তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৬
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনি রাগের মাথায় বিয়েটা করতে চাইছে।এতে করে ফল যে খুব বেশি ভাল হবেনা তা বাপ্পি বুঝতে পারছে,কিন্তু এখন এইসব ভাবার সময় না।তটিনিকে সে এখন বিয়ে করতে না করলে ও হয়ত সত্যি একটা না একটা ছেলেকে ধরে বিয়ে করে নেবে।তটিনির ছোট বোন ঐশী একবার বাপ্পিকে এই কথা বলেছিল।বলছিল তটিনি অনেক আগ থেকেই যেটা বলে করবে সেটা শেষ অবধি করেই ছাড়ে।আজ ও যে তার নড়চড় হবেনা তা বাপ্পি জানে।এদিকে সে তো তটিনিকে চাইতোই।তবে সুযোগ এত সুন্দর করে হাতে আসায় সে কেন মানা করবে!সে নিশ্চয় বিয়েতে হ্যাঁ বলবে।বলবেই!
বাপ্পিকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তটিনি নিজেই ওর মত করে থাই গ্লাসে মাথা ঠেকিয়ে নিচের রোডের দিকে চেয়ে থেকে বললো,’বিয়েটা করলে আসিফ ভাইয়ার মুখে ঝামা ঘঁষে দেবার মতন হবে!বেশ হবে!কত বড় সাহস!আমায় না জানিয়ে দশ বছর আগেই বিয়ে করে নিছে!যদি বিয়েই করে ছিলে তবে আমায় কষিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলতে পারলেনা”তটি এমন করে আমায় দেখিস না,আমার বউ আছে।তোর এই ভালবাসার প্রতিদান আমি দিতে পারবোনা,আমার হাত পা বাঁধা।তটি আমায় ভালবাসিস না,আমায় ভালবাসার একটা মানুষ আছে।সে আমার বিধানের বউ!কিছুই বলেনি লোকটা!আমি দিনের পর দিন তার প্রেমে মগ্ন হতে হতে আজ বিয়ের দিন এসে একেবারে পাগল হয়ে গেলাম।বাবার কথার খেলাপ করে সেই মানুষটাকে চাইলাম যে আমার অনুভূতিকে কখনও পাত্তা দেয়নি।তার যে আপন বলে একটা মানুষ আগে থেকেই আছে সে কথা সে আমায় জানায়নি।আমার কেয়ার এমন ভাবে করত যেন সেও আমায় ভালবাসে!!সব ছেলেরা খারাপ!!
বউ থেকেও আরেকজনের কেয়ার করতে তাদের দ্বিধাবোধ লাগেনা!’
বাপ্পি ভ্রু কুঁচকে বলে ‘আমার এমন স্বভাব নেই’
‘অবশ্যই আছে।আপনি জানেন আমি আসিফ ভাইয়াকে ভালবাসি তার পরেও”””তটিনি আমায় বিয়ে করো,তটিনি আমায় বিয়ে করো'”””স্লোগান লাগিয়ে রেখেছিলেন!’
‘এর সাথে আমি আসিফের মতন হয়ে গেলাম?আমার কি বউ আছে নাকি’
‘আচ্ছা হবো তো বউ।দেখবো আমাকে রেখে আরেক মেয়ের কেয়ার করেন কিনা!হাড্ডি ভেঙ্গে মাংসের ভেতরেই রেখে দিব’
এ কথা বলে তটিনি হাঁটা ধরলো করিডোরের দিকে,বাপ্পি ভাবছে হাড্ডি ভেঙ্গে ভেতরে রেখে দেয় কিভাবে।
দুজনেই বাপ্পির মায়ের সামনে এসে পৌঁছায়।তখন তিনি বললেন তিনি বাসায় ফিরে যাবেন।
কিন্তু তটিনি ওনার হাত ধরে থামায়।এরপর বলে তার কিছু কথা আছে।এই বলে সে বাবার কেবিনে ঢুকে যায়।এতক্ষণ সোফায় তারা দুজন বসেছিল এখন সেই সোফায় আসিফ আর রিনি বসে আছে।
তটিনি ওদের দেখেও না দেখার ভান ধরে বাবার কাছে এসে তার হাত শক্ত করে ধরে।এরপর জোর করে,খুব জোর করে মুখে হাসি ফেটায়।বাবার হাতটা চাপ দিয়ে বলে,”বাবা আমি বাপ্পিকে বিয়ে করবো এখন।বলো তুমি রাজি?’
