#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৪০
আবরার আরশি এসেছে সেই উপলক্ষে অনেক পদের খাবার রান্না করেছে রিফা। রান্নাবান্নায় বেশ পটু সে। সুযোগ পেলেই এটা ওটা রান্না শেখে। এইদিক দিয়ে আরশি সম্পূর্ণ উল্টো। সে একদমই ভালো রান্নাবান্না পারে না। আরশির সাহায্য নিয়ে সব সাজিয়ে গুছিয়ে আবরার কে ডেকে নিয়ে আসলো রিফা। এতো রকমের খাবার দেখে অবাক হলো আবরারের। সব খাবার একটু একটু করে খেলো সে। খাওয়া শেষে তৃপ্তির ঢে*কু*র তু*লে বললো,
— বাহ্ শ্যালিকা দেখি হেব্বি রান্না জানে। তা আমার বউ ও এমন রান্না জানে তো নাকি?
কথা টা বলে বাঁ*কা চোখে আরশির দিকে তাকালো আবরার। রিফা উত্তর না দিয়ে আরশির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলো। আবরার আর রিফা কে এভাবে তাকাতে দেখে গাল ফু*লা*লো আরশি। আবরার হা হু*তা*শ করে বললো,
— কি হলো শ্যালিকা কিছু বললে না যে? তারমানে কি আমার বউ রাঁধতে পারে না? ইশ কতো বড় ল*স হয়ে গেলো তোমার বোন কে বিয়ে করে। বউ আমার রাঁধতে জানে না। এখন আমি বউয়ের হাতের টেস্টি টেস্টি খাবার খাবো কি করে? আহা স্বপ্ন ছিলো বিয়ের পর বউ আমাকে টেস্টি টেস্টি ডিশ রান্না করে খাওয়াবে। আমার স্বপ্ন তো ভে*ঙে গুঁ*ড়ো গুঁ*ড়ো হয়ে গেলো।
আবরার কথা শেষ করে আরশির দিকে তাকিয়ে দেখলো আরশি চোখ লাল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শুকনো ঢোক গি*ল*লো আবরার। বুঝতে পারলো বেশি বলে ফেলেছে সে। এবার তার কপালে দুঃ*খ আছে। বউ তার না*রা*জ হয়ে গেছে। আরশি কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা হাসি দিলো আবরার। আবরারের হাসি দেখে গা জ্ব*লে উঠলো আরশির। তাকে বিয়ে করে আবরারের ল*স হয়ে গেছে? রান্না পারে না বলে এমন কথা বলতে পারলো আবরার? তাও আবার রিফার সামনে! আরশি আর বসলো না ওখানে। রা*গে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে তার। ধু*প*ধা*প পা ফেলে রুমে চলে গেলো সে। আরশি যেতেই শব্দ করে হেসে উঠলো রিফা। হাসতে হাসতে বললো,
— ভাইয়া এবার আপনার কপালে দুঃখ আছে। আপু মনি হেব্বি রে*গে*ছে।
আবরার ভেতরে ভেতরে না*র্ভা*স হলেও বাইরে বুক ফু*লি*য়ে বললো,
— আরে তোমার আপুর রা*গ ভা*ঙা*নো আমার এক মিনিটের কাজ।
কথা টা বলেই উঠে রুমে চলে আসলো আবরার। রুমে ঢুকে দেখলো আরশি বিছানা ঝা*ড়ু দিচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় জো*রে জো৬রে শব্দ করে বা*রি দিয়ে ঝা*ড়ু দিচ্ছে সে। আবরারের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো আরশি বিছানা কে নয় বরং তাকে বিছানার জায়গায় কল্পনা করে ঝা*ড়ু*র বা*রি মা*র*ছে। গলা শু*কি*য়ে আসলো আবরারের। ভালোই রে*গে*ছে তার মিসেস বুঝতে বাকি রইলো না তার। সে দরজা আ*ট*কে আদুরে কণ্ঠে বললো,
— বউউউউউউউ…
চোখ পা*কি*য়ে ঝা*ড়ু হাতে আবরারের দিকে ফিরলো আরশি। তে*ড়ে এসে ঝাঁ*ঝা*লো কণ্ঠে বললো,
— একদম ন্যা*কা*মি করবেন না… আমাকে বিয়ে করে তো আপনার ল*স হয়ে গেছে। তাইলে এখন বউ বউ করছেন কেনো? যান না যান যেই মেয়ে ভালো রান্না পারে তাকে বিয়ে করুন। তারপর বউ বউ করুন। আপনার জীবন টা ধন্য হোক।
