো।”
প্রতিক্ষা ফুঁসতে ফুঁসতে কথাটা বললো।

ওই মূহূর্তে প্রহরের ফোন বেজে উঠলো। পকেট থেকে ফোন বের করে স্ক্রিণে চোখ বুলিয়ে নেয় ওর মা কল করেছে। প্রহর ফোনটা ছুড়ে মারে। পায়ের নিচের দূর্বা ঘাসের উপর ফোনটা পড়ে পড়ে বাজতে লাগলো।

প্রহরের এই দুম রেগে যাওয়ার কোন কারণ প্রতিক্ষার মাথায় আসছে না। ও রীতিমত ভয় পেতে লাগলো কারণ প্রহর সহসাই ওর দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরলো। ভয়ে ও কুকড়ে যেতে লাগলো।

” চোখ তুলে তাকাও? তাকাও বলছি।
এই মেয়ে তোর সমস্যা কি?
ইচ্ছে হচ্ছে ঠাসঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই। কিসের বিয়ে?
ফাজলামো কিসের এতো?”

প্রতিক্ষা ভয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে বললো,

” সত্যি কালকে আমার বিয়ে। উহু লাগছে ছাড়ুন।”

” ছাড়বোতো অবশ্যই। লাগছে আমারো ওইটা বোঝার যোগ্যতা তুই হারিয়ে ফেলছিস। কালকে বিয়ে আজকে আমার কাছে আসছিস কেন? হুয়াই? ফষ্টিনষ্টি করতে? এতো খায়েশ কেন তোর? তুই আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ..
আমি তোর মত বেহায়া মেয়ের মুখ জীবনেও দেখতে চাই না। গেট লস্ট..”

প্রহর প্রচন্ড রাগে নিজের চুল ছিড়তে লাগলো।
প্রতিক্ষা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এক দৌড়ে সেখান থেকে ফিরে এলো একরাশ তিক্ত অভিঙ্গতা নিয়ে।
চলবে।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here