বাবা বুঝতে পারছিলেন না এমন একটা সময়ে তটিনির এরুপ প্রস্তাবের কারণ কি!তাও রোবটের মতন বলে দিলেন ‘হ্যাঁ,আমার কোনো আপত্তি নাই’
ওমনি তটিনি বাবার হাত ছেড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।বাপ্পি বাইরেই ছিল।তটিনি বাপ্পির মায়ের দিকে চেয়ে বলে, ‘আন্টি!চলেন বাড়িতে।বিয়েটা আজই হবে।চলেন’
এই বলে তটিনি বাপ্পির মায়ের হাত ধরে হাঁটা ধরে।তটিনির মা আর ঐশী,ফুফু সবাই হা করে তাকিয়ে ছিল।মেয়েটার হলো কি!!
তটিনি যে আসিফকে পাগলের মতন ভালবাসে এই কথা বাসার সকলেই জানে এখন আসিফের বিয়ের কথা শুনে তটিনি বাপ্পিকে বিয়ে করতে নাচতে নাচতে চলে গেছে এটা তাদের ভাবনার বাহিরে ছিল না।তারা এমনটাই আন্দাজ করেছিল।
বাপ্পি,ওর মা আর তটিনি একটা সিএনজিতে উঠেছে।মাখখানে বাপ্পির মা আর দুপাশে বাপ্পি,তটিনি বসে আছেৃ গাড়ী চলছে তটিনিদের বাসার দিকে।তটিনি চুপ বাপ্পিও চুপ।হঠাৎ করে বাপ্পির মা বলে উঠলেন,’আচ্ছা সকাল থেকে তো আমার ছেলেকে বিয়ে করতে চাইছিলেনা।তবে এখন এত রাতে আবার মত বদলানোর কারণ কি শুনি?’
তটিনি কিছু বললোনা।তার নিরবতা বাপ্পির মায়ের মনে বিরুপ চিন্তা এনে দিতে পারে ভেবে বাপ্পি নিজেই বলে ওঠে,”আসলে হয়েছে কি মা!তটিনি ছোটমানুষ তো।বিয়ের মতন এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে সে হিমশিম খাচ্ছিল।এরপর ওর বাবা ওকে বুঝালেন,অসুস্থ হলেন।তাই মেনে গেলো’
বাপ্পির মায়ের কাছে এই কথাটা কেমন যেন হজম হলোনা।তাও মেনে গেলেন।বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী কারোর খোঁচা শুনতে হবেনা অন্তত। নতুন বউ নিয়ে গেলে আত্নীয় স্বজন সবার সামনে জবাবদিহি করতে হবেনা।তবে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।এত ছোটাছুটিতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
সিএনজি থেকে নেমে তটিনি বাসার দিকে ছুটে গোলো।বাপ্পি সিএনজির ভাঁড়া দিয়ে তার মায়ের সাথে চলছে।তটিনি বাসায় ঢুকেই তার ফুফাতো ভাই জিহাদকে ডেকে বললো হুজুরকে নিয়ে আসতে।তারপর ফোন খুঁজে মাকে,ঐশীকেও জানিয়ে দিলো সে আজই বিয়ে করতেছে,বাবাও রাজি।বাবাকে রেখে তারা কেউই আসতে পারবেনা তাই খালা,খালুকে দায়িত্বটা সঁপে দিছেন তটিনির বাবা।
তটিনি মাথায় ঘোমটা দিয়ে বাপ্পির পাশে সোফায় বসে পড়েছে।জিহাদ হুজুরকে নিয়ে এসেছেন সময়মত।
হুজুর ভাল করে নিশ্চিত হয়ে নিলেন তটিনি আসলেই বাপ্পিকে বিয়ে করতে চায় কিনা।কারণ এর আগে তটিনি তাকে দিয়ে দুবার লিখিয়েছে দুবার কাটিয়েছে।
তটিনি খোলসা করে বলে দিছে এবার যাই কিছু হোক সে বাপ্পিকেই বিয়ে করবে।
মামা আর ফুফু চলে এসেছেন হাসপাতাল থেকে।ওখানে মা আর ঐশী বাবার কাছে আছেন। বিয়ের দিন বিয়ে নাহলে এটা পাড়াপড়শির সামনে কতটা লজ্জাজনক তা মাথায় রেখেই আজকে এতকিছুর মাঝেও সকলে মিলে বিয়েটা হতে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে।