কথাগুলো বলে শব্দ করে ঝা*ড়ু টা রাখলো আরশি। ধু*প*ধা*প পা ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। অ*স*হায় চোখে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো আবরার। বিড়বিড় করে দুঃ*খী কণ্ঠে বললো,
— আমার সেই লাজুক বউ টা কই গেলো? বউ দেখি আবার তার আগের স্বভাবে ফেরত এসেছে।
আ*ফ*সো*স করতে করতে বেডে স*টা*ন হয়ে শুয়ে পড়লো আবরার। কিছু সময় পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো আরশি। একবারও আবরারের দিকে তাকালো না। তবে না তাকিয়েও বুঝলো আবরার তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মুখ বাঁ*কা*লো আরশি। ঘরের লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বা*লি*য়ে দিলো। তারপর চুপচাপ বেডের এক কোণে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। সেকেন্ডের মাঝেই টের পেলো আবরার তাকে জড়িয়ে ধরেছে। আরশি নড়েচড়ে উঠতেই আবরার জড়িয়ে আসা কণ্ঠে বললো,
— নড়াচড়া করো না মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি। আমি ভীষণ ক্লান্ত। একটু ঘুম প্রয়োজন। আবার কাল সকালে অফিসে যেতে হবে। তোমার রা*গ টা নাহয় আপাতত তু*লে রাখো।
মন নরম হলো আরশির। আসলেই তো আবরার অনেক ক্লান্ত। সে তো গাড়িতে আরামে ঘুমিয়েছে কিন্তু আবরার তো সারাদিনে এক ফোঁটাও ঘুমায় নি। আর নড়াচড়া করলো না আরশি। চুপটি করে শুয়ে রইলো। কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। গাড়িতে এতো সময় ঘুমানোর কারণে ঘুম আসছে না তার। আবরারের গাঢ় নিঃশ্বাস ঘাড়ে, গলায় আ*ছ*ড়ে পড়তেই ধীরে ধীরে আবরারের দিকে মাথা কা*ত করলো আরশি। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় অপলক দেখতে লাগলো প্রিয় পুরুষটা কে।
——
সকালে ঘুম ভা*ঙ*তে অন্যান্য দিনের মতোই আরশি কে নিজের বুকে পেলো আবরার। কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মেয়ে টা! আবরার সা*ব*ধা*নতার সাথে আরশি কে বেডে শুইয়ে দিয়ে কপাল গভীর চুম্বন একে দিলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে রেডি হলো বাইরে যাওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে রিফা কে বলে গেলো বিকালে এসে আরশি কে নিয়ে যাবে সে।
আবরার যাওয়ার দেড় ঘন্টা পর ঘুম ভা*ঙ*লো আরশির। রাতে লেটে ঘুমানোর কারণে লেটে ঘুম ভে*ঙে*ছে তার। পাশে আবরার কে না দেখে বুঝতে বাকি রইলো না আবরার অফিসে চলে গেছে। ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে আসলো আরশি। রিফা তাকে নাস্তা দিয়ে জানালো আবরার তাকে বিকালে নিতে আসবে বলেছে।
সারাদিন রিফার সাথে বেশ ভালোই কে*টে*ছে আরশির। ফাঁ*কে ফাঁ*কে মায়ের রুমে উঁকি দিতেও ভু*লে নি সে। তবে ভেতরে যায় নি সে একবারও। আর কিছুক্ষন পর হয়তো আবরার তাকে নিতে আসবে। তাই নিজের বই পত্র গু*ছা*চ্ছে আরশি। রিফা তাকে সাহায্য করছে কম, ফ্যা*চ ফ্যা*চ করে কাঁ*দ*ছে বেশি। বই খাতা প্যাক করে কোমরে হাত দিয়ে রিফার দিকে চাইলো আরশি। চোখ ছোট ছোট করে বললো,
— এভাবে ফ্যা*চ ফ্যা*চ করে কানের সামনে কাঁ*দ*ছিস কেনো? আমি কি ম*রে গেছি নাকি?