বাপ্পি তটিনির দিকে তাকিয়ে আছে শুধু।তটিনির চোখে একটা জেদ ভাসছে,আসিফকে দুঃখ দেয়ার জেদ,এর বাহিরে আর কিছুই নেই।বাপ্পি জানে তটিনি ওকে বিয়ে করার পরেও একজন সাধারণ স্ত্রীর মতন ব্যবহার করবেনা তাও সে মনে মনে ভীষণ খুশি নিয়ে কবুল বলেছে।তার খুশি আর ধরছেনা।যেটা সে চেয়েছিল সেটা দিনের শেষ ভাগে এসে পূূর্ণ হবে তা আসলেই সে ভাবতে পারেনি।শেষ হতে হতে সে ভেবেছিল আসলেই বোধহয় সব শেষ।আর উপায় নেই তটিনিকে নিজের করে পাবার।
তটিনি এবার আর অপেক্ষা করেনি কবুল বলতে।হুজুর বলতে বলার সাথে সাথেই সে কবুল বলে দিয়েছে।ততক্ষণে সেখানে আসিফ আর রিনিও এসে গেছে।তটিনির বাবা ওদেরকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন।
আসিফ রিনিকে নিয়ে এসে বাসায় দেখে হুজুর বিয়ে পড়িয়ে চলে যাচ্ছেন।বাপ্পির বিয়ের গাড়ীটা তখনও উঠানে ছিল।তটিনি আসিফকে দেখে হনহনিয়ে গাড়ীর ভেতর ঢুকে বসে পড়েছে।
বাপ্পি তার মাকে পানি খাওয়াতে গেছিলো,ওনার নাকি শরীর খারাপ করছে।আসিফ সেসময় রিনিকে রেখে গাড়ীর জানালার কাছে এসে তটিনিকে বললো,’জানি আমার উপর জেদ দেখিয়ে তুই বাপ্পিকে বিয়ে করেছিস।এটাও জানি বাপ্পিকে মেনে নিতে তোর অনেক সময় লাগবে।কিন্তু একটা কথা বলি শোন,তোর জন্য উপযুক্ত আমার চাইতে হাজারগুন ভাল যদি কোনো ছেলে হয়ে থাকে,তবে সেটা বাপ্পি।ওকে কষ্ট দিস না।সে তোকে প্রচণ্ড ভাবে চায়!কদর করিস ওর’
তটিনি গাল ফুলিয়ে জানালা কাঁচ উঠিয়ে দিয়েছে।ততক্ষণে বাপ্পিও চলে এসেছে।কান্নাকাটির রেশ কাটলোনা,উঠলোই না কাটবে বা কি করে।মামা কেঁদেছিলেন বৈকি!কিন্তু তটিনি এক ফোঁটাও কাঁদেনি,সবার উপরের এক প্রকার ক্ষোভ নিয়ে সে গাড়ীতে বসে আছে,যদি এক মাস ধরে বিয়েটা নিয়ে কেউ তাকে জোর না করত তবে আজ আসিফের বিয়ের কথা শুনেও তটিনিকে বাধ্য হয়ে বিয়ের পিড়িতে বসতে হতোনা,একা রুমে বসে নিজের মনকে শান্ত করে নিতে পারতো সে।।
আপাতত মনে মনে সময়ের প্রহর গুনছে অন্য বাড়িতে গিয়ে ওঠার।এখানে আর থাকা যাবেনা।দম বন্ধ লাগছে।
এবার আর মা মাঝখানে বসেননি।বাপ্পিকে মাঝে বসিয়েছেন।
তটিনি জানালার সাথে লেগে দূরে আসিফ আর রিনিকে দেখছিল।রিনি তটিনিদের বাসাটা মাথা ঘুরিয়ে দেখছে আর আসিফ এক দৃষ্টিতে গাড়ীটার দিকে চেয়ে ছিল।গাড়ীটা বেশি সময় আর দাঁড়ায়নি,চালু হয়ে গেছে।
তটিনি ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বাইরে থেকে।ফিরিয়ে নিতেই টের পেলো বাপ্পি তটিনির শাড়ীর কুচি গুনে গুনে গুছিয়ে দিচ্ছে চুপটি করে থেকে।কোনো শব্দ করেনি,মনযোগ দিয়ে সে তটিনির শাড়ীর কুচি গুছিয়ে দিচ্ছিলো।তটিনি ওমনি কুচি সরিয়ে নিয়ে বাপ্পিকে রাগ দেখালো।বাপ্পি ও আর ধরলোনা পাল্টা। এই এক মাসে তটিনিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন সে বুনেছিল।মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল এই মেয়েটিকে অনেক যত্নে রাখবে।আজ নাহয় এই কুচি ঠিক করে দেয়ার যত্ন থেকেই যাত্রা করা হলো।
চলবে♥তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৭
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনিদের বাসা থেকে বাপ্পিদের বাসা অনেকদূর। প্রায় দু ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে হয়।এত দূরের বিয়ের প্রস্তাব টা আসলো কি ভাবে?সে আরেক কাহিনী।বাপ্পির অফিসের বসের ছোটকালের বন্ধু হলো তটিনির বাবা।সেই সূত্রে প্রস্তাবটা ঘুরেফিরে এসেছিল।
বিয়ে হবেনা মনে করে পাত্রপক্ষের সবাই চলে এসেছে বিকেলেই।
এদিকে বিয়েটা তো হয়েই গেলো,বাপ্পির মা এতক্ষণে গিয়ে ফোনে জানিয়ে দিয়েছেন খবরটা।সেখানে সব প্রস্তুত রাখতে বলে দিছেন,এরপর ফোন রাখেন তিনি।তটিনি সারাদিনের দখলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল,বারবার চোখ লেগে আসছিল তার,ঝিমোচ্ছিল।শত কষ্ট করে সে ঘুমটা আটকানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল কারণ সে জানে ঘুমোলেই বাপ্পির কাঁধে মাথা চলে যাবে।এটা সে চায়না।বাপ্পি মনে করবে মেয়েটা অল্পতেই গায়ে পড়া স্বভাবের।এই ধারণা মাথায় চেপে সে রাতের ঘুমটাকে ধরে রাখছে।
বাপ্পির চোখে ঘুম নেই।সে সবসময় রাত করেই ঘুমায়।অনেক সময় তার ঘুমাতে ৩টাও বেজে যায়।এই ঘুম কম হবার পেছনে অনেক ডাক্তারের ভিজিটে টাকা ঢেলেছে।তাও তার ঘুমের কোনো হিল্লি হয়না।আবার সকাল হলে সে কি ঘুম!কেউ তাকে তুলতে পারেনা।অফিসে দেরি করে যেতে যেতে অভ্যাস হয়ে গেছে।বসের ঝাড়ি খেয়েও তার স্বভাব বদলায় না।এখন তাই মূর্তির মতন মাঝখানে বসে সে গাড়ীর আলোয় ফাঁকা রাস্তা দেখতে ব্যস্ত।
রাত তখন সাড়ে এগারোটা বাজে।তারা সবে আধা ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়েছে।যেতে যেতে রাত ১টা বেজে যাবে।
তটিনি আর ঘুম ধরে রাখতে পারেনি।নিজের দুহাত দিয়ে নিজেকে ধরে জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সে।বাপ্পি তটিনিকে এমন করে শুতে দেখে ঠিক বুঝে গেছে তটিনি ওর গায়ে যাতে না আসে তাই সে এমন করে শুয়েছে।যেন অপরিচিত ছেলের পাশে বসছে সে।
মানুষ অপরিচিত কারোর পাশে বসেও এমন বিহেভ করেনা যেটা তটিনি করছে!
-“ভেবেছিলাম বিয়ে করতে যেমন রাজি হয়ে গেছে, আমাকে মেনে নিতেও ওর বেশি সময় লাগবেনা!কিন্তু নাহ!ধারনাটা ভুল।
যে আমার গায়ের সাথে গা লাগবে বলে এমন করে পাশের সিটে শুতে পারে তার থেকে এগুলা আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না!!”