আরশির কথা শেষ হতে না হতেই তার বুকে ঝাঁ*পি*য়ে পড়লো রিফা। নাক টে*নে বললো,
— এমন কথা আর কখনো বলবে না আপু মনি। তুমি এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছ তাতেই এতো ক*ষ্ট হচ্ছে। আর তোমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে ম*রে*ই যাবো হয়তো। তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো আপু মনি? আমার না খুব ক*ষ্ট হচ্ছে।
চোখে জল চলে আসলো আরশির। শ*ক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রিফা কে। এই মেয়ে টা তার র*ক্তে*র সম্পর্কের কেউ না অথচ তাকে কতো টা ভালোবাসে। তার ও যে ক*ষ্ট হচ্ছে এই বাড়ি ছেড়ে যেতে! কিন্তু তাকে যে যেতেই হবে। আরশি রিফার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— আরে পা*গ*ল মেয়ে আমি কি একেবারে চলে যাচ্ছি নাকি? আবার আসবো তো। দুই তিনদিন পর ই আবার আসবো। এতো সহজে তোদের পিছু ছাড়ছি না হুম।
ওদের কথার মাঝে বেল বে*জে উঠলো। রিফা আরশির কাছ থেকে সরে এসে বললো,
— ভাইয়া এসে গেছে হয়তো। আমি দরজা খুলে আসি যাই।
রিফা যেতেই আরশি ধীর পায়ে নিজের মায়ের রুমে প্রবেশ করলো। মিহি বেগম তাকালেন আরশির পানে। চোখ ছ*ল*ছ*ল করছে তার। সকল ভ*য়, ল*জ্জা, অ*স্ব*স্তি কে দূরে ঠে*লে হুট করে মিহি বেগম কে জরিয়ে ধরলো আরশি। বাঁ*ধা দিলেন না মিহি বেগম। কোনো সারাশব্দ ও করলেন না। নীরবেই কয়েক ফোঁটা অশ্রু গ*ড়ি*য়ে পড়লো তার চোখ থেকে। আরশি জড়িয়ে আসা কণ্ঠে বললো,
— আসছি আম্মু। নিজের খেয়াল রেখো আর তোমার মেয়ের জন্য দোয়া করো। আমি আসবো মাঝে মাঝে তোমাদের সাথে দেখা করতে।
কথা শেষ করে মিহি বেগম কে ছেড়ে দিলো আরশি। দ্রুত বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। আর কিছুক্ষন থাকলে হয়তো কা*ন্না*য় ভে*ঙে পড়তো সে। নিজের রুম থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে রিফা কে বিদায় জানিয়ে আবরারের সাথে বেরিয়ে পড়লো আরশি। আরশির উ*দা*স মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো আবরার। বুঝতে পারলো আরশির ক*ষ্ট হচ্ছে। তাই কোনো কথা বলে আরশি কে বি*র*ক্ত করলো না সে। শুধুমাত্র আরশির হাত টা শ*ক্ত করে ধ*রে রাখলো। যেনো বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছে,
— “আমি সর্বদা তোমার পাশে আছি মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি…”
চলবে,
(