রাত সাড়ে বারোটার দিকে গাড়ী থামলো একটা টিনের চায়ের দোকানের সামনে।ড্রাইভার ঘুম কমাতে চা খাবে তাই থামিয়েছে।বাপ্পির মা ওপাশ ফিরে ঘুমাচ্ছেন।বাপ্পি তটিনিকে ওমন রেখেই ওর সামনে দিয়ে গাড়ী থেকে নামলো।ড্রাইভারের সাথে চা নিয়ে খাওয়ার সময় ওর চোখ গেলো গাড়ীর দিকে।গাড়ীর ভেতর বসে বসে তটিনি চোখ চুলকাচ্ছে।বাপ্পি গাড়ী থেকে বের হবার সময় সম্ভবত ওর ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
বাপ্পি আরেক কাপ চা নিয়ে এসে জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো।তটিনি চোখ ঘঁষামাজা করে মাথা তুলে দেখে ওপারে বাপ্পি দুহাতে দুকাপ চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তটিনি তখন মাথার যন্ত্রণায় কপাল কুঁচকিয়ে রাখছিল।ভুল সময়ে ঘুম ভাঙ্গলে প্রচণ্ড রকম বিরক্তি বোধ হয় তার।এখনও তাই,তারপরেও গাড়ী থেকে নামে সে।ধমকে বলতে চাইলো”আমি কফি খাই না,জানেন না!’
কিন্তু তখনই বাপ্পি কাপটা এগিয়ে ধরে বলে,’এটা কফি না,এটা চা’
তটিনির কপাল কুঁচকানো কমে গেলো।কিছু না বলেই বাপ্পির হাত থেকে চায়ের কাপ নেয় সে।তারপর আবারও কপাল কুঁচকে বলে,’এটাতে কিছু মেশাননি তো?’
‘হ্যাঁ।নেশার ঔষুধ মিশিয়েছি।খেয়ে নাও।বাসরটা মারাত্মক হবে আমাদের ‘
বাপ্পির এ কথা শুনে তটিনি চায়ে চুমুক দিতে গিয়েও দিলোনা।বাপ্পির দিকে চেয়ে বললো,’নিন আপনার হাতের কাপটা আমায় দিন।আপনাকে আমি বিশ্বাস করিনা’
বাপ্পি কাপটা এগিয়ে ধরে বলে,’এটাতে কিন্তু আমি দুটো চুমুক দিয়ে ফেলেছি’
‘তাতে কি!তাও বোঝা গেলো ওটাতে নেশাজাতীয় কিছু মেশানো নেই।’
তটিনি নিজের কাপটা বাপ্পিকে দিয়ে ওর কাপটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে।বাপ্পি মিটমিট করে হাসছিল তটিনির অবস্থা দেখে।তটিনি পেছনে ফিরে দোকানের দিকে তাকিয়ে বলে,’এত রাতে এই দোকান খোলা কেন?’
‘আমাদের মতন নতুন বর কনের রাতটাকে জাগিয়ে রাখার জন্য’
‘আপনার মনে লাড্ডু ফুটছে কেন এতো?’
‘ফুটবেনা??এই এক মাস আমি কত দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলাম।”””তটিনি আমার হবেনা”””
“”””তটিনি আমার হবে।””””
এই দুই লাইনে কত সংশয় নিয়ে আমার সকাল হতো, জানো তুমি?’
তটিনি চা শেষ করে হাত নামিয়ে কাপটা ঝুলিয়ে ধরে বলে,’নিচে শোয়াবো। আমার সাথে শোয়ার স্বপ্ন গুছিয়ে দেবো।চিনেন আমায়?’
‘নিচে কেন শুবো?আমার রুমে ডিভান আছে।ওটাতে আমি শুবো।নিচে কেন শুতে হবে?’
‘ওহ!আপনি তো আবার বড়লোক!যেটা দেখে আব্বু পাগল হইছিল!’
‘কেন তুমি জানতেনা আমি যে আবার বড়লোক?’
‘না জানতাম না।আপনার দেয়া সেই গিফটটা আমি পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়েছি।কি করে জানতাম আপনি কেমন বড়লোক আর আপনার গিফট দেয়ার ধরণ কিরকম!’
‘ওটাতে কম করে হলেও সাত হাজার টাকার চকলেট ছিল তটিনি।আমার বোনের সাথে যুদ্ধ করে জিতে, আমি চকলেট গুলো কিনেছিলাম তোমার জন্য।নিজে না খাও,তোমার বোনকে দিতে পারতে।খাবার অপচয় আমার পছন্দ না’
‘আর আমার আপনাকে পছন্দ না।আপনি জানেন ও না আমার কি পছন্দ আর অপছন্দ!আমি চকলেট পছন্দ করিনা,এটা যদি জানতেন তবে আমায় সাত হাজার টাকার চকলেট পাঠাতেন না।আমাকে চায়ের বদলে কফি দিতেন না’
‘এরেঞ্জ ম্যারেজে এইসব আগে থেকে জানতে হয় তটিনি???’
তটিনি চুপচাপ কাপটা দোকানে রেখে গিয়ে গাড়ীতে বসে গেলো।কিছুই বললোনা।বাপ্পি ওর পরে নিজেও এসে বসে গাড়ীতে।এবার মাঝখানে তটিনি।জানালার পাশে বাপ্পি।তটিনি ওর দিকে তাকাচ্ছেনা। গাল ফুলিয়ে সামনের দিকে চেয়ে আছে।যেতে আর আধ ঘন্টার মতন লাগবে।
———-
তটিনির বিয়ের গাড়ী চলে যেতেই আসিফ চলে গেছে বাসার ভেতর,রিনিকে রেখেই।রিনির সেদিকে খবর নেই।সে ঘুরে ঘুরে তটিনিদের উঠানটা দেখছে।তটিনির বাবাকে বলতে শুনেছে আজ থেকে রিনি আসিফের সাথে এই বাসাতে থাকবে।তার মানে এই বাসাটাকে তার আপন করে নিতে হবে।সে খুশি হয়ে পুরো উঠানটায় গোলচক্কর দিয়ে বাসার ভেতরের দিকে গেলো।ভেতরে এসে আসিফকে কোথাও সে দেখেনি।রাতের খাবার হয়ে গেছে এখন শোয়ার অপেক্ষা।আসিফ গেলো কোথায়?রীতিমত তার রুমেই রিনির ঠাঁই হবার কথা।বিয়ের পর এই প্রথমবার সে আসিফের সাথে এক রুমে থাকবে এটা মনে পড়ে যাওয়ায় লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে সে মুচকি মুচকি হাসছিল সোফার রুমে দাঁড়িয়ে।
তটিনির সেজো খালা ছিলেন ওখানে।রিনিকে তিনি চিনেছেন।অনেক আগে দেখেছিলেন,যখন সে ক্লাস সিক্সে পড়তো তখন।রিনিকে দেখে চেনার উপায় হলো চিকনা শরীর আর মাথার উপরে সবসময় চুলে puff করা থাকে।তিনি দূর থেকেই রিনিকে দেখছিলেন,রিনিকে ওমন করে হাসতে দেখে আগাগোড়া কিছুই বুঝলেন না কারণ তিনি জানেন ও না এই রিনি তাদের আসিফের বউ।যারা জানে তারা সবাই হাসপাতালে।
তিনি হাতে বেঁচে যাওয়া রোস্ট আর পোলাওর প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।ভাবলেন রিনিকে সাধবেন তাই এগিয়ে এসে বললেন,’রিনি খাইবা?’
রিনি ভাবনার ঘোর থেকে বেরিয়ে খালার হাতের প্লেটের দিকে চেয়ে থেকে বলে,’না খাইতাম ন।ঐতেন কোনাই?’
‘ঐতেন কে?’
‘ঐ যে ঐতেন।কইতে শরম লাগে আঁর🙈’
‘তোর ঐতেন কে আবার!যেভাবে বলছিস যেন তোর বিয়ে করা বর।আচ্ছা তোর কি বিয়ে হয়েছে রিনি?অনেকদিন দেখাসাক্ষাৎ হয়না তো তাই কিছুই জানিনা।’
এই কথা বলে খালা আবারও রিনির পা থেকে মাথা অবধি দেখে বললেন,’নাহ!তোরে দেখে বিয়াইত্তা লাগেনা’
‘আরে আঁই বিয়াইত্তা।জানো কার লগে বিয়া অইছে??’
‘কিহ কস!তোর বিয়া হইছে?কার লগে?তোর জামাই কই?’
‘তোঁঙ্গো আসিফের লগে’
খালা হা করে রিনির মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।সেই সময় হাসপাতাল থেকে আসা তটিনির মেজো খালা এসে বললেন,’একি রিনি তুই এখানে কি করিস?যা আসিফের রুমে।এত রাতে আর জেগে থেকে লাভ নেই।শুয়ে পড়।কাল সকালে যত কথা হবে’
রিনি মাথা নাড়িয়ে সামনের দিকে চলে গেছে।এদিকে তটিনির সেজো খালা রূম্পা হা করে দাঁড়িয়েই আছেন।তার বড় মেয়ে রুনার সাথে আসিফের বিয়ে দেবেন বলে এক বছর ধরে কত জল্পনাকল্পনা করছিলেন আর সেই আসিফ কিনা বিয়েও করে নিলো!!কবে কিভাবে?
চলবে♥